নবিউল ইসলাম

বাবা ছিলেন ভিক্ষু সাধু ও সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গানবাজনা হতো। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাঁটার বেড়া ছিল না। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে গানের যে ব্যাপার, সাধুসঙ্গ—এ বিষয়গুলো টানত তাঁকে। এভাবে গানবাজনাকে ভালোবাসেন ওজকুরুনী ফকির সাহেব, যিনি ফকির সাহেব হিসেবেই বেশি পরিচিত।
বাড়ির পাশে মন্দিরে গান হতো। তখন গান শুনে ভালো লাগত তাঁর। টুকটাক গান শুনতেন, আসরে যেতেন। বড় বোন বুলবুলি গান করতেন। তিনি যেখানেই গান করতে যেতেন, সেখানে নিয়ে যেতেন ফকির সাহেবকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গানবাজনা শুনে হঠাৎ করে অনেক মানুষকে কাঁদতে দেখেন ফকির সাহেব। এটাকে দশা ধরা বলে। এই যে মানুষ কাঁদছে, কী বুঝে কাঁদছে? এই চিন্তা আসে তাঁর মনে। মানুষের কান্নার কারণ খুঁজতেন ফকির সাহেব। আর এই বিষয় খুঁজতে খুঁজতে পান গানের ভেতরে পাওয়া মানুষের জীবন।
২০০৫ সাল থেকে মানুষের সামনে গান গাওয়া শুরু করেন ফকির সাহেব। ফকির সাহেব বলেন, ‘গানের ভেতর সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া যায়। আর পৃথিবীতে খুব কমসংখ্যক মানুষই আছে, যারা গান পছন্দ করেন না। জনসম্মুখে না শুনলেও নিরালায় শুনছে। পদাবলি কীর্তন, চৈতন্য মহাপ্রভুর রাশ মেলায় যে কীর্তন হইতো, সেগুলা শুনতাম, গুনগুন করতাম। সাধুসঙ্গেরে ভেতর বৈঠকি গানের আসরে যে গানগুলো চলত, সে গানগুলো ভালো লাগত। এ ছাড়া আব্বাস উদ্দিন, আব্দুল আলীম, লালনের গান, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি গানগুলো শুনতাম।’
তবে বিভিন্ন আসরে লালনের গান বেশি হতো। লালন ফকিরের গান। লালন ফকিরের গান খুব টানে ফকির সাহেবকে। তখন থেকে ফোক গান, ভাটিয়ালি, লালন, মুর্শিদি, দেহতত্ত্ব ও মাটির গানগুলোর প্রতি একটা ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ফকির সাহেবের। ভালো লাগা আরও বেশি কাজ করে যখন তাঁর বোন বুলবুলি বেগম গান করতেন।
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে ফকির সাহেবের বড় উৎসাহের জায়গা বড় বোন। বড় বোন বলতেন, ‘গান কেমন শোনাচ্ছে—এইটা বড় বিষয় নয়, গলা ছেড়ে গাইত হবে। তুমি গান গাইতেছ—এইটা দরকার। আমি গলা ছেড়ে গান গাইতে পারতেছি এইটা বড় ব্যাপার।’
নিয়ম করে কখনো গান শেখা হয়নি ফকির সাহেবের। গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর। বাবা ভিক্ষু সাধুর গান গেয়ে ব্যাপক ভাইরাল হন তিনি। গানটি গেয়েছিলেন সোনাদিয়ায় সাগরের তীরে। হাতে একটি মোবাইল নিয়ে তাতে তাল দিয়ে গেয়েছিলেন গানটি। ‘ভাব আছ যার গায়, দেখলে তারে চেনা যায়।’
ফকির সাহেব বলেন, ‘আসলে কোনো জিনিসের তো পূর্ণতা বোঝা যায় না, বা জানারও তো শেষ নেই। এইখানে একটা অনুভূতির ব্যাপার আছে। যে জ্ঞান বই পড়লেই বোঝা যায়, কিন্তু অনুভূতি এমন একটা জিনিস যে, প্রত্যেকটি ব্যক্তির এইটা আলাদা আলাদাভাবে থাকে। অনুভূতি অনেক দামি জিনিস। জ্ঞানের চেয়ে অনুভূতি অনেক বড় জিনিস। এইটা আমি বুঝত পারলাম কখন? এই গানে আরেকটা লাইন আছে বলে সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘ওরে আমার আমার ছাড়ো
দমের জিকির করো
তাইলে পাইতে পারো খোদারে
গুরুরূপে নয়ন দিয়াছে যেই জন
তার মরণের ভয় কি আছে রে...’
‘গানে বলতেছে আমি যে ব্যক্তি ওয়াজকুরুনি ফকির সাহেব, এই যে আমি যে ব্যক্তি, এই ভাবনাটা ছেড়ে দেওয়া। কারণ, এগুলো তো আসলেই আমার না।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আনাচে-কানাচে যারা গান লিখছেন, তাদের গান করতে চান ফকির সাহেব। তিনি বলেন, ‘আল্লাহতালা আমাকে একটি সম্পদ দান করেছেন। তা হচ্ছে আমার কণ্ঠ। আর আমি এই কণ্ঠ দিয়ে সেই সকল মানুষের বার্তা বা বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘পরিচিত শিল্পীদের গান সবাই গায়, শোনে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে যে মানুষগুলো লেখার মাধ্যমে যে বাণী বা বার্তা তাঁরা দেন, তা অনেকেই শুনতে পারেন না। আমি চাই এই সকল বার্তা আমার কণ্ঠের মাধ্যমে মানুষকে শোনাতে।’
কোন ধরনের গান তিনি পছন্দ করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান তো গানই। লালন, ভাটিয়ালি, জারি, পল্লিগীতি, যাই হোক না কেন গানের ফর্মগুলা আমার কাছে ইমপর্টেন্ট না। আমার কাছে বড় বিষয় হচ্ছে কথাগুলা কী বলতেছে। আমাকে এই কথাগুলা বলতে হবে। আর এই কথাগুলা আমার হাজার মানুষকে বোঝানোর দরকার নাই, একজন মানুষও যদি বোঝে তাও হবে।’
গানের মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন বা কি বাণী দেন একজন শিল্পী? প্রেম তত্ত্বকে লালন করে গান করেন ফকির সাহেব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গেয়ে ওঠেন—‘যেই প্রেমেতে আল্লাহ রসুল সাক্ষাৎ মিলেছে...’
যে প্রেমে জীবাত্মা পরমাত্মাকে নেওয়ার পর আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুলক এক করে দিচ্ছে। এই এক প্রেম এবং এই প্রেমেই উজ্জীবিত হতে হবে। অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানবজনমের যে প্রেম, এই প্রেমকে লালন করেন ফকির সাহেব।
গানকে পেশা হিসেবে নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান আমার নেশা; কিন্তু পেশা না। আমার মা আমাকে বলেছেন, বাবা তুমি এইটা প্রচার করো; কিন্তু এইটার জন্য কারও কাছ থেকে এর বিনিময়ে কোনো অর্থ নিয়ো না। যেহেতু আমার সুইচ বাতি উনি, পৃথিবীতে আসার মাধ্যম উনি, সেহেতু আমাকে এইটা পালন করতে হবে এবং এইটা পালন করতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেহেরে ভেতরে এই নিশ্বাসটা আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর (মা) কথাটাই আমার কাছে মুখ্য।’ তিনি বলেন, ‘বিখ্যাত হতে চাই না, মানুষ হতে চাই।’
ক্যারিয়ারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবন সবকিছু ফুরিয়ে যায়। কিন্তু যে জিনিস ফুরাবে না—সেটি হলো কর্ম। আর এই কর্ম আর গান—এই দুটোর সমন্বয় করবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, এ ধরনের ভাবনা এখনো তৈরি করিনি। তৈরি করিনি একটা কারণে আমার মা বলেছেন যে বাবা পৃথিবীতে চলতে এত টাকা পয়সার এত কিছুর দরকার হয় না। তবে হ্যাঁ অনেক স্টেজ প্রোগ্রামে মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস কর আপনি গান গেয়ে টাকা নেন না, আপনি যদি অসুস্থ হয়ে যান? তখন কী হবে! আসলে কী বলব সুস্থতা, অসুস্থতা, রিজিক এগুলা তো সব আল্লাহর কাছে। উনি চাইলে আমাকে নিয়ে নিবেন। আমি তো প্রস্তুত মৃত্যুর জন্য। সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু আমি কর্ম থেকে একবিন্দু্ও ছাড় পেতে চাই না। আসবে আসবে।
ফকির সাহেব বলেন, ‘আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি কখনো দরিদ্র থাকতে পারে না। এইটা আমি খুব বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাসরে জোরেই এখনো পর্যন্ত চলতেছি। খুব কম সময়ই আমি অর্থ সংকটে থাকি। এবং থাকলেও সেটা আমার হাসিতেই চলে যায়। একটা তিল যদি সত্তর জন ভাগ করে থাকতে পারে, তাহলে আমার হাসিতে অনেক দুঃখ চলে যেতে পারে। সবাই আমার শুধু হাসিটাই দেখে, কেউ দুঃখটা দেখে না। কারণ, আমি জানি আমার দুঃখের সমাধান কেউ করতে পারবে না।’ এই কথা বলে তিনি গেয়ে ওঠেন—
‘সারা জীবন ভালোবাসলাম যারে
সে তো বুঝল না
বুঝল না আমারে
দুঃখ কইনা কইনা
রাইখাছি অন্তরে...’
মোশারফ করিমকে একজন সংগীতপ্রেমী মানুষ হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় তিনি প্রকৃত অর্থে মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘মানুষ কুলে জন্ম নিলে
মানুষ বলা যায় না
তারে চিনব কেমন করে
আমি জানব কেমন করে’
‘তিনি পপুলার তাঁর কর্ম দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ভালো লেগেছে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে। তিনি অনেক গানও লিখেছেন। যেমন—
‘যা দেখি তার সবই ভালো
ভালো ভালো লাগে না
ভালো কেন একা ভালো
কিছুই ভালো লাগে না’
‘এই মানুষটা যতটুকু লেখেন ততটুকু দিয়ে মানুষের ভেতরে ঢুকে যেতে পারেন। এই ভেতরে ঢুকে যাওয়ার ব্যাপারটা, প্রতিটা লাইনে লাইনে মানুষকে গানের ভেতর ঢোকানোর ব্যাপারটা গানের ক্ষেত্রে তার এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। এই জায়গাটার জন্য সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁকে আমার গুরুত্বপূর্ণ পারসন মনে হইছে।’
কাঠবিড়ালি সিনেমার গানের জন্য একবার ফকির সাহেবকে যেতে হয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান ইমন চৌধুরীর কাছে। জানান, তাঁর সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের কথা। ফকির সাহেব বলেন, ‘তাঁর কাছে গিয়ে আমার পা কাঁপছিল। কারণ, আমি স্টুডিওতে গান করি নাই। প্রথম হিসেবে আমার অনেক ভয় লাগছিল। কিন্তু তিনি এত আন্তরিক যে আমাকে ইজি করার জন্য অনেক আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। উনি সচরাচর একটা গানে এতবার টেক নেন না, যতবার আমার বেলায় নিয়েছিলেন। উনি এত আন্তরিক যে, আমাকে নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াইছেন। চা খাওয়ার পর আমি আবারও কয়েকবার টেক দিলাম গানের জন্য।’
ভক্তদের অনুরোধে তিনি ‘ফকির সাহেব’ নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি গান গেয়ে টাকা নেই না, সেহেতু গান গেয়ে মাঝেমধ্যে অর্থ পেলে, তা মানবিক কাজে ব্যয় করা হয়।’
ফকির সাহেবের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায় হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারি ইউনিয়ন গাওচুলকা গ্রামে। দুই বোন আছে তাঁর। এখন বাড়িতে বড় বোন বুলবুলি, ভাগনে-ভাগনি আর মা থাকেন। অনেক কষ্টে তাঁর মা তাঁকে বড় করেছেন। মা তাঁকে ফকির বলে ডাকতেন। তাঁর মুখের হাসি ও কর্মকাণ্ড যখন সাহেবেদের মতো দেখলেন, তখন মা তাঁর নামের সঙ্গে সাহেব যোগ করেন। এলাকার মানুষ তাঁকে অনেক সম্মান করেন। এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন ফকির সাহেব।
স্কুল ছিল নিজের গ্রামে পুরোনো কাচারি গাওচুলকা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাইস্কুল ছিল হাতীবান্ধা উপজেলা শহরে। হাতীবান্ধা এস এস হাইস্কুল এণ্ড টেকনিক্যাল কলেজ (বর্তমানে মডেল কলেজ)। কলেজ ছিল হাতীবান্ধার আলীমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজ। স্কুল ও কলেজজীবনে মানুষের বাসায় থেকেছেন তিনি। হাতীবান্ধায় এসএসসিতে পড়ার সময় কারিমুর নামে একজনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন তিনি। আর কলেজ থাকাকালে আশরাফ ভান্ডারি নামের একজন ওস্তাদের কাছ থেকেছেন। অন্ধ্র প্রদেশের একজন ওস্তাদের কাছ থেকে তিনি দীক্ষা নিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে মূলত দেহতত্ত্বের ব্যাপারে দীক্ষা নিয়েছেন তিনি, যেটাকে ব্রাক্ষ্মচর্য বলে।
এর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য উৎসাহ, নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন আশরাফুজ্জামান দীদার নামে তাঁর এক বন্ধু। গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কর্ম করবেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘কর্ম তোমার আর কি কিছু নয়
আঁকা আঁকি মোছামুছি বেখেয়ালী
তাজ্জব হয়েছি,’
এখন আমার কর্ম ভালো থাকলে মানুষ তাজ্জব হবে।’

বাবা ছিলেন ভিক্ষু সাধু ও সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গানবাজনা হতো। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাঁটার বেড়া ছিল না। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে গানের যে ব্যাপার, সাধুসঙ্গ—এ বিষয়গুলো টানত তাঁকে। এভাবে গানবাজনাকে ভালোবাসেন ওজকুরুনী ফকির সাহেব, যিনি ফকির সাহেব হিসেবেই বেশি পরিচিত।
বাড়ির পাশে মন্দিরে গান হতো। তখন গান শুনে ভালো লাগত তাঁর। টুকটাক গান শুনতেন, আসরে যেতেন। বড় বোন বুলবুলি গান করতেন। তিনি যেখানেই গান করতে যেতেন, সেখানে নিয়ে যেতেন ফকির সাহেবকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গানবাজনা শুনে হঠাৎ করে অনেক মানুষকে কাঁদতে দেখেন ফকির সাহেব। এটাকে দশা ধরা বলে। এই যে মানুষ কাঁদছে, কী বুঝে কাঁদছে? এই চিন্তা আসে তাঁর মনে। মানুষের কান্নার কারণ খুঁজতেন ফকির সাহেব। আর এই বিষয় খুঁজতে খুঁজতে পান গানের ভেতরে পাওয়া মানুষের জীবন।
২০০৫ সাল থেকে মানুষের সামনে গান গাওয়া শুরু করেন ফকির সাহেব। ফকির সাহেব বলেন, ‘গানের ভেতর সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া যায়। আর পৃথিবীতে খুব কমসংখ্যক মানুষই আছে, যারা গান পছন্দ করেন না। জনসম্মুখে না শুনলেও নিরালায় শুনছে। পদাবলি কীর্তন, চৈতন্য মহাপ্রভুর রাশ মেলায় যে কীর্তন হইতো, সেগুলা শুনতাম, গুনগুন করতাম। সাধুসঙ্গেরে ভেতর বৈঠকি গানের আসরে যে গানগুলো চলত, সে গানগুলো ভালো লাগত। এ ছাড়া আব্বাস উদ্দিন, আব্দুল আলীম, লালনের গান, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি গানগুলো শুনতাম।’
তবে বিভিন্ন আসরে লালনের গান বেশি হতো। লালন ফকিরের গান। লালন ফকিরের গান খুব টানে ফকির সাহেবকে। তখন থেকে ফোক গান, ভাটিয়ালি, লালন, মুর্শিদি, দেহতত্ত্ব ও মাটির গানগুলোর প্রতি একটা ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ফকির সাহেবের। ভালো লাগা আরও বেশি কাজ করে যখন তাঁর বোন বুলবুলি বেগম গান করতেন।
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে ফকির সাহেবের বড় উৎসাহের জায়গা বড় বোন। বড় বোন বলতেন, ‘গান কেমন শোনাচ্ছে—এইটা বড় বিষয় নয়, গলা ছেড়ে গাইত হবে। তুমি গান গাইতেছ—এইটা দরকার। আমি গলা ছেড়ে গান গাইতে পারতেছি এইটা বড় ব্যাপার।’
নিয়ম করে কখনো গান শেখা হয়নি ফকির সাহেবের। গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর। বাবা ভিক্ষু সাধুর গান গেয়ে ব্যাপক ভাইরাল হন তিনি। গানটি গেয়েছিলেন সোনাদিয়ায় সাগরের তীরে। হাতে একটি মোবাইল নিয়ে তাতে তাল দিয়ে গেয়েছিলেন গানটি। ‘ভাব আছ যার গায়, দেখলে তারে চেনা যায়।’
ফকির সাহেব বলেন, ‘আসলে কোনো জিনিসের তো পূর্ণতা বোঝা যায় না, বা জানারও তো শেষ নেই। এইখানে একটা অনুভূতির ব্যাপার আছে। যে জ্ঞান বই পড়লেই বোঝা যায়, কিন্তু অনুভূতি এমন একটা জিনিস যে, প্রত্যেকটি ব্যক্তির এইটা আলাদা আলাদাভাবে থাকে। অনুভূতি অনেক দামি জিনিস। জ্ঞানের চেয়ে অনুভূতি অনেক বড় জিনিস। এইটা আমি বুঝত পারলাম কখন? এই গানে আরেকটা লাইন আছে বলে সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘ওরে আমার আমার ছাড়ো
দমের জিকির করো
তাইলে পাইতে পারো খোদারে
গুরুরূপে নয়ন দিয়াছে যেই জন
তার মরণের ভয় কি আছে রে...’
‘গানে বলতেছে আমি যে ব্যক্তি ওয়াজকুরুনি ফকির সাহেব, এই যে আমি যে ব্যক্তি, এই ভাবনাটা ছেড়ে দেওয়া। কারণ, এগুলো তো আসলেই আমার না।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আনাচে-কানাচে যারা গান লিখছেন, তাদের গান করতে চান ফকির সাহেব। তিনি বলেন, ‘আল্লাহতালা আমাকে একটি সম্পদ দান করেছেন। তা হচ্ছে আমার কণ্ঠ। আর আমি এই কণ্ঠ দিয়ে সেই সকল মানুষের বার্তা বা বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘পরিচিত শিল্পীদের গান সবাই গায়, শোনে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে যে মানুষগুলো লেখার মাধ্যমে যে বাণী বা বার্তা তাঁরা দেন, তা অনেকেই শুনতে পারেন না। আমি চাই এই সকল বার্তা আমার কণ্ঠের মাধ্যমে মানুষকে শোনাতে।’
কোন ধরনের গান তিনি পছন্দ করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান তো গানই। লালন, ভাটিয়ালি, জারি, পল্লিগীতি, যাই হোক না কেন গানের ফর্মগুলা আমার কাছে ইমপর্টেন্ট না। আমার কাছে বড় বিষয় হচ্ছে কথাগুলা কী বলতেছে। আমাকে এই কথাগুলা বলতে হবে। আর এই কথাগুলা আমার হাজার মানুষকে বোঝানোর দরকার নাই, একজন মানুষও যদি বোঝে তাও হবে।’
গানের মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন বা কি বাণী দেন একজন শিল্পী? প্রেম তত্ত্বকে লালন করে গান করেন ফকির সাহেব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গেয়ে ওঠেন—‘যেই প্রেমেতে আল্লাহ রসুল সাক্ষাৎ মিলেছে...’
যে প্রেমে জীবাত্মা পরমাত্মাকে নেওয়ার পর আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুলক এক করে দিচ্ছে। এই এক প্রেম এবং এই প্রেমেই উজ্জীবিত হতে হবে। অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানবজনমের যে প্রেম, এই প্রেমকে লালন করেন ফকির সাহেব।
গানকে পেশা হিসেবে নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান আমার নেশা; কিন্তু পেশা না। আমার মা আমাকে বলেছেন, বাবা তুমি এইটা প্রচার করো; কিন্তু এইটার জন্য কারও কাছ থেকে এর বিনিময়ে কোনো অর্থ নিয়ো না। যেহেতু আমার সুইচ বাতি উনি, পৃথিবীতে আসার মাধ্যম উনি, সেহেতু আমাকে এইটা পালন করতে হবে এবং এইটা পালন করতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেহেরে ভেতরে এই নিশ্বাসটা আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর (মা) কথাটাই আমার কাছে মুখ্য।’ তিনি বলেন, ‘বিখ্যাত হতে চাই না, মানুষ হতে চাই।’
ক্যারিয়ারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবন সবকিছু ফুরিয়ে যায়। কিন্তু যে জিনিস ফুরাবে না—সেটি হলো কর্ম। আর এই কর্ম আর গান—এই দুটোর সমন্বয় করবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, এ ধরনের ভাবনা এখনো তৈরি করিনি। তৈরি করিনি একটা কারণে আমার মা বলেছেন যে বাবা পৃথিবীতে চলতে এত টাকা পয়সার এত কিছুর দরকার হয় না। তবে হ্যাঁ অনেক স্টেজ প্রোগ্রামে মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস কর আপনি গান গেয়ে টাকা নেন না, আপনি যদি অসুস্থ হয়ে যান? তখন কী হবে! আসলে কী বলব সুস্থতা, অসুস্থতা, রিজিক এগুলা তো সব আল্লাহর কাছে। উনি চাইলে আমাকে নিয়ে নিবেন। আমি তো প্রস্তুত মৃত্যুর জন্য। সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু আমি কর্ম থেকে একবিন্দু্ও ছাড় পেতে চাই না। আসবে আসবে।
ফকির সাহেব বলেন, ‘আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি কখনো দরিদ্র থাকতে পারে না। এইটা আমি খুব বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাসরে জোরেই এখনো পর্যন্ত চলতেছি। খুব কম সময়ই আমি অর্থ সংকটে থাকি। এবং থাকলেও সেটা আমার হাসিতেই চলে যায়। একটা তিল যদি সত্তর জন ভাগ করে থাকতে পারে, তাহলে আমার হাসিতে অনেক দুঃখ চলে যেতে পারে। সবাই আমার শুধু হাসিটাই দেখে, কেউ দুঃখটা দেখে না। কারণ, আমি জানি আমার দুঃখের সমাধান কেউ করতে পারবে না।’ এই কথা বলে তিনি গেয়ে ওঠেন—
‘সারা জীবন ভালোবাসলাম যারে
সে তো বুঝল না
বুঝল না আমারে
দুঃখ কইনা কইনা
রাইখাছি অন্তরে...’
মোশারফ করিমকে একজন সংগীতপ্রেমী মানুষ হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় তিনি প্রকৃত অর্থে মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘মানুষ কুলে জন্ম নিলে
মানুষ বলা যায় না
তারে চিনব কেমন করে
আমি জানব কেমন করে’
‘তিনি পপুলার তাঁর কর্ম দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ভালো লেগেছে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে। তিনি অনেক গানও লিখেছেন। যেমন—
‘যা দেখি তার সবই ভালো
ভালো ভালো লাগে না
ভালো কেন একা ভালো
কিছুই ভালো লাগে না’
‘এই মানুষটা যতটুকু লেখেন ততটুকু দিয়ে মানুষের ভেতরে ঢুকে যেতে পারেন। এই ভেতরে ঢুকে যাওয়ার ব্যাপারটা, প্রতিটা লাইনে লাইনে মানুষকে গানের ভেতর ঢোকানোর ব্যাপারটা গানের ক্ষেত্রে তার এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। এই জায়গাটার জন্য সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁকে আমার গুরুত্বপূর্ণ পারসন মনে হইছে।’
কাঠবিড়ালি সিনেমার গানের জন্য একবার ফকির সাহেবকে যেতে হয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান ইমন চৌধুরীর কাছে। জানান, তাঁর সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের কথা। ফকির সাহেব বলেন, ‘তাঁর কাছে গিয়ে আমার পা কাঁপছিল। কারণ, আমি স্টুডিওতে গান করি নাই। প্রথম হিসেবে আমার অনেক ভয় লাগছিল। কিন্তু তিনি এত আন্তরিক যে আমাকে ইজি করার জন্য অনেক আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। উনি সচরাচর একটা গানে এতবার টেক নেন না, যতবার আমার বেলায় নিয়েছিলেন। উনি এত আন্তরিক যে, আমাকে নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াইছেন। চা খাওয়ার পর আমি আবারও কয়েকবার টেক দিলাম গানের জন্য।’
ভক্তদের অনুরোধে তিনি ‘ফকির সাহেব’ নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি গান গেয়ে টাকা নেই না, সেহেতু গান গেয়ে মাঝেমধ্যে অর্থ পেলে, তা মানবিক কাজে ব্যয় করা হয়।’
ফকির সাহেবের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায় হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারি ইউনিয়ন গাওচুলকা গ্রামে। দুই বোন আছে তাঁর। এখন বাড়িতে বড় বোন বুলবুলি, ভাগনে-ভাগনি আর মা থাকেন। অনেক কষ্টে তাঁর মা তাঁকে বড় করেছেন। মা তাঁকে ফকির বলে ডাকতেন। তাঁর মুখের হাসি ও কর্মকাণ্ড যখন সাহেবেদের মতো দেখলেন, তখন মা তাঁর নামের সঙ্গে সাহেব যোগ করেন। এলাকার মানুষ তাঁকে অনেক সম্মান করেন। এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন ফকির সাহেব।
স্কুল ছিল নিজের গ্রামে পুরোনো কাচারি গাওচুলকা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাইস্কুল ছিল হাতীবান্ধা উপজেলা শহরে। হাতীবান্ধা এস এস হাইস্কুল এণ্ড টেকনিক্যাল কলেজ (বর্তমানে মডেল কলেজ)। কলেজ ছিল হাতীবান্ধার আলীমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজ। স্কুল ও কলেজজীবনে মানুষের বাসায় থেকেছেন তিনি। হাতীবান্ধায় এসএসসিতে পড়ার সময় কারিমুর নামে একজনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন তিনি। আর কলেজ থাকাকালে আশরাফ ভান্ডারি নামের একজন ওস্তাদের কাছ থেকেছেন। অন্ধ্র প্রদেশের একজন ওস্তাদের কাছ থেকে তিনি দীক্ষা নিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে মূলত দেহতত্ত্বের ব্যাপারে দীক্ষা নিয়েছেন তিনি, যেটাকে ব্রাক্ষ্মচর্য বলে।
এর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য উৎসাহ, নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন আশরাফুজ্জামান দীদার নামে তাঁর এক বন্ধু। গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কর্ম করবেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘কর্ম তোমার আর কি কিছু নয়
আঁকা আঁকি মোছামুছি বেখেয়ালী
তাজ্জব হয়েছি,’
এখন আমার কর্ম ভালো থাকলে মানুষ তাজ্জব হবে।’
নবিউল ইসলাম

বাবা ছিলেন ভিক্ষু সাধু ও সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গানবাজনা হতো। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাঁটার বেড়া ছিল না। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে গানের যে ব্যাপার, সাধুসঙ্গ—এ বিষয়গুলো টানত তাঁকে। এভাবে গানবাজনাকে ভালোবাসেন ওজকুরুনী ফকির সাহেব, যিনি ফকির সাহেব হিসেবেই বেশি পরিচিত।
বাড়ির পাশে মন্দিরে গান হতো। তখন গান শুনে ভালো লাগত তাঁর। টুকটাক গান শুনতেন, আসরে যেতেন। বড় বোন বুলবুলি গান করতেন। তিনি যেখানেই গান করতে যেতেন, সেখানে নিয়ে যেতেন ফকির সাহেবকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গানবাজনা শুনে হঠাৎ করে অনেক মানুষকে কাঁদতে দেখেন ফকির সাহেব। এটাকে দশা ধরা বলে। এই যে মানুষ কাঁদছে, কী বুঝে কাঁদছে? এই চিন্তা আসে তাঁর মনে। মানুষের কান্নার কারণ খুঁজতেন ফকির সাহেব। আর এই বিষয় খুঁজতে খুঁজতে পান গানের ভেতরে পাওয়া মানুষের জীবন।
২০০৫ সাল থেকে মানুষের সামনে গান গাওয়া শুরু করেন ফকির সাহেব। ফকির সাহেব বলেন, ‘গানের ভেতর সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া যায়। আর পৃথিবীতে খুব কমসংখ্যক মানুষই আছে, যারা গান পছন্দ করেন না। জনসম্মুখে না শুনলেও নিরালায় শুনছে। পদাবলি কীর্তন, চৈতন্য মহাপ্রভুর রাশ মেলায় যে কীর্তন হইতো, সেগুলা শুনতাম, গুনগুন করতাম। সাধুসঙ্গেরে ভেতর বৈঠকি গানের আসরে যে গানগুলো চলত, সে গানগুলো ভালো লাগত। এ ছাড়া আব্বাস উদ্দিন, আব্দুল আলীম, লালনের গান, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি গানগুলো শুনতাম।’
তবে বিভিন্ন আসরে লালনের গান বেশি হতো। লালন ফকিরের গান। লালন ফকিরের গান খুব টানে ফকির সাহেবকে। তখন থেকে ফোক গান, ভাটিয়ালি, লালন, মুর্শিদি, দেহতত্ত্ব ও মাটির গানগুলোর প্রতি একটা ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ফকির সাহেবের। ভালো লাগা আরও বেশি কাজ করে যখন তাঁর বোন বুলবুলি বেগম গান করতেন।
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে ফকির সাহেবের বড় উৎসাহের জায়গা বড় বোন। বড় বোন বলতেন, ‘গান কেমন শোনাচ্ছে—এইটা বড় বিষয় নয়, গলা ছেড়ে গাইত হবে। তুমি গান গাইতেছ—এইটা দরকার। আমি গলা ছেড়ে গান গাইতে পারতেছি এইটা বড় ব্যাপার।’
নিয়ম করে কখনো গান শেখা হয়নি ফকির সাহেবের। গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর। বাবা ভিক্ষু সাধুর গান গেয়ে ব্যাপক ভাইরাল হন তিনি। গানটি গেয়েছিলেন সোনাদিয়ায় সাগরের তীরে। হাতে একটি মোবাইল নিয়ে তাতে তাল দিয়ে গেয়েছিলেন গানটি। ‘ভাব আছ যার গায়, দেখলে তারে চেনা যায়।’
ফকির সাহেব বলেন, ‘আসলে কোনো জিনিসের তো পূর্ণতা বোঝা যায় না, বা জানারও তো শেষ নেই। এইখানে একটা অনুভূতির ব্যাপার আছে। যে জ্ঞান বই পড়লেই বোঝা যায়, কিন্তু অনুভূতি এমন একটা জিনিস যে, প্রত্যেকটি ব্যক্তির এইটা আলাদা আলাদাভাবে থাকে। অনুভূতি অনেক দামি জিনিস। জ্ঞানের চেয়ে অনুভূতি অনেক বড় জিনিস। এইটা আমি বুঝত পারলাম কখন? এই গানে আরেকটা লাইন আছে বলে সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘ওরে আমার আমার ছাড়ো
দমের জিকির করো
তাইলে পাইতে পারো খোদারে
গুরুরূপে নয়ন দিয়াছে যেই জন
তার মরণের ভয় কি আছে রে...’
‘গানে বলতেছে আমি যে ব্যক্তি ওয়াজকুরুনি ফকির সাহেব, এই যে আমি যে ব্যক্তি, এই ভাবনাটা ছেড়ে দেওয়া। কারণ, এগুলো তো আসলেই আমার না।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আনাচে-কানাচে যারা গান লিখছেন, তাদের গান করতে চান ফকির সাহেব। তিনি বলেন, ‘আল্লাহতালা আমাকে একটি সম্পদ দান করেছেন। তা হচ্ছে আমার কণ্ঠ। আর আমি এই কণ্ঠ দিয়ে সেই সকল মানুষের বার্তা বা বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘পরিচিত শিল্পীদের গান সবাই গায়, শোনে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে যে মানুষগুলো লেখার মাধ্যমে যে বাণী বা বার্তা তাঁরা দেন, তা অনেকেই শুনতে পারেন না। আমি চাই এই সকল বার্তা আমার কণ্ঠের মাধ্যমে মানুষকে শোনাতে।’
কোন ধরনের গান তিনি পছন্দ করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান তো গানই। লালন, ভাটিয়ালি, জারি, পল্লিগীতি, যাই হোক না কেন গানের ফর্মগুলা আমার কাছে ইমপর্টেন্ট না। আমার কাছে বড় বিষয় হচ্ছে কথাগুলা কী বলতেছে। আমাকে এই কথাগুলা বলতে হবে। আর এই কথাগুলা আমার হাজার মানুষকে বোঝানোর দরকার নাই, একজন মানুষও যদি বোঝে তাও হবে।’
গানের মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন বা কি বাণী দেন একজন শিল্পী? প্রেম তত্ত্বকে লালন করে গান করেন ফকির সাহেব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গেয়ে ওঠেন—‘যেই প্রেমেতে আল্লাহ রসুল সাক্ষাৎ মিলেছে...’
যে প্রেমে জীবাত্মা পরমাত্মাকে নেওয়ার পর আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুলক এক করে দিচ্ছে। এই এক প্রেম এবং এই প্রেমেই উজ্জীবিত হতে হবে। অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানবজনমের যে প্রেম, এই প্রেমকে লালন করেন ফকির সাহেব।
গানকে পেশা হিসেবে নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান আমার নেশা; কিন্তু পেশা না। আমার মা আমাকে বলেছেন, বাবা তুমি এইটা প্রচার করো; কিন্তু এইটার জন্য কারও কাছ থেকে এর বিনিময়ে কোনো অর্থ নিয়ো না। যেহেতু আমার সুইচ বাতি উনি, পৃথিবীতে আসার মাধ্যম উনি, সেহেতু আমাকে এইটা পালন করতে হবে এবং এইটা পালন করতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেহেরে ভেতরে এই নিশ্বাসটা আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর (মা) কথাটাই আমার কাছে মুখ্য।’ তিনি বলেন, ‘বিখ্যাত হতে চাই না, মানুষ হতে চাই।’
ক্যারিয়ারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবন সবকিছু ফুরিয়ে যায়। কিন্তু যে জিনিস ফুরাবে না—সেটি হলো কর্ম। আর এই কর্ম আর গান—এই দুটোর সমন্বয় করবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, এ ধরনের ভাবনা এখনো তৈরি করিনি। তৈরি করিনি একটা কারণে আমার মা বলেছেন যে বাবা পৃথিবীতে চলতে এত টাকা পয়সার এত কিছুর দরকার হয় না। তবে হ্যাঁ অনেক স্টেজ প্রোগ্রামে মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস কর আপনি গান গেয়ে টাকা নেন না, আপনি যদি অসুস্থ হয়ে যান? তখন কী হবে! আসলে কী বলব সুস্থতা, অসুস্থতা, রিজিক এগুলা তো সব আল্লাহর কাছে। উনি চাইলে আমাকে নিয়ে নিবেন। আমি তো প্রস্তুত মৃত্যুর জন্য। সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু আমি কর্ম থেকে একবিন্দু্ও ছাড় পেতে চাই না। আসবে আসবে।
ফকির সাহেব বলেন, ‘আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি কখনো দরিদ্র থাকতে পারে না। এইটা আমি খুব বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাসরে জোরেই এখনো পর্যন্ত চলতেছি। খুব কম সময়ই আমি অর্থ সংকটে থাকি। এবং থাকলেও সেটা আমার হাসিতেই চলে যায়। একটা তিল যদি সত্তর জন ভাগ করে থাকতে পারে, তাহলে আমার হাসিতে অনেক দুঃখ চলে যেতে পারে। সবাই আমার শুধু হাসিটাই দেখে, কেউ দুঃখটা দেখে না। কারণ, আমি জানি আমার দুঃখের সমাধান কেউ করতে পারবে না।’ এই কথা বলে তিনি গেয়ে ওঠেন—
‘সারা জীবন ভালোবাসলাম যারে
সে তো বুঝল না
বুঝল না আমারে
দুঃখ কইনা কইনা
রাইখাছি অন্তরে...’
মোশারফ করিমকে একজন সংগীতপ্রেমী মানুষ হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় তিনি প্রকৃত অর্থে মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘মানুষ কুলে জন্ম নিলে
মানুষ বলা যায় না
তারে চিনব কেমন করে
আমি জানব কেমন করে’
‘তিনি পপুলার তাঁর কর্ম দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ভালো লেগেছে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে। তিনি অনেক গানও লিখেছেন। যেমন—
‘যা দেখি তার সবই ভালো
ভালো ভালো লাগে না
ভালো কেন একা ভালো
কিছুই ভালো লাগে না’
‘এই মানুষটা যতটুকু লেখেন ততটুকু দিয়ে মানুষের ভেতরে ঢুকে যেতে পারেন। এই ভেতরে ঢুকে যাওয়ার ব্যাপারটা, প্রতিটা লাইনে লাইনে মানুষকে গানের ভেতর ঢোকানোর ব্যাপারটা গানের ক্ষেত্রে তার এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। এই জায়গাটার জন্য সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁকে আমার গুরুত্বপূর্ণ পারসন মনে হইছে।’
কাঠবিড়ালি সিনেমার গানের জন্য একবার ফকির সাহেবকে যেতে হয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান ইমন চৌধুরীর কাছে। জানান, তাঁর সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের কথা। ফকির সাহেব বলেন, ‘তাঁর কাছে গিয়ে আমার পা কাঁপছিল। কারণ, আমি স্টুডিওতে গান করি নাই। প্রথম হিসেবে আমার অনেক ভয় লাগছিল। কিন্তু তিনি এত আন্তরিক যে আমাকে ইজি করার জন্য অনেক আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। উনি সচরাচর একটা গানে এতবার টেক নেন না, যতবার আমার বেলায় নিয়েছিলেন। উনি এত আন্তরিক যে, আমাকে নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াইছেন। চা খাওয়ার পর আমি আবারও কয়েকবার টেক দিলাম গানের জন্য।’
ভক্তদের অনুরোধে তিনি ‘ফকির সাহেব’ নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি গান গেয়ে টাকা নেই না, সেহেতু গান গেয়ে মাঝেমধ্যে অর্থ পেলে, তা মানবিক কাজে ব্যয় করা হয়।’
ফকির সাহেবের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায় হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারি ইউনিয়ন গাওচুলকা গ্রামে। দুই বোন আছে তাঁর। এখন বাড়িতে বড় বোন বুলবুলি, ভাগনে-ভাগনি আর মা থাকেন। অনেক কষ্টে তাঁর মা তাঁকে বড় করেছেন। মা তাঁকে ফকির বলে ডাকতেন। তাঁর মুখের হাসি ও কর্মকাণ্ড যখন সাহেবেদের মতো দেখলেন, তখন মা তাঁর নামের সঙ্গে সাহেব যোগ করেন। এলাকার মানুষ তাঁকে অনেক সম্মান করেন। এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন ফকির সাহেব।
স্কুল ছিল নিজের গ্রামে পুরোনো কাচারি গাওচুলকা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাইস্কুল ছিল হাতীবান্ধা উপজেলা শহরে। হাতীবান্ধা এস এস হাইস্কুল এণ্ড টেকনিক্যাল কলেজ (বর্তমানে মডেল কলেজ)। কলেজ ছিল হাতীবান্ধার আলীমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজ। স্কুল ও কলেজজীবনে মানুষের বাসায় থেকেছেন তিনি। হাতীবান্ধায় এসএসসিতে পড়ার সময় কারিমুর নামে একজনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন তিনি। আর কলেজ থাকাকালে আশরাফ ভান্ডারি নামের একজন ওস্তাদের কাছ থেকেছেন। অন্ধ্র প্রদেশের একজন ওস্তাদের কাছ থেকে তিনি দীক্ষা নিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে মূলত দেহতত্ত্বের ব্যাপারে দীক্ষা নিয়েছেন তিনি, যেটাকে ব্রাক্ষ্মচর্য বলে।
এর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য উৎসাহ, নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন আশরাফুজ্জামান দীদার নামে তাঁর এক বন্ধু। গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কর্ম করবেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘কর্ম তোমার আর কি কিছু নয়
আঁকা আঁকি মোছামুছি বেখেয়ালী
তাজ্জব হয়েছি,’
এখন আমার কর্ম ভালো থাকলে মানুষ তাজ্জব হবে।’

বাবা ছিলেন ভিক্ষু সাধু ও সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গানবাজনা হতো। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাঁটার বেড়া ছিল না। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে গানের যে ব্যাপার, সাধুসঙ্গ—এ বিষয়গুলো টানত তাঁকে। এভাবে গানবাজনাকে ভালোবাসেন ওজকুরুনী ফকির সাহেব, যিনি ফকির সাহেব হিসেবেই বেশি পরিচিত।
বাড়ির পাশে মন্দিরে গান হতো। তখন গান শুনে ভালো লাগত তাঁর। টুকটাক গান শুনতেন, আসরে যেতেন। বড় বোন বুলবুলি গান করতেন। তিনি যেখানেই গান করতে যেতেন, সেখানে নিয়ে যেতেন ফকির সাহেবকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গানবাজনা শুনে হঠাৎ করে অনেক মানুষকে কাঁদতে দেখেন ফকির সাহেব। এটাকে দশা ধরা বলে। এই যে মানুষ কাঁদছে, কী বুঝে কাঁদছে? এই চিন্তা আসে তাঁর মনে। মানুষের কান্নার কারণ খুঁজতেন ফকির সাহেব। আর এই বিষয় খুঁজতে খুঁজতে পান গানের ভেতরে পাওয়া মানুষের জীবন।
২০০৫ সাল থেকে মানুষের সামনে গান গাওয়া শুরু করেন ফকির সাহেব। ফকির সাহেব বলেন, ‘গানের ভেতর সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া যায়। আর পৃথিবীতে খুব কমসংখ্যক মানুষই আছে, যারা গান পছন্দ করেন না। জনসম্মুখে না শুনলেও নিরালায় শুনছে। পদাবলি কীর্তন, চৈতন্য মহাপ্রভুর রাশ মেলায় যে কীর্তন হইতো, সেগুলা শুনতাম, গুনগুন করতাম। সাধুসঙ্গেরে ভেতর বৈঠকি গানের আসরে যে গানগুলো চলত, সে গানগুলো ভালো লাগত। এ ছাড়া আব্বাস উদ্দিন, আব্দুল আলীম, লালনের গান, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি গানগুলো শুনতাম।’
তবে বিভিন্ন আসরে লালনের গান বেশি হতো। লালন ফকিরের গান। লালন ফকিরের গান খুব টানে ফকির সাহেবকে। তখন থেকে ফোক গান, ভাটিয়ালি, লালন, মুর্শিদি, দেহতত্ত্ব ও মাটির গানগুলোর প্রতি একটা ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ফকির সাহেবের। ভালো লাগা আরও বেশি কাজ করে যখন তাঁর বোন বুলবুলি বেগম গান করতেন।
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে ফকির সাহেবের বড় উৎসাহের জায়গা বড় বোন। বড় বোন বলতেন, ‘গান কেমন শোনাচ্ছে—এইটা বড় বিষয় নয়, গলা ছেড়ে গাইত হবে। তুমি গান গাইতেছ—এইটা দরকার। আমি গলা ছেড়ে গান গাইতে পারতেছি এইটা বড় ব্যাপার।’
নিয়ম করে কখনো গান শেখা হয়নি ফকির সাহেবের। গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর। বাবা ভিক্ষু সাধুর গান গেয়ে ব্যাপক ভাইরাল হন তিনি। গানটি গেয়েছিলেন সোনাদিয়ায় সাগরের তীরে। হাতে একটি মোবাইল নিয়ে তাতে তাল দিয়ে গেয়েছিলেন গানটি। ‘ভাব আছ যার গায়, দেখলে তারে চেনা যায়।’
ফকির সাহেব বলেন, ‘আসলে কোনো জিনিসের তো পূর্ণতা বোঝা যায় না, বা জানারও তো শেষ নেই। এইখানে একটা অনুভূতির ব্যাপার আছে। যে জ্ঞান বই পড়লেই বোঝা যায়, কিন্তু অনুভূতি এমন একটা জিনিস যে, প্রত্যেকটি ব্যক্তির এইটা আলাদা আলাদাভাবে থাকে। অনুভূতি অনেক দামি জিনিস। জ্ঞানের চেয়ে অনুভূতি অনেক বড় জিনিস। এইটা আমি বুঝত পারলাম কখন? এই গানে আরেকটা লাইন আছে বলে সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘ওরে আমার আমার ছাড়ো
দমের জিকির করো
তাইলে পাইতে পারো খোদারে
গুরুরূপে নয়ন দিয়াছে যেই জন
তার মরণের ভয় কি আছে রে...’
‘গানে বলতেছে আমি যে ব্যক্তি ওয়াজকুরুনি ফকির সাহেব, এই যে আমি যে ব্যক্তি, এই ভাবনাটা ছেড়ে দেওয়া। কারণ, এগুলো তো আসলেই আমার না।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আনাচে-কানাচে যারা গান লিখছেন, তাদের গান করতে চান ফকির সাহেব। তিনি বলেন, ‘আল্লাহতালা আমাকে একটি সম্পদ দান করেছেন। তা হচ্ছে আমার কণ্ঠ। আর আমি এই কণ্ঠ দিয়ে সেই সকল মানুষের বার্তা বা বাণী মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘পরিচিত শিল্পীদের গান সবাই গায়, শোনে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলে যে মানুষগুলো লেখার মাধ্যমে যে বাণী বা বার্তা তাঁরা দেন, তা অনেকেই শুনতে পারেন না। আমি চাই এই সকল বার্তা আমার কণ্ঠের মাধ্যমে মানুষকে শোনাতে।’
কোন ধরনের গান তিনি পছন্দ করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান তো গানই। লালন, ভাটিয়ালি, জারি, পল্লিগীতি, যাই হোক না কেন গানের ফর্মগুলা আমার কাছে ইমপর্টেন্ট না। আমার কাছে বড় বিষয় হচ্ছে কথাগুলা কী বলতেছে। আমাকে এই কথাগুলা বলতে হবে। আর এই কথাগুলা আমার হাজার মানুষকে বোঝানোর দরকার নাই, একজন মানুষও যদি বোঝে তাও হবে।’
গানের মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন বা কি বাণী দেন একজন শিল্পী? প্রেম তত্ত্বকে লালন করে গান করেন ফকির সাহেব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গেয়ে ওঠেন—‘যেই প্রেমেতে আল্লাহ রসুল সাক্ষাৎ মিলেছে...’
যে প্রেমে জীবাত্মা পরমাত্মাকে নেওয়ার পর আল্লাহ এবং আল্লাহর রসুলক এক করে দিচ্ছে। এই এক প্রেম এবং এই প্রেমেই উজ্জীবিত হতে হবে। অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানবজনমের যে প্রেম, এই প্রেমকে লালন করেন ফকির সাহেব।
গানকে পেশা হিসেবে নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘গান আমার নেশা; কিন্তু পেশা না। আমার মা আমাকে বলেছেন, বাবা তুমি এইটা প্রচার করো; কিন্তু এইটার জন্য কারও কাছ থেকে এর বিনিময়ে কোনো অর্থ নিয়ো না। যেহেতু আমার সুইচ বাতি উনি, পৃথিবীতে আসার মাধ্যম উনি, সেহেতু আমাকে এইটা পালন করতে হবে এবং এইটা পালন করতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেহেরে ভেতরে এই নিশ্বাসটা আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর (মা) কথাটাই আমার কাছে মুখ্য।’ তিনি বলেন, ‘বিখ্যাত হতে চাই না, মানুষ হতে চাই।’
ক্যারিয়ারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবন সবকিছু ফুরিয়ে যায়। কিন্তু যে জিনিস ফুরাবে না—সেটি হলো কর্ম। আর এই কর্ম আর গান—এই দুটোর সমন্বয় করবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, এ ধরনের ভাবনা এখনো তৈরি করিনি। তৈরি করিনি একটা কারণে আমার মা বলেছেন যে বাবা পৃথিবীতে চলতে এত টাকা পয়সার এত কিছুর দরকার হয় না। তবে হ্যাঁ অনেক স্টেজ প্রোগ্রামে মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস কর আপনি গান গেয়ে টাকা নেন না, আপনি যদি অসুস্থ হয়ে যান? তখন কী হবে! আসলে কী বলব সুস্থতা, অসুস্থতা, রিজিক এগুলা তো সব আল্লাহর কাছে। উনি চাইলে আমাকে নিয়ে নিবেন। আমি তো প্রস্তুত মৃত্যুর জন্য। সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু আমি কর্ম থেকে একবিন্দু্ও ছাড় পেতে চাই না। আসবে আসবে।
ফকির সাহেব বলেন, ‘আত্মশক্তিতে বলীয়ান ব্যক্তি কখনো দরিদ্র থাকতে পারে না। এইটা আমি খুব বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাসরে জোরেই এখনো পর্যন্ত চলতেছি। খুব কম সময়ই আমি অর্থ সংকটে থাকি। এবং থাকলেও সেটা আমার হাসিতেই চলে যায়। একটা তিল যদি সত্তর জন ভাগ করে থাকতে পারে, তাহলে আমার হাসিতে অনেক দুঃখ চলে যেতে পারে। সবাই আমার শুধু হাসিটাই দেখে, কেউ দুঃখটা দেখে না। কারণ, আমি জানি আমার দুঃখের সমাধান কেউ করতে পারবে না।’ এই কথা বলে তিনি গেয়ে ওঠেন—
‘সারা জীবন ভালোবাসলাম যারে
সে তো বুঝল না
বুঝল না আমারে
দুঃখ কইনা কইনা
রাইখাছি অন্তরে...’
মোশারফ করিমকে একজন সংগীতপ্রেমী মানুষ হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে ফকির সাহেব বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় তিনি প্রকৃত অর্থে মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘মানুষ কুলে জন্ম নিলে
মানুষ বলা যায় না
তারে চিনব কেমন করে
আমি জানব কেমন করে’
‘তিনি পপুলার তাঁর কর্ম দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ভালো লেগেছে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে। তিনি অনেক গানও লিখেছেন। যেমন—
‘যা দেখি তার সবই ভালো
ভালো ভালো লাগে না
ভালো কেন একা ভালো
কিছুই ভালো লাগে না’
‘এই মানুষটা যতটুকু লেখেন ততটুকু দিয়ে মানুষের ভেতরে ঢুকে যেতে পারেন। এই ভেতরে ঢুকে যাওয়ার ব্যাপারটা, প্রতিটা লাইনে লাইনে মানুষকে গানের ভেতর ঢোকানোর ব্যাপারটা গানের ক্ষেত্রে তার এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। এই জায়গাটার জন্য সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁকে আমার গুরুত্বপূর্ণ পারসন মনে হইছে।’
কাঠবিড়ালি সিনেমার গানের জন্য একবার ফকির সাহেবকে যেতে হয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান ইমন চৌধুরীর কাছে। জানান, তাঁর সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের কথা। ফকির সাহেব বলেন, ‘তাঁর কাছে গিয়ে আমার পা কাঁপছিল। কারণ, আমি স্টুডিওতে গান করি নাই। প্রথম হিসেবে আমার অনেক ভয় লাগছিল। কিন্তু তিনি এত আন্তরিক যে আমাকে ইজি করার জন্য অনেক আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। উনি সচরাচর একটা গানে এতবার টেক নেন না, যতবার আমার বেলায় নিয়েছিলেন। উনি এত আন্তরিক যে, আমাকে নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াইছেন। চা খাওয়ার পর আমি আবারও কয়েকবার টেক দিলাম গানের জন্য।’
ভক্তদের অনুরোধে তিনি ‘ফকির সাহেব’ নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি গান গেয়ে টাকা নেই না, সেহেতু গান গেয়ে মাঝেমধ্যে অর্থ পেলে, তা মানবিক কাজে ব্যয় করা হয়।’
ফকির সাহেবের বাড়ি লালমনিরহাট জেলায় হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারি ইউনিয়ন গাওচুলকা গ্রামে। দুই বোন আছে তাঁর। এখন বাড়িতে বড় বোন বুলবুলি, ভাগনে-ভাগনি আর মা থাকেন। অনেক কষ্টে তাঁর মা তাঁকে বড় করেছেন। মা তাঁকে ফকির বলে ডাকতেন। তাঁর মুখের হাসি ও কর্মকাণ্ড যখন সাহেবেদের মতো দেখলেন, তখন মা তাঁর নামের সঙ্গে সাহেব যোগ করেন। এলাকার মানুষ তাঁকে অনেক সম্মান করেন। এভাবে তিনি হয়ে ওঠেন ফকির সাহেব।
স্কুল ছিল নিজের গ্রামে পুরোনো কাচারি গাওচুলকা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাইস্কুল ছিল হাতীবান্ধা উপজেলা শহরে। হাতীবান্ধা এস এস হাইস্কুল এণ্ড টেকনিক্যাল কলেজ (বর্তমানে মডেল কলেজ)। কলেজ ছিল হাতীবান্ধার আলীমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজ। স্কুল ও কলেজজীবনে মানুষের বাসায় থেকেছেন তিনি। হাতীবান্ধায় এসএসসিতে পড়ার সময় কারিমুর নামে একজনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন তিনি। আর কলেজ থাকাকালে আশরাফ ভান্ডারি নামের একজন ওস্তাদের কাছ থেকেছেন। অন্ধ্র প্রদেশের একজন ওস্তাদের কাছ থেকে তিনি দীক্ষা নিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে মূলত দেহতত্ত্বের ব্যাপারে দীক্ষা নিয়েছেন তিনি, যেটাকে ব্রাক্ষ্মচর্য বলে।
এর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য উৎসাহ, নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন আশরাফুজ্জামান দীদার নামে তাঁর এক বন্ধু। গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কর্ম করবেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে ওঠেন—
‘কর্ম তোমার আর কি কিছু নয়
আঁকা আঁকি মোছামুছি বেখেয়ালী
তাজ্জব হয়েছি,’
এখন আমার কর্ম ভালো থাকলে মানুষ তাজ্জব হবে।’

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় অনেক গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও ফোয়াদ নাসের বাবুর নাম। এবার এই দুজন মিলে ১০ ব্যান্ডের জন্য তৈরি করলেন নতুন ১০টি গান। গানগুলো গেয়েছে ব্যান্ড ফিডব্যাক, সোলস, রেনেসাঁ, দলছুট, শিরোনামহীন, নির্ঝর, তরুণ, পার্থিব, পেন্টাগন ও নোভা।
৭ ঘণ্টা আগে
অ্যানিমেশনের জয়জয়কার। এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় নজর রাখলে এটিই প্রমাণিত হয়। রক্ত-মাংসের অভিনেতাদের হারিয়ে এ বছর দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে অ্যানিমেশনের চরিত্ররা। ৮০ মিলিয়নে নির্মিত চীনের অ্যানিমেটেড ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘নে ঝা-২’ ২ বিলিয়নের বেশি আয় করে সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার...
৭ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষভাগে ডিসেম্বর মাসে নেটফ্লিক্স ঘোষণা দেয় ৭২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির টিভি, স্টুডিও ও স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনে নিচ্ছে তারা। এমন ঘোষণার পর প্যারামাউন্ট প্রস্তাব দেয় তারা ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি দামে ওয়ার্নার ব্রস কিনতে প্রস্তুত।
৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালটি আরব সিনেমার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বছর হিসেবে থেকে যাবে। বিভিন্ন প্রজন্মের একঝাঁক মেধাবী পরিচালক উঠে এসেছেন, যাঁরা তাঁদের সিনেমার মাধ্যমে তুলে আনছেন আরবের ইতিহাস-ঐতিহ্য। ভেঙে দিচ্ছেন আরবের সমাজ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের নানা ভুল ধারণা। আরবের ঐতিহাসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতানির্ভর...
৭ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় অনেক গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও ফোয়াদ নাসের বাবুর নাম। এবার এই দুজন মিলে ১০ ব্যান্ডের জন্য তৈরি করলেন নতুন ১০টি গান। গানগুলো গেয়েছে ব্যান্ড ফিডব্যাক, সোলস, রেনেসাঁ, দলছুট, শিরোনামহীন, নির্ঝর, তরুণ, পার্থিব, পেন্টাগন ও নোভা। বিটিভির ‘ব্যান্ড উৎসব ২০২৫’ অনুষ্ঠানের জন্য গানগুলো তৈরি করা হয়েছে। ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টায় দুই পর্বে প্রচার হবে এই অনুষ্ঠান।

৩০ ডিসেম্বর প্রথম পর্বে পারফর্ম করবে নির্ঝর, দলছুট, তরুণ, রেনেসাঁ ও শিরোনামহীন। ৩১ ডিসেম্বর পারফর্ম করবে পার্থিব, পেন্টাগন, ফিডব্যাক, নোভা ও সোলস। গোলাম মোর্শেদের প্রযোজনা, আহমেদ তেপান্তরের গ্রন্থনা এবং শারমিন নিগারের শিল্পনির্দেশনায় বিটিভির নিজস্ব সেটে গানগুলোর চিত্রায়ণ হয়েছে। গান শোনানোর পাশাপাশি প্রতিটি দলের সদস্যরা গান নিয়ে কথা বলবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও সুরকার ফোয়াদ নাসের বাবু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ফেরদৌস বাপ্পী।

বিটিভির এই আয়োজন নিয়ে শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যান্ড শিল্পের ইতিহাসে প্রথম একক কোনো অনুষ্ঠানের জন্য ১০টি ব্যান্ড ১০টি নতুন গান গেয়েছে। এই অনুষ্ঠানের নতুনত্ব হচ্ছে, ১০টি গানের কথা লিখেছেন একজন গীতিকার, সুর করেছেন একজন সুরকার। কর্তৃপক্ষ আমাকে সুযোগ দিয়েছে তারুণ্যের জন্য কিছু করতে, আমি চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি ফোয়াদ নাসের বাবুকে ধন্যবাদ, তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন প্রতিটি ব্যান্ডের ঢং বজায় রেখে সুর করতে। এ অধ্যায় খুব পরিশ্রমের। তবে আমরা টিম হয়ে কাজটি উপভোগ করেছি।’
সুরকার ফোয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘এত কম সময়ে একসঙ্গে এত ব্যান্ডের জন্য মৌলিক সুর আগে কেউ করেনি। কেমন হয়েছে, তা শ্রোতারা বলবেন। পুরো আয়োজনের জন্য বিটিভি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।’
সোলসের দলনেতা ও ভোকাল পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘যখন জানলাম বিটিভির উদ্যোগে শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর লেখা আর ফোয়াদ নাসের বাবুর সুরে গাইতে হবে, তখন আর না করার সাহস দেখাইনি। কারণ সোলসের আজকের জায়গায় দাঁড়ানোর ব্যাপারে বিটিভি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। আশা করি এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বিটিভি।’

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় অনেক গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও ফোয়াদ নাসের বাবুর নাম। এবার এই দুজন মিলে ১০ ব্যান্ডের জন্য তৈরি করলেন নতুন ১০টি গান। গানগুলো গেয়েছে ব্যান্ড ফিডব্যাক, সোলস, রেনেসাঁ, দলছুট, শিরোনামহীন, নির্ঝর, তরুণ, পার্থিব, পেন্টাগন ও নোভা। বিটিভির ‘ব্যান্ড উৎসব ২০২৫’ অনুষ্ঠানের জন্য গানগুলো তৈরি করা হয়েছে। ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টায় দুই পর্বে প্রচার হবে এই অনুষ্ঠান।

৩০ ডিসেম্বর প্রথম পর্বে পারফর্ম করবে নির্ঝর, দলছুট, তরুণ, রেনেসাঁ ও শিরোনামহীন। ৩১ ডিসেম্বর পারফর্ম করবে পার্থিব, পেন্টাগন, ফিডব্যাক, নোভা ও সোলস। গোলাম মোর্শেদের প্রযোজনা, আহমেদ তেপান্তরের গ্রন্থনা এবং শারমিন নিগারের শিল্পনির্দেশনায় বিটিভির নিজস্ব সেটে গানগুলোর চিত্রায়ণ হয়েছে। গান শোনানোর পাশাপাশি প্রতিটি দলের সদস্যরা গান নিয়ে কথা বলবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও সুরকার ফোয়াদ নাসের বাবু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন ফেরদৌস বাপ্পী।

বিটিভির এই আয়োজন নিয়ে শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যান্ড শিল্পের ইতিহাসে প্রথম একক কোনো অনুষ্ঠানের জন্য ১০টি ব্যান্ড ১০টি নতুন গান গেয়েছে। এই অনুষ্ঠানের নতুনত্ব হচ্ছে, ১০টি গানের কথা লিখেছেন একজন গীতিকার, সুর করেছেন একজন সুরকার। কর্তৃপক্ষ আমাকে সুযোগ দিয়েছে তারুণ্যের জন্য কিছু করতে, আমি চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি ফোয়াদ নাসের বাবুকে ধন্যবাদ, তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন প্রতিটি ব্যান্ডের ঢং বজায় রেখে সুর করতে। এ অধ্যায় খুব পরিশ্রমের। তবে আমরা টিম হয়ে কাজটি উপভোগ করেছি।’
সুরকার ফোয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘এত কম সময়ে একসঙ্গে এত ব্যান্ডের জন্য মৌলিক সুর আগে কেউ করেনি। কেমন হয়েছে, তা শ্রোতারা বলবেন। পুরো আয়োজনের জন্য বিটিভি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।’
সোলসের দলনেতা ও ভোকাল পার্থ বড়ুয়া বলেন, ‘যখন জানলাম বিটিভির উদ্যোগে শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর লেখা আর ফোয়াদ নাসের বাবুর সুরে গাইতে হবে, তখন আর না করার সাহস দেখাইনি। কারণ সোলসের আজকের জায়গায় দাঁড়ানোর ব্যাপারে বিটিভি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। আশা করি এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বিটিভি।’

বাবা ভিক্ষু সাধু ছিলেন সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গান-বাজনা হতো। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাটার বেড়া ছিল
০৫ নভেম্বর ২০২১
অ্যানিমেশনের জয়জয়কার। এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় নজর রাখলে এটিই প্রমাণিত হয়। রক্ত-মাংসের অভিনেতাদের হারিয়ে এ বছর দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে অ্যানিমেশনের চরিত্ররা। ৮০ মিলিয়নে নির্মিত চীনের অ্যানিমেটেড ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘নে ঝা-২’ ২ বিলিয়নের বেশি আয় করে সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার...
৭ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষভাগে ডিসেম্বর মাসে নেটফ্লিক্স ঘোষণা দেয় ৭২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির টিভি, স্টুডিও ও স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনে নিচ্ছে তারা। এমন ঘোষণার পর প্যারামাউন্ট প্রস্তাব দেয় তারা ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি দামে ওয়ার্নার ব্রস কিনতে প্রস্তুত।
৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালটি আরব সিনেমার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বছর হিসেবে থেকে যাবে। বিভিন্ন প্রজন্মের একঝাঁক মেধাবী পরিচালক উঠে এসেছেন, যাঁরা তাঁদের সিনেমার মাধ্যমে তুলে আনছেন আরবের ইতিহাস-ঐতিহ্য। ভেঙে দিচ্ছেন আরবের সমাজ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের নানা ভুল ধারণা। আরবের ঐতিহাসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতানির্ভর...
৭ ঘণ্টা আগেবিনোদন ডেস্ক

অ্যানিমেশনের জয়জয়কার। এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় নজর রাখলে এটিই প্রমাণিত হয়। রক্ত-মাংসের অভিনেতাদের হারিয়ে এ বছর দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে অ্যানিমেশনের চরিত্ররা। ৮০ মিলিয়নে নির্মিত চীনের অ্যানিমেটেড ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘নে ঝা-২’ ২ বিলিয়নের বেশি আয় করে সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার রেকর্ড গড়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডিজনির অ্যানিমেশন ‘জুটোপিয়া ২’, আয় করেছে ১ বিলিয়নের বেশি। তৃতীয় স্থানটিও একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের লাইভ-অ্যাকশন অ্যানিমেশন ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’। সাড়া জাগানো জাপানি অ্যানিমেশন ‘ডেমন স্লেয়ার: কিমেৎসু নো ইয়াইবা—দ্য মুভি: ইনফিনিটি ক্যাসেল’ নিয়েও কম উত্তেজনা ছিল না।
অ্যানিমেশনের এই রমরমা পরিস্থিতিতে মান বাঁচিয়েছে ওয়ার্নার ব্রসের ‘আ মাইনক্রাফট মুভি’ (৯৫৮ মিলিয়ন) এবং ইউনিভার্সাল পিকচারসের ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ (৮৬৯ মিলিয়ন)। দুটি সিনেমাই ১ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে। ব্র্যাড পিট ‘এফ ওয়ান’ দিয়ে এবং ডেভিড কোরেন্সওয়েট ‘সুপারম্যান’ দিয়ে বছরের মাঝামাঝি কিছুটা সাড়া ফেলতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া বছরজুড়ে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি হলিউড।
হলিউডে তারকাদের স্টারডম যে ধীরে ধীরে ম্লান হচ্ছে, এ বছর সে চিত্রটা আরও বেশি করে ধরা পড়েছে। ডোয়াইন জনসনের ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ বক্স অফিসে রীতিমতো ফ্লপ। জেনিফার লরেন্সের ‘ডাই মাই লাভ’ মাত্র সাড়ে ১১ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করেছে। একইভাবে ব্যর্থ জুলিয়া রবার্টসের ‘আফটার দ্য হান্ট’ এবং গ্লেন পাওয়েলের ‘দ্য রানিংম্যান’। এমনকি টম ক্রুজের আলোচিত সিনেমা ‘মিশন: ইম্পিসবল—দ্য ফাইনাল রেকনিং’ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় বাজারে ২০০ মিলিয়নও তুলতে পারেনি, যা এ ফ্র্যাঞ্চাইজির একটি হতাশাজনক পতনই বলা চলে। ব্র্যাড পিটের এফ ওয়ান সিনেমার বক্স অফিস ফলাফল এ তারকার স্টারডমের তুলনায় অনেকটাই কম।
তবে যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বছর হলিউডে ভালোই সাফল্য পেয়েছে ভৌতিক সিনেমা। ৯০ মিলিয়ন বাজেটের ‘সিনারস’ সাড়ে ৩৫০ মিলিয়নের বেশি ব্যবসা করেছে বিশ্বব্যাপী। আর ৩৮ মিলিয়নে তৈরি ‘ওয়েপনস’ পার করেছে আড়াই শ মিলিয়ন ডলার। হরর সিনেমার এই সাফল্যের ফল হিসেবে আগামী বছর হলিউডে ভূতের গল্পের নির্মাণ আরও বাড়বে, এ কথা বলাই যায়।
এ বছরের আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা—ডিসির কাছে মার্ভেলের পরাজয়। বছরের পর বছর ধরে মার্ভেলের সুপারহিরোর গল্প গোগ্রাসে গিলেছে দর্শক। ডিসি বরাবরই ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু এবার গণেশ উল্টে গেছে। মার্ভেল এ বছর ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর: ফার্স্ট স্টেপ’ এবং ‘থান্ডারবোল্টস’-এর মতো আলোচিত সিনেমা মুক্তি দিলেও ডিসির ‘সুপারম্যান’-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারেনি। সুপারম্যানই এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সুপারহিরো সিনেমা। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের যাত্রা শুরুর পর এবারই প্রথম ডিসির কাছে হারল প্রতিষ্ঠানটি।

অ্যানিমেশনের জয়জয়কার। এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় নজর রাখলে এটিই প্রমাণিত হয়। রক্ত-মাংসের অভিনেতাদের হারিয়ে এ বছর দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে অ্যানিমেশনের চরিত্ররা। ৮০ মিলিয়নে নির্মিত চীনের অ্যানিমেটেড ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘নে ঝা-২’ ২ বিলিয়নের বেশি আয় করে সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার রেকর্ড গড়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ডিজনির অ্যানিমেশন ‘জুটোপিয়া ২’, আয় করেছে ১ বিলিয়নের বেশি। তৃতীয় স্থানটিও একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের লাইভ-অ্যাকশন অ্যানিমেশন ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’। সাড়া জাগানো জাপানি অ্যানিমেশন ‘ডেমন স্লেয়ার: কিমেৎসু নো ইয়াইবা—দ্য মুভি: ইনফিনিটি ক্যাসেল’ নিয়েও কম উত্তেজনা ছিল না।
অ্যানিমেশনের এই রমরমা পরিস্থিতিতে মান বাঁচিয়েছে ওয়ার্নার ব্রসের ‘আ মাইনক্রাফট মুভি’ (৯৫৮ মিলিয়ন) এবং ইউনিভার্সাল পিকচারসের ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড রিবার্থ’ (৮৬৯ মিলিয়ন)। দুটি সিনেমাই ১ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে। ব্র্যাড পিট ‘এফ ওয়ান’ দিয়ে এবং ডেভিড কোরেন্সওয়েট ‘সুপারম্যান’ দিয়ে বছরের মাঝামাঝি কিছুটা সাড়া ফেলতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া বছরজুড়ে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি হলিউড।
হলিউডে তারকাদের স্টারডম যে ধীরে ধীরে ম্লান হচ্ছে, এ বছর সে চিত্রটা আরও বেশি করে ধরা পড়েছে। ডোয়াইন জনসনের ‘দ্য স্ম্যাশিং মেশিন’ বক্স অফিসে রীতিমতো ফ্লপ। জেনিফার লরেন্সের ‘ডাই মাই লাভ’ মাত্র সাড়ে ১১ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করেছে। একইভাবে ব্যর্থ জুলিয়া রবার্টসের ‘আফটার দ্য হান্ট’ এবং গ্লেন পাওয়েলের ‘দ্য রানিংম্যান’। এমনকি টম ক্রুজের আলোচিত সিনেমা ‘মিশন: ইম্পিসবল—দ্য ফাইনাল রেকনিং’ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় বাজারে ২০০ মিলিয়নও তুলতে পারেনি, যা এ ফ্র্যাঞ্চাইজির একটি হতাশাজনক পতনই বলা চলে। ব্র্যাড পিটের এফ ওয়ান সিনেমার বক্স অফিস ফলাফল এ তারকার স্টারডমের তুলনায় অনেকটাই কম।
তবে যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বছর হলিউডে ভালোই সাফল্য পেয়েছে ভৌতিক সিনেমা। ৯০ মিলিয়ন বাজেটের ‘সিনারস’ সাড়ে ৩৫০ মিলিয়নের বেশি ব্যবসা করেছে বিশ্বব্যাপী। আর ৩৮ মিলিয়নে তৈরি ‘ওয়েপনস’ পার করেছে আড়াই শ মিলিয়ন ডলার। হরর সিনেমার এই সাফল্যের ফল হিসেবে আগামী বছর হলিউডে ভূতের গল্পের নির্মাণ আরও বাড়বে, এ কথা বলাই যায়।
এ বছরের আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা—ডিসির কাছে মার্ভেলের পরাজয়। বছরের পর বছর ধরে মার্ভেলের সুপারহিরোর গল্প গোগ্রাসে গিলেছে দর্শক। ডিসি বরাবরই ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু এবার গণেশ উল্টে গেছে। মার্ভেল এ বছর ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, ‘ফ্যান্টাস্টিক ফোর: ফার্স্ট স্টেপ’ এবং ‘থান্ডারবোল্টস’-এর মতো আলোচিত সিনেমা মুক্তি দিলেও ডিসির ‘সুপারম্যান’-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারেনি। সুপারম্যানই এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সুপারহিরো সিনেমা। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের যাত্রা শুরুর পর এবারই প্রথম ডিসির কাছে হারল প্রতিষ্ঠানটি।

বাবা ভিক্ষু সাধু ছিলেন সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গান-বাজনা হতো। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাটার বেড়া ছিল
০৫ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় অনেক গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও ফোয়াদ নাসের বাবুর নাম। এবার এই দুজন মিলে ১০ ব্যান্ডের জন্য তৈরি করলেন নতুন ১০টি গান। গানগুলো গেয়েছে ব্যান্ড ফিডব্যাক, সোলস, রেনেসাঁ, দলছুট, শিরোনামহীন, নির্ঝর, তরুণ, পার্থিব, পেন্টাগন ও নোভা।
৭ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষভাগে ডিসেম্বর মাসে নেটফ্লিক্স ঘোষণা দেয় ৭২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির টিভি, স্টুডিও ও স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনে নিচ্ছে তারা। এমন ঘোষণার পর প্যারামাউন্ট প্রস্তাব দেয় তারা ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি দামে ওয়ার্নার ব্রস কিনতে প্রস্তুত।
৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালটি আরব সিনেমার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বছর হিসেবে থেকে যাবে। বিভিন্ন প্রজন্মের একঝাঁক মেধাবী পরিচালক উঠে এসেছেন, যাঁরা তাঁদের সিনেমার মাধ্যমে তুলে আনছেন আরবের ইতিহাস-ঐতিহ্য। ভেঙে দিচ্ছেন আরবের সমাজ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের নানা ভুল ধারণা। আরবের ঐতিহাসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতানির্ভর...
৭ ঘণ্টা আগেবিনোদন ডেস্ক



বাবা ভিক্ষু সাধু ছিলেন সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গান-বাজনা হতো। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাটার বেড়া ছিল
০৫ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় অনেক গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও ফোয়াদ নাসের বাবুর নাম। এবার এই দুজন মিলে ১০ ব্যান্ডের জন্য তৈরি করলেন নতুন ১০টি গান। গানগুলো গেয়েছে ব্যান্ড ফিডব্যাক, সোলস, রেনেসাঁ, দলছুট, শিরোনামহীন, নির্ঝর, তরুণ, পার্থিব, পেন্টাগন ও নোভা।
৭ ঘণ্টা আগে
অ্যানিমেশনের জয়জয়কার। এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় নজর রাখলে এটিই প্রমাণিত হয়। রক্ত-মাংসের অভিনেতাদের হারিয়ে এ বছর দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে অ্যানিমেশনের চরিত্ররা। ৮০ মিলিয়নে নির্মিত চীনের অ্যানিমেটেড ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘নে ঝা-২’ ২ বিলিয়নের বেশি আয় করে সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার...
৭ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালটি আরব সিনেমার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বছর হিসেবে থেকে যাবে। বিভিন্ন প্রজন্মের একঝাঁক মেধাবী পরিচালক উঠে এসেছেন, যাঁরা তাঁদের সিনেমার মাধ্যমে তুলে আনছেন আরবের ইতিহাস-ঐতিহ্য। ভেঙে দিচ্ছেন আরবের সমাজ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের নানা ভুল ধারণা। আরবের ঐতিহাসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতানির্ভর...
৭ ঘণ্টা আগেবিনোদন ডেস্ক

২০২৫ সালটি আরব সিনেমার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বছর হিসেবে থেকে যাবে। বিভিন্ন প্রজন্মের একঝাঁক মেধাবী পরিচালক উঠে এসেছেন, যাঁরা তাঁদের সিনেমার মাধ্যমে তুলে আনছেন আরবের ইতিহাস-ঐতিহ্য। ভেঙে দিচ্ছেন আরবের সমাজ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের নানা ভুল ধারণা। আরবের ঐতিহাসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতানির্ভর গল্পগুলো বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমাদৃতও হচ্ছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটেছে ৯৮তম অস্কারের শর্টলিস্টে। ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম বিভাগে প্রাথমিকভাবে মনোনীত ১৫টি সিনেমার মধ্যে জায়গা পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ৪টি সিনেমা—‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’, ‘প্যালেস্টাইন ৩৬’, ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’ ও ‘অল দ্যাটস লেফট অব ইউ’। অস্কারের ইতিহাসে যা অভূতপূর্ব ঘটনা। এ ছাড়া ফ্রান্স থেকে অস্কারে অংশ নেওয়া ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহির ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ও রয়েছে এ তালিকায়। এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে সিনেমাটি। সিডনি, মিডলবার্গ, এশিয়া প্যাসিফিক, নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ডসহ নানা উৎসবে পুরস্কৃত-প্রশংসিত হয়েছে পানাহির সিনেমাটি।
এর পরই যে আরব সিনেমাটি নিয়ে ব্যাপক হইচই হয়েছে, সেটি ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’। ভেনিস উৎসবের ইতিহাসে দীর্ঘতম ২৩ মিনিট স্ট্যান্ডিং অভেশন পেয়েছে কুসারু বিন হানিয়া পরিচালিত সিনেমাটি। পেয়েছে সিলভার লায়ন পুরস্কার। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত পাঁচ বছর বয়সী কন্যাশিশু রজবের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে এটি। ভেনিস থেকে সান সেবাস্টিয়ান কিংবা শিকাগো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল—সব উৎসবে দর্শকদের চোখ ভিজিয়েছে দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব।
কান উৎসবে এ বছর ক্যামের দ্যর ও ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ইরাকের সিনেমা ‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’ নিয়েও আলোচনা ছিল বছরজুড়ে। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সালে সংঘটিত আরব বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে তৈরি ‘প্যালেস্টাইন ৩৬’ সিনেমাটিও ব্যাপক সমাদর পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। এ ছাড়া ‘ইউনান’, ‘অল দ্যাটস লেফট অব ইউ’, ‘আ স্যাড বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড’, ‘হিজরা’, ‘হ্যাপি বার্থডে’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন গাজা’, ‘আইশা ক্যান্ট ফ্লাই অ্যাওয়ে’, ‘টু আ ল্যান্ড আননোন’ সিনেমাগুলো বিভিন্ন নামকরা চলচ্চিত্র উৎসবে সুনাম কুড়িয়েছে।

২০২৫ সালটি আরব সিনেমার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বছর হিসেবে থেকে যাবে। বিভিন্ন প্রজন্মের একঝাঁক মেধাবী পরিচালক উঠে এসেছেন, যাঁরা তাঁদের সিনেমার মাধ্যমে তুলে আনছেন আরবের ইতিহাস-ঐতিহ্য। ভেঙে দিচ্ছেন আরবের সমাজ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের নানা ভুল ধারণা। আরবের ঐতিহাসিক, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতানির্ভর গল্পগুলো বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমাদৃতও হচ্ছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটেছে ৯৮তম অস্কারের শর্টলিস্টে। ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম বিভাগে প্রাথমিকভাবে মনোনীত ১৫টি সিনেমার মধ্যে জায়গা পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ৪টি সিনেমা—‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’, ‘প্যালেস্টাইন ৩৬’, ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’ ও ‘অল দ্যাটস লেফট অব ইউ’। অস্কারের ইতিহাসে যা অভূতপূর্ব ঘটনা। এ ছাড়া ফ্রান্স থেকে অস্কারে অংশ নেওয়া ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহির ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ও রয়েছে এ তালিকায়। এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে সিনেমাটি। সিডনি, মিডলবার্গ, এশিয়া প্যাসিফিক, নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ডসহ নানা উৎসবে পুরস্কৃত-প্রশংসিত হয়েছে পানাহির সিনেমাটি।
এর পরই যে আরব সিনেমাটি নিয়ে ব্যাপক হইচই হয়েছে, সেটি ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’। ভেনিস উৎসবের ইতিহাসে দীর্ঘতম ২৩ মিনিট স্ট্যান্ডিং অভেশন পেয়েছে কুসারু বিন হানিয়া পরিচালিত সিনেমাটি। পেয়েছে সিলভার লায়ন পুরস্কার। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত পাঁচ বছর বয়সী কন্যাশিশু রজবের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে এটি। ভেনিস থেকে সান সেবাস্টিয়ান কিংবা শিকাগো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল—সব উৎসবে দর্শকদের চোখ ভিজিয়েছে দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব।
কান উৎসবে এ বছর ক্যামের দ্যর ও ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ইরাকের সিনেমা ‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’ নিয়েও আলোচনা ছিল বছরজুড়ে। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সালে সংঘটিত আরব বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে তৈরি ‘প্যালেস্টাইন ৩৬’ সিনেমাটিও ব্যাপক সমাদর পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। এ ছাড়া ‘ইউনান’, ‘অল দ্যাটস লেফট অব ইউ’, ‘আ স্যাড বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড’, ‘হিজরা’, ‘হ্যাপি বার্থডে’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন গাজা’, ‘আইশা ক্যান্ট ফ্লাই অ্যাওয়ে’, ‘টু আ ল্যান্ড আননোন’ সিনেমাগুলো বিভিন্ন নামকরা চলচ্চিত্র উৎসবে সুনাম কুড়িয়েছে।

বাবা ভিক্ষু সাধু ছিলেন সংগীতপ্রেমী মানুষ। ২০০১ সালে পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। ওই সময় থেকে অনেক অভাব-অনটন থাকলেও বাবার অনেক ভক্ত আসতেন বাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন পাগল-সন্ন্যাসী আসতেন। তাঁদের সঙ্গে যেতেন ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে গান-বাজনা হতো। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই তাঁরা ভারতে যেতেন। তখন তারকাটার বেড়া ছিল
০৫ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় অনেক গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও ফোয়াদ নাসের বাবুর নাম। এবার এই দুজন মিলে ১০ ব্যান্ডের জন্য তৈরি করলেন নতুন ১০টি গান। গানগুলো গেয়েছে ব্যান্ড ফিডব্যাক, সোলস, রেনেসাঁ, দলছুট, শিরোনামহীন, নির্ঝর, তরুণ, পার্থিব, পেন্টাগন ও নোভা।
৭ ঘণ্টা আগে
অ্যানিমেশনের জয়জয়কার। এ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় নজর রাখলে এটিই প্রমাণিত হয়। রক্ত-মাংসের অভিনেতাদের হারিয়ে এ বছর দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে অ্যানিমেশনের চরিত্ররা। ৮০ মিলিয়নে নির্মিত চীনের অ্যানিমেটেড ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘নে ঝা-২’ ২ বিলিয়নের বেশি আয় করে সেরা ব্যবসাসফল সিনেমার...
৭ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষভাগে ডিসেম্বর মাসে নেটফ্লিক্স ঘোষণা দেয় ৭২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির টিভি, স্টুডিও ও স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনে নিচ্ছে তারা। এমন ঘোষণার পর প্যারামাউন্ট প্রস্তাব দেয় তারা ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি দামে ওয়ার্নার ব্রস কিনতে প্রস্তুত।
৭ ঘণ্টা আগে