Ajker Patrika

সরকারি চার ব্যাংকের অবলোপন ঋণ: প্রতিশ্রুতি বেশি, আদায় কম 

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
সরকারি চার ব্যাংকের অবলোপন ঋণ: প্রতিশ্রুতি বেশি, আদায় কম 

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের অবলোপন ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চার ব্যাংক অবলোপনকৃত ঋণের ঘানি বছরের পর বছর টেনেই চলছে। এই মন্দ বা কু ঋণ থেকে ব্যাংকগুলো বের হতে চেষ্টাও করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বারবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু অবলোপণ ঋণের গোলক ধাঁধায় অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে। দিন শেষে অবলোপন ঋণ আদায় অনেকটা চুক্তিতে সীমাবদ্ধ থাকছে। কেননা, চুক্তির তুলনায় আদায় একেবারে নগণ্য।

এই চার ব্যাংকের গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিশ্রুতি ছিল ১ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু চুক্তির বিপরীতে আদায় মাত্র ৩১৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পন্ন চুক্তি অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের মোট অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিতে লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা যা ১০ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকগুলো চুক্তির ধারের কাছেও পৌঁছতে পারেনি। এই চার ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে আদায় করেছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩১৭ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে চার ব্যাংকের মোট অবলোপনকৃত ঋণের তুলনায় এই আদায়ের পরিমাণ ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। একইভাবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরের চার ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকগুলো আদায় করতে পেরেছিল ৫৯১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। সেই হিসাবে ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর শতকরা হিসাবে কম আদায় হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রক্ষা করছে না। অপরদিকে উচ্চমাত্রার অবলোপন ও খেলাপির ভারে ব্যাংকগুলো অর্থ আদায় করতে না পারায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। সেখান থেকে ২০২২ সালে আদায়ের জন্য সমঝোতা চুক্তিতে (এমইউ) বাংলাদেশ লক্ষ্য বেধে দেয় ৬৮৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ১০৬ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র ১৬ শতাংশ। যদিও সোনালি ব্যাংকের জন্য ২০২১ সালে লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল ৭০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি আদায় করেছিল ১৬৭ কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশ। সেই তুলনায় বিদায়ী বছরের কম আদায় হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। একইভাবে, জনতা ব্যাংকের গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অবলোপনকৃত ঋণ ছিল ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটির লক্ষ্য ৩৪১ কোটি টাকা হলেও আদায় করেছে ১১২ কোটি টাকা বা ৩৩ শতাংশ। তার আগের বছরের লক্ষ্য ছিল ৩৫২ কোটি টাকা এবং ব্যাংকটি আদায় করেছিল ৮৮ কোটি টাকা বা ২৫ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা জানায়, মূলত ব্যাংক পরিচালকদের নামে–বেনামে ঋণ ছাড়ের কারণে বছরের পর বছর ঋণ আদায় হয় না। একটা পর্যায়ে ঋণ অবলোপন করা হয়। সেই অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশন রক্ষা করে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট থেকে বাদ দিতে হয়। এতে ব্যাংকের গ্রাহক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের চিত্র সম্পর্কে অন্ধকারে থেকে যায়। গত ২০ বছরে ৬০ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা অবলোপনকৃত ঋণের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংগুলোর ৩৫ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। বিপরীতে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অগ্রণী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ৪ হাজার ৪৫ কোটি টাকার মধ্যে গত বছরে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৪০৫ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটি আদায় করে ৮৮ কোটি টাকা বা ২২ শতাংশ। যদিও ব্যাংকটি আগের বছর বেধে দেওয়া ৪৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ৭৪ কোটি টাকা আদায় করেছে। যা লক্ষ্যর তুলনায় ১৭ শতাংশ। তবে অপর রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ অন্য তিন ব্যাংকের তুলনায় একেবারে কম অর্থাৎ মাত্র ৫৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সোনালি ব্যাংকের তুলনায় কম ৬ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা বা ৯১ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকটির অবলোপন ঋণের আদায়ের হার চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে তলানিতে অবস্থান করছে। ব্যাংকটির ৫৯১ কোটি টাকা অবলোপকৃত ঋণের বিপরীতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল মাত্র ৫৯ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকটি টাকার অঙ্কে সবচেয়ে কম তথা কেবল ১১ কোটি টাকা আদায় করেছে। তবে এটি শতকরা হিসাবে ১৯ শতাংশ। যদিও ব্যাংকটি এর আগের বছরের ৬০ কোটি টাকা লক্ষ্যর বিপরীতে ৭ কোটি টাকা বা ১২ শতাংশ আদায় করতে পেরেছিল।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় এমন হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকেই অনেক খেলাপিকে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছে ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণ ও তদারকির অভাব এবং অপর্যাপ্ত জামানত বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা ব্যাংকিং খাতের জন্য বাড়তি বোঝা।’

এদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে চার ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৪০ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। তা বেড়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি কমাতে বলা হলেও উল্টো বেড়েছে। এখানেও চুক্তি কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আবদুল জব্বার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি সম্প্রতি জয়েন করেছি। ব্যাংক ভালো চলছে। তবে অবলোপন ঋণ নিয়ে চুক্তি হয়েছে। সাধ্যমতো আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না।’ 

তবে সোনালি, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের এমডির বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৭ জানুয়ারি খেলাপি ঋণ কম দেখাতে ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) নীতিমালা শিথিল করেছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে ৫ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ মামলা না করে অবলোপন করে ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দিতে পারবে ব্যাংক। যা আগে ছিল ২ লাখ টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত