Ajker Patrika

বাংলাদেশের দুটি কিডনিই খেয়ে ফেলা হয়েছে: ড. দেবপ্রিয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৪৪
ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের আয়োজনে ‘পলিসি ডায়ালগ অন ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের আয়োজনে ‘পলিসি ডায়ালগ অন ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের দুটি কিডনিই খেয়ে ফেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

আজ শনিবার রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের আয়োজনে ‘পলিসি ডায়ালগ অন ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশের দুটো কিডনি। একটি ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর, আরেকটি এনার্জি সেক্টর। দুটোই খেয়ে ফেলেছে বিগত সরকার। যারা এনার্জি সেক্টর খেয়েছে, তারাই আবার ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর খেয়েছে।’

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, মাসোহারা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরে লোক রাখা হয়েছিল। তারা টাকা ছাপিয়েছে, ভুয়া রিজার্ভ দেখিয়েছে। ব্যাংক চালানোর মতো যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এমন ব্যক্তিকে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে আছি। রাষ্ট্রের মেরামত যদি না হয়, দুই পয়সার সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা না গেলে, সংস্কারের পথে এগোনো সম্ভব নয়।’

দেবপ্রিয় বলেন, বিগত সরকারের আমলে প্রবৃদ্ধির তথ্য ও উপাত্তে মারাত্মক সমস্যা ছিল। তথ্যে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে, যেখানে ট্যাক্স জিডিপি বাড়েনি। ট্যাক্স নাই, বিনিয়োগ নাই আর দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে গিয়ে সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য শিক্ষায় গুরুতর অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিগত আওয়ামী সরকার ব্যাংকগুলোকে নিঃশেষ করে দিয়ে গেছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অনেক প্রকল্প করা হয়েছে, সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি টেস্ট) করা হয়নি।’

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্থিক খাতে এত বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, সেটা বাইরে থেকে কল্পনাও করা যাবে না। এত অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি।

সাধারণ মানুষকে আশাহত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্থনৈতিক খাতে যেভাবে লুটপাট হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে কাজ করা হচ্ছে। ব্যাংক খাত, শেয়ারবাজার, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। আপাতত আমরা স্বল্পমেয়াদি কিছু সংস্কারে জোর দিয়েছি। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে হবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারকে।’

এ ছাড়া অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঋণ দিতে বেশ আগ্রহী বলে জানান তিনি।

আদানির বিদ্যুৎ ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আদানিকে চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কর নেওয়া হয়নি। এটি কোনো চুক্তি হলো? আপনারা শুনে আরও আশ্চর্য হবেন, সারের ১৩৫ মিলিয়ন ডলার বিগত সরকার পরিশোধ করেনি। আমরা এসে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছি, রিজার্ভে হাত না দিয়ে।’

অর্থ পাচার বন্ধের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে জানিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, পাবলিক সাইড হোক, প্রাইভেট সাইড হোক; টাকা-পয়সা আর পাচার করতে পারবে না। আমরা যে সংস্কার করছি, সেটার মাধ্যমে আমরা ফুটপ্রিন্ট রেখে যাব। অ্যাটলিস্ট আমাদের পদাঙ্ক যেন পরবর্তী সরকার অনুসরণ করে যেতে পারে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান রাত ৯টা পর্যন্ত একটা অনুমোদন দেওয়ার জন্য বসে থাকে, সেই প্রতিষ্ঠান কেমন চলতে পারে ভাবুন। এখন রিজার্ভ থেকে এক টাকাও বিক্রি না করে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের বকেয়া পরিশোধ করছে। অথচ আগের গভর্নর ৪২ বিলিয়ন থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে দিলেন। এভাবে রিজার্ভ নিঃশেষ করে এখন মহা আনন্দে কোথায় আছেন, জানি না।’

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলি আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতা না। এই দায়িত্বের প্রথম দেশটা যেভাবে চলছিল, সেটা ঠিক করা। এটা মেরামত করতে সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা অনেকেই বলেছেন। আমি তিন সরকারের সময়ে গভর্নরের দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়েছি। তখন সবাই ফেরেশতা ছিল না। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। এখন তা আড়াই লাখ কোটি টাকা। এই খেলাপি কেন, কাদের জন্য বেড়েছে সেটা সবার জানা।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন কৌশলটা ভুল ছিল। শুধু প্রবৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে রিজার্ভ বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কম রয়েছে। তবে এসব চুইয়ে পড়ছে কি না তা দেখা হয়নি। এটা দেখার দায়িত্ব ছিল নীতি প্রণেতাদের। প্রবৃদ্ধিটা সবাইকে নিয়ে হয়েছে কি না দেখা হয়নি। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নেই।’

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা অস্থির হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছু ত্রুটি আছে। বগুড়া থেকে কারওয়ান বাজার আসতে ১৭ জায়গায় টাকা দিতে হয়। কিছু জায়গায় মধ্যস্বত্বভোগী দরকার আছে। তবে কেউ কেউ আছে, কিছু না করেই কেবল ফুটপাথে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি করছে। যে কারণে আমি চেয়েছিলাম কিছু ডিলার পরিবর্তন করতে। তবে পরিবর্তন করলে আরেক গ্রুপ এসে না কি চাঁদাবাজি শুরু করবে। এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?’

সালেহউদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংক খাত, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, শেয়ারবাজারে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। তবে শেয়ারের দর কেন কমল এ নিয়ে অনেকেই রাস্তায় নেমেছেন। তাঁরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চান, আমাকে নিয়েও বলছেন। তবে সংস্কার করতে গেলে কিছু ব্যথা সইতে হবে।’

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যারা কারসাজি করছে, তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে আছে। আর তাদের থেকে আমাদের সার্ভিল্যান্স, ইন্টেলিজেন্স অনেক পিছিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক ক্ষেত্রে এসব দুষ্টু লোকদের জরিমানা করছি, কিন্তু প্রশ্ন হলো এই কাজগুলো যে সময় করা দরকার, সে সময় করার জন্য আমরা প্রস্তুত কি না? পুঁজিবাজারের এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের প্রধান কাজ হবে—বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমরা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এই আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।’

অর্থনৈতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ডিজিটালাইজড করতে হবে উল্লেখ করে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থনৈতিক সেক্টরে লুটপাট হয়েছে। যেখানে ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরা জড়িত ছিলেন।

আয়োজকেরা জানান, দেশের আর্থিক খাতের বর্তমান নীতি ও কার্যপ্রণালির দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা, আর্থিক খাতের উন্নয়নের জন্য সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া এবং সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান—এই তিনটি লক্ষ্যে এই ডায়ালগের আয়োজন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত