Ajker Patrika

জনগণের স্বস্তির ঈদ, বিএনপি বলছে ‘কষ্টের’

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ০৬ মে ২০২২, ১০: ২৪
জনগণের স্বস্তির ঈদ, বিএনপি বলছে ‘কষ্টের’

৩ মে, মঙ্গলবার ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। করোনায় দুই বছর অনেকটা বন্দিজীবন শেষে এবার ঈদ কেটেছে মুক্তভাবে। ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ এবার শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ঈদ করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। কেবল রাজধানী ঢাকা ছেড়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমার, বিমান ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে এসব মানুষ শহর থেকে গ্রামে গেছে।

এবার ঈদের আগে ছুটি বেশি পাওয়ায় ব্যাপকসংখ্যক মানুষ পরিবারের সদস্যদের আগেভাগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিতে পেরেছে। তা ছাড়া, সড়ক সংস্কার ও ব্যবস্থাপনায় এ বছর কর্তৃপক্ষ দক্ষতা দেখাতে পেরেছে। তাই ঈদ করতে যাওয়া মানুষ অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পেরেছে। অতীতে অবশ্য যানবাহনে মানুষের চাপ সামলানো যায়নি, সে কারণে ঈদে বাড়ি যাওয়ার ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতো। টিকিট পাওয়া, গাড়িতে ওঠা, বাড়িতে নিরাপদে পৌঁছানো ছিল কঠিন কাজ। মানুষ গ্রামে যেতে সব ঝুঁকি মাথায় পেতে নিত। ঈদে বাড়ি যাওয়ার সেই দুর্ভোগের দৃশ্য অকল্পনীয় ছিল। এবার অবশ্য সে রকম কিছু ঘটেনি। যারা বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে বাড়ি গেছে, তাদের স্বস্তির কথাই প্রতিদিন গণমাধ্যমে আমরা শুনেছি, দেখেছি। এ বছর ঈদযাত্রার ব্যবস্থাপনার অর্জনটি যেন ভবিষ্যতে অক্ষুণ্ন থাকে, সেটি আমাদের একান্ত কামনা।

আড়াই বছর ধরে করোনার অতিমারি সংক্রমণে গোটা বিশ্ব জর্জরিত। এখনো মুক্ত হতে পারেনি অনেক অঞ্চল। আমরা বলা চলে কিছুদিন আগে মুক্ত হলেও করোনার নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকে মোটেও মুক্ত নই। বিশেষজ্ঞরা তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিলেও দুই-তিন মাস ধরেই সেটি মেনে চলার বেলায় মানুষের মধ্যে ঔদাসীন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষ। গোটা বিশ্বই এখন নানা অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। বাংলাদেশও এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। আমদানি করা বেশ কিছু পণ্যসামগ্রীর দাম এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাজারও তাই অস্থির। অসাধু ব্যবসায়ীরাও এই অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢালছেন। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে।

তারপরও মানুষ যেভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ছোট, বড়, মাঝারি সব ধরনের ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠছে বলে দেশের বোদ্ধাদের অভিমত। ঈদ শেষে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এ বছর দেশে ঈদ উপলক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি, বিশেষ সাশ্রয়ী মূল্যের কার্ড, ভিজিএফ সহযোগিতার আওতা বৃদ্ধি করার ফলে শহর এবং গ্রামাঞ্চলের ব্যাপকসংখ্যক দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ উপকৃত হয়েছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা হতদরিদ্র ব্যক্তিদের নানাভাবে সহযোগিতায় এবারও এগিয়ে এসেছে। রমজানে এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ গরিবদের কাপড়চোপড় ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকে। এর ছাপ পড়েছে এবারও সেসব দরিদ্র মানুষের শহর থেকে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনার দৃশ্য দেখে।

 মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারীসবচেয়ে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, এই প্রথম দেশের পোশাকশ্রমিকেরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছেন। নিকট অতীতে সাধারণত ঈদের আগে পোশাকশ্রমিকদের বেতন-বোনাসের দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে থাকতে দেখা যেত। এবার সেই দৃশ্যটি দেখতে হয়নি। অবশ্য আশঙ্কা ছিল, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান হয়তো বেতন-বোনাস পরিশোধে সক্ষম হবে না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা গেছে, এটি এবারের ঈদে আরেকটি স্বস্তিদায়ক ঘটনা। ২০২২ সালের বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশে ঈদযাত্রার এমন দৃশ্যকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ঈদ করতে গেছেন বলেও প্রচারিত হয়েছে। শহর এবং গ্রামের সর্বত্রই ঈদের কেনাকাটায় যেমন ধুম পরিলক্ষিত হয়েছে, ঈদও পালিত হয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং উৎসবের আমেজে। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো কেউ কেউ প্রিয়জন হারানো, অসুখ-বিসুখ কিংবা অপ্রত্যাশিত কারণে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি, তেমনটি সব সময়ই ঘটে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এবার ঈদে স্বস্তি ও বৃষ্টি দুটোই দেখা গেছে। ঈদের আগে বেশ গরম ছিল। বৃষ্টি সেই গরমে স্বস্তি ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। তবে কোথাও কোথাও বজ্রপাত ঘটায় বেশ কিছু দুঃসংবাদের কথা শুনতে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ঈদ এ বছর ধনী-দরিদ্র সব পরিবারেই উৎসবমুখর কিংবা স্বাচ্ছন্দ্যে কেটেছে। এমন স্বস্তির খবর গণমাধ্যমগুলোতেই ঈদের দিনে প্রচারিত হয়েছে।

কিন্তু রাজনৈতিক মহলে সাধারণভাবে ঈদের এই বাস্তবতা নিয়েও দেখা গেছে বিভাজিত মত। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে বলেছেন, দেশের মানুষ এ বছর সরকারের দুঃশাসনে ‘কষ্টে’ ঈদ পালন করছে। তিনি সে কারণে সৃষ্টিকর্তার কাছে জনগণের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। ঈদ উৎসব পালনে ব্যস্ত মানুষ বিএনপির এই বক্তব্য বা মনোভাবের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশে আদৌ মনোযোগ দিয়েছে কি না, সেটি জানা সম্ভব নয়।

ঈদে কোথাও কোথাও সহিংসতা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কারও কারও জীবনহানি হয়েছে, এটি দুঃখজনক। ঈদ উৎসবে হানাহানি-মারামারি সংঘটিত হবে, এটি মোটেও কাম্য নয়। ঈদ আনন্দের। মানুষ শহর থেকে গ্রামে ঈদের আনন্দে শামিল হতে ছুটে গেছে। সেই আনন্দই তারা উপভোগ করেছে। কোথাও কোথাও যারা এই আনন্দের পরিবেশ নষ্ট করেছে, তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই তা করেছে। এতে তাদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। তবে সারা দেশের সাধারণ মানুষ এসব রাজনৈতিক বক্তব্য শোনা এবং মারামারি-হানাহানি দেখার পর্যায়ে নেই। সে কারণে রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তি, হানাহানি এবার খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। মানুষ এখন ফেরার অপেক্ষায়। শুক্রবার থেকে শুরু শহরে ফেরা মানুষের ঢল। রোববার অফিস খুলবে। সময় মাত্র দুই দিন। শহরে ফিরতে এবার মনে হয় ভিড়ভাট্টা বেশি হবে, পরিবহন সংকট বেড়ে যেতে পারে। নানা অজুহাতে এমন পরিস্থিতিতে পরিবহনগুলোতে বেশি ভাড়া অদায় করা হতে পারে।

বাড়ি যাওয়ার সময়ও পরিবহনগুলোতে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা সেটি বরাবরের মতোই অস্বীকার করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত, অর্থদণ্ড এবং সতর্ক করা সত্ত্বেও ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা থেকে পরিবহনগুলো মুক্ত থাকতে পারেনি। তবে ট্রেনের ভাড়া আগের মতোই আছে। সাধারণ যাত্রীদের আস্থা তাই ট্রেনেই বেশি দেখা যাচ্ছে। যাত্রীসাধারণের চাহিদা অনুযায়ী রেলপথে নতুন নতুন আন্তনগর সার্ভিস চালু করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে এই খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের রেলযাত্রাকে নির্বিঘ্ন, আরামদায়ক এবং সহজলভ্য করার উদ্যোগ কর্তৃপক্ষের নেওয়া উচিত। এবার বেশির ভাগ যাত্রীই রেলভ্রমণকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। দেশের অন্য পরিবহন খাতগুলো মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সুযোগ পেলেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা, যাত্রীসাধারণকে হয়রানি করা এবং পথে পথে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন করতে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা কাজ করছে না।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিশেষ উৎসবে ভালো সেবা দেওয়ার মানসিকতা ও প্রতিযোগিতা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের বেসরকারি পরিবহনগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো মানসিকতা। সে কারণে সবে ধন নীলমণি রেলওয়ে সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় এটিকেও রুগ্‌ণ শিল্পে পরিণত করা হয়েছিল। ক্ষমতাসীন সরকার সেই জায়গা থেকে রেলকে বের করে এনেছে। পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া রেল মন্ত্রণালয় পুনরায় চালু করা হয়েছে, নতুন বেশ কিছু ইঞ্জিন এবং বগি ঈদ উপলক্ষে যোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রেলওয়ে এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। নতুন নতুন রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি, বাংলাদেশ রেলওয়ে জনগণের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য যানবাহন হিসেবে ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাবে। এবারের ঈদের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার রেল সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নে যেমন কাজ করতে পারবে, একই সঙ্গে বেসরকারি গণপরিবহনসহ বাস, লঞ্চ, স্টিমারগুলো সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেড়ে ওঠার নীতি অনুসরণ করবে, সেটিই সবার কাম্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত