আশিকুর রিমেল

তিব্বতি ও লাদাখি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সামসারা’। বাংলায় ‘সংসার’। গৌতম বুদ্ধের দর্শন, শিক্ষা ও আলোকায়নের পথ চিত্রিত হয়েছে এই সিনেমায়। ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটি ২০০১ সালে মুক্তি পায়। নলিন কুমার পাণ্ডে নির্মিত এই স্বাধীন চলচ্চিত্রটিতে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর আলোকায়নের গল্প উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
গল্পটি বলার আগে গৌতম বুদ্ধের জীবনী থেকে কিছু বিষয় বিশেষভাবে বলে নেওয়া প্রয়োজন। যে বিষয়গুলোকে এই সিনেমায় গৌতম বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে—
সিদ্ধার্থ গৌতম শাক্য প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রধান ক্ষত্রিয় বংশের শুদ্ধোধনের পুত্র। ষোলো বছর বয়সে সিদ্ধার্থ গৌতমের সঙ্গে কোলীয় গণের সুন্দরী কন্যা যশোধরার বিয়ে হয়। তাঁদের রাহুল নামের এক পুত্রসন্তান হয়। সিদ্ধার্থ তাঁর জীবনের প্রথম ২৯ বছর রাজপুত্র হিসেবে অতিবাহিত করেছেন।
বৌদ্ধ পুথিগুলো অনুসারে, সিদ্ধার্থের বাবা শুদ্ধোধন, সিদ্ধার্থের জীবনে বিলাসিতার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও তিনি বস্তুগত ঐশ্বর্য থেকে উদাসীন ছিলেন। ভোগের আনন্দ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেছেন। ঐশ্বর্য যে জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না, তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলেন ওই বয়স থেকেই। একদিন রাতে স্ত্রী যশোধরা ও সন্তান রাহুলকে ঘুমের মধ্যে রেখে গৃহত্যাগী হন। এই বিশ্বসংসারে মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য সন্ন্যাস নেন। অতঃপর তিনি বোধিপ্রাপ্ত হন।
গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে এই প্রাথমিক তথ্যটুকু জানা থাকলে সিনেমাটির গল্পের সঙ্গে মেলাতে খানিকটা সুবিধা হবে।
সিনেমার শেষাংশে গল্পের প্রধান নারী চরিত্র পুরুষ চরিত্রকে এমন কিছু প্রশ্নের ও ভাবনার মুখোমুখি দাঁড় করান, যা একজন দর্শক ও শ্রোতাকে জীবন নিয়ে ভয়ানক দ্বান্দ্বিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেবে।
যশোধরা! একজন নারী! যার বিয়ে হয়েছিল রাজপুত্র সিদ্ধার্থের সঙ্গে, গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে নয়। যাকে তিনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছেন। অথচ সিদ্ধার্থ রাতের আঁধারে তাঁকে এবং তাঁর সন্তান রাহুলকে রেখে চলে গেলেন। যশোধরাকে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। অথচ গৌতম যখন বুঝতেন না দুঃখ কী, তখন থেকেই যশোধরা জীর্ণ, রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা করে এসেছেন। সিদ্ধার্থ সেটি দেখেছেন কাছ থেকে। সেটি দেখতে গিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি। বৈরাগ্য পেয়ে বসেছে তাঁর। বোধিপ্রাপ্তির পর জীবনকে স্বপ্নের মতো এক মোহমায়া বলেই বর্ণনা করেছেন। নির্বাণ প্রাপ্তিতেই মুক্তি খুঁজেছেন।
সিনেমার প্রধান চরিত্র তাশি এমনই। পাঁচ বছর বয়সে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে তাঁর দীক্ষা শুরু হয়। ২০ বছর বয়সে ধ্যান শুরু করেন। ৩ বছর ৩ মাস ৩ সপ্তাহ ৩ দিন অনাহারে ধ্যানমগ্ন থাকেন। এর পর তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় আশ্রমে। দীর্ঘদিন তপস্যায় বোধিপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে ভিক্ষু প্রধান তাশিকে ‘লামা’ খেতাব দেন। তিনি হয়ে ওঠেন ‘লামা তাশি’।
মানুষ তো অন্তর্যামী নয়। তাই প্রথম দিকে কেউ জানতেও পারেননি লামা তাশি এই তপস্যা থেকে তার জৈবিক আকাঙ্ক্ষামুক্ত হতে পারেননি। তাঁর মধ্যে এখনো নারী প্রেম, কাম, রীতিমতো বলবৎ। এমনকি তাশি নিজেও তখনো নিজের শরীর সম্পর্কে অতটা সচেতন হয়ে ওঠেনি।
বায়ু পরিবর্তনের জন্য লামা তাশিকে নিয়ে যাওয়া হয় লোকালয়ে। ভিক্ষুদের সেবক একটি পরিবারে তাঁদের আপ্যায়ন ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে গিয়েই প্রথম ‘পেমা’ নামের এক নারীর চোখে, ঠোঁটে চোখ পড়ে তাঁর। প্রথম কামভাব জাগে তাঁর। আশ্রমে ফিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন লামা তাশি। স্বপ্নদোষ নিয়ে লজ্জিত বিব্রত তাশিকে দলপ্রধান প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য পাঠান এক মৌনব্রত সাধকের কাছে। যিনি তাঁর হাতে একটি বাণী তুলে দেন। যেখানে লেখা থাকে, ‘তোমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছুই তোমাকে কিছু না কিছু শেখায়।’
এর পরই তাশি শিশুকাল থেকে শেখা আপ্তবাক্যগুলোকে প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই ভেতরে জমে থাকা প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো বস্তুর, স্বাদ, অভিজ্ঞতা ছাড়া কেন তিনি সেসব থেকে দূরে থাকার চর্চা করবেন? আশ্রমের প্রধান ভিক্ষুকে তিনি জানিয়ে দেন, তিনি কোন মোহ থেকে দূরে থাকবেন, যেই মোহে তিনি ছিলেনই না? যার স্বাদ তিনি পাননি কখনো?
নিজের অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রমাণে তাশি গৌতম বুদ্ধেই আশ্রয় নেন। বলেন, গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, কোনো কিছু প্রকৃত বোধ পেতে হলে তার স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ করেন, গৌতম বুদ্ধের বোধিপ্রাপ্ত হওয়ার আগের ২৯ বছর ঘর, সংসার, স্ত্রী, সন্তান—সবকিছুর স্বাদ গ্রহণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার কথা।
যেসব বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, সেসবের ওপর আর বিশ্বাস গড়তে পারছিলেন না তাশি। মনে সংশয় দানা বাঁধতে থাকে। দলপ্রধান ভিক্ষু একটি বাক্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার তাশির ওপরেই ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘তুমি যে স্বপ্নটা দেখ, সেটা সত্য ছিল।’
সে রাতেই লামা তাশি সাধারণ মানুষ হিসেবে জাগতিক সংসার জীবনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। এত বছরের যাপিত জীবনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। অতঃপর লামা তাশি গেরুয়া পোশাক ছেড়ে পেমার প্রতি প্রেম, জৈবিক টানে ছুটে যান। সাধারণ পোশাক নিয়ে ছদ্মবেশে পেমাদের গ্রামে চলে যান। জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাশির।
তাশি বেছে নেন সংসার জীবন। বিয়ে হয় পেমার সঙ্গে। পেমার বাবা অবস্থাপন্ন কৃষক। বছরে তিন মাস প্রচণ্ড শীতের বাইরে বাকি সময়টা কৃষিকাজ করে দিন কাটতে থাকে তাঁদের। তাঁদের কোলজুড়ে আসে একটা ছেলে সন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় ‘কর্ম’। খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ নাম। পুরোদস্তুর সংসারে ডুবে থাকেন তাশি ও পেমা। স্বপ্নের মতোই যেন এক সুখের জীবন পেয়ে যান তাশি।
এ সময় আসে গল্পের আরেক মোড়। আবির্ভাব ঘটে ‘সেঁজুতি’ নামের এক ভারতীয় নারীর। আঠারো পেরিয়ে ১৯-এ পা দিয়েছেন সেঁজুতি। কাজ করেন তাঁদেরই কৃষি জমিতে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার ফলে সেঁজুতি ও পেমার মধ্যে সখ্যও অনেক বেশি। প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি এই তরুণী ও তাশি একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে শুরু করে। একদিন পেমার অবর্তমানে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পেমা বিষয়টি আঁচ করতে পারেন এবং তাশির সঙ্গে তাঁর মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। সেই সঙ্গে গল্পের ঘটনাচক্রে দেখানো হয় চারপাশে মানুষের মধ্যে থাকা লোভ, অহংকার, হিংসা, ক্রোধ, উচ্চাকাঙ্ক্ষার ক্লেদ। বিশেষ করে স্বামী অন্তপ্রাণ স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা তাঁর মর্মপীড়া চরমে তোলে। সংসার যন্ত্রণার হয়ে উঠতে থাকে তাশির কাছে। তাশি এই যন্ত্রণার কথা কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারেন না। ফলে দিনে দিনে নিজের মধ্যে গুটিয়ে পড়েন তাশি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সন্ন্যাস ছেড়ে সংসার বেছে নিয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্তেই। সন্ন্যাস ছেড়ে পেমাকে আশ্রয় করে সংসার গড়েছিলেন। সেই সত্য স্বপ্নের পিঠে ছুরি মেরেছেন তাশি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে সংসারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
তাশি সিদ্ধান্ত নেন সন্ন্যাস নেবেন। গৌতমের মতোই তাশি বেরিয়ে পড়েন স্ত্রী-পুত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে। গভীর রাতে। আবার নেন সেই গেরুয়া বেশ। পথে সূর্যের আলো ফুটেছে। হঠাৎ চমকে গিয়ে থমকে দাঁড়ান তাশি।
গল্পের এই পর্যায়ে এসে তাশি এমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হন, এমন কিছু ভাবনার মুখোমুখি হন, যেখানে তাঁর সত্তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন না তাশি। অসহায়ের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ডুকরে কাঁদতে থাকেন। দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাঁর সমস্ত কর্ম, কাম। ধুলোয় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকেন। যেন ধুলোয় মিশে গেছে তাঁর সব।
চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরেক প্রতিবিম্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা, যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জানা নেই।
সিনেমার শুরুতে ইগলের পা থেকে পড়া এক পাথরের আঘাতে মারা যায় জোয়ান টগবগে এক ভেড়া। সিনেমার শেষের অংশে পেমা একটি বাক্স ফেলে চলে যান। বলা ভালো, হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যান, স্বপ্নের মতোই। দারুণ আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে যে স্বপ্ন এতদিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন তাশি। এই বাক্স সাধারণত নিরাপদ যাত্রার আশীর্বাদ হিসেবে দেওয়ার রেওয়াজ। এ থেকে বলা যায়, এখান থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তাশির এক দীর্ঘ যাত্রা। সেই যাত্রা গ্রামের দিকে নাকি মৃত্যুর দিকে তা স্পষ্ট নয়।
পেমা বাক্সটি ফেলে দেওয়ার পরে অদৃশ্য হয়ে যান। এটিকে বৌদ্ধ বিশ্বাসের একটি প্রতীকী উপস্থাপন ধরে নেওয়া যায় যে, সমস্ত জীবন একটি স্বপ্নের মতো। পেমার সঙ্গে প্রথম মিলনকে তাশি স্বপ্নই ভেবেছিলেন। পেমার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তাশিকে বুঝিয়ে দেয়, এ জীবন মায়া। এই মায়ার ফাঁদজালে তড়পাতে থাকেন তাশি। তখনই তিনি পাথরের কাছে যান এবং তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর পড়েন। তখন মেঘের ফাঁকে দেখা মেলে সেই ইগলের। একটি তত্ত্ব হতে পারে যে, ইগলটি আবার পা থেকে একটি পাথর ছেড়ে দেয়। তাশি মারা যান সেই ভেড়ার মতোই। এই মৃত্যুই তাঁকে সমুদ্রের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে দেয়। এটিই বুদ্ধের আলোকায়ন!
সিনেমার বেশ কয়েকটি তীব্র কামোত্তেজক দৃশ্যে কেউ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে একটি চলচ্চিত্রের জন্য এটি সম্পূর্ণ উপযুক্তই বলা যেতে পারে। যেখানে বৌদ্ধধর্ম এমন একটি দর্শন, যা যৌনতার আনন্দকে নিন্দা করে না। এটি ভারতে শুট করা একটি চলচ্চিত্রের জন্যও বিশেষভাবে উপযুক্ত, যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম এবং হিন্দুধর্ম (যে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কামসূত্র) বহু শতাব্দী ধরে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে।
সিনেমার শেষ অংশটিও বলছে: নায়কের স্ত্রী, পেমা, বুদ্ধের স্ত্রী যেন যশোধরাকেই আহ্বান করছেন। যদিও সহস্রাব্দ ধরে বিশ্ব বুদ্ধের দুর্দশা এবং দ্বিধাকেই কেবল চর্চা করেছে। যশোধরার কথা কেউ কখনো চিন্তা করে না, যিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামীর খেয়ালের জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন।
অভিনয় দুর্দান্ত। ক্রিস্টি চুং (পেমা) প্রত্যাশিত পারফরমেন্সই করেছেন। শেষ দৃশ্যটি শ্বাসরুদ্ধকর। দেখার জন্য সম্ভবত এই দৃশ্যটিই যথেষ্ট!

তিব্বতি ও লাদাখি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সামসারা’। বাংলায় ‘সংসার’। গৌতম বুদ্ধের দর্শন, শিক্ষা ও আলোকায়নের পথ চিত্রিত হয়েছে এই সিনেমায়। ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটি ২০০১ সালে মুক্তি পায়। নলিন কুমার পাণ্ডে নির্মিত এই স্বাধীন চলচ্চিত্রটিতে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর আলোকায়নের গল্প উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
গল্পটি বলার আগে গৌতম বুদ্ধের জীবনী থেকে কিছু বিষয় বিশেষভাবে বলে নেওয়া প্রয়োজন। যে বিষয়গুলোকে এই সিনেমায় গৌতম বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে—
সিদ্ধার্থ গৌতম শাক্য প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রধান ক্ষত্রিয় বংশের শুদ্ধোধনের পুত্র। ষোলো বছর বয়সে সিদ্ধার্থ গৌতমের সঙ্গে কোলীয় গণের সুন্দরী কন্যা যশোধরার বিয়ে হয়। তাঁদের রাহুল নামের এক পুত্রসন্তান হয়। সিদ্ধার্থ তাঁর জীবনের প্রথম ২৯ বছর রাজপুত্র হিসেবে অতিবাহিত করেছেন।
বৌদ্ধ পুথিগুলো অনুসারে, সিদ্ধার্থের বাবা শুদ্ধোধন, সিদ্ধার্থের জীবনে বিলাসিতার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও তিনি বস্তুগত ঐশ্বর্য থেকে উদাসীন ছিলেন। ভোগের আনন্দ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেছেন। ঐশ্বর্য যে জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না, তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলেন ওই বয়স থেকেই। একদিন রাতে স্ত্রী যশোধরা ও সন্তান রাহুলকে ঘুমের মধ্যে রেখে গৃহত্যাগী হন। এই বিশ্বসংসারে মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য সন্ন্যাস নেন। অতঃপর তিনি বোধিপ্রাপ্ত হন।
গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে এই প্রাথমিক তথ্যটুকু জানা থাকলে সিনেমাটির গল্পের সঙ্গে মেলাতে খানিকটা সুবিধা হবে।
সিনেমার শেষাংশে গল্পের প্রধান নারী চরিত্র পুরুষ চরিত্রকে এমন কিছু প্রশ্নের ও ভাবনার মুখোমুখি দাঁড় করান, যা একজন দর্শক ও শ্রোতাকে জীবন নিয়ে ভয়ানক দ্বান্দ্বিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেবে।
যশোধরা! একজন নারী! যার বিয়ে হয়েছিল রাজপুত্র সিদ্ধার্থের সঙ্গে, গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে নয়। যাকে তিনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছেন। অথচ সিদ্ধার্থ রাতের আঁধারে তাঁকে এবং তাঁর সন্তান রাহুলকে রেখে চলে গেলেন। যশোধরাকে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। অথচ গৌতম যখন বুঝতেন না দুঃখ কী, তখন থেকেই যশোধরা জীর্ণ, রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা করে এসেছেন। সিদ্ধার্থ সেটি দেখেছেন কাছ থেকে। সেটি দেখতে গিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি। বৈরাগ্য পেয়ে বসেছে তাঁর। বোধিপ্রাপ্তির পর জীবনকে স্বপ্নের মতো এক মোহমায়া বলেই বর্ণনা করেছেন। নির্বাণ প্রাপ্তিতেই মুক্তি খুঁজেছেন।
সিনেমার প্রধান চরিত্র তাশি এমনই। পাঁচ বছর বয়সে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে তাঁর দীক্ষা শুরু হয়। ২০ বছর বয়সে ধ্যান শুরু করেন। ৩ বছর ৩ মাস ৩ সপ্তাহ ৩ দিন অনাহারে ধ্যানমগ্ন থাকেন। এর পর তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় আশ্রমে। দীর্ঘদিন তপস্যায় বোধিপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে ভিক্ষু প্রধান তাশিকে ‘লামা’ খেতাব দেন। তিনি হয়ে ওঠেন ‘লামা তাশি’।
মানুষ তো অন্তর্যামী নয়। তাই প্রথম দিকে কেউ জানতেও পারেননি লামা তাশি এই তপস্যা থেকে তার জৈবিক আকাঙ্ক্ষামুক্ত হতে পারেননি। তাঁর মধ্যে এখনো নারী প্রেম, কাম, রীতিমতো বলবৎ। এমনকি তাশি নিজেও তখনো নিজের শরীর সম্পর্কে অতটা সচেতন হয়ে ওঠেনি।
বায়ু পরিবর্তনের জন্য লামা তাশিকে নিয়ে যাওয়া হয় লোকালয়ে। ভিক্ষুদের সেবক একটি পরিবারে তাঁদের আপ্যায়ন ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে গিয়েই প্রথম ‘পেমা’ নামের এক নারীর চোখে, ঠোঁটে চোখ পড়ে তাঁর। প্রথম কামভাব জাগে তাঁর। আশ্রমে ফিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন লামা তাশি। স্বপ্নদোষ নিয়ে লজ্জিত বিব্রত তাশিকে দলপ্রধান প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য পাঠান এক মৌনব্রত সাধকের কাছে। যিনি তাঁর হাতে একটি বাণী তুলে দেন। যেখানে লেখা থাকে, ‘তোমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছুই তোমাকে কিছু না কিছু শেখায়।’
এর পরই তাশি শিশুকাল থেকে শেখা আপ্তবাক্যগুলোকে প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই ভেতরে জমে থাকা প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো বস্তুর, স্বাদ, অভিজ্ঞতা ছাড়া কেন তিনি সেসব থেকে দূরে থাকার চর্চা করবেন? আশ্রমের প্রধান ভিক্ষুকে তিনি জানিয়ে দেন, তিনি কোন মোহ থেকে দূরে থাকবেন, যেই মোহে তিনি ছিলেনই না? যার স্বাদ তিনি পাননি কখনো?
নিজের অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রমাণে তাশি গৌতম বুদ্ধেই আশ্রয় নেন। বলেন, গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, কোনো কিছু প্রকৃত বোধ পেতে হলে তার স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ করেন, গৌতম বুদ্ধের বোধিপ্রাপ্ত হওয়ার আগের ২৯ বছর ঘর, সংসার, স্ত্রী, সন্তান—সবকিছুর স্বাদ গ্রহণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার কথা।
যেসব বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, সেসবের ওপর আর বিশ্বাস গড়তে পারছিলেন না তাশি। মনে সংশয় দানা বাঁধতে থাকে। দলপ্রধান ভিক্ষু একটি বাক্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার তাশির ওপরেই ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘তুমি যে স্বপ্নটা দেখ, সেটা সত্য ছিল।’
সে রাতেই লামা তাশি সাধারণ মানুষ হিসেবে জাগতিক সংসার জীবনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। এত বছরের যাপিত জীবনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। অতঃপর লামা তাশি গেরুয়া পোশাক ছেড়ে পেমার প্রতি প্রেম, জৈবিক টানে ছুটে যান। সাধারণ পোশাক নিয়ে ছদ্মবেশে পেমাদের গ্রামে চলে যান। জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাশির।
তাশি বেছে নেন সংসার জীবন। বিয়ে হয় পেমার সঙ্গে। পেমার বাবা অবস্থাপন্ন কৃষক। বছরে তিন মাস প্রচণ্ড শীতের বাইরে বাকি সময়টা কৃষিকাজ করে দিন কাটতে থাকে তাঁদের। তাঁদের কোলজুড়ে আসে একটা ছেলে সন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় ‘কর্ম’। খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ নাম। পুরোদস্তুর সংসারে ডুবে থাকেন তাশি ও পেমা। স্বপ্নের মতোই যেন এক সুখের জীবন পেয়ে যান তাশি।
এ সময় আসে গল্পের আরেক মোড়। আবির্ভাব ঘটে ‘সেঁজুতি’ নামের এক ভারতীয় নারীর। আঠারো পেরিয়ে ১৯-এ পা দিয়েছেন সেঁজুতি। কাজ করেন তাঁদেরই কৃষি জমিতে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার ফলে সেঁজুতি ও পেমার মধ্যে সখ্যও অনেক বেশি। প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি এই তরুণী ও তাশি একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে শুরু করে। একদিন পেমার অবর্তমানে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পেমা বিষয়টি আঁচ করতে পারেন এবং তাশির সঙ্গে তাঁর মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। সেই সঙ্গে গল্পের ঘটনাচক্রে দেখানো হয় চারপাশে মানুষের মধ্যে থাকা লোভ, অহংকার, হিংসা, ক্রোধ, উচ্চাকাঙ্ক্ষার ক্লেদ। বিশেষ করে স্বামী অন্তপ্রাণ স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা তাঁর মর্মপীড়া চরমে তোলে। সংসার যন্ত্রণার হয়ে উঠতে থাকে তাশির কাছে। তাশি এই যন্ত্রণার কথা কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারেন না। ফলে দিনে দিনে নিজের মধ্যে গুটিয়ে পড়েন তাশি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সন্ন্যাস ছেড়ে সংসার বেছে নিয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্তেই। সন্ন্যাস ছেড়ে পেমাকে আশ্রয় করে সংসার গড়েছিলেন। সেই সত্য স্বপ্নের পিঠে ছুরি মেরেছেন তাশি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে সংসারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
তাশি সিদ্ধান্ত নেন সন্ন্যাস নেবেন। গৌতমের মতোই তাশি বেরিয়ে পড়েন স্ত্রী-পুত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে। গভীর রাতে। আবার নেন সেই গেরুয়া বেশ। পথে সূর্যের আলো ফুটেছে। হঠাৎ চমকে গিয়ে থমকে দাঁড়ান তাশি।
গল্পের এই পর্যায়ে এসে তাশি এমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হন, এমন কিছু ভাবনার মুখোমুখি হন, যেখানে তাঁর সত্তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন না তাশি। অসহায়ের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ডুকরে কাঁদতে থাকেন। দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাঁর সমস্ত কর্ম, কাম। ধুলোয় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকেন। যেন ধুলোয় মিশে গেছে তাঁর সব।
চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরেক প্রতিবিম্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা, যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জানা নেই।
সিনেমার শুরুতে ইগলের পা থেকে পড়া এক পাথরের আঘাতে মারা যায় জোয়ান টগবগে এক ভেড়া। সিনেমার শেষের অংশে পেমা একটি বাক্স ফেলে চলে যান। বলা ভালো, হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যান, স্বপ্নের মতোই। দারুণ আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে যে স্বপ্ন এতদিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন তাশি। এই বাক্স সাধারণত নিরাপদ যাত্রার আশীর্বাদ হিসেবে দেওয়ার রেওয়াজ। এ থেকে বলা যায়, এখান থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তাশির এক দীর্ঘ যাত্রা। সেই যাত্রা গ্রামের দিকে নাকি মৃত্যুর দিকে তা স্পষ্ট নয়।
পেমা বাক্সটি ফেলে দেওয়ার পরে অদৃশ্য হয়ে যান। এটিকে বৌদ্ধ বিশ্বাসের একটি প্রতীকী উপস্থাপন ধরে নেওয়া যায় যে, সমস্ত জীবন একটি স্বপ্নের মতো। পেমার সঙ্গে প্রথম মিলনকে তাশি স্বপ্নই ভেবেছিলেন। পেমার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তাশিকে বুঝিয়ে দেয়, এ জীবন মায়া। এই মায়ার ফাঁদজালে তড়পাতে থাকেন তাশি। তখনই তিনি পাথরের কাছে যান এবং তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর পড়েন। তখন মেঘের ফাঁকে দেখা মেলে সেই ইগলের। একটি তত্ত্ব হতে পারে যে, ইগলটি আবার পা থেকে একটি পাথর ছেড়ে দেয়। তাশি মারা যান সেই ভেড়ার মতোই। এই মৃত্যুই তাঁকে সমুদ্রের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে দেয়। এটিই বুদ্ধের আলোকায়ন!
সিনেমার বেশ কয়েকটি তীব্র কামোত্তেজক দৃশ্যে কেউ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে একটি চলচ্চিত্রের জন্য এটি সম্পূর্ণ উপযুক্তই বলা যেতে পারে। যেখানে বৌদ্ধধর্ম এমন একটি দর্শন, যা যৌনতার আনন্দকে নিন্দা করে না। এটি ভারতে শুট করা একটি চলচ্চিত্রের জন্যও বিশেষভাবে উপযুক্ত, যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম এবং হিন্দুধর্ম (যে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কামসূত্র) বহু শতাব্দী ধরে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে।
সিনেমার শেষ অংশটিও বলছে: নায়কের স্ত্রী, পেমা, বুদ্ধের স্ত্রী যেন যশোধরাকেই আহ্বান করছেন। যদিও সহস্রাব্দ ধরে বিশ্ব বুদ্ধের দুর্দশা এবং দ্বিধাকেই কেবল চর্চা করেছে। যশোধরার কথা কেউ কখনো চিন্তা করে না, যিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামীর খেয়ালের জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন।
অভিনয় দুর্দান্ত। ক্রিস্টি চুং (পেমা) প্রত্যাশিত পারফরমেন্সই করেছেন। শেষ দৃশ্যটি শ্বাসরুদ্ধকর। দেখার জন্য সম্ভবত এই দৃশ্যটিই যথেষ্ট!
আশিকুর রিমেল

তিব্বতি ও লাদাখি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সামসারা’। বাংলায় ‘সংসার’। গৌতম বুদ্ধের দর্শন, শিক্ষা ও আলোকায়নের পথ চিত্রিত হয়েছে এই সিনেমায়। ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটি ২০০১ সালে মুক্তি পায়। নলিন কুমার পাণ্ডে নির্মিত এই স্বাধীন চলচ্চিত্রটিতে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর আলোকায়নের গল্প উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
গল্পটি বলার আগে গৌতম বুদ্ধের জীবনী থেকে কিছু বিষয় বিশেষভাবে বলে নেওয়া প্রয়োজন। যে বিষয়গুলোকে এই সিনেমায় গৌতম বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে—
সিদ্ধার্থ গৌতম শাক্য প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রধান ক্ষত্রিয় বংশের শুদ্ধোধনের পুত্র। ষোলো বছর বয়সে সিদ্ধার্থ গৌতমের সঙ্গে কোলীয় গণের সুন্দরী কন্যা যশোধরার বিয়ে হয়। তাঁদের রাহুল নামের এক পুত্রসন্তান হয়। সিদ্ধার্থ তাঁর জীবনের প্রথম ২৯ বছর রাজপুত্র হিসেবে অতিবাহিত করেছেন।
বৌদ্ধ পুথিগুলো অনুসারে, সিদ্ধার্থের বাবা শুদ্ধোধন, সিদ্ধার্থের জীবনে বিলাসিতার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও তিনি বস্তুগত ঐশ্বর্য থেকে উদাসীন ছিলেন। ভোগের আনন্দ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেছেন। ঐশ্বর্য যে জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না, তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলেন ওই বয়স থেকেই। একদিন রাতে স্ত্রী যশোধরা ও সন্তান রাহুলকে ঘুমের মধ্যে রেখে গৃহত্যাগী হন। এই বিশ্বসংসারে মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য সন্ন্যাস নেন। অতঃপর তিনি বোধিপ্রাপ্ত হন।
গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে এই প্রাথমিক তথ্যটুকু জানা থাকলে সিনেমাটির গল্পের সঙ্গে মেলাতে খানিকটা সুবিধা হবে।
সিনেমার শেষাংশে গল্পের প্রধান নারী চরিত্র পুরুষ চরিত্রকে এমন কিছু প্রশ্নের ও ভাবনার মুখোমুখি দাঁড় করান, যা একজন দর্শক ও শ্রোতাকে জীবন নিয়ে ভয়ানক দ্বান্দ্বিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেবে।
যশোধরা! একজন নারী! যার বিয়ে হয়েছিল রাজপুত্র সিদ্ধার্থের সঙ্গে, গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে নয়। যাকে তিনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছেন। অথচ সিদ্ধার্থ রাতের আঁধারে তাঁকে এবং তাঁর সন্তান রাহুলকে রেখে চলে গেলেন। যশোধরাকে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। অথচ গৌতম যখন বুঝতেন না দুঃখ কী, তখন থেকেই যশোধরা জীর্ণ, রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা করে এসেছেন। সিদ্ধার্থ সেটি দেখেছেন কাছ থেকে। সেটি দেখতে গিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি। বৈরাগ্য পেয়ে বসেছে তাঁর। বোধিপ্রাপ্তির পর জীবনকে স্বপ্নের মতো এক মোহমায়া বলেই বর্ণনা করেছেন। নির্বাণ প্রাপ্তিতেই মুক্তি খুঁজেছেন।
সিনেমার প্রধান চরিত্র তাশি এমনই। পাঁচ বছর বয়সে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে তাঁর দীক্ষা শুরু হয়। ২০ বছর বয়সে ধ্যান শুরু করেন। ৩ বছর ৩ মাস ৩ সপ্তাহ ৩ দিন অনাহারে ধ্যানমগ্ন থাকেন। এর পর তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় আশ্রমে। দীর্ঘদিন তপস্যায় বোধিপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে ভিক্ষু প্রধান তাশিকে ‘লামা’ খেতাব দেন। তিনি হয়ে ওঠেন ‘লামা তাশি’।
মানুষ তো অন্তর্যামী নয়। তাই প্রথম দিকে কেউ জানতেও পারেননি লামা তাশি এই তপস্যা থেকে তার জৈবিক আকাঙ্ক্ষামুক্ত হতে পারেননি। তাঁর মধ্যে এখনো নারী প্রেম, কাম, রীতিমতো বলবৎ। এমনকি তাশি নিজেও তখনো নিজের শরীর সম্পর্কে অতটা সচেতন হয়ে ওঠেনি।
বায়ু পরিবর্তনের জন্য লামা তাশিকে নিয়ে যাওয়া হয় লোকালয়ে। ভিক্ষুদের সেবক একটি পরিবারে তাঁদের আপ্যায়ন ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে গিয়েই প্রথম ‘পেমা’ নামের এক নারীর চোখে, ঠোঁটে চোখ পড়ে তাঁর। প্রথম কামভাব জাগে তাঁর। আশ্রমে ফিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন লামা তাশি। স্বপ্নদোষ নিয়ে লজ্জিত বিব্রত তাশিকে দলপ্রধান প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য পাঠান এক মৌনব্রত সাধকের কাছে। যিনি তাঁর হাতে একটি বাণী তুলে দেন। যেখানে লেখা থাকে, ‘তোমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছুই তোমাকে কিছু না কিছু শেখায়।’
এর পরই তাশি শিশুকাল থেকে শেখা আপ্তবাক্যগুলোকে প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই ভেতরে জমে থাকা প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো বস্তুর, স্বাদ, অভিজ্ঞতা ছাড়া কেন তিনি সেসব থেকে দূরে থাকার চর্চা করবেন? আশ্রমের প্রধান ভিক্ষুকে তিনি জানিয়ে দেন, তিনি কোন মোহ থেকে দূরে থাকবেন, যেই মোহে তিনি ছিলেনই না? যার স্বাদ তিনি পাননি কখনো?
নিজের অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রমাণে তাশি গৌতম বুদ্ধেই আশ্রয় নেন। বলেন, গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, কোনো কিছু প্রকৃত বোধ পেতে হলে তার স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ করেন, গৌতম বুদ্ধের বোধিপ্রাপ্ত হওয়ার আগের ২৯ বছর ঘর, সংসার, স্ত্রী, সন্তান—সবকিছুর স্বাদ গ্রহণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার কথা।
যেসব বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, সেসবের ওপর আর বিশ্বাস গড়তে পারছিলেন না তাশি। মনে সংশয় দানা বাঁধতে থাকে। দলপ্রধান ভিক্ষু একটি বাক্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার তাশির ওপরেই ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘তুমি যে স্বপ্নটা দেখ, সেটা সত্য ছিল।’
সে রাতেই লামা তাশি সাধারণ মানুষ হিসেবে জাগতিক সংসার জীবনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। এত বছরের যাপিত জীবনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। অতঃপর লামা তাশি গেরুয়া পোশাক ছেড়ে পেমার প্রতি প্রেম, জৈবিক টানে ছুটে যান। সাধারণ পোশাক নিয়ে ছদ্মবেশে পেমাদের গ্রামে চলে যান। জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাশির।
তাশি বেছে নেন সংসার জীবন। বিয়ে হয় পেমার সঙ্গে। পেমার বাবা অবস্থাপন্ন কৃষক। বছরে তিন মাস প্রচণ্ড শীতের বাইরে বাকি সময়টা কৃষিকাজ করে দিন কাটতে থাকে তাঁদের। তাঁদের কোলজুড়ে আসে একটা ছেলে সন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় ‘কর্ম’। খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ নাম। পুরোদস্তুর সংসারে ডুবে থাকেন তাশি ও পেমা। স্বপ্নের মতোই যেন এক সুখের জীবন পেয়ে যান তাশি।
এ সময় আসে গল্পের আরেক মোড়। আবির্ভাব ঘটে ‘সেঁজুতি’ নামের এক ভারতীয় নারীর। আঠারো পেরিয়ে ১৯-এ পা দিয়েছেন সেঁজুতি। কাজ করেন তাঁদেরই কৃষি জমিতে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার ফলে সেঁজুতি ও পেমার মধ্যে সখ্যও অনেক বেশি। প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি এই তরুণী ও তাশি একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে শুরু করে। একদিন পেমার অবর্তমানে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পেমা বিষয়টি আঁচ করতে পারেন এবং তাশির সঙ্গে তাঁর মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। সেই সঙ্গে গল্পের ঘটনাচক্রে দেখানো হয় চারপাশে মানুষের মধ্যে থাকা লোভ, অহংকার, হিংসা, ক্রোধ, উচ্চাকাঙ্ক্ষার ক্লেদ। বিশেষ করে স্বামী অন্তপ্রাণ স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা তাঁর মর্মপীড়া চরমে তোলে। সংসার যন্ত্রণার হয়ে উঠতে থাকে তাশির কাছে। তাশি এই যন্ত্রণার কথা কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারেন না। ফলে দিনে দিনে নিজের মধ্যে গুটিয়ে পড়েন তাশি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সন্ন্যাস ছেড়ে সংসার বেছে নিয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্তেই। সন্ন্যাস ছেড়ে পেমাকে আশ্রয় করে সংসার গড়েছিলেন। সেই সত্য স্বপ্নের পিঠে ছুরি মেরেছেন তাশি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে সংসারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
তাশি সিদ্ধান্ত নেন সন্ন্যাস নেবেন। গৌতমের মতোই তাশি বেরিয়ে পড়েন স্ত্রী-পুত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে। গভীর রাতে। আবার নেন সেই গেরুয়া বেশ। পথে সূর্যের আলো ফুটেছে। হঠাৎ চমকে গিয়ে থমকে দাঁড়ান তাশি।
গল্পের এই পর্যায়ে এসে তাশি এমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হন, এমন কিছু ভাবনার মুখোমুখি হন, যেখানে তাঁর সত্তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন না তাশি। অসহায়ের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ডুকরে কাঁদতে থাকেন। দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাঁর সমস্ত কর্ম, কাম। ধুলোয় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকেন। যেন ধুলোয় মিশে গেছে তাঁর সব।
চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরেক প্রতিবিম্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা, যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জানা নেই।
সিনেমার শুরুতে ইগলের পা থেকে পড়া এক পাথরের আঘাতে মারা যায় জোয়ান টগবগে এক ভেড়া। সিনেমার শেষের অংশে পেমা একটি বাক্স ফেলে চলে যান। বলা ভালো, হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যান, স্বপ্নের মতোই। দারুণ আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে যে স্বপ্ন এতদিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন তাশি। এই বাক্স সাধারণত নিরাপদ যাত্রার আশীর্বাদ হিসেবে দেওয়ার রেওয়াজ। এ থেকে বলা যায়, এখান থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তাশির এক দীর্ঘ যাত্রা। সেই যাত্রা গ্রামের দিকে নাকি মৃত্যুর দিকে তা স্পষ্ট নয়।
পেমা বাক্সটি ফেলে দেওয়ার পরে অদৃশ্য হয়ে যান। এটিকে বৌদ্ধ বিশ্বাসের একটি প্রতীকী উপস্থাপন ধরে নেওয়া যায় যে, সমস্ত জীবন একটি স্বপ্নের মতো। পেমার সঙ্গে প্রথম মিলনকে তাশি স্বপ্নই ভেবেছিলেন। পেমার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তাশিকে বুঝিয়ে দেয়, এ জীবন মায়া। এই মায়ার ফাঁদজালে তড়পাতে থাকেন তাশি। তখনই তিনি পাথরের কাছে যান এবং তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর পড়েন। তখন মেঘের ফাঁকে দেখা মেলে সেই ইগলের। একটি তত্ত্ব হতে পারে যে, ইগলটি আবার পা থেকে একটি পাথর ছেড়ে দেয়। তাশি মারা যান সেই ভেড়ার মতোই। এই মৃত্যুই তাঁকে সমুদ্রের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে দেয়। এটিই বুদ্ধের আলোকায়ন!
সিনেমার বেশ কয়েকটি তীব্র কামোত্তেজক দৃশ্যে কেউ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে একটি চলচ্চিত্রের জন্য এটি সম্পূর্ণ উপযুক্তই বলা যেতে পারে। যেখানে বৌদ্ধধর্ম এমন একটি দর্শন, যা যৌনতার আনন্দকে নিন্দা করে না। এটি ভারতে শুট করা একটি চলচ্চিত্রের জন্যও বিশেষভাবে উপযুক্ত, যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম এবং হিন্দুধর্ম (যে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কামসূত্র) বহু শতাব্দী ধরে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে।
সিনেমার শেষ অংশটিও বলছে: নায়কের স্ত্রী, পেমা, বুদ্ধের স্ত্রী যেন যশোধরাকেই আহ্বান করছেন। যদিও সহস্রাব্দ ধরে বিশ্ব বুদ্ধের দুর্দশা এবং দ্বিধাকেই কেবল চর্চা করেছে। যশোধরার কথা কেউ কখনো চিন্তা করে না, যিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামীর খেয়ালের জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন।
অভিনয় দুর্দান্ত। ক্রিস্টি চুং (পেমা) প্রত্যাশিত পারফরমেন্সই করেছেন। শেষ দৃশ্যটি শ্বাসরুদ্ধকর। দেখার জন্য সম্ভবত এই দৃশ্যটিই যথেষ্ট!

তিব্বতি ও লাদাখি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সামসারা’। বাংলায় ‘সংসার’। গৌতম বুদ্ধের দর্শন, শিক্ষা ও আলোকায়নের পথ চিত্রিত হয়েছে এই সিনেমায়। ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটি ২০০১ সালে মুক্তি পায়। নলিন কুমার পাণ্ডে নির্মিত এই স্বাধীন চলচ্চিত্রটিতে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর আলোকায়নের গল্প উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।
গল্পটি বলার আগে গৌতম বুদ্ধের জীবনী থেকে কিছু বিষয় বিশেষভাবে বলে নেওয়া প্রয়োজন। যে বিষয়গুলোকে এই সিনেমায় গৌতম বুদ্ধের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে—
সিদ্ধার্থ গৌতম শাক্য প্রজাতন্ত্রের নির্বাচিত প্রধান ক্ষত্রিয় বংশের শুদ্ধোধনের পুত্র। ষোলো বছর বয়সে সিদ্ধার্থ গৌতমের সঙ্গে কোলীয় গণের সুন্দরী কন্যা যশোধরার বিয়ে হয়। তাঁদের রাহুল নামের এক পুত্রসন্তান হয়। সিদ্ধার্থ তাঁর জীবনের প্রথম ২৯ বছর রাজপুত্র হিসেবে অতিবাহিত করেছেন।
বৌদ্ধ পুথিগুলো অনুসারে, সিদ্ধার্থের বাবা শুদ্ধোধন, সিদ্ধার্থের জীবনে বিলাসিতার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও তিনি বস্তুগত ঐশ্বর্য থেকে উদাসীন ছিলেন। ভোগের আনন্দ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেছেন। ঐশ্বর্য যে জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না, তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলেন ওই বয়স থেকেই। একদিন রাতে স্ত্রী যশোধরা ও সন্তান রাহুলকে ঘুমের মধ্যে রেখে গৃহত্যাগী হন। এই বিশ্বসংসারে মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য সন্ন্যাস নেন। অতঃপর তিনি বোধিপ্রাপ্ত হন।
গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে এই প্রাথমিক তথ্যটুকু জানা থাকলে সিনেমাটির গল্পের সঙ্গে মেলাতে খানিকটা সুবিধা হবে।
সিনেমার শেষাংশে গল্পের প্রধান নারী চরিত্র পুরুষ চরিত্রকে এমন কিছু প্রশ্নের ও ভাবনার মুখোমুখি দাঁড় করান, যা একজন দর্শক ও শ্রোতাকে জীবন নিয়ে ভয়ানক দ্বান্দ্বিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেবে।
যশোধরা! একজন নারী! যার বিয়ে হয়েছিল রাজপুত্র সিদ্ধার্থের সঙ্গে, গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে নয়। যাকে তিনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছেন। অথচ সিদ্ধার্থ রাতের আঁধারে তাঁকে এবং তাঁর সন্তান রাহুলকে রেখে চলে গেলেন। যশোধরাকে এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। অথচ গৌতম যখন বুঝতেন না দুঃখ কী, তখন থেকেই যশোধরা জীর্ণ, রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা করে এসেছেন। সিদ্ধার্থ সেটি দেখেছেন কাছ থেকে। সেটি দেখতে গিয়েই বেঁধেছে বিপত্তি। বৈরাগ্য পেয়ে বসেছে তাঁর। বোধিপ্রাপ্তির পর জীবনকে স্বপ্নের মতো এক মোহমায়া বলেই বর্ণনা করেছেন। নির্বাণ প্রাপ্তিতেই মুক্তি খুঁজেছেন।
সিনেমার প্রধান চরিত্র তাশি এমনই। পাঁচ বছর বয়সে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে তাঁর দীক্ষা শুরু হয়। ২০ বছর বয়সে ধ্যান শুরু করেন। ৩ বছর ৩ মাস ৩ সপ্তাহ ৩ দিন অনাহারে ধ্যানমগ্ন থাকেন। এর পর তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় আশ্রমে। দীর্ঘদিন তপস্যায় বোধিপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে ভিক্ষু প্রধান তাশিকে ‘লামা’ খেতাব দেন। তিনি হয়ে ওঠেন ‘লামা তাশি’।
মানুষ তো অন্তর্যামী নয়। তাই প্রথম দিকে কেউ জানতেও পারেননি লামা তাশি এই তপস্যা থেকে তার জৈবিক আকাঙ্ক্ষামুক্ত হতে পারেননি। তাঁর মধ্যে এখনো নারী প্রেম, কাম, রীতিমতো বলবৎ। এমনকি তাশি নিজেও তখনো নিজের শরীর সম্পর্কে অতটা সচেতন হয়ে ওঠেনি।
বায়ু পরিবর্তনের জন্য লামা তাশিকে নিয়ে যাওয়া হয় লোকালয়ে। ভিক্ষুদের সেবক একটি পরিবারে তাঁদের আপ্যায়ন ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে গিয়েই প্রথম ‘পেমা’ নামের এক নারীর চোখে, ঠোঁটে চোখ পড়ে তাঁর। প্রথম কামভাব জাগে তাঁর। আশ্রমে ফিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন লামা তাশি। স্বপ্নদোষ নিয়ে লজ্জিত বিব্রত তাশিকে দলপ্রধান প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য পাঠান এক মৌনব্রত সাধকের কাছে। যিনি তাঁর হাতে একটি বাণী তুলে দেন। যেখানে লেখা থাকে, ‘তোমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছুই তোমাকে কিছু না কিছু শেখায়।’
এর পরই তাশি শিশুকাল থেকে শেখা আপ্তবাক্যগুলোকে প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই ভেতরে জমে থাকা প্রশ্ন করতে থাকেন। কোনো বস্তুর, স্বাদ, অভিজ্ঞতা ছাড়া কেন তিনি সেসব থেকে দূরে থাকার চর্চা করবেন? আশ্রমের প্রধান ভিক্ষুকে তিনি জানিয়ে দেন, তিনি কোন মোহ থেকে দূরে থাকবেন, যেই মোহে তিনি ছিলেনই না? যার স্বাদ তিনি পাননি কখনো?
নিজের অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রমাণে তাশি গৌতম বুদ্ধেই আশ্রয় নেন। বলেন, গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, কোনো কিছু প্রকৃত বোধ পেতে হলে তার স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ করেন, গৌতম বুদ্ধের বোধিপ্রাপ্ত হওয়ার আগের ২৯ বছর ঘর, সংসার, স্ত্রী, সন্তান—সবকিছুর স্বাদ গ্রহণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার কথা।
যেসব বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, সেসবের ওপর আর বিশ্বাস গড়তে পারছিলেন না তাশি। মনে সংশয় দানা বাঁধতে থাকে। দলপ্রধান ভিক্ষু একটি বাক্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার তাশির ওপরেই ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘তুমি যে স্বপ্নটা দেখ, সেটা সত্য ছিল।’
সে রাতেই লামা তাশি সাধারণ মানুষ হিসেবে জাগতিক সংসার জীবনের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। এত বছরের যাপিত জীবনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। অতঃপর লামা তাশি গেরুয়া পোশাক ছেড়ে পেমার প্রতি প্রেম, জৈবিক টানে ছুটে যান। সাধারণ পোশাক নিয়ে ছদ্মবেশে পেমাদের গ্রামে চলে যান। জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাশির।
তাশি বেছে নেন সংসার জীবন। বিয়ে হয় পেমার সঙ্গে। পেমার বাবা অবস্থাপন্ন কৃষক। বছরে তিন মাস প্রচণ্ড শীতের বাইরে বাকি সময়টা কৃষিকাজ করে দিন কাটতে থাকে তাঁদের। তাঁদের কোলজুড়ে আসে একটা ছেলে সন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় ‘কর্ম’। খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ নাম। পুরোদস্তুর সংসারে ডুবে থাকেন তাশি ও পেমা। স্বপ্নের মতোই যেন এক সুখের জীবন পেয়ে যান তাশি।
এ সময় আসে গল্পের আরেক মোড়। আবির্ভাব ঘটে ‘সেঁজুতি’ নামের এক ভারতীয় নারীর। আঠারো পেরিয়ে ১৯-এ পা দিয়েছেন সেঁজুতি। কাজ করেন তাঁদেরই কৃষি জমিতে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার ফলে সেঁজুতি ও পেমার মধ্যে সখ্যও অনেক বেশি। প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশি এই তরুণী ও তাশি একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে শুরু করে। একদিন পেমার অবর্তমানে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পেমা বিষয়টি আঁচ করতে পারেন এবং তাশির সঙ্গে তাঁর মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। সেই সঙ্গে গল্পের ঘটনাচক্রে দেখানো হয় চারপাশে মানুষের মধ্যে থাকা লোভ, অহংকার, হিংসা, ক্রোধ, উচ্চাকাঙ্ক্ষার ক্লেদ। বিশেষ করে স্বামী অন্তপ্রাণ স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা তাঁর মর্মপীড়া চরমে তোলে। সংসার যন্ত্রণার হয়ে উঠতে থাকে তাশির কাছে। তাশি এই যন্ত্রণার কথা কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারেন না। ফলে দিনে দিনে নিজের মধ্যে গুটিয়ে পড়েন তাশি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সন্ন্যাস ছেড়ে সংসার বেছে নিয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্তেই। সন্ন্যাস ছেড়ে পেমাকে আশ্রয় করে সংসার গড়েছিলেন। সেই সত্য স্বপ্নের পিঠে ছুরি মেরেছেন তাশি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে সংসারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
তাশি সিদ্ধান্ত নেন সন্ন্যাস নেবেন। গৌতমের মতোই তাশি বেরিয়ে পড়েন স্ত্রী-পুত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে। গভীর রাতে। আবার নেন সেই গেরুয়া বেশ। পথে সূর্যের আলো ফুটেছে। হঠাৎ চমকে গিয়ে থমকে দাঁড়ান তাশি।
গল্পের এই পর্যায়ে এসে তাশি এমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হন, এমন কিছু ভাবনার মুখোমুখি হন, যেখানে তাঁর সত্তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন না তাশি। অসহায়ের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ডুকরে কাঁদতে থাকেন। দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাঁর সমস্ত কর্ম, কাম। ধুলোয় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকেন। যেন ধুলোয় মিশে গেছে তাঁর সব।
চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরেক প্রতিবিম্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা, যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জানা নেই।
সিনেমার শুরুতে ইগলের পা থেকে পড়া এক পাথরের আঘাতে মারা যায় জোয়ান টগবগে এক ভেড়া। সিনেমার শেষের অংশে পেমা একটি বাক্স ফেলে চলে যান। বলা ভালো, হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যান, স্বপ্নের মতোই। দারুণ আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে যে স্বপ্ন এতদিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন তাশি। এই বাক্স সাধারণত নিরাপদ যাত্রার আশীর্বাদ হিসেবে দেওয়ার রেওয়াজ। এ থেকে বলা যায়, এখান থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তাশির এক দীর্ঘ যাত্রা। সেই যাত্রা গ্রামের দিকে নাকি মৃত্যুর দিকে তা স্পষ্ট নয়।
পেমা বাক্সটি ফেলে দেওয়ার পরে অদৃশ্য হয়ে যান। এটিকে বৌদ্ধ বিশ্বাসের একটি প্রতীকী উপস্থাপন ধরে নেওয়া যায় যে, সমস্ত জীবন একটি স্বপ্নের মতো। পেমার সঙ্গে প্রথম মিলনকে তাশি স্বপ্নই ভেবেছিলেন। পেমার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তাশিকে বুঝিয়ে দেয়, এ জীবন মায়া। এই মায়ার ফাঁদজালে তড়পাতে থাকেন তাশি। তখনই তিনি পাথরের কাছে যান এবং তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর পড়েন। তখন মেঘের ফাঁকে দেখা মেলে সেই ইগলের। একটি তত্ত্ব হতে পারে যে, ইগলটি আবার পা থেকে একটি পাথর ছেড়ে দেয়। তাশি মারা যান সেই ভেড়ার মতোই। এই মৃত্যুই তাঁকে সমুদ্রের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে দেয়। এটিই বুদ্ধের আলোকায়ন!
সিনেমার বেশ কয়েকটি তীব্র কামোত্তেজক দৃশ্যে কেউ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে একটি চলচ্চিত্রের জন্য এটি সম্পূর্ণ উপযুক্তই বলা যেতে পারে। যেখানে বৌদ্ধধর্ম এমন একটি দর্শন, যা যৌনতার আনন্দকে নিন্দা করে না। এটি ভারতে শুট করা একটি চলচ্চিত্রের জন্যও বিশেষভাবে উপযুক্ত, যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম এবং হিন্দুধর্ম (যে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কামসূত্র) বহু শতাব্দী ধরে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে।
সিনেমার শেষ অংশটিও বলছে: নায়কের স্ত্রী, পেমা, বুদ্ধের স্ত্রী যেন যশোধরাকেই আহ্বান করছেন। যদিও সহস্রাব্দ ধরে বিশ্ব বুদ্ধের দুর্দশা এবং দ্বিধাকেই কেবল চর্চা করেছে। যশোধরার কথা কেউ কখনো চিন্তা করে না, যিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামীর খেয়ালের জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন।
অভিনয় দুর্দান্ত। ক্রিস্টি চুং (পেমা) প্রত্যাশিত পারফরমেন্সই করেছেন। শেষ দৃশ্যটি শ্বাসরুদ্ধকর। দেখার জন্য সম্ভবত এই দৃশ্যটিই যথেষ্ট!

প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পেয়েছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।
৪ মিনিট আগে
নির্মাতা রায়হান খান ৯ ডিসেম্বর যখন ‘ট্রাইব্যুনাল’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেদিনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর নাটক, টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা—বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
১ দিন আগে
ফেসবুকের একটি পোস্টের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটক নির্মাণ করলেন মহিন খান। নাটকের নাম ‘পতন’। নির্দেশনার পাশাপাশি পতনের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা, তার স্বামীর চরিত্রে রাশেদ সীমান্ত।
১ দিন আগে
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন নায়িকা সোনিয়া। তিনি জানিয়েছেন, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি।
২ দিন আগেএ সপ্তাহের ওটিটি
প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পেয়েছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।
বিনোদন ডেস্ক

নূর (বাংলা সিনেমা)
ডিমলাইট (বাংলা ওয়েব সিনেমা)
কারমা কোর্মা (বাংলা সিরিজ)
ম্যান ভার্সেস বেবি (ইংরেজি সিরিজ)
সুপারম্যান (ইংরেজি সিনেমা)

নূর (বাংলা সিনেমা)
ডিমলাইট (বাংলা ওয়েব সিনেমা)
কারমা কোর্মা (বাংলা সিরিজ)
ম্যান ভার্সেস বেবি (ইংরেজি সিরিজ)
সুপারম্যান (ইংরেজি সিনেমা)

চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরও একটি প্রতিনিধিত্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জ
১৩ নভেম্বর ২০২১
নির্মাতা রায়হান খান ৯ ডিসেম্বর যখন ‘ট্রাইব্যুনাল’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেদিনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর নাটক, টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা—বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
১ দিন আগে
ফেসবুকের একটি পোস্টের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটক নির্মাণ করলেন মহিন খান। নাটকের নাম ‘পতন’। নির্দেশনার পাশাপাশি পতনের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা, তার স্বামীর চরিত্রে রাশেদ সীমান্ত।
১ দিন আগে
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন নায়িকা সোনিয়া। তিনি জানিয়েছেন, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি।
২ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

নির্মাতা রায়হান খান ৯ ডিসেম্বর যখন ‘ট্রাইব্যুনাল’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেদিনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর নাটক, টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা—বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তবে সিনেমা বানানোর কথা ভাবেননি কখনো। গত ঈদে তানিম নূরের ‘উৎসব’ দেখে বড় পর্দার প্রতি আগ্রহী হন তিনি।
সিনেমা বানানোর ইচ্ছা নতুন হলেও ট্রাইব্যুনাল গল্পটি অনেক বছর ধরে লালন করছেন বলে জানালেন রায়হান খান। একবার ব্যক্তিগত কারণে আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হয়েছিল তাঁকে। সেই আইনজীবীর কাছ থেকে শোনা একটি বাস্তব গল্প অবলম্বনে লেখা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল সিনেমার চিত্রনাট্য। চট্টগ্রামে এক নারীকে তার স্বামী কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। ২৬ জন সাক্ষী এবং একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল সেই মামলায়। পরে আদালতে মামলাটির গতিপথ কীভাবে ঘুরতে থাকে নানা দিকে, সেসব নিয়েই ট্রাইব্যুনালের কাহিনি।
নির্মাতা রায়হান খান বলেন, ‘২০১৭ সালে একবার মোশাররফ করিমকে গল্পটি শুনিয়ে এ নিয়ে একটি ধারাবাহিক নাটক বানানোর কথা বলি। তিনি পরামর্শ দেন, নাটক নয়, গল্পটি নিয়ে সিনেমা বানানোর। পরে বছরের পর বছর কেটে যায়, সিনেমা আর বানানো হয় না। গত বছর উৎসব দেখার পর মনে হয়, আমি সিনেমা করব এবং সেটা ট্রাইব্যুনাল। তারপর চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করি। ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে ফুলফর্ম কোর্ট স্টোরি। প্রতিটি সংলাপ আদালতের ভাষা অনুযায়ী এবং বাংলাদেশের আইনের মধ্যে থেকে লেখা হয়েছে। আইনগত কোনো অসংগতি নেই।’
ট্রাইব্যুনাল সিনেমায় অভিনয় করেছেন মৌসুমী হামিদ, তানিয়া বৃষ্টি, সায়রা আক্তার জাহান, তারিক আনাম খান, আদর আজাদ, রাকিব হোসেন ইভন, সাবেরি আলম, মিলন ভট্টাচার্য, শাহেদ আলী প্রমুখ। একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে নুসরাত ফারিয়াকে।
মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘আমার অভিনীত প্রথম সিরিয়াল রায়হান খানের সঙ্গে করা। এরপর একসঙ্গে অনেক কাজ হয়েছে আমাদের। এই সিনেমার গল্প শুনেই রাজি হই। অসাধারণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। মূলত গল্পের কারণেই ট্রাইব্যুনাল সিনেমার প্রতি দর্শক উৎসাহী হবে আশা করি। চিত্রনাট্য এত চমৎকারভাবে লেখা যে প্রতি মুহূর্তে আগ্রহ সৃষ্টি করে।’

তানিয়া বৃষ্টি বলেন, ‘আমি জেসমিন নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি, পুরো গল্প এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে। মনে হয়েছিল, সিনেমায় আবার যদি ব্যাক করতে চাই, সে ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত গল্প। এতে অভিনয়ের জন্য তারিক আনাম খান স্যারের কাছে এক মাস রিহার্সাল করেছি। চরিত্রের কষ্ট বোঝার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছি। যতটা পেরেছি, পুরোপুরি এফোর্ট দিয়েছি চরিত্রটির জন্য।’
সম্প্রতি অপু বিশ্বাসের সঙ্গে দুই সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন আদর আজাদ। এই সিনেমায়ও তিনি থাকছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে।
থিয়েটার দিয়ে অভিনয় শুরু রাকিব হোসেন ইভনের। ‘ইতি চিত্রা’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। এই সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে ইভন বলেন, ‘আমি থিয়েটার করা ছেলে। অভিনয় আমাকে টানে। এই সিনেমার চরিত্রটিতে অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমি সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। অন্যেরাও বেশ ভালো করেছেন। আশা করছি, সবার চেষ্টায় একটি সুন্দর সিনেমা উপহার দিতে পারব দর্শকদের।’
নির্মাতা রায়হান খান জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ শুটিং শেষ হয়েছে। শিগগির আবার শুটিংয়ে যাবে ট্রাইব্যুনাল টিম। রোজার ঈদে ট্রাইব্যুনাল মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা।

নির্মাতা রায়হান খান ৯ ডিসেম্বর যখন ‘ট্রাইব্যুনাল’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেদিনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর নাটক, টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা—বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তবে সিনেমা বানানোর কথা ভাবেননি কখনো। গত ঈদে তানিম নূরের ‘উৎসব’ দেখে বড় পর্দার প্রতি আগ্রহী হন তিনি।
সিনেমা বানানোর ইচ্ছা নতুন হলেও ট্রাইব্যুনাল গল্পটি অনেক বছর ধরে লালন করছেন বলে জানালেন রায়হান খান। একবার ব্যক্তিগত কারণে আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হয়েছিল তাঁকে। সেই আইনজীবীর কাছ থেকে শোনা একটি বাস্তব গল্প অবলম্বনে লেখা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল সিনেমার চিত্রনাট্য। চট্টগ্রামে এক নারীকে তার স্বামী কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। ২৬ জন সাক্ষী এবং একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল সেই মামলায়। পরে আদালতে মামলাটির গতিপথ কীভাবে ঘুরতে থাকে নানা দিকে, সেসব নিয়েই ট্রাইব্যুনালের কাহিনি।
নির্মাতা রায়হান খান বলেন, ‘২০১৭ সালে একবার মোশাররফ করিমকে গল্পটি শুনিয়ে এ নিয়ে একটি ধারাবাহিক নাটক বানানোর কথা বলি। তিনি পরামর্শ দেন, নাটক নয়, গল্পটি নিয়ে সিনেমা বানানোর। পরে বছরের পর বছর কেটে যায়, সিনেমা আর বানানো হয় না। গত বছর উৎসব দেখার পর মনে হয়, আমি সিনেমা করব এবং সেটা ট্রাইব্যুনাল। তারপর চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করি। ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে ফুলফর্ম কোর্ট স্টোরি। প্রতিটি সংলাপ আদালতের ভাষা অনুযায়ী এবং বাংলাদেশের আইনের মধ্যে থেকে লেখা হয়েছে। আইনগত কোনো অসংগতি নেই।’
ট্রাইব্যুনাল সিনেমায় অভিনয় করেছেন মৌসুমী হামিদ, তানিয়া বৃষ্টি, সায়রা আক্তার জাহান, তারিক আনাম খান, আদর আজাদ, রাকিব হোসেন ইভন, সাবেরি আলম, মিলন ভট্টাচার্য, শাহেদ আলী প্রমুখ। একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে নুসরাত ফারিয়াকে।
মৌসুমী হামিদ বলেন, ‘আমার অভিনীত প্রথম সিরিয়াল রায়হান খানের সঙ্গে করা। এরপর একসঙ্গে অনেক কাজ হয়েছে আমাদের। এই সিনেমার গল্প শুনেই রাজি হই। অসাধারণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। মূলত গল্পের কারণেই ট্রাইব্যুনাল সিনেমার প্রতি দর্শক উৎসাহী হবে আশা করি। চিত্রনাট্য এত চমৎকারভাবে লেখা যে প্রতি মুহূর্তে আগ্রহ সৃষ্টি করে।’

তানিয়া বৃষ্টি বলেন, ‘আমি জেসমিন নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি, পুরো গল্প এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে। মনে হয়েছিল, সিনেমায় আবার যদি ব্যাক করতে চাই, সে ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত গল্প। এতে অভিনয়ের জন্য তারিক আনাম খান স্যারের কাছে এক মাস রিহার্সাল করেছি। চরিত্রের কষ্ট বোঝার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছি। যতটা পেরেছি, পুরোপুরি এফোর্ট দিয়েছি চরিত্রটির জন্য।’
সম্প্রতি অপু বিশ্বাসের সঙ্গে দুই সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন আদর আজাদ। এই সিনেমায়ও তিনি থাকছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে।
থিয়েটার দিয়ে অভিনয় শুরু রাকিব হোসেন ইভনের। ‘ইতি চিত্রা’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। এই সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে ইভন বলেন, ‘আমি থিয়েটার করা ছেলে। অভিনয় আমাকে টানে। এই সিনেমার চরিত্রটিতে অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমি সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। অন্যেরাও বেশ ভালো করেছেন। আশা করছি, সবার চেষ্টায় একটি সুন্দর সিনেমা উপহার দিতে পারব দর্শকদের।’
নির্মাতা রায়হান খান জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ শুটিং শেষ হয়েছে। শিগগির আবার শুটিংয়ে যাবে ট্রাইব্যুনাল টিম। রোজার ঈদে ট্রাইব্যুনাল মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা।

চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরও একটি প্রতিনিধিত্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জ
১৩ নভেম্বর ২০২১
প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পেয়েছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।
৪ মিনিট আগে
ফেসবুকের একটি পোস্টের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটক নির্মাণ করলেন মহিন খান। নাটকের নাম ‘পতন’। নির্দেশনার পাশাপাশি পতনের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা, তার স্বামীর চরিত্রে রাশেদ সীমান্ত।
১ দিন আগে
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন নায়িকা সোনিয়া। তিনি জানিয়েছেন, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি।
২ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

ফেসবুকের একটি পোস্টের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটক নির্মাণ করলেন মহিন খান। নাটকের নাম ‘পতন’। নির্দেশনার পাশাপাশি পতনের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা, তার স্বামীর চরিত্রে রাশেদ সীমান্ত।
অহনা এখন আগের মতো নিয়মিত কাজ করছেন না। গল্প, চিত্রনাট্য আর চরিত্র পছন্দ হলে শুটিং করছেন। এই নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহিনের নির্দেশনায় আগেও বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছি। এই নাটকের গল্প ভাবনা এবং চিত্রনাট্য দারুণ হয়েছে। আমার চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। বেশ উত্থানপতন আছে। চেষ্টা করেছি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। আশা করছি, প্রচারে এলে নাটকটি দর্শকের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ মহিনকে আমাকে সুন্দর একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।’
নাটকের গল্প প্রসঙ্গে মহিন খান বলেন, ‘ফেসবুকের একটি পোস্ট থেকে গল্পের ভাবনাটা নিয়েছি। সেই থিম থেকে নিজের মতো করে চিত্রনাট্য লিখেছি। গল্পে দেখা যাবে, স্বামীর সঙ্গে অহনার বেশ সুখের সংসার। একসময় চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেয় অহনা। স্বামী তার আবদার মেনে নেয়। পাঁচ লাখ টাকা ম্যানেজ করে স্ত্রীকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আচরণ বদলে যায় অহনার। স্বামীর সঙ্গেও সংসার করতে চায় না। গল্প যখন চরম নাটকীয়তায়, এমন সময় হুট করে চাকরি চলে যায় অহনার। দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। জীবনের বাস্তবতা বুঝতে পারে সে। অহনা ও রাশেদ সীমান্ত—দুজনেই দারুণ অভিনয় করেছেন। তাঁদের অভিনয়গুণে গল্পটি আরও হৃদয়গ্রাহী হয়েছে।’
নির্মাতা জানিয়েছেন, পতন নাটকটি প্রকাশ করা হবে ইউটিউব চ্যানেলে। শিগগির এর প্রকাশের সময় এবং চ্যানেলের নাম জানানো হবে।

ফেসবুকের একটি পোস্টের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটক নির্মাণ করলেন মহিন খান। নাটকের নাম ‘পতন’। নির্দেশনার পাশাপাশি পতনের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা, তার স্বামীর চরিত্রে রাশেদ সীমান্ত।
অহনা এখন আগের মতো নিয়মিত কাজ করছেন না। গল্প, চিত্রনাট্য আর চরিত্র পছন্দ হলে শুটিং করছেন। এই নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহিনের নির্দেশনায় আগেও বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছি। এই নাটকের গল্প ভাবনা এবং চিত্রনাট্য দারুণ হয়েছে। আমার চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। বেশ উত্থানপতন আছে। চেষ্টা করেছি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। আশা করছি, প্রচারে এলে নাটকটি দর্শকের ভালো লাগবে। ধন্যবাদ মহিনকে আমাকে সুন্দর একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।’
নাটকের গল্প প্রসঙ্গে মহিন খান বলেন, ‘ফেসবুকের একটি পোস্ট থেকে গল্পের ভাবনাটা নিয়েছি। সেই থিম থেকে নিজের মতো করে চিত্রনাট্য লিখেছি। গল্পে দেখা যাবে, স্বামীর সঙ্গে অহনার বেশ সুখের সংসার। একসময় চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেয় অহনা। স্বামী তার আবদার মেনে নেয়। পাঁচ লাখ টাকা ম্যানেজ করে স্ত্রীকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আচরণ বদলে যায় অহনার। স্বামীর সঙ্গেও সংসার করতে চায় না। গল্প যখন চরম নাটকীয়তায়, এমন সময় হুট করে চাকরি চলে যায় অহনার। দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। জীবনের বাস্তবতা বুঝতে পারে সে। অহনা ও রাশেদ সীমান্ত—দুজনেই দারুণ অভিনয় করেছেন। তাঁদের অভিনয়গুণে গল্পটি আরও হৃদয়গ্রাহী হয়েছে।’
নির্মাতা জানিয়েছেন, পতন নাটকটি প্রকাশ করা হবে ইউটিউব চ্যানেলে। শিগগির এর প্রকাশের সময় এবং চ্যানেলের নাম জানানো হবে।

চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরও একটি প্রতিনিধিত্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জ
১৩ নভেম্বর ২০২১
প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পেয়েছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।
৪ মিনিট আগে
নির্মাতা রায়হান খান ৯ ডিসেম্বর যখন ‘ট্রাইব্যুনাল’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেদিনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর নাটক, টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা—বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
১ দিন আগে
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন নায়িকা সোনিয়া। তিনি জানিয়েছেন, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি।
২ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে মেয়ের সঙ্গে আছেন তিনি। গত জুলাই মাসে ইলিয়াস কাঞ্চন লন্ডন গেলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় চিত্রনায়িকা রোজিনার। ওই সময় রোজিনা ছিলেন কানাডায়। সেখান থেকে ফিরে গত সেপ্টেম্বর অভিনেতাকে দেখেতে যান তিনি। তখন রোজিনা জানিয়েছিলেন, অসুস্থতার ধঁকলে কিছুটা বিধ্বস্ত দেখালেও কাঞ্চন দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন নিয়মিত। ধীরে ধীরে কথা বলছেন। ব্রেনের সস্যার কারণে মাঝে মাঝে কথা ভুলে যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ব্রেনের স্পর্শকাতর জায়গায় টিউমার হওয়ায় অস্ত্রোপচার করে সম্পূর্ণ টিউমার সরানো যায়নি। তবে কেমোথেরাপির মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা চলবে।
সম্প্রতি ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করেছেন বাংলা সিনেমার নব্বই দশকের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা সোনিয়া। অনেক বছর হলো স্বামী-সন্তান নিয়ে ইংল্যান্ডে স্থায়ী হয়েছেন সোনিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করে তিনি জানিয়েছেন, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি।

ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন সোনিয়া। নায়কের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্যসহ জানিয়েছেন চিকিৎসার খবর।
স্ট্যাটাসে সোনিয়া লেখেন, ‘ইংল্যান্ডের কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে অনেকদিন ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হয়নি। যোগাযোগ সবসময় হয়, তবে আজ প্রথম সুযোগ পেলাম তাকে দেখতে যাওয়ার। ভাইয়ার চলমান চিকিৎসায় কিছুদিনের বিরতি ছিল। আগামী সপ্তাহে আবার চিকিৎসা শুরু হবে।’
সোনিয়া জানিয়েছেন, ইলিয়াস কাঞ্চন এখন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন। সময় কাটাচ্ছেন স্বজনদের সঙ্গে। তবে শিগগির দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই তাঁর। এ বিষয়ে সোনিয়া লেখেন, ‘ভাইয়া আমার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। উনার পরিবারের সঙ্গে কাটালাম ভালো সময়। তবে আপাতত বাংলাদেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই তাঁর। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত জানানো যাচ্ছে না।’
সোনিয়া আরও জানিয়েছেন, ইলিয়াস কাঞ্চনের চিকিৎসা বেশ ভালোভাবেই চলছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন নায়ক। পুরো চিকিৎসাপ্রক্রিয়া শেষে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন অভিনেতা। সোনিয়া অনুরোধ করেছেন, কোনো ধরনের গুজব না ছড়িয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে।
উল্লেখ্য, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে ‘ভয়ংকর ৭ দিন’, ‘বিদ্রোহী কন্যা’, ‘বডিগার্ড’, ‘শেষ রক্ষা’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সোনিয়া। তবে তাঁর নায়িকা হয়ে কোনো সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি তাঁর।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে মেয়ের সঙ্গে আছেন তিনি। গত জুলাই মাসে ইলিয়াস কাঞ্চন লন্ডন গেলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় চিত্রনায়িকা রোজিনার। ওই সময় রোজিনা ছিলেন কানাডায়। সেখান থেকে ফিরে গত সেপ্টেম্বর অভিনেতাকে দেখেতে যান তিনি। তখন রোজিনা জানিয়েছিলেন, অসুস্থতার ধঁকলে কিছুটা বিধ্বস্ত দেখালেও কাঞ্চন দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন নিয়মিত। ধীরে ধীরে কথা বলছেন। ব্রেনের সস্যার কারণে মাঝে মাঝে কথা ভুলে যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ব্রেনের স্পর্শকাতর জায়গায় টিউমার হওয়ায় অস্ত্রোপচার করে সম্পূর্ণ টিউমার সরানো যায়নি। তবে কেমোথেরাপির মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসা চলবে।
সম্প্রতি ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করেছেন বাংলা সিনেমার নব্বই দশকের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা সোনিয়া। অনেক বছর হলো স্বামী-সন্তান নিয়ে ইংল্যান্ডে স্থায়ী হয়েছেন সোনিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করে তিনি জানিয়েছেন, এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন তিনি।

ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন সোনিয়া। নায়কের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্যসহ জানিয়েছেন চিকিৎসার খবর।
স্ট্যাটাসে সোনিয়া লেখেন, ‘ইংল্যান্ডের কর্মব্যস্ত জীবনের কারণে অনেকদিন ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া হয়নি। যোগাযোগ সবসময় হয়, তবে আজ প্রথম সুযোগ পেলাম তাকে দেখতে যাওয়ার। ভাইয়ার চলমান চিকিৎসায় কিছুদিনের বিরতি ছিল। আগামী সপ্তাহে আবার চিকিৎসা শুরু হবে।’
সোনিয়া জানিয়েছেন, ইলিয়াস কাঞ্চন এখন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন। সময় কাটাচ্ছেন স্বজনদের সঙ্গে। তবে শিগগির দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই তাঁর। এ বিষয়ে সোনিয়া লেখেন, ‘ভাইয়া আমার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। উনার পরিবারের সঙ্গে কাটালাম ভালো সময়। তবে আপাতত বাংলাদেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই তাঁর। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত জানানো যাচ্ছে না।’
সোনিয়া আরও জানিয়েছেন, ইলিয়াস কাঞ্চনের চিকিৎসা বেশ ভালোভাবেই চলছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন নায়ক। পুরো চিকিৎসাপ্রক্রিয়া শেষে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন অভিনেতা। সোনিয়া অনুরোধ করেছেন, কোনো ধরনের গুজব না ছড়িয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে।
উল্লেখ্য, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে ‘ভয়ংকর ৭ দিন’, ‘বিদ্রোহী কন্যা’, ‘বডিগার্ড’, ‘শেষ রক্ষা’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সোনিয়া। তবে তাঁর নায়িকা হয়ে কোনো সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি তাঁর।

চলচ্চিত্রটি বুদ্ধের ব্যক্তিগত জীবন ও দর্শনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের আরও একটি প্রতিনিধিত্ব। এই পৃথিবীতে একটি পরিবার ও একটি শিশুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা জীবন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মোৎসর্গের তীব্র বাসনাক্রান্ত এক ব্যক্তির দ্বিধাবিভক্ত অস্তিত্ব। এটি এমন এক দ্বিধা যার কোনো সুস্পষ্ট বা চূড়ান্ত সমাধান জ
১৩ নভেম্বর ২০২১
প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পেয়েছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।
৪ মিনিট আগে
নির্মাতা রায়হান খান ৯ ডিসেম্বর যখন ‘ট্রাইব্যুনাল’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিচ্ছিলেন, সেদিনই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ক্যারিয়ারের দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। চিত্রগ্রাহক হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর নাটক, টিভি অনুষ্ঠান পরিচালনা, চিত্রনাট্য লেখা—বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
১ দিন আগে
ফেসবুকের একটি পোস্টের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটক নির্মাণ করলেন মহিন খান। নাটকের নাম ‘পতন’। নির্দেশনার পাশাপাশি পতনের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে এক নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা, তার স্বামীর চরিত্রে রাশেদ সীমান্ত।
১ দিন আগে