Ajker Patrika

ঘুষ বন্ধ করেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়াব: বিজিএমইএর সভায় উত্তেজিত গার্মেন্টস মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১১: ০৫
ঘুষ বন্ধ করেন, শ্রমিকদের বেতন বাড়াব: বিজিএমইএর সভায় উত্তেজিত গার্মেন্টস মালিক

‘প্রতিটি জায়গায় আমাদের ঘুষ দিতে হয়। আপনারা (সরকারি কর্মচারীরা) কালকে ঘুষ বন্ধ করেন, আমরা পোশাকশ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দেব। আমাদের মোট বিনিয়োগের কমপক্ষে ৫-৭ শতাংশ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুষ দিতে হয়।’ 

এভাবেই সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন এক্সিম ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক আব্দুল্লাহ আল জহির স্বপন। 

ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাকশিল্পে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক জরুরি আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আব্দুল্লাহ আল জহির স্বপন। বিজিএমইএর প্রায় ২০০ সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন।

জিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের উপস্থিতিতে এ বক্তব্য দেওয়ার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচিসহ সাবেক ও বর্তমান নেতারা। 

আব্দুল্লাহ আল জহির বলেন, ‘কাস্টমসহ সরকারি যত সংস্থা আছে, প্রতিটি জায়গায় ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল চলে না। কথা বললে এইভাবে বলতে হবে। লুকোচুরি করে বললে হবে না।’ 

বিজিএমইএর জরুরি সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন গার্মেন্টস মালিক আব্দুল্লাহ আল জহির স্বপনএ সময় উপস্থিত বিজিএমইএর সদস্যরা করতালি দিয়ে তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন জানান। আব্দুল্লাহ আল জহির বলেন, ‘আমাদের যদি এয়ারফ্রেইট (বিমানে পণ্য পাঠানো) করতে হয়, তাহলে কাস্টমস হবে এই জায়গায় (বিজিএমইএ ভবনে), আমাদের বিজিএমইএ ভবনে ওদেরকে (কাস্টমসকে) নিয়ে আসতে হবে। এই জায়গায় আমরা একটা তাদের জন্য অফিস করে দেব। এই জায়গায় কাস্টমসের সবকিছু হবে। যা হওয়ার সবকিছু এখানে হবে...এদের কাছে কেন আমরা নাকে খত দিতে যাব?’ 

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শাখা বিজিএমইএতে আনার দাবি জানিয়ে আব্দুল্লাহ আল জহির বলেন, ‘সবাইকে এইখানে (বিজিএমইএ ভবনে) নিয়ে আসেন। এনবিআর কী করে? এনবিআরের কাজ কী? তারা আমাদের ফাইল আটকায় টাকার জন্য।’ 

 ‘আমরা এত কষ্ট করি, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা খাটনি (পরিশ্রম) করে রপ্তানি করি, আমাদের দিকে কেউ তাকায় না। শুধু টাকা, শুধু টাকা! এনবিআরের একটা উইং এখানে নিয়ে আসা উচিত। কমার্স মিনিস্ট্রির একজন জয়েন্ট সেক্রেটারিকে এখানে (বিজিএমইএ) বসানো উচিত।’ যোগ করেন এ ব্যবসায়ী। 

বিজিএমইএকে সমান্তরাল সরকার দাবি করে তৈরি পোশাক খাতের এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘আমাদের গভর্নমেন্ট আছে। আর বিজিএমইএ। বিজিএমইএ কিন্তু একটা প্যারালাল গভর্নমেন্ট। আমরা আশির দশক থেকে ব্যবসায় আছি। বিজিএমইএ প্যারালাল গভর্নমেন্ট।’ 

তৈরি পোশাক খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত এনবিআরের চেয়ারম্যান, কমার্স মিনিস্ট্রির সেক্রেটারি, ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রির সেক্রেটারি—তারা এই পর্যন্ত ১০টা লোকের চাকরি দিছে? কাউকে চাকরি দেয় নাই। চাকরি দিছি আমরাই।’ 

উপস্থিত বিজিএমইএর সদস্যদের দিকে নির্দেশ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি লোক রাত–দিন ২৪ ঘণ্টা খাটে। তাদের কোনো ঘুম নাই। কই সরকারি সচিব, সরকারি চাকরিজীবীরা যারা ওইখানে (সচিবালয়ে) বসে আছে, তাদের কোনো অবদান আছে? আমরা অনেক কষ্ট করে যাচ্ছি। কিন্তু ওরা একেকটা সচিব দেখেন, আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কত কিছু করতে হয়।’ 

সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে আব্দুল্লাহ আল জহির আরও বলেন, ‘একদিকে আমরা ব্যাংক সামলাব, ফ্যাক্টরি সামলাব, নাকি বেতন দিব, নাকি ঘর-সংসার চালাব?...আমরা এতগুলো গরিব-দুঃখী শ্রমিককে পালতেছি। সরকারের কোনো লোক তো এদের পালে না। তুমি (সচিবদের নির্দেশ করে) পাইলা দেখো না। তুমি একটা সচিব, তুমি পাইলা দেখো না। তুমি আমাদের চেয়ারে আইস্যা দেখো। তুমি সচিব, ২ হাজার শ্রমিকের একটা গার্মেন্টস চালাই দেখো। বড় বড় কথা বলো!’ 

এই পর্যায়ে সভার সঞ্চালক তাঁকে বক্তব্য থামাতে অনুরোধ করলে উপস্থিত অনেক সদস্য তাঁকে বক্তব্য চালিয়ে যেতে বলেন। তালি বাজিয়ে তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন জানান তাঁরা। 

আব্দুল্লাহ আল জহির আবার বলেন, ‘আমরা এই দেশের চালিকাশক্তি। আমরা এই দেশকে ধরে রাখছি। এই শিল্পের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত সোয়া কোটি মানুষ।’ 

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে চলমান শ্রমিক আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা কোনো সমস্যা না। এই সমস্যা সমাধান করা কিছুই না।’ 

সরকারি কর্মচারীদের ঘুষ নেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কালকে থেকে ঘুষ বন্ধ করে দেন, আমরা শ্রমিকদের পয়সা বাড়িয়ে দেব। এমন কোনো জায়গা নেই, ঘুষ দিতে হয় না। প্রতিটি জায়গায় ঘুষ, ঘুষ, ঘুষ। কালকে আমার সঙ্গে আমার এক বন্ধুর কথা হলো। সে বলল, প্রতিটি জায়গায় ঘুষ দিতে হয়।’ 

আবদুল্লাহ আল জহির স্বপন তাঁর এক বন্ধুর বরাত দিয়ে বলেন, ‘সে জানিয়েছে, প্রতি মাসে ১০–২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। আমি (বন্ধু) এনবিআরে গিয়েছি। এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেছে টাকা দিতে হবে।’ 

ঘুষের টাকা কোথায় যায় প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘টাকাটা কোথায় যায়? এটা কি সরকারি খাতে যায়? টাকা তো নিজেদের পকেটে যায়। সরকারি কাজে তো যায় না। আমার কথা হলো, কালকে থেকে আমরা ঘুষ দেব না। তাহলে আমরা শ্রমিকদের বেতন বাড়াব। ঘুষ দিতে হলে আমরা বেতন বাড়িয়ে দিতে পারব না। এটা সবার বলা উচিত। ঘুষ দিতে দিতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কথা বললে এইভাবে বলতে হবে। আর কথা না বলে বিড়ালের মতো বসে থাকলে হবে না কিন্তু।’ 

এ সময় অনেকেই ঠিক ঠিক বলে তাঁকে সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনবিআর কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি, সতর্কবার্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের দপ্তরের ব্যক্তিগত সহকারী মো. কাউসারের নাম ভাঙিয়ে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা দিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রতারকেরা মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে ফোন, মেসেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে মো. কাউসারের সঙ্গে এ কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বসাধারণকে এই প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ এ ধরনের ফোনকল বা বার্তার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জিডিতে মো. কাউসার উল্লেখ করেন, ২৩ ডিসেম্বর এনবিআরের উপ-কর কমিশনার রইসুন নেসা (বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার) তাঁকে জানান, কাউসারের নাম ব্যবহার করে ০১৭০১৮৯০৩৮৭ নম্বর থেকে কল করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ আছে’ উল্লেখ করে টাকা দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ০১৩২৮০৮৩২১৬ নম্বরে। পরে দেখা যায়, একই চক্র আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই কৌশলে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করেছে। পরে কাউসার জানতে পারেন আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই নম্বর থেকে টাকা দাবি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তাঁর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কাউসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-কুষ্টিয়ার পরিদর্শী রেঞ্জ-৪-এর যুগ্ম কর কমিশনার রইসুন নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে কাউসারের নামেই ফোন করে। আমি বিষয়টি কাউসারকে জানাই। পরে আর ফোন করেনি। কোনো কথাও হয়নি।’

জানতে চাইলে মো. কাউসার বলেন, কোনো একটা চক্র এটা করছে। এর আগে চেয়ারম্যান স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে টাকা চেয়েছিল বিভিন্নজনের কাছ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এল আরও ৫৭ হাজার টন গম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। আজ রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় নগদ ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এই গম আমদানি করা হয়েছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম দেশে এসেছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৩৪ টন চট্টগ্রাম বন্দরে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৫৬ টন মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে আরেক চুক্তিতে (জি-টু-জি) এরই মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত