Ajker Patrika

পোশাক খাতে মানবাধিকার সংকট, চ্যালেঞ্জের মুখে বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭: ৩৯
পোশাক খাতে মানবাধিকার সংকট, চ্যালেঞ্জের মুখে বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড

২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্পের জন্য ভয়াবহ সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছিল। ওই ঘটনার পর প্রাইমার্ক, বেনেটনসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর টনক নড়ে উঠে। ভবিষ্যত বিপর্যয় এড়াতে ক্রেতাদের প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগী হয়। সরকার, শিল্প উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে গত একযুগে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তা মান ব্যাপক উন্নত হয়েছে।

এর মধ্যে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। গত আগস্টে শেখ হাসিনার দেড় দশকের স্বৈরশাসনের পতনের পর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দেশ। ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখার বাসনায় অভ্যুত্থান ঠেকাতে জুলাই-আগস্টে সরকার যে দমন-পীড়ন চালিয়েছে তার মধ্যে সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এসব ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ, যেগুলো অধিকতর তদন্তসাপেক্ষে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

এমন এক পরিস্থিতিতে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশের প্রভূত উন্নতি হলেও শ্রমিক অধিকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। পোশাক কারখানাগুলোতে আধুনিক দাসত্ব এবং শিশু নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে এই যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এই গবেষণা প্রতিবেদনে। পোশাক খাতের সরবরাহ শৃঙ্খলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেকাংশেই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোই দায়ী।

নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন ও গুডওয়েভ ইন্টারন্যাশনালের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্ববাজারের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পোশাক সরবরাহকারী হলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ এবং শ্রমিক নিপীড়নের কারণে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক নজরদারির মুখে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু শ্রম, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন, মজুরি বৈষম্য, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ও শ্রমিক নির্যাতনের মতো বিষয়গুলো রপ্তানিকারকদের জন্য গুরুতর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তবে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির মতো এবারো আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার মানোন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের পরিবর্তিত বাস্তবতায় সেটা মোক্ষম সুযোগ হতে পারে।

২০২৩ সালের শুরু থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে এই গবেষণা চালানো হয়। কারণ এই দুটি অঞ্চল বাংলাদেশের প্রধান পোশাক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বৈশ্বিক বাজার, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বিপুল পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করে। গবেষণার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের জন্য গুণগত ও পরিমাণগত গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পোশাক শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তবতা তুলে ধরে। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মিলে মোট ১ হাজার ৯৭৪ জন পোশাক শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

garment-1

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের পোশাক খাতে এখনও আধুনিক দাসত্ব ও শিশু শ্রমের মতো গুরুতর সমস্যাগুলো বিদ্যমান। এতে দেখা যায়, ৩২ শতাংশ পোশাক শ্রমিক ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম টাকায় কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ শতাংশ শ্রমিকের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানি সরবরাহ শৃঙ্খলে শিশু শ্রমের অস্তিত্ব রয়েছে। বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক কারখানাগুলোতে শিশুদের উপস্থিতি বেশ। গবেষণা প্রতিবেদনে শিশুশ্রমের যে পরিস্থিতি উঠে এসেছে তা আরও উদ্বেগজনক। গবেষণায় অংশ নেওয়া শতভাগ শিশু শ্রমিক অবৈধভাবে নিযুক্ত। তাদের বেশিরভাগকেই আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শ্রম আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা শোষণ করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে সরকার পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা (প্রায় ১১৩ মার্কিন ডলার) নির্ধারণ করলেও গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ শ্রমিক মনে করেন, এই আয় দিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। আর মাত্র ৯ শতাংশ শ্রমিক সঞ্চয় করতে সক্ষম।

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ও শ্রমিকদের ওপর উৎপাদনের চাপও বড় সমস্যা। গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ৩০ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১০ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেন, যা আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশি শ্রম আইনের সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং এই চিত্রকে ফোর্সড লেবার বা জোরপূর্ব শ্রমের লক্ষণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নারীদের আধিপত্য থাকলেও তাঁদের ক্ষেত্রেই বৈষম্য প্রকট। গবেষণা দেখা যায়, পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকরা গড়ে মাসে ২,০০০ টাকা (১৮ মার্কিন ডলার) কম মজুরি পান। এছাড়া ৬৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ৯০ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী শ্রমিক নিপীড়ন ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।

সাবকন্ট্রাক্টে পরিচালিত কারখানাগুলোতে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের হার বেশি, যা সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও নৈতিক ব্যবসার মান ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। কারণ, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কম দামে পোশাক কেনার লক্ষ্য থাকায় এই প্রবণতা বেশি বেশি ঘটছে। বাংলাদেশের এই শ্রম পরিস্থিতি বৈশ্বিক রিটেইলারদের কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলবে।

germent-3

ইউরোপীয় ইউনিয়নের করপোরেট সাসটেইন্যাবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডিরেকটিভ (সিএসডিডিডি), যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্সড লেবার ইমপোর্ট ব্যান ও যুক্তরাজ্যের মডার্ন স্ল্যাভারি অ্যাক্টের মতো নতুন আন্তর্জাতিক শ্রম আইনগুলো উৎপাদনের সকল পর্যায়ে কঠোর মানবাধিকার পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করছে। এতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের উপর চাপ বাড়ছে।

বাংলাদেশের পোশাক খাতের সংকট সমাধানের গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে— সরবরাহ চেইনে স্বচ্ছতা বাড়াতে সরকার ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে নিম্নস্তরের সরবরাহকারীদের কার্যক্রম কঠোর পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ সরকারকে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। শিশুশ্রম প্রতিরোধে শিশুশ্রম আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং চুক্তিভিত্তিক কারখানাগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সমানাধিকার নিশ্চিত করা এবং নির্যাতন ও হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া কারখানার দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে রপ্তানিকারকরা যাতে চুক্তিবদ্ধ কারখানাগুলোর অবস্থা তদারকি করেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে ব্যবস্থা নেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত