Ajker Patrika

এমসিসিআইয়ের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন

অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ, রাজস্ব আদায় ও বিনিয়োগ বড় চ্যালেঞ্জ

  • ব্যাংক খাত, রাজস্ব আদায়, উন্নয়ন ব্যয় ও বিনিয়োগ পিছিয়ে।
  • উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
  • এডিপি বাস্তবায়ন ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
  • খাদ্য আমদানি বেড়েছে কয়েক গুণ।
  • ব্যাংকিং খাত সংস্কার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আস্থা ফেরানোর পরামর্শ এমসিসিআইয়ের।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ০২: ০৪
অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ, রাজস্ব আদায় ও বিনিয়োগ বড় চ্যালেঞ্জ

বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ও দেশীয় চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের পথে এগোচ্ছে। রপ্তানি, রেমিট্যান্স, কৃষি ও শিল্প খাতসহ কিছু সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে সেই পুনরুদ্ধারের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। কারণ দেশের ব্যাংকঋণ, নতুন বিনিয়োগ, রাজস্ব আদায়, উন্নয়ন ব্যয়সহ অর্থনীতির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচকে এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও অর্থনীতির জন্য এখনো তা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)।

গতকাল বুধবার এমসিসিআই প্রকাশিত চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত (জুলাই-মার্চ) অর্থনৈতিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় ২৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিও সামান্য পরিমাণে কমেছে। গত অর্থবছরের এই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১৫ হাজার ৭৫৫ মিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের একই সময়ে ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ৪৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমেছে। যদিও ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে, তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮০ লক্ষ্যমাত্রার নিচে এখনো। উল্লেখিত সময় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) বাস্তবায়ন গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন; এ সময় এডিপি বাস্তবায়ন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এনবিআরের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ পিছিয়ে আছে।

জানুয়ারি-মার্চ সময় কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে এর মধ্যেও সামগ্রিক খাদ্য উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এতে খাদ্য আমদানি বেড়েছে।

জুলাই থেকে মার্চ সময়ে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে মোট ৫.০৩ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানি করতে হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.৮০ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, যার মধ্যে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। খাতটির জিডিপিতে অবদানও কমেছে।

মার্চে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াটে পৌঁছালেও আসন্ন গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এমসিসিআই। এতে দেশে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতির আশঙ্কা করেছে তারা।

মার্চে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ হয়েছে। যদিও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এই মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চের তুলনায় প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এফডিআই হয়েছে ৮৬১ মিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ১ হাজার ১৬৪ মিলিয়ন ডলার।

এমসিসিআই বলছে, ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা গেলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখনো চাপে রয়েছে। কারণ বিশ্বের বিরোধপূর্ণ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের ওপরও পড়তে পারে। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির এমন বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতি একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৪৮ শতাংশ। জানুয়ারি-জুন ২০২৫ সময়কালের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.০ থেকে ৫.০ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি; যাদের পূর্বাভাস সাধারণত রক্ষণশীল হয়, তারা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার আরও কম বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ৩.৩ শতাংশ, আইএমএফ ৩.৭৬ শতাংশ এবং এডিবি ৩.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

এ অবস্থায় ব্যাংকিং খাত সংস্কারের উদ্যোগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি জন-আস্থা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে এমসিসিআই; যা জিডিপি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করছে তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত