Ajker Patrika

ঘুরে দাঁড়াতে আস্থা ফেরানো দরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অর্থনৈতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অর্থনৈতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিনিয়োগের শ্লথগতি, সার্বিক আস্থাহীনতা এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতার জেরে দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ব্যাংকের মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি খেলাপি হয়ে যাওয়া এখন অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। এমন কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এখনো অনেকটা ‘চোর ধরার’ মনোভাবের মধ্যেই আবদ্ধ। ফলে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময়কার খাদের কিনারে যাওয়া পরিস্থিতি ঠেকানো গেলেও নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই সতর্কতামূলক বার্তা উঠে এসেছে গতকাল শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৫’-এ। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শিরোনামের এই সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থ-বাণিজ্যকেন্দ্রিক জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তা। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। দ্বিতীয় অধিবেশনের বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রমুখ।

সার্বিক আলোচনায় উঠে আসে, বাড়তি সুদহার, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, উদ্যোক্তাদের হয়রানি এবং আস্থার ঘাটতি—এগুলো অর্থনীতিকে নিচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ মাত্র ৬ শতাংশে নেমে আসায় বিনিয়োগের ধারাও অতি ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের বন্ড মার্কেট নেই, স্টক মার্কেটের অবস্থা ভয়ানক করুণ, বিমা খাতেরও অবস্থাও ভালো নয়। সবাই শুধু ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীল; যা একটি বড় সমস্যা। আর সেখানে খেলাপি ঋণ আরও বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’

খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক খাতে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। দুই বছর আগে ধারণা ছিল, এই হার ২৫ শতাংশের মতো হবে। তখনকার সরকার বলেছিল, তা ৮ শতাংশ। এখন দেখছি, ইতিমধ্যে ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।’

খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘ধাপে ধাপে এগোতে হবে। পুরোপুরি উত্তরণে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে।’

দেশের পাঁচ ইসলামি ধরনের দুর্বল ব্যাংককে এক করে নতুন ব্যাংকটি গঠনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত বলে জানান আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক নামে নতুন ব্যাংকটির যাত্রা আগামী সপ্তাহের মধ্যে শুরু করা হতে পারে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অনেকটাই চোর ধরা মনোভাবভিত্তিক। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে।

... আস্থা ছাড়া অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। ... দেশে অনেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু দায়বদ্ধতার কাঠামো নেই।’

উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সমস্যা তুলে ধরেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সূচকে আমরা ক্রমেই নিচের দিকে নামছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতির কারণে সুদহার বেড়ে গেছে। এটি বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বেসরকারি খাতে আমরা মাত্র ৬ শতাংশ ঋণ পাচ্ছি। শিল্পায়ন পুরোপুরি স্থবির বলা যায়।’

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একটি কোম্পানি লাভ করুক বা লোকসান করুক, তাকে কর দিতে হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এভাবে লোকসানে কর দিতে হয় কি না জানা নেই।’

ব্যাংক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরেছে মন্তব্য করে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আগে বোর্ডরুমে বসে ঋণ বিক্রি হতো। এখন নিয়ম মেনে ঋণ অনুমোদন হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের পর বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’

রাজনীতিকদের পর্যবেক্ষণ

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে অর্থনীতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ তুলে ধরেন রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ছেড়ে পলাতকদের বন্ধ কারখানাগুলো আবার কীভাবে চালু করা যায়, সেটি ভাবা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর যারা ব্যাংক লুট করেছে, দেশে লুটপাট করেছে, চুরি করেছে—তাদের ধরেন, শাস্তি দেন। কিন্তু তাদের যে শিল্পকারখানা আছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করছে ... আলোচনায় এসেছে, ১৪ লাখ মানুষ কর্ম হারিয়েছে, তারা যাবে কোথায়? আমরা এই বেকারত্ব সৃষ্টি করছি কেন?’

ব্যবসায়ীদের বিষয়ে ধারণা পাল্টানোর পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চোর ধরার চিন্তা থেকে বেরিয়ে বিশ্বাসের জায়গায় আসতে হবে। তাকে যদি বিশ্বাস না-ই করি, তাহলে ব্যবসা করে তারা দেশের জন্য কী করবেন?’

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অর্থনীতিতে বিভিন্ন সরকারি মারপ্যাঁচ, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এবং দুর্বৃত্তপনা স্বাধীনতার পর থেকে এখনো রয়ে গেছে। একজন উদ্যোক্তা যখন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জমি কিনতে যান, তখন হাজারো সমস্যায় পড়েন। ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে এই দুর্বৃত্তায়নে সহায়তা করে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল একটি গোষ্ঠীর কাছে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অর্থনীতি গণতন্ত্রের অংশ এবং এটি জনকল্যাণে ব্যবহৃত হতে হবে। অর্থনীতি যত দিন শুধু একটি গোষ্ঠীর হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে, তত দিন সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত সরকার দেশের অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল, যেখানে মাফিয়া ও লুটেরা শ্রেণি ক্ষমতায় ছিল। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের অংশ হলেও এর মূলে ছিল জনগণের সার্বিক উন্নতির আকাঙ্ক্ষা। বর্তমানে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো—কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মহানগরগুলোর উঠতি মধ্যবিত্তের জীবন-জীবিকার সুরাহা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক সেবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি রোধ ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৩
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা দ্বিতীয় দফায় আরও এক মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করদাতারা কোনো জরিমানা ছাড়াই আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এর আগে দুই দফা সময় বাড়িয়ে শেষ সময় নির্ধারিত ছিল ৩১ ডিসেম্বর।

আজ রোববার এনবিআরের সচিব মো. একরামুল হক স্বাক্ষরিত এক জরুরি আদেশে এই সময়সীমা বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। এনবিআর সূত্র বলছে, মূলত করদাতাদের সুবিধার্থে এবং অনলাইন সিস্টেমে চাপ সামলাতে এই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু চলতি বছর থেকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তাই অনেক নতুন ব্যবহারকারী কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। সেই জটিলতা নিরসনেই এই বাড়তি সময় দেওয়া হলো।

সময় বাড়ানোর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো অনলাইন ব্যবস্থাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেছি। এটি একটি বড় ধরনের সংস্কার। আমরা চাই না কোনো করদাতা পদ্ধতিগত কারণে ঝামেলার মুখে পড়ুক। সরকার করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করেই এই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দেবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিলম্ব জরিমানা আরোপ হতে পারে।

এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ডিজিটাল কর ব্যবস্থার প্রতি জনগণের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। এ পর্যন্ত ২৬ লাখের বেশি করদাতা সফলভাবে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্ট থেকে সরকারি কর্মকর্তা, বড় কোম্পানি এবং নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার পর থেকেই ই-রিটার্ন পোর্টালে ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে করদাতারা ঘরে বসেই যেকোনো সময় রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন। রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র (Acknowledgment) এবং ট্যাক্স সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা যাবে। বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কর পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।

যেকোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা আইনি জটিলতা এড়াতে করদাতাদের সহায়তার জন্য এনবিআর একটি কল সেন্টারও চালু রেখেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ফুটি কার্পাসে নতুন সম্ভাবনা

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় বিশ্বজুড়ে বাংলার গর্ব ছিল মসলিন। এর অতুলনীয় সূক্ষ্মতা, মসৃণতা ও আরামদায়ক বৈশিষ্ট্যের কারণে রাজা-বাদশাহ থেকে ইউরোপীয় অভিজাত শ্রেণির কাছে মসলিন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। মসলিনের প্রাণ ফুটি কার্পাস তুলা ইংরেজ শাসনামলে ঔপনিবেশিক বাণিজ্যনীতির বলি হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। দীর্ঘ বছর পর সে হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র।

ফুটি কার্পাসের পুনর্জাগরণকে ঘিরে গবেষক, ঐতিহ্য অনুরাগী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্দীপনা। এটি শুধু একটি বিপন্ন উদ্ভিদের পুনরুদ্ধার নয়; বরং বাংলার হারানো শিল্প-ঐতিহ্য ও সম্ভাব্য উচ্চমূল্যের টেক্সটাইল খাত পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা।

শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এবং গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য—ফুটি কার্পাস তুলা কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে চাষযোগ্য করা যায়, উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে আনা যায় এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মসলিনকে আবার পরিচিত করা যায়। গবেষকদের প্রত্যাশা, সঠিক নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ পেলে আগামী দিনে মসলিন আবার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করবে।

সম্প্রতি তুলা গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা যায়, সারি সারি ফুটি কার্পাস তুলাগাছ। প্রায় সব গাছেই প্রচুর ফুল এসেছে, যেগুলোর অনেক ফলেও পরিণত হয়েছে। গবেষকদের তথ্যমতে, পুনরুদ্ধার করা ফুটি কার্পাস গাছের উচ্চতা ১৩ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। বীজের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও আঁশ সূক্ষ্ম ও স্বল্প, যা মসলিন তৈরির জন্য উপযোগী।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ফুটি কার্পাসের অস্তিত্বের সূত্র প্রথম পাওয়া যায় দৃক গ্যালারি ও জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে। সাংস্কৃতিককর্মী সাইফুল ইসলাম এর খোঁজ পান। কার্পাস তুলা থেকেই ‘কাপাসিয়া’ নামের উৎপত্তি।

ব্রিটিশ আলবার্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত মোগল আমলের মসলিন শাড়ির অংশবিশেষ পরীক্ষা করে গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, সে সময়ে ফুটি কার্পাস থেকেই এসব বস্ত্র তৈরি হতো। ইতিহাস বলছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এই তুলার চাষ হতো এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মসলিন রপ্তানি করা হতো।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল আমিন বলেন, ‘ফুটি কার্পাস শুধু একটি তুলা নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক। ইংরেজ শাসনামলে নিজস্ব শিল্প রক্ষার জন্য ব্রিটিশরা পরিকল্পিতভাবে মসলিনশিল্প ধ্বংস করেছিল। আমরা এখন সে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের সেবা, কর ও টোলহারের ক্ষেত্রে এই বর্ধিত মাশুল প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বলেছে, এই মাশুলই বন্দরের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতিবছরের মতো এবারও মাশুল বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে অন্যান্য বন্দরের তুলনায় মাশুল বেশি হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দরের জন্য বর্ধিত মাশুলের আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরে যাত্রীদের জন্য ২০২৫ সালের মাশুল ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির মাশুল নতুন বছরে ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের তুলনায় প্রায় ৯ টাকা বেশি। মোটর কার, জিপ ও পিকআপের জন্য এখন নতুন মাশুল ১১০ টাকা ৮২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের জন্য ৩৬ টাকা ৯৫ পয়সা।

বেনাপোল বন্দরে ট্রাক ও লরির জন্য ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে ৮৮ টাকা ৬৫ পয়সা দিতে হবে। কাগজপত্র প্রক্রিয়ার মাশুল এখন ১৯৫ টাকা ০৭ পয়সা। কোনো যানবাহন যদি রাতভর বন্দরে থাকে, তবে মাশুল ১১১ টাকা ৪৯ পয়সা। গুদামে পণ্য রাখার মাশুলও পণ্যের সময় অনুযায়ী বাড়ানো হয়েছে।

বেনাপোল ছাড়াও অন্যান্য স্থলবন্দরে মাশুল ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য বন্দরে যাত্রীদের মাশুল ২০২৫ সালে ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা ছিল, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির জন্য নতুন মাশুল ১৫৯ টাকা ২২ পয়সা, মোটর কার ও জিপের জন্য ৯৫ টাকা ৫২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল, স্কুটার ও থ্রি-হুইলারের জন্য ৪৭ টাকা ৮৩ পয়সা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর: ফসল ব্যবস্থাপনায় উত্তরের চার জেলায় কৃষির নতুন প্রকল্প

  • ২৫২ কোটির প্রকল্পে বিতরণ হবে ৩,১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি
  • উৎপাদন ৫% বৃদ্ধি ও শস্য নিবিড়তা ২৪১ শতাংশে উন্নীত হবে
  • ২০০টি পেঁয়াজ ও ৩টি সবজির সংরক্ষণাগার স্থাপন
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি খাতে টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের ২৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। চার বছরের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য প্রকল্পের আওতাধীন চার জেলায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো এবং কৃষিকে আরও লাভজনক পেশায় রূপান্তর করা।

বগুড়া কৃষি অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নামের এই প্রকল্প ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়িত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং পুরো ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনা, পানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন—এসবের সমন্বয়ে প্রকল্পের কাঠামো তৈরি হয়েছে।

ডিএই মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, যমুনা-করতোয়া-পদ্মা-বাঙ্গালীবিধৌত বগুড়া অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, কম বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা ও নদীভাঙন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে আবাদি জমি কমছে। অপর দিকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দাবি করা হয়েছে, আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন ৫ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি শস্য নিবিড়তা ২৩৬ শতাংশ থেকে ২৪১ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এক হাজার নতুন দক্ষ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং ৩৫ হাজার কৃষি মানবসম্পদকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোও প্রকল্পের লক্ষ্য।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে থাকছে বগুড়ায় উপপরিচালকের কার্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ, ২০০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার, তিনটি আধুনিক ফল-সবজি ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন এবং ৩ হাজার ১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ। কৃষকদের জন্য মোট ৪ হাজার ৮৪০ ব্যাচ প্রশিক্ষণ আয়োজনের পাশাপাশি ৪১ হাজারের বেশি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী এবং ৭০০টি মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাসচিব এস এম শাকিল আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, টেকসই কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় কি না, সেটাই প্রকল্পের সাফল্য নির্ধারণ করবে।

একই বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান আজকের পত্রিকাকে জানান, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার আবাদি জমির সঠিক ফসল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষকের ক্ষতি কমবে এবং আয়ের সুযোগ বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত