এ কে এম শামসুদ্দিন

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে টিকে থাকতে পারছে না। বিদ্রোহী দলগুলো একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে। তাদের এই অভিযানে সে দেশের তরুণেরাও অংশগ্রহণ করছে।
কাচিন, কারেন, চিন ও রাখাইনদের পাশাপাশি সু চির সমর্থক বামারদের একাংশ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী সশস্ত্র দলগুলো হলো—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা টিএনএলএ, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বা এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মি বা এএ। এই তিন সংগঠনই পৃথক জাতিসত্তার আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠনগুলো মিলেই ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গড়ে তুলেছে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের মধ্যে প্রথম দুটি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে সক্রিয়। এদের অবস্থান তাং ও ককং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে। এএ বা আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন আরাকানের রাখাইন অঞ্চলে সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা জারি রেখেছে।
এই মুহূর্তে মিয়ানমারের বেশ কিছু অঞ্চলে সম্মিলিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর বৃহত্তর সশস্ত্র এই তিন দল সমন্বিতভাবে জান্তা সামরিক বাহিনীর ওপর সম্মিলিত আক্রমণের সূচনা করে। তার পর থেকেই তারা একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে চলেছে।
সর্বশেষ খবর হলো, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এবং ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর পালতোয়া দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি আরাকান আর্মি। পালতোয়া চিন রাজ্যে অবস্থিত। সমগ্র পালেতোয়া এলাকায় অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সব ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করেছে। গত অক্টোবরে সম্মিলিত আক্রমণ সূচনার পর কয়েক ডজনেরও বেশি শহর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী জোট। এর মধ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কয়েক শ সামরিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ আউটপোস্ট অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহর লুয়াক্কাই দখল করে নেয় সশস্ত্র ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের যোদ্ধারা। সেই যুদ্ধে জান্তা বাহিনীর ২ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উইলসন সেন্টার’-এর এক বিশ্লেষক খবরটি নিশ্চিত করে জানান, আত্মসমর্পণ করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদের ছয়জন কর্মকর্তাকে সামরিক আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে। শাস্তি হিসেবে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড, নাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জান্তা বাহিনী এমন খবর নাকচ করে দিয়েছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবরের অভিযানের পর এযাবৎ ৪ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য পালিয়ে গেছেন অথবা আত্মসমর্পণ করার তথ্য জানা গেছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মোট ১৪ হাজার সেনাসদস্য বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে এত অধিকসংখ্যক সেনাসদস্যসহ অপারেশনাল কমান্ডারদের আত্মসমর্পণ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের একের পর এক পরাজয়ের ঘটনা সাধারণ সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সামরিক বাহিনীর সব স্তরের সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৈনিকদের মনোবল যদি একবার ভেঙে যায়, তাহলে সেই সব সেনাসদস্য নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যেকোনো কমান্ডারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর এই সমন্বিত আক্রমণের পেছনে চীনের ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, চীনের সবুজ সংকেত পেয়েই ২৭ অক্টোবর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে চীন যেমন নিরন্তর সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে তারা সদ্ভাব বজায় রেখেছে। এসব দলের অস্ত্রশস্ত্রের প্রধান উৎস হলো চীন। তবে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত কারেন ও চিন রাজ্যের সশস্ত্র দলগুলোর বিষয় ব্যতিক্রম ছিল। এসব অঞ্চলে পশ্চিমা বেসরকারি সহযোগিতার হার বেশি। ২০২১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর অং সান সু চির দল পিডিএফ ২০২২ সাল থেকে যখন সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চার্চ সমাজের যোগাযোগ আছে। এ ছাড়া পশ্চিমা সুশীল সমাজের নানা সংগঠন মিয়ানমারের এসব অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে মানবিক সহায়তা করে থাকে। বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের রাজনীতিমনস্ক তরুণসমাজের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হয়েছে। ওই একই তরুণসমাজের মধ্যে চীনের বিষয়ে সন্দেহ ও অনাস্থা বেড়েছে কয়েক গুণ। পশ্চিমাদের এরূপ সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা দেখে চীনকে নতুন করে পরিকল্পনা আঁটতে হয়। পশ্চিমাদের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনতে চীন সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। চীনের এমন সহযোগিতার মনোভাব পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গত ২৭ অক্টোবর মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত সামরিক অভিযান শুরু করে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীরাও পশ্চিমাদের সহযোগিতার জন্য বসে নেই। এ জন্য পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপকে দায়ী করা হয়। মিয়ানমার সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের পরে প্রতিরোধযুদ্ধে যখন ধীরে ধীরে গতি বাড়ছিল, তখন বিদ্রোহীদের প্রচুর অস্ত্রের দরকার ছিল। তারা আশা করেছিল, থাইল্যান্ডের মাধ্যমে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ন্যায় বিদ্রোহী দলগুলোকে অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। জান্তাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণনৃশংসতার স্পষ্ট ও চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ পশ্চিমা দেশগুলো জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্মা অ্যাক্ট’ আক্ষরিক অর্থে কোনো কাজেই আসেনি। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে জান্তাবিরোধী মিয়ানমার জাতীয় ঐক্য সরকার বা এনইউজির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা করতেও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিদ্রোহীরা পশ্চিমাদের সাহায্যের আশা ছেড়ে দিয়েছে। চীন এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে। তারা আগের মতো এখনো মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর প্রবলভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করে চলেছে। চীন তাদের এই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য সম্পর্ক বজায় রাখার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধের এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি চীন উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যবস্থা করে। যদিও এই চুক্তি বেশি দিন টেকেনি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও জান্তা বাহিনী আকাশ ও স্থল হামলা অব্যাহত রাখলে চুক্তি ভেঙে যায়। তবে পরিস্থিতি যেদিকেই মোড় নিক, নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষার জন্য চীন যেকোনো মূল্যে মিয়ানমারকে নিজ বলয়ের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলের কাছে সামরিক জান্তার উপর্যুপরি মার খাওয়ার ফলে সে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে। যখন কোনো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন সেই অপশক্তির পরাজয় অনিবার্য। এ কথার প্রতিধ্বনি যেন শোনা যায় মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দেওয়া মিয়ানমার জাতীয় এনইউজির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও মুখপাত্র কিউ জর মুখে। তিনি বলেছেন, ‘সামরিক জান্তাকে হটাতে মিয়ানমারের ইতিহাসে এই প্রথম জনগণ এত প্রবলভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিন বছর আগেও মনে করা হয়েছিল, শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা যাবে না। এখন প্রমাণিত হয়েছে, মিয়ানমারের জনগণ বর্বর এই সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দিতে সামর্থ্য রাখে। জনগণ যখন একবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন সেনাশাসকদের না হটিয়ে ঘরে ফিরে যাবে না।’ কিউ জর বক্তব্যে যে শক্তির আভাস পাওয়া যায়, তাতে জান্তা সরকার এখনই সরে যাবে তা নয়। তবে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ কথা বলা যায়, জান্তা সরকার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে এ সময় বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে চীনের যদি বিশেষ কোনো বোঝাপড়া হয়, তাহলে মিয়ানমারের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টেও যেতে পারে। তবে এমন কিছু হয় কি না, তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে টিকে থাকতে পারছে না। বিদ্রোহী দলগুলো একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে। তাদের এই অভিযানে সে দেশের তরুণেরাও অংশগ্রহণ করছে।
কাচিন, কারেন, চিন ও রাখাইনদের পাশাপাশি সু চির সমর্থক বামারদের একাংশ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী সশস্ত্র দলগুলো হলো—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা টিএনএলএ, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বা এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মি বা এএ। এই তিন সংগঠনই পৃথক জাতিসত্তার আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠনগুলো মিলেই ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গড়ে তুলেছে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের মধ্যে প্রথম দুটি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে সক্রিয়। এদের অবস্থান তাং ও ককং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে। এএ বা আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন আরাকানের রাখাইন অঞ্চলে সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা জারি রেখেছে।
এই মুহূর্তে মিয়ানমারের বেশ কিছু অঞ্চলে সম্মিলিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর বৃহত্তর সশস্ত্র এই তিন দল সমন্বিতভাবে জান্তা সামরিক বাহিনীর ওপর সম্মিলিত আক্রমণের সূচনা করে। তার পর থেকেই তারা একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে চলেছে।
সর্বশেষ খবর হলো, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এবং ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর পালতোয়া দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি আরাকান আর্মি। পালতোয়া চিন রাজ্যে অবস্থিত। সমগ্র পালেতোয়া এলাকায় অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সব ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করেছে। গত অক্টোবরে সম্মিলিত আক্রমণ সূচনার পর কয়েক ডজনেরও বেশি শহর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী জোট। এর মধ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কয়েক শ সামরিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ আউটপোস্ট অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহর লুয়াক্কাই দখল করে নেয় সশস্ত্র ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের যোদ্ধারা। সেই যুদ্ধে জান্তা বাহিনীর ২ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উইলসন সেন্টার’-এর এক বিশ্লেষক খবরটি নিশ্চিত করে জানান, আত্মসমর্পণ করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদের ছয়জন কর্মকর্তাকে সামরিক আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে। শাস্তি হিসেবে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড, নাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জান্তা বাহিনী এমন খবর নাকচ করে দিয়েছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবরের অভিযানের পর এযাবৎ ৪ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য পালিয়ে গেছেন অথবা আত্মসমর্পণ করার তথ্য জানা গেছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মোট ১৪ হাজার সেনাসদস্য বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে এত অধিকসংখ্যক সেনাসদস্যসহ অপারেশনাল কমান্ডারদের আত্মসমর্পণ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের একের পর এক পরাজয়ের ঘটনা সাধারণ সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সামরিক বাহিনীর সব স্তরের সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৈনিকদের মনোবল যদি একবার ভেঙে যায়, তাহলে সেই সব সেনাসদস্য নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যেকোনো কমান্ডারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর এই সমন্বিত আক্রমণের পেছনে চীনের ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, চীনের সবুজ সংকেত পেয়েই ২৭ অক্টোবর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে চীন যেমন নিরন্তর সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে তারা সদ্ভাব বজায় রেখেছে। এসব দলের অস্ত্রশস্ত্রের প্রধান উৎস হলো চীন। তবে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত কারেন ও চিন রাজ্যের সশস্ত্র দলগুলোর বিষয় ব্যতিক্রম ছিল। এসব অঞ্চলে পশ্চিমা বেসরকারি সহযোগিতার হার বেশি। ২০২১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর অং সান সু চির দল পিডিএফ ২০২২ সাল থেকে যখন সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চার্চ সমাজের যোগাযোগ আছে। এ ছাড়া পশ্চিমা সুশীল সমাজের নানা সংগঠন মিয়ানমারের এসব অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে মানবিক সহায়তা করে থাকে। বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের রাজনীতিমনস্ক তরুণসমাজের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হয়েছে। ওই একই তরুণসমাজের মধ্যে চীনের বিষয়ে সন্দেহ ও অনাস্থা বেড়েছে কয়েক গুণ। পশ্চিমাদের এরূপ সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা দেখে চীনকে নতুন করে পরিকল্পনা আঁটতে হয়। পশ্চিমাদের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনতে চীন সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। চীনের এমন সহযোগিতার মনোভাব পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গত ২৭ অক্টোবর মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত সামরিক অভিযান শুরু করে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীরাও পশ্চিমাদের সহযোগিতার জন্য বসে নেই। এ জন্য পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপকে দায়ী করা হয়। মিয়ানমার সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের পরে প্রতিরোধযুদ্ধে যখন ধীরে ধীরে গতি বাড়ছিল, তখন বিদ্রোহীদের প্রচুর অস্ত্রের দরকার ছিল। তারা আশা করেছিল, থাইল্যান্ডের মাধ্যমে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ন্যায় বিদ্রোহী দলগুলোকে অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। জান্তাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণনৃশংসতার স্পষ্ট ও চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ পশ্চিমা দেশগুলো জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্মা অ্যাক্ট’ আক্ষরিক অর্থে কোনো কাজেই আসেনি। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে জান্তাবিরোধী মিয়ানমার জাতীয় ঐক্য সরকার বা এনইউজির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা করতেও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিদ্রোহীরা পশ্চিমাদের সাহায্যের আশা ছেড়ে দিয়েছে। চীন এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে। তারা আগের মতো এখনো মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর প্রবলভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করে চলেছে। চীন তাদের এই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য সম্পর্ক বজায় রাখার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধের এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি চীন উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যবস্থা করে। যদিও এই চুক্তি বেশি দিন টেকেনি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও জান্তা বাহিনী আকাশ ও স্থল হামলা অব্যাহত রাখলে চুক্তি ভেঙে যায়। তবে পরিস্থিতি যেদিকেই মোড় নিক, নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষার জন্য চীন যেকোনো মূল্যে মিয়ানমারকে নিজ বলয়ের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলের কাছে সামরিক জান্তার উপর্যুপরি মার খাওয়ার ফলে সে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে। যখন কোনো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন সেই অপশক্তির পরাজয় অনিবার্য। এ কথার প্রতিধ্বনি যেন শোনা যায় মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দেওয়া মিয়ানমার জাতীয় এনইউজির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও মুখপাত্র কিউ জর মুখে। তিনি বলেছেন, ‘সামরিক জান্তাকে হটাতে মিয়ানমারের ইতিহাসে এই প্রথম জনগণ এত প্রবলভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিন বছর আগেও মনে করা হয়েছিল, শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা যাবে না। এখন প্রমাণিত হয়েছে, মিয়ানমারের জনগণ বর্বর এই সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দিতে সামর্থ্য রাখে। জনগণ যখন একবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন সেনাশাসকদের না হটিয়ে ঘরে ফিরে যাবে না।’ কিউ জর বক্তব্যে যে শক্তির আভাস পাওয়া যায়, তাতে জান্তা সরকার এখনই সরে যাবে তা নয়। তবে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ কথা বলা যায়, জান্তা সরকার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে এ সময় বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে চীনের যদি বিশেষ কোনো বোঝাপড়া হয়, তাহলে মিয়ানমারের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টেও যেতে পারে। তবে এমন কিছু হয় কি না, তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
এ কে এম শামসুদ্দিন

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে টিকে থাকতে পারছে না। বিদ্রোহী দলগুলো একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে। তাদের এই অভিযানে সে দেশের তরুণেরাও অংশগ্রহণ করছে।
কাচিন, কারেন, চিন ও রাখাইনদের পাশাপাশি সু চির সমর্থক বামারদের একাংশ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী সশস্ত্র দলগুলো হলো—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা টিএনএলএ, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বা এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মি বা এএ। এই তিন সংগঠনই পৃথক জাতিসত্তার আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠনগুলো মিলেই ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গড়ে তুলেছে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের মধ্যে প্রথম দুটি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে সক্রিয়। এদের অবস্থান তাং ও ককং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে। এএ বা আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন আরাকানের রাখাইন অঞ্চলে সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা জারি রেখেছে।
এই মুহূর্তে মিয়ানমারের বেশ কিছু অঞ্চলে সম্মিলিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর বৃহত্তর সশস্ত্র এই তিন দল সমন্বিতভাবে জান্তা সামরিক বাহিনীর ওপর সম্মিলিত আক্রমণের সূচনা করে। তার পর থেকেই তারা একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে চলেছে।
সর্বশেষ খবর হলো, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এবং ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর পালতোয়া দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি আরাকান আর্মি। পালতোয়া চিন রাজ্যে অবস্থিত। সমগ্র পালেতোয়া এলাকায় অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সব ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করেছে। গত অক্টোবরে সম্মিলিত আক্রমণ সূচনার পর কয়েক ডজনেরও বেশি শহর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী জোট। এর মধ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কয়েক শ সামরিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ আউটপোস্ট অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহর লুয়াক্কাই দখল করে নেয় সশস্ত্র ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের যোদ্ধারা। সেই যুদ্ধে জান্তা বাহিনীর ২ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উইলসন সেন্টার’-এর এক বিশ্লেষক খবরটি নিশ্চিত করে জানান, আত্মসমর্পণ করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদের ছয়জন কর্মকর্তাকে সামরিক আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে। শাস্তি হিসেবে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড, নাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জান্তা বাহিনী এমন খবর নাকচ করে দিয়েছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবরের অভিযানের পর এযাবৎ ৪ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য পালিয়ে গেছেন অথবা আত্মসমর্পণ করার তথ্য জানা গেছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মোট ১৪ হাজার সেনাসদস্য বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে এত অধিকসংখ্যক সেনাসদস্যসহ অপারেশনাল কমান্ডারদের আত্মসমর্পণ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের একের পর এক পরাজয়ের ঘটনা সাধারণ সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সামরিক বাহিনীর সব স্তরের সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৈনিকদের মনোবল যদি একবার ভেঙে যায়, তাহলে সেই সব সেনাসদস্য নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যেকোনো কমান্ডারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর এই সমন্বিত আক্রমণের পেছনে চীনের ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, চীনের সবুজ সংকেত পেয়েই ২৭ অক্টোবর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে চীন যেমন নিরন্তর সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে তারা সদ্ভাব বজায় রেখেছে। এসব দলের অস্ত্রশস্ত্রের প্রধান উৎস হলো চীন। তবে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত কারেন ও চিন রাজ্যের সশস্ত্র দলগুলোর বিষয় ব্যতিক্রম ছিল। এসব অঞ্চলে পশ্চিমা বেসরকারি সহযোগিতার হার বেশি। ২০২১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর অং সান সু চির দল পিডিএফ ২০২২ সাল থেকে যখন সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চার্চ সমাজের যোগাযোগ আছে। এ ছাড়া পশ্চিমা সুশীল সমাজের নানা সংগঠন মিয়ানমারের এসব অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে মানবিক সহায়তা করে থাকে। বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের রাজনীতিমনস্ক তরুণসমাজের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হয়েছে। ওই একই তরুণসমাজের মধ্যে চীনের বিষয়ে সন্দেহ ও অনাস্থা বেড়েছে কয়েক গুণ। পশ্চিমাদের এরূপ সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা দেখে চীনকে নতুন করে পরিকল্পনা আঁটতে হয়। পশ্চিমাদের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনতে চীন সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। চীনের এমন সহযোগিতার মনোভাব পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গত ২৭ অক্টোবর মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত সামরিক অভিযান শুরু করে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীরাও পশ্চিমাদের সহযোগিতার জন্য বসে নেই। এ জন্য পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপকে দায়ী করা হয়। মিয়ানমার সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের পরে প্রতিরোধযুদ্ধে যখন ধীরে ধীরে গতি বাড়ছিল, তখন বিদ্রোহীদের প্রচুর অস্ত্রের দরকার ছিল। তারা আশা করেছিল, থাইল্যান্ডের মাধ্যমে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ন্যায় বিদ্রোহী দলগুলোকে অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। জান্তাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণনৃশংসতার স্পষ্ট ও চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ পশ্চিমা দেশগুলো জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্মা অ্যাক্ট’ আক্ষরিক অর্থে কোনো কাজেই আসেনি। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে জান্তাবিরোধী মিয়ানমার জাতীয় ঐক্য সরকার বা এনইউজির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা করতেও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিদ্রোহীরা পশ্চিমাদের সাহায্যের আশা ছেড়ে দিয়েছে। চীন এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে। তারা আগের মতো এখনো মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর প্রবলভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করে চলেছে। চীন তাদের এই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য সম্পর্ক বজায় রাখার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধের এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি চীন উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যবস্থা করে। যদিও এই চুক্তি বেশি দিন টেকেনি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও জান্তা বাহিনী আকাশ ও স্থল হামলা অব্যাহত রাখলে চুক্তি ভেঙে যায়। তবে পরিস্থিতি যেদিকেই মোড় নিক, নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষার জন্য চীন যেকোনো মূল্যে মিয়ানমারকে নিজ বলয়ের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলের কাছে সামরিক জান্তার উপর্যুপরি মার খাওয়ার ফলে সে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে। যখন কোনো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন সেই অপশক্তির পরাজয় অনিবার্য। এ কথার প্রতিধ্বনি যেন শোনা যায় মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দেওয়া মিয়ানমার জাতীয় এনইউজির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও মুখপাত্র কিউ জর মুখে। তিনি বলেছেন, ‘সামরিক জান্তাকে হটাতে মিয়ানমারের ইতিহাসে এই প্রথম জনগণ এত প্রবলভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিন বছর আগেও মনে করা হয়েছিল, শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা যাবে না। এখন প্রমাণিত হয়েছে, মিয়ানমারের জনগণ বর্বর এই সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দিতে সামর্থ্য রাখে। জনগণ যখন একবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন সেনাশাসকদের না হটিয়ে ঘরে ফিরে যাবে না।’ কিউ জর বক্তব্যে যে শক্তির আভাস পাওয়া যায়, তাতে জান্তা সরকার এখনই সরে যাবে তা নয়। তবে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ কথা বলা যায়, জান্তা সরকার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে এ সময় বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে চীনের যদি বিশেষ কোনো বোঝাপড়া হয়, তাহলে মিয়ানমারের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টেও যেতে পারে। তবে এমন কিছু হয় কি না, তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে টিকে থাকতে পারছে না। বিদ্রোহী দলগুলো একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে। তাদের এই অভিযানে সে দেশের তরুণেরাও অংশগ্রহণ করছে।
কাচিন, কারেন, চিন ও রাখাইনদের পাশাপাশি সু চির সমর্থক বামারদের একাংশ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী সশস্ত্র দলগুলো হলো—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা টিএনএলএ, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বা এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মি বা এএ। এই তিন সংগঠনই পৃথক জাতিসত্তার আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠনগুলো মিলেই ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গড়ে তুলেছে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের মধ্যে প্রথম দুটি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে সক্রিয়। এদের অবস্থান তাং ও ককং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে। এএ বা আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন আরাকানের রাখাইন অঞ্চলে সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা জারি রেখেছে।
এই মুহূর্তে মিয়ানমারের বেশ কিছু অঞ্চলে সম্মিলিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবর বৃহত্তর সশস্ত্র এই তিন দল সমন্বিতভাবে জান্তা সামরিক বাহিনীর ওপর সম্মিলিত আক্রমণের সূচনা করে। তার পর থেকেই তারা একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে চলেছে।
সর্বশেষ খবর হলো, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এবং ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর পালতোয়া দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি আরাকান আর্মি। পালতোয়া চিন রাজ্যে অবস্থিত। সমগ্র পালেতোয়া এলাকায় অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সব ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করেছে। গত অক্টোবরে সম্মিলিত আক্রমণ সূচনার পর কয়েক ডজনেরও বেশি শহর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী জোট। এর মধ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কয়েক শ সামরিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ আউটপোস্ট অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহর লুয়াক্কাই দখল করে নেয় সশস্ত্র ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের যোদ্ধারা। সেই যুদ্ধে জান্তা বাহিনীর ২ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উইলসন সেন্টার’-এর এক বিশ্লেষক খবরটি নিশ্চিত করে জানান, আত্মসমর্পণ করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদের ছয়জন কর্মকর্তাকে সামরিক আদালতে সাজা দেওয়া হয়েছে। শাস্তি হিসেবে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড, নাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জান্তা বাহিনী এমন খবর নাকচ করে দিয়েছে। গত বছরের ২৭ অক্টোবরের অভিযানের পর এযাবৎ ৪ হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য পালিয়ে গেছেন অথবা আত্মসমর্পণ করার তথ্য জানা গেছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মোট ১৪ হাজার সেনাসদস্য বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে এত অধিকসংখ্যক সেনাসদস্যসহ অপারেশনাল কমান্ডারদের আত্মসমর্পণ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের একের পর এক পরাজয়ের ঘটনা সাধারণ সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সামরিক বাহিনীর সব স্তরের সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৈনিকদের মনোবল যদি একবার ভেঙে যায়, তাহলে সেই সব সেনাসদস্য নিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যেকোনো কমান্ডারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর এই সমন্বিত আক্রমণের পেছনে চীনের ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, চীনের সবুজ সংকেত পেয়েই ২৭ অক্টোবর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে চীন যেমন নিরন্তর সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে তারা সদ্ভাব বজায় রেখেছে। এসব দলের অস্ত্রশস্ত্রের প্রধান উৎস হলো চীন। তবে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত কারেন ও চিন রাজ্যের সশস্ত্র দলগুলোর বিষয় ব্যতিক্রম ছিল। এসব অঞ্চলে পশ্চিমা বেসরকারি সহযোগিতার হার বেশি। ২০২১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর অং সান সু চির দল পিডিএফ ২০২২ সাল থেকে যখন সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চার্চ সমাজের যোগাযোগ আছে। এ ছাড়া পশ্চিমা সুশীল সমাজের নানা সংগঠন মিয়ানমারের এসব অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে মানবিক সহায়তা করে থাকে। বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের রাজনীতিমনস্ক তরুণসমাজের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হয়েছে। ওই একই তরুণসমাজের মধ্যে চীনের বিষয়ে সন্দেহ ও অনাস্থা বেড়েছে কয়েক গুণ। পশ্চিমাদের এরূপ সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা দেখে চীনকে নতুন করে পরিকল্পনা আঁটতে হয়। পশ্চিমাদের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনতে চীন সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। চীনের এমন সহযোগিতার মনোভাব পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স গত ২৭ অক্টোবর মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত সামরিক অভিযান শুরু করে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীরাও পশ্চিমাদের সহযোগিতার জন্য বসে নেই। এ জন্য পশ্চিমাদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপকে দায়ী করা হয়। মিয়ানমার সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের পরে প্রতিরোধযুদ্ধে যখন ধীরে ধীরে গতি বাড়ছিল, তখন বিদ্রোহীদের প্রচুর অস্ত্রের দরকার ছিল। তারা আশা করেছিল, থাইল্যান্ডের মাধ্যমে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ন্যায় বিদ্রোহী দলগুলোকে অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। জান্তাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণনৃশংসতার স্পষ্ট ও চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ পশ্চিমা দেশগুলো জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্মা অ্যাক্ট’ আক্ষরিক অর্থে কোনো কাজেই আসেনি। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে জান্তাবিরোধী মিয়ানমার জাতীয় ঐক্য সরকার বা এনইউজির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা করতেও ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিদ্রোহীরা পশ্চিমাদের সাহায্যের আশা ছেড়ে দিয়েছে। চীন এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে। তারা আগের মতো এখনো মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর প্রবলভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করে চলেছে। চীন তাদের এই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষের সঙ্গে ভারসাম্য সম্পর্ক বজায় রাখার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধের এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি চীন উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যবস্থা করে। যদিও এই চুক্তি বেশি দিন টেকেনি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও জান্তা বাহিনী আকাশ ও স্থল হামলা অব্যাহত রাখলে চুক্তি ভেঙে যায়। তবে পরিস্থিতি যেদিকেই মোড় নিক, নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষার জন্য চীন যেকোনো মূল্যে মিয়ানমারকে নিজ বলয়ের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলের কাছে সামরিক জান্তার উপর্যুপরি মার খাওয়ার ফলে সে দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্যের সৃষ্টি হয়েছে। যখন কোনো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন সেই অপশক্তির পরাজয় অনিবার্য। এ কথার প্রতিধ্বনি যেন শোনা যায় মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে অনলাইনে যুক্ত হয়ে দেওয়া মিয়ানমার জাতীয় এনইউজির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও মুখপাত্র কিউ জর মুখে। তিনি বলেছেন, ‘সামরিক জান্তাকে হটাতে মিয়ানমারের ইতিহাসে এই প্রথম জনগণ এত প্রবলভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিন বছর আগেও মনে করা হয়েছিল, শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা যাবে না। এখন প্রমাণিত হয়েছে, মিয়ানমারের জনগণ বর্বর এই সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দিতে সামর্থ্য রাখে। জনগণ যখন একবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন সেনাশাসকদের না হটিয়ে ঘরে ফিরে যাবে না।’ কিউ জর বক্তব্যে যে শক্তির আভাস পাওয়া যায়, তাতে জান্তা সরকার এখনই সরে যাবে তা নয়। তবে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ কথা বলা যায়, জান্তা সরকার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে এ সময় বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে চীনের যদি বিশেষ কোনো বোঝাপড়া হয়, তাহলে মিয়ানমারের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টেও যেতে পারে। তবে এমন কিছু হয় কি না, তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুল
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুল
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুল
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। বর্তমানে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়ে তারা নাস্তানাবুদ হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে গিয়ে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুল
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫