Ajker Patrika

ভেজালমুক্ত খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই ‘যোগান’-এর জন্ম

মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৪২
ভেজালমুক্ত খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই ‘যোগান’-এর জন্ম

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও নানা বাস্তবতার কারণে কৃষি নিয়ে তেমন কেউ স্বপ্ন দেখে না। অথচ সভ্যতার সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক অনাদিকালের। কৃষিসভ্যতার শুরু থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের জীবনপ্রবাহে কৃষি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো খাদ্য। অথচ দেশের খাদ্যব্যবস্থা পুরোপুরি করপোরেট পুঁজিপতিদের হাতে জিম্মি। খাবারে ভেজাল, খাবারের অতিরিক্ত মূল্য ইত্যাদির কারণে প্রতিনিয়ত মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতে হুমকির মুখে পড়ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ‘যোগান’-এর জন্ম। 

খাদ্যের প্রকৃতির গুণাগুণ অটুট রেখে তা সাধারণ মানুষের আওতার মধ্যে নিয়ে আসতেই ‘যোগান’-এর যাত্রা। অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘যোগান’-এর কর্ণধার মতিউর রহমান।। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মতিউর চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। 

নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মতিউর বলেন, ‘এখন মানুষ নিরাপদ খাদ্যের অভাবে অনেক বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। মানুষকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি নিরাপদ খাবারের চাহিদা মেটাতেই যোগানের জন্ম। আমরা ন্যায্যমূল্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে আসি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে এই মুহূর্তে অস্থায়ীভাবে তিনজন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে দুজন কৃষকের সঙ্গে কাজ করছেন। পণ্য সরবরাহে নিয়োজিত আছেন আরও তিনজন। এ বছর আমরা সুনামগঞ্জ জেলার হাওর ও বিলের মাছ সরবরাহ করব। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও সিলেট শহরে সরবরাহ করা হবে। বলে রাখা ভালো, যোগান প্রতিটি পণ্যের গুণগত মান ও মূল্যের যথার্থতায় নিশ্চয়তা দেয়।’ 

বাগান থেকে সংগৃহীত চা যোগান-এর শুরু সম্পর্কে মতিউর বলেন, 'যোগান-এর শুরুটা আমাদের শৈশব-কৈশোরের সেই দিনগুলোর মতোই। বর্ষায় এক পশলা বৃষ্টিতেই ছিমছাম হবিগঞ্জ শহরে হাঁটুপানি জমত। আমার জন্ম নানিবাড়ি; পুরোনো খোয়াই নদীর কোল ঘেঁষে। সে সময় প্রায় সবারই ছোট্ট একটা পুকুর ছিল। বর্ষায় বৃষ্টিতে ভাবতাম কবে মাঠে-বিলে কই মাছের দেখা পাব। নানির বাসার পাশে বকুল স্যারের বাসা। পুকুরের পাশে দুইটা বড় বড় বাঁশঝাড়। সেই পুকুরপাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া যেত হাঁসের ডিম। কিংবা বাড়িতে গেলেই সেজো চাচার সিন্ধি গাইয়ের (গাভীর) দুধ। আহা! আমাদের সেই দিনগুলো! শৈশবের এই স্বপ্নময় পরিবেশে বেড়ে ওঠা থেকেই ‘যোগান’-এর জন্ম। আর নির্ভেজাল, বিশুদ্ধ খাদ্যর যোগান দেওয়াই ‘যোগান’-এর মূল লক্ষ্য।’ 

মতিউর তাঁর জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছেন। পরিবার থেকে পেয়েছেন অনেক কষ্ট। কথা বলতে বলতে কষ্টের সেই জায়গা থেকে বলেন, ‘কৈশোরেই বাবাকে হারাই। আমরা চার ভাইবোন। পরিবারে আমিই বড় সন্তান। বাবার ভূ-সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও চরম সংকটে আমাদের পড়তে হয়। ২০০৩ সালে এসএসসি পাস করে টিউশন দিয়ে কর্মজীবন শুরু। কিন্তু সবার বেলায় হিসাব-নিকাশ ঠিক থাকলেও আমার বেলায় তেমনটা ঘটেনি। এ রকম বাস্তবতায় কেউ স্বপ্নবিলাসী হয় না। কিন্তু আমি বরাবরই ছিলাম স্বাধীনচেতা। এখনো মনে পড়ে পরিবারের গুরুজনেরা যখন জিজ্ঞেস করতেন—“বড় হয়ে কী হতে চাও।” বলতাম, “ব্যবসায়ী হতে চাই। ” শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিতে গড়পড়তা রেজাল্ট নিয়ে এমসি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করি। সেখানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ছিল প্রায় তিন বছরের সেশনজট।’ 

মধু, ঘি। ছবি: সৌজন্যে যোগানমতিউর যেন গল্পে ডুবে যান। বলে চলেন, ‘পেছনে ফিরে দেখি স্বপ্নের মতো ২৭টি বছর হারিয়ে ফেলেছি। ফলে চাকরি করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে চরম হতাশা কাজ করছিল। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি কোনো সরকারি পরীক্ষার জন্য একটিবারও ফরম পূরণ করিনি। ছোটবেলা থেকে স্বাধীনভাবে কিছু করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মাস্টার্স পাসের পর কিছু করতে না পেরে হতাশায় পেয়ে বসল। মন খারাপের একপর্যায়ে ময়মনসিংহের একজন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণায় শুরু করলাম নিরাপদ মসলা সরবরাহ। পুঁজি না থাকায় নিজে মেশিন কিনে মসলা ভাঙানোর কাজটা শুরু করতে পারলাম না। ফলে বিগত দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে ব্যবসায়ের ধরনটা পরিবর্তন করলাম। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেলাম বন্ধু লাইফ পার্টনার বিশ্বপা মৌকে। সঙ্গে কয়েকজন তরুণ, যারা স্বেচ্ছাসেবকের মতো আমাকে সহযোগিতা করে। সবচেয়ে বেশি শ্রম ও আইডিয়া দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমার মা।’ 

মতিউর উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন মা ও তাঁর জীবনসঙ্গী বিশ্বপার কাছে থেকে। বিশ্বপাও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বর্তমানে ‘যোগান’ শক্ত হাতে পরিচালনা করছেন বিশ্বপা। কাজের সুবিধার্থে ‘যোগান’-এর ৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, যেখানে সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন বিশ্বপা, মাঠ পরিকল্পনাকারী হিসেবে সপ্তর্ষি, বিক্রি ও বিপণনে আশিস, সন্দীপ এবং মতিউর সার্বিকভাবে বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করেন। ‘যোগান’ এখন গুড়, চা, লাল আটা, মধু, মসলা, ঘি ইত্যাদি সরবরাহ করে। এ ছাড়া বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে আম। 

হলুদের গুঁড়োনিজেদের স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে শুরু হয় এই উদ্যোগ। এখন প্রতি মাসে আমরা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ করছি। আশা করছি এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সোনালী ব্যাংক জিন্দাবাজার থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছি। যোগান-এর উদ্যোগে খুব শিগগিরই সুনামগঞ্জ শহরে একটি গোডাউন করব। এই মাসে আমরা ভ্রাম্যমাণ প্রক্রিয়ায় বিলের মাছ প্রাথমিকভাবে বিক্রি শুরু করব, যেখানে দেশি বোয়াল, চিতল, শোল, গজার, শিং, মাগুর, কাতল, বাইন, কাইক্কাসহ দেশীয় মাছ থাকবে। এটি ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।’ 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মতিউর বলেন, ‘আমাদের আগামীর পরিকল্পনা—সকলের তরে সকলে আমরা। বুঝিয়ে বলি। আমাদের লভ্যাংশ আমরা আমাদের টিম মেম্বারদের মধ্যে সমভাবে বণ্টনের পরিকল্পনা করেছি। ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানকে আমরা সামাজিক মালিকানায় নিতে চাই। ভবিষ্যতে গ্রামে কৃষকদের দিয়ে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে চাই। ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামকে আমরা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছি। সেখানকার কৃষকেরা সরাসরি যোগান-এর মাধ্যমে তাঁদের উৎপাদিত হাঁস-মুরগি, ডিম ও বিষমুক্ত সবজি বিক্রি করবেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মসলার মেশিন স্থাপন করব। আর এপ্রিল মাসে আমরা মসলা ভাঙানো শুরু করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক: স্মার্টফোনে নগদ সহায়তা ইন্টারনেটে ছাড়ের প্রস্তাব

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নগদবিহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্মার্টফোন কেনা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিউআর কোড চালু থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে এই নতুন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট স্মার্টফোনে ব্যবহৃত সিমের ওপর কর ও ভ্যাট কমানোর বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, নগদবিহীন লেনদেন প্রসারে একক ও আন্তসংযোগ-ভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম চালুর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হন অংশগ্রহণকারীরা। প্রস্তাবগুলো পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত আকারে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ‘বাংলা কিউআর’ চালুর মাধ্যমে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাপ ব্যবহার করে নগদবিহীন লেনদেন শুরু হয়। বর্তমানে এই ব্যবস্থায় ৪৩টি ব্যাংক, ৫টি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং ৩টি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) যুক্ত রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি এখনো জনপ্রিয়তা পায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনের অভাব, সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট ব্যয় এবং অতিরিক্ত চার্জের কারণে প্রান্তিক ও সাধারণ গ্রাহকদের বড় একটি অংশ এই ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গেছে।

এই বাস্তবতায় স্মার্টফোন কেনায় নগদ সহায়তা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে বিশেষ ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। পাশাপাশি মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাকে সাশ্রয়ী করতে অপারেটরদের জন্য ভ্যাট ও করছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের খুচরা লেনদেনের অন্তত ৭৫ শতাংশ ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। আর ২০৩১ সালের মধ্যে সব ধরনের লেনদেন ক্যাশলেস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’-এর চার স্তম্ভ—স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ বাস্তবায়নের অংশ। এই লক্ষ্যে ব্যাংক, এমএফএস, মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য পেমেন্ট সেবাদাতাকে একটি একক আন্তসংযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনার কাজ চলছে। ইন্টারঅপারেবিলিটি পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সহজে টাকা আদান-প্রদানের সুযোগ তৈরিই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশকে ক্যাশলেস করতে হলে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছাতে হবে। প্রয়োজনে এ জন্য বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হবে। একই সঙ্গে শিগগির সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা ‘রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেম’ চালুর কথাও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পেমেন্ট সিস্টেম প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে এখনো ৭২ শতাংশের বেশি লেনদেন নগদে হচ্ছে। যদিও ছোট ও মাঝারি অঙ্কের লেনদেনে ডিজিটাল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ডিজিটাল অবকাঠামো শক্তিশালী করা এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি নিশ্চিত করা ছাড়া ক্যাশলেস অর্থনীতি গড়া সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নগদনির্ভরতা কমাতে হলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রতি আস্থা তৈরি করতে হবে। একবার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে মুদ্রণ ব্যয়সহ আর্থিক ব্যবস্থাপনার খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ক্যাশ ইজ কিং’ ধারণা এখনো বাস্তবতা। দেশের অধিকাংশ লেনদেন অনানুষ্ঠানিক খাতে হয়। এসব খাতকে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার আওতায় না আনলে ক্যাশলেস সমাজ গড়া কঠিন। নগদে স্বচ্ছন্দ থাকার পুরোনো মানসিকতার কারণে এই রূপান্তরে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অর্থবছরের ৫ মাস: রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৩
অর্থবছরের ৫ মাস: রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি
ছবি: সংগৃহীত

রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার এবং সব খাতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা (অটোমেশন) চালুর উদ্যোগের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বাড়তি তৎপরতা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। প্রতিমাসে রাজকোষের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে ঘাটতির ব্যবধান স্পষ্ট হচ্ছে এবং চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা ১৩.৮৯ শতাংশ।

তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো—রাজস্ব আদায়ে বৃদ্ধি হয়েছে ১৫.১৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আদায় হয়েছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের ধীরগতির কারণে রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে সাধারণত আদায় বাড়ে। করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন জোরদার করা এবং ফাঁকি প্রতিরোধে এনবিআর সক্রিয়।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দাভাব, কাঠামোগত দুর্বলতা ও সক্ষমতার অভাব সরাসরি রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তা ছাড়া অর্থবছরের মাঝপথে লক্ষ্যমাত্রা একলাফে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর কারণে বাস্তবতার সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার ব্যবধান আরও প্রকট হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। তবে ১০ নভেম্বর বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি তা ৫ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করে। ফলে বাকি সাত মাসে এনবিআরকে ৪ লাখ ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকে। প্রধান কারণ হলো এনবিআরের সক্ষমতার চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। মানবসম্পদ, কারিগরি দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়; পাশাপাশি করদাতা এবং করযোগ্য ব্যক্তির মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে, কর ফাঁকিও প্রচুর। বর্তমান ব্যবসায়িক মন্দা, খরচ বৃদ্ধি, আয় হ্রাস এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কমে যাওয়াও রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানো, অটোমেশন ও সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করলে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করে আদায় বাড়ানো সম্ভব।

সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, এনবিআরের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি প্রশাসনিক পদে বড় রদবদলের কারণে কার্যক্রম গোছাতে কিছুটা সময় লাগা স্বাভাবিক।

রাজস্ব খাত অনুযায়ী, ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। প্রথম পাঁচ মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা; ঘাটতি ৩ হাজার ৮১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৬.১৫ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১.৯৭ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে আয়কর খাতে। আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৮১ কোটি, লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ৯৯৫ কোটি ২৫ লাখ; ঘাটতি ২০.১৯ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। কাস্টমস বা শুল্ক খাতে ৪২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৯৭৯ কোটি ৫৬ লাখ; ঘাটতি ১৫.৯১ শতাংশ, তবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৮ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার অপরিহার্য। এনবিআরের মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রক্রিয়ার সরলীকরণ এবং অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, সম্পদ ছাড়াল ৭০০ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৪
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

পে প্যাকেজ বা বেতন-ভাতাসংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সম্পদ গত শুক্রবার রাতে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট মাস্কের ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেসলা স্টক অপশনগুলো পুনর্বহাল করার পরই তাঁর সম্পদে এই বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর আদালত এই সুবিধাগুলো বাতিল করেছিলেন।

২০১৮ সালে মাস্কের যে বেতন প্যাকেজের মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেটিই গত শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বহাল করেন। এর দুই বছর আগে নিম্ন আদালত ওই পারিশ্রমিক চুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, ২০২৪ সালে দেওয়া যে সিদ্ধান্তে বেতনের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না এবং মাস্কের প্রতি অন্যায্য ছিল।

এর আগে চলতি সপ্তাহে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স শেয়ারবাজারে আসতে পারে—এমন প্রতিবেদনের পর মাস্কের সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা আলাদাভাবে মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ। বিনিয়োগকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসভিত্তিক এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে মাস্কের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদমূল্য গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের চেয়ে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ল্যারি পেজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তথ্য জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। একই তথ্য বারবার ছাপিয়ে আলাদা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হতো। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্প্রতি চালু করেছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)।

নতুন এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানি ও ফান্ডগুলো মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য রেগুলেটরি ফাইলিং কাগজ ছাড়াই অনলাইনে জমা দিতে পারবে। এতে সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং ট্র্যাকিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি নতুন মডিউল যুক্ত হওয়ায় এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য একই ডিজিটাল গেটওয়ে দিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব। ফলে দ্বৈত সাবমিশনের ঝামেলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগুজে নথির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সাবমিশন শুধু সুবিধার বিষয় নয়, এটি বাজার শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোগত পরিবর্তন।

ডিএসই জানায়, চায়নিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কাজ করে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর পর সিস্টেমটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ফিচার যুক্ত করা সহজ হবে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, একক ডিজিটাল সাবমিশন পয়েন্ট চালু হওয়ায় ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপজনিত ভুল কমবে এবং তথ্য জমার প্রতিটি ধাপ ডিজিটালি যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব শুধু স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত