মামুনুর রশীদ

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২১ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন কয়েক হাজার অভিনয়শিল্পী। রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর বন্দর ওদেসা ছিল ঘটনাস্থল। প্রথমে জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে অফিসারদের খাবার নিয়ে সংঘাতের সূচনা। আবার এ কথাও সত্য, ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় একটি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, যা তখন ব্যর্থ হয়ে যায়। আমরা অবাক বিস্ময়ে ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবতাম কী অসাধারণ শিল্পগুণ এই অভিনয়শিল্পীদের, যাঁরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি, এসেছেন মঞ্চ থেকে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মঞ্চনাটক আরও প্রাচীন এবং ওই সময়ে বড় বড় নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা স্তানিসলাভস্কির কাল, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সার্গেই আইজেনস্টাইন কতগুলো বিষয় সারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছিলেন—যেমন চলচ্চিত্র সম্পাদনা। একটি ঘটনা দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার যে শৈল্পিক উপায়, তা তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, একটা বিশাল জনগোষ্ঠী যার প্রাণকেন্দ্র একটি ব্যাটেলশিপ, তাকে চলচ্চিত্রের প্রতিটি মুহূর্ত নির্মাণ করতে কীভাবে সাহায্য করা সম্ভব, এ নিয়ে সারা বিশ্বেই দীর্ঘদিন আলাপ হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি ছাড়াও ওদেসার ছবি নিয়ে অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ওদেসা দেখতে গিয়ে এটিকে একটি পর্যটননগরীতে পরিণত করেছে। রুশ বিপ্লবের পর শুধু যে রুশ বিপ্লবীরা শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ঝুঁকে ছিলেন তা নয়, মহৎ শিল্প-সাহিত্যের সংরক্ষণ এবং যেখানে মানুষের প্রতিবাদের ঐতিহ্য আছে, তাকেও বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে তা করেছেন।
সত্তর বছরে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক সাফল্য আছে। কিন্তু সেই সাফল্য-অর্জনকে ঘুণপোকার মতো কাটতে শুরু করেছে অনেক প্রতি বিপ্লবী। প্রতি বিপ্লবীরা কখনো কখনো বিপ্লবীদেরও আবদ্ধ করেছে। তাই হঠাৎ করে নয়, ধীরে ধীরে একদিন দেখা গেল দেশটা ভাগ হয়ে গেছে। বহু কষ্টে অর্জিত সব সাফল্য একটা ইতিহাসের ভাঙচুরের মধ্যে পড়ে গেল। যে ইউক্রেন আর রাশিয়া একই পতাকাতলে দাঁড়িয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিল ১৯০৫ সালে, সেই দুটি দেশ এখন পরস্পর ভ্রাতৃহত্যায় লিপ্ত রয়েছে। এটার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদেসা বন্দর। যতই বিভক্ত হোক, মানুষ কিন্তু ওদেসার কথা ভুলতে পারবে না, ব্যাটল অব পটেমকিনের কথা ভুলতে পারবে না। লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, দস্তয়ভস্কি, আন্তন চেখভসহ অসংখ্য কালজয়ী সোভিয়েত লেখক, শিল্পী তাদের কথা ভুলতে পারবে না।
আমরা যারা রুশ বিপ্লবকে মানব ইতিহাসের একটা বড় অধ্যায় বলে বিবেচনা করি, তাদের কাছে এই মার্চ মাসের আকাশে যখন অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করছে, তখনই আমাদেরও ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের কথা মনে পড়ে। এভাবে অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আজ পার্থক্যটা খুবই কষ্টকর, কারণ তখন বাংলাদেশের মানুষ যখন জাগ্রত হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার পাশে ছিল। একমাত্র বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর যেখানেই মানুষের মুক্তির যুদ্ধ চলেছে, সেখানেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, সোভিয়েতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রস্তুত করার বিশাল কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে।
এসবই জানা কথা। এ-ও জানা কথা, শ্রমিকশ্রেণির একটা রাষ্ট্র পুঁজিবাদীরা কোনো দিন সহ্য করতে পারেনি। কত রকম কুৎসা, মিথ্যা সংবাদ রচনা করে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছিল, তাকেও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মিখাইল গর্বাচেভ, ইয়েলৎসিন শেষ ঘণ্টাটা বাজিয়ে দিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ বছর আগে। তাদের যৌথ সম্পদ সেটিও ভাগাভাগি হয়েছে কোনো না কোনোভাবে। ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো তাদের মতো করে দেশ পরিচালনা করছে। একটা বড় ধরনের বিভ্রান্তি থেকে যখন নতুন রাষ্ট্রগুলো গড়ে ওঠে, তাতে সমস্যা থাকে বিস্তর। সেই সমস্যা যতটা স্থানিক তার চেয়ে অনেক বড় আন্তর্জাতিক। আর দেশটা যদি সম্পদশালী হয় তাহলে তো কথাই নেই, মানুষ মরছে কিন্তু তার চেয়ে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তেলের মূল্য। আবার কোনো সৎ উদ্দেশ্যে নয়, শুধু রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য নানান ধরনের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময় ইউরোপ-আমেরিকা মানুষ বাঁচানোর জন্য কত ধরনের তৎপরতা দেখিয়েছে। কিন্তু এখন রকেট হামলায়, শেলিংয়ে যখন মানুষ মরছে, তখন রাজনীতিটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের কথা কদাচিৎ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের মুখে শোনা যাচ্ছে। আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যখন কোনো সীমান্ত ছিল না, একটা বিশাল অঞ্চলে যখন একই ভাষায় কথা বলত, নানা আত্মীয়তার সূত্রে মানুষগুলো বাঁধা ছিল, তখন কি কেউ স্বপ্নে দেখেছে এমন এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন আসতে পারে তাদের জীবনে? পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পরিবর্তন হয়নি অন্য দেশ আক্রমণকারী যোদ্ধাদের। সবাই প্রবল হিংসা ও প্রতিহিংসায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। কে কার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই বিবেচনা বোধটুকুও থাকে না। শুধু নৃশংসতার বিনিময়ে নিজেদের জয়লাভ করা।
পশ্চিমা বিশ্বের একটাই সংকল্প যে পুতিন এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করা। কিন্তু সেই দেশে অসংখ্য নাগরিক আছে, যারা সরকারকে সমর্থন করে না, তারাও পড়ে যাবে এই শায়েস্তার বলিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার তুলনায় সামরিক শক্তিতে ইউক্রেন যথেষ্টই ক্ষুদ্র। রাজনীতিতে ভুলভ্রান্তি তো আছেই, আর সেই সঙ্গে রাশিয়ারও বিস্তর ভুল রয়েছে। রাষ্ট্রটিকে মাঝে মাঝে ঝলসে উঠতে দেখা যায়। যেমন গত ফুটবল বিশ্বকাপের যে আয়োজন ও শৃঙ্খলা দেখিয়েছিল, তা সত্যিই দৃষ্টান্তস্বরূপ। দেশগুলো কি গণতান্ত্রিক উপায়ে চলার চেষ্টা করছে? নাকি এক ভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এগিয়ে চলছে?
বেশ কিছুদিন যাবৎ টেলিভিশনে আমাদের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত থাকে যুদ্ধের সংবাদের দিকে; বিশেষ করে শরণার্থীদের দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এমনি করে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে শরণার্থীশিবিরে জায়গা পেয়েছিল। পার্থক্যটা হচ্ছে ইউরোপের রাস্তাঘাট উন্নত, মানুষের হাতে অর্থ আছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে অনেকেই কপর্দকহীনভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে দিনের পর দিন না খেয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় পেয়েছিল। একদিন এ যুদ্ধের হয়তো অবসান হবে, মানুষ হয়তো ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু তখনকার সমস্যা হবে আরও জটিল, আরও ভিন্ন ধরনের। সেটি সামাল দেবে কে?
ব্যাটলশিপ পটেমকিনে একটি অসাধারণ দৃশ্য ছিল—একটি প্যারাম্বুলেটরে একটি শিশুকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় চলে যাচ্ছে। সেদিনও টেলিভিশনে দেখলাম নিজগৃহ ত্যাগ করে একটি শিশু যখন তার পিতার কাঁধে চড়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখন বারবার অশ্রু চোখে তার বাড়িটির দিকে তাকাচ্ছে। শিশুটির দুই চোখে অশ্রু কিন্তু ততক্ষণে কাছেই মুহুর্মুহু গোলা পড়ছে। অতএব ওদের ছুটতেই হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।
বিশ্বটাকে মানুষ কি শরণার্থীশিবির তৈরি করবে? সেই যে শুরু হয়েছে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, লিবিয়ায়। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই সব মানুষগুলো, যাঁরা জীবন বাজি রেখে ছুটে চলেছেন বাঁচার তাগিদে।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২১ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন কয়েক হাজার অভিনয়শিল্পী। রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর বন্দর ওদেসা ছিল ঘটনাস্থল। প্রথমে জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে অফিসারদের খাবার নিয়ে সংঘাতের সূচনা। আবার এ কথাও সত্য, ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় একটি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, যা তখন ব্যর্থ হয়ে যায়। আমরা অবাক বিস্ময়ে ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবতাম কী অসাধারণ শিল্পগুণ এই অভিনয়শিল্পীদের, যাঁরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি, এসেছেন মঞ্চ থেকে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মঞ্চনাটক আরও প্রাচীন এবং ওই সময়ে বড় বড় নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা স্তানিসলাভস্কির কাল, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সার্গেই আইজেনস্টাইন কতগুলো বিষয় সারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছিলেন—যেমন চলচ্চিত্র সম্পাদনা। একটি ঘটনা দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার যে শৈল্পিক উপায়, তা তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, একটা বিশাল জনগোষ্ঠী যার প্রাণকেন্দ্র একটি ব্যাটেলশিপ, তাকে চলচ্চিত্রের প্রতিটি মুহূর্ত নির্মাণ করতে কীভাবে সাহায্য করা সম্ভব, এ নিয়ে সারা বিশ্বেই দীর্ঘদিন আলাপ হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি ছাড়াও ওদেসার ছবি নিয়ে অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ওদেসা দেখতে গিয়ে এটিকে একটি পর্যটননগরীতে পরিণত করেছে। রুশ বিপ্লবের পর শুধু যে রুশ বিপ্লবীরা শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ঝুঁকে ছিলেন তা নয়, মহৎ শিল্প-সাহিত্যের সংরক্ষণ এবং যেখানে মানুষের প্রতিবাদের ঐতিহ্য আছে, তাকেও বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে তা করেছেন।
সত্তর বছরে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক সাফল্য আছে। কিন্তু সেই সাফল্য-অর্জনকে ঘুণপোকার মতো কাটতে শুরু করেছে অনেক প্রতি বিপ্লবী। প্রতি বিপ্লবীরা কখনো কখনো বিপ্লবীদেরও আবদ্ধ করেছে। তাই হঠাৎ করে নয়, ধীরে ধীরে একদিন দেখা গেল দেশটা ভাগ হয়ে গেছে। বহু কষ্টে অর্জিত সব সাফল্য একটা ইতিহাসের ভাঙচুরের মধ্যে পড়ে গেল। যে ইউক্রেন আর রাশিয়া একই পতাকাতলে দাঁড়িয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিল ১৯০৫ সালে, সেই দুটি দেশ এখন পরস্পর ভ্রাতৃহত্যায় লিপ্ত রয়েছে। এটার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদেসা বন্দর। যতই বিভক্ত হোক, মানুষ কিন্তু ওদেসার কথা ভুলতে পারবে না, ব্যাটল অব পটেমকিনের কথা ভুলতে পারবে না। লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, দস্তয়ভস্কি, আন্তন চেখভসহ অসংখ্য কালজয়ী সোভিয়েত লেখক, শিল্পী তাদের কথা ভুলতে পারবে না।
আমরা যারা রুশ বিপ্লবকে মানব ইতিহাসের একটা বড় অধ্যায় বলে বিবেচনা করি, তাদের কাছে এই মার্চ মাসের আকাশে যখন অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করছে, তখনই আমাদেরও ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের কথা মনে পড়ে। এভাবে অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আজ পার্থক্যটা খুবই কষ্টকর, কারণ তখন বাংলাদেশের মানুষ যখন জাগ্রত হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার পাশে ছিল। একমাত্র বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর যেখানেই মানুষের মুক্তির যুদ্ধ চলেছে, সেখানেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, সোভিয়েতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রস্তুত করার বিশাল কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে।
এসবই জানা কথা। এ-ও জানা কথা, শ্রমিকশ্রেণির একটা রাষ্ট্র পুঁজিবাদীরা কোনো দিন সহ্য করতে পারেনি। কত রকম কুৎসা, মিথ্যা সংবাদ রচনা করে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছিল, তাকেও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মিখাইল গর্বাচেভ, ইয়েলৎসিন শেষ ঘণ্টাটা বাজিয়ে দিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ বছর আগে। তাদের যৌথ সম্পদ সেটিও ভাগাভাগি হয়েছে কোনো না কোনোভাবে। ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো তাদের মতো করে দেশ পরিচালনা করছে। একটা বড় ধরনের বিভ্রান্তি থেকে যখন নতুন রাষ্ট্রগুলো গড়ে ওঠে, তাতে সমস্যা থাকে বিস্তর। সেই সমস্যা যতটা স্থানিক তার চেয়ে অনেক বড় আন্তর্জাতিক। আর দেশটা যদি সম্পদশালী হয় তাহলে তো কথাই নেই, মানুষ মরছে কিন্তু তার চেয়ে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তেলের মূল্য। আবার কোনো সৎ উদ্দেশ্যে নয়, শুধু রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য নানান ধরনের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময় ইউরোপ-আমেরিকা মানুষ বাঁচানোর জন্য কত ধরনের তৎপরতা দেখিয়েছে। কিন্তু এখন রকেট হামলায়, শেলিংয়ে যখন মানুষ মরছে, তখন রাজনীতিটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের কথা কদাচিৎ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের মুখে শোনা যাচ্ছে। আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যখন কোনো সীমান্ত ছিল না, একটা বিশাল অঞ্চলে যখন একই ভাষায় কথা বলত, নানা আত্মীয়তার সূত্রে মানুষগুলো বাঁধা ছিল, তখন কি কেউ স্বপ্নে দেখেছে এমন এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন আসতে পারে তাদের জীবনে? পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পরিবর্তন হয়নি অন্য দেশ আক্রমণকারী যোদ্ধাদের। সবাই প্রবল হিংসা ও প্রতিহিংসায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। কে কার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই বিবেচনা বোধটুকুও থাকে না। শুধু নৃশংসতার বিনিময়ে নিজেদের জয়লাভ করা।
পশ্চিমা বিশ্বের একটাই সংকল্প যে পুতিন এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করা। কিন্তু সেই দেশে অসংখ্য নাগরিক আছে, যারা সরকারকে সমর্থন করে না, তারাও পড়ে যাবে এই শায়েস্তার বলিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার তুলনায় সামরিক শক্তিতে ইউক্রেন যথেষ্টই ক্ষুদ্র। রাজনীতিতে ভুলভ্রান্তি তো আছেই, আর সেই সঙ্গে রাশিয়ারও বিস্তর ভুল রয়েছে। রাষ্ট্রটিকে মাঝে মাঝে ঝলসে উঠতে দেখা যায়। যেমন গত ফুটবল বিশ্বকাপের যে আয়োজন ও শৃঙ্খলা দেখিয়েছিল, তা সত্যিই দৃষ্টান্তস্বরূপ। দেশগুলো কি গণতান্ত্রিক উপায়ে চলার চেষ্টা করছে? নাকি এক ভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এগিয়ে চলছে?
বেশ কিছুদিন যাবৎ টেলিভিশনে আমাদের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত থাকে যুদ্ধের সংবাদের দিকে; বিশেষ করে শরণার্থীদের দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এমনি করে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে শরণার্থীশিবিরে জায়গা পেয়েছিল। পার্থক্যটা হচ্ছে ইউরোপের রাস্তাঘাট উন্নত, মানুষের হাতে অর্থ আছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে অনেকেই কপর্দকহীনভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে দিনের পর দিন না খেয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় পেয়েছিল। একদিন এ যুদ্ধের হয়তো অবসান হবে, মানুষ হয়তো ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু তখনকার সমস্যা হবে আরও জটিল, আরও ভিন্ন ধরনের। সেটি সামাল দেবে কে?
ব্যাটলশিপ পটেমকিনে একটি অসাধারণ দৃশ্য ছিল—একটি প্যারাম্বুলেটরে একটি শিশুকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় চলে যাচ্ছে। সেদিনও টেলিভিশনে দেখলাম নিজগৃহ ত্যাগ করে একটি শিশু যখন তার পিতার কাঁধে চড়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখন বারবার অশ্রু চোখে তার বাড়িটির দিকে তাকাচ্ছে। শিশুটির দুই চোখে অশ্রু কিন্তু ততক্ষণে কাছেই মুহুর্মুহু গোলা পড়ছে। অতএব ওদের ছুটতেই হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।
বিশ্বটাকে মানুষ কি শরণার্থীশিবির তৈরি করবে? সেই যে শুরু হয়েছে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, লিবিয়ায়। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই সব মানুষগুলো, যাঁরা জীবন বাজি রেখে ছুটে চলেছেন বাঁচার তাগিদে।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২১ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন কয়েক হাজার অভিনয়শিল্পী। রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর বন্দর ওদেসা ছিল ঘটনাস্থল। প্রথমে জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে অফিসারদের খাবার নিয়ে সংঘাতের সূচনা। আবার এ কথাও সত্য, ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় একটি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, যা তখন ব্যর্থ হয়ে যায়। আমরা অবাক বিস্ময়ে ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবতাম কী অসাধারণ শিল্পগুণ এই অভিনয়শিল্পীদের, যাঁরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি, এসেছেন মঞ্চ থেকে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মঞ্চনাটক আরও প্রাচীন এবং ওই সময়ে বড় বড় নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা স্তানিসলাভস্কির কাল, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সার্গেই আইজেনস্টাইন কতগুলো বিষয় সারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছিলেন—যেমন চলচ্চিত্র সম্পাদনা। একটি ঘটনা দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার যে শৈল্পিক উপায়, তা তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, একটা বিশাল জনগোষ্ঠী যার প্রাণকেন্দ্র একটি ব্যাটেলশিপ, তাকে চলচ্চিত্রের প্রতিটি মুহূর্ত নির্মাণ করতে কীভাবে সাহায্য করা সম্ভব, এ নিয়ে সারা বিশ্বেই দীর্ঘদিন আলাপ হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি ছাড়াও ওদেসার ছবি নিয়ে অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ওদেসা দেখতে গিয়ে এটিকে একটি পর্যটননগরীতে পরিণত করেছে। রুশ বিপ্লবের পর শুধু যে রুশ বিপ্লবীরা শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ঝুঁকে ছিলেন তা নয়, মহৎ শিল্প-সাহিত্যের সংরক্ষণ এবং যেখানে মানুষের প্রতিবাদের ঐতিহ্য আছে, তাকেও বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে তা করেছেন।
সত্তর বছরে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক সাফল্য আছে। কিন্তু সেই সাফল্য-অর্জনকে ঘুণপোকার মতো কাটতে শুরু করেছে অনেক প্রতি বিপ্লবী। প্রতি বিপ্লবীরা কখনো কখনো বিপ্লবীদেরও আবদ্ধ করেছে। তাই হঠাৎ করে নয়, ধীরে ধীরে একদিন দেখা গেল দেশটা ভাগ হয়ে গেছে। বহু কষ্টে অর্জিত সব সাফল্য একটা ইতিহাসের ভাঙচুরের মধ্যে পড়ে গেল। যে ইউক্রেন আর রাশিয়া একই পতাকাতলে দাঁড়িয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিল ১৯০৫ সালে, সেই দুটি দেশ এখন পরস্পর ভ্রাতৃহত্যায় লিপ্ত রয়েছে। এটার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদেসা বন্দর। যতই বিভক্ত হোক, মানুষ কিন্তু ওদেসার কথা ভুলতে পারবে না, ব্যাটল অব পটেমকিনের কথা ভুলতে পারবে না। লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, দস্তয়ভস্কি, আন্তন চেখভসহ অসংখ্য কালজয়ী সোভিয়েত লেখক, শিল্পী তাদের কথা ভুলতে পারবে না।
আমরা যারা রুশ বিপ্লবকে মানব ইতিহাসের একটা বড় অধ্যায় বলে বিবেচনা করি, তাদের কাছে এই মার্চ মাসের আকাশে যখন অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করছে, তখনই আমাদেরও ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের কথা মনে পড়ে। এভাবে অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আজ পার্থক্যটা খুবই কষ্টকর, কারণ তখন বাংলাদেশের মানুষ যখন জাগ্রত হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার পাশে ছিল। একমাত্র বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর যেখানেই মানুষের মুক্তির যুদ্ধ চলেছে, সেখানেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, সোভিয়েতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রস্তুত করার বিশাল কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে।
এসবই জানা কথা। এ-ও জানা কথা, শ্রমিকশ্রেণির একটা রাষ্ট্র পুঁজিবাদীরা কোনো দিন সহ্য করতে পারেনি। কত রকম কুৎসা, মিথ্যা সংবাদ রচনা করে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছিল, তাকেও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মিখাইল গর্বাচেভ, ইয়েলৎসিন শেষ ঘণ্টাটা বাজিয়ে দিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ বছর আগে। তাদের যৌথ সম্পদ সেটিও ভাগাভাগি হয়েছে কোনো না কোনোভাবে। ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো তাদের মতো করে দেশ পরিচালনা করছে। একটা বড় ধরনের বিভ্রান্তি থেকে যখন নতুন রাষ্ট্রগুলো গড়ে ওঠে, তাতে সমস্যা থাকে বিস্তর। সেই সমস্যা যতটা স্থানিক তার চেয়ে অনেক বড় আন্তর্জাতিক। আর দেশটা যদি সম্পদশালী হয় তাহলে তো কথাই নেই, মানুষ মরছে কিন্তু তার চেয়ে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তেলের মূল্য। আবার কোনো সৎ উদ্দেশ্যে নয়, শুধু রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য নানান ধরনের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময় ইউরোপ-আমেরিকা মানুষ বাঁচানোর জন্য কত ধরনের তৎপরতা দেখিয়েছে। কিন্তু এখন রকেট হামলায়, শেলিংয়ে যখন মানুষ মরছে, তখন রাজনীতিটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের কথা কদাচিৎ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের মুখে শোনা যাচ্ছে। আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যখন কোনো সীমান্ত ছিল না, একটা বিশাল অঞ্চলে যখন একই ভাষায় কথা বলত, নানা আত্মীয়তার সূত্রে মানুষগুলো বাঁধা ছিল, তখন কি কেউ স্বপ্নে দেখেছে এমন এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন আসতে পারে তাদের জীবনে? পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পরিবর্তন হয়নি অন্য দেশ আক্রমণকারী যোদ্ধাদের। সবাই প্রবল হিংসা ও প্রতিহিংসায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। কে কার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই বিবেচনা বোধটুকুও থাকে না। শুধু নৃশংসতার বিনিময়ে নিজেদের জয়লাভ করা।
পশ্চিমা বিশ্বের একটাই সংকল্প যে পুতিন এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করা। কিন্তু সেই দেশে অসংখ্য নাগরিক আছে, যারা সরকারকে সমর্থন করে না, তারাও পড়ে যাবে এই শায়েস্তার বলিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার তুলনায় সামরিক শক্তিতে ইউক্রেন যথেষ্টই ক্ষুদ্র। রাজনীতিতে ভুলভ্রান্তি তো আছেই, আর সেই সঙ্গে রাশিয়ারও বিস্তর ভুল রয়েছে। রাষ্ট্রটিকে মাঝে মাঝে ঝলসে উঠতে দেখা যায়। যেমন গত ফুটবল বিশ্বকাপের যে আয়োজন ও শৃঙ্খলা দেখিয়েছিল, তা সত্যিই দৃষ্টান্তস্বরূপ। দেশগুলো কি গণতান্ত্রিক উপায়ে চলার চেষ্টা করছে? নাকি এক ভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এগিয়ে চলছে?
বেশ কিছুদিন যাবৎ টেলিভিশনে আমাদের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত থাকে যুদ্ধের সংবাদের দিকে; বিশেষ করে শরণার্থীদের দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এমনি করে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে শরণার্থীশিবিরে জায়গা পেয়েছিল। পার্থক্যটা হচ্ছে ইউরোপের রাস্তাঘাট উন্নত, মানুষের হাতে অর্থ আছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে অনেকেই কপর্দকহীনভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে দিনের পর দিন না খেয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় পেয়েছিল। একদিন এ যুদ্ধের হয়তো অবসান হবে, মানুষ হয়তো ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু তখনকার সমস্যা হবে আরও জটিল, আরও ভিন্ন ধরনের। সেটি সামাল দেবে কে?
ব্যাটলশিপ পটেমকিনে একটি অসাধারণ দৃশ্য ছিল—একটি প্যারাম্বুলেটরে একটি শিশুকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় চলে যাচ্ছে। সেদিনও টেলিভিশনে দেখলাম নিজগৃহ ত্যাগ করে একটি শিশু যখন তার পিতার কাঁধে চড়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখন বারবার অশ্রু চোখে তার বাড়িটির দিকে তাকাচ্ছে। শিশুটির দুই চোখে অশ্রু কিন্তু ততক্ষণে কাছেই মুহুর্মুহু গোলা পড়ছে। অতএব ওদের ছুটতেই হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।
বিশ্বটাকে মানুষ কি শরণার্থীশিবির তৈরি করবে? সেই যে শুরু হয়েছে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, লিবিয়ায়। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই সব মানুষগুলো, যাঁরা জীবন বাজি রেখে ছুটে চলেছেন বাঁচার তাগিদে।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২১ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন কয়েক হাজার অভিনয়শিল্পী। রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর বন্দর ওদেসা ছিল ঘটনাস্থল। প্রথমে জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে অফিসারদের খাবার নিয়ে সংঘাতের সূচনা। আবার এ কথাও সত্য, ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় একটি বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, যা তখন ব্যর্থ হয়ে যায়। আমরা অবাক বিস্ময়ে ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবতাম কী অসাধারণ শিল্পগুণ এই অভিনয়শিল্পীদের, যাঁরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি, এসেছেন মঞ্চ থেকে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মঞ্চনাটক আরও প্রাচীন এবং ওই সময়ে বড় বড় নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, বিশেষ করে চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা স্তানিসলাভস্কির কাল, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সার্গেই আইজেনস্টাইন কতগুলো বিষয় সারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছিলেন—যেমন চলচ্চিত্র সম্পাদনা। একটি ঘটনা দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার যে শৈল্পিক উপায়, তা তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, একটা বিশাল জনগোষ্ঠী যার প্রাণকেন্দ্র একটি ব্যাটেলশিপ, তাকে চলচ্চিত্রের প্রতিটি মুহূর্ত নির্মাণ করতে কীভাবে সাহায্য করা সম্ভব, এ নিয়ে সারা বিশ্বেই দীর্ঘদিন আলাপ হয়েছে।
চলচ্চিত্রটি ছাড়াও ওদেসার ছবি নিয়ে অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ওদেসা দেখতে গিয়ে এটিকে একটি পর্যটননগরীতে পরিণত করেছে। রুশ বিপ্লবের পর শুধু যে রুশ বিপ্লবীরা শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ঝুঁকে ছিলেন তা নয়, মহৎ শিল্প-সাহিত্যের সংরক্ষণ এবং যেখানে মানুষের প্রতিবাদের ঐতিহ্য আছে, তাকেও বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে তা করেছেন।
সত্তর বছরে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক সাফল্য আছে। কিন্তু সেই সাফল্য-অর্জনকে ঘুণপোকার মতো কাটতে শুরু করেছে অনেক প্রতি বিপ্লবী। প্রতি বিপ্লবীরা কখনো কখনো বিপ্লবীদেরও আবদ্ধ করেছে। তাই হঠাৎ করে নয়, ধীরে ধীরে একদিন দেখা গেল দেশটা ভাগ হয়ে গেছে। বহু কষ্টে অর্জিত সব সাফল্য একটা ইতিহাসের ভাঙচুরের মধ্যে পড়ে গেল। যে ইউক্রেন আর রাশিয়া একই পতাকাতলে দাঁড়িয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিল ১৯০৫ সালে, সেই দুটি দেশ এখন পরস্পর ভ্রাতৃহত্যায় লিপ্ত রয়েছে। এটার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদেসা বন্দর। যতই বিভক্ত হোক, মানুষ কিন্তু ওদেসার কথা ভুলতে পারবে না, ব্যাটল অব পটেমকিনের কথা ভুলতে পারবে না। লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, দস্তয়ভস্কি, আন্তন চেখভসহ অসংখ্য কালজয়ী সোভিয়েত লেখক, শিল্পী তাদের কথা ভুলতে পারবে না।
আমরা যারা রুশ বিপ্লবকে মানব ইতিহাসের একটা বড় অধ্যায় বলে বিবেচনা করি, তাদের কাছে এই মার্চ মাসের আকাশে যখন অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করছে, তখনই আমাদেরও ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের কথা মনে পড়ে। এভাবে অগ্নিগোলক নিক্ষেপ করে ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আজ পার্থক্যটা খুবই কষ্টকর, কারণ তখন বাংলাদেশের মানুষ যখন জাগ্রত হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার পাশে ছিল। একমাত্র বাংলাদেশই নয়, পৃথিবীর যেখানেই মানুষের মুক্তির যুদ্ধ চলেছে, সেখানেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, সোভিয়েতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রস্তুত করার বিশাল কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে।
এসবই জানা কথা। এ-ও জানা কথা, শ্রমিকশ্রেণির একটা রাষ্ট্র পুঁজিবাদীরা কোনো দিন সহ্য করতে পারেনি। কত রকম কুৎসা, মিথ্যা সংবাদ রচনা করে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছিল, তাকেও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মিখাইল গর্বাচেভ, ইয়েলৎসিন শেষ ঘণ্টাটা বাজিয়ে দিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ বছর আগে। তাদের যৌথ সম্পদ সেটিও ভাগাভাগি হয়েছে কোনো না কোনোভাবে। ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো তাদের মতো করে দেশ পরিচালনা করছে। একটা বড় ধরনের বিভ্রান্তি থেকে যখন নতুন রাষ্ট্রগুলো গড়ে ওঠে, তাতে সমস্যা থাকে বিস্তর। সেই সমস্যা যতটা স্থানিক তার চেয়ে অনেক বড় আন্তর্জাতিক। আর দেশটা যদি সম্পদশালী হয় তাহলে তো কথাই নেই, মানুষ মরছে কিন্তু তার চেয়ে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তেলের মূল্য। আবার কোনো সৎ উদ্দেশ্যে নয়, শুধু রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য নানান ধরনের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময় ইউরোপ-আমেরিকা মানুষ বাঁচানোর জন্য কত ধরনের তৎপরতা দেখিয়েছে। কিন্তু এখন রকেট হামলায়, শেলিংয়ে যখন মানুষ মরছে, তখন রাজনীতিটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের কথা কদাচিৎ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের মুখে শোনা যাচ্ছে। আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় যখন কোনো সীমান্ত ছিল না, একটা বিশাল অঞ্চলে যখন একই ভাষায় কথা বলত, নানা আত্মীয়তার সূত্রে মানুষগুলো বাঁধা ছিল, তখন কি কেউ স্বপ্নে দেখেছে এমন এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন আসতে পারে তাদের জীবনে? পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পরিবর্তন হয়নি অন্য দেশ আক্রমণকারী যোদ্ধাদের। সবাই প্রবল হিংসা ও প্রতিহিংসায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। কে কার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই বিবেচনা বোধটুকুও থাকে না। শুধু নৃশংসতার বিনিময়ে নিজেদের জয়লাভ করা।
পশ্চিমা বিশ্বের একটাই সংকল্প যে পুতিন এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করা। কিন্তু সেই দেশে অসংখ্য নাগরিক আছে, যারা সরকারকে সমর্থন করে না, তারাও পড়ে যাবে এই শায়েস্তার বলিতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার তুলনায় সামরিক শক্তিতে ইউক্রেন যথেষ্টই ক্ষুদ্র। রাজনীতিতে ভুলভ্রান্তি তো আছেই, আর সেই সঙ্গে রাশিয়ারও বিস্তর ভুল রয়েছে। রাষ্ট্রটিকে মাঝে মাঝে ঝলসে উঠতে দেখা যায়। যেমন গত ফুটবল বিশ্বকাপের যে আয়োজন ও শৃঙ্খলা দেখিয়েছিল, তা সত্যিই দৃষ্টান্তস্বরূপ। দেশগুলো কি গণতান্ত্রিক উপায়ে চলার চেষ্টা করছে? নাকি এক ভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এগিয়ে চলছে?
বেশ কিছুদিন যাবৎ টেলিভিশনে আমাদের দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত থাকে যুদ্ধের সংবাদের দিকে; বিশেষ করে শরণার্থীদের দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এমনি করে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে শরণার্থীশিবিরে জায়গা পেয়েছিল। পার্থক্যটা হচ্ছে ইউরোপের রাস্তাঘাট উন্নত, মানুষের হাতে অর্থ আছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে অনেকেই কপর্দকহীনভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে দিনের পর দিন না খেয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় পেয়েছিল। একদিন এ যুদ্ধের হয়তো অবসান হবে, মানুষ হয়তো ঘরে ফিরে যাবে। কিন্তু তখনকার সমস্যা হবে আরও জটিল, আরও ভিন্ন ধরনের। সেটি সামাল দেবে কে?
ব্যাটলশিপ পটেমকিনে একটি অসাধারণ দৃশ্য ছিল—একটি প্যারাম্বুলেটরে একটি শিশুকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রায় চলে যাচ্ছে। সেদিনও টেলিভিশনে দেখলাম নিজগৃহ ত্যাগ করে একটি শিশু যখন তার পিতার কাঁধে চড়ে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তখন বারবার অশ্রু চোখে তার বাড়িটির দিকে তাকাচ্ছে। শিশুটির দুই চোখে অশ্রু কিন্তু ততক্ষণে কাছেই মুহুর্মুহু গোলা পড়ছে। অতএব ওদের ছুটতেই হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।
বিশ্বটাকে মানুষ কি শরণার্থীশিবির তৈরি করবে? সেই যে শুরু হয়েছে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, লিবিয়ায়। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই সব মানুষগুলো, যাঁরা জীবন বাজি রেখে ছুটে চলেছেন বাঁচার তাগিদে।
লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি
১০ মার্চ ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি
১০ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি
১০ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখতে দেখতে একটি জায়গায় হঠাৎ চোখ আটকে গেল। স্থানটির নাম ওদেসা। কৃষ্ণসাগরের পারে, যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিনের ঘটনাটি ঘটেছে। সময় ১৯০৫ সাল, নির্বাক ছবির যুগের। ছবির কাজটি হয় ১৯২৫ সালে। ছবিটির নির্মাতা বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সার্গেই আইজেনস্টাইন। পঁচাত্তর মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি
১০ মার্চ ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫