Ajker Patrika

তুরস্কে উচ্চশিক্ষা: পাঁচ বছরের জন্য শিক্ষাবৃত্তি

আনিসুর রহমান
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২২, ১১: ৫৪
তুরস্কে উচ্চশিক্ষা: পাঁচ বছরের জন্য শিক্ষাবৃত্তি

উসমানীয় খিলাফতের উত্তরাধিকার, মুসলিম বিশ্বের প্রথম প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ১৯২৪ সালে আধুনিক তুরস্কের জন্ম। চারটি সমুদ্র, পাহাড়, নদী ও সমতলভূমির দেশ তুরস্ক, পৃথিবীর একমাত্র ইউরো-এশীয় দেশ; যার সকালের সূর্য এশিয়া প্রান্ত থেকে উদিত হয় এবং সন্ধ্যার সূর্যাস্ত হয় ইউরোপ প্রান্তে। অপার সম্ভাবনাময় এই দেশের উচ্চশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা বৃত্তি বিষয়ে আজকের আলোচনা।

তুরস্কে আধুনিক শিক্ষার অনুপ্রবেশ কিংবা আধুনিক জীবনচর্চার উন্মেষ ঘটে ওসমানীয় আমলে এবং তানজিমাতের যুগে রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংশ্লেষাত্মক-সমন্বয়বাদী সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। উসমানীয় আমলে আধুনিক অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও বড় বড় দারস্হানা মেদরেসে ছিল, যেখানে কলা ও বিজ্ঞান গবেষণার সব দিক পঠন-পাঠন হতো। যাই হোক, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি ১৪৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইউনিভার্সিটি ১৮৪৬ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় শিক্ষায়তনে পরিণত হয় এবং এটি ১৯৩০ সালের আগে পর্যন্ত ইউরোপ বিশ্বে ‘ইউনিভার্সিটি অব কনস্টান্টিনোপল’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৩৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক তুরস্কের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষিত হয়। বর্তমানে দেশটিতে ২০৮টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।

তুরস্কের উচ্চশিক্ষা পদ্ধতি
তুরস্কের উচ্চশিক্ষা (YÖK) নামক উচ্চশিক্ষা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা পদ্ধতি একই ধরনের। বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্য অনুষদ একই ধরনের কারিকুলাম অনুসরণ করে। একজন ছাত্র পিএইচডিতে এনরোলমেন্টের পর তাঁকে প্রথম বছর বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত রকমভেদে ৮-১০টি কোর্স করতে হয়। এর মধ্যে রিসার্চ মেথডলজি কোর্সটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক থাকে। অন্যান্য কোর্স শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দ মতো নিতে পারেন। কোর্স পছন্দের ক্ষেত্রে ছাত্ররা সম্পূর্ণ স্বাধীন; তবে বলে রাখা ভালো, প্রতিটি কোর্স এমনভাবে সাজানো যে কোর্সগুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজে তাঁর গবেষণার এরিয়া নির্বাচন করতে পারেন। একজন শিক্ষার্থী দুই-তিন সেমিস্টারে কোর্সগুলো সম্পন্ন করে থাকেন; তবে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের এই কোর্সগুলো সম্পাদনের আগে এক বছরের বাধ্যতামূলক তুর্কি ভাষায় ডিপ্লোমা করতে হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পিএইচডি সময়কাল পাঁচ বছর ও তুরস্কের বৃত্তি প্রদান সংস্থাগুলো পাঁচ বছরের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। একজন শিক্ষার্থী পিএইচডি কোর্স ওয়ার্ক সম্পন্ন করে তাঁকে একটি কম্প্রিহেনসিভ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টারে কমপক্ষে ২০-২৫টি বিষয়ভিত্তিক ক্লাসিক্যাল বই পড়তে হয়। পরীক্ষা বোর্ড পাঁচজন বিষয়ভিত্তিক এক্সপার্ট প্রফেসরের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এর মধ্যে তিনজন প্রফেসর নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং দুজন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের। একজন শিক্ষার্থীকে দুটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেই ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এ পরীক্ষায় অকৃতকার্যের সংখ্যাও কম নয়; তবে তাঁরা শেষ চেষ্টা হিসেবে আরেকবার সুযোগ নিতে পারেন। পরীক্ষায় কৃতকার্য ছাত্ররা তাঁর সুপারভাইজারের পরামর্শে রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করেন। এবার রিসার্চ প্রপোজাল মূল্যায়নের জন্য তিনজন প্রফেসরের সমন্বয়ে থিসিস মনিটরিং কমিটি গঠিত হয়। তাঁদের কাছে রিসার্চ প্রপোজাল উপস্থাপনের পর তাঁরা রিসার্চ প্রপোজালটি মূল্যায়ন করেন এবং তাঁদের বিবেচনায় প্রপোজালটি ভালো মানের হলে কমিটির সুপারিশে তা নিজ ইনস্টিটিউটে মূল্যায়নের জন্য পাঠান। সেখানে অনুমোদন হলে সর্বশেষ প্রপোজালটি উচ্চশিক্ষা কমিশন ও স্কলারশিপ অথোরিটির কাছে উপস্থাপিত হয়। সেখান থেকে মূল্যায়নের পরই একজন গবেষক তাঁর গবেষণাকর্ম শুরু করতে পারেন। চূড়ান্ত থিসিস সাবমিশনের জন্য তাঁকে কমপক্ষে তিনটি সেমিনার ও ইনডেক্স জার্নালে দুটি আর্টিকেল প্রকাশ করতে হয়। 

উচ্চশিক্ষা বৃত্তি
তুরস্কে উচ্চশিক্ষাকে লুর্কেটিভ করার জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি অনেক বৃত্তি রয়েছে। বৃত্তিগুলো যেমন তুর্কি নেটিভ স্টুডেন্টদের জন্য; তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য বেশ কিছু বৃত্তি রয়েছে। সরকারি বৃত্তি হিসেবে তুর্কি বুর্সলারি বা তুরস্ক সরকারের শিক্ষা বৃত্তি, যা প্রতিবছর আন্তর্জাতিক ছাত্রদের প্রদান করে থাকে। প্রতিবছর জানুয়ারিতে এই বৃত্তির প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীরা এই বৃত্তিতে আবেদন করতে পারেন। প্রথমে একটি শর্ট সিলেকশন এবং পরে নিজ নিজ দেশের তার্কিশ অ্যাম্বাসিতে ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী তুরস্কে আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট, পড়াশোনার সব খরচ, স্বাস্থ্যবিমার আওতায় ফুল-ফ্রি চিকিৎসা, ফুল-ফ্রি হলে থাকা-খাওয়া ও নিজের চলার জন্য শিক্ষাসহায়তা হিসেবে ১ হাজার ৮০০ লিরা পেয়ে থাকেন। তবে পিএইচডি শিক্ষার্থীরা হলে না থাকলে মোট ৩ হাজার লিরা পান। ২০২০ সাল থেকে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও তুরস্ক সরকার যৌথভাবে একটি আন্তর্জাতিক বৃত্তি চালু করেছে; যা প্রতিবছর মার্চ মাসে প্রকাশিত হয় এবং এর স্কলারশিপ পরিমাণ বেশ ভালো। এ ছাড়া তুরস্কের ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিং ও দেশীয় র‍্যাঙ্কিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য নিজস্ব স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিজ্ঞান অনুষদের অনেক প্রথিতযশা প্রফেসরের নিজস্ব পিএইচডি ফান্ড থাকে; যা একজন শিক্ষার্থী তাঁর মেধা ও ইন্টারেস্ট দিয়ে প্রফেসরদের কনভিন্স করতে পারলে পিএইচডি বৃত্তি লাভ করেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস ((TÜPİTAK) স্কলারশিপ ফান্ডিং করে থাকে। 

তুর্কি ভাষা শিক্ষা
একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে তুর্কি ভাষা শিখতে হয়। কারণ, তাদের মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন তুর্কিতে। মজার বিষয় হলো, পৃথিবীর ক্ল্যাসিক্যাল এমন কোনো বই নেই যে সেটার তর্কি অনুবাদ নেই। এ জন্য তারা বিদেশি, বিশেষ করে কলোনিয়াল ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে অতটা গুরুত্ব দেয় না। এমনকি তাদের মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা আইনশাস্ত্র তুর্কিতে পড়ানো হয়। তুর্কি একটি সমৃদ্ধ ভাষা, যা আগে উসমানীয় তুর্কি ভাষা নামে পরিচিত ছিল। ১৯২৮ সালে আধুনিক তুরস্কের জনক কামাল আতাতুর্ক উসমানীয় হরফ পরিবর্তন করে লাতিন হরফ প্রবর্তন করেন। ভাষাটি এতটাই নান্দনিক যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এক বছরের মধ্যে তা রপ্ত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। ভাষা শিক্ষার জন্য তুরস্কের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট রয়েছে। অবশ্য বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগে ইংরেজি মাধ্যম চালু করেছে। একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে তাঁর থিসিস লিখতে পারেন, এ ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম নিয়ম বিদ্যমান—তা হলো, তত্ত্বাবধায়কের সম্মতি ও সে তত্ত্বাবধায়কের ইংরেজি ভাষা (YDS) পরীক্ষায় ৮৫ মার্কস থাকতে হবে, ধরুন তা IELTS-এর সমমান ৮.৫-এর মতো, অর্থাৎ সুপারভাইজার ইংরেজি ভাষায় পণ্ডিত না হলে তিনি ইংরেজিতে থিসিস মূল্যায়ন করতে পারেন না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তুর্কি প্রফেসররা খুবই একাডেমিক; কেননা তাঁদের নিয়োগ-প্রক্রিয়া অত্যন্ত কাঠামোবদ্ধ।

আনিসুর রহমান, পিএইচডি রিসার্চ স্কলার,তুরস্ক ও সহকারী অধ্যাপক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎জকসু নির্বাচনে প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৪ দফা দাবি

জবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৫৪
জকসু নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জকসু নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চার দফা দাবি জানিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা চার প্যানেলেসহ স্বতন্ত্র পদপ্রার্থীরা। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে উপাচার্য বরাবর সম্মিলিতভাবে এ দাবি জানান তাঁরা। ‎

‎এ বিষয়ে ছাত্রশিবির সমর্থিত অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ ‎বলেন, ‘আমরা প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জকসু নির্বাচনকে ঘিরে সম্মিলিতভাবে চার দফা মৌখিক দাবি জানিয়েছি। প্রশাসন থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে সবগুলো পূরণ করতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’ ‎

‎সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সমর্থিত মওলানা ভাসানী ব্রিগেড প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী গৌরব ভৌমিক বলেন, ‘আমরা যে দাবি জানিয়েছি, তা অবশ্যই পূরণ করা লাগবে—এটা আমাদের অধিকার।’ ‎

এর আগে সকালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পরপরই ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে আন্দোলন চালান তাঁরা। ‎

‎শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে আবারও সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়। সভা শেষে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হলেও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ ‎

‎চার দফা দাবি হলো—জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ৬ জানুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত করতে হবে। নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো সদস্য পদত্যাগ করতে পারবেন না। নির্বাচন শেষে যেসব সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন স্থগিতের পেছনে কোনো দলীয় বা রাজনৈতিক চাপ ছিল কি না, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: জকসু নির্বাচন পিছিয়ে ৬ জানুয়ারি

জবি প্রতিনিধি‎
জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ পিছিয়ে আগামী ৬ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এই ভোট গ্রহণ সাত দিন পেছাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

‎‎আজ ‎মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎

‎তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আজ সকালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেন উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম। এতে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা উপাচার্য ভবন ঘেরাও করেন। বিক্ষোভকারীরা তফসিল অনুযায়ী আজই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।

‎শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকা হয়।

সভা শেষে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হলেও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: বুধবারের বৃত্তি পরীক্ষা স্থগিত, হবে ৫ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫০
খালেদা জিয়ার মৃত্যু: বুধবারের বৃত্তি পরীক্ষা স্থগিত, হবে ৫ জানুয়ারি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় এ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জুনিয়র বৃত্তির বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরীক্ষাটি আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শোক এবং বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বুধবারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ওই পরীক্ষা আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।’

পরীক্ষা স্থগিত ও নতুন তারিখ ঘোষণা দিয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলো বিজ্ঞপ্তি জারি করছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভিত্তিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রোববার বাংলা, সোমবার ইংরেজি, মঙ্গলবার গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবারের বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৫ জানুয়ারি।

বাংলা, ইংরেজি, গণিত বিষয়ে আলাদা আলাদা পরীক্ষা হলে বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা হবে একসঙ্গে।

বৃত্তি পরীক্ষার মোট নম্বর হবে ৪০০। বাংলায় ১০০, ইংরেজিতে ১০০, গণিতে ১০০, বিজ্ঞানে ৫০ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। প্রতিটি পরীক্ষা হবে ৩ ঘণ্টা সময়ে।

এ পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ‘ট্যালেন্টপুল’ কোটায় ও ‘সাধারণ’ কোটায় শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎জকসু নির্বাচন স্থগিত, ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

  জবি প্রতিনিধি
ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর উপাচার্যের ভবন ঘেরাও করে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে এ উত্তাল পরিস্থিতির মাঝে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

‎আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। এদিন সকাল থেকেই ভোট দেওয়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তবে ভোটের অনিশ্চয়তায় ক্যাম্পাস ছাড়ছেন তাঁরা।

‎গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান সোহাগ বলেন, জীবনের প্রথম ভোট দিতে ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে সেই সুযোগ আর হলো না। জানি না কবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এজন্যই বাসায় ফিরে যাচ্ছি।

‎সমাজকর্ম বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মায়িশা ফাহমিদা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে এক ধরনের ভিন্ন অনুভূতি কাজ করছিল। কিন্তু যা প্রশাসন করল, তা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। ভোট যেহেতু হবে না, তাই ক্যাম্পাসে থাকার আর কোনো মনমানসিকতা নেই এ কারণেই চলে যাচ্ছি। ‎

‎এর আগে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জকসু নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। আজ সকাল সোয়া ৯টায় নির্বাচন স্থগিতের এ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে।

‎‎তবে এ ঘোষণার পর ভিসি ভবন ঘেরাও করে আন্দোলন শুরু করেন প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিসি ভবন ঘেরাও করে নির্বাচন আদায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত