Ajker Patrika

সাইবার বুলিং: হোক প্রতিবাদ

মীর রাকিব হাসান
আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ১৫: ০০
সাইবার বুলিং: হোক প্রতিবাদ

ঢাকা: বিশ্ব মা দিবসে মাকে শ্রদ্ধা জানাতে অনেকেই মায়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তেমনই একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ক্যাপশনে লেখেন ‘মা’। মায়ের সঙ্গে সন্তানের এমন স্থিরচিত্রও পড়েছে সাম্প্রদায়িকতার রোষানলে।

নেটিজেনদের কেউ কেউ চঞ্চলের ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। তবে অধিকাংশই এসব বিরূপ মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। ধর্ম নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠতেই অস্বস্তি প্রকাশ করেন ‘আয়নাবাজি’ খ্যাত এই অভিনেতা। প্রতিবাদও করেছেন। জানিয়ে দেন-ধর্ম নয়, মানুষ হিসেবেই তাঁর আসল পরিচয়।

ধিক্কার জানাই। মনে রাখবেন, এই দেশে মীর সাব্বির যেভাবে বড় হয়েছে চঞ্চলও একইভাবে বড় হয়েছেন।
—মীর সাব্বির, অভিনেতা

সাম্প্রতিক সময়ে শুধু চঞ্চল চৌধুরীই নন। অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাও তাঁর মাকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি দিলে এমন খারাপ মন্তব্যের শিকার হন। সিয়াম আহমেদ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়েছেন। সেখানেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য।

চঞ্চল চৌধুরী ও তাঁর মা। ছবি: ফেসবুকসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটু মন্তব্যের শিকার হতে হয় কমবেশি সবাইকেই। তারকা হলে তো কথাই নেই! একটি সেলফিই হয়ত দিয়েছেন। মুহূর্তেই একদল এসে জানিয়ে দেবে, দেখতে আপনি কুৎসিত! আপনাকে কারও ভালো না লাগতেই পারে। কিন্তু সেটা বলার ভাষা এমন! কেউ আপনার ইহকাল-পরকাল নিয়ে চিন্তিত হয়ে নানা উপদেশ বিলিয়ে যাবে।

স্নেহের চঞ্চল চৌধুরী, কতিপয় আকাট মূর্খের সাম্প্রদায়িক উক্তিতে মন খারাপ করো না। আমরা তোমাকে ভালোবাসি
—নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

কারও মা, কারও স্ত্রী, কারও স্বামী, কারও শরীরের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কারও বর্ণ, কারও ধর্ম, কারও ব্যক্তিগত জীবন, কারও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, কারও অর্জন, কারও প্রত্যাশা, কারও ব্যক্তিগত মতামত-এগুলোর কোনকিছুই রেহাই পাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঢুঁ মারলে দেখা যায়, সবখানেই আছে এই কটুক্তিকারীরা। তুলনামূলক বিচার করলে বোঝা যায়, অসুস্থ চর্চাটা এই অঞ্চলেই বেশি। তারকা যেহেতু, সবসময় পাল্টা মন্তব্যও করতে পারছেন না তাঁরা। চারপাশের এমন নেতিবাচকতা ভেতরে ভেতরে দুর্বল করে দেয়, আত্মবিশ্বাস গুড়িয়ে দেয়।

মায়ের সঙ্গে ভাবনার এ ছবি নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। ছবি: ফেসবুকএমনও হয়েছে এই কারণে গত বছর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মডেল-অভিনেত্রী কিছুদিন আগেই শরণাপন্ন হয়েছিলেন মনোবিদের। একবার নাকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন! চিকিৎসকের পরামর্শে দূরে আছেন ফেসবুক টুইটার থেকে। বেশির ভাগ মডেল-অভিনেত্রী একবাক্যে বলেন, ‘এসবে পাত্তা দেই না।’ কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়।

চঞ্চল, ভাবনা বা আমাদের সবার এমন অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু আমরা কি কেউ একটুও কথা বলতে পারি না? সাইবারে এই ঘৃণা কি কেবল আমাদের জন্য? আমি লজ্জিত, আমি বিব্রত।
—বন্যা মির্জা, অভিনেত্রী

আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ‘পাত্তা না দেওয়া’র অবস্থানে এসেছেন তাঁরা। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, জয়া আহসান, শবনম বুবলী, মেহজাবীন চৌধুরী, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, নুসরাত ফারিয়া, শবনম ফারিয়া, ভাবনা, জেসিয়া ইসলাম, তানজিন তিশা বা নায়লা নাঈমদের পাবলিক পোস্টের নিচে যেসব মন্তব্য আসে, সেগুলোর বেশিরভাগই উপদেশমূলক, অশালীন ও অপমানজনক।

কেন এমন হচ্ছে?

যারা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন, সেই জনপ্রিয় ব্যক্তিটির মুখোমুখি হলে এরা সরাসরি কিছুই বলতে পারবেন না। উল্টো হয়ত অটোগ্রাফ-সেলফি তুলতে চাইবেন। এসব মন্তব্য কারা করেন? কেন করেন? সাধারণত যে উত্তরটা আসে, ‘অশিক্ষিত মূর্খরা করেন। অপ্রস্তুত একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর হাতে ইন্টারনেট চলে যাওয়ার ফল হচ্ছে এসব।’

ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ, আমি হিন্দু নাকি মুসলিম! তাতে আপনাদের লাভ বা ক্ষতি কি? সকলেরই সবচেয়ে বড় পরিচয় ‘মানুষ’। ধর্ম নিয়ে এসব রুচিহীন প্রশ্ন ও বিব্রতকর আলোচনা সবক্ষেত্রে বন্ধ হোক। আসুন, সবাই মানুষ হই।
—চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা

কথাটা অনেকাংশেই সত্য। কিন্তু পুরোপুরি নয়। অল্প জানাশোনা মানুষদের ওপর দোষ চাপিয়ে আসলে আড়াল করা হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষের মানসিকতাকে। সমস্যাটা আসলে আমাদের সবার মধ্যেই। অন্যের ভালো-মন্দে দখলদারি করতে আমরা কে না ভালোবাসি! কারও কিছু পছন্দ না-ই হতে পারে, সেটা জানানোও যেতে পারে।

কিন্তু কাউকে নিজের মতো হওয়ার পরামর্শ দিতে পারি না আমরা! কটু মন্তব্যকারীদের সবাই ‘অশিক্ষিত’-‘মূর্খ’ নয়, তাঁদের প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যাবে, অনেকেই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন তাঁরা।

তারকারা কী বলছেন?

সোহানা সাবা। ছবি: ইনস্টাগ্রামমন্তব্য ডিলিট করি না

সোহানা সাবা, অভিনেত্রী

অনেক তারকাই ফেসবুকে মন্তব্যের ঘর বন্ধ রাখেন। আমারটা খোলা থাকে। কারণ এসব কটুক্তিকে আমি কেয়ার করি না। বাজে মন্তব্যকারীরা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব করে তা নয়। পত্রিকার নিউজের নিচেও অনেকে অনেক ধরণের মন্তব্য করে। ফেসবুকে আমি সাহসী ছবি পোস্ট করি। অনেক ইস্যু নিয়ে বলি। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করে।

আমার মাকেও এরা ছাড়ল না। আমার হাতাকাটা ব্লাউজ নিয়ে তাঁদের কথা, আমার মা কেন টিপ পরল, আমার মা হিন্দু। আমার মা হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক তবে সে মানুষ। আমার মার ওড়না দেখা যাচ্ছে না কেন? এরাই ধর্ষক। মানুষ কারও মাকে নিয়ে এমন নোংরামি করতে পারে?
—আশনা হাবিব ভাবনা, অভিনেত্রী

তবে নেগেটিভ হলেই ডিলিট করি না। উত্তর দেওয়ার দরকার মনে করি না। দুএকজন আছে যাদের উত্তর দেই, ‘আপনি একটা গাধা। আপনার আয়োডিনের অভাব আছে।’ এসব বলে ব্লক করে দেই, কিন্তু তার সেই মন্তব্য ডিলিট করি না। আমার রিঅ্যাকশন অন্যরাও দেখুক।

অপু বিশ্বাস। ছবি: ফেসবুকবয়স বাড়লে এরাও শোধরাবে

অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী

অনেক সময়ই দেখি, কেউ একজন খুব বাজে মন্তব্য করল। প্রোফাইলে গিয়ে দেখি সে আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। এতটুকু বাচ্চা ছেলে পড়াশোনা না করে ফেসবুকে এসে এসব করে বেড়ায়! ওর বোন বা মা যদি দেখে তাঁদের আদরের ছেলের কাণ্ড! নিশ্চিত তাঁরা মানতে পারবেন না। এমন বাজেভাবে একজনকে নিয়ে কেউ ভাবতে পারে!
অনেক সময়ই মনে হয় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যদি আইনানুগ ব্যবস্থা নেই, দেখা যাবে ওর ক্যারিয়ারে সেটার প্রভাব পড়বে। ওর মন্তব্যে আমার জীবনে যতটা না প্রভাব পড়েছে তারচেয়ে ওর বেশিই পড়বে। আমি মনে করি, বয়স বাড়লে এরাও শোধরাবে। বুঝবে ওরা একজন মানুষকে কতটা আঘাত করছে।

শবনম ফারিয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রামইগনোর করাটা সমাধান নয়

শবনম ফারিয়া, অভিনেত্রী

খুব খারাপ লাগে, যখন আমার ফ্যামিলি মেম্বাররা এসব মন্তব্য দেখে। ওরা আসলেই আপসেট হয়ে যায়। বিশেষ করে আমার দুই বোন, হাজবেন্ড। এটা দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন’কে আরও অ্যাকটিভ হতে হবে। কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া গেলে অনেকের শিক্ষা হতো।

চঞ্চল চৌধুরীর প্রতি জনৈক ধর্ম-গাধার ঘৃণিত মন্তব্যে একজন মুসলমান ধর্মাবলম্বী হিসেবে আমি লজ্জ্বিত। অপমানিত। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্র আর অসভ্য সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।
—আসিফ আকবর, গায়ক

অনেকেই আমাকে বলে, এসব ইগনোর করে যাও। কথা বললে, ওরা মজা পেয়ে আরও করে। এটা আমি করেছিও। একসময় আমি মন্তব্য মুছে দিতাম। কিন্তু এটা তো সমাধান নয়।
আজ তাঁকে ব্লক করে দিলাম, কালকে সে সাফা কবিরের পেজে গিয়ে বাজে মন্তব্য করবে। সাফা ব্লক করে দিল তো মেহজাবীনের পেজে গিয়ে করবে।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন কী করছে?

অনলাইনের যত অপরাধ কার্যক্রম হয়, সেগুলো দেখভাল করে ঢাকা মেট্রো পুলিশের ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন’। হ্যাকিংসহ বড় ধরণের অপরাধ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁদের। তবে কটু মন্তব্যকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা খুব একটা শোনা যায় না। রাস্তার ইভটিজার আর অনলাইনে অশালীন কটু মন্তব্যকারী—দুজনের অপরাধ প্রায় একই।

যারা নিয়মিত কটূক্তি করে বেড়ায় তাঁদেরকে সাজা দিলে হয়ত অন্যরাও সতর্ক হবে।

পুলিশ দ্রুত এই বিষবাষ্পের মূলোৎপাটন করবে

এটা আসলেই আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি, পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও পরিমিত শালীনতা লক্ষণীয়; তা মুষ্টিমেয় কিছু বিচ্যুত মানুষ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।

আমাদের প্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও প্রিয় অভিনেত্রী ভাবনাকে নিয়ে যেসব অযাচিত, অনভিপ্রেত ও অশালীন কমেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা হয়েছে; তা সীমা অতিক্রান্ত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই বিষবাষ্পকে এখনই প্রতিকার করতে না পারলে সাইবার রিজিলিয়েন্ট বাংলাদেশ গঠনে আমাদের ধুঁকতে হবে এটা নিশ্চিত।

আশার কথা হচ্ছে, অসংখ্য নেটিজেন এসব বাজে কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা ইঙ্কলুসিভ সমাজের জয়গান গেয়েছেন। সম্মানিত নেটিজেনদের এই প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাই। দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ পুলিশ অবশ্যই এই বিষবাষ্পের মূলোৎপাটন করবে। আমরা খুব শিগগিরই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম

মা দিবস সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার প্রয়াণে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে দেশে। শোকাহত দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই করেছেন স্মৃতিচারণা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।

বিনোদন ডেস্ক
বেগম খালেদা জিয়া।	ছবি: সংগৃহীত
বেগম খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে

—হানিফ সংকেত, নির্মাতা ও উপস্থাপক

সর্বজন শ্রদ্ধেয় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে একজন অভিভাবক। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। তাঁর শোকাবহ পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি গভীর সমবেদনা।

আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে

—মনির খান, সংগীতশিল্পী

২০১১ সালে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। হাতে পুরস্কার ও গলায় মেডেল পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে।’ একপর্যায়ে তিনি আমাকে জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক কমিটির সহসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বানালেন। সেই সুবাদে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। উনি বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন, নির্দেশনা দিতেন কীভাবে কাজ করতে হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার, কোনোভাবেই মানতে পারছি না। কিছু চলে যাওয়া পাহাড় সমান বেদনার। অনেকবার তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। বারবার এসেছে তাঁর বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গ। উনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘এ দেশের মাটি ও মানুষ ছাড়া বিদেশের মাটিতে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশের মানুষের অন্তরেই আমার বসবাস। এখানেই আমার মৃত্যু হবে, এই মাটিতেই আমার কবর হবে।’ তাঁর কথাই সত্য হলো।

তিনি দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ

—কনকচাঁপা, সংগীতশিল্পী

চলে গেলেন স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আপসহীন অবিসংবাদিত নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বারবার তাঁর নামের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘আপসহীন’। তিনি অন্যায়, মিথ্যাচার, স্বৈরচারিতার কাছে মাথা নত করেননি। দেশের মানুষের মায়ায় তিনি সংসার, সন্তান, আরাম-আয়েশি বিলাসী জীবন—কিছুর তোয়াক্কা করেন নাই। আফসোস, একটা মিথ্যা মামলার কারণে তিনি সুন্দরভাবে জীবনের সমাপ্তি টানতে পারলেন না। জেলখানায় তাঁর জীবন কীভাবে কেটেছে তা ভেবে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। অথচ তিনি থাকতেন নির্ভার! এ জন্যই তিনি অকুতোভয় জীবনযোদ্ধা, মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানবী। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ ছিল, ‘জীবনে যা কিছু হয়ে যাক এই দেশ, এই দেশের মানুষ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।’ দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ তিনি, তিনিই প্রকৃত রাজনীতিবিদ এবং খাঁটি দেশনেতা। আমাদের দুঃখ রাখার জায়গা নেই যে আমরা তাঁকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারিনি।

বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন তিনি

—জয়া আহসান, অভিনেত্রী

বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য। রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চির প্রশান্তি লাভ করুক।

শত প্রতিকূলতায়ও মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি

—আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী

আমাদের জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্ব ও দীর্ঘদিনের জনসেবা বাংলাদেশের ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। তিনি অসাধারণ এক জীবন যাপন করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও যে মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতি তাঁকে সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

তাঁর প্রয়াণে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল

—বেবী নাজনীন, সংগীতশিল্পী

বেগম খালেদা জিয়া দেশ এবং মানুষের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাজনীতির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁকে হারানোর দুঃখ মানুষের মনে সব সময় বিরাজমান থাকবে।

খালেদা জিয়া হলো একটা ইনস্টিটিউশন। তাঁর সঙ্গে থেকে অনেকে অনেক কিছু শিখেছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অভিভাবক ছিলেন। দলের নেতা-কর্মীদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন কীভাবে রাজনীতি করতে হয়। আমারও হাতেখড়ি তিনিই দিয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। আমার মতো তাঁর কাছাকাছি আর কেউ হয়তো থাকেনি। উনি জেলে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। খুব আদর ও স্নেহ করে বলেছিলেন, ‘ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিও। তোমরা দেশ বাঁচাও এবং দেশের মানুষ বাঁচাও।’

এই অন্তিম যাত্রায় তিনি যেমন মানুষের দোয়া নিয়ে গেছেন, তেমনি দেশের মানুষের জন্য রেখে গেছেন আশীর্বাদ, যা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষের মাঝে গণতান্ত্রিক শক্তি হয়ে কাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /হিট সিনেমার সংখ্যা বেড়েছে

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২০
‘বরবাদ’ সিনেমার পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
‘বরবাদ’ সিনেমার পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

‘মধ্যবিত্ত’ দিয়ে বছর শুরু, ‘খিলাড়ি’ দিয়ে বছর শেষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি বাংলা সিনেমা। কিন্তু আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে কয়টি, সেটাই বড় প্রশ্ন। দুই ঈদ ছাড়া ইদানীং বাংলা সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে না। নির্মাতারাও চান যেকোনো উৎসবে সিনেমা আনতে। ফলে পুরো বছর সিনেমার খরায় ভুগতে থাকে প্রেক্ষাগৃহগুলো।

এই সংকট কিছুটা হলেও পূরণ করেছে সরকারি অনুদানের এবং স্বাধীন নির্মাতাদের কম বাজেটের সিনেমাগুলো। এ বছর যত সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, বেশির ভাগই এ ধরনের। অনেক বছর ধরে আটকে থাকা সিনেমা মুক্তির হিড়িক ছিল বছরজুড়ে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে। প্রচার ছাড়া অনেকটা দায়সারাভাবে মুক্তি দেওয়া এসব সিনেমা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তো ছিলই না, নির্মাতারাও তাঁদের কাজ পৌঁছে দিতে অত গরজ দেখাননি। যেন অনেক দিনের বোঝা কাঁধ থেকে নামাতে পেরে দায়মুক্ত হয়েছেন তাঁরা! ‘মেকাপ’, ‘রিকশা গার্ল’, ‘জলে জ্বলে তারা’, ‘ময়না’, ‘অন্তরাত্মা’, ‘অন্যদিন’, ‘জলরঙ’, ‘নন্দিনী’, ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’, ‘মন যে বোঝে না’সহ ১৯টি সিনেমা আছে এ তালিকায়।

২০২৪ সালের সঙ্গে তুলনা টানলে এ বছর ঢালিউডে হিট সিনেমার সংখ্যা বেড়েছে। শাকিবের ‘তুফান’ই ছিল গত বছরের একমাত্র ব্যবসাসফল সিনেমা। তবে ২০২৫ সালে পাঁচটির বেশি সিনেমা দর্শকদের হলমুখী করতে পেরেছে। যদিও বড় বাজেট, বড় তারকা আর বড় ক্যানভাসের সিনেমাগুলোই সব মনোযোগ কেড়ে নেয়। চলচ্চিত্রের মতো গ্ল্যামারাস ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয়তা আর টাকার উদ্‌যাপনই স্বাভাবিক। যে কারণে, এ বছরও শাকিব খানের ‘বরবাদ’, ‘তাণ্ডব’ এবং আফরান নিশোর ‘দাগি’কে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা ও প্রত্যাশা ছিল। বরবাদ হিট হলেও অন্য দুটি প্রত্যাশিত ব্যবসা করতে পারেনি।

তবে একটা অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এবার। বড় বাজেট আর বড় আলোচনাকে টেক্কা দিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে তুলনায় কম বাজেটের কিছু সিনেমা। প্রমাণ করেছে, তারকার চেয়ে গল্পের শক্তি বেশি। রোজার ঈদে যেমন বরবাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে মোশাররফ করিমের ‘চক্কর ৩০২’ ও সিয়ামের ‘জংলি’, তেমনি কোরবানির ঈদে তান্ডবকে পেছনে ফেলে দিয়েছে জাহিদ হাসানের ‘উৎসব’। নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া ‘দেলুপি’ হলে অতটা দর্শক টানতে না পারলেও ভালো প্রচেষ্টা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।

বিদেশের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসা পাওয়া ‘সাবা’, ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘ফেরেশতে’, ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমাগুলো দেশে মুক্তির পর সমালোচকদের মনোযোগ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় সাফল্য এনে দিয়েছে ‘আলী’। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে প্রথমবার স্পেশাল মেনশন পুরস্কার জিতে নেয় আদনান আল রাজীব পরিচালিত সিনেমাটি। কান উৎসবে এই জয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সিনেমার পরিচিতি আরও বেড়েছে। এই অর্জন উৎসাহিত করেছে দেশের তরুণ নির্মাতাদের।

তবে চলচ্চিত্র যাদের রুটি-রুজি, তাঁদের জন্য বছরটা খুব সুখকর ছিল না। শিল্পী থেকে কলাকুশলীরা বছরের একটা লম্বা সময় বেকার কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, নতুন সিনেমার ঘোষণা এসেছে কম, শুটিংয়ের রমরমা তেমন ছিল না। নতুন বছরে এই অবস্থা বদলে যাবে, চলচ্চিত্রপাড়া আবারও ব্যস্ত হবে—এটাই প্রত্যাশা।

নির্মাতা আদনান আল রাজীব
নির্মাতা আদনান আল রাজীব

আলোচিত ঘটনা

  • মে মাসে থাইল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে নুসরাত ফারিয়াকে আটক করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে জুলাই অভ্যুত্থানের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এক দিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান এই নায়িকা।
  • গত এপ্রিলে গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। তবে পরীমনি জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোটাই ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক।
  • অনেকেই শাকিব খানকে মেগাস্টার বলে সম্বোধন করেন। তবে শাকিব খানের নামের আগে এই শব্দচয়ন নিয়ে আপত্তিও রয়েছে অনেকের। গত জুনে এক সাক্ষাৎকারে শাকিবের নামের আগে ব্যবহার করা মেগাস্টার শব্দটি নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানান জাহিদ হাসান। এতে শাকিবভক্তদের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
  • মে মাসে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে স্পেশাল মেনশন পুরস্কার জিতে নেয় আদনান আল রাজীব পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আলী’। কান উৎসবে এটি বাংলাদেশের প্রথম পুরস্কার।
  • একাধিক সিনেমায় বাদ পড়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। বছরের শুরুতে ফেব্রুয়ারিতে জানা যায় ‘টগর’ সিনেমায় দীঘির জায়গায় নেওয়া হয়েছে পূজা চেরিকে। নির্মাতা আলোক হাসান জানান, পেশাদারি মনোভাবের অভাব থাকায় দীঘিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সরকারি অনুদানের ‘দেনা পাওনা’ সিনেমায় দীঘিকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয় সাদিয়া জাহান প্রভাকে।

বিয়ে ও বিচ্ছেদ

  • এ বছর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন শোবিজের অনেক তারকা। এই তালিকায় আছেন অভিনয়শিল্পী মেহজাবীন চৌধুরী, শবনম ফারিয়া, শামীম হাসান সরকার, জামিল হোসেন, মাইমুনা ফেরদৌস মম, সংগীতশিল্পী তাহসান খান, বাঁধন সরকার পূজা, নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মিজানুর রহমান আরিয়ান ও জাহিম প্রীতম।
  • এ বছর বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক তারকার। ১৪ ডিসেম্বর অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু জানান, মমরেনাজ মোমোর সঙ্গে ছয় বছর আগে বিচ্ছেদ হয়েছে তাঁর।

২০ ডিসেম্বর অভিনেত্রী আফসানা আরা বিন্দু জানান, ২০২২ সালে ভেঙে গেছে ব্যবসায়ী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিকের সঙ্গে তাঁর সংসার।

৩০ ডিসেম্বর সংগীতশিল্পী সালমার সঙ্গে বিচ্ছেদের খবর জানান তাঁর স্বামী সানাউল্লাহ নূরে সাগর।

হারিয়েছি যাঁদের

অঞ্জনা রহমান: ৪ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।

প্রবীর-মিত্র
প্রবীর-মিত্র

প্রবীর মিত্র: ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।

জাহিদুর রহিম অঞ্জন: ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন। কয়েক বছর ধরে লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন অঞ্জন।

সন্‌জিদা খাতুন
সন্‌জিদা খাতুন

সন্‌জীদা খাতুন: ২৫ মার্চ মারা যান বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন। তিনি ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, কিডনি রোগে ভুগছিলেন।

গুলশান আরা আহমেদ: ১৫ এপ্রিল মারা যান ছোট পর্দার অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ। হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী: ১০ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান সংগীতব্যক্তিত্ব মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

জীনাত রেহানা: ‘সাগরের তীর থেকে’ গানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা মারা যান ২ জুলাই। দীর্ঘদিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি।

এ কে রাতুল: জিম করতে গিয়ে ২৭ জুলাই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান মিউজিশিয়ান এ কে রাতুল। তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা জসীমের মেজ ছেলে।

অমরেশ রায় চৌধুরী: ১২ আগস্ট মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী অমরেশ রায় চৌধুরী।

ফরিদা পারভীন
ফরিদা পারভীন

ফরিদা পারভীন: ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

সেলিম হায়দার: ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গিটারিস্ট সেলিম হায়দার মারা যান ২৭ নভেম্বর। ক্যানসারসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সংগীত ক্যারিয়ারে ফিডব্যাকসহ বাজিয়েছেন বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের সঙ্গে। গত ৩০ বছর রুনা লায়লার সঙ্গেও নিয়মিত বাজিয়েছেন তিনি।

জেনস সুমন: গত ২৮ নভেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সংগীতশিল্পী জেনস সুমন। ১৬ বছরের বিরতি কাটিয়ে গত বছর আবার গানে ফিরেছিলেন ‘একটা চাদর হবে’খ্যাত এই গায়ক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৩
২০০৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হাত থেকে নতুন কুঁড়ি ২০০৩-এর দেশাত্মবোধক গানের প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করছেন পুতুল। ছবি: সংগৃহীত
২০০৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হাত থেকে নতুন কুঁড়ি ২০০৩-এর দেশাত্মবোধক গানের প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করছেন পুতুল। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। শোক জানিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি ভাগ করেছেন সংগীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল।

খালেদা জিয়াকে প্রথমবার দেখার স্মৃতি জানিয়ে ফেসবুকে পুতুল লেখেন, ‘জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছিলাম শৈশবে; ছুঁয়েছিলাম তাঁর তুলতুলে হাত। কী অভূতপূর্ব সেই অনুভূতি! বিজয়ী হয়ে যত না আনন্দ হয়েছিল, তার চাইতে কোনো অংশে কম ছিল না তাঁকে ছুঁতে পারার আনন্দ। পুরস্কার নিতে নিতে তাকিয়েছিলাম তাঁর চোখ দুটোর দিকে। মনে হয়েছিল এক মোম দিয়ে গড়া মানবী আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছেন। ধূসর চুল আর শুভ্র শাড়িতে মনে হয়েছিল রাষ্ট্রপ্রধান হতে হলে বোধ হয় এতটাই আভিজাত্য নিজের ভেতর ধারণ করতে হয়।’

বড় হওয়ার পার খালেদা জিয়ার সামনে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে পুতুলের। সেই স্মৃতির কথা জানিয়ে পুতুল লেখেন, ‘বড় হওয়ার পর আবার গান গেয়েছি তাঁর সামনে। তত দিনে সংগীতাঙ্গনে পেশাদার শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি। তিনি মঞ্চে বসে, তার ঠিক কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে একই মঞ্চে গাইছি। তিনি আদর করেছিলেন সেদিন আমার পরিবেশনা শেষে। বুঝেছিলাম তিনি একজন সংস্কৃতিপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী।’

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পুতুল লেখেন, ‘একটা অধ্যায়ের শেষ হলো। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ওপারে চলে গেছেন, যিনি এ দেশের লাখো তরুণীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সাধারণ একজন গৃহবধূ হয়েও আত্মবিশ্বাসের জোরে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায়। শুধু অসাধারণ নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। জন্ম থেকে রাজনীতির কেবল দীর্ঘ প্রেক্ষাপট থাকলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে নিজের প্রজ্ঞা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে তিনবার তিনি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভালো থাকবেন মাননীয়া। ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে...।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন: জয়া আহসান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৫
খালেদা জিয়া ও জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত
খালেদা জিয়া ও জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন।

ফেসবুকে জয়া আহসান লেখেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য।’

জয়া আরও লেখেন, ‘রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চিরপ্রশান্তি লাভ করুক।’

গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টার মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত