Ajker Patrika

পার্বত্য চট্টগ্রামের অরণ্যে এখনো কি আছে বাঘের বসতি

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৩, ১৫: ০৩
পার্বত্য চট্টগ্রামের অরণ্যে এখনো কি আছে বাঘের বসতি

আমাদের দেশের কোন বনে বাঘ আছে জিজ্ঞেস করলে নিঃসন্দেহে সুন্দরবনের নামই বলবেন। অথচ একসময় বাংলাদেশের বহু অরণ্যেই বাঘ ছিল। তবে অনেকেই জানেন না, এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো কোনো জঙ্গলে বাঘ দেখার কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আসলেই কি এখনো আমাদের পাহাড়ের বনে বিচরণ করছে বাঘেরা? সে উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করেছি লেখাটিতে।

পুরোনো সেই দিনের কথা
আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঘের বর্তমান হাল-হকিকত জানার আগে বরং এখানকার বাঘেদের অতীত বিচরণের কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। বাঘ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরীর একটা লেখায় ১৯৫৯ সালে কাপ্তাইয়ের (বর্তমানে রাঙামাটি জেলায় পড়েছে) বনে শিকার করা একটা বাঘের ছবি দেখেছিলাম। শিকার করেছিলেন একজন মারমা। ২০০৭–০৮ সালের দিকে যখন কাপ্তাই যাই, ওই শিকারির খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। আশ্চর্যজনকভাবে শিলছড়ি মারমাপাড়ায় ওই শিকারির ছেলেকে পেয়ে যাই। ছবিটা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল গোটা পাড়ার লোকেরা। 

আজ থেকে বেশি নয়, ৬০-৭০ বছর আগের পার্বত্য চট্টগ্রাম আর সিলেট বিভাগের বনের অবস্থা জানতে আমাকে সাহায্য করে এনায়েত মওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইটা। জীবনে বন নিয়ে যত বই পড়েছি, এতটা ভালো লেগেছে কমই। মনটা হুহু করে ওঠে কাপ্তাই বাঁধ তৈরির জন্য কাসালং রিজার্ভ ফরেস্টের গাছপালা কাটার মহাযজ্ঞের বর্ণনা পড়ে। কাসালং রিজার্ভের মাইনি, মাহিল্লা—এসব এলাকায় বাঘ মারার কাহিনিগুলো পড়ে মন খারাপ করে বসে থেকেছি। এখনো যতবার বইটি পড়ি, মনটা কেঁদে ওঠে। 

১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে কয়েকটি বাঘ শিকারের বর্ণনা আছে ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইটিতে। এটি আমাকে এতটাই প্রভাবিত করে যে পরে মাইনি, পাবলাখালী গিয়েছি। পাবলাখালী থেকে নৌকা রিজার্ভ করে কাসালং নদী ধরে মাহিল্লা পেরিয়ে যাওয়ার সময় যেন এনায়েত মওলার সময়টায় ফিরে গিয়েছিলাম। তখনকার গভীর জঙ্গল যেন মনের চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম। 

২০১১ সালের দিকে মাইনি বন বাংলোয় উঠে অবশ্য আশপাশে আর বনের ছিটেফোঁটা দেখিনি। কিন্তু বাংলোর দেয়ালে টাঙানো হাতি খেদার ছবিসহ পুরোনো কিছু ছবি দেখে শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তবে রাতে পুরোনো ভিজিটরস বুকটা দেখতে গিয়েই চমকেছি। খুঁজতে খুঁজতে ১৯৫০-৬০ সালের মধ্যকার একটি এন্ট্রিতে চোখ আটকে যায়। সেখানে একজন লিখেছেন, ‘আজ একটা বেঙ্গল টাইগার মেরেছি।’ বাঘটার মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত মাপও দেওয়া ছিল। 

বান্দরবানের আলীকদমের পাহাড়ি এলাকায়ও মাঝে মাঝে মেলে বাঘের খোঁজ১৯৫০ সালের অক্টোবরে কাসালং রিজার্ভে বাঘ দেখার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন বন বিভাগের এক সময়কার ইন্সপেক্টর জেনারেল ইউসুফ এস আহমেদ। তাঁর ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেলস অব বেঙ্গল’ বইটিতে ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার অরণ্য-বন্যপ্রাণীর ভালো চিত্র পাওয়া যায়।

চট্টগ্রামের বাঘের অবস্থার চমৎকার চিত্র পাই এরশাদ উল্লা খানের ‘চট্টগ্রামের শিকার কাহিনী’ বইয়ে। ১৯৫৫ সালে চুনতির ওহাইদ্যা ঘোনায় (আরাকান রোডের পাশের পাহাড়ে) বাঘ শিকারের বর্ণনা করেছেন লেখক। কক্সবাজারের হিমছড়িতে আস্তানা গাড়া বিশাল আকারের একটি বাঘের কাহিনিও শুনিয়েছেন তিনি।’ ঘটনাটা গত শতকের পঞ্চাশের দশকের। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে রাঙামাটির নানিয়ারচরের ধারের মরাচেঙ্গির ধূর্ত এক বাঘের কাহিনিও পড়ি তাঁর এ বইয়ে।

এদিকে ড. রেজা খানের ‘বাংলাদেশের বন্য প্রাণী’ (তৃতীয় খণ্ড) পড়ে জানতে পেরেছি ১৯৮১ সালের দিকে গারো পাহাড়ে, নেত্রকোনা ও কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালি রেঞ্জে তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে।

কালো চিতা খুবই কালেভদ্রে দেখা গেলেও কালো বাঘ আরও অনেক বেশি দুষ্প্রাপ্য। এরও রেকর্ড আছে বাংলাদেশেই। ১৮৪৬ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়ে (পার্বত্য চট্টগ্রামও বুঝিয়ে থাকতে পারেন লেখক) এমনই কালো বাঘ দেখা যাওয়ার কথা বলেছিলেন এক প্রকৃতিবিদ। 

বান্দরবানের দুর্গম এক পাড়ায় সংরক্ষণ করা বাঘের খুলিবাঘের গল্প
একসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল-গাজীপুরের ভাওয়াল ও মধুপুরের অরণ্যসহ অনেক এলাকাতেই ছিল বাঘেদের রাজ্য। আর তাই বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট যেখানেই যাই, খোঁজ নিই বাঘেদের। একটু বয়স্ক কাউকে পেলে চেপে ধরি পুরোনো দিনের জঙ্গলের গল্প শোনার জন্য। তাঁদের মুখে এসব কাহিনি শুনতে শুনতে আমারও মনে হয়—আহ ওই সময় যদি থাকতাম! কিংবা সত্যি যদি টাইম মেশিন থাকত, তবে দেশের কত জঙ্গলেই না বাঘেদের দেখা পেতাম। অন্যদের মুখে শোনা বাঘ দেখার কিছু কাহিনিই তুলে ধরছি পাঠকদের সামনে।

২০২০। বান্দরবানের কেওক্রাডংয়ের পাদদেশে পরিচ্ছন্ন, শান্ত এক পাড়া। দার্জিলিং পাড়া। সন্ধ্যা নেমেছে। পাড়াপ্রধানের খাবারের ঘরটায় তাঁকে ঘিরে বসে আছি কয়েকজন। সৌরবিদ্যুতে জ্বলা বাতির মিটমিটে আলোয় ঘরটার অন্ধকার কাটেনি। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারির খেলা কামরাজুড়ে। পাড়াপ্রধান ছোটখাটো গড়নের অমায়িক এক মানুষ। মুখের বহু ভাঁজ, চোখের নিচের কুঁচকানো চামড়া জানান দিচ্ছে অনেকগুলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত পাড় করে এসেছেন। সেই সঙ্গে স্মৃতি হিসেবে জমা আছে হাজারো বিচিত্র ঘটনা। 

বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি খাল ও আশপাশের দৃশ্যএকটা গল্প শুনতে চেয়েছিলাম। সত্যি গল্প। ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলতে লাগলেন। তবে কাহিনিটা এত রোমাঞ্চকর, ভাষার ছোট্ট সমস্যাটা উড়ে গেল এক নিমেষে। এমনই এক রাত ছিল। তবে সময়টা অন্তত পঁচিশ বসন্ত আগের। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে পাড়ার মানুষগুলো। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম টুটে যায় কারবারির। গোয়ালঘরের দিক থেকে আসছে আওয়াজটা। দৌড়ে ঘরের দরজা খুলে বের হলেন। দেরি হয়ে গেছে। তাঁর সবচেয়ে বড় গরুটাকে নিয়ে গেছে ওটা। ডোরা বাঘ।

আমি যেন হঠাৎ করেই পিছিয়ে গেলাম দুই যুগ কিংবা তারও আগে। স্পষ্ট একটা হুটোপুটির শব্দ শুনলাম। তারপর ভারী একটা কিছু হিঁচড়ে নেওয়ার আওয়াজ। বাঘ বড় সাইজের গরু বা মোষ মেরে নেওয়ার সময় মাটিতে মড়ি ঘষটানোর কারণে যে শব্দ হয়! 

২০১১ সালের ঘটনা। বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ বড় মোদকের দিকে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সাঙ্গু রিজার্ভের গহিনে ঢুকে বাঘের খোঁজ করা। আমাদের গাইড ছিলেন মধ্যবয়স্ক এক মারমা। ভারী হাসি-খুশি মানুষ। তিন্দু পেরিয়েছি তখন। রেমাক্রির ধারে। হঠাৎ এক পাহাড় দেখিয়ে বললেন, বিশাল একটা বাঘ বসে থাকতে দেখেছিলেন এখানে। ভয় পেয়ে একটা পাথরের ওপাশে লুকিয়ে পড়েন। বাঘটাকে আয়েশ করে গড়াগড়ি খেতে দেখেছিলেন ঝোপ-জঙ্গলের মাঝে। তাঁর অভিজ্ঞতা ১৯৮০-৮২ সালের।

মাস দেড়েক আগের ঘটনা। বান্দরবানে গিয়ে নীলাচল এলাকায় দেখা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন খুমির সঙ্গে। কিছুটা আলাপ হতেই গল্পের ঝুলি মেলে দিলেন। ছোটবেলা কেটেছে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে। ১৯৮৪–৮৫ সালের দিকে বাবার সঙ্গে বিলাইছড়ির এক জুমে কাজ করতে যান। তখনই দেখেন বিশাল এক বাঘ। গল্পটা বলতে গিয়ে যেন পুরোনো সেই স্মৃতি জ্যান্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর মনে। চোখ বড় বড় হয়ে উঠেছিল। জুম থেকে কিছুটা দূরের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন বাঘটাকে। তারপর হারিয়ে যায় গাছপালার আড়ালে।  

সাজেকের এক রিসোর্ট থেকে দেখা বাংলাদেশ ও ভারতের মিজোরামের বন–পাহাড়মহানন্দায় বাঘ মিলেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামেও মিলবে কি
ভারতের শিলিগুড়ির কাছেই মহানন্দা অভয়ারণ্য। বছর কয়েক আগে দার্জিলিং যাওয়া-আসার পথে মহানন্দার দেখা পেয়েছিলাম গাড়ি থেকে। তবে জঙ্গলের অন্দরমহলে যাওয়া হয়নি। দুই যুগ পর সেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছে।

রাজ্য বন দফতর সূত্রে জানা যায়, বাঘ আছে এমন জানতে পেরে জঙ্গলের একাধিক জায়গায় ক্যামেরা ট্র‍্যাপ বসানো হয়েছিল। আর সেই ক্যামেরাতেই ধরা পড়ে ডোরাকাটা প্রাণীটি। তারা মনে করছেন আরও বাঘ আছে ওই অভয়ারণ্যে। এর আগে নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক ও বক্সা টাইগার রিজার্ভে বাঘের দেখা মিলেছিল। এবার মহানন্দাতেই ক্যামেরাবন্দী হলো পূর্ণবয়স্ক বাঘ। এটা এ বছরের এপ্রিলের ঘটনা। 

মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কিছুটা দূরেই শালুগাড়া আর্মি ক্যাম্প। সেখানে শেষবার ১৯৯৯ সালের দিকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। তবে বন দপ্তর সূত্র বলছে, সেটি বুড়ো বাঘ। এরপর ২০১০ সালের দিকে বাঘের অস্তিত্ব টের পাওয়া গেলেও ছবি পাওয়া যায়নি। তার মানে, এই অরণ্যে বাঘের দেখা মিলল দুই যুগ পর। 

আমাদেরও কিন্তু খুব হতাশার কিছু নেই। রাঙামাটি-বান্দরবানের বন-পাহাড়ে সাম্প্রতিক সময়েও বাঘ দেখার দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সমস্যা হলো, এখনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি মহানন্দার মতো। 

২০১৬ সালে মাতামুহুরি রিজার্ভ থেকে তোলা বাঘের পায়ের ছাপের ছবিসাম্প্রতিক খবর
সাজেক-কাসালংয়ের উত্তর-পুবে ভারতের মিজোরামে ডামপা টাইগার রিজার্ভ। একেবারে সীমান্ত বিন্দুতেই এর অবস্থান দেখাচ্ছে গুগল আর্থ। ডামপার কথা জানার পর আশার পারদটা চূড়ায় গিয়ে ঠেকে। ডামপায় বাঘ থাকলে সীমান্তের এপাশে কাসালং-সাজেকে কেন থাকবে না!

তবে ভারতের ২০১৮ সালের বাঘ জরিপের ফলাফল মনটা একটু ভার করে দেয়। ওই জরিপে মিজোরামের ডামপা টাইগার রিজার্ভে বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। তবে ২০২১ সালের জুনেই খুশির খবর মিলল। ডামপায় ক্যামেরা ট্র্যাপে বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে আবার। মে মাসে বাঘ ধরা দিয়েছে জাখুমা ডন নামের এক বন্য প্রাণীপ্রেমী এবং বনপ্রহরীর ক্যামেরা ট্র্যাপে। ২০১৪ সালের পর আবার ডামপায় ক্যামেরা ফাঁদে বন্দী হলেন মহারাজা। অবশ্য কোনো কারণে ডামপায় বাঘ না থাকলেও কাসালং-সাজেকে থাকতেই পারে বাঘের বসতি।

সাজেকে ২০২০ সালেও শুনেছি বাঘের তাজা কাহিনি। সেপ্টেম্বরে সাজেকের পাহাড় রাজ্য ভ্রমণের তৃতীয় রাতে একটি রেস্তোরাঁর ছাদে গেলাম ভ্রমণসঙ্গীদের নিয়ে। এখানেই এক রিসোর্ট মালিকের সঙ্গে আলাপ তখন। একাধিক রিসোর্ট আছে তাঁর। 

রাতে পাহাড় কেবল আবছা চোখে পড়ছিল। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারি। এর মধ্যে ওই রিসোর্ট মালিক ভদ্রলোক গল্প বলা শুরু করলেন। ‘এখন তো জন্তুরা এদিকে আসে না। দূরের পাহাড়ে আছে। কখনো কখনো শিকারিরা পাহাড়ের ভেতর থেকে বন্য জন্তু মেরে আনে। ওই তো কয়েক বছর আগেই একটা বাঘ শিকার হইছিল।’ 

‘বাঘ নাকি চিতা?’ কোনোভাবে ঢোক গিলে প্রশ্ন করলাম।

সাজেকের পাহাড়ি অরণ্যে কয়েকটি জুমঘর‘কী বলেন! রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। একটা দাঁতও আছে আমার কাছে।’ রীতিমতো চটে গেলেন হাসিখুশি ভদ্রলোকটি। রিসোর্ট মালিক শিক্ষিত, বিদেশি সংস্থায়ও চাকরি করার অভিজ্ঞতা আছে। তাঁর ভুল হওয়ার কথা নয়। কষ্টের মধ্যেও এক চিলতে আশার আলো দেখলাম। কয়েক বছর আগে যেহেতু ছিল, এখনো নিশ্চয় দু-একটা আছে। 

নভেম্বর, ২০২০। সকালের নাশতা শেষে কেওক্রাডংয়ে উঠেই দেখা পাহাড়টির মালিক লালা বমের সঙ্গে। তাঁর কাছেই শুনলাম গল্পটা, আর রোমাঞ্চে কাঁটা দিয়ে উঠল শরীর। আগের বছর, মানে ২০১৯-এ তাঁর বিশাল একটা গরু মারা পড়েছিল বাঘের আক্রমণে। লালা বমের বর্ণনা ঠিক হলে দূরের পাহাড়ে থাকে বিশাল বেঙ্গল টাইগার। শিকারের জন্য হানা দেয় মাঝেমধ্যে এদিকে। হেলিপ্যাডের ঠিক নিচেই মেরে খেয়ে গিয়েছিল গরুটাকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল খান তাঁর ‘টাইগারস ইন ম্যানগ্রোভস’ বইয়ে ২০১০ সালে কাসালং রিজার্ভে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর জানিয়েছেন। ২০১১ সালে বান্দরবানের তাজিংডং পাহাড়ে স্থানীয় এক শিকারির কাছে বাঘের চর্বি আবিষ্কার করেন তিনি। তাজিংডংয়ের আশপাশেই ওই বছর বাঘটি শিকার করা হয়। ওটার হাড়-চামড়া কিনে নিয়ে যান মিয়ানমারের শিকারিরা। ওই শিকারিই জানান, তারের শক্তিশালী এক ধরনের ফাঁদ পাতা হয় বাঘের জন্য। ওই ফাঁদে বাঘের পা আটকে যায়। তারপর অনাহারে সেখানে মারা পড়ে বিশাল জন্তুটি।

বড় মোদক এলাকায় ২০১০ সালে ও এর আগে এক স্থানীয় শিকারি দুটি বাঘ শিকার করেন বলে জানা যায়। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঘের সাম্প্রতিক আনাগোনার ব্যাপারে প্রথম মোটামুটি নিশ্চিত প্রমাণ হাজির করে বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স। ২০১৬ সালে বান্দরবানের মাতামুহুরি সংরক্ষিত বনে বাঘের পায়ের ছাপের ছবি তোলেন তাঁদের প্যারা বায়োলজিস্টরা। 

দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করছেন রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রিয় চাকমা। তাঁর থেকেই জানতে পারি ২০০৫-০৬ সালের দিকে কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে পাহাড়ের দুর্গমের বাসিন্দাদের হাতে দুটি বাঘ মারা পড়ার কাহিনি। ২০১০-১১ সালে রাঙামাটির রাইংক্ষ্যং অরণ্যেও পেয়েছিলেন বাঘের খোঁজ। 

বাঘের চর্বি ও ভাল্লুকের থাবা হাতে বান্দরবানের দুর্গমের এক বাসিন্দাআলীকদমের ভারত সীমান্তঘেঁষা এক পাড়ার বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ হয় বছর দুয়েক আগে। আশপাশের বন-পাহাড় আর বুনো জন্তুদের খবর নিলাম। একপর্যায়ে বললেন, তাঁদের দুই পাড়ার মাঝখানে বিশাল এক জঙ্গল। দিনের বেলায়ও ওই অরণ্য পাড়ি দিতে ভয় হয়। সেখানেই আস্তানা বড় এক বাঘের। হঠাৎ হঠাৎ ডাক শোনা যায়। ২০২০ সালে পাড়ার দু-একজন দেখাও পেয়েছিল ভয়ংকর সুন্দর এই জন্তুর। 

তবে বাঘের সর্বশেষ খবর পাই মনিরুল খানের কাছ থেকে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। জুলাইয়ের এই ভ্রমণের সময় স্থানীয়দের কাছে শোনেন আগের মাস মানে জুনেই বাঘের কাসালং নদী সাঁতরে পেরোনোর গল্প। কাসালং রিজার্ভের উত্তরের বেশ গভীরে দেখা যায় বাঘটিকে। মনিরুল খানের কাসালংসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় ভ্রমণের রোমাঞ্চকর বিবরণ আছে তাঁর লেখা সম্প্রতি প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ বইটিতে। 

আশা নিয়ে থাকি
আশা করি এই দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাঘের বন বললেই আমাদের শুধু সুন্দরবনের নাম বলতে হবে না, বলতে পারব কাসালং কিংবা সাঙ্গু-মাতামুহুরির নামও। বন্যপ্রাণী ও বাঘ বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে জানিয়েছেন এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে কয়েকটি হলেও বাঘ টিকে থাকা অসম্ভব নয়। এদিকে মনিরুল খান খুব অল্প সংখ্যায় হলেও কাসালং ও সাঙ্গু-মাতামুহুরির অরণ্যে এখনো বাঘের বিচরণ আছে বলেই বিশ্বাস করেন। গতকাল ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। আজ তাই একটাই আশা, অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে ক্যামেরা ট্র্যাপে বা সরাসরি ক্যামেরায় বন্দী হবে ডোরাকাটা সেই রাজকীয় প্রাণী। আর আমরা নিশ্চিত হব পাহাড়ের বনে এখনো তার বিচরণ সম্পর্কে। তবে আশঙ্কাও আছে! যদি সত্যি বাঘ থেকেও থাকে পাহাড়ের বনে, এখনই এদের রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে একসময় দেশের অন্য বনগুলোতে ঘুরে বেড়ানো বাঘদের মতো হারিয়ে যাবে এরাও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত