Ajker Patrika

মায়ের নামে মুক্তার ‘নাহার কুটির’

মন্টি বৈষ্ণব
মায়ের নামে মুক্তার ‘নাহার কুটির’

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন ফারহানা আফরোজ মুক্তা। খুব ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নিজে কিছু করার। হয় বড় হয়ে ডাক্তার হবেন, নয়তো বাবার মতো শিক্ষক হবেন। কিন্তু উদ্যোক্তা হবেন সেটা কখনো ভাবেননি তিনি। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য ২০২০ সালে শুরু করেন অনলাইন ভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘নাহার কুটির’।

‘মেয়েদের বেশি পড়ালেখা করতে নেই’, ‘পড়াশোনা করে কি হবে’, ‘মেয়ের চাকরি হবে না বিয়ের বয়স শেষ হয়ে যাবে'—মেয়েদের ক্ষেত্রে এ কথাগুলো এখনো আমাদের দেশের অনেক গ্রামের প্রচলিত কিছু কথা। তাই ক্ষেত্রবিশেষে গ্রামের মেয়েদের লেখাপড়া করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। ফারহানা আফরোজ মুক্তা যে গ্রামে বসবাস করতেন, সেই গ্রামের পরিবেশ ছিল রক্ষণশীল চিন্তা চেতনার। তবে, তাঁর বাবা স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ায় লেখাপড়া করার সুযোগটা পান তিনি। তা না হলে শৈশবেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেত মুক্তার।

কুশির তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফুলদিনাজপুরের এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম মুক্তার। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাড়ির পাশে চিন্তামন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন চৌরাইট মহেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে কৃতিত্বের সঙ্গে ২য় স্থান অধিকার করে শেষ করেন শিক্ষাজীবন।

নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুক্তা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি টুকটাক হাতের কাজ করতাম। এ কাজগুলো আমার কাছে নেশার মতো ছিল। যে সময় খেলাধুলার বয়স ছিল, সে সময় আমি এই কাজগুলো নিয়ে বসে থাকতাম। নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে খুব আনন্দ লাগত। এক সময় হারিয়ে গেল আমার ভালো লাগার কাজগুলো। অ্যাডমিশন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, ভাইবা, ফিল্ডওয়ার্ক—এসব কাজে নিজেকে একসময় হারিয়ে ফেললাম। ২০১৯ সালে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে বিয়ে হয়। রংপুরে ছোট্ট একটা সংসার শুরু হয় আমাদের। সংসার চলত নিজেদের টিউশনির টাকায়।’

টিস্যু কভারকিন্তু এর মাঝে শুরু হয় মহামারি করোনা। আর থেমে যায় সবকিছু। কিন্তু চাকরির জন্য নির্ধারিত বয়স তো আর থেমে থাকে না। এ সময়টা ছিল মুক্তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। তখন তিনি কি করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আত্মীয়স্বজনরাও বলাবলি শুরু করে, ‘এত পড়ালেখা করে কি আর হলো, একটা চাকরিও তো হলো না’! মুক্তা বলছিলেন, ‘এ কারণে বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। বাড়িতে গেলেই সবার একই প্রশ্ন কবে চাকরি হবে? এই কথা শুনে খুব খারাপ লাগত।’

তবে বাবা-মা সব সময় মুক্তাকে অনুপ্রেরণা দিতেন। তাঁর কথায়, ‘বাবা–মা আমাকে কখনো হতাশ হতে দিতেন না। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা বলি, যখন আমি মাস্টার্স সেকেন্ড সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলাম। তখন একদিন ক্লাস এইটের আমার এক ভাতিজির বিয়ের খবর শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম। মানে আমাদের গ্রামের মেয়েরা পড়ালেখা শেষ না করেই কম বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে নিত। আমার এই এত দূর আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবা-মায়ের। মেয়ের পড়াশোনার জন্য তাদের গ্রামবাসীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুনতে হয়েছে কটু কথা। কিন্তু আমার বাবা–মা কখনো এসব কথা কানে নিতেন না। আর আমাকেও কোনো কথা শুনতেও দিতেন না।’

শিশুদের জামার গলাউদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটা জানতে চাইলে মুক্তা বলেন, ‘করোনা মহামারিতে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখন শৈশবের সেই ভালো লাগার কাজগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে দেখতাম কীভাবে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। দেখে ভালো লাগত। দেখতে দেখতে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে কিছু একটা করতে হবে, যে কাজে মানুষ আমাকে চিনবে, আর নিজের একটা পরিচয় হবে। এরপর ২০২০ সালেই জমানো মাত্র ৩০০০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলাম নাহার কুটির।’

মুক্তা জানান, মায়ের নাম নুরনাহার থেকেই ‘নাহার কুটির’ নামটি নেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছি আমার মায়ের নামে আমাকে সবাই চিনবে। আমার সিগনেচার পণ্য কুশির তৈরি পণ্য। এ ছাড়া আমি কুশির তৈরি বুক কভার, টিস্যু কভার, বিভিন্ন ধরনের টুপি, জুতা, সোয়েটার, মাফলার, বাচ্চাদের জামার গলা, কাঠের গয়না, হ্যান্ড পেইন্ট কুর্তি ইত্যাদি তৈরি করি। এ কাজে সহযোগিতা পেয়েছি জীবনসঙ্গী রাশেদুল ইসলামের কাছে। সে প্রথম থেকেই আমার অনুপ্রেরণা হয়ে পাশে আছে। সুতা কেনা, পণ্য ডেলিভারি, প্যাকেজিং, কালার ম্যাচিং সব কাজেই তাঁকে আমি পাশে পাই। এ ছাড়া আমার ভাইবোন, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ সব সময় আমার পাশে আছেন। একটা মেয়ের এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটি অনেক বড় শক্তি।’

মুক্তার বর্তমানে মাসে আয় হয় পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা। আবার সে টাকা দিয়ে বিক্রির জন্য কেনেন নতুন কোনো পণ্য। এইভাবে চলছে তাঁর ‘নাহার কুটির’–এর কাজ।

শিশুদের জামার গলানিজের কাজ সম্পর্কে ‘নাহার কুটির’–এর এই কর্ণধার বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছেটা আমার প্রয়োজন ও ভালো লাগা থেকে। নিজের প্রয়োজনেই উদ্যোক্তা হয়েছি। বর্তমানে কোনো কর্মী নেই আমার। সব কাজ নিজের হাতেই করি। আর আমার কাজগুলো হাতের তৈরি বলে প্রচুর সময় লাগে। সংসারের কাজ সামলে ঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করা বেশ কষ্টের হয়ে যায়। তবে আমার ক্রেতারা আমাকে পর্যাপ্ত সময় দেন। আবার আমার কাজের কাঁচামালগুলো কাছাকাছি সব সময় পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে আসল কাঁচামাল আনাটাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।’

মুক্তা মনে করেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই চাকরি করতে হবে—এমন ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে সবাইকে। তবেই মুক্তি মিলবে বেকারত্ব থেকে। বর্তমানে নারীদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই জরুরি। সংসার সামলে ঘরে বসেই একজন নারী চাইলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন। আর এর জন্য প্রয়োজন মেধা, শ্রম ও আত্মবিশ্বাস।

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে সময়ের সঙ্গে স্বপ্নগুলোও পাল্টে যায়। সেই পাল্টানো সময় থেকে বেরিয়ে এসেছেন মুক্তা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। মুক্তার আশা, তাঁর তৈরি পণ্য দেশে–বিদেশে পরিচিতি পাবে। সব ধরনের হাতের তৈরি পণ্য যুক্ত হবে। আর এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিল নগদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে নগদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
সেরা ফিল্ড ফোর্সদের বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে নগদ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

সারা দেশের সাত হাজার ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সের মধ্য থেকে সেরা পারফরম্যান্সের জন্য ৭০ জনকে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা নগদ।

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ‘নগদ ফিল্ড চ্যাম্পিয়ন ২০২৫’ নামের এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠান চলাকালে ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সদের পারফরম্যান্সের জন্য বিশেষ বোনাসের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকনিযুক্ত নগদের প্রশাসক মো. মোতাছিম বিল্লাহ। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ৭০ জনের নগদ অ্যাকাউন্টে চলে যায় এই অর্থ।

দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া, খাওয়া, হোটেলে অবস্থানসহ অন্য সব খরচ নগদের পক্ষ থেকে বহন করা হয়।

সেরা পারফর্মারদের অভিনন্দন জানিয়ে নগদের প্রশাসক মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মাঝেও বাজারে নগদ একটা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেনের আরও প্রসার ঘটাতে নগদ ভূমিকা রাখবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা রয়েছে। সুতরাং, যত অপপ্রচারই নগদকে নিয়ে হোক না কেন, সেসবে কান না দিয়ে নগদের সাফল্যের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

নগদের সেবার প্রসার ঘটাতে এ সময় মোতাছিম বিল্লাহ ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্ড ফোর্সদের কাছ থেকে নগদ বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশ জানতে চান। তাঁদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নগদ প্রশাসক বলেন, অল্প সময়ের ভেতরই সেবার কলেবর আরও বাড়বে নগদে। ফলে লেনদেনের অঙ্ক যেমন অনেক গুণ বাড়বে, একই সঙ্গে গ্রাহকেরাও অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকনিযুক্ত নগদের জ্যেষ্ঠ সহযোগী প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, ডাক বিভাগনিযুক্ত নগদের জ্যেষ্ঠ সহযোগী প্রশাসক মো. আবু তালেব, নগদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মোহাম্মদ শাহীন সারওয়ার ভূঁইয়া বক্তব্য দেন।

বক্তারা বলেন, আগামী বছরে বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স, বাংলা কিউআর, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের জন্য আন্তসংযোগ গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে নগদ। ফলে ২০২৬ সাল নগদের সেরা সাফল্যের বছর হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করল ডিএসই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করেছে ডিএসই। ছবি: সংগৃহীত
ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক চালু করেছে ডিএসই। ছবি: সংগৃহীত

তথ্যসেবা আরও সহজ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক স্থাপন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এই ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. আসিফুর রহমান, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মো. ছামিউল ইসলাম, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, ইনফরমেশন হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদান আরও সহজ হবে এবং বিনিয়োগকারী ও অন্য অংশীজনদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এর ফলে ডিএসইর সেবার মান আরও গ্রাহকবান্ধব ও স্বচ্ছ হবে।

ডিএসইর এমডি আশা প্রকাশ করেন, এই হেল্প ডেস্ক ডিএসইর বাজার অংশগ্রহণকারীদের আস্থা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্যের জন্য +৮৮-০২-৪১০৪০১৮৯, ০৯৬৬৬৭০২০৭০ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাভেল ও ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড: লিড স্পনসর ‘গ্যালাক্সি’, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
ট্রাভেল ও ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড: লিড স্পনসর ‘গ্যালাক্সি’, হসপিটালিটি পার্টনার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

দেশের অন্যতম ভ্রমণ ও পর্যটনবিষয়ক প্রকাশনা বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি অ্যাওয়ার্ড (BTTHA) ২০২৫’-এর লিড স্পনসর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে দেশের ভ্রমণশিল্পের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্যালাক্সি গ্রুপ।

একই সঙ্গে পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা এই আয়োজনের হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

দেশের ভ্রমণ, পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পে একমাত্র স্বীকৃত এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি এবার দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

গতকাল বুধবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট চুক্তিসমূহ স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশ মনিটরের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। গ্যালাক্সি গ্রুপের পক্ষে লিড স্পনসর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ। অন্যদিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার পক্ষে হসপিটালিটি পার্টনার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ডেভিড ও’ হ্যানলন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, গ্যালাক্সি ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার সম্পৃক্ততায় অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের মর্যাদা ও পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে দেশের ভ্রমণ ও আতিথেয়তা শিল্পে উৎকর্ষতা অর্জন এবং উত্তম চর্চা উৎসাহিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

গ্যালাক্সি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ বলেন, পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতে উদ্ভাবন, সেবার মান এবং টেকসই উন্নয়নকে স্বীকৃতি প্রদানকারী একটি মহতী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে তারা গর্বিত।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার ডেভিড ও’ হ্যানলন বিশ্বমানের আতিথেয়তা প্রদানের পাশাপাশি অসাধারণ অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে এমন একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

চলতি বছর ২৫টি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। শুধু আবেদনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্বকারী অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিচারক প্যানেল বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন এবং পাবলিক ভোটিংয়ের ভিত্তিতে বিজয়ীদের চূড়ান্ত করবেন।

এবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে দুটি বিশেষ ক্যাটাগরি—সর্বাধিক পর্যটনবান্ধব বিদেশি গন্তব্য, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। এই দুটি ক্যাটাগরির বিজয়ী সরাসরি পাবলিক ভোটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

বাংলাদেশের পর্যটন ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ মনিটর ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কারের প্রবর্তন করে।

প্রথম আসরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ বছর আরও বৃহৎ পরিসরে এই আয়োজন করা হচ্ছে, যেখানে অংশগ্রহণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৃশ্যমানতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল নজরদারি করবে এনবিআর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল আরও স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ নামে নতুন একটি সাব-মডিউল চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মাধ্যমে প্রতিটি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশ, অবস্থানকাল এবং খালি ট্রাকের ফেরত-সংক্রান্ত তথ্য ইলেকট্রনিকভাবে সংরক্ষণ করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রাথমিকভাবে যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসে ১৫ ডিসেম্বর থেকে এই সাব-মডিউলের পাইলট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে ট্রাক প্রবেশ ও বহির্গমনের তথ্য ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হতো, যা সময়সাপেক্ষ ও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার ঝুঁকি ছিল।

নতুন মডিউল চালুর ফলে ভারতীয় প্রতিটি ট্রাকের আগমন ও বহির্গমনের প্রকৃত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে। এতে ট্রাকের অবস্থানকাল নির্ধারণ, সীমান্ত এলাকায় ট্রাক চলাচল কার্যকরভাবে মনিটরিং এবং রিয়েল-টাইম রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়বে, রাজস্বহানি রোধে সহায়ক হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় এই ডিজিটাল উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ট্রাক চলাচলের নির্ভুল তথ্য থাকায় শুল্ক ও কর ব্যবস্থাপনায় নজরদারি জোরদার হবে, একই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষাও বাড়বে।

খুব শিগগির দেশের সব স্থলবন্দরে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ‘ট্রাক মুভমেন্ট’ সাব-মডিউলটি লাইভ অপারেশনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। এতে স্থলবন্দরভিত্তিক আমদানি কার্যক্রম আরও গতিশীল ও আধুনিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত