Ajker Patrika

উচ্চশিক্ষায় নতুন দিগন্ত সম্ভাবনা, প্রস্তুতি ও পরামর্শ

অধ্যাপক ড . মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ১১
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন।

দেশের উচ্চশিক্ষা আজ এক নতুন অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে আমাদের উচ্চশিক্ষার পরিকাঠামো এবং দর্শন—উভয় ক্ষেত্রেই এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা, আধুনিক লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, স্মার্ট ক্লাসরুম, উন্নত ল্যাব সুবিধা এবং শিল্প-অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার মান নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এখন কেবল ডিগ্রি প্রদানের স্থান নয়; এটি শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি, উদ্ভাবনী দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা গড়ে তোলার এক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে।

বর্তমান যুগে মুখস্থভিত্তিক শিক্ষা যথেষ্ট নয়। চাকরির বাজারে সফলভাবে আত্মপ্রকাশ করতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন বাস্তব দক্ষতা, কমিউনিকেশন স্কিল, সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং দলগত কাজের ক্ষমতা। তাই ফলাফলভিত্তিক শিক্ষা বা আউটকামস-বেসড এডুকেশন (ওবিই) আজ অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিক্ষার্থীরা তত্ত্বের পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল স্কিল, সফট স্কিল, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং নেতৃত্বগুণ অর্জন করছে। ল্যাবকেন্দ্রিক শিক্ষা, ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ, স্টার্টআপ সাপোর্ট, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং ইন্টার্নশিপভিত্তিক শিক্ষা উচ্চশিক্ষাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স, রোবোটিকস, সাইবার সিকিউরিটি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্মার্ট গ্রিড, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজি এবং বিজনেস অ্যানালিটিকসের মতো ক্ষেত্র যুক্ত হচ্ছে। প্রযুক্তি কেবল চাকরির ক্ষেত্র নয়, উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রেও অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই স্টার্টআপ শুরু করছে, গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে বা উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করছে। তাই বিষয় নির্বাচন করার সময় শিক্ষার্থীদের উচিত ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার, নিজস্ব আগ্রহ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের সম্ভাবনা এবং উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষে বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স এবং পিএইচডি করার স্কলারশিপ, টিচিং ও রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (টিএ/আএ) এবং ফেলোশিপের সংখ্যা ও সুযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের পাশাপাশি বিদেশে পড়াশোনার এক্সচেঞ্জ এবং ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগও উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত হয়েছে। বিদেশে পড়াশোনা করতে হলে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, আইইএলটিএস/টোয়েফল/এসএটি/জিআরই-এর মতো পরীক্ষার প্রস্তুতি, শক্তিশালী স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি), প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্টেশন, রেফারেন্স লেটার এবং মানসম্মত একাডেমিক প্রোফাইল গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রস্তুতি শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক নয়, ব্যক্তিগত ও পেশাগত দিক থেকেও সমৃদ্ধ করে।

এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা। নিজের শক্তি, দুর্বলতা, আগ্রহ এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট ভিজিট, পরিবার, শিক্ষক এবং অভিজ্ঞ সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকটাই সহজ হয় এবং ঝুঁকিও কমে। বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার মান, জব-মার্কেট-ওরিয়েন্টেড কারিকুলাম এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাকাঠামো, যাতায়াত, স্কলারশিপ ও আর্থিক সহায়তা, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস পরিবেশ, অভিজ্ঞ ও গবেষণামুখী শিক্ষকের সংখ্যা, আধুনিক ল্যাব, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, গবেষণা, উদ্ভাবন, ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ, শক্তিশালী অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক—এসব শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বৃহৎ ক্যাম্পাসসংবলিত গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দেশের এই ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারায় নিজস্ব অবদান রেখে চলেছে। আমরা আধুনিক কারিকুলাম, ল্যাব-সমৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণাবান্ধব পরিবেশ, অভিজ্ঞ শিক্ষক, ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ ও ইন্টার্নশিপ, ক্যারিয়ার সার্ভিস, স্টার্টআপ ও ইনোভেশন সাপোর্ট এবং ব্যক্তিত্ব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা সর্বোচ্চ মাত্রায় উন্নীত করি। একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, নেতৃত্বগুণ এবং কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতায় শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করা আমাদের অঙ্গীকার।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা, পরিশ্রম এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে দেশের এবং বিশ্বের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা, পরিমিত প্রস্তুতি এবং উপযুক্ত শিক্ষা–পরিবেশ। এর সমন্বয়ে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীর প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন। আজকের অর্জন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল। তবে এই মুহূর্তটি কেবল সাফল্যের উদ্‌যাপন নয়; এটি ভবিষ্যৎ গঠনের সজাগ ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। তাই জীবনের পরবর্তী ধাপটি সর্বোচ্চ মনোযোগ, সচেতন প্রস্তুতি এবং বিবেচনাপূর্ণ সিদ্ধান্ত হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, সঠিক সিদ্ধান্ত নিন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান এবং আপনিই হতে পারেন আগামী দিনের পরিবর্তনের সফল নেতৃত্ব। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সব সময় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকতে প্রস্তুত। সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য রইল আন্তরিক শুভকামনা।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, উপাচার্য, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ