Ajker Patrika

ট্রাম্প প্রশাসনে চোখ ব্যবসায়ীদের

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ১৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আজ ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। এই শপথের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হচ্ছে, যা ২০২৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, এই সময়ে ট্রাম্প বিশ্বরাজনীতিতেও শক্তিশালী প্রভাব ফেলবেন।

ট্রাম্প এরই মধ্যে কর হ্রাস, বিদেশি পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপ এবং অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা জানিয়েছেন, যা মূলত দেশের অর্থনীতি চাঙা করা এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে। বিশেষত, আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এমন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের দূরত্ব আরও বাড়াতে পারে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ হতে পারে।

বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে; কারণ, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মার্কিন বাজারে পণ্য রপ্তানি করছে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি কৃষি, চামড়া, ওষুধ, আসবাবসহ ১০-১১টি খাতে আরও বেশি প্রবেশের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের রপ্তানি আয়কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।

সম্ভাবনার প্ল্যাটফর্মে দরকার প্রস্তুতির
তবে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়াতে পারলেই এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব বলে দাবি করেন খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, এমনিতেই দেশের শিল্প খাত নানা সংকট ও জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধান সমস্যা হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি, দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাব, উৎপাদনে বাধা এবং রাজস্ব নীতির ত্রুটিগুলো উঠে এসেছে। এসবের সঙ্গে রয়েছে দক্ষ জনবলের অভাব। এতে চামড়া, পাট, চা, প্লাস্টিকসহ অনেক খাত টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি পোশাক খাতও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ এবং রপ্তানির প্রধান বাজারগুলোয় পোশাকপণ্যের দাম কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এই সংকটগুলো কাটিয়ে ওঠা জরুরি, যাতে শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ানো যায়। এর জন্য সময় থাকতেই সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ দরকার, যাতে সম্ভাবনার এসব খাত বিশ্ববাজারে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সক্ষমতা বাড়াতে পারলে সামনের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি চাহিদার পণ্য রপ্তানি করে বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের ১ নম্বর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। একইভাবে অন্যান্য পণ্যও সম্ভাবনা জানান দিতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা পোশাকের প্রায় ২৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ২০১৬ সালের ৫ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাতের অবদান ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এসব পরিসংখ্যান বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শক্তিশালী অবস্থানকে তুলে ধরে।

ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে চীন ৪৪৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ছিল ১৭ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার; যা ২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার সময় চীনের পোশাক রপ্তানি ছিল ২৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের পর থেকে চীনের পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমেছে, যা এই খাতে তাদের অবস্থান দুর্বল করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে পণ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ক্রেতারা বাড়তি খরচ এড়িয়ে চীন থেকে পণ্য আমদানি করবেন না। সেই পরিস্থিতিতে তাঁরা বিকল্প বাজার খুঁজে নেবেন।

গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দীন রুবেল বলেন, ‘যেসব ক্রেতা আগে চীন থেকে পণ্য নিত, তাদের অনেকে এখন আমাদের দেশ থেকে পণ্য নিতে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের সামনে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে—জ্বালানি সংকট, ব্যাংকিং সংকট এবং চীনের মানের পণ্য তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব। এসব সমস্যার কারণে যদিও আমাদের রপ্তানির লক্ষ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে, আমরা এখনো ৪০ বিলিয়ন ডলারও পার করতে পারছি না।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন তৈরি পোশাক ছাড়াও খেলনা, আসবাব, সবজি, লাইটিং অ্যাকসেসরিস, প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড বিল্ডিং, প্লাস্টিক, যানবাহন, অপটিক্যাল, ফটো, প্রযুক্তিগত, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, লোহা বা ইস্পাত, জুতা, গাইটার, জৈব রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, চামড়াসহ মোট ৯৭ ধরনের পণ্য রপ্তানি করে।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের চাহিদা থাকলেও আমরা তা ধরতে পারছি না। প্রথমত, সরকারি উদ্যোগের অভাবে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট গ্রহণ করা হয় না। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অতিরিক্ত ফ্রেইড খরচ এবং বিমানসংকট রয়েছে, বিশেষ করে প্যারিশেবল আইটেমের জন্য। এই সমস্যাগুলোর কারণে আমাদের বাজার ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে, আর ইউরোপে চাহিদা অনুযায়ী সবজি রপ্তানিও সম্ভব হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানির তালিকায় পোশাক ছাড়াও মোট ৮৯ ধরনের পণ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২৩ সালে পোশাকের পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে হেডগিয়ার (৪০৯ মিলিয়ন), জুতা-গাইটার (২২৫ মিলিয়ন), পাখির পালক-কৃত্রিম ফুল-মানুষের চুল (১২৮ মিলিয়ন), চামড়াজাত পণ্য (৯৬ মিলিয়ন)। এ ছাড়া ভোগ্যপণ্য, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পণ্য, ওষুধ সামগ্রী, চা, সবজি, তামাক পণ্য, বিভিন্ন ধরনের তৈরি পণ্য, পেপার বোর্ড, গ্লাস সামগ্রী, ইলেকট্রিক-ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম ও কার্পেট-ফ্লোরম্যাট ইত্যাদি পণ্যও রপ্তানি হয়। এসব খাত থেকে ১০-৮০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

চামড়াশিল্পকে হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে বিসিক শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা হলেও সিইটিপির পরিশোধন ক্ষমতা এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া ট্যানারিগুলোর যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে ট্যানারিশিল্প কমপ্লায়েন্ট শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এর ফলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় এই খাত থেকে রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে চামড়াশিল্পের কাঁচামালের পর্যাপ্ত জোগান থাকলেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বিশ্ববাজারে দেশের অংশীদারি মাত্র ১ শতাংশ। বর্তমানে দেশে শুধু ৬টি কোম্পানির এলডব্লিউজির সনদ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত