Ajker Patrika

শ্রমিক সুরক্ষায় পাকিস্তানের সঙ্গে লিভাইসের চুক্তি, বাংলাদেশে কেন নয়

অনলাইন 
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ৩৭
শ্রমিক সুরক্ষায় পাকিস্তানের সঙ্গে লিভাইসের চুক্তি, বাংলাদেশে কেন নয়

পাকিস্তানের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড লিভাই’স স্ট্রস। বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন দ্য ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গেও লিভাই’সকে একই ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দ্য ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন। 

বাংলাদেশে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১ হাজারের বেশি গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হন। সেই ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় এবং একপর্যায়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড অন হেলথ অ্যান্ড সেফটি ইন টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি’ চুক্তি স্বাক্ষর করতে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোকে বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। 

এই চুক্তি নিশ্চিত করে যে, এতে স্বাক্ষর করা পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর সরবরাহকারী দেশগুলোর কারখানাগুলো পরিদর্শন করবে এবং চিহ্নিত নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো সমাধানের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে। ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তানে এই অ্যাকর্ড নিয়ে কাজ শুরু হয়। লিভাই’স এই অ্যাকর্ডে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাধ্যবাধকতামূলকভাবে পাকিস্তানে তাদের সরবরাহকারী গার্মেন্টসগুলো পরিদর্শন এবং কঠোর প্রতিকারমূলক কর্মসূচি, পাশাপাশি অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং কর্মী প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করবে। 

পাকিস্তানে নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠী উইমেন ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জেহরা খান বলেন, ‘আমরা খুশি যে লিভাই’স অবশেষে বিশ্বজুড়ে কর্মীদের আওয়াজ আমলে নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে তাদের কর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে বলেছে।’ 

লিভাইসের এক মুখপাত্র বৈশ্বিক বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা সংবাদমাধ্যম ইনভেস্টমেন্ট মনিটরকে বলেছেন, ‘আমরা লিভাই’স অ্যান্ড কোং বিশ্বাস করি যে, যেসব শ্রমিক আমাদের পণ্য তৈরি করেন, তাঁদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করা উচিত এবং তাদের সঙ্গে মর্যাদা ও সম্মানজনক আচরণ করা উচিত। তাই আমাদের সাপ্লাই চেইনজুড়ে নিরাপত্তা নীতি শক্তিশালী করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছি।’ 

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানে আমাদের সাপ্লাই চেইনে শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদার করতে অন্যান্য ব্র্যান্ডের পাশাপাশি পাকিস্তান অ্যাকর্ডে যোগ দিচ্ছি। আমরা যেসব দেশ থেকে পণ্য ক্রয় করি, সেসব দেশে ভবন, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক সুরক্ষা প্রচেষ্টা বাড়ানোর জন্য কাজ চালিয়ে যাব।’ 

এদিকে, লিভাই এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর দ্য ক্লিন ক্লদস বিশ্বের অন্যান্য ব্র্যান্ডকেও এতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা লিভাই’সকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্যও একই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়েছে। 

লিভাই’স ২০২৩ সালে আরও ৫৪টি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে ‘নিরাপণ’ উদ্যোগে যোগ দেয়। নিরাপণ একটি স্বনিয়ন্ত্রিত সংস্থা, যেটি এর সদস্য ব্র্যান্ডগুলোকে বাংলাদেশে কারখানা নির্মাণ ও অগ্নি নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, তদারকিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণমূলক পরিষেবা দেয়। এই উদ্যোগে যোগ দেওয়ার পর লিভাই’স এক বিবৃতিতে বলেছিল, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার সংস্কৃতি তৈরি এবং তা টিকিয়ে রাখবে। 

তবে দ্য ক্লিন ক্লদসের বক্তব্য, ‘নিরাপণ’ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকর্ড অন হেলথ অ্যান্ড সেফটি ইন টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির’ একটি তুলনামূলক সহনশীল প্রকরণ। এই চুক্তিতে আরও বেশি বাধ্যবাধকতা এবং শ্রমিকদের বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। 

দ্য ক্লিন ক্লদসের কো-অর্ডিনেটর ক্রিস্টি মিডেমা বলেন, ‘লিভাই’স এই আন্তর্জাতিক চুক্তি যুক্ত হয়ে এর পাকিস্তান কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেছে। শ্রমিক ও কর্মীরা বিষয়টিকে স্বাগত জানায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, কোম্পানিটি এই চুক্তির বাংলাদেশ কর্মসূচিতেও স্বাক্ষর করবে এবং শিল্পমালিকদের নেতৃত্বাধীন তুলনামূলক অস্বচ্ছ নিরাপণ উদ্যোগকে পেছনে ফেলার এই সুযোগ গ্রহণ করবে।’ 

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের সংগঠন ওয়ার্কার্স ইউনাইটেড-এসইআইইউর সেক্রেটারি ও অর্থ সম্পাদক এডগার রমনি বলেন, ‘পাকিস্তানে নিজেদের সরবরাহকারী কারখানাগুলোকে নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আমরা কোম্পানিকে (লিভাই’স) অভিনন্দন জানাই এবং আমরা বাংলাদেশেও একই কাজ করার জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’ 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে যেসব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড তৈরি পোশাক আমদানি করে থাকে তাদের মধ্যে লিভাই’স একটি। পশ গার্মেন্টস নামে বাংলাদেশি একটি পোশাক কারখানার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনার ক্ষেত্রে লিভাইসের অবস্থান পঞ্চম। ব্র্যান্ডটি চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশেও তাদের একটি আউটলেট চালু করেছে ঢাকার বনানীতে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য বড় শহর, বিশেষ করে চট্টগ্রামেও তাদের একটি আউটলেট চালুর পরিকল্পনা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত