বিধান রিবেরু

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই। শিক্ষার মাধ্যমে, অনুষ্ঠানের শিরোনামে, রাস্তাঘাটে দোকানপাটের নামকরণে যেভাবে বাংলা অবহেলিত হচ্ছে, তাতে মনেই হয় না বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা।
ইংরেজির প্রতি বিদ্বেষ নেই, কিন্তু বাংলার প্রতি অবজ্ঞা, কী আশ্চর্য, সমাজের উঁচু শ্রেণি ও ক্ষমতাধরদের চোখেই পড়ছে না। অথচ দেখুন প্রতিদিন আমরা কত আক্ষেপ করি আমাদের আগের মতো ভালো বাংলা সাহিত্য নেই, ভালো বাংলা চলচ্চিত্র নেই! এটা অনেকটা নিজের চোখে কড়িকাঠ রেখে, অন্যের চোখের কুটো নিয়ে সমালোচনা করার মতোই। বাংলাকে যথাযথ মর্যাদা দিন, ভালো সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্র হবে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে দেশের একটি শ্রেণি যে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল অপরাধ করছে, সেই বোধের ঘণ্টি কে পরিয়ে দেবে তাদের গলায়? প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করছি ইংরেজিতে, অথচ ফল চাইছি বাংলা ভাষায়। এ যেন বটবৃক্ষের কাছে আম্রপালি প্রত্যাশা! যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে কেউ এসে ভূমিসংলগ্ন শিল্প সৃজন করে দিয়ে যাবে! নিজের দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা যদি মাতৃভাষা ভালো করে আয়ত্ত না করে, যদি ভাষার প্রয়োগ ঠিকঠাক না শেখে, তাহলে সেই ভাষায় সে সৃষ্টি করবে কেমন করে?
যারা ইংরেজি মাধ্যমে না ঘরকা, না ঘাটকা শিক্ষা অর্জন করছে, তারা না শিখছে দেশের ভাষা, না শিখছে ইতিহাস ও সংস্কৃতি। বাইরের দেশের পাঠ্যক্রমে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি কোথায়? বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে আবির্ভূত হয়েছে ইংরেজি ভাষায় দেশি পাঠ্যক্রম।এই ইংরেজি কি ব্রিটিশ, না উত্তর আমেরিকার, তার হিসাব কে রাখে? শুনেছি দেশীয় পাঠ্যক্রমের ইংরেজি বই নাকি এখন ধর-তক্তা-মার-পেরেক কায়দায় গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনুবাদ-দক্ষতার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিপর্যয় রুখবে কে?
বাংলার জলবায়ুর ভেতর থেকে, কেউ যখন ইংরেজি আত্মস্থ করার চেষ্টায় রত থাকে, তখন তার অচেতনের গঠনেও সেটার প্রভাব পড়ে। বাংলা ও ইংরেজির গঠন এক রকম নয়। দেখবেন যারা ইংরেজিতে সড়গড়, তারা ইংরেজির কাঠামো মেনে বাংলা বলার চেষ্টা করে। এতে বাংলা হয়ে পড়ে বিকৃত। এর উল্টোটাও হয়। এখন অচেতনের গঠন যদি ভাষার মতো হয়, তবে আমরা গত কয়েক প্রজন্মের অচেতন এমন করে তৈরি করেছি, যা ইংরেজির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। মজার বিষয়, ইংরেজি আমাদের সমাজে এসেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুদের আধিপত্যকামী শাসনব্যবস্থার হাত ধরে। এখন মগজে ঔপনিবেশিকদের ভাষার গঠন নিয়ে, নিজ দেশের ভাষায় শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণ কি সম্ভব?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা ভীষণ মনে বাজে—বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ—কায়মনে বাঙালি হওয়ার অর্থ মগজটাকে মাতৃভাষায় নিমজ্জিত করতে হবে। ইরানের প্রখ্যাত পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন তিনি ইরানের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ভেতরে থেকেই সিনেমা বানিয়ে গেলেন। তিনি দেশ ছাড়েনি, কেননা, তিনি জানতেন পারস্যের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে যাওয়া মানে তিনি পরিণত হবেন মূল উৎপাটিত এক বৃক্ষে। গোটা দুনিয়ায় যে লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালকেরা সমাদৃত হচ্ছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও জনপদের কথা বলেছেন। সেনেগালের উসমান সেমবেন আফ্রিকার মানুষের কথাই বলেছেন।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ স্প্যানিশ ভাষায় লাতিন আমেরিকার গল্পটাই শুনিয়েছেন। আর এর ভেতর দিয়ে তাঁরা স্থানিক উপাদানকে মিলিয়ে দিয়েছেন বৈশ্বিক সংবেদনশীলতায়। এ কারণেই তাঁরা নমস্য। এ কারণেই তাঁরা বিশ্বমানব। আমরাও বিশ্বমানব হতে চাই।
আমরা ভাবছি ইংরেজিই সেই জাদুকাঠি, যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দরবারে পৌঁছাব। পৌঁছানো যাবে ঠিকই, তবে তাতে দেয়ালের ওপর আরও একটি ইট যুক্ত হবে কেবল। আলাদা মিনার গড়ে উঠবে না।
এসব যুক্তি শুনতে নারাজ আমাদের দেশের হর্তাকর্তা ও প্রভুরা। তাদের আরও বেশি ইংরেজি মাধ্যম চাই, এমনকি ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসাও চাই। এই অদ্ভুত চাওয়া যে জাতি হিসেবে আমাদের সব অর্জনকে শূন্য করে দিয়ে বিশাল গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সে খবর কে রাখে? কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলেই দেখবেন কুমিরের ক্রন্দন। আরও আজব ঠেকে, যখন কোনো ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। তাও আবার ভাষাশহীদ দিবস নামে নয়, পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটাও গাওয়া হয়। এসব করে যে একুশে ফেব্রুয়ারির মূল চেতনার সঙ্গে বেইমানি করা হচ্ছে, সেটা কি তারা বোঝে না? বুঝেশুনেই কি ভাষাশহীদ দিবসকে বিদায় করে তার জায়গায় এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? এখানে সূক্ষ্ম শুভংকরের ফাঁকিটা কি আমরা ধরতে পারছি?
ইংরেজি কেজো ভাষা। ইংরেজি জানা থাকলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ। আয়-উপার্জনেও সুবিধা হয়। এই সত্য কে অস্বীকার করছে? যত বেশি ভাষা জানা থাকবে, তত বেশি জ্ঞানার্জন হবে। প্রশ্ন হলো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক ভাষা জানতেন বলে কি বাংলা ভুলে গিয়েছিলেন? না তিনি বাংলা কম জানতেন? পরিতাপের বিষয় আজকের ইংরেজি পড়ুয়া প্রজন্ম কিন্তু বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। তারা বাংলা ভালো করে পড়তেও পারে না।
তাই বাংলা বই কিনতেও চায় না। তাহলে বইমেলায় তিন-চার হাজার বই বের করে লাভটা কী, যদি আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সেই ভাষার বই পড়তেই না পারে? কিনতেই না চায়? দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা বইয়ের দোকানেও দেখবেন থরে থরে ইংরেজি বই এবং সেগুলোর অধিকাংশই থ্রিলার-হরর-রোমান্টিক ঘরানার বই। ইংরেজিতেও যে এ দেশের মানুষ খুব গভীর চিন্তাশীল বইপত্র পড়ছে, তা-ও কিন্তু নয়।
বাংলার প্রতি অবহেলার কারণে আমরা একদিকে বিশ্বমানের শিল্প সৃষ্টি করতে পারছি না। অপরদিকে, ভালো সাহিত্য বাংলায় অনুবাদও করতে পারছি না। চীনা, জাপানি বা রুশরা কিন্তু নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বের অনেক ধ্রুপদি সাহিত্য পড়ে ফেলেছে। আমাদের এখানে অনুবাদ হলেও, বাংলায় দুর্বলতার দরুন অধিকাংশ অনুবাদ সাহিত্যই হয়ে পড়ে পাঠের অযোগ্য।
কাজেই একদিকে আমরা সৃষ্টি করতে পারছি না, অপরদিকে অন্যদের অনন্য সৃষ্টির স্বাদও আমরা ভালো করে নিতে পারছি না। আর কে না জানে, অনুবাদকর্ম মূলত আরেকটি নতুন সাহিত্যকর্মই। তাই অনুবাদ যিনি করবেন তাঁর মূল ভাষা ও উদ্দিষ্ট ভাষার ওপর দখল থাকা অত্যন্ত জরুরি। আসলে একটি ভাষায় তখনই অনুবাদ সাহিত্য ভালো পাওয়া যায়, যখন সেই ভাষায় দক্ষ সাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক থাকেন।
ভাষা কিন্তু শুধু শুদ্ধ করে লেখার ব্যাপার নয়। ভাষাকে শুদ্ধ করে বলারও একটা ব্যাপার রয়েছে। প্রমিত উচ্চারণের ক্ষেত্রেও আমাদের ভেতর উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। আমরা এই লেখার শুদ্ধতা নিয়ে অনেকটা ভাবলেও, বলার শুদ্ধতা নিয়ে একেবারেই ভাবি না বললে চলে। আবৃত্তি দলের সভ্য হলে এই শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার সুযোগ হয়। কিন্তু সেই সুযোগ তো সবাই পায় না। এর সমাধান হতে পারে, আমরা যদি নবম ও দশম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণ শেখার জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের সঙ্গে একটি ব্যবহারিক ক্লাস জুড়ে দিই। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে জোর দেওয়া হয় লেখা, পড়া ও শোনার ওপর। কিন্তু বলার ওপর জোর দিলে ভাষা শেখার ষোলোকলা পূর্ণ হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে দেখা যায় পড়া-লেখা-বলা-শোনা এই চারের ওপর মনোযোগ দিতে। এমনকি ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল বলি, কিংবা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, সেখানে ইংরেজি ও ফরাসি শেখানো হয় এই চারটি দক্ষতাকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। তাই আমার প্রস্তাব, বাংলাদেশে শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ব্যবহারিক চালু করা হোক। বাংলা নিয়ে এসব কথা অরণ্যে রোদন হলেও, আমি বারবারই কথাগুলো বলে যেতে চাই।
লেখক: চলচ্চিত্র সমালোচক

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই। শিক্ষার মাধ্যমে, অনুষ্ঠানের শিরোনামে, রাস্তাঘাটে দোকানপাটের নামকরণে যেভাবে বাংলা অবহেলিত হচ্ছে, তাতে মনেই হয় না বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা।
ইংরেজির প্রতি বিদ্বেষ নেই, কিন্তু বাংলার প্রতি অবজ্ঞা, কী আশ্চর্য, সমাজের উঁচু শ্রেণি ও ক্ষমতাধরদের চোখেই পড়ছে না। অথচ দেখুন প্রতিদিন আমরা কত আক্ষেপ করি আমাদের আগের মতো ভালো বাংলা সাহিত্য নেই, ভালো বাংলা চলচ্চিত্র নেই! এটা অনেকটা নিজের চোখে কড়িকাঠ রেখে, অন্যের চোখের কুটো নিয়ে সমালোচনা করার মতোই। বাংলাকে যথাযথ মর্যাদা দিন, ভালো সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্র হবে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে দেশের একটি শ্রেণি যে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল অপরাধ করছে, সেই বোধের ঘণ্টি কে পরিয়ে দেবে তাদের গলায়? প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করছি ইংরেজিতে, অথচ ফল চাইছি বাংলা ভাষায়। এ যেন বটবৃক্ষের কাছে আম্রপালি প্রত্যাশা! যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে কেউ এসে ভূমিসংলগ্ন শিল্প সৃজন করে দিয়ে যাবে! নিজের দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা যদি মাতৃভাষা ভালো করে আয়ত্ত না করে, যদি ভাষার প্রয়োগ ঠিকঠাক না শেখে, তাহলে সেই ভাষায় সে সৃষ্টি করবে কেমন করে?
যারা ইংরেজি মাধ্যমে না ঘরকা, না ঘাটকা শিক্ষা অর্জন করছে, তারা না শিখছে দেশের ভাষা, না শিখছে ইতিহাস ও সংস্কৃতি। বাইরের দেশের পাঠ্যক্রমে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি কোথায়? বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে আবির্ভূত হয়েছে ইংরেজি ভাষায় দেশি পাঠ্যক্রম।এই ইংরেজি কি ব্রিটিশ, না উত্তর আমেরিকার, তার হিসাব কে রাখে? শুনেছি দেশীয় পাঠ্যক্রমের ইংরেজি বই নাকি এখন ধর-তক্তা-মার-পেরেক কায়দায় গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনুবাদ-দক্ষতার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিপর্যয় রুখবে কে?
বাংলার জলবায়ুর ভেতর থেকে, কেউ যখন ইংরেজি আত্মস্থ করার চেষ্টায় রত থাকে, তখন তার অচেতনের গঠনেও সেটার প্রভাব পড়ে। বাংলা ও ইংরেজির গঠন এক রকম নয়। দেখবেন যারা ইংরেজিতে সড়গড়, তারা ইংরেজির কাঠামো মেনে বাংলা বলার চেষ্টা করে। এতে বাংলা হয়ে পড়ে বিকৃত। এর উল্টোটাও হয়। এখন অচেতনের গঠন যদি ভাষার মতো হয়, তবে আমরা গত কয়েক প্রজন্মের অচেতন এমন করে তৈরি করেছি, যা ইংরেজির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। মজার বিষয়, ইংরেজি আমাদের সমাজে এসেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুদের আধিপত্যকামী শাসনব্যবস্থার হাত ধরে। এখন মগজে ঔপনিবেশিকদের ভাষার গঠন নিয়ে, নিজ দেশের ভাষায় শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণ কি সম্ভব?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা ভীষণ মনে বাজে—বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ—কায়মনে বাঙালি হওয়ার অর্থ মগজটাকে মাতৃভাষায় নিমজ্জিত করতে হবে। ইরানের প্রখ্যাত পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন তিনি ইরানের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ভেতরে থেকেই সিনেমা বানিয়ে গেলেন। তিনি দেশ ছাড়েনি, কেননা, তিনি জানতেন পারস্যের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে যাওয়া মানে তিনি পরিণত হবেন মূল উৎপাটিত এক বৃক্ষে। গোটা দুনিয়ায় যে লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালকেরা সমাদৃত হচ্ছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও জনপদের কথা বলেছেন। সেনেগালের উসমান সেমবেন আফ্রিকার মানুষের কথাই বলেছেন।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ স্প্যানিশ ভাষায় লাতিন আমেরিকার গল্পটাই শুনিয়েছেন। আর এর ভেতর দিয়ে তাঁরা স্থানিক উপাদানকে মিলিয়ে দিয়েছেন বৈশ্বিক সংবেদনশীলতায়। এ কারণেই তাঁরা নমস্য। এ কারণেই তাঁরা বিশ্বমানব। আমরাও বিশ্বমানব হতে চাই।
আমরা ভাবছি ইংরেজিই সেই জাদুকাঠি, যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দরবারে পৌঁছাব। পৌঁছানো যাবে ঠিকই, তবে তাতে দেয়ালের ওপর আরও একটি ইট যুক্ত হবে কেবল। আলাদা মিনার গড়ে উঠবে না।
এসব যুক্তি শুনতে নারাজ আমাদের দেশের হর্তাকর্তা ও প্রভুরা। তাদের আরও বেশি ইংরেজি মাধ্যম চাই, এমনকি ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসাও চাই। এই অদ্ভুত চাওয়া যে জাতি হিসেবে আমাদের সব অর্জনকে শূন্য করে দিয়ে বিশাল গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সে খবর কে রাখে? কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলেই দেখবেন কুমিরের ক্রন্দন। আরও আজব ঠেকে, যখন কোনো ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। তাও আবার ভাষাশহীদ দিবস নামে নয়, পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটাও গাওয়া হয়। এসব করে যে একুশে ফেব্রুয়ারির মূল চেতনার সঙ্গে বেইমানি করা হচ্ছে, সেটা কি তারা বোঝে না? বুঝেশুনেই কি ভাষাশহীদ দিবসকে বিদায় করে তার জায়গায় এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? এখানে সূক্ষ্ম শুভংকরের ফাঁকিটা কি আমরা ধরতে পারছি?
ইংরেজি কেজো ভাষা। ইংরেজি জানা থাকলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ। আয়-উপার্জনেও সুবিধা হয়। এই সত্য কে অস্বীকার করছে? যত বেশি ভাষা জানা থাকবে, তত বেশি জ্ঞানার্জন হবে। প্রশ্ন হলো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক ভাষা জানতেন বলে কি বাংলা ভুলে গিয়েছিলেন? না তিনি বাংলা কম জানতেন? পরিতাপের বিষয় আজকের ইংরেজি পড়ুয়া প্রজন্ম কিন্তু বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। তারা বাংলা ভালো করে পড়তেও পারে না।
তাই বাংলা বই কিনতেও চায় না। তাহলে বইমেলায় তিন-চার হাজার বই বের করে লাভটা কী, যদি আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সেই ভাষার বই পড়তেই না পারে? কিনতেই না চায়? দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা বইয়ের দোকানেও দেখবেন থরে থরে ইংরেজি বই এবং সেগুলোর অধিকাংশই থ্রিলার-হরর-রোমান্টিক ঘরানার বই। ইংরেজিতেও যে এ দেশের মানুষ খুব গভীর চিন্তাশীল বইপত্র পড়ছে, তা-ও কিন্তু নয়।
বাংলার প্রতি অবহেলার কারণে আমরা একদিকে বিশ্বমানের শিল্প সৃষ্টি করতে পারছি না। অপরদিকে, ভালো সাহিত্য বাংলায় অনুবাদও করতে পারছি না। চীনা, জাপানি বা রুশরা কিন্তু নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বের অনেক ধ্রুপদি সাহিত্য পড়ে ফেলেছে। আমাদের এখানে অনুবাদ হলেও, বাংলায় দুর্বলতার দরুন অধিকাংশ অনুবাদ সাহিত্যই হয়ে পড়ে পাঠের অযোগ্য।
কাজেই একদিকে আমরা সৃষ্টি করতে পারছি না, অপরদিকে অন্যদের অনন্য সৃষ্টির স্বাদও আমরা ভালো করে নিতে পারছি না। আর কে না জানে, অনুবাদকর্ম মূলত আরেকটি নতুন সাহিত্যকর্মই। তাই অনুবাদ যিনি করবেন তাঁর মূল ভাষা ও উদ্দিষ্ট ভাষার ওপর দখল থাকা অত্যন্ত জরুরি। আসলে একটি ভাষায় তখনই অনুবাদ সাহিত্য ভালো পাওয়া যায়, যখন সেই ভাষায় দক্ষ সাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক থাকেন।
ভাষা কিন্তু শুধু শুদ্ধ করে লেখার ব্যাপার নয়। ভাষাকে শুদ্ধ করে বলারও একটা ব্যাপার রয়েছে। প্রমিত উচ্চারণের ক্ষেত্রেও আমাদের ভেতর উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। আমরা এই লেখার শুদ্ধতা নিয়ে অনেকটা ভাবলেও, বলার শুদ্ধতা নিয়ে একেবারেই ভাবি না বললে চলে। আবৃত্তি দলের সভ্য হলে এই শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার সুযোগ হয়। কিন্তু সেই সুযোগ তো সবাই পায় না। এর সমাধান হতে পারে, আমরা যদি নবম ও দশম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণ শেখার জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের সঙ্গে একটি ব্যবহারিক ক্লাস জুড়ে দিই। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে জোর দেওয়া হয় লেখা, পড়া ও শোনার ওপর। কিন্তু বলার ওপর জোর দিলে ভাষা শেখার ষোলোকলা পূর্ণ হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে দেখা যায় পড়া-লেখা-বলা-শোনা এই চারের ওপর মনোযোগ দিতে। এমনকি ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল বলি, কিংবা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, সেখানে ইংরেজি ও ফরাসি শেখানো হয় এই চারটি দক্ষতাকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। তাই আমার প্রস্তাব, বাংলাদেশে শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ব্যবহারিক চালু করা হোক। বাংলা নিয়ে এসব কথা অরণ্যে রোদন হলেও, আমি বারবারই কথাগুলো বলে যেতে চাই।
লেখক: চলচ্চিত্র সমালোচক
বিধান রিবেরু

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই। শিক্ষার মাধ্যমে, অনুষ্ঠানের শিরোনামে, রাস্তাঘাটে দোকানপাটের নামকরণে যেভাবে বাংলা অবহেলিত হচ্ছে, তাতে মনেই হয় না বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা।
ইংরেজির প্রতি বিদ্বেষ নেই, কিন্তু বাংলার প্রতি অবজ্ঞা, কী আশ্চর্য, সমাজের উঁচু শ্রেণি ও ক্ষমতাধরদের চোখেই পড়ছে না। অথচ দেখুন প্রতিদিন আমরা কত আক্ষেপ করি আমাদের আগের মতো ভালো বাংলা সাহিত্য নেই, ভালো বাংলা চলচ্চিত্র নেই! এটা অনেকটা নিজের চোখে কড়িকাঠ রেখে, অন্যের চোখের কুটো নিয়ে সমালোচনা করার মতোই। বাংলাকে যথাযথ মর্যাদা দিন, ভালো সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্র হবে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে দেশের একটি শ্রেণি যে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল অপরাধ করছে, সেই বোধের ঘণ্টি কে পরিয়ে দেবে তাদের গলায়? প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করছি ইংরেজিতে, অথচ ফল চাইছি বাংলা ভাষায়। এ যেন বটবৃক্ষের কাছে আম্রপালি প্রত্যাশা! যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে কেউ এসে ভূমিসংলগ্ন শিল্প সৃজন করে দিয়ে যাবে! নিজের দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা যদি মাতৃভাষা ভালো করে আয়ত্ত না করে, যদি ভাষার প্রয়োগ ঠিকঠাক না শেখে, তাহলে সেই ভাষায় সে সৃষ্টি করবে কেমন করে?
যারা ইংরেজি মাধ্যমে না ঘরকা, না ঘাটকা শিক্ষা অর্জন করছে, তারা না শিখছে দেশের ভাষা, না শিখছে ইতিহাস ও সংস্কৃতি। বাইরের দেশের পাঠ্যক্রমে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি কোথায়? বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে আবির্ভূত হয়েছে ইংরেজি ভাষায় দেশি পাঠ্যক্রম।এই ইংরেজি কি ব্রিটিশ, না উত্তর আমেরিকার, তার হিসাব কে রাখে? শুনেছি দেশীয় পাঠ্যক্রমের ইংরেজি বই নাকি এখন ধর-তক্তা-মার-পেরেক কায়দায় গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনুবাদ-দক্ষতার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিপর্যয় রুখবে কে?
বাংলার জলবায়ুর ভেতর থেকে, কেউ যখন ইংরেজি আত্মস্থ করার চেষ্টায় রত থাকে, তখন তার অচেতনের গঠনেও সেটার প্রভাব পড়ে। বাংলা ও ইংরেজির গঠন এক রকম নয়। দেখবেন যারা ইংরেজিতে সড়গড়, তারা ইংরেজির কাঠামো মেনে বাংলা বলার চেষ্টা করে। এতে বাংলা হয়ে পড়ে বিকৃত। এর উল্টোটাও হয়। এখন অচেতনের গঠন যদি ভাষার মতো হয়, তবে আমরা গত কয়েক প্রজন্মের অচেতন এমন করে তৈরি করেছি, যা ইংরেজির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। মজার বিষয়, ইংরেজি আমাদের সমাজে এসেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুদের আধিপত্যকামী শাসনব্যবস্থার হাত ধরে। এখন মগজে ঔপনিবেশিকদের ভাষার গঠন নিয়ে, নিজ দেশের ভাষায় শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণ কি সম্ভব?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা ভীষণ মনে বাজে—বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ—কায়মনে বাঙালি হওয়ার অর্থ মগজটাকে মাতৃভাষায় নিমজ্জিত করতে হবে। ইরানের প্রখ্যাত পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন তিনি ইরানের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ভেতরে থেকেই সিনেমা বানিয়ে গেলেন। তিনি দেশ ছাড়েনি, কেননা, তিনি জানতেন পারস্যের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে যাওয়া মানে তিনি পরিণত হবেন মূল উৎপাটিত এক বৃক্ষে। গোটা দুনিয়ায় যে লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালকেরা সমাদৃত হচ্ছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও জনপদের কথা বলেছেন। সেনেগালের উসমান সেমবেন আফ্রিকার মানুষের কথাই বলেছেন।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ স্প্যানিশ ভাষায় লাতিন আমেরিকার গল্পটাই শুনিয়েছেন। আর এর ভেতর দিয়ে তাঁরা স্থানিক উপাদানকে মিলিয়ে দিয়েছেন বৈশ্বিক সংবেদনশীলতায়। এ কারণেই তাঁরা নমস্য। এ কারণেই তাঁরা বিশ্বমানব। আমরাও বিশ্বমানব হতে চাই।
আমরা ভাবছি ইংরেজিই সেই জাদুকাঠি, যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দরবারে পৌঁছাব। পৌঁছানো যাবে ঠিকই, তবে তাতে দেয়ালের ওপর আরও একটি ইট যুক্ত হবে কেবল। আলাদা মিনার গড়ে উঠবে না।
এসব যুক্তি শুনতে নারাজ আমাদের দেশের হর্তাকর্তা ও প্রভুরা। তাদের আরও বেশি ইংরেজি মাধ্যম চাই, এমনকি ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসাও চাই। এই অদ্ভুত চাওয়া যে জাতি হিসেবে আমাদের সব অর্জনকে শূন্য করে দিয়ে বিশাল গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সে খবর কে রাখে? কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলেই দেখবেন কুমিরের ক্রন্দন। আরও আজব ঠেকে, যখন কোনো ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। তাও আবার ভাষাশহীদ দিবস নামে নয়, পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটাও গাওয়া হয়। এসব করে যে একুশে ফেব্রুয়ারির মূল চেতনার সঙ্গে বেইমানি করা হচ্ছে, সেটা কি তারা বোঝে না? বুঝেশুনেই কি ভাষাশহীদ দিবসকে বিদায় করে তার জায়গায় এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? এখানে সূক্ষ্ম শুভংকরের ফাঁকিটা কি আমরা ধরতে পারছি?
ইংরেজি কেজো ভাষা। ইংরেজি জানা থাকলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ। আয়-উপার্জনেও সুবিধা হয়। এই সত্য কে অস্বীকার করছে? যত বেশি ভাষা জানা থাকবে, তত বেশি জ্ঞানার্জন হবে। প্রশ্ন হলো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক ভাষা জানতেন বলে কি বাংলা ভুলে গিয়েছিলেন? না তিনি বাংলা কম জানতেন? পরিতাপের বিষয় আজকের ইংরেজি পড়ুয়া প্রজন্ম কিন্তু বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। তারা বাংলা ভালো করে পড়তেও পারে না।
তাই বাংলা বই কিনতেও চায় না। তাহলে বইমেলায় তিন-চার হাজার বই বের করে লাভটা কী, যদি আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সেই ভাষার বই পড়তেই না পারে? কিনতেই না চায়? দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা বইয়ের দোকানেও দেখবেন থরে থরে ইংরেজি বই এবং সেগুলোর অধিকাংশই থ্রিলার-হরর-রোমান্টিক ঘরানার বই। ইংরেজিতেও যে এ দেশের মানুষ খুব গভীর চিন্তাশীল বইপত্র পড়ছে, তা-ও কিন্তু নয়।
বাংলার প্রতি অবহেলার কারণে আমরা একদিকে বিশ্বমানের শিল্প সৃষ্টি করতে পারছি না। অপরদিকে, ভালো সাহিত্য বাংলায় অনুবাদও করতে পারছি না। চীনা, জাপানি বা রুশরা কিন্তু নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বের অনেক ধ্রুপদি সাহিত্য পড়ে ফেলেছে। আমাদের এখানে অনুবাদ হলেও, বাংলায় দুর্বলতার দরুন অধিকাংশ অনুবাদ সাহিত্যই হয়ে পড়ে পাঠের অযোগ্য।
কাজেই একদিকে আমরা সৃষ্টি করতে পারছি না, অপরদিকে অন্যদের অনন্য সৃষ্টির স্বাদও আমরা ভালো করে নিতে পারছি না। আর কে না জানে, অনুবাদকর্ম মূলত আরেকটি নতুন সাহিত্যকর্মই। তাই অনুবাদ যিনি করবেন তাঁর মূল ভাষা ও উদ্দিষ্ট ভাষার ওপর দখল থাকা অত্যন্ত জরুরি। আসলে একটি ভাষায় তখনই অনুবাদ সাহিত্য ভালো পাওয়া যায়, যখন সেই ভাষায় দক্ষ সাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক থাকেন।
ভাষা কিন্তু শুধু শুদ্ধ করে লেখার ব্যাপার নয়। ভাষাকে শুদ্ধ করে বলারও একটা ব্যাপার রয়েছে। প্রমিত উচ্চারণের ক্ষেত্রেও আমাদের ভেতর উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। আমরা এই লেখার শুদ্ধতা নিয়ে অনেকটা ভাবলেও, বলার শুদ্ধতা নিয়ে একেবারেই ভাবি না বললে চলে। আবৃত্তি দলের সভ্য হলে এই শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার সুযোগ হয়। কিন্তু সেই সুযোগ তো সবাই পায় না। এর সমাধান হতে পারে, আমরা যদি নবম ও দশম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণ শেখার জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের সঙ্গে একটি ব্যবহারিক ক্লাস জুড়ে দিই। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে জোর দেওয়া হয় লেখা, পড়া ও শোনার ওপর। কিন্তু বলার ওপর জোর দিলে ভাষা শেখার ষোলোকলা পূর্ণ হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে দেখা যায় পড়া-লেখা-বলা-শোনা এই চারের ওপর মনোযোগ দিতে। এমনকি ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল বলি, কিংবা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, সেখানে ইংরেজি ও ফরাসি শেখানো হয় এই চারটি দক্ষতাকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। তাই আমার প্রস্তাব, বাংলাদেশে শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ব্যবহারিক চালু করা হোক। বাংলা নিয়ে এসব কথা অরণ্যে রোদন হলেও, আমি বারবারই কথাগুলো বলে যেতে চাই।
লেখক: চলচ্চিত্র সমালোচক

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই। শিক্ষার মাধ্যমে, অনুষ্ঠানের শিরোনামে, রাস্তাঘাটে দোকানপাটের নামকরণে যেভাবে বাংলা অবহেলিত হচ্ছে, তাতে মনেই হয় না বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা।
ইংরেজির প্রতি বিদ্বেষ নেই, কিন্তু বাংলার প্রতি অবজ্ঞা, কী আশ্চর্য, সমাজের উঁচু শ্রেণি ও ক্ষমতাধরদের চোখেই পড়ছে না। অথচ দেখুন প্রতিদিন আমরা কত আক্ষেপ করি আমাদের আগের মতো ভালো বাংলা সাহিত্য নেই, ভালো বাংলা চলচ্চিত্র নেই! এটা অনেকটা নিজের চোখে কড়িকাঠ রেখে, অন্যের চোখের কুটো নিয়ে সমালোচনা করার মতোই। বাংলাকে যথাযথ মর্যাদা দিন, ভালো সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্র হবে।
রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে দেশের একটি শ্রেণি যে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল অপরাধ করছে, সেই বোধের ঘণ্টি কে পরিয়ে দেবে তাদের গলায়? প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করছি ইংরেজিতে, অথচ ফল চাইছি বাংলা ভাষায়। এ যেন বটবৃক্ষের কাছে আম্রপালি প্রত্যাশা! যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে কেউ এসে ভূমিসংলগ্ন শিল্প সৃজন করে দিয়ে যাবে! নিজের দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েরা যদি মাতৃভাষা ভালো করে আয়ত্ত না করে, যদি ভাষার প্রয়োগ ঠিকঠাক না শেখে, তাহলে সেই ভাষায় সে সৃষ্টি করবে কেমন করে?
যারা ইংরেজি মাধ্যমে না ঘরকা, না ঘাটকা শিক্ষা অর্জন করছে, তারা না শিখছে দেশের ভাষা, না শিখছে ইতিহাস ও সংস্কৃতি। বাইরের দেশের পাঠ্যক্রমে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি কোথায়? বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে আবির্ভূত হয়েছে ইংরেজি ভাষায় দেশি পাঠ্যক্রম।এই ইংরেজি কি ব্রিটিশ, না উত্তর আমেরিকার, তার হিসাব কে রাখে? শুনেছি দেশীয় পাঠ্যক্রমের ইংরেজি বই নাকি এখন ধর-তক্তা-মার-পেরেক কায়দায় গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনুবাদ-দক্ষতার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিপর্যয় রুখবে কে?
বাংলার জলবায়ুর ভেতর থেকে, কেউ যখন ইংরেজি আত্মস্থ করার চেষ্টায় রত থাকে, তখন তার অচেতনের গঠনেও সেটার প্রভাব পড়ে। বাংলা ও ইংরেজির গঠন এক রকম নয়। দেখবেন যারা ইংরেজিতে সড়গড়, তারা ইংরেজির কাঠামো মেনে বাংলা বলার চেষ্টা করে। এতে বাংলা হয়ে পড়ে বিকৃত। এর উল্টোটাও হয়। এখন অচেতনের গঠন যদি ভাষার মতো হয়, তবে আমরা গত কয়েক প্রজন্মের অচেতন এমন করে তৈরি করেছি, যা ইংরেজির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। মজার বিষয়, ইংরেজি আমাদের সমাজে এসেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুদের আধিপত্যকামী শাসনব্যবস্থার হাত ধরে। এখন মগজে ঔপনিবেশিকদের ভাষার গঠন নিয়ে, নিজ দেশের ভাষায় শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণ কি সম্ভব?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা ভীষণ মনে বাজে—বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ—কায়মনে বাঙালি হওয়ার অর্থ মগজটাকে মাতৃভাষায় নিমজ্জিত করতে হবে। ইরানের প্রখ্যাত পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন তিনি ইরানের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ভেতরে থেকেই সিনেমা বানিয়ে গেলেন। তিনি দেশ ছাড়েনি, কেননা, তিনি জানতেন পারস্যের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে যাওয়া মানে তিনি পরিণত হবেন মূল উৎপাটিত এক বৃক্ষে। গোটা দুনিয়ায় যে লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালকেরা সমাদৃত হচ্ছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও জনপদের কথা বলেছেন। সেনেগালের উসমান সেমবেন আফ্রিকার মানুষের কথাই বলেছেন।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ স্প্যানিশ ভাষায় লাতিন আমেরিকার গল্পটাই শুনিয়েছেন। আর এর ভেতর দিয়ে তাঁরা স্থানিক উপাদানকে মিলিয়ে দিয়েছেন বৈশ্বিক সংবেদনশীলতায়। এ কারণেই তাঁরা নমস্য। এ কারণেই তাঁরা বিশ্বমানব। আমরাও বিশ্বমানব হতে চাই।
আমরা ভাবছি ইংরেজিই সেই জাদুকাঠি, যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের দরবারে পৌঁছাব। পৌঁছানো যাবে ঠিকই, তবে তাতে দেয়ালের ওপর আরও একটি ইট যুক্ত হবে কেবল। আলাদা মিনার গড়ে উঠবে না।
এসব যুক্তি শুনতে নারাজ আমাদের দেশের হর্তাকর্তা ও প্রভুরা। তাদের আরও বেশি ইংরেজি মাধ্যম চাই, এমনকি ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসাও চাই। এই অদ্ভুত চাওয়া যে জাতি হিসেবে আমাদের সব অর্জনকে শূন্য করে দিয়ে বিশাল গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সে খবর কে রাখে? কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলেই দেখবেন কুমিরের ক্রন্দন। আরও আজব ঠেকে, যখন কোনো ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়। তাও আবার ভাষাশহীদ দিবস নামে নয়, পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটাও গাওয়া হয়। এসব করে যে একুশে ফেব্রুয়ারির মূল চেতনার সঙ্গে বেইমানি করা হচ্ছে, সেটা কি তারা বোঝে না? বুঝেশুনেই কি ভাষাশহীদ দিবসকে বিদায় করে তার জায়গায় এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? এখানে সূক্ষ্ম শুভংকরের ফাঁকিটা কি আমরা ধরতে পারছি?
ইংরেজি কেজো ভাষা। ইংরেজি জানা থাকলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ। আয়-উপার্জনেও সুবিধা হয়। এই সত্য কে অস্বীকার করছে? যত বেশি ভাষা জানা থাকবে, তত বেশি জ্ঞানার্জন হবে। প্রশ্ন হলো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক ভাষা জানতেন বলে কি বাংলা ভুলে গিয়েছিলেন? না তিনি বাংলা কম জানতেন? পরিতাপের বিষয় আজকের ইংরেজি পড়ুয়া প্রজন্ম কিন্তু বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। তারা বাংলা ভালো করে পড়তেও পারে না।
তাই বাংলা বই কিনতেও চায় না। তাহলে বইমেলায় তিন-চার হাজার বই বের করে লাভটা কী, যদি আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সেই ভাষার বই পড়তেই না পারে? কিনতেই না চায়? দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা বইয়ের দোকানেও দেখবেন থরে থরে ইংরেজি বই এবং সেগুলোর অধিকাংশই থ্রিলার-হরর-রোমান্টিক ঘরানার বই। ইংরেজিতেও যে এ দেশের মানুষ খুব গভীর চিন্তাশীল বইপত্র পড়ছে, তা-ও কিন্তু নয়।
বাংলার প্রতি অবহেলার কারণে আমরা একদিকে বিশ্বমানের শিল্প সৃষ্টি করতে পারছি না। অপরদিকে, ভালো সাহিত্য বাংলায় অনুবাদও করতে পারছি না। চীনা, জাপানি বা রুশরা কিন্তু নিজেদের ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বের অনেক ধ্রুপদি সাহিত্য পড়ে ফেলেছে। আমাদের এখানে অনুবাদ হলেও, বাংলায় দুর্বলতার দরুন অধিকাংশ অনুবাদ সাহিত্যই হয়ে পড়ে পাঠের অযোগ্য।
কাজেই একদিকে আমরা সৃষ্টি করতে পারছি না, অপরদিকে অন্যদের অনন্য সৃষ্টির স্বাদও আমরা ভালো করে নিতে পারছি না। আর কে না জানে, অনুবাদকর্ম মূলত আরেকটি নতুন সাহিত্যকর্মই। তাই অনুবাদ যিনি করবেন তাঁর মূল ভাষা ও উদ্দিষ্ট ভাষার ওপর দখল থাকা অত্যন্ত জরুরি। আসলে একটি ভাষায় তখনই অনুবাদ সাহিত্য ভালো পাওয়া যায়, যখন সেই ভাষায় দক্ষ সাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক থাকেন।
ভাষা কিন্তু শুধু শুদ্ধ করে লেখার ব্যাপার নয়। ভাষাকে শুদ্ধ করে বলারও একটা ব্যাপার রয়েছে। প্রমিত উচ্চারণের ক্ষেত্রেও আমাদের ভেতর উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। আমরা এই লেখার শুদ্ধতা নিয়ে অনেকটা ভাবলেও, বলার শুদ্ধতা নিয়ে একেবারেই ভাবি না বললে চলে। আবৃত্তি দলের সভ্য হলে এই শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার সুযোগ হয়। কিন্তু সেই সুযোগ তো সবাই পায় না। এর সমাধান হতে পারে, আমরা যদি নবম ও দশম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের বাংলা উচ্চারণ শেখার জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের সঙ্গে একটি ব্যবহারিক ক্লাস জুড়ে দিই। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে জোর দেওয়া হয় লেখা, পড়া ও শোনার ওপর। কিন্তু বলার ওপর জোর দিলে ভাষা শেখার ষোলোকলা পূর্ণ হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে দেখা যায় পড়া-লেখা-বলা-শোনা এই চারের ওপর মনোযোগ দিতে। এমনকি ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল বলি, কিংবা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, সেখানে ইংরেজি ও ফরাসি শেখানো হয় এই চারটি দক্ষতাকে বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। তাই আমার প্রস্তাব, বাংলাদেশে শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য মাধ্যমিক স্তরে বাংলা ব্যবহারিক চালু করা হোক। বাংলা নিয়ে এসব কথা অরণ্যে রোদন হলেও, আমি বারবারই কথাগুলো বলে যেতে চাই।
লেখক: চলচ্চিত্র সমালোচক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

গজদন্ত মিনারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের কাছে এখনো বাংলা ছোটলোকের ভাষা। একটু কান পাতলেই শোনা যাবে, নিজেদের ভেতর বাতচিতকালে তাঁরা বাংলায় নয়, শব্দ ভাঁজেন ইংরেজিতেই।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫