ইশফাক ইলাহী চৌধুরী

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্য দেশগুলোর জন্য একটি রোল মডেলে পরিণত হয়। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বাংলাদেশ যেন সামগ্রিক উন্নয়ন, অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন, সামাজিক সমতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু তখন বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সহজে গ্রহণ করেনি। এটা আমাদের ভালোভাবেই মনে থাকার কথা যে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই দুটি পরাশক্তির নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের ব্যাপক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যস্ত ছিল এবং পাকিস্তানকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার বিশেষ প্রয়োজন পড়েছিল। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রতি সম্পূর্ণ সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাদের ধারণা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সোভিয়েত ব্লকের আরেকটি দেশ এবং যেটি পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পশ্চিমা শক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং জোটনিরপেক্ষ জোটে একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়।
বিশ্ব গত ৫০ বছর নানাবিধ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং বিশ্বকে এককভাবে শাসন করে। ১৯৯১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ঘোষণা করেন যে এখন থেকে মার্কিন নেতৃত্বে এক কেন্দ্রিক বিশ্ব—যা হবে তাঁর ভাষায়, গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা। তবে এই বিশ্বব্যবস্থার আয়ু ছিল অল্পদিন। শিগগিরই কমিউনিস্ট শাসিত চীন নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু অর্থনৈতিক অগ্রসরমাণ দেশ চীনকে তাদের উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বেছে নেয়। বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রয়াসকে অনেকেই চীনের ভবিষ্যতের বৈশ্বিক শক্তির নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।
দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বিরাট অঞ্চলের ওপর চীন একক মালিকানার দাবির প্রতি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দেশগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল রাজ্য এবং লাদাখের ওপর মালিকানার পুরোনো দাবি নতুন করে উত্থাপন করেছে চীন। চীনের উত্থান রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশ ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর মিলে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়ন করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সামরিক জোট কোয়াড তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর চীনের সম্ভাব্য সম্প্রসারণবাদ ও আগ্রাসনকে রুখে দিতে।
উল্লিখিত শক্তির কৌশলগত পাওয়ার গেমের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের অবস্থান। যদি কেউ মানচিত্রের দিকে নজর দেন, তবে সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন বিশ্বের কৌশলগত রাজনীতির কোথায় বাংলাদেশের অবস্থান। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে এবং এশিয়ান রেলওয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে। হিমালয় পর্বতমালার পূর্ব প্রান্ত মিয়ানমার থেকে পশ্চিম প্রান্ত আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান, যা দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের যোগাযোগের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভারতের অরুণাচল নিয়ে ভারত-চীনের মধ্যে কখনো যুদ্ধ বাধে বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তবে সৈন্য চলাচল ও যুদ্ধের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের জন্য বাংলাদেশ অতিগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সুতরাং এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে তখন চীন ও ভারত এবং ভারতের সমর্থক পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক কৌশল ভালোভাবেই ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা বিআরআইয়ে যোগ দিয়েছি। ফলে চীন আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাশাপাশি ভারত, জাপান, কোরিয়া আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি ঘোষণা করেছে, যার সঙ্গে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির গভীর মিল রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যার সঙ্গে কোনোভাবেই সামরিক স্বার্থকে মেলানো যাবে না।
এখন পর্যন্ত আমাদের যাত্রা ভালোভাবেই এগিয়েছে। তবে সামনে রয়েছে এই যাত্রাপথের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিকৌশল নিয়ে চীন তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়ে হুমকির সুরে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেবে। অপরপক্ষে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ইস্যু উত্থাপন করে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রভাবশালী খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের দেশের উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষিত তরুণদের উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের প্রধানতম গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ও ফোরামে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। যে কারণে দেশটির সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ তার স্বাধীন বিদেশনীতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমাদের উত্থাপিত উদ্বেগের বিষয়গুলো আমরা পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না। এগুলো আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধানেও সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা আছে। সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারবার ধাক্কা খেয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং একই বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের অভ্যন্তরে খুন। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে অবিশ্বাস, সন্দেহ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, একগুঁয়েমি মনোভাব ও আলোচনায় অনীহা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল ও কালিমালিপ্ত করেছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কালোটাকা, পেশিশক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়, ফলে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এ ছাড়া, ধর্মীয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। গত দুই দশকে সরকার ইসলামি জঙ্গি ও তাদের ভয়ংকর মতবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যদিও জঙ্গিরা সমাজের মূল স্রোতে তেমন কোনো বিঘ্ন ঘটাতে সফল হয়নি, তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে সমাজের নানা পর্যায়ে আদর্শিক ও দার্শনিক যুদ্ধ বহাল রয়েছে।
ঔপনিবেশিক সূত্রে প্রাপ্ত আমাদের বিচারব্যবস্থা কায়েমি অদক্ষতার রোগে ভুগছে। অদক্ষ বিচারব্যবস্থার প্রধান শিকার হচ্ছে দরিদ্র ও সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অদক্ষ ও বিলম্বিত বিচার কিংবা বিচারহীনতার প্রতি অসন্তুষ্ট মানুষ বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টিকে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাগত জানায়। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, যাতে বিচার-প্রক্রিয়া কোনোভাবেই প্রলম্বিত না হয়।
আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সব সময় সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতি পক্ষপাত করেছে। ফলে বিগত বছরগুলোতে ক্রমেই ধনী ও দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আমরা প্রণিধানযোগ্য আর্থিক সফলতা অর্জন করেছি, তা সত্ত্বেও সরকারের উচিত পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। প্রশাসনিক অদক্ষতা ও ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে অবশ্যই জয়ী হতে হবে।
নিম্ন আয় থেকে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। তাই বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ অধিক মনোযোগ পাচ্ছে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার এবং প্রতিপক্ষের প্রতি দোষারোপের বদলে তা সমাধানে দ্রুততার সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা যদি সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারি এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হই, তাহলে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত। সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই উন্নয়নের পথ ধরে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পানে এগিয়ে যাবে।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্য দেশগুলোর জন্য একটি রোল মডেলে পরিণত হয়। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বাংলাদেশ যেন সামগ্রিক উন্নয়ন, অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন, সামাজিক সমতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু তখন বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সহজে গ্রহণ করেনি। এটা আমাদের ভালোভাবেই মনে থাকার কথা যে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই দুটি পরাশক্তির নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের ব্যাপক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যস্ত ছিল এবং পাকিস্তানকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার বিশেষ প্রয়োজন পড়েছিল। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রতি সম্পূর্ণ সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাদের ধারণা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সোভিয়েত ব্লকের আরেকটি দেশ এবং যেটি পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পশ্চিমা শক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং জোটনিরপেক্ষ জোটে একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়।
বিশ্ব গত ৫০ বছর নানাবিধ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং বিশ্বকে এককভাবে শাসন করে। ১৯৯১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ঘোষণা করেন যে এখন থেকে মার্কিন নেতৃত্বে এক কেন্দ্রিক বিশ্ব—যা হবে তাঁর ভাষায়, গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা। তবে এই বিশ্বব্যবস্থার আয়ু ছিল অল্পদিন। শিগগিরই কমিউনিস্ট শাসিত চীন নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু অর্থনৈতিক অগ্রসরমাণ দেশ চীনকে তাদের উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বেছে নেয়। বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রয়াসকে অনেকেই চীনের ভবিষ্যতের বৈশ্বিক শক্তির নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।
দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বিরাট অঞ্চলের ওপর চীন একক মালিকানার দাবির প্রতি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দেশগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল রাজ্য এবং লাদাখের ওপর মালিকানার পুরোনো দাবি নতুন করে উত্থাপন করেছে চীন। চীনের উত্থান রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশ ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর মিলে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়ন করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সামরিক জোট কোয়াড তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর চীনের সম্ভাব্য সম্প্রসারণবাদ ও আগ্রাসনকে রুখে দিতে।
উল্লিখিত শক্তির কৌশলগত পাওয়ার গেমের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের অবস্থান। যদি কেউ মানচিত্রের দিকে নজর দেন, তবে সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন বিশ্বের কৌশলগত রাজনীতির কোথায় বাংলাদেশের অবস্থান। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে এবং এশিয়ান রেলওয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে। হিমালয় পর্বতমালার পূর্ব প্রান্ত মিয়ানমার থেকে পশ্চিম প্রান্ত আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান, যা দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের যোগাযোগের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভারতের অরুণাচল নিয়ে ভারত-চীনের মধ্যে কখনো যুদ্ধ বাধে বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তবে সৈন্য চলাচল ও যুদ্ধের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের জন্য বাংলাদেশ অতিগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সুতরাং এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে তখন চীন ও ভারত এবং ভারতের সমর্থক পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক কৌশল ভালোভাবেই ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা বিআরআইয়ে যোগ দিয়েছি। ফলে চীন আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাশাপাশি ভারত, জাপান, কোরিয়া আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি ঘোষণা করেছে, যার সঙ্গে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির গভীর মিল রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যার সঙ্গে কোনোভাবেই সামরিক স্বার্থকে মেলানো যাবে না।
এখন পর্যন্ত আমাদের যাত্রা ভালোভাবেই এগিয়েছে। তবে সামনে রয়েছে এই যাত্রাপথের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিকৌশল নিয়ে চীন তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়ে হুমকির সুরে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেবে। অপরপক্ষে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ইস্যু উত্থাপন করে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রভাবশালী খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের দেশের উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষিত তরুণদের উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের প্রধানতম গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ও ফোরামে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। যে কারণে দেশটির সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ তার স্বাধীন বিদেশনীতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমাদের উত্থাপিত উদ্বেগের বিষয়গুলো আমরা পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না। এগুলো আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধানেও সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা আছে। সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারবার ধাক্কা খেয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং একই বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের অভ্যন্তরে খুন। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে অবিশ্বাস, সন্দেহ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, একগুঁয়েমি মনোভাব ও আলোচনায় অনীহা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল ও কালিমালিপ্ত করেছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কালোটাকা, পেশিশক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়, ফলে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এ ছাড়া, ধর্মীয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। গত দুই দশকে সরকার ইসলামি জঙ্গি ও তাদের ভয়ংকর মতবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যদিও জঙ্গিরা সমাজের মূল স্রোতে তেমন কোনো বিঘ্ন ঘটাতে সফল হয়নি, তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে সমাজের নানা পর্যায়ে আদর্শিক ও দার্শনিক যুদ্ধ বহাল রয়েছে।
ঔপনিবেশিক সূত্রে প্রাপ্ত আমাদের বিচারব্যবস্থা কায়েমি অদক্ষতার রোগে ভুগছে। অদক্ষ বিচারব্যবস্থার প্রধান শিকার হচ্ছে দরিদ্র ও সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অদক্ষ ও বিলম্বিত বিচার কিংবা বিচারহীনতার প্রতি অসন্তুষ্ট মানুষ বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টিকে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাগত জানায়। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, যাতে বিচার-প্রক্রিয়া কোনোভাবেই প্রলম্বিত না হয়।
আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সব সময় সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতি পক্ষপাত করেছে। ফলে বিগত বছরগুলোতে ক্রমেই ধনী ও দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আমরা প্রণিধানযোগ্য আর্থিক সফলতা অর্জন করেছি, তা সত্ত্বেও সরকারের উচিত পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। প্রশাসনিক অদক্ষতা ও ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে অবশ্যই জয়ী হতে হবে।
নিম্ন আয় থেকে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। তাই বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ অধিক মনোযোগ পাচ্ছে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার এবং প্রতিপক্ষের প্রতি দোষারোপের বদলে তা সমাধানে দ্রুততার সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা যদি সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারি এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হই, তাহলে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত। সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই উন্নয়নের পথ ধরে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পানে এগিয়ে যাবে।
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্য দেশগুলোর জন্য একটি রোল মডেলে পরিণত হয়। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বাংলাদেশ যেন সামগ্রিক উন্নয়ন, অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন, সামাজিক সমতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু তখন বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সহজে গ্রহণ করেনি। এটা আমাদের ভালোভাবেই মনে থাকার কথা যে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই দুটি পরাশক্তির নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের ব্যাপক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যস্ত ছিল এবং পাকিস্তানকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার বিশেষ প্রয়োজন পড়েছিল। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রতি সম্পূর্ণ সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাদের ধারণা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সোভিয়েত ব্লকের আরেকটি দেশ এবং যেটি পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পশ্চিমা শক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং জোটনিরপেক্ষ জোটে একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়।
বিশ্ব গত ৫০ বছর নানাবিধ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং বিশ্বকে এককভাবে শাসন করে। ১৯৯১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ঘোষণা করেন যে এখন থেকে মার্কিন নেতৃত্বে এক কেন্দ্রিক বিশ্ব—যা হবে তাঁর ভাষায়, গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা। তবে এই বিশ্বব্যবস্থার আয়ু ছিল অল্পদিন। শিগগিরই কমিউনিস্ট শাসিত চীন নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু অর্থনৈতিক অগ্রসরমাণ দেশ চীনকে তাদের উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বেছে নেয়। বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রয়াসকে অনেকেই চীনের ভবিষ্যতের বৈশ্বিক শক্তির নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।
দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বিরাট অঞ্চলের ওপর চীন একক মালিকানার দাবির প্রতি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দেশগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল রাজ্য এবং লাদাখের ওপর মালিকানার পুরোনো দাবি নতুন করে উত্থাপন করেছে চীন। চীনের উত্থান রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশ ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর মিলে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়ন করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সামরিক জোট কোয়াড তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর চীনের সম্ভাব্য সম্প্রসারণবাদ ও আগ্রাসনকে রুখে দিতে।
উল্লিখিত শক্তির কৌশলগত পাওয়ার গেমের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের অবস্থান। যদি কেউ মানচিত্রের দিকে নজর দেন, তবে সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন বিশ্বের কৌশলগত রাজনীতির কোথায় বাংলাদেশের অবস্থান। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে এবং এশিয়ান রেলওয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে। হিমালয় পর্বতমালার পূর্ব প্রান্ত মিয়ানমার থেকে পশ্চিম প্রান্ত আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান, যা দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের যোগাযোগের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভারতের অরুণাচল নিয়ে ভারত-চীনের মধ্যে কখনো যুদ্ধ বাধে বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তবে সৈন্য চলাচল ও যুদ্ধের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের জন্য বাংলাদেশ অতিগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সুতরাং এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে তখন চীন ও ভারত এবং ভারতের সমর্থক পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক কৌশল ভালোভাবেই ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা বিআরআইয়ে যোগ দিয়েছি। ফলে চীন আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাশাপাশি ভারত, জাপান, কোরিয়া আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি ঘোষণা করেছে, যার সঙ্গে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির গভীর মিল রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যার সঙ্গে কোনোভাবেই সামরিক স্বার্থকে মেলানো যাবে না।
এখন পর্যন্ত আমাদের যাত্রা ভালোভাবেই এগিয়েছে। তবে সামনে রয়েছে এই যাত্রাপথের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিকৌশল নিয়ে চীন তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়ে হুমকির সুরে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেবে। অপরপক্ষে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ইস্যু উত্থাপন করে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রভাবশালী খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের দেশের উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষিত তরুণদের উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের প্রধানতম গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ও ফোরামে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। যে কারণে দেশটির সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ তার স্বাধীন বিদেশনীতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমাদের উত্থাপিত উদ্বেগের বিষয়গুলো আমরা পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না। এগুলো আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধানেও সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা আছে। সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারবার ধাক্কা খেয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং একই বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের অভ্যন্তরে খুন। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে অবিশ্বাস, সন্দেহ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, একগুঁয়েমি মনোভাব ও আলোচনায় অনীহা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল ও কালিমালিপ্ত করেছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কালোটাকা, পেশিশক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়, ফলে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এ ছাড়া, ধর্মীয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। গত দুই দশকে সরকার ইসলামি জঙ্গি ও তাদের ভয়ংকর মতবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যদিও জঙ্গিরা সমাজের মূল স্রোতে তেমন কোনো বিঘ্ন ঘটাতে সফল হয়নি, তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে সমাজের নানা পর্যায়ে আদর্শিক ও দার্শনিক যুদ্ধ বহাল রয়েছে।
ঔপনিবেশিক সূত্রে প্রাপ্ত আমাদের বিচারব্যবস্থা কায়েমি অদক্ষতার রোগে ভুগছে। অদক্ষ বিচারব্যবস্থার প্রধান শিকার হচ্ছে দরিদ্র ও সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অদক্ষ ও বিলম্বিত বিচার কিংবা বিচারহীনতার প্রতি অসন্তুষ্ট মানুষ বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টিকে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাগত জানায়। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, যাতে বিচার-প্রক্রিয়া কোনোভাবেই প্রলম্বিত না হয়।
আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সব সময় সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতি পক্ষপাত করেছে। ফলে বিগত বছরগুলোতে ক্রমেই ধনী ও দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আমরা প্রণিধানযোগ্য আর্থিক সফলতা অর্জন করেছি, তা সত্ত্বেও সরকারের উচিত পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। প্রশাসনিক অদক্ষতা ও ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে অবশ্যই জয়ী হতে হবে।
নিম্ন আয় থেকে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। তাই বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ অধিক মনোযোগ পাচ্ছে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার এবং প্রতিপক্ষের প্রতি দোষারোপের বদলে তা সমাধানে দ্রুততার সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা যদি সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারি এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হই, তাহলে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত। সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই উন্নয়নের পথ ধরে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পানে এগিয়ে যাবে।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্য দেশগুলোর জন্য একটি রোল মডেলে পরিণত হয়। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বাংলাদেশ যেন সামগ্রিক উন্নয়ন, অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন, সামাজিক সমতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু তখন বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সহজে গ্রহণ করেনি। এটা আমাদের ভালোভাবেই মনে থাকার কথা যে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এই দুটি পরাশক্তির নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের ব্যাপক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যস্ত ছিল এবং পাকিস্তানকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার বিশেষ প্রয়োজন পড়েছিল। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রতি সম্পূর্ণ সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাদের ধারণা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সোভিয়েত ব্লকের আরেকটি দেশ এবং যেটি পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পশ্চিমা শক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং জোটনিরপেক্ষ জোটে একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়।
বিশ্ব গত ৫০ বছর নানাবিধ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং বিশ্বকে এককভাবে শাসন করে। ১৯৯১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ঘোষণা করেন যে এখন থেকে মার্কিন নেতৃত্বে এক কেন্দ্রিক বিশ্ব—যা হবে তাঁর ভাষায়, গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা। তবে এই বিশ্বব্যবস্থার আয়ু ছিল অল্পদিন। শিগগিরই কমিউনিস্ট শাসিত চীন নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু অর্থনৈতিক অগ্রসরমাণ দেশ চীনকে তাদের উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বেছে নেয়। বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রয়াসকে অনেকেই চীনের ভবিষ্যতের বৈশ্বিক শক্তির নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।
দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বিরাট অঞ্চলের ওপর চীন একক মালিকানার দাবির প্রতি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দেশগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল রাজ্য এবং লাদাখের ওপর মালিকানার পুরোনো দাবি নতুন করে উত্থাপন করেছে চীন। চীনের উত্থান রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশ ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর মিলে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়ন করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সামরিক জোট কোয়াড তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর চীনের সম্ভাব্য সম্প্রসারণবাদ ও আগ্রাসনকে রুখে দিতে।
উল্লিখিত শক্তির কৌশলগত পাওয়ার গেমের কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের অবস্থান। যদি কেউ মানচিত্রের দিকে নজর দেন, তবে সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন বিশ্বের কৌশলগত রাজনীতির কোথায় বাংলাদেশের অবস্থান। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে এবং এশিয়ান রেলওয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাবে। হিমালয় পর্বতমালার পূর্ব প্রান্ত মিয়ানমার থেকে পশ্চিম প্রান্ত আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান, যা দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের যোগাযোগের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভারতের অরুণাচল নিয়ে ভারত-চীনের মধ্যে কখনো যুদ্ধ বাধে বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তবে সৈন্য চলাচল ও যুদ্ধের আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের জন্য বাংলাদেশ অতিগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সুতরাং এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে তখন চীন ও ভারত এবং ভারতের সমর্থক পশ্চিমা শক্তি বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক কৌশল ভালোভাবেই ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা বিআরআইয়ে যোগ দিয়েছি। ফলে চীন আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাশাপাশি ভারত, জাপান, কোরিয়া আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি ঘোষণা করেছে, যার সঙ্গে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির গভীর মিল রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যার সঙ্গে কোনোভাবেই সামরিক স্বার্থকে মেলানো যাবে না।
এখন পর্যন্ত আমাদের যাত্রা ভালোভাবেই এগিয়েছে। তবে সামনে রয়েছে এই যাত্রাপথের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিকৌশল নিয়ে চীন তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়ে হুমকির সুরে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেবে। অপরপক্ষে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ইস্যু উত্থাপন করে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রভাবশালী খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের দেশের উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষিত তরুণদের উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের প্রধানতম গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ও ফোরামে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। যে কারণে দেশটির সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ তার স্বাধীন বিদেশনীতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমাদের উত্থাপিত উদ্বেগের বিষয়গুলো আমরা পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না। এগুলো আমাদের রাষ্ট্রের সংবিধানেও সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা আছে। সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানে আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারবার ধাক্কা খেয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং একই বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের অভ্যন্তরে খুন। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে অবিশ্বাস, সন্দেহ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, একগুঁয়েমি মনোভাব ও আলোচনায় অনীহা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল ও কালিমালিপ্ত করেছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কালোটাকা, পেশিশক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে সংবিধান পরিবর্তন করা হয়, ফলে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এ ছাড়া, ধর্মীয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। গত দুই দশকে সরকার ইসলামি জঙ্গি ও তাদের ভয়ংকর মতবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যদিও জঙ্গিরা সমাজের মূল স্রোতে তেমন কোনো বিঘ্ন ঘটাতে সফল হয়নি, তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে সমাজের নানা পর্যায়ে আদর্শিক ও দার্শনিক যুদ্ধ বহাল রয়েছে।
ঔপনিবেশিক সূত্রে প্রাপ্ত আমাদের বিচারব্যবস্থা কায়েমি অদক্ষতার রোগে ভুগছে। অদক্ষ বিচারব্যবস্থার প্রধান শিকার হচ্ছে দরিদ্র ও সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অদক্ষ ও বিলম্বিত বিচার কিংবা বিচারহীনতার প্রতি অসন্তুষ্ট মানুষ বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টিকে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাগত জানায়। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, যাতে বিচার-প্রক্রিয়া কোনোভাবেই প্রলম্বিত না হয়।
আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সব সময় সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতি পক্ষপাত করেছে। ফলে বিগত বছরগুলোতে ক্রমেই ধনী ও দরিদ্রের মাঝে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আমরা প্রণিধানযোগ্য আর্থিক সফলতা অর্জন করেছি, তা সত্ত্বেও সরকারের উচিত পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। প্রশাসনিক অদক্ষতা ও ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে অবশ্যই জয়ী হতে হবে।
নিম্ন আয় থেকে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। তাই বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ অধিক মনোযোগ পাচ্ছে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার এবং প্রতিপক্ষের প্রতি দোষারোপের বদলে তা সমাধানে দ্রুততার সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা যদি সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারি এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হই, তাহলে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত। সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই উন্নয়নের পথ ধরে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পানে এগিয়ে যাবে।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন
০৬ জুলাই ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন
০৬ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন
০৬ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশকে নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের আগ্রহ ও কৌতূহল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে নিতে প্রস্তুত এবং বিশ্বসম্প্রদায় প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ যেন
০৬ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫