Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

সুযোগ না থাকলে হয়তো নাটকেই থাকতাম

আফজাল হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আফজাল হোসেন জনপ্রিয় অভিনেতা, নির্মাতা ও চিত্রশিল্পী। নিয়মিত না হলেও এখনো বিভিন্ন নাটক-সিরিজে দেখা যায় তাঁর অভিনয়নৈপুণ্য। অভিনয়জীবন, থিয়েটার চর্চা, ছবি আঁকা, ব্যক্তিগত জীবনসহ নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন এম এস রানা

এম এস রানা
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ০৮

দর্শক এখনো আপনাকে টিভি পর্দায় দেখতে চায়। কিন্তু টেলিভিশনে আপনাকে খুব একটা পাওয়া যায় না। কেন?

আমি তো ১৯৭৫ সাল থেকে অভিনয় করি। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আমার একটা আলাদা পেশা তৈরি হয়েছে। লক্ষ করলাম, এই পেশায় থাকতে হলে যাঁদের সঙ্গে আমার কাজের সম্পর্কটা তৈরি হয়, তাঁদের সঙ্গে একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি হওয়া লাগে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, আমি অভিনয় করি। মানে, আমাদের সামাজিক অবস্থাটা এভাবে তৈরি করতে পারিনি যে অভিনেতারা দায়িত্বশীল হতে পারেন। তাই সেই সময় অভিনয় থেকে দূরত্ব তৈরি হয়।

এই অন্য পেশায় যাওয়ার কী কারণ?

আমরা আমাদের চারপাশে দেশের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোকে পেয়েছি। যাঁরা নাটক লেখেন, অভিনয় করেন, ক্যামেরা চালান, বিভিন্ন ক্ষেত্রের কলাকুশলী যাঁরা আছেন, তাঁদের নিবেদনটাও দেখেছি ভালো কাজ করবার। ফলে আমরা সময়ের সবচেয়ে ভালো নাটকগুলোতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। এরপর অনেকগুলো টেলিভিশন হলো। যেখানে ১০ জন প্রতিভাবান প্রডিউসার নাটক বানাতেন, হঠাৎ করে ১০০ জন নির্মাতা, লেখক এসে গেলেন। আগে যেখানে মাসে বা দুই মাসে একটি নাটকে অভিনয় করা যেত, এখন এক মাসেই ১০টি নাটকে অভিনয় করা যায়। কারও কারও কাছে আনন্দের জায়গা হলেও আমার আশঙ্কা জেগেছিল, এই এত ‘হওয়া’ সুখের হবে কি না শেষ পর্যন্ত। একটা সময় খেয়াল করি, অভিজ্ঞতা অতটা ভালো না। আমার যেহেতু অন্য পথ খোলা ছিল বা সুযোগ ছিল, তাই নাটক থেকে দূরে থাকতে পেরেছি। সুযোগ না থাকলে হয়তো আমি নাটকেই থাকতাম।

প্রতি ঈদে একটা সিরিজ করেন। ছোটকাকু। এবারও কি করছেন?

ছোটকাকুর বেশ কিছু গল্প করেছি। কিন্তু গোয়েন্দা গল্পগুলো একই ধাঁচের হলে মানুষের খুব বেশি আগ্রহ থাকবার কথা নয়। ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা বই থেকে এর নাট্যরূপ, নির্দেশনা, অভিনয়—সব আমার থাকত। কিন্তু একটা পর্যায়ে মনে হলো, এটি যদি লেখা, নাট্যরূপ বা নির্দেশনায় অন্য কেউ থাকেন, তাহলে হয়তো প্রযোজনাটা আরও ভালো হবে। এবার গল্পটা লেখা শুরু হয়েছে। নতুন যে গল্পটা করছি, ওটার নাট্যরূপ দিচ্ছেন অনিমেষ আইচ। ডিরেকশনও দেবে সে। শুটিং শুরু করব।

নিয়ম করে প্রতি ঈদে শিশু-কিশোরদের নিয়ে নাটক বানানোর পেছনে কোনো কারণ আছে?

এর সঙ্গে আমার একটা ভালোবাসার বিষয় আছে। আমি ঢাকা শহরে এসে প্রথমে শিশু-কিশোর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেই যুক্ত হওয়ার কারণে, আমি যে মানুষটি এসেছিলাম, তার চিন্তাভাবনাগুলো বদলায়। সে হিসেবে আমার সর্বক্ষণ মনে হয়, এই যে শিশু-কিশোরদের জন্য কিছু করতে চাওয়া, এটা একেবারেই এখন নেই। তাই এটা করা।

অনেকে বলছেন, টেলিভিশন মিডিয়া তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। আপনি কী বলেন?

আমিও বলব, হারাচ্ছে। কারণ, টেলিভিশন হয়েছে অনেক। কিন্তু টেলিভিশন কেন, সেই প্রশ্নটাই করা হয় না। ঘুরেফিরে সেই একই অনুষ্ঠান করতে হয়। যে খবর প্রচারিত হয়, সেটাও এখন মানুষের উপভোগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। খবরের মধ্যে গল্প বলা হয়, উত্তেজনার মিশেল দেওয়া হয়। এটা টেলিভিশনের ভূমিকা নয়। যে তর্ক-বিতর্ক হয় প্রতিদিন, সেটা রাজনীতি নিয়ে। কেন? মানুষের জীবনে কি রাজনীতি ছাড়া আর কোনো বিষয় নেই কথা বলার? আর সৃজনশীল অনুষ্ঠান যেটা, সে ব্যাপারেও আমার মনে হয়, একটা অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে যে বিষয়গুলো হওয়া দরকার, সেসব থাকে না। যেমন ঈদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে দর্শকদের উপলব্ধি করতে হবে যে এটা ঈদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান। আমি বলছি বিশেষ, কিন্তু দর্শক একই রকম অনুষ্ঠান দেখছে। টেলিভিশনগুলো বলছে, তাদের অনেক কিছু হিসাব-নিকাশ করতে হয়। কারণ, স্পন্সর পাওয়া যায় না। এটা খুব বিপজ্জনক কথা। কারণ, স্পন্সর পাওয়া গেলে ভালো অনুষ্ঠানের কথা ভাবা যাবে, আর পাওয়া না গেলে ভালো অনুষ্ঠান বন্ধ করা হবে। এটা যদি বলবৎ থাকে একটা দেশের গণমাধ্যমে, তাহলে বেশি ভালো অবস্থানে যাওয়ার কথা নয়।

আমাদের টেলিভিশনগুলোর কি এখন বিশেষায়িত চ্যানেল হওয়া উচিত? নাটকের জন্য, নিউজের জন্য, স্পোর্টসের জন্য, গানের জন্য আলাদা হওয়া উচিত?

আমার মনে হয়, সবার আগে আমাদের সৃজনশীল হওয়া উচিত।

আলোচিত অভিনয়শিল্পী জুটি আফজাল-সুবর্ণা। আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জনও শোনা যেত। মাঝে একসঙ্গে কিছু কাজ করলেও আগের মতো আপনাদের একসঙ্গে দেখা যায় না। আপনাদের জুটি নিয়ে কিছু বলবেন?

সুবর্ণার সঙ্গে আমার একটা স্পেশাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল; কারণ, আমরা একই দলে নাটক করতাম। সেই সময় টেলিভিশনে সেরা নাটকগুলোতে একসঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। সৌভাগ্যবশত আমাদের শুধু যোগ্যতার কারণে নয়, যেসব নাটকে অভিনয় করেছি, সে নাটকগুলো ভালো ছিল, প্রযোজক ভালো ছিলেন, আর দর্শকেরাও আমাদের একসঙ্গে দেখতে ভালোবাসতেন। সব মিলিয়ে নাটকগুলো অনেক ভালো হয়েছে। এমনও হয়েছে, স্ত্রীকে নিয়ে কোনো অনুষ্ঠানে গিয়েছি, সেখানে অনেকে বলছেন, আপনাদের অভিনয় খুব ভালো লাগে। এটা একটা দেশের দুজন অভিনয়শিল্পীর জন্য বড় অ্যাচিভমেন্ট। দর্শক ওভাবে বিষয়টা না দেখলে দুজনের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করছেন কেন এখন পর্যন্ত, যখন আমরা একসঙ্গে অভিনয় করি না। এটা একদিকে যেমন আনন্দের, তেমনি আবার কষ্টেরও। কারণ, সুবর্ণার মতো একজন অভিনয়শিল্পী; যিনি দীর্ঘকাল ধরে অসাধারণ অভিনয় করেছেন, তাঁর জন্য আলাদা কোনো চরিত্র দেখিনি।

সুযোগ হলে আবার একসঙ্গে অভিনয় করবেন আপনারা?

আমি নিজেও একসময় চাইতাম, আমি আর সুবর্ণা আর একসঙ্গে অভিনয় না করি। কারণ, আমি আর সুবর্ণা একসঙ্গে এত অসাধারণ সব নাটকে অভিনয় করেছি যে আমরা চাই না বেশি ব্যবহারে বিষয়টা নষ্ট হোক। তাই করতাম না। তবে গত ১০ বছরে আমরা আটটা-দশটা কাজ করেছি একসঙ্গে। নিজেরা একসঙ্গে অভিনয় করা তো অনেক আনন্দের ব্যাপার। সে জন্য দুজনের উপযোগী চরিত্র হতে হবে।

একসময় নিয়মিত থিয়েটার করতেন। এখন সময় পান না। খোঁজখবর রাখেন থিয়েটারে কী হচ্ছে?

নিজে করতে পারি না, তার কারণ হলো, থিয়েটার পার্টটাইম জব নয়। ওই সময়টা দেওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু দলের যখন দরকার হয়, যদি দল জানায় যে আসতে হবে, তখন হয়তো যাই। আর যেসব থিয়েটার এখন হয়, সেগুলো দেখার চেষ্টা করি। থিয়েটারের সঙ্গে আবার যেন যুক্ততাটা তৈরি হয়, সে জন্য আমরা একটা নাটক শুরু করেছিলাম। মাসুম রেজার লেখা, নাসির উদ্দীন ইউসুফ ডিরেকশন দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাটকটি নানা কারণে মঞ্চে নিয়ে আসতে পারিনি। আশা করি, শিগগির নাটকটি নিয়ে মঞ্চে আসতে পারব।

সম্প্রতি থিয়েটার অঙ্গনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা; যেমন নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হলেও অভিনয় না করার অনুরোধ, নাট্যকর্মীদের ওপর হামলা—পুরো বিষয়টা কী মনে হয় আপনার কাছে?

এখন ঘটছে, নাকি আগে ঘটেছে, না পরে ঘটবে; এটা মুখ্য নয়। যেটা অসুন্দর, সেটা চিরকালই অসুন্দর। আমি গান গাই, আপনি আমাকে বলবেন যে আমি গাইতে পারব না, এটা পৃথিবীর কোনো যুক্তিতেই সুন্দর হতে পারে না। নানা জনের নানা মত থাকতে পারে, আপনি আমাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাবেন, কিন্তু শক্তি দিয়ে রুখবেন না, এটা কখনোই সুন্দর হতে পারে না। আমার তো বয়স কম হলো না। আমার তো আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, তারপর ২০২৪ পর্যন্ত যা যা দেখার সুযোগ হয়েছে, একদিক দিয়ে মনে হয় খুব সৌভাগ্যবান। একজীবন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ২০২৪ এ আমরা কী দেখলাম! রাস্তায় যারা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে, আমরা তাদের বিশ্বাস, আদর্শ, মূল্যবোধ বুঝতে পেরেছি কি না। এই যে মা তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে পথে নেমে পড়েছেন, ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকেরা রাস্তায় নেমেছেন, জীবনে এই অসাধারণত্ব দেখবার পর, খুব সাধারণ বিষয় দেখবার মন কিন্তু আর থাকে না। এত সবকিছুর পরেও কারও ওপর হামলে পড়া, অশ্রদ্ধা করা, অপমান করা—কোনোকালেই এসব উচিত কর্ম নয়। এটা হতে পারে না। এটা মধ্যযুগীয় বিষয়, বর্বরতা।

আপনি তো ছবি আঁকেন। নিয়মিত সময় দেন ছবি আঁকাতে?

আমি এখন ছবিই আঁকি। নিয়মিতই ছবি আঁকি।

ফেসবুকে আপনার সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস দেখি। ড্রইং দেখি। কোনো এক্সিবিশন কি আমরা দেখতে পাব?

ফেসবুকে যে স্ট্যাটাসগুলো দিই, সেগুলো আমার লিখতে ভালো লাগে, নিজের মনের ভেতর যেসব বিষয় খেলা করে, সেগুলো লিখলাম, কিছু মানুষ পড়ল। সেই পড়াটা আমার মনে হয় এনাফ। সেটা দশজন মানুষ পড়ুক বা দশ হাজার জন পড়ুক।

বিজ্ঞাপনের কোনো কাজ করছেন?

না। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক কাজ হয়। এখন আমি নিজে করি না অতটা।

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বলবেন? আপনার পরিবার?

আমরা দুই ভাই, এক বোন। ভাইয়ের নাম আলফাজ হোসেন। ও আমার চেয়ে বছর চারেকের ছোট। একমাত্র বোন আমার চেয়ে বিশ বছরের ছোট। আমরা মূলত গ্রামের। আমার গ্রামটার নাম হচ্ছে পারুলিয়া। সাতক্ষীরা জেলায়। বাবা চিকিৎসক ছিলেন। আমি প্রথম ঢাকা শহরে আসি পড়াশোনা করার জন্য। তারপর ছোট ভাইটা আসে, তারপর বোনটা। তারপর আমাদের আলাদা আলাদা সংসার হয়। আমি বিয়ে করি। আব্বা মারা গেলে মাকে আমরা নিয়ে আসি। বোনটা বিয়ের পর বাইরে চলে যায়। আমার দুটো ছেলে, আমার ভাইয়ের দুটো মেয়ে, আমার বোনের দুটো মেয়ে। মা বলেছিলেন, যা-ই হোক, তোরা কাছাকাছি থাকবি, একসাথে থাকবি। আমরা কাছাকাছি থাকি, আলাদা হলেও পাশাপাশি থাকি।

ছেলেরা কেউ কি অভিনয়ে এসেছেন?

ওরা কেউ অভিনয় করে না। বড় ছেলেটি ফিল্মমেকিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছে। ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে মাস্টার্স করেছে। ও এখন পড়ায় একটা ইউনিভার্সিটিতে, আমেরিকায় থাকে। আমরা বলি মেয়ে, মানে ওর বউ, সে ওখানে পড়াশোনা করছে। একসঙ্গেই আছে ওরা। ছোট ছেলেটি আমাদের সঙ্গেই আছে। এরা প্রত্যেকেই খুব ভালো ছবি আঁকত। এখন আঁকে না। অনেক পরে জানতে পারি, ছোট ছেলেটা অভিনয়সম্পর্কিত একটা কাজও করে। এখন তো ইন্টারনেটে পৃথিবীব্যাপী ওদের বন্ধুত্ব আছে। এরা ফিল্ম বানায় এবং সেই ফিল্মে সে ভয়েস দেয়। ভয়েস আর্টিস্ট।

আপনার স্ত্রী তো ফ্যাশন ডিজাইনার?

আমার স্ত্রী ফ্যাশন ডিজাইনিং করত। তারপর সংসারে এত ব্যস্ত হয়ে গেল যে এখন অন্য কিছু করে না। ইদানীং আবার ভাবছে, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ফিরবে।

আপনার তো নানা দিকে ব্যস্ত থাকতে হয়। আপনি কীভাবে তাঁকে সময় দেন, আর উনি কীভাবে আপনাকে মেইনটেইন করেন?

শি ইজ আ পাওয়ারহাউস। তার শক্তিটাই আসল। আমাদের প্রায় ৩৪ বছর হয়েছে বিয়ের। আমি যা যা করি বা করতে চাই, সেগুলো করতে চেয়ে সংসার করা খুবই ডিফিকাল্ট। ও আমাকে সেই সুযোগটা দিয়েছে। এমন কিছুতে যুক্ত করতে চায়নি, যেটাতে আমার মনোযোগ অন্যদিকে যায়। একটা সময় যখন আমার পেশাটা তৈরি হচ্ছে, আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম। খুব কম সময় ঘুমাতাম। রাতদিন পরিশ্রম করতে হতো। ওই সময়টা ও সামাল দিতে পেরেছে, এটাই মূল কারণ যে আমরা এত দিন হ্যাপি আছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাজাখস্তানে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানালেন নিশো

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৩
আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত
আফরান নিশো। ছবি: সংগৃহীত

৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্‌যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।

কাজাখস্তানে শুটিং শেষ হয়েছে ৬ ডিসেম্বর। দেশে ফিরেই ভক্তদের আমন্ত্রণে নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হন নিশো। এদিন তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দম সিনেমার পরিচালক রেদওয়ান রনি ও নায়িকা পূজা চেরি। স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে দম সিনেমার প্রসঙ্গ। নির্মাতা জানালেন, কতটা কঠিন পরিস্থিতির মাঝে শুটিং করেছেন তাঁরা। একদিন পাহাড়ে শুটিং করতে গিয়ে হাত কেটে যায় নিশোর। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, শুটিং হয়েছে দুর্গম এলাকায়। তবু থেমে যাননি নিশো, আহত অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং চালিয়ে গেছেন।

দম সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে নিশো বলেন, ‘আমরা সবাই চাই গল্প, চাই পারফরম্যান্স। দম সিনেমার মতো একটি গল্পের দায়িত্ব আমার কাঁধে, এটা আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। এটা যদি ঠিকমতো পালন করতে না পারি, তাহলে কীভাবে হবে? আমি জানি, একজন সিনিয়র হিসেবে টিমের স্পিড অনেকটাই আমার ওপর নির্ভর করে। তখন এই হাত কাটা, পা কাটা, সেখানে মেডিকেল সাপোর্ট এল কি এল না, এসব কোনো বিষয় না। এ ছাড়া আমাদের খুব টাইট শিডিউল ছিল। সেখানে ১০ মিনিটের একটা বিরতি মানে শিডিউল ফেল করা। আমি দাবি নিয়ে বলতে পারি, এই সিনেমায় টিমের সবাই যতটা কষ্ট নিয়ে কাজ করেছে, এত কষ্ট কোনো প্রোডাকশনে করতে হয়নি। অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল সেখানে।’

নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজাখস্তানের শুটিং শেষ করেছে দম টিম। নিশো বলেন, ‘বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বটা বেড়ে যায়। এখানে নিজেকে শুধু অভিনেতা হিসেবে ভাবিনি। ভেবেছি, আমিও নির্মাতার একটি অংশ। আমরা যে ওয়েদারে কাজ করেছি, সেখানে ২টার সময় সূর্যের আলো থাকে না। আমরা কখনোই ভাবি নাই, সানলাইট ২টার সময় চলে যায়। এত জটিলতার পরেও আমরা এক দিনও বেশি শুটিং করি নাই। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করেছি। সিনেমাসংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা আমাদের কথা রেখেছি।’

দম সিনেমার গল্প নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে চান না এই অভিনেতা। শুধু জানালেন, বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের গল্প নিয়ে আগে কাজ হয়নি। তিনি আশা করেন, গল্পটি সবাই উপভোগ করবে এবং সিনেমাটি দেখার পর সবাই গর্ব করবে যে এটি বাংলাদেশের সিনেমা।

কাজাখস্তানে শুটিং শেষে এবার দমের শুটিং হবে দেশে। কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার লাইট, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন অভিনয়শিল্পীরা। নিশো, পূজা চেরির সঙ্গে এতে আরও অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী। আগামী বছর রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে দম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চান হামিন আহমেদ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
হামিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
হামিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন আহমেদ। শুধু তা-ই নয়, সংগীত ও সংস্কৃতি নিয়ে ইতিবাচক পরিকল্পনা না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট না দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল ফেসবুকে হামিন আহমেদ লেখেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কিছুদিন পরেই। সংগীতস্রষ্টা, শিল্পী এবং সংগীতপ্রেমীরা জানতে চান—ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য আপনার সাংস্কৃতিক ও সংগীতভিত্তিক ইশতেহার কী? বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল সংগীত নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। অন্য সবকিছু নিয়ে করেছে, কিন্তু সংগীত নিয়ে নয়! আমরা জানতে চাই (সংগীত নিয়ে পরিকল্পনা)।’

আরও একটি পোস্টে হামিন তুলে ধরেন বাংলাদেশে গান শোনা মানুষের পরিসংখ্যান। সেখানে হামিন লেখেন, ‘২০২৫ সালে বাংলাদেশে রেডিও, পডকাস্ট ও অন্যান্য মাধ্যমে গান শোনা লোকের সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় ২৮.৪০ শতাংশ। এআই বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫১.৯১ মিলিয়নে পৌঁছাবে; যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ যদি বলে, বাংলাদেশে সংগীতের বিরোধিতাকারী দল/প্রার্থীদের ভোট দেব না, তাহলে কী হবে বলে আপনার মনে হয়? এই ক্ষমতা উপলব্ধি করুন।’

বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতির দায়িত্বে থাকা হামিন আহমেদের এই পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের অনেক সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, ব্যান্ড সদস্য ও সংগীতপ্রেমীরা পোস্টটি শেয়ার করে নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা হয় হামিন আহমেদের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে অনেক দিন ধরে সহশিল্পীদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমরা খেয়াল করলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সবকিছু আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হলেও মিউজিক বা আর্ট কালচার নিয়ে কখনোই কিছু বলা হয় না। অথচ এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হয় না। কেন মিউজিশিয়ানরাই বারবার সাফার করবে। এক পক্ষ বলবে বন্ধ করে দেব, আরেক পক্ষ বলবে চালু রাখব। তারা কী চাইছে, সেটা স্পষ্ট করা দরকার। সবাই তো মিউজিশিয়ানদের কাছেও ভোট চাইবে। বাংলাদেশে ২ থেকে ৩ কোটি মানুষ গান গাওয়া ও শোনার সঙ্গে জড়িত। কেউ যদি মিউজিক বন্ধ করে দিতে চায়, তাকে তো এই মানুষগুলো ভোট দেবে না। কারণ, কারও পক্ষ থেকে মিউজিক নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।’

হামিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের যে সময়, সেটা যেকোনো সময়ের চেয়ে দুর্যোগপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও চক্রান্তমূলক। বিভিন্ন শো ক্যানসেল হচ্ছে, আবার শোনা যাচ্ছে, গান-বাজনা বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না। আমরা জানতে চাই, যে দলগুলো নির্বাচনে যাচ্ছে, আমাদের জন্য তাদের স্ট্র্যাটেজি কী? আর্ট কালচার নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা কী? সংস্কৃতি কীভাবে এগোবে, এই বিষয়ে কী ভাবছে তারা? এখনো এ বিষয়ে ঘোষণা আসেনি কোনো দলের পক্ষ থেকে। আমরা সেটাই স্পষ্ট জানতে চাইছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিজয়ের মাসে সুমীর চার গান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সুমী শারমীন,সাব্বির জামান ও প্রিয়াঙ্কা গোপ। ছবি: সংগৃহীত
সুমী শারমীন,সাব্বির জামান ও প্রিয়াঙ্কা গোপ। ছবি: সংগৃহীত

বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।

সুমী গেয়েছেন ‘রোদ্দুর কোলাহল’ ও ‘কোনো এক বিকেলে’ শিরোনামের দুটি গান। রোদ্দুর কোলাহল গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক। কোনো এক বিকেলের সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন সাব্বির জামান। অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কা গোপ গেয়েছেন ‘বিজয় রাঙানো সুখ’ শিরোনামের গান। এটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক; সাব্বির জামান গেয়েছেন নিজের সুর ও সংগীতায়োজনে ‘ভালোবাসি তোমায়’ শিরোনামের গান। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন লোকেশনে গানগুলোর মিউজিক ভিডিওর শুটিং হয়েছে।

গানগুলো নিয়ে সুমী শারমীন বলেন, ‘প্রতিটি গানেই জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। গানগুলো নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। চারটি গানেরই সুর শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যাবে—এতটুকু আমি নিশ্চিত বলতে পারি।’

প্রিয়াঙ্কা গোপ বলেন, ‘বিজয় রাঙানো সুখ গানটির কথা যেমন চমৎকার, গানের সুরও সহজ-সরল। সাধারণত এই ধরনের গান আমার গাওয়া হয় না। কিন্তু এই গান গেয়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।’

সাব্বির জামান বলেন, ‘সুমী আপার গানের কথাগুলো সাবলীল ও গভীরতায় পূর্ণ। তাঁর লেখনীর গুণেই সুর করাটা সহজ হয়ে যায়। এই গানগুলোর সুর সত্যিই মনে গেঁথে যাওয়ার মতো।’

প্রিয়াঙ্কা গোপের গাওয়া গানটি প্রকাশিত হবে এনিগমা টিভি ইউটিউব চ্যানেলে এবং সাব্বিরের গানটি আলফা আই ইউটিউব চ্যানেলে। সুমী শারমীনের গাওয়া গান দুটিও প্রকাশিত হবে ইউটিউবে, চ্যানেলের নাম শিগগির শ্রোতাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে আপত্তি কেট উইন্সলেটের

বিনোদন ডেস্ক
কেট উইন্সলেট। ছবি: সংগৃহীত
কেট উইন্সলেট। ছবি: সংগৃহীত

সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য নিজেদের নিখুঁত দেখানোর প্রতি মগ্ন হয়ে পড়েছে। এটা আমাকে খুব বিরক্ত করে।’

শুধু প্লাস্টিক সার্জারি নয়, ওজন কমানোর জন্য অনেকে নানা রকম ওষুধ সেবন করেন। এটি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে কেট উইন্সলেট বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে, তার আত্মসম্মান নির্ধারিত হবে শুধুই তার চেহারা দিয়ে, তাহলে সেটা ভয়ানক। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খাচ্ছে। বোটক্স ও ফিলারের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করছে। এসব তাদের কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে। নিজেদের শরীর ও চেহারা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কিন্তু আসলে এসব ওষুধ যে তাদের কতটা ক্ষতি করছে, সে ব্যাপারে তারা সচেতন নয়। নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি প্রচণ্ড অবহেলা করছে তারা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে।’

কেট উইন্সলেট জানান, বার্ধক্য রোধের জন্য তিনি কখনো এসব উপায় অবলম্বনের চিন্তাও করেননি। অভিনেত্রী জানান, শুধু তিনি নন, হেলেন মিরেন, টনি কোলেট, আন্দ্রেয়া রাইজবোরো, সিগর্নি ওয়েভার—সবাই হলিউডের প্লাস্টিক সার্জারির প্রবণতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। কেট উইন্সলেট বলেন, ‘যখন হাতে-মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যায়, সেটা দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। এটাই তো জীবন। বয়স অনুযায়ী চেহারা বদলায়। আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরী নারী যারা, তাদের অনেকের বয়স ৭০ বছরের বেশি। এখনকার অনেক নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই, এটা আমাকে হতাশ করে।’

কৃত্রিমতায় কোনো সৌন্দর্য নেই, নকলের আশ্রয় না নিয়ে সব সময় যেটা বাস্তব, সেটাই প্রকাশ করতে হবে—নতুন অভিনেত্রীদের প্রতি এটাই পরামর্শ কেট উইন্সলেটের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত