Ajker Patrika

ওভারকোটে রক্ত লাগেনি, লেগেছে মলমূত্র

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৯: ৩৫
ওভারকোটে রক্ত লাগেনি, লেগেছে মলমূত্র

আমাদের দেশের কোনো কথা বলছি না। বলছি রাশিয়ার কথা। বলছি কসেনিয়া সাবচাকের কথা। লাস্যময়ী এই কোটিপতি রাশিয়ায় শুধু নন, সারা বিশ্বের অভিজাত মহলে ব্যাপক পরিচিত। যে ঘটনাটি ঘটেছে ৯ অক্টোবর, তাতে তিনি কোনো ধরনের অঘটন ঘটাননি। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা শোনার পর আপনারাই বলবেন, আসলে এখানে কসেনিয়ার কিছু করার ছিল কি না।

অনেকেই রাশিয়ায় পুতিনের লৌহশাসনের কথা বলেন। বলেন, সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। অথচ সেই রাশিয়ার একটি পত্রিকার সাংবাদিক যদি এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে, সংবাদপত্র এখনো তার মূল দায়িত্ব ভুলে যায়নি। তারা ন্যায় ও অন্যায়ের যুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর হিম্মত রাখে।

অনেকেই ভুলে যাননি, এই তো কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগরীর একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে একটি কমবয়সী মেয়ের আত্মহত্যাবিষয়ক খবর ছাপা হওয়ার পর আমাদের সাংবাদিক মহলের একটা বিশিষ্ট চেহারা ভেসে উঠেছিল। নগ্নভাবে মেয়েটিকে দোষারোপ করা হয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ ছাপা হয়নি অনেক বড় পত্রিকায়, যার দিকে ছিল সন্দেহের তির, তাকে পয়গম্বর বানানোর প্রতিযোগিতা হয়েছে। 

সেই কথা মনে রেখেই আমরা রাশিয়ার গল্পটা বলব। বলার চেষ্টা করব, টাকা মানুষকে কতটা অমানবিক করে তোলে। এবং এখানে একবারও বলব না, করোনার ভয়াবহ বিস্তারের সময়টায় গার্মেন্টসশিল্পের কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে বাধ্য করেছিলেন। ফেরিতে, রাস্তায় ধাবমান মানুষদের ছবি দেখে আমরা অনুমান করে নিয়েছি, এ যেন ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দানবের হাতে পড়েছি, যাদের হৃদয় আর মস্তিষ্ক দুই ধরনের কথা বলে। মস্তিষ্কের সঙ্গে হৃদয়ের কোনো যোগাযোগ নেই।

না, সে কথা এখানে বলা হবে না।

ঘটনাটা বলা যাক। ৯ অক্টোবর রাত ৯টার সময় রাশিয়ার দক্ষিণের শহর ক্রাসনাদারের কাছে আদলের আর ক্রাসনাইয়া পোলইয়ানায় কসেনিয়া সাবচাক যে মার্সেডিজ গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল একটি ফক্সওয়াগন গাড়ির। সেই গাড়িতে থাকা দুজন আরোহী নিহত হয়েছিলেন। আর একজন আরোহী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন হাসপাতালে।

দুর্ঘটনার পর নিজের দেহরক্ষীদের সাহায্যে কসেনিয়া সাবচাক তক্ষুণি আরেকটি গাড়ি জোগাড় করে তাতে চড়ে বসেছেন। এবং যেন কিছুই হয়নি, সে রকমভাবে দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যামবুলেন্স ডেকে আনেন। পুলিশকে খবর দেন।

সাংবাদিকদের কানে খবরটা পৌঁছায় পরদিন; ১০ অক্টোবর। তখনই জানা যায়, একটি কনসার্টে অংশ নেওয়ার জন্য কসেনিয়া মস্কো থেকে এসেছিলেন সোচিতে। কনসার্ট শেষে মস্কো ফেরার জন্য এয়ারপোর্টের উদ্দেশে দলবলসহ রওনা হওয়ার পরই এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।

এ কথা সত্যি, দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে মার্সেডিজ–এর চালক। দুর্ঘটনার সঙ্গে কসেনিয়া সাবচাকের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি ছিলেন ভাড়া করা গাড়ির আরোহী মাত্র। ফলে এভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় আইনগত কোনো সংকটও তৈরি করেননি।

সংকট যেটা তৈরি হয়েছে, সেটা নৈতিক। এত বড় মাপের, এতটা জনপ্রিয় একজন মানুষ এত বড় একটা দুর্ঘটনার পর কীভাবে কোনো দায়িত্ব না নিয়ে জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন? শুধু কি তাই? এই দুর্ঘটনার পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে একটা পোস্ট করেন তিনি। কীভাবে সুখের নাগাল পাওয়া যায়, তা নিয়েই ছিল পোস্টটি।

দুর্ঘটনাটি নিয়ে কসেনিয়া সাবচাক প্রথম মুখ খোলেন ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টায়। তিনি লেখেন—‘আমি সেই গাড়িতে ছিলাম। গাড়িটাও আমার ছিল না, চালকও নয়। আমি গাড়িটাকে প্রতিযোগিতায় নামতে বলিনি। কেউই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়নি। যখন গাড়িটা যাচ্ছিল, তখন আমি জুম মিটিংয়ে ছিলাম, তার প্রমাণ রয়েছে। গাড়ির চালকই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এ কথা বলে তিনি নিজে মাথায় আঘাত পেয়েছেন, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন, তারপরও হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে মস্কোর প্লেনে ওঠার কথাই ভেবেছেন। তা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু সকাল সকাল ইনস্টাগ্রামে সুখ নিয়ে এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিলেন কেন, তার উত্তরে কসেনিয়া বলছেন, ‘ওটা অলক্ষ্যে হাতের ছোঁয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে দিতে চাননি।’

কথাটা বিশ্বাস করা যায় কিনা, সেটা আপনারাই বিচার করবেন।

এবার দেখুন, ডেইলি স্টর্মের সম্পাদক আনাস্তাসিয়া কাশেভারোভা বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে কী লিখেছেন: ‘আমিই পোস্টটা দিয়েছি। ঘোড়ার গাড়িটা আমার না, ঘোড়াটাও না। আমার সহকারী এইমাত্র আমাকে রান্নাঘর থেকে হল ঘরটায় নিয়ে এল। আমি খুব ভালো মেয়ে, এই দুর্ঘটনায় খুব বেশি আঘাত পেয়েছি। অন্যদের চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি। আমার খুব মাথা ব্যথা করছে। আমাকে সাহায্য করুন। আমার জন্য দোয়া করুন। অন্যদের জন্য দোয়া করে লাভ নেই। ওরা মরে গেছে। ওদের তো আর সাহায্য করতে পারবেন না। মরা মানুষের সাহায্য লাগে না। আমার সাংবাদিক বন্ধুরা অকারণেই এই দুর্ঘটনা নিয়ে বাড়িয়ে কথা বলছে!’ কসেনিয়াকে এভাবে ব্যঙ্গ করার পর তিনি লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, যারা কসেনিয়াকে স্পনসর করে, তারা যেন এখন তার দিক থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। একটা দৈত্যের জন্ম দিয়েছেন তারা। হৃদয়হীন, অহঙ্কারী, বিবেকহীন এক দৈত্য! স্পনসরেরা বহু আগে থেকেই সেটা জানে, এখন শুধু সম্পর্ক শেষ করে দেওয়াটাই তাদের দিক থেকে একমাত্র কাজ হতে পারে। সাবচাকের ক্যারিয়ারে ক্রুশ পুঁতে দেওয়ার সময় এসেছে। ওকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই।’

তবে কেউ কেউ বলছেন, এ মুহূর্তে কসেনিয়া সাবচাককে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বরং যারা নিহত হয়েছেন এই দুর্ঘটনায়, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। এদের মধ্যে আছেন টেলিভিশন ও রেডিও সাংবাদিক মাক্সিম কোনোনেঙ্কো।

তবে রুস্কি রেপার্তিওর–এর সহকারী সম্পাদক মারিনা আখমেদোভা ঝাঁঝের সঙ্গে লিখেছেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন যে বিষয়টি আলোচনায় থাকবে, সেটি হলো, এয়ারপোর্টে যারা যাচ্ছিলেন ট্যাক্সিতে করে, তার যাত্রী কি এই ব্যাপারে অপরাধী? তিনি কি চালককে দ্রুত চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে চালক সীমাহীন গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে সামনের গাড়ির দুজন যাত্রীকে হত্যা করেছেন এবং তৃতীয়জনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায়? যদি সত্যিই নিরপেক্ষভাবে ভাবা যায়, তাহলে দেখা যাবে, হঠাৎ করে এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে গাড়ির চালকের খুব একটা গরজ থাকার কথা নয়। সে তো আর প্লেন মিস করছে না। যেভাবেই যাক না কেন, সে তার ভাড়া ঠিকই পেয়ে যাবে। সে তার গাড়ি জোরে চালাবে তখনই, যখন গাড়ির যাত্রী তাকে বলবে গতি বাড়াতে। সমাজবদ্ধ মানুষেরা সেই গাড়ির যাত্রীর নৈতিক অবস্থাটাও দেখবে, যে গাড়িটি দুজন মানুষকে হত্যা করেছে। তাহলে প্রশ্নটা হবে এ রকম: ট্র্যাজেডির জায়গা থেকে অন্য একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে যাত্রী কি এভাবে চলে যেতে পারেন? নৈতিকভাবে কি এভাবে চলে যাওয়া সম্ভব? এই কথা নিয়ে লেখালেখি চলতেই থাকবে এবং একসময় মানুষ তা ভুলে যাবে। এ কারণে ভুলে যাবে না যে, যাত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, এ কারণে ভুলে যাবে যে, এই যাত্রীর কাছ থেকে এই আচরণই আশা করা যায়, আর কিছুই সে শেখেনি।’

ফক্সওয়াগনের যে দুজন যাত্রী মারা গেছেন, তাঁদের একজন ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী ইকাতেরিনা তারাসোভা। তিনি মেডিটেশনের শিক্ষক। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকাকেই বেছে নিয়েছি, আমি বাঁচতে চাই, আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’

৩৯ বছর বয়সী মার্সেডিজ চালক আলেগ ৎসোই এরই মধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এখন পুলিশের জিম্মায় আছেন।

দুই.
কসেনিয়া আনাতোলিয়েভনা সাবচাক তাঁর ওভারকোটে যেন অন্যের রক্ত না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে এখন পুরো ওভারকোটটা মাখিয়ে ফেলেছেন মলমুত্রে। কাপুরুষতা, বিবেবহীনতাই সাবচাকের ভিত্তিমূল।

ভেবে দেখুন, সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, যা ঘটেছে তা বাস্তবজীবনে। এটা বাস্তবজীবনের দুর্ঘটনা, এটা বাস্তব জগতের মৃত্যুদৃশ্য। যে গাড়িতে কসেনিয়া ছিলেন, সেই গাড়িটাই আঘাত করেছে অন্য একটি গাড়িকে, সে গাড়ির আরোহীদের মধ্যে দুজন নিহত হয়েছেন, আর কসেনিয়া কী করেছেন? তিনি লাশগুলোকে ঘটনাস্থলে রেখেই প্লেনে করে মস্কো চলে গেছেন। সামনে দর্শক নেই, স্টুডিওতে শো হচ্ছে না, আশপাশে কেউ নেই, কেউ দেখবে না। সুতরাং কসেনিয়া কাউকে কিছু না বলে প্লেনে করে উড়ে যেতেই পারেন। যেহেতু কেউ চিনতে পারেনি, সুতরাং ইনস্টাগ্রামে পরবর্তী অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও পোস্ট করতে পারেন।

কিন্তু হায় কপাল! এত ঢাক ঢাক গুড়গুড়ের মধ্যেও অনেকে জেনে ফেলেছেন মার্সেডিজে ছিলেন কসেনিয়া!

কসেনিয়া লিখেছেন, তিনি মাথায় ব্যথা পেয়েছেন, এখানে ওখানে ছুলে গেছে। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট কী বলছে? ‘দুর্ঘটনায় কসেনিয়া সাবচাক আহত হননি, পুলিশ আসার আগেই তিনি দুর্ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন।’ বিমানবন্দরে থাকা সিসি ক্যামেরা কী বলছে? ক্যামেরা বলছে, বেশ উৎফুল্ল মেজাজে কসেনিয়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে প্লেনের দিকে যাচ্ছেন। এটা সেই দুর্ঘটনার মাত্র ৪০ মিনিট পরের ঘটনা।

কসেনিয়া অবশ্য লিখেছেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সাহায্য করব।’

বলেছেন তিনি। এ রকম অনেকেই বলেন। তারপর সে প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় ভেসে যায়। শুনুন, যিনি মারা গেছেন, তাঁর বান্ধবী কী বলছেন, তিনি এই দুর্ঘটনার পর কসেনিয়ার কাছে গিয়ে বলেছিলেন নিহতের ছয় বছর বয়সী মাশার কথা। সাবচাক একেবারেই পাত্তা দেননি। সুতরাং ওটা যে কথার কথা ছিল, সে রকম ভাবলে, তা খুব দোষের কিছু হবে না।

একজন সেলিব্রিটি বলে অনেকেই কসেনিয়ার ভক্ত। অনেকের জন্যই তিনি উদাহরণ। কিন্তু বাস্তব জীবনে তাঁর যে চেহারা দেখা গেল, সেটা তাঁর পর্দার জীবনের একেবারে বিপরীত।

এখন হয়তো-বা তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু এই পরিবর্তনটি আসবে সত্যিকারের দুটি মৃত্যুর পর!

তিন.
এই যে এত কথা বলা হলো, তাতে কি বোঝা যাচ্ছে, রুশ দেশে সাংবাদিকেরা সেলিব্রিটিদেরও ছেড়ে কথা বলে না? পুলিশ অবলীলায় বলে দেয়, ৪০ মিনিট আগে যিনি ছিলেন দুর্ঘটনায় পতিত গাড়িতে, তিনি হাসতে হাসতেই উঠেছেন প্লেনে! নাহ! রাশিয়াকে নিয়ে হাসাহাসি বন্ধ করাই ভালো।

সেলিব্রিটি যদি অপরাধী হয়, হোক না সেটা নৈতিক অপরাধ, তারপরও তাঁকে দাঁড়াতে হয় বিবেকের কাঠগড়ায়।

দোহাই কেউ মনে করবেন না, এসব কথা বলে আমি অন্য কোনো দেশকে কটাক্ষ করছি।

সবকিছু ভালো থেকে ভালোতর হচ্ছে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

বিষয়:

অপরাধ
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত