Ajker Patrika

শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ছে, চাপে পড়বে অর্থনীতি

  • গ্যাসের দাম বাড়াতে ২৬ ফেব্রুয়ারি গণশুনানি করবে বিইআরসি
  • ১০০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিতরণ কোম্পানিগুলোর।
  • প্রভাব পড়বে পণ্যের দামে। শেষ পর্যন্ত পকেট কাটবে ভোক্তার।
আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭: ২৮
শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ছে, চাপে পড়বে অর্থনীতি

গত মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে দেশের শিল্পকলকারখানার পাইকারি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে পেট্রোবাংলা। এরপর খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাসসহ দেশের ছয়টি বিতরণ সংস্থা গ্যাসের দাম বাড়ানোর আবেদন করে। এতে শিল্পের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা এবং শিল্পে ব্যবহৃত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বা ক্যাপটিভের গ্যাসের দাম ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করে তারা। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মিলনায়তনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে উন্মুক্ত গণশুনানির আয়োজন করেছে বিইআরসি। শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাব অনুযায়ী ১০০ শতাংশের বেশি দাম বাড়লে আগে থেকে চাপা থাকা অর্থনীতি আরও সংকটে পড়বে। রপ্তানি আয়ের ওপর পড়তে পারে প্রভাব। এ ছাড়া দেশের ভেতর পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তার পকেট কাটবে।

বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে পেট্রোবাংলার পাইকারি গ্যাসের ওপর গণশুনানি করা হবে। এরপর তিতাস গ্যাস, কুমিল্লা অঞ্চলের বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট বিভাগের জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হবে। তবে প্রতিটি কোম্পানিই গ্যাসের দাম বাড়ানোর অভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এবার বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত চুলার গ্যাসের দাম বাড়ছে না। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোরও প্রস্তাবে রাখা হয়নি।

এর আগে গ্যাসের সংকট সমাধান করে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের আশ্বাস দিয়ে দুই বছর আগে শিল্পে গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। দাম বাড়লেও গ্যাসের সংকট কাটেনি। শিল্প এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপের অভিযোগ শিল্পমালিকদের। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে গ্যাস মেলে না এ অভিযোগ তো রয়েছেই।

এবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে যুক্তি দেখানো হয়েছে, যদি গ্যাসের দাম না বাড়ানো হয়, তাহলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে গিয়ে চলতি বছরে সরকারের ভর্তুকি দিতে হবে ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।

এলএনজির চাপেই বাড়ছে লোকসান: পেট্রোবাংলা দেশে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ করে ২৫০ কোটি ঘনফুট থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আনা এলএনজি দৈনিক সরবরাহ করা হয় মোট গ্যাসের ২৫ শতাংশ। যদিও দৈনিক সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের।

পেট্রোবাংলা তাদের প্রস্তাবে বলেছে, গত জানুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ১০১টি এলএনজি কার্গো আমদানি করলে বিদ্যমান দামে লোকসান যাবে ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৫ সালে ১১৫টি এলএনজি কার্গো আমদানি করলে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ওই বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড় এলএনজি আমদানির খরচ প্রতি ঘন মিটারে পড়েছে ৬৩ টাকা ৫৮ পয়সা। এর সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ৯ টাকা ৮৮ পয়সাসহ আটটি বিভিন্ন পর্যায়ের মার্জিন ও তহবিল যোগ করলে প্রতি ঘনমিটার এলএনজির আমদানির ব্যয় পড়েছে ওই তিন মাসে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা। গত বছরের জুলাই থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত এলএনজি আমদানি করতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। আগামী জুন পর্যন্ত ব্যয় হবে আরও ১৯ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি যা কেনা হচ্ছে, তার দাম পড়ছে গড়ে সাড়ে ১০ ডলার। অন্যদিকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে গড়ে ১৩ থেকে প্রায় ১৪ ডলার দামে। অক্টোবর থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট এলএনজি কেনা হয়েছে ১৪ কার্গো। একই সময় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে কেনা হয়েছে ১৮ কার্গো এলএনজি। যখন এলএনজির দাম বেড়ে যায় তখন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ছুতোয় এলএনজি সরবরাহ কমিয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডলারের রিজার্ভে খরা চলছে। এই অবস্থার মধ্যেও জরুরি জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে বছরে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যয় ওঠাতে সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যা চাপে থাকা শিল্পকলকারখানার উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে, পণ্যের দাম বাড়বে। এতে জনসাধারণের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা বড় আকারে না নিলে এলএনজির ওপর নির্ভরতা কমবে না বলেও তাঁদের মত। এতে দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে গ্যাসের দাম।

প্রস্তাবেও ফাঁকি আছে: পেট্রোবাংলা দাবি করেছে যে তারা চলতি বছরের ১১৫টি কার্গো এলএনজি কিনবে, এতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এই প্রাক্কলন অতিরিক্ত বলে মনে করেন খোদ পেট্রোবাংলার দুই কর্মকর্তা। তাঁরা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়াতে এলএনজিকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়। পেট্রোবাংলা কখনোই ১১৫টি এলএনজি কার্গো আমদানি করবে না। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় এলএনজির যে কল্পিত প্রাক্কলন করা হয়, তার হিসাবেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। বাস্তবে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি করা হয় না।

দুই কর্মকর্তা বলছেন, ২০১৯ সালে দৈনিক ৮৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের কথা বলে দাম বাড়ানো হয়, অথচ এসেছিল দৈনিক ৫৬ কোটি ঘনফুট। ২০২২ সালে দৈনিক ৬৯ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির কথা বলে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও দৈনিক আসে ৬৫ কোটি ঘনফুট। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের নিজেদের গ্যাস রয়েছে। এই গ্যাস উত্তোলনের বড় কোনো পরিকল্পনা নেই। আগের সরকার এলএনজি বিশেষত স্পট মার্কেটের এলএনজি কেনায় বেশি আগ্রহ ছিল, এই সরকারও তা-ই করছে। জ্বালানি নিরাপত্তা সংহত করতে হলে দেশি গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত