Ajker Patrika

এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি অর্ধশতাধিক পরিবার

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি অর্ধশতাধিক পরিবার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপো ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারান উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সলিমপুর এলাকার বাসিন্দা ও ডিপোর ক্রেনচালক আবদুল মনির হোসেন (৩০)। মনির যখন নিহত হন, তখন তাঁর স্ত্রী রহিমা আক্তার (২২) ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ও শেষ অবলম্বন মনিরের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী রহিমা। স্বামীর মৃত্যুর পর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানে গত আগস্টে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। শিশুসন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে তাঁর। দুর্ঘটনার পর ডিপো কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও তা এখনো পাননি। ক্ষতিপূরণ পেতে প্রতিদিন সম্ভাব্য সব স্থানে দৌড়ঝাঁপের পর দিন শেষে নিরাশ হয়ে ফেরেন।

শুধু রহিমা আক্তার নন, দুর্ঘটনার সাড়ে চার মাস পার হলেও এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি অর্ধশতাধিক হতাহতের পরিবার। ক্ষতিপূরণ পেতে দীর্ঘ সময় দৌড়ঝাঁপের পর কোনো প্রতিকার না পেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি অভিযোগ নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবেও।

দুই মাস বয়সী শিশুকে কোলে নিয়ে প্রেসক্লাবে আসা রহিমা আক্তার অভিযোগ করেন, ক্ষতিপূরণ পেতে ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু শত চেষ্টার পরও কোনো সাড়া না পেয়ে বাঁচার তাগিদে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। সন্তানের ভরণপোষণ ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন।

বিস্ফোরণে আহত উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে এ ডিপোতে ডেস্ক সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনার পর এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ডিপো কর্তৃপক্ষ তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দেন। সেই সময় যথাযথ চিকিৎসার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

দুর্ঘটনায় আহত নোয়াখালীর মামুন, আমিরুল ইসলাম, নূর হোসেন, বিধান দে, জাহাঙ্গীর, নোমান ও বরিশালের মফিজ, মুরাদসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিস্ফোরণের পরে চিকিৎসা ব্যয়সহ সংসারের ভরণপোষণের খরচ মেটাতে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়লেও কর্তৃপক্ষ পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টো কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে গিয়ে একাধিকবার বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর বিএম কর্তৃপক্ষ হতাহত অনেককেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তবে শনাক্তে জটিলতার কারণেই এখনো কিছু মানুষ ক্ষতিপূরণ পাননি। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের তালিকা করে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিএম কনটেইনার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মঈনুল আহসান খান বলেন, উত্তরাধিকার সনদের জটিলতার কারণে নিহত তিনজনের পরিবারকে এখনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারেননি। পাশাপাশি তালিকা প্রণয়নে কিছু জটিলতার কারণে এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তি। যাঁরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের শিগগির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এতে সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন কর্মীসহ ৫১ 
জন নিহত হন। আহত হন ২৩০ জনের বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৯৮ পর্যন্ত কবে কোন দেশ বিশ্বকাপ নেবে—ভবিষ্যদ্বাণী করল গ্রোক এআই

সেই এনায়েত করিমের মামলায় সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে গ্রেপ্তার দেখাল ডিবি

খালেদা জিয়ার রিপোর্ট ভালো, চেষ্টা করছেন কথা বলার: চিকিৎসক

১০ ঘণ্টা পর বিটিআরসির অবরোধ তুলে নিলেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা

দিনে ১৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি, ভারতের চাষিদের মুখে হাসি ফেরাল বাংলাদেশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ