Ajker Patrika

২৫ বছরে সর্বোচ্চ সংঘাতে বিশ্ব, ৩৯ দেশে বাড়ছে চরম দারিদ্র্য: বিশ্বব্যাংক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি যখন মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত, তখন এক শ্রেণির দেশ আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। সংঘাত ও অস্থিতিশীলতায় আক্রান্ত ৩৯টি দেশের ওপর একটি বিস্তৃত মূল্যায়নে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এসব দেশের অর্থনীতিতে চরম দারিদ্র্য দ্রুত বাড়ছে, তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে, এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের পর বিশ্বব্যাপী সংঘাতের হার বৃদ্ধি ও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠায় এসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর এসব দেশের মাথাপিছু জিডিপি গড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে বেড়েছে গড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।

চলতি বছর সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে ৪২১ মিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন ৩ ডলারের কম আয় নিয়ে জীবনযাপন করছে, যা বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে, যা বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল বলেন, গত তিন বছরে বিশ্ব মূলত ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের দিকেই নজর দিয়েছে, যা এখন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। অথচ সংঘাত ও অস্থিতিশীলতায় ভোগা ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ আফ্রিকার। এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। আজ যে দেশগুলো সংঘাতে আক্রান্ত, তাদের অর্ধেকই ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এমন পরিস্থিতির ভেতর রয়েছে। এই মাত্রার দুর্দশা অবশ্যম্ভাবীভাবে সংক্রামক হয়ে উঠছে।

বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণটি ব্যাখ্যা করে, বিশ্বের চরম দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য কেন এখনো অধরা রয়ে গেছে। বর্তমানে এমন অঞ্চলগুলোতে চরম দারিদ্র্য রয়েছে, যেখানে উন্নয়ন করা সবচেয়ে কঠিন। প্রতিবেদনে ৩৯টি দেশকে সংঘাত বা অস্থিতিশীলতায় আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে ২১টি সক্রিয় সংঘাতে রয়েছে।

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে চরম দারিদ্র্যের হার যেখানে এক অঙ্কে নেমে এসেছে মাত্র ৬ শতাংশ। সেখানে সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ। এসব দেশের মাথাপিছু জিডিপি বর্তমানে বছরে গড়ে মাত্র দেড় হাজার ডলার, যেখানে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেড়ে ৬ হাজার ৯০০ ডলার হয়েছে।

এছাড়া, এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ২০২২ সালে এসব দেশে ২৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কর্মক্ষম বয়সী ছিল, কিন্তু তাদের অর্ধেকেরও কম কর্মসংস্থানে যুক্ত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ এম. আয়হান কোস বলেন, গত দেড় দশকে প্রবৃদ্ধির বদলে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা এসব সংঘাতপ্রবণ দেশের সাধারণ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের এসব দেশের দুরবস্থার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। যদিও এটি সহজ কাজ নয়, কিন্তু আগে এমন জায়গায় উন্নয়নের নজির রয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে সংঘাত প্রতিরোধ, শাসনব্যবস্থা মজবুতকরণ, প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব।

২০০০-এর দশকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে সংঘাতের হার ও প্রাণহানির মাত্রা তিনগুণের বেশি বেড়েছে। এই প্রভাব বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে স্পষ্ট। সংঘাত-আক্রান্ত দেশগুলোতে গড় আয়ু বর্তমানে ৬৪ বছর, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় সাত বছর কম। শিশু মৃত্যুর হার সেখানে দ্বিগুণের বেশি। তীব্র খাদ্য অনিরাপত্তা রয়েছে ১৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে, যা অন্য উন্নয়নশীল দেশের গড়ের চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। স্কুলপড়ুয়া শিশুদের ৯০ শতাংশই ন্যূনতম পঠনদক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।

একবার সংঘাত শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি হয়ে পড়ে। আজ যেসব দেশ সংঘাতে রয়েছে, তাদের অর্ধেক ১৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে এই পরিস্থিতির মধ্যে আছে। এসব সংঘাতে ১০ লাখের মধ্যে ১৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, পাঁচ বছরে মাথাপিছু জিডিপিতে গড়ে ২০ শতাংশ পতন হয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, এই বাস্তবতায় সংঘাত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হতে পারে। ‘আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা’ থাকলে সময়োচিত হস্তক্ষেপে সংঘাত ঠেকানো সম্ভব হয়, যা সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর পদক্ষেপ নিলে তেমন কার্যকর হয় না।

সংঘাত প্রতিরোধে ‘ভঙ্গুর বা দুর্বল শাসন কাঠামো’ দূর করাও জরুরি। কেননা দুর্বল শাসন কাঠামোর কারণে টেকসই উন্নয়ন, শান্তি বজায় রাখা ও বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তবে বাস্তবতা কঠিন হলেও এই দেশগুলোর সামনে কিছু সুবিধা ও সম্ভাবনা রয়েছে। সুবিধাগুলো যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন সম্ভব।

এসব দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ (খনিজ, বন, তেল, গ্যাস, কয়লা) থেকে আয়ের হার গড় জিডিপির ১৩ শতাংশ, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তিনগুণ বেশি। খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতায় ভরা কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মোজাম্বিক ও জিম্বাবুয়ের মতো দেশগুলো বৈদ্যুতিক যান, বায়ু টারবাইন ও সৌর প্যানেলের মতো নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিও কাজে লাগাতে পারে।

আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা হলো তরুণ ও বর্ধনশীল জনগোষ্ঠী। উন্নত ও বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশেই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এরই মধ্যে স্থিতিশীল বা হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত এই অংশটি বৃদ্ধি পাবে। ২০৫৫ সালের মধ্যে এসব দেশে প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন কর্মক্ষম বয়সে থাকবে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ অনুপাতে পৌঁছাবে।

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, এই ‘জনসংখ্যাগত সুযোগ’ কাজে লাগাতে হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ও একটি প্রাণবন্ত বেসরকারি খাত গড়ে তুলতে হবে, যা আরও বেশি ও উন্নত কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত