Ajker Patrika

চীনের সস্তা ইস্পাতে দেশীয় শিল্পে রক্তক্ষরণ, রপ্তানিকারক ভারত এখন আমদানিকারক

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৬
চীনের সস্তা ইস্পাত বাজারে ঢুকে পড়ায় ভারতের নিজস্ব ইস্পাত উৎপাদন কমে যেতে শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত
চীনের সস্তা ইস্পাত বাজারে ঢুকে পড়ায় ভারতের নিজস্ব ইস্পাত উৎপাদন কমে যেতে শুরু করেছে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের নির্মাণ খাতের উত্থান, ঝাঁ তকতকে সুউচ্চ ভবন এবং বহু লেন বিশিষ্ট মহাসড়কের ব্যাপক বৃদ্ধির সময়ে দেশটির ঘরোয়া ইস্পাত বিক্রি বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু ভারতের ইস্পাত কারখানাগুলোতে এখন বিপুল পরিমাণ পণ্য পড়ে আছে বিক্রির অপেক্ষায়। সস্তা চীনা ইস্পাতের স্রোত ভারতের ছোট ইস্পাত মিলগুলোকে উৎপাদন কমাতে এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাবতে বাধ্য করছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যারা আমদানি ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে।

ভারত এক সময় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক দেশ হিসেবে পরিগণিত হলেও গত অর্থবছরে দেশটি বিপুল পরিমাণ ইস্পাত আমদানি করেছে। যা ভবিষ্যতের অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং ইস্পাতনির্ভর শিল্পগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নয়া দিল্লিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ভারতের মোট ইস্পাত উৎপাদনের ৪১ শতাংশের জোগান দেয় ছোট এবং মাঝারি আকারের ইস্পাত মিলগুলো। এগুলোতে প্রায় ১৫ লাখের বেশি মানুষ কাজ করে। তবে গত ছয় মাসে এসব মিলের উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে বলে এক ডজনেরও বেশি মিলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পাঞ্জাবের মান্ডি গোবিন্দগড়, যা ‘ইস্পাত সিটি’ নামে পরিচিত—সেখানকার মিলগুলো চীনা আমদানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। চীনা ইস্পাত প্রায়ই ভারতীয় ইস্পাতের তুলনায় ১০ শতাংশ কম দামে বিক্রি হয়।

পাঞ্জাবের ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জোগিন্দ্রা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর আদর্শ গর্গ বলেন, ‘যদি আমরা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে না পারি, তাহলে আমাদের কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হব আমরা।’ পণ্যে মূল্যছাড় দিয়েও জোগিন্দ্রা গ্রুপের বিক্রি গত ছয় মাসে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। ফলে উৎপাদনও এক-তৃতীয়াংশ কমাতে হয়েছে বলে জানান গর্গ।

বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার মহাপরিচালক রাজু জন বলেন, ‘নির্মাণ ও প্রকৌশল কোম্পানিগুলো সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য চীনা ইস্পাতের দিকে ঝুঁকছে। চীনা ইস্পাত প্রতি মেট্রিক টনে ২৫ থেকে ৫০ ডলার কম দামে বিক্রি হয়, কখনো কখনো ৭০ ডলার পর্যন্ত কম।’

চীন থেকে সমাপ্ত ইস্পাত আমদানি এই বছর রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে, যা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত হট-রোলড ইস্পাত এবং অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত গ্যালভানাইজড ইস্পাতও রয়েছে। এই আমদানি দেশীয় বিক্রয়কে ধাক্কা দিয়েছে এবং চীনের নিম্ন দামের কারণে ভারতীয় রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে যত ইস্পাত উৎপাদন হয় তার চেয়েও বেশি ইস্পাত একা উৎপাদন করে চীন এবং বিশ্ববাজারে কম দামে ইস্পাত সরবরাহের কারণে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে দেশটির বিরুদ্ধে। এই উৎপাদন ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের আবাসন খাতে সংকটের ফলে অভ্যন্তরীণ নির্মাণ শিল্পে চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিদেশি ইস্পাতের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে, এমনকি শক্তিশালী স্থানীয় শিল্প থাকা দেশগুলোকেও।

ভারতীয় ইস্পাত অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, কম দামে বাড়তে থাকা আমদানি এবং রপ্তানি সুযোগ কমে যাওয়া বর্তমানে ভারতীয় ইস্পাত শিল্পের টিকে থাকার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে মুনাফা মার্জিন ৬৮ শতাংশ থেকে ৯১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ায় ইস্পাত কোম্পানিগুলো সম্প্রসারণ পরিকল্পনা শুরু করতে হিমশিম খাচ্ছে। দামও কমেছে, নির্মাণে ব্যবহৃত হট-রোলড কয়েলের দাম এ বছরের শুরুতে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে।

ছোট ইস্পাত কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বড় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান যেমন জেএসডব্লিউ ইস্পাত এবং টাটা ইস্পাতও উদ্বিগ্ন। তারা চীনা আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য অ্যাসোসিয়েশনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছে।

আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া—যা চার থেকে ছয় মাস সময় নিতে পারে—শিল্পের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা এবং পরবর্তী সময়ে সরকারের তদন্তের ওপর নির্ভরশীল। এই তদন্তে নির্ধারণ করা হবে যে, চীনা আমদানি ভারতীয় ইস্পাত মিলগুলোর ক্ষতি করছে কিনা। ভারত ২৫ লাখ কর্মীর এই শিল্পে ব্যাপক ছাঁটাই এড়াতে আগ্রহী। কারণ, দেশের বাড়তে থাকা জনসংখ্যার কর্মসংস্থানে ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশটি।

ভারতের দ্রুত উন্নয়নের জন্য ইস্পাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—নতুন আবাসন প্রকল্প থেকে শুরু করে বিশাল অবকাঠামোগত প্রকল্প পর্যন্ত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বড় অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ইস্পাত কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতের চাহিদা মেটানো যায়।

চীন থেকে আমদানির কারণে ভারতের ইস্পাত মিলগুলো চাপে রয়েছে। উত্তর প্রদেশের গুডলাক ইন্ডিয়া ইস্পাত মিলের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার সাগর যাদব বলেন, ‘জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা যে রপ্তানি আদেশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তা পাইনি কারণ আমরা চীনের সঙ্গে ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় হেরে গেছি।’

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পুনের নিও মেগা ইস্পাত চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে গাড়ি শিল্পের ক্রয়াদেশ হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেদান্ত গোয়েল। আর পশ্চিম মহারাষ্ট্রে ভাগ্যলক্ষ্মী রোলিং মিল রপ্তানিতে তীব্র পতনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিলটির পরিচালক নিতিন কবরা জানিয়েছেন, তিনি আগামী বছরের শুরুতে উৎপাদন কমানোর পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘চীনা আমদানির কারণে আমাদের মুনাফা এবং মনোবল উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাম এতটাই কমে গেছে যে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, সম্পদ ছাড়াল ৭০০ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৪
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

পে প্যাকেজ বা বেতন-ভাতাসংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সম্পদ গত শুক্রবার রাতে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট মাস্কের ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেসলা স্টক অপশনগুলো পুনর্বহাল করার পরই তাঁর সম্পদে এই বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর আদালত এই সুবিধাগুলো বাতিল করেছিলেন।

২০১৮ সালে মাস্কের যে বেতন প্যাকেজের মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেটিই গত শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বহাল করেন। এর দুই বছর আগে নিম্ন আদালত ওই পারিশ্রমিক চুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, ২০২৪ সালে দেওয়া যে সিদ্ধান্তে বেতনের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না এবং মাস্কের প্রতি অন্যায্য ছিল।

এর আগে চলতি সপ্তাহে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স শেয়ারবাজারে আসতে পারে—এমন প্রতিবেদনের পর মাস্কের সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা আলাদাভাবে মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ। বিনিয়োগকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসভিত্তিক এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে মাস্কের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদমূল্য গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের চেয়ে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ল্যারি পেজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তথ্য জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। একই তথ্য বারবার ছাপিয়ে আলাদা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হতো। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্প্রতি চালু করেছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)।

নতুন এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানি ও ফান্ডগুলো মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য রেগুলেটরি ফাইলিং কাগজ ছাড়াই অনলাইনে জমা দিতে পারবে। এতে সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং ট্র্যাকিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি নতুন মডিউল যুক্ত হওয়ায় এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য একই ডিজিটাল গেটওয়ে দিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব। ফলে দ্বৈত সাবমিশনের ঝামেলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগুজে নথির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সাবমিশন শুধু সুবিধার বিষয় নয়, এটি বাজার শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোগত পরিবর্তন।

ডিএসই জানায়, চায়নিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কাজ করে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর পর সিস্টেমটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ফিচার যুক্ত করা সহজ হবে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, একক ডিজিটাল সাবমিশন পয়েন্ট চালু হওয়ায় ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপজনিত ভুল কমবে এবং তথ্য জমার প্রতিটি ধাপ ডিজিটালি যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব শুধু স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হতে যাচ্ছে কক্সবাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও নগদ লেনদেনমুক্ত (ক্যাশলেস) রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই তথ্য জানান।

গভর্নর বলেন, ‘২০২৭ সালের মধ্যে দেশের অন্তত ৭৫ শতাংশ খুচরা লেনদেন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা শীর্ষক এই সভায় গভর্নর চট্টগ্রামকে দেশের ‘অর্থনৈতিক লাইফলাইন’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প এবং জ্বালানি অবকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু এই চট্টগ্রাম। সিঙ্গাপুর, দুবাই বা হংকংয়ের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংযোগ শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে শিগগিরই ২৪ ঘণ্টা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সিস্টেম চালু করা হবে বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এটি একটি তাৎক্ষণিক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ব্যবস্থা যা বাণিজ্যের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএমই) এবং কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ও সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন গভর্নর। জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার, ব্যাংকার, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

  • ৩৩ মাস অব্যবহৃত পড়ে ছিল ফান্ডের অর্থ
  • অভিযুক্ত কর্মকর্তা আগাম স্বেচ্ছা অবসরে
  • দায়িত্বে অবহেলায় জরিমানা ১ লাখ টাকা
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম 
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

দেশের একমাত্র গাড়ি প্রস্তুত ও সংযোজনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ড ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ ৩৩ মাসের অবহেলায় অন্তত ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অথচ এই ক্ষতির দায়ে তদারকি কর্মকর্তার কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। বিশাল ক্ষতির বিপরীতে সামান্য দণ্ডে দায় নিষ্পত্তির ঘটনা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশ্ন ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ফান্ড দেখভালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিললেও তিনি শর্তসাপেক্ষে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে দায়িত্বমুক্ত হয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর তাঁর অবসর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তিনি গত ৩১ আগস্ট থেকে আগাম অবসরে যান। ২১ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেন এবং তাঁর অবসর মঞ্জুর করা হয়।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, আমি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্টের সদস্য নই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফান্ডের দেখভাল করেছি। ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর ভুলবশত তা রিনিউ করা হয়নি। দোষটা আসলে ব্যাংকের, বিষয়টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। সে কারণে আমরা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গ্র্যাচুইটি ফান্ড পরিচালনার পূর্ণ দায় ট্রাস্টি বোর্ডের সাত সদস্যের। তারপরও আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, আমি তা মোকাবিলা করেছি এবং ১ লাখ টাকা জরিমানাও গুনেছি। এটি অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, কর্মচারীদের জন্য গঠিত ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্ট’-এর ২ কোটি টাকা ২০১২ সালের ২৪ জুলাই জনতা ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড (আগ্রাবাদ) শাখায় ডাবল বেনিফিট স্কিমে জমা রাখা হয়। ছয় বছর মেয়াদি এ স্কিমে সুদের হার ছিল ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সুদে-আসলে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩৩ মাস ওই অর্থ একইভাবে ব্যাংকে পড়ে থাকে। এ সময়ে না প্রগতি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়, না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফান্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। এতে সম্ভাব্য মুনাফা হারিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

ঘটনাটি ধরা পড়ার পর ফান্ড তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১ মার্চ দেওয়া তাঁর ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। পরবর্তী সময়ে ১১ এপ্রিল প্রগতির তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগীয় প্রশাসনিক প্রধান মো. নুর হোসেন। সদস্য হিসেবে ছিলেন সহপ্রধান হিসাবরক্ষক গোলাম রাব্বি মোহাম্মদ সাদাত হোসেন এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশার।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে জনতা ব্যাংকের কাছে ৩৩ মাসের মুনাফা দাবি করা হয়। দেনদরবারের পর ব্যাংক সঞ্চয়ী বেনিফিটের আওতায় ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে। জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার ১ লাখ টাকা যোগ করে মোট উদ্ধার হয় ২৯ লাখ টাকা। ফলে এখনো অনাদায়ী থেকে যায় ৬৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ শেষে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয় না। এ কারণে ওই সময়ের বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ২৮ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি তাঁর আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের সময়কার সিদ্ধান্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত