Ajker Patrika

আদানিসহ প্রশ্নবিদ্ধ ৬ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা চলছে

  • শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ৮৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
  • বড় চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় আন্তর্জাতিক আইন ও তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগের সুপারিশ জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির।
  • সামিট, ইউনাইটেড, ওরিয়নসহ অন্যান্য কোম্পানির প্রতিটি চুক্তি খতিয়ে দেখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ১৬
আদানিসহ প্রশ্নবিদ্ধ ৬ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা চলছে

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি ও যৌথ অংশীদারত্ব মিলিয়ে ৮৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের সঙ্গে করা বেশির ভাগ চুক্তিই নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় সহায়তার জন্য স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক আইন ও তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগের সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি। গতকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া প্রস্তাবে এ সুপারিশ করে কমিটি।

জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি এর মধ্যে ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা করছে। কেন্দ্রগুলো হলো ভারতের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের ১৫০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগের পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, সামিটের ইউনিট মেঘনাঘাট ৩৩৫ মেগাওয়াট, ইউনাইটেড গ্রুপের আশুগঞ্জে ১৯৫ মেগাওয়াট, এস আলমের বাঁশখালী ৬১২ মেগাওয়াট, সামিটের মেঘনাঘাট ৫৮৩ মেগাওয়াট, ইউনিকের মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, চুক্তিগুলোর আইনগত ও অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখার জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পর্যালোচনা কমিটি। কমিটি এমন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছে, যাতে আন্তর্জাতিক সালিশি আইন এবং কার্যধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা বা বাতিল করার মতো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। কমিটি বলছে, এই পর্যালোচনার বিষয়টি যাতে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আলোচনা ও সালিসে গ্রহণযোগ্য হয়, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায় তারা।

শেখ হাসিনা আমলে চুক্তি হওয়া ৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে সব থেকে বেশি সুযোগ পাওয়া সামিট, ইউনাইটেড, ওরিয়নসহ অন্যান্য কোম্পানির প্রতিটি চুক্তি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আওয়ামী লীগ সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১০ সালে বিদ্যুৎ জ্বালানির বিশেষ আইন করে। ওই আইনের অধীনে বিনা দরপত্রে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই আইনের অধীনে বেসরকারি খাতে ৮৯টি বিদ্যুৎ

কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়। জাতীয় কমিটি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিগুলো খতিয়ে দেখছে, চুক্তিতে দেশের স্বার্থ কোথাও নষ্ট হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখবে তারা।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ জ্বালানির বিশেষ আইনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের ভাষায়, বিগত সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ‘অনিয়মের মহোৎসব’ হয়েছে।

সামিট গ্রুপের সব চুক্তি খতিয়ে দেখার পরামর্শ

বিদ্যুৎ খাতে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে সামিট গ্রুপ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে খুলনা পাওয়ার কোম্পানির যৌথ অংশীদার ছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে সামিট গ্রুপ ১৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছে, যার সম্মিলিত ক্ষমতা ২ হাজার ১১০ মেগাওয়াট। সবচেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া নিয়েছে সামিট। বছরে সামিট এখন ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি কেন্দ্র ভাড়া নিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা গোপালগঞ্জ-১ আসনের একাধিকবারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক ব্যবসা সামিট গ্রুপ।

সামিট গ্রুপের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নিয়ে জাতীয় কমিটি পর্যালোচনা করছে, এ দুটি কেন্দ্র হলো মেঘনাঘাট ৩৩৫ মেগাওয়াট ও মেঘনাঘাট ৫৮৩ মেগাওয়াট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামিটের সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা করা উচিত। সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে তারা বাড়তি সুবিধা নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলেন, সামিটকে ১০৫ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রথমে অনুমতি দেওয়া হয় রংপুরে। রংপুরে জ্বালানি তেল বহন করা কঠিন, সে কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয়ও বেশি দেওয়া হয়েছিল। উত্তরবঙ্গে লোডশেডিং সামাল দিতে সরকার তখন এই পরিকল্পনা করে। সামিট প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্রটি বরিশালে নদীর পাড়ে স্থাপন করে, তারা এ সময় কেন্দ্রটির ক্ষমতাও বাড়িয়ে নেয় ৫ মেগাওয়াট। নদীর পাড়ে জ্বালানি পরিবহন সহজ হওয়ায় কেন্দ্রটির উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ার কথা, কিন্তু সামিট রংপুরের সমান উৎপাদন ব্যয় নেয় বরিশালে। তাঁরা বলছেন, সামিটের প্রতিটি চুক্তি খতিয়ে দেখলে এর সত্য মিলবে।

পেট্রোবাংলার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সাগরে ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেট। বিনা দরপত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিকে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস এই টার্মিনাল দিয়ে সরবরাহ করা হয়। অর্থাৎ বিদেশ থেকে জাহাজে করে আনা হবে এলএনজি, সেটি পুনরায় গ্যাসে পরিণত করে পাইপ লাইনে সরবরাহ করবে এক্সিলারেট। যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটির সারা দুনিয়ায় এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সামিটকে সরকার কোনো রকম অভিজ্ঞতা ছাড়া এ রকম একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমতি দেয় বিশেষ আইনে। এরপর সামিট চুক্তি করে এক্সিলারেটের সঙ্গে। এক্সিলারেট সামিটের হয়ে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে পেট্রোবাংলাকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করে। সামিট যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সিলারেটকে একটি নির্দিষ্ট অর্থ দেয়, আর মাঝখান থেকে কমিশন নেয় সামিট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামিটের অভিজ্ঞতা না থাকায় এলএনজি টার্মিনাল দেওয়ার পর তারা সেই অনুমতি ভাড়া দিয়েছে এক্সিলারেটকে। এই চুক্তি খতিয়ে দেখার প্রতি জোর দিয়েছে তারা।

অন্য আলোচিত যারা

ইউনাইটেড গ্রুপ গত ১৫ বছরে ১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছে, যার মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ৬৬৫ মেগাওয়াটের ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই গ্রুপের ১৪৯ মেগাওয়াট আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চুক্তি খতিয়ে দেখছে জাতীয় কমিটি, তবে এই গ্রুপের অন্য কেন্দ্রের ব্যাপারে তারা কিছু বলেনি।

গত সাড়ে ১৫ বছরে অনুমতি পাওয়া কেন্দ্রের মধ্যে ওরিয়নের ৫০৫ মেগাওয়াটের ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে। আলোচিত এই গ্রুপের কোনো কেন্দ্রের বিষয়ে জাতীয় কমিটি খতিয়ে দেখছে না এখনো।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ডরিন পাওয়ারের ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেয়েছে, এসব কেন্দ্রের চুক্তিও খতিয়ে দেখছে কি না তা জানা যায়নি।

২০১৯ সালে জুলাই মাসে অনুমোদন পায় ইউনিকের মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি। এটি পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক চেয়ারম্যান) চৌধুরী নাফিজ শরাফাতের মালিকানাধীন ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড। নাফিজ শরাফত বিদ্যুতের ব্যবসা করেননি আগে, এ বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতাও নেই। শুধু সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি এত বড় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাগিয়ে নেন। এই কেন্দ্রটির চুক্তি অবশ্য খতিয়ে দেখছে জাতীয় কমিটি।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে যত চুক্তি হয়েছে, এর প্রতিটির চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই এ ক্ষেত্রে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত