Ajker Patrika

অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই আমরা চলে যাব— সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০০: ৪৭
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণে বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলনে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে।ছবি: আজকের পত্রিকা
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণে বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলনে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে।ছবি: আজকের পত্রিকা

বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের দিকে নজর রাখছেন। বিদেশি বিনিয়োগ টানতে হলে সহিংসতা এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চলে যাবেন। তাই কোনো মতানৈক্য থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আজ বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে এই ‘বিদেশি বিনিয়োগকারী সম্মেলন ২০২৫’-এর আয়োজন করে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড।

‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: প্রবৃদ্ধি ও সুযোগের অজানা কাহিনি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সম্মেলনে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। পরে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট: বিকাশ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাপানি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনটেক্সচুয়াল ইনভেস্টমেন্ট এলএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকাও হিরোসে। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত মুনাফার খোঁজে থাকা আক্রমণাত্মক বিনিয়োগকারী, একই সঙ্গে খামখেয়ালিও। যদি আমাদের বাজারে ধরে রাখতে চান, তবে সহিংসতা করবেন না। দয়া করে কোনো সহিংসতা নয়। যদি দেখি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে, আমরা জাপানে ফিরে যাব (জাপানি বিনিয়োগকারীদের দিকে ইঙ্গিত করে)। মতবিরোধ (রাজনৈতিক) থাকতেই পারে, তবে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন।’

তাকাও হিরোসে আরও বলেন, ‘বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাংলাদেশে ঢুকলে তা প্রবৃদ্ধিকে টার্বোচার্জারের মতো ত্বরান্বিত করতে পারে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি ভয়ানকভাবে বিঘ্নকারী নেতিবাচক শক্তি হতে পারে। কারণ, অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই আমরা চলে যাব।’

বাংলাদেশে চমৎকার প্রবৃদ্ধি এসেছে উল্লেখ করে তাকাও হিরোসে বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। সেটি হলো দীর্ঘমেয়াদি মূলধন, অর্থাৎ ইকুইটি মূলধন। আমাদের মতো ইকুইটি বিনিয়োগকারীদের আনতে চাইলে সঠিক কাঠামো, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে কাজ করুন, আমরা আপনাদের সমর্থন করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছেন বাংলাদেশের বাজার “শকপ্রুফ”। এর মাধ্যমে আপনারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের “অস্থিতিশীল” প্রভাবকে হেলাফেলা করছেন। বাজার খুলে দিলে আপনারা ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি পাবেন, কিন্তু বিনিময়ে হয়তো মূলধন বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে, যা খুবই বিপজ্জনক। তাই এর মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী ও গভীর দেশীয় বিনিয়োগ ভিত্তি তৈরি করতে হবে।’

সম্মেলনে এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ফান্ড ম্যানেজার রুচির দেশাই বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি কমছে, রেমিট্যান্স শক্তিশালী, রপ্তানি ফিরেছে, চলতি হিসাব সচ্ছল; বাংলাদেশের সব ইতিবাচক সূচক রয়েছে। বাংলাদেশের স্টক মার্কেট পুনর্মূল্যায়নের জন্য ইতিবাচক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। অনুমান করি, নির্বাচনের পরে বিনিয়োগকারীর আস্থা আরও বাড়বে।’

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ গণ-অভ্যুত্থান কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের পরও জিডিপিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। মূল্যস্ফীতি উল্টো হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক সাফল্যে এটা স্পষ্ট, দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। গত মাসে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের উত্থানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। যে পুঁজিবাজার একসময় লুটপাটের শিকার হয়েছিল, সেই বাজারে এক মাসে এমন উত্থান ঘটেছে। এটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

সরকারের লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শক্তিশালী ও সুশাসিত পুঁজিবাজার গড়ার জন্য কাজ করছে। ‘তিন শূন্য’: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে এই প্রচেষ্টা।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন ভালো সুযোগ। আমাদের পুঁজিবাজারও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনো শুরুর পর্যায়ে নেই। স্বাধীনতার পর আমরা একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে, কমান্ড ইকোনমি থেকে বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছি। অনেক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত।’ তিনি বলেন, ‘গত দেড় দশকের অস্থিরতা ও গণ-অভ্যুত্থান সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী। আমরা বাজার অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বেসরকারি খাত-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশই চালু করেছে।’

তাকাও হিরোসের বক্তব্যের জবাবে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘একজন বলেছেন, আর কোনো সহিংসতা নয়। মানব ইতিহাস সহিংসতায় পূর্ণ। কোনো দেশ, এমনকি ইউরোপও এটি নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে আমরা (রাজনৈতিক দলগুলো) সহমত পোষণ করি। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে শেষ সংঘাত হওয়া উচিত। তাই আগামী বছরগুলোতে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও ব্যবসা হবে প্রধান অগ্রাধিকার।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি সেলের সম্পাদক আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশ পূর্বের সেই শাসনকালে ফিরবে না; যেখানে মুদ্রাবাজার, পুঁজিবাজার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল লুটপাটের উৎস। তরুণ প্রজন্ম জাতিকে পুনর্গঠন, সংস্কার ও নতুন পথ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির অংশ এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে উন্নীত করবে তরুণেরা। আমরা বিনিয়োগ সুরক্ষিত করব, আমাদের বাণিজ্যিক অংশীদারদের স্বার্থরক্ষা করব।’

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অনন্য; খুবই কমসংখ্যক নিম্ন আয়ের বা উন্নয়নশীল দেশ এত দ্রুত দারিদ্র্য কমাতে পেরেছে। তিনি বলেন, পাঁচ দশকের উন্নয়ন সফলতার মূল ভিত্তি ছিল বেসরকারি খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধি। ১৯৮৪ থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত রপ্তানি গড় বছরে দ্বিগুণ সংখ্যার হারে বৃদ্ধি পেয়ে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মোট জিডিপির ২৩ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং, ভারতের ক্ষেত্রে এটি ১৮ শতাংশ। শিল্প খাত জিডিপিতে ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে। সেবা খাতেও অনুরূপ বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ‘অর্থনীতি স্থিতিশীল, পুঁজিবাজারে সংস্কার হয়েছে। আমাদের পুঁজিবাজার উপেক্ষিত প্রান্তিক বাজার থেকে প্রাণবন্ত উদীয়মান বাজারে পরিণত হতে চলেছে। এখনই অংশগ্রহণ করার সুযোগ, প্রবেশের মূল্যও কম।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাজেটে কিছু প্রণোদনা রাখা হয়েছে। গত কয়েক মাসে নতুন আইপিও না আসায় বাজারে অর্থের সরবরাহ কমে গেছে, এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ পুঁজিবাজারে বাধা সৃষ্টি করেছিল। তবে এখন আমাদের লক্ষ্য আরও বেশি ব্লু-চিপ কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা।’

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার অদূর ভবিষ্যতে একটি টেকসই আত্মবিশ্বাসের স্তরে পৌঁছাবে।

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, মানি মার্কেট বা ব্যাংকিং খাত অনেক তারল্য দখল করায় পুঁজিবাজার ভালো নেই বলা হয়ে থাকে। পুঁজিবাজার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিজেদের কঠোরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। দেখতে হবে, কী করা প্রয়োজন; যাতে বাংলাদেশে প্রচুর ভালো কোম্পানি স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হয়।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত