Ajker Patrika

প্লাস্টিক থেকে বিদ্যুৎ: যেভাবে বিলিয়নেয়ার হলেন সামিট গ্রুপের আজিজ খান

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩: ৩২
প্লাস্টিক থেকে বিদ্যুৎ: যেভাবে বিলিয়নেয়ার হলেন সামিট গ্রুপের আজিজ খান

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রেখেই ১৮ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে প্লাস্টিক আমদানির ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। তখনই প্রথম সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি সেখানকার ৫০ শীর্ষ ধনীর একজন, সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যার কথা বলছি, তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত বহুল বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান।

যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘ফোর্বসে’র তৈরি সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে তাঁর অবস্থান এখন ৪১তম। এখন তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১১২ কোটি ডলার, যা গতবছর ছিল ১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা রয়েছে। 

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদক

ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ বছর বয়সী আজিজ খান বাংলাদেশের নাগরিক হলেও সিঙ্গাপুরে আবাসিক। বিশ্বের বিলিয়নেয়ারের তালিকায় তাঁর অবস্থান ২৫৪০তম অবস্থানে। আজিজ খানের বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। অবসরের পর তিনি নির্মাণ ব্যবসায় নামেন। আজিজ খান ব্যবসা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে বাবার পথ অনুসরণ করে অবকাঠামো খাতে চলে যান।  আজিজ খানের তিন সন্তান। তাঁর মেয়ে আয়েশা খানও বিদ্যুৎ খাতে; সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল দেখভাল করেন তিনি।

২০১৯ সালে জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার কাছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন আজিজ খান। সেই বিক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে তখন সামিট পাওয়ারের বাজারমূল্য ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল। 

সামিটের কর্ণধার আজিজ খানের বিলিয়নেয়ার হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরেছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএ। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এক বন্ধুর সঙ্গে প্লাস্টিক আমদানির পাইকারি ব্যবসা করার সময় প্রথমবার সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করেন। পরে তিনি সার রপ্তানির ব্যবসাও করেন। পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) জুতা তৈরির জন্য প্ল্যান্ট কেনেন। 

ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আজিজ খানকে মাঝে মাঝেই বন্দরে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। ফলে তাঁকে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের আবেদন জানান। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষবকে বলেন, ‘আমাকে আপনার জন্য একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে দিন। যেন জাহাজগুলোকে বন্দরে বেশি সময় থাকতে না হয়।’ 

একাধিক ব্যবসা থাকলেও মূলত বিদ্যুতের ব্যবসাই তাঁর সমৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। আজিজ খান ১৯৮৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং ২০১৬ সালে তিনি তাঁর কোম্পানির সদর দপ্তর এখানে স্থানান্তর করেন। 

বিদ্যুৎ খাতে সামিট গ্রুপের আধিপত্য 

১৯৯৭ সালে দেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এটি এখন দেশের বৃহৎ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৯ শতাংশই উৎপাদন করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। প্রায় পাঁচ দশকের ব্যবসায়ী জীবনে আজিজ খানের সম্পদের উল্লম্ফন হলেও এর বড় অংশই তৈরি হয়েছে গত এক দশকে।

সামিট পাওয়ারের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সামিট গ্রুপের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০০১ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ মেগাওয়াটে উঠে। ২০০৯ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে একের পর এক বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হতে থাকে কোম্পানিটি। 

প্রথমে কুইক রেন্টাল পরে আইপিপি স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকে সামিট পাওয়ার। গত এক দশকে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার দৌড়ে সামিটই সবচেয়ে এগিয়ে। তাই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোম্পানির মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রতিবছর সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় নিয়ে সমালোচনা চলছে প্রায় দুই দশক ধরে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে জনগণের যে টাকা সরকার খরচে তার ৪৪ শতাংশই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর পকেটে যাচ্ছে। 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রকল্প গ্রহণের আগে সঠিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা নির্মিত প্ল্যান্টসমূহে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ওইসব কেন্দ্র বসিয়ে রেখে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হতো না।

সরকার যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তি করে তখন সে চুক্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার শর্তটি জুড়ে দেয়া থাকে। এই চার্জ অনেক সময় ডলারে পরিশোধ করা বা ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী পরিশোধের শর্ত থাকে। ফলে তা পরিশোধে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

পিক আওয়ারে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর কথা বলে মূলত বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে কেনার জন্য এধরনের আইনি কাঠামো তৈরি করা হয়। ২০১০ সালে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য করা ওই আইন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ খাতের ইউনিট প্রতি দাম ও খরচের মডেল জবাবদিহিতার উর্ধ্বে ছিল। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি স্বল্পসময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেও গুরুত্ব দেয়া হয়, যাকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বলা হয়।

গত মঙ্গলবার সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া বাবদ সরকার জনগণের ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে একক গ্রুপ হিসেবে সবচেয়ে পেয়েছে সামিট গ্রুপ। 

এক দশকে সামিটের সম্পদ ২১২৩ থেকে ১০৩০৯ কোটি টাকা

সংসদে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি কেন্দ্রভিত্তিক। কিন্তু বিদেশি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটির একাধিক কেন্দ্র রয়েছে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য ধরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে দেশের বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ভাড়াবাবদ সর্বোচ্চ প্রায় ১৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পেয়েছে। এছাড়া সামিট ও ইউনাইটেডের যৌথ মালিকানাধীন খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল) তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পেয়েছে ৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। 

আজিজ খানের সম্পদের বড় অংশের অবদান রাখছে সামিট পাওয়ার। গত ২০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০০৮ হিসাব বছর পর্যন্ত কোম্পানির সম্পদ ও নিট মুনাফায় যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়, পরের হিসাব বছরগুলোতে তা ছিল অনেক বেশি। ২০০৩ সালে কোম্পানিটির সম্পদ ছিল ১০০ কোটি ৮২ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। 

২০০৮ সালে তা বেড়ে সম্পদ ৬৭০ কোটি ৭১ লাখ ও নিট মুনাফা হয় ৪৬ কোটি ২ লাখ টাকা। পরের বছরই তা বেড়ে যথাক্রমে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ এবং ৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা হয়। ২০১২ সালে সামিট পাওয়ারের সম্পদ হয় ২ হাজার ১২৩ কোটি ৬ লাখ এবং নিট মুনাফা ২৪৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এক দশকের ব্যবধানে ২০২২ সালে সম্পদ বেড়ে ১০ হাজার ৩০৯ কোটি ১০ লাখ টাকায় এবং নিট মুনাফা ৬৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত