Ajker Patrika

ভেজালমুক্ত খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই ‘যোগান’-এর জন্ম

মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৪২
ভেজালমুক্ত খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই ‘যোগান’-এর জন্ম

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও নানা বাস্তবতার কারণে কৃষি নিয়ে তেমন কেউ স্বপ্ন দেখে না। অথচ সভ্যতার সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক অনাদিকালের। কৃষিসভ্যতার শুরু থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের জীবনপ্রবাহে কৃষি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো খাদ্য। অথচ দেশের খাদ্যব্যবস্থা পুরোপুরি করপোরেট পুঁজিপতিদের হাতে জিম্মি। খাবারে ভেজাল, খাবারের অতিরিক্ত মূল্য ইত্যাদির কারণে প্রতিনিয়ত মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতে হুমকির মুখে পড়ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ‘যোগান’-এর জন্ম। 

খাদ্যের প্রকৃতির গুণাগুণ অটুট রেখে তা সাধারণ মানুষের আওতার মধ্যে নিয়ে আসতেই ‘যোগান’-এর যাত্রা। অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘যোগান’-এর কর্ণধার মতিউর রহমান।। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মতিউর চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। 

নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মতিউর বলেন, ‘এখন মানুষ নিরাপদ খাদ্যের অভাবে অনেক বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। মানুষকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি নিরাপদ খাবারের চাহিদা মেটাতেই যোগানের জন্ম। আমরা ন্যায্যমূল্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে আসি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে এই মুহূর্তে অস্থায়ীভাবে তিনজন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে দুজন কৃষকের সঙ্গে কাজ করছেন। পণ্য সরবরাহে নিয়োজিত আছেন আরও তিনজন। এ বছর আমরা সুনামগঞ্জ জেলার হাওর ও বিলের মাছ সরবরাহ করব। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও সিলেট শহরে সরবরাহ করা হবে। বলে রাখা ভালো, যোগান প্রতিটি পণ্যের গুণগত মান ও মূল্যের যথার্থতায় নিশ্চয়তা দেয়।’ 

বাগান থেকে সংগৃহীত চা যোগান-এর শুরু সম্পর্কে মতিউর বলেন, 'যোগান-এর শুরুটা আমাদের শৈশব-কৈশোরের সেই দিনগুলোর মতোই। বর্ষায় এক পশলা বৃষ্টিতেই ছিমছাম হবিগঞ্জ শহরে হাঁটুপানি জমত। আমার জন্ম নানিবাড়ি; পুরোনো খোয়াই নদীর কোল ঘেঁষে। সে সময় প্রায় সবারই ছোট্ট একটা পুকুর ছিল। বর্ষায় বৃষ্টিতে ভাবতাম কবে মাঠে-বিলে কই মাছের দেখা পাব। নানির বাসার পাশে বকুল স্যারের বাসা। পুকুরের পাশে দুইটা বড় বড় বাঁশঝাড়। সেই পুকুরপাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া যেত হাঁসের ডিম। কিংবা বাড়িতে গেলেই সেজো চাচার সিন্ধি গাইয়ের (গাভীর) দুধ। আহা! আমাদের সেই দিনগুলো! শৈশবের এই স্বপ্নময় পরিবেশে বেড়ে ওঠা থেকেই ‘যোগান’-এর জন্ম। আর নির্ভেজাল, বিশুদ্ধ খাদ্যর যোগান দেওয়াই ‘যোগান’-এর মূল লক্ষ্য।’ 

মতিউর তাঁর জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছেন। পরিবার থেকে পেয়েছেন অনেক কষ্ট। কথা বলতে বলতে কষ্টের সেই জায়গা থেকে বলেন, ‘কৈশোরেই বাবাকে হারাই। আমরা চার ভাইবোন। পরিবারে আমিই বড় সন্তান। বাবার ভূ-সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও চরম সংকটে আমাদের পড়তে হয়। ২০০৩ সালে এসএসসি পাস করে টিউশন দিয়ে কর্মজীবন শুরু। কিন্তু সবার বেলায় হিসাব-নিকাশ ঠিক থাকলেও আমার বেলায় তেমনটা ঘটেনি। এ রকম বাস্তবতায় কেউ স্বপ্নবিলাসী হয় না। কিন্তু আমি বরাবরই ছিলাম স্বাধীনচেতা। এখনো মনে পড়ে পরিবারের গুরুজনেরা যখন জিজ্ঞেস করতেন—“বড় হয়ে কী হতে চাও।” বলতাম, “ব্যবসায়ী হতে চাই। ” শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিতে গড়পড়তা রেজাল্ট নিয়ে এমসি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করি। সেখানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ছিল প্রায় তিন বছরের সেশনজট।’ 

মধু, ঘি। ছবি: সৌজন্যে যোগানমতিউর যেন গল্পে ডুবে যান। বলে চলেন, ‘পেছনে ফিরে দেখি স্বপ্নের মতো ২৭টি বছর হারিয়ে ফেলেছি। ফলে চাকরি করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে চরম হতাশা কাজ করছিল। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি কোনো সরকারি পরীক্ষার জন্য একটিবারও ফরম পূরণ করিনি। ছোটবেলা থেকে স্বাধীনভাবে কিছু করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মাস্টার্স পাসের পর কিছু করতে না পেরে হতাশায় পেয়ে বসল। মন খারাপের একপর্যায়ে ময়মনসিংহের একজন উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণায় শুরু করলাম নিরাপদ মসলা সরবরাহ। পুঁজি না থাকায় নিজে মেশিন কিনে মসলা ভাঙানোর কাজটা শুরু করতে পারলাম না। ফলে বিগত দিনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে ব্যবসায়ের ধরনটা পরিবর্তন করলাম। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেলাম বন্ধু লাইফ পার্টনার বিশ্বপা মৌকে। সঙ্গে কয়েকজন তরুণ, যারা স্বেচ্ছাসেবকের মতো আমাকে সহযোগিতা করে। সবচেয়ে বেশি শ্রম ও আইডিয়া দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমার মা।’ 

মতিউর উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন মা ও তাঁর জীবনসঙ্গী বিশ্বপার কাছে থেকে। বিশ্বপাও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বর্তমানে ‘যোগান’ শক্ত হাতে পরিচালনা করছেন বিশ্বপা। কাজের সুবিধার্থে ‘যোগান’-এর ৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, যেখানে সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন বিশ্বপা, মাঠ পরিকল্পনাকারী হিসেবে সপ্তর্ষি, বিক্রি ও বিপণনে আশিস, সন্দীপ এবং মতিউর সার্বিকভাবে বিষয়গুলোর তত্ত্বাবধান করেন। ‘যোগান’ এখন গুড়, চা, লাল আটা, মধু, মসলা, ঘি ইত্যাদি সরবরাহ করে। এ ছাড়া বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে আম। 

হলুদের গুঁড়োনিজেদের স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে শুরু হয় এই উদ্যোগ। এখন প্রতি মাসে আমরা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ করছি। আশা করছি এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সোনালী ব্যাংক জিন্দাবাজার থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছি। যোগান-এর উদ্যোগে খুব শিগগিরই সুনামগঞ্জ শহরে একটি গোডাউন করব। এই মাসে আমরা ভ্রাম্যমাণ প্রক্রিয়ায় বিলের মাছ প্রাথমিকভাবে বিক্রি শুরু করব, যেখানে দেশি বোয়াল, চিতল, শোল, গজার, শিং, মাগুর, কাতল, বাইন, কাইক্কাসহ দেশীয় মাছ থাকবে। এটি ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।’ 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মতিউর বলেন, ‘আমাদের আগামীর পরিকল্পনা—সকলের তরে সকলে আমরা। বুঝিয়ে বলি। আমাদের লভ্যাংশ আমরা আমাদের টিম মেম্বারদের মধ্যে সমভাবে বণ্টনের পরিকল্পনা করেছি। ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানকে আমরা সামাজিক মালিকানায় নিতে চাই। ভবিষ্যতে গ্রামে কৃষকদের দিয়ে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে চাই। ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি গ্রামকে আমরা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছি। সেখানকার কৃষকেরা সরাসরি যোগান-এর মাধ্যমে তাঁদের উৎপাদিত হাঁস-মুরগি, ডিম ও বিষমুক্ত সবজি বিক্রি করবেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মসলার মেশিন স্থাপন করব। আর এপ্রিল মাসে আমরা মসলা ভাঙানো শুরু করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিসিআইয়ের সাধারণ সভা: ভ্যাট ও করকাঠামো যুক্তিসংগত করার দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ভ্যাট ও করকাঠামোকে আরও যুক্তিসংগত করার দাবি তুলেছে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। পাশাপাশি, সকল শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাহীনভাবে চলতে পারে।

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁরা বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, শিল্পের প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া অত্যাবশ্যক।

সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের উৎপাদনশীল শিল্পকে শক্তিশালী রাখতে সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখা, সুষ্ঠু উৎপাদন ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মসৃণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আয়বৈষম্য কমানো এবং টেকসই এমএসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ ও শিল্পের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য। বিসিআই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে, যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, শিল্প প্রতিযোগিতামূলক থাকে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্যাট ও করকাঠামো সহজ, উদ্যোক্তাবান্ধব ও উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য করেই তৈরি হওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, পণ্য টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উদ্যোক্তাবান্ধব করা, নতুন উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপের সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ দেশীয় শিল্পে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে।

সভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং সাবেক সভাপতি এ টি এম ওয়াজিউল্লাহর জন্য। এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সভা পরিচালনা করেন বিসিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন। সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, বিগত ৩৮তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিসিআই কার্যক্রম ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অডিটেড হিসাব অনুমোদন এবং নতুন অডিটর নিয়োগের বিষয়ও অনুমোদিত হয়। সভায় অংশ নেন বিসিআই সদস্য ও সাবেক নেতা শাহেদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের যে আশঙ্কাজনক উত্থান ঘটেছে, তার সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়ছে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তায়। নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুরক্ষাকাঠামোই কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতি অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাতের সংকট কেবল সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সাধারণ গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার ওপর, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৪টি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিপরীতে এসব ব্যাংক রাখতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এতে সম্মিলিত সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

এক বছর আগের সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা (২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি)। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রবণতা স্বাভাবিক কোনো আর্থিক চক্রের ফল নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে আড়াল করে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রকৃত চিত্র সামনে আসার পরিণতি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পালাবদলের পর ব্যাংকিং খাতে পুনর্গঠিত, পুনঃ তফসিলকৃত, অবলোপনকৃত ও আদালতে আটকে থাকা ঋণসহ মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মোট অঙ্ক প্রায় সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং মন্দমানের কুঋণ ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি মানে সরাসরি আমানতকারীর ঝুঁকি। তাঁর মতে, গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ব্যাংক এমন অবস্থায় আছে, তারা ন্যূনতম সঞ্চিতিও গড়ে তুলতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো প্রভিশন না রাখতে পারলে সেই ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ হওয়া উচিত।

ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণির ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসান শ্রেণির খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, কম আমানত প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আর্থিক সংকটে ব্যাংকগুলোর সেই সক্ষমতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধিই প্রভিশন ঘাটতির মূল কারণ। সরকারের পালাবদলের পর এসব ঝুঁকি প্রকাশ্যে আসায় ব্যাংকিং খাতের ভেতরের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাইনামিক প্রভিশনিং চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এই ডাইনামিক প্রভিশনিং চালু হলে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়বে, মূলধনের চাপ কমবে এবং কুঋণ হ্রাস পেলে প্রভিশন ঘাটতিও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেবিএস হোল্ডিংসের ফ্ল্যাট কিনলে বিশেষ ছাড় পাবেন প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রাইম ব্যাংক পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

সম্প্রতি জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই অংশীদারত্বের আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা পাবেন, যা তাঁদের দেশের প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ আরও সহজলভ্য করবে।

চুক্তিতে প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন মামুর আহমেদ এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল হক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেটস জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. বেলায়েত হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের লাইফস্টাইলভিত্তিক মানসম্পন্ন সেবা ও আর্থিক সমাধান প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুনরায় বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
আবারও বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার নির্বাচিত হয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তিনি আম্বার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের টেক্সটাইল শিল্পে একজন উদ্যোক্তা।

গত ২৫ নভেম্বর বিটিএমএর গুলশান কার্যালয়ে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বিটিএমএ।

এতে বলা হয়, বিটিএমএর তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্টও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. শামীম ইসলাম, ফ্যাব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরি থেকে মো. আবুল কালাম ও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট প্রসেসের ক্যাটাগরি থেকে শফিকুল ইসলাম সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত