Ajker Patrika

একেনবাবুর গোয়েন্দাগিরি

রজত কান্তি রায়
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১১: ০৮
একেনবাবুর গোয়েন্দাগিরি

ড. সুজন দাশগুপ্ত, লেখক। এ পরিচয়ে বাংলাদেশে খুব বেশি মানুষ তাঁকে চিনবেন না। কিন্তু যদি বলা হয়, গোয়েন্দা `একেনবাবু'র স্রষ্টা; অর্থাৎ লেখক, তাহলে কিছু মানুষ তাঁকে চিনবেন। বিশেষ করে যাঁরা এখন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে ওয়েব সিরিজটি দেখছেন। 

এক-দুই-তিন করে `একেনবাবু' সিরিজের পঞ্চম সিজন ‘শান্তিনিকেতনে সংকেত মোচন’ মুক্তি পেয়েছে হইচইয়ে। অনির্বাণ চক্রবর্তী, সৌম ব্যানার্জি, আর শ্রেয়া সিনহাদের দুর্দান্ত অভিনয় ও ভালো মেকিংয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, বাংলাদেশেও ওয়েব সিরিজটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে। সেই সূত্র ধরে `একেনবাবু' সিরিজের গল্পকার সুজন দাশগুপ্তের একটি সাক্ষাৎকার নিলাম জুমে। ঠিক সাক্ষাৎকার নয়। বরং বলা চলে আড্ডা। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে আবদার করতেই তিনি সময় দিলেন। 

সুজন দাশগুপ্ত এখন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। বয়স প্রায় ৭৭। ১৯৬৭ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে পিএইচডি করতে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তারপর পিএইচডি শেষ করে বেল ল্যাবে কাজ শুরু করেন। টানা ৩০ বছর বেল ল্যাবে চাকরি করার পর স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে বছর দেড়েক সিলিকন ভ্যালিতে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এখন অবসরে। লেখালেখি করছেন। 

একেনবাবুর স্রষ্টা সুজন দাশগুপ্তসুজন দাশগুপ্তের পূর্বপুরুষের ভিটে বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ। আর শ্বশুরের আদি বাড়ি চট্টগ্রাম। 

জানতে চাই, তিনি কখনো বাংলাদেশে এসেছিলেন কি না। সুজন দাশগুপ্ত বলেন, ‘এটি বড় লজ্জার প্রশ্ন আমার কাছে। বাবার বাড়ি বিক্রমপুর। সেটা পদ্মার জলে চলে গেছে অনেক আগে। বহুবার ভেবেছি যাব, বাংলাদেশের বন্ধুরা বারবার বলেছেন, যান ঘুরে আসুন। কিন্তু যাওয়া হয়নি এখনো। এবার যদি বেঁচেবর্তে থাকি যাব। আসলে দেশ তো থাকে বুকের ভেতর। জন্ম, বেড়ে ওঠা কলকাতায়, চাকরি আমেরিকায় হলেও দেশ তো আসলে আমার ওটাই। দুঃখ একটাই, যাওয়া হয়নি এখনো।’ তিনি জানালেন, বাংলাদেশের নাটক তিনি দেখেন নিয়মিত। রক্তচাপ বেশি বলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে প্রতিদিন ট্রেডে মিলে হাঁটতে হয় এক ঘণ্টা করে। ট্রেড মিলের সামনে টেলিভিশন লাগানো আছে। সেখানে চলতে থাকে বাংলাদেশের রোমান্টিক নাটক। সেই নাটক দেখেতে দেখতে তিনি হাঁটেন ট্রেড মিলে। মজা করে বললেন, ‘বাংলাদেশে না গেলেও আমি কিন্তু তোমাদের টেলিভিশন নাটকের নায়িকাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সম্ভব হলে তাঁদের জানিও, তারা আমাকে সুস্থ রেখেছে।’ 

জানাই, তিনি না এলেও তাঁর একেনবাবু এখন বাংলাদেশে জনপ্রিয় চরিত্র ওয়েব সিরিজের কল্যাণে। তিনি বলেন, ''সেটা হলে আমার ভালো লাগবে। আমি চাই, 'একেনবাবু' মানুষ পড়ুক এবং দেখুক।’’ 

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, 'একেনবাবু' লেখা শুরু হয়েছিল মূলত কিশোরদের জন্য। এই সিরিজের দুটি বই ‘ম্যানহাটনের মুনস্টোন’ ও ‘ম্যানহাটনে ম্যানহান্ট’ প্রকাশিত হয়েছিল নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। কলকাতার আনন্দ মেলা বই দুটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিল। এর অনেক পরে ২০১৭ সালে 'একেনবাবু সমগ্র প্রথম খণ্ড' প্রকাশ করে কলকাতার প্রকাশনী দ্য কাফে টেবল। একই প্রকাশনী ২০১৮ সালে প্রকাশ করে এর দ্বিতীয় খণ্ড। এরপর তৃতীয় থেকে পঞ্চম খণ্ডও প্রকাশিত হয়েছে একই প্রকাশনী থেকে। 'একেনবাবু'র গল্পগুলো ওয়েব সিরিজ আকারে নির্মিত হতে শুরু করে ২০১৮ সাল থেকে। গত ৮ অক্টোবর ছয় পর্বে 'একেনবাবু' সিরিজের পঞ্চম সিজন মুক্তি দেওয়া হয় হইচই প্ল্যাটফর্মে। 

একেনবাবু চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী`একেনবাবু' প্রথম বা দ্বিতীয় খণ্ডে যা পড়েছি, ওয়েব সিরিজ তো সেরকম হলো না! কিছুটা অনুযোগের সুরে প্রশ্ন করলাম। সুজন দাশগুপ্ত বেশ খানিকটা ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, ‘পথে হলো দেরিতে’ও তো তাই হয়েছে। মূল গল্পের হালকা একটা ছোঁয়া আছে সেখানে। বই আর সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দুটো দুই জগৎ। বই থেকে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ করতে গেলে একটু এপাশ-ওপাশ হয়। পরিবর্তন হয়। ওয়েব সিরিজের `একেনবাবু' তো আমার নয়। আমি লিখেছিলাম ম্যানহাটনের গল্প। ওয়েব সিরিজ তো আর সেখানে করা যায় না। তাই কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মূল গল্পে কোনো মেয়ে চরিত্র নেই। পরিচালক আমাকে বললেন, কোনো মেয়ে চরিত্র নেই? তো… বললাম, এখন কোনো মেয়ে চরিত্র লিখতে পারব না। গল্প তো অনেক আগে প্রকাশিত হয়ে গেছে। সেই নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে। পরিচালক অনির্বাণ মল্লিক, তাদের তুমি করেই বলি। আমার অনেক জুনিয়র। সে বলল, ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের বদলে একজন নারী পুলিশ করে দিই। আমি আর কী বলব? ওরা করল। তখন এল রুপাল মেহেরার চরিত্র। সেটা করল শ্রেয়া সিনহা। ভালোই তো হলো। না হলে এতগুলো সিজন হতো না।’ 

তবে একেনবাবুকে একেবারে বাঙালি করার বিষয়টা বেশ ভালো হয়েছে। দর্শক মজা পাচ্ছে। খাদ্যরসিক হিসেবে একেনবাবুর চরিত্রটা বেশ মানিয়ে গেছে—জানালাম সুজন দাশগুপ্তকে। তিনিও মজা পেলেন। জানালেন, ‘মূল গল্পের একেনবাবু এ রকম নয়। সেখানে একেন মাঝে মাঝে “কী যে বলেন স্যার” ব্যবহার করে। এখানেও এরা রেখেছে সেটা একটু একটু। আর একেনবাবুকে বাঙালি বানিয়ে দিয়েছে। খারাপ হয়েছে কি?’ 

গত ৮ অক্টোবর শুরু হয়েছে একেনবাবু ওয়েব সিরিজের পঞ্চম সিজনখারাপ কি ভালো সে প্রসঙ্গে না গিয়ে একটা ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ঢুকে গেলাম আমরা। একেনবাবু ওয়েব সিরিজের প্রধান চরিত্র একেনবাবুর সঙ্গে জটায়ু চরিত্রটির মিল পাওয়া যায়। বিষয়টি কেন? সুজন দাশগুপ্ত জানালেন, বিষয়টিকে কাকতালীয় বলা ছাড়া উপায় নেই। তিনি যখন ভারত ছাড়েন, সেই ১৯৬৭ সালে জটায়ুর আবির্ভাব হয়নি বলে জানালেন সুজন দাশগুপ্ত। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত ‘সোনার কেল্লা’ উপন্যাসে প্রথম লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ুর আবির্ভাব। ‘তবে জটায়ু চরিত্রে সফল অভিনয় করেছিলেন সন্তোষ দত্ত। তাঁর সঙ্গে একেনবাবু যে করছে, অনির্বাণ, তার অভিনয়ের মিল আছে কিছু। তার পরও সে কোথাও একটা পার্থক্য তৈরির চেষ্টা করেছে।’ 

কথায় কথা গড়ায়। গল্প-উপন্যাস থেকে ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, রাজনীতি, দেশভাগ ইত্যাকার বিষয় নিয়ে ঘণ্টাখানেক আমাদের আড্ডা চলে। আর মাঝেমধ্যে চলে `একেনবাবু'র খোঁজখবর। জানতে চাই, `একেনবাবু সিক্সথ' আমরা পাচ্ছি তো? সুজন দাশগুপ্ত জানালেন, ‘সেটা তো হইচইয়ের ব্যাপার। তবে আশা নিশ্চয় করতে পারি। পরের বইয়ের জন্য কয়েকটি নতুন গল্পও লেখা হয়ে গেছে। দেখা যাক বাকিটা।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদা পারভীনের জন্মদিনে শিল্পকলায় বিশেষ আয়োজন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত
ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত

শিষ্যদের মাঝে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। তাই লালনের গান শেখাতে গড়ে তোলেন অচিন পাখি সংগীত একাডেমি। মনের বাসনা ব্যক্ত করে ফরিদা পারভীন বলেছিলেন, ‘সাঁইজি যেমন তাঁর শিষ্যদের মাঝে বেঁচে আছেন, আমার মাঝে আমার গুরু বেঁচে আছেন, তেমনি আমার অচিন পাখির ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আমি বেঁচে থাকতে চাই।’ আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর ফরিদা পারভীনের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তাঁর গড়া অচিন পাখি সংগীত একাডেমি।

আগামীকাল বুধবার বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে থাকবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। আমন্ত্রিত অতিথিরা কথায় কথায় তুলে ধরবেন শিল্পীর জীবনের নানা অধ্যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন। উদ্বোধন করবেন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সভাপতিত্ব করবেন ফরিদা পারভীনের জীবনসঙ্গী ও বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম।

ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর, নাটোরে। পাঁচ বছর বয়সে মাগুরায় কমল চক্রবর্তীর কাছে গানের হাতেখড়ি ফরিদা পারভীনের। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। ক্যারিয়ারে নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধকসহ নানা ধরনের গান করলেও তিনি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন লালনসংগীতে। সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফরিদা পারভীন পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩), জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কারসহ (২০০৮) অসংখ্য পুরস্কার।

এ বছর ১৩ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুভমিতা ও ঊষা উত্থুপের কণ্ঠে সাবরিনার গান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শুভমিতা, সাবরিনা রুবিন ও ঊষা উত্থুপ। ছবি: সংগৃহীত
শুভমিতা, সাবরিনা রুবিন ও ঊষা উত্থুপ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছেন লেখক ও গীতিকার ডা. সাবরিনা রুবিন। রাশিয়া, আমেরিকা, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গান। তাঁর লেখা নতুন দুই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের কণ্ঠশিল্পী শুভমিতা ও ঊষা উত্থুপ। শুভমিতা গেয়েছেন ‘এখানেই সব কিছু শেষ হোক’ শিরোনামের গান। সংগীত আয়োজন করেছেন কলকাতার দেব গৌতম। সম্প্রতি দেব গৌতমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে গানটি। এ ছাড়া নতুন বছরের শুরুতে প্রকাশ পাবে সাবরিনার লেখা ঊষা উত্থুপের গাওয়া নতুন একটি গান।

সাবরিনা বলেন, ‘শুভমিতার গাওয়া গানটি নিয়ে ইতিমধ্যেই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। নতুন বছরে আসছে আমার লেখা ও ঊষা উত্থুপের গাওয়া নতুন গান। আমার বিশ্বাস, এ গানটিও শ্রোতাদের মন জয় করবে।’

বাংলাদেশে সাবরিনার লেখা গান গেয়েছেন শুভ্র দেব, শান শায়খ, তাসনিম স্বর্ণাসহ অনেকে। ভারতের মালয়ালাম সিনেমায়ও কাজ করেছেন সাবরিনা। পাশাপাশি তামিল সিনেমায় বাংলা গীতিকথা লিখেছেন তিনি। তাঁর গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা, ঊষা উত্থুপ, দেব গৌতমসহ অনেকে।

সাহিত্য অঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাবরিনা রুবিন পেয়েছেন ইয়াসির আরাফাত ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড, চেকভ ব্রোঞ্জ অনার, গুজরাট সাহিত্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও মোটিভেশনাল স্ট্রিপস অনার, মুনির মেজিয়েদ অ্যাওয়ার্ড ইন লিটারেচার, তাজাকিস্তানের সিপে অ্যাওয়ার্ড, রবীন্দ্রনাথ সম্মাননাসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা। আমাজন প্রকাশ করেছে তাঁর লেখা গায়ক শুভ্র দেবের বায়োগ্রাফি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন প্রজন্মের গল্পে নতুন ধারাবাহিক ‘পরম্পরা’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সংবাদ সম্মেলনে ‘পরম্পরা’র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ সম্মেলনে ‘পরম্পরা’র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: সংগৃহীত

নতুন বছরের শুরুতে নতুন ধারাবাহিক নিয়ে আসছে দীপ্ত টিভি। তিন প্রজন্মের জীবনবোধ, মূল্যবোধ ও সম্পর্কের টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে নির্মিত ধারাবাহিকটির নাম ‘পরম্পরা’। পরিচালনা করেছেন আশিস রায়। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর, শতাব্দী ওয়াদুদ, সুষমা সরকার, শাফিউল রাজ, নূপুর আহসান, জান্নাতুল ফেরদৌস কাজল, কাজী রাজু, মিলি বাসার, সানজিদা মিলা, শানারেই দেবী শানু প্রমুখ। ৩ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহের শনি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন রাত ৯টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে ধারাবাহিকটি।

পরম্পরার চিত্রনাট্য লিখেছেন আফিফা মোহসিনা অরণি, সংলাপ রচনা করেছেন সরোয়ার সৈকত। গল্পে দেখা যাবে ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা নাহিয়ান দীর্ঘদিন পর ঢাকায় ফিরে এসে নিজেকে নতুন সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে মানিয়ে নিতে হিমশিম খায়। তার আধুনিক জীবনযাপন ও চিন্তাভাবনার সঙ্গে যৌথ পরিবারের সদস্যদের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একই ছাদের নিচে তিন প্রজন্মের ভালোবাসা, সংঘাত, মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং সম্পর্কের গভীরতা ধীরে ধীরে গল্পকে নিয়ে যায় নানা আবেগী মোড়ে।

নতুন এই ধারাবাহিক নিয়ে গতকাল দীপ্ত টিভির প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফারুক, পরিচালক আশিস রায়, দীপ্ত টিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ পরম্পরার শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সেখানে ধারাবাহিকটির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /কনসার্টে অস্থিরতার বছর

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ঢাকার কনসার্টে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার কনসার্টে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সংগীতাঙ্গনে ২০২৫ সাল বিশেষ কোনো সুখবর বয়ে আনতে পারেনি। নতুন গান প্রকাশ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। নতুন গান প্রকাশ না করলেও বছরজুড়ে শিল্পীরা দর্শকদের কাছাকাছি থাকেন লাইভ কনসার্ট দিয়ে। এ বছর কনসার্ট নিয়েও ছিল অস্থিরতা। নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় একের পর এক কনসার্ট বাতিল হয়েছে।

ভিনদেশি সংস্কৃতি রুখে দিতে গত ১১ এপ্রিল চার বিভাগীয় শহরে স্বাধীনতা কনসার্টের আয়োজন করা হয়। প্রথমে কনসার্টের তারিখ এক দিন পেছানো হলেও পরবর্তী সময়ে পুরো আয়োজনই বাতিল করা হয়। ১১ এপ্রিল পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জাহিদের কনসার্ট আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। মেলোডি আনলিশড নামের এ কনসার্টে দেশের বেশ কয়েকজন শিল্পী ও ব্যান্ডের গাওয়ার কথা ছিল। এতে অংশ নিতে শিল্পী ঢাকায়ও এসেছিলেন। তবে অনুষ্ঠানের ঘণ্টাখানেক আগে আয়োজনটি বাতিল করা হয়।

ঢাকায় এসেও দর্শকদের গান শোনাতে পারেননি পাকিস্তানের আরেক সংগীতশিল্পী আলী আজমত। ‘লিজেন্ডস লাইভ ইন ঢাকা’ শীর্ষক এ কনসার্টে জেমসেরও গাওয়ার কথা ছিল। তবে ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্থগিত ও পরে বাতিল করা হয় আয়োজনটি। পাকিস্তানের জনপ্রিয় ব্যান্ড জালের কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল ২৮ নভেম্বর। ‘সাউন্ড অব সোল’ শিরোনামের এ কনসার্টে আরও পারফর্ম করার কথা ছিল দেশের দুই ব্যান্ড ওয়ারফেজ ও লেভেল ফাইভের। সেটিও বাতিল হয়ে যায়। ভারতীয় সংগীতশিল্পী অনুভ জৈনের কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল ১২ ডিসেম্বর। আয়োজনের সপ্তাহ দুয়েক আগে এটিও বাতিল হয়ে যায়। এর আগে বাতিল হয়েছে পাকিস্তানি ব্যান্ড কাভিশের কনসার্ট।

এ ছাড়া, ১৩ ডিসেম্বর মেইন স্টেজ আয়োজিত এক কনসার্টে গান শোনানোর কথা ছিল আতিফ আসলামের। তিনি ঢাকায়ও এসেছিলেন। প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় কনসার্টটি হয়নি। তার বদলে কয়েকটি প্রাইভেট কনসার্টে গান শুনিয়ে ঢাকা ছাড়েন আতিফ। তবে যে কনসার্ট বাতিলের খবর দেশ-বিদেশে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি করেছে, সেটা জেমসের কনসার্ট। গত শুক্রবার ফরিদপুর জেলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে গাওয়ার কথা ছিল জেমসের। গান শোনাতে যথাসময়ে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তবে বহিরাগত ব্যক্তিদের হামলা ও ইটবৃষ্টির মুখে কনসার্টটি বাতিল হয়ে যায়, শেষ পর্যন্ত গান না গেয়েই ফরিদপুর ছাড়েন জেমস।

দেশের কনসার্টে যখন অনিশ্চয়তা চলছিল, তখন শিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বিদেশে। যুক্তরাষ্ট্রে সংগীতসফরে গিয়েছিলেন জেমস, আসিফ আকবর, বাপ্পা মজুমদার, প্রতীক হাসান, প্রীতম হাসান, ব্যান্ড অর্থহীন ও মাইলস। অস্ট্রেলিয়ায় গান শুনিয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ ও তানযীর তুহীন। সিঙ্গাপুরে গাইতে গিয়েছিলেন কনা। আর্ক, শিরোনামহীন, ওয়ারফেজ, অ্যাশেজ, মিলাসহ একাধিক ব্যান্ড ও শিল্পী কনসার্ট করেছেন কানাডায়।

বছরজুড়ে যেসব গান নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ঈশান মজুমদার ও শুভেন্দু দাস শুভর ‘গুলবাহার’, কোনাল-নিলয়ের ‘ময়না’, পান্থ কানাইয়ের ‘সেই এক সময় ছিল’, সাইফ জোহানের ‘কিছু মানুষ মরে যায় পঁচিশে’, শিরোনামহীন ব্যান্ডের ‘এই অবেলায় ২’, ইমরানের ‘পারব না তোমাকে ছাড়তে’ ইত্যাদি। কোক স্টুডিও বাংলায় রুনা লায়লার গাওয়া ‘মাস্ত কালান্দার’, তানযীর তুহীনের ‘ক্যাফে’, হাবিবের ‘মহা জাদু’ এবং অঙ্কনের গাওয়া ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ উপভোগ করেছেন শ্রোতারা।

সিনেমায় এ বছর হাতে গোনা কয়েকটি গান আলোচিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তাণ্ডব সিনেমায় প্রীতম ও জেফারের গাওয়া ‘লিচুর বাগানে’, বরবাদ সিনেমায় প্রীতম ও দোলার ‘চাঁদমামা’, জ্বীন থ্রি সিনেমায় ইমরান ও কনার ‘কন্যা’। জংলি সিনেমার ‘ও বন্ধু গো শোনো’, দাগির ‘একটুখানি মন’ গান দুটিও প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া, হৃদয়ের কথা নাটকে হাবিব-ন্যান্‌সির গাওয়া ‘আমার দিনগুলো সব যায় হারিয়ে আঁধারে’, আশিকি নাটকে কনা-সজীবের গাওয়া ‘যদি মনটা চুরি করি’ এবং ‘গুলমোহর’ ওয়েব সিরিজে তানযীর তুহীনের গাওয়া ‘সুরের হাহাকার’ গানগুলো শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত