Ajker Patrika

পার্বত্য চট্টগ্রামের অরণ্যে এখনো কি আছে বাঘের বসতি

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৩, ১৫: ০৩
পার্বত্য চট্টগ্রামের অরণ্যে এখনো কি আছে বাঘের বসতি

আমাদের দেশের কোন বনে বাঘ আছে জিজ্ঞেস করলে নিঃসন্দেহে সুন্দরবনের নামই বলবেন। অথচ একসময় বাংলাদেশের বহু অরণ্যেই বাঘ ছিল। তবে অনেকেই জানেন না, এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো কোনো জঙ্গলে বাঘ দেখার কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আসলেই কি এখনো আমাদের পাহাড়ের বনে বিচরণ করছে বাঘেরা? সে উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করেছি লেখাটিতে।

পুরোনো সেই দিনের কথা
আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঘের বর্তমান হাল-হকিকত জানার আগে বরং এখানকার বাঘেদের অতীত বিচরণের কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। বাঘ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরীর একটা লেখায় ১৯৫৯ সালে কাপ্তাইয়ের (বর্তমানে রাঙামাটি জেলায় পড়েছে) বনে শিকার করা একটা বাঘের ছবি দেখেছিলাম। শিকার করেছিলেন একজন মারমা। ২০০৭–০৮ সালের দিকে যখন কাপ্তাই যাই, ওই শিকারির খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। আশ্চর্যজনকভাবে শিলছড়ি মারমাপাড়ায় ওই শিকারির ছেলেকে পেয়ে যাই। ছবিটা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল গোটা পাড়ার লোকেরা। 

আজ থেকে বেশি নয়, ৬০-৭০ বছর আগের পার্বত্য চট্টগ্রাম আর সিলেট বিভাগের বনের অবস্থা জানতে আমাকে সাহায্য করে এনায়েত মওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইটা। জীবনে বন নিয়ে যত বই পড়েছি, এতটা ভালো লেগেছে কমই। মনটা হুহু করে ওঠে কাপ্তাই বাঁধ তৈরির জন্য কাসালং রিজার্ভ ফরেস্টের গাছপালা কাটার মহাযজ্ঞের বর্ণনা পড়ে। কাসালং রিজার্ভের মাইনি, মাহিল্লা—এসব এলাকায় বাঘ মারার কাহিনিগুলো পড়ে মন খারাপ করে বসে থেকেছি। এখনো যতবার বইটি পড়ি, মনটা কেঁদে ওঠে। 

১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে কয়েকটি বাঘ শিকারের বর্ণনা আছে ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইটিতে। এটি আমাকে এতটাই প্রভাবিত করে যে পরে মাইনি, পাবলাখালী গিয়েছি। পাবলাখালী থেকে নৌকা রিজার্ভ করে কাসালং নদী ধরে মাহিল্লা পেরিয়ে যাওয়ার সময় যেন এনায়েত মওলার সময়টায় ফিরে গিয়েছিলাম। তখনকার গভীর জঙ্গল যেন মনের চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম। 

২০১১ সালের দিকে মাইনি বন বাংলোয় উঠে অবশ্য আশপাশে আর বনের ছিটেফোঁটা দেখিনি। কিন্তু বাংলোর দেয়ালে টাঙানো হাতি খেদার ছবিসহ পুরোনো কিছু ছবি দেখে শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তবে রাতে পুরোনো ভিজিটরস বুকটা দেখতে গিয়েই চমকেছি। খুঁজতে খুঁজতে ১৯৫০-৬০ সালের মধ্যকার একটি এন্ট্রিতে চোখ আটকে যায়। সেখানে একজন লিখেছেন, ‘আজ একটা বেঙ্গল টাইগার মেরেছি।’ বাঘটার মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত মাপও দেওয়া ছিল। 

বান্দরবানের আলীকদমের পাহাড়ি এলাকায়ও মাঝে মাঝে মেলে বাঘের খোঁজ১৯৫০ সালের অক্টোবরে কাসালং রিজার্ভে বাঘ দেখার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন বন বিভাগের এক সময়কার ইন্সপেক্টর জেনারেল ইউসুফ এস আহমেদ। তাঁর ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেলস অব বেঙ্গল’ বইটিতে ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার অরণ্য-বন্যপ্রাণীর ভালো চিত্র পাওয়া যায়।

চট্টগ্রামের বাঘের অবস্থার চমৎকার চিত্র পাই এরশাদ উল্লা খানের ‘চট্টগ্রামের শিকার কাহিনী’ বইয়ে। ১৯৫৫ সালে চুনতির ওহাইদ্যা ঘোনায় (আরাকান রোডের পাশের পাহাড়ে) বাঘ শিকারের বর্ণনা করেছেন লেখক। কক্সবাজারের হিমছড়িতে আস্তানা গাড়া বিশাল আকারের একটি বাঘের কাহিনিও শুনিয়েছেন তিনি।’ ঘটনাটা গত শতকের পঞ্চাশের দশকের। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে রাঙামাটির নানিয়ারচরের ধারের মরাচেঙ্গির ধূর্ত এক বাঘের কাহিনিও পড়ি তাঁর এ বইয়ে।

এদিকে ড. রেজা খানের ‘বাংলাদেশের বন্য প্রাণী’ (তৃতীয় খণ্ড) পড়ে জানতে পেরেছি ১৯৮১ সালের দিকে গারো পাহাড়ে, নেত্রকোনা ও কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালি রেঞ্জে তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে।

কালো চিতা খুবই কালেভদ্রে দেখা গেলেও কালো বাঘ আরও অনেক বেশি দুষ্প্রাপ্য। এরও রেকর্ড আছে বাংলাদেশেই। ১৮৪৬ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়ে (পার্বত্য চট্টগ্রামও বুঝিয়ে থাকতে পারেন লেখক) এমনই কালো বাঘ দেখা যাওয়ার কথা বলেছিলেন এক প্রকৃতিবিদ। 

বান্দরবানের দুর্গম এক পাড়ায় সংরক্ষণ করা বাঘের খুলিবাঘের গল্প
একসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল-গাজীপুরের ভাওয়াল ও মধুপুরের অরণ্যসহ অনেক এলাকাতেই ছিল বাঘেদের রাজ্য। আর তাই বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট যেখানেই যাই, খোঁজ নিই বাঘেদের। একটু বয়স্ক কাউকে পেলে চেপে ধরি পুরোনো দিনের জঙ্গলের গল্প শোনার জন্য। তাঁদের মুখে এসব কাহিনি শুনতে শুনতে আমারও মনে হয়—আহ ওই সময় যদি থাকতাম! কিংবা সত্যি যদি টাইম মেশিন থাকত, তবে দেশের কত জঙ্গলেই না বাঘেদের দেখা পেতাম। অন্যদের মুখে শোনা বাঘ দেখার কিছু কাহিনিই তুলে ধরছি পাঠকদের সামনে।

২০২০। বান্দরবানের কেওক্রাডংয়ের পাদদেশে পরিচ্ছন্ন, শান্ত এক পাড়া। দার্জিলিং পাড়া। সন্ধ্যা নেমেছে। পাড়াপ্রধানের খাবারের ঘরটায় তাঁকে ঘিরে বসে আছি কয়েকজন। সৌরবিদ্যুতে জ্বলা বাতির মিটমিটে আলোয় ঘরটার অন্ধকার কাটেনি। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারির খেলা কামরাজুড়ে। পাড়াপ্রধান ছোটখাটো গড়নের অমায়িক এক মানুষ। মুখের বহু ভাঁজ, চোখের নিচের কুঁচকানো চামড়া জানান দিচ্ছে অনেকগুলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত পাড় করে এসেছেন। সেই সঙ্গে স্মৃতি হিসেবে জমা আছে হাজারো বিচিত্র ঘটনা। 

বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি খাল ও আশপাশের দৃশ্যএকটা গল্প শুনতে চেয়েছিলাম। সত্যি গল্প। ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলতে লাগলেন। তবে কাহিনিটা এত রোমাঞ্চকর, ভাষার ছোট্ট সমস্যাটা উড়ে গেল এক নিমেষে। এমনই এক রাত ছিল। তবে সময়টা অন্তত পঁচিশ বসন্ত আগের। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে পাড়ার মানুষগুলো। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম টুটে যায় কারবারির। গোয়ালঘরের দিক থেকে আসছে আওয়াজটা। দৌড়ে ঘরের দরজা খুলে বের হলেন। দেরি হয়ে গেছে। তাঁর সবচেয়ে বড় গরুটাকে নিয়ে গেছে ওটা। ডোরা বাঘ।

আমি যেন হঠাৎ করেই পিছিয়ে গেলাম দুই যুগ কিংবা তারও আগে। স্পষ্ট একটা হুটোপুটির শব্দ শুনলাম। তারপর ভারী একটা কিছু হিঁচড়ে নেওয়ার আওয়াজ। বাঘ বড় সাইজের গরু বা মোষ মেরে নেওয়ার সময় মাটিতে মড়ি ঘষটানোর কারণে যে শব্দ হয়! 

২০১১ সালের ঘটনা। বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ বড় মোদকের দিকে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সাঙ্গু রিজার্ভের গহিনে ঢুকে বাঘের খোঁজ করা। আমাদের গাইড ছিলেন মধ্যবয়স্ক এক মারমা। ভারী হাসি-খুশি মানুষ। তিন্দু পেরিয়েছি তখন। রেমাক্রির ধারে। হঠাৎ এক পাহাড় দেখিয়ে বললেন, বিশাল একটা বাঘ বসে থাকতে দেখেছিলেন এখানে। ভয় পেয়ে একটা পাথরের ওপাশে লুকিয়ে পড়েন। বাঘটাকে আয়েশ করে গড়াগড়ি খেতে দেখেছিলেন ঝোপ-জঙ্গলের মাঝে। তাঁর অভিজ্ঞতা ১৯৮০-৮২ সালের।

মাস দেড়েক আগের ঘটনা। বান্দরবানে গিয়ে নীলাচল এলাকায় দেখা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন খুমির সঙ্গে। কিছুটা আলাপ হতেই গল্পের ঝুলি মেলে দিলেন। ছোটবেলা কেটেছে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে। ১৯৮৪–৮৫ সালের দিকে বাবার সঙ্গে বিলাইছড়ির এক জুমে কাজ করতে যান। তখনই দেখেন বিশাল এক বাঘ। গল্পটা বলতে গিয়ে যেন পুরোনো সেই স্মৃতি জ্যান্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর মনে। চোখ বড় বড় হয়ে উঠেছিল। জুম থেকে কিছুটা দূরের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন বাঘটাকে। তারপর হারিয়ে যায় গাছপালার আড়ালে।  

সাজেকের এক রিসোর্ট থেকে দেখা বাংলাদেশ ও ভারতের মিজোরামের বন–পাহাড়মহানন্দায় বাঘ মিলেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামেও মিলবে কি
ভারতের শিলিগুড়ির কাছেই মহানন্দা অভয়ারণ্য। বছর কয়েক আগে দার্জিলিং যাওয়া-আসার পথে মহানন্দার দেখা পেয়েছিলাম গাড়ি থেকে। তবে জঙ্গলের অন্দরমহলে যাওয়া হয়নি। দুই যুগ পর সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছে।

রাজ্য বন দফতর সূত্রে জানা যায়, বাঘ আছে এমন জানতে পেরে জঙ্গলের একাধিক জায়গায় ক্যামেরা ট্র‍্যাপ বসানো হয়েছিল। আর সেই ক্যামেরাতেই ধরা পড়ে ডোরাকাটা প্রাণীটি। তারা মনে করছেন আরও বাঘ আছে ওই অভয়ারণ্যে। এর আগে নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক ও বক্সা টাইগার রিজার্ভে বাঘের দেখা মিলেছিল। এবার মহানন্দাতেই ক্যামেরাবন্দী হলো পূর্ণবয়স্ক বাঘ। এটা এ বছরের এপ্রিলের ঘটনা। 

মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কিছুটা দূরেই শালুগাড়া আর্মি ক্যাম্প। সেখানে শেষবার ১৯৯৯ সালের দিকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। তবে বন দপ্তর সূত্র বলছে, সেটি বুড়ো বাঘ। এরপর ২০১০ সালের দিকে বাঘের অস্তিত্ব টের পাওয়া গেলেও ছবি পাওয়া যায়নি। তার মানে, এই অরণ্যে বাঘের দেখা মিলল দুই যুগ পর। 

আমাদেরও কিন্তু খুব হতাশার কিছু নেই। রাঙামাটি-বান্দরবানের বন-পাহাড়ে সাম্প্রতিক সময়েও বাঘ দেখার দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সমস্যা হলো, এখনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি মহানন্দার মতো। 

২০১৬ সালে মাতামুহুরি রিজার্ভ থেকে তোলা বাঘের পায়ের ছাপের ছবিসাম্প্রতিক খবর
সাজেক-কাসালংয়ের উত্তর-পুবে ভারতের মিজোরামে ডামপা টাইগার রিজার্ভ। একেবারে সীমান্ত বিন্দুতেই এর অবস্থান দেখাচ্ছে গুগল আর্থ। ডামপার কথা জানার পর আশার পারদটা চূড়ায় গিয়ে ঠেকে। ডামপায় বাঘ থাকলে সীমান্তের এপাশে কাসালং-সাজেকে কেন থাকবে না!

তবে ভারতের ২০১৮ সালের বাঘ জরিপের ফলাফল মনটা একটু ভার করে দেয়। ওই জরিপে মিজোরামের ডামপা টাইগার রিজার্ভে বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। তবে ২০২১ সালের জুনেই খুশির খবর মিলল। ডামপায় ক্যামেরা ট্র্যাপে বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে আবার। মে মাসে বাঘ ধরা দিয়েছে জাখুমা ডন নামের এক বন্য প্রাণীপ্রেমী এবং বনপ্রহরীর ক্যামেরা ট্র্যাপে। ২০১৪ সালের পর আবার ডামপায় ক্যামেরা ফাঁদে বন্দী হলেন মহারাজা। অবশ্য কোনো কারণে ডামপায় বাঘ না থাকলেও কাসালং-সাজেকে থাকতেই পারে বাঘের বসতি।

সাজেকে ২০২০ সালেও শুনেছি বাঘের তাজা কাহিনি। সেপ্টেম্বরে সাজেকের পাহাড় রাজ্য ভ্রমণের তৃতীয় রাতে একটি রেস্তোরাঁর ছাদে গেলাম ভ্রমণসঙ্গীদের নিয়ে। এখানেই এক রিসোর্ট মালিকের সঙ্গে আলাপ তখন। একাধিক রিসোর্ট আছে তাঁর। 

রাতে পাহাড় কেবল আবছা চোখে পড়ছিল। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারি। এর মধ্যে ওই রিসোর্ট মালিক ভদ্রলোক গল্প বলা শুরু করলেন। ‘এখন তো জন্তুরা এদিকে আসে না। দূরের পাহাড়ে আছে। কখনো কখনো শিকারিরা পাহাড়ের ভেতর থেকে বন্য জন্তু মেরে আনে। ওই তো কয়েক বছর আগেই একটা বাঘ শিকার হইছিল।’ 

‘বাঘ নাকি চিতা?’ কোনোভাবে ঢোক গিলে প্রশ্ন করলাম।

সাজেকের পাহাড়ি অরণ্যে কয়েকটি জুমঘর‘কী বলেন! রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। একটা দাঁতও আছে আমার কাছে।’ রীতিমতো চটে গেলেন হাসিখুশি ভদ্রলোকটি। রিসোর্ট মালিক শিক্ষিত, বিদেশি সংস্থায়ও চাকরি করার অভিজ্ঞতা আছে। তাঁর ভুল হওয়ার কথা নয়। কষ্টের মধ্যেও এক চিলতে আশার আলো দেখলাম। কয়েক বছর আগে যেহেতু ছিল, এখনো নিশ্চয় দু-একটা আছে। 

নভেম্বর, ২০২০। সকালের নাশতা শেষে কেওক্রাডংয়ে উঠেই দেখা পাহাড়টির মালিক লালা বমের সঙ্গে। তাঁর কাছেই শুনলাম গল্পটা, আর রোমাঞ্চে কাঁটা দিয়ে উঠল শরীর। আগের বছর, মানে ২০১৯-এ তাঁর বিশাল একটা গরু মারা পড়েছিল বাঘের আক্রমণে। লালা বমের বর্ণনা ঠিক হলে দূরের পাহাড়ে থাকে বিশাল বেঙ্গল টাইগার। শিকারের জন্য হানা দেয় মাঝেমধ্যে এদিকে। হেলিপ্যাডের ঠিক নিচেই মেরে খেয়ে গিয়েছিল গরুটাকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল খান তাঁর ‘টাইগারস ইন ম্যানগ্রোভস’ বইয়ে ২০১০ সালে কাসালং রিজার্ভে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর জানিয়েছেন। ২০১১ সালে বান্দরবানের তাজিংডং পাহাড়ে স্থানীয় এক শিকারির কাছে বাঘের চর্বি আবিষ্কার করেন তিনি। তাজিংডংয়ের আশপাশেই ওই বছর বাঘটি শিকার করা হয়। ওটার হাড়-চামড়া কিনে নিয়ে যান মিয়ানমারের শিকারিরা। ওই শিকারিই জানান, তারের শক্তিশালী এক ধরনের ফাঁদ পাতা হয় বাঘের জন্য। ওই ফাঁদে বাঘের পা আটকে যায়। তারপর অনাহারে সেখানে মারা পড়ে বিশাল জন্তুটি।

বড় মোদক এলাকায় ২০১০ সালে ও এর আগে এক স্থানীয় শিকারি দুটি বাঘ শিকার করেন বলে জানা যায়। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঘের সাম্প্রতিক আনাগোনার ব্যাপারে প্রথম মোটামুটি নিশ্চিত প্রমাণ হাজির করে বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স। ২০১৬ সালে বান্দরবানের মাতামুহুরি সংরক্ষিত বনে বাঘের পায়ের ছাপের ছবি তোলেন তাঁদের প্যারা বায়োলজিস্টরা। 

দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করছেন রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রিয় চাকমা। তাঁর থেকেই জানতে পারি ২০০৫-০৬ সালের দিকে কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে পাহাড়ের দুর্গমের বাসিন্দাদের হাতে দুটি বাঘ মারা পড়ার কাহিনি। ২০১০-১১ সালে রাঙামাটির রাইংক্ষ্যং অরণ্যেও পেয়েছিলেন বাঘের খোঁজ। 

বাঘের চর্বি ও ভাল্লুকের থাবা হাতে বান্দরবানের দুর্গমের এক বাসিন্দাআলীকদমের ভারত সীমান্তঘেঁষা এক পাড়ার বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ হয় বছর দুয়েক আগে। আশপাশের বন-পাহাড় আর বুনো জন্তুদের খবর নিলাম। একপর্যায়ে বললেন, তাঁদের দুই পাড়ার মাঝখানে বিশাল এক জঙ্গল। দিনের বেলায়ও ওই অরণ্য পাড়ি দিতে ভয় হয়। সেখানেই আস্তানা বড় এক বাঘের। হঠাৎ হঠাৎ ডাক শোনা যায়। ২০২০ সালে পাড়ার দু-একজন দেখাও পেয়েছিল ভয়ংকর সুন্দর এই জন্তুর। 

তবে বাঘের সর্বশেষ খবর পাই মনিরুল খানের কাছ থেকে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। জুলাইয়ের এই ভ্রমণের সময় স্থানীয়দের কাছে শোনেন আগের মাস মানে জুনেই বাঘের কাসালং নদী সাঁতরে পেরোনোর গল্প। কাসালং রিজার্ভের উত্তরের বেশ গভীরে দেখা যায় বাঘটিকে। মনিরুল খানের কাসালংসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় ভ্রমণের রোমাঞ্চকর বিবরণ আছে তাঁর লেখা সম্প্রতি প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ বইটিতে। 

আশা নিয়ে থাকি
আশা করি এই দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাঘের বন বললেই আমাদের শুধু সুন্দরবনের নাম বলতে হবে না, বলতে পারব কাসালং কিংবা সাঙ্গু-মাতামুহুরির নামও। বন্যপ্রাণী ও বাঘ বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে জানিয়েছেন এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে কয়েকটি হলেও বাঘ টিকে থাকা অসম্ভব নয়। এদিকে মনিরুল খান খুব অল্প সংখ্যায় হলেও কাসালং ও সাঙ্গু-মাতামুহুরির অরণ্যে এখনো বাঘের বিচরণ আছে বলেই বিশ্বাস করেন। গতকাল ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। আজ তাই একটাই আশা, অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে ক্যামেরা ট্র্যাপে বা সরাসরি ক্যামেরায় বন্দী হবে ডোরাকাটা সেই রাজকীয় প্রাণী। আর আমরা নিশ্চিত হব পাহাড়ের বনে এখনো তার বিচরণ সম্পর্কে। তবে আশঙ্কাও আছে! যদি সত্যি বাঘ থেকেও থাকে পাহাড়ের বনে, এখনই এদের রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে একসময় দেশের অন্য বনগুলোতে ঘুরে বেড়ানো বাঘদের মতো হারিয়ে যাবে এরাও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে কাঁপছে সারা দেশ ভোগাচ্ছে ঘন কুয়াশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৮
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশের ব্যস্ত সড়কের ধারে জবুথবু হয়ে বসে আছেন নাছিমা। কোলে তাঁর ছোট্ট নবজাতক। পাতলা একটি কম্বল আর পুরোনো কাঁথা জোড়া দিয়ে কোনো-রকমে নিজের ও নবজাতকের শরীর ঢেকে রেখেছেন। কনকনে বাতাসে নবজাতকের ঠোঁট নীলচে হয়ে এসেছে।

নাছিমা বলেন, ‘শীতটা খুব কষ্ট দিতাছে। কাল থেইকা রাতে ঠিকমতো ঘুমাইতে পারি না। বাচ্চাডারে নিয়া বেশি ভয় লাগতাছে। ঠান্ডা লাগলে কী করুম, সেই চিন্তাই মাথায় ঘোরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ দপ্তর জানাচ্ছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে অসুস্থতার ঝুঁকি। অনেকে বলছেন, জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার (৫ দিন) পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা; পাশাপাশি থাকবে কুয়াশার প্রকোপ।

ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা বাড়তে থাকে। সোয়া ৭টার সময় নদী পথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।’

জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক ও জনপথ। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

গতকাল সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, উত্তরের জেলা গাইবান্ধা ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের শিশুচিকিৎসক সোহেল বলেন, ‘শীতের মধ্যে বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ঠান্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে; যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

জেলার বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডায় দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে।

যশোর প্রতিনিধি জানান, জেলায় চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা এদিনের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কয়েক দিন ধরে কুয়াশা ও উত্তরের বাতাসে বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের অনুভূতি।

যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জোহর আলী বলেন, ‘শীতে রিকশা চালাতে গিয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। ব্রেকও ঠিকমতো ধরা যাচ্ছে না। বাসায় মনে হচ্ছে, গায়ে সুই ফোটাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতের প্রকোপ বাড়ছে: ৭ জেলায় ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ, থাকবে কত দিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৪
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশজুড়ে শীতের দাপট বাড়তে শুরু করেছে। দেশের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

শৈত্যপ্রবাহের কবলে সাত জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের কোথাও কোথাও আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় দিনের বেলায়ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডার অনুভূতি বজায় থাকবে।

ঘন কুয়াশার সতর্কতা পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোনো কোনো এলাকায় এই কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তাপমাত্রা ও বৃষ্টির সম্ভাবনায় আগামী কয়েক দিন সারা দেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে, তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে ২৯ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিভাগীয় শহরগুলোর তাপমাত্রা গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে ১৫ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৪, রংপুরে ১১ দশমিক ২, খুলনায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি, বরিশালে ১২ দশমিক ৪ এবং সিলেটে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানান, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আগামী পাঁচ দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, সতর্ক থাকতে পারেন যেভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতজুড়ে ঢাকার বাতাসের দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে ঢাকা।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২২৫। যা নির্দেশ করে, ঢাকার বাতাসের অবস্থা খুব অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকার বেশকিছু স্থানের বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে খুব অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে— দক্ষিণ পল্লবী (২৮৩), ইস্টার্ন হাউজিং (২৬০), বেজ এজওয়াটার আউটডোর (২৫১), কল্যাণপুর (২৫০) ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (২২২)।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা (২২৫, খুব অস্বাস্থ্যকর), তৃতীয় স্থানে ভারতের দিল্লি (১৯১, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর), চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (১৯০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে কুয়েতের কুয়েত সিটি (১৮০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেঘলা ঢাকার আকাশ, কুয়াশার দেখা মিলতে পারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সকাল থেকে ঢাকার আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা গেছে। সূর্যের দেখা মেলেনি এই সকালেও। কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে দেখা যায়, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়েছে ৭৬ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানা যায়, আজ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকতে পারে।

অধিদপ্তর আরও বলছে, আজ দিনের তাপমাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না।

এছাড়া বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, এ সময় উত্তর/উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

এদিকে গতকাল বুধবার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত