Ajker Patrika

২৭ লাখ মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে, কী বৈষম্যবিরোধী শেখাচ্ছেন আমাকে অন্তর্বর্তী সরকার! দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের ক্ষোভ

আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ১৬: ৪৮
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে অন্তর্বর্তী সময়কালে আরও ২৭ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, যার বড় অংশ নারী। জাতীয় বাজেট প্রণয়ন, করব্যবস্থা সংস্কার, পুঁজিবাজার পুনরুদ্ধারসহ নানা ক্ষেত্রে যথাযথ আলাপ-আলোচনার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক গণমাধ্যমের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক রূপরেখার অভাব, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং বাস্তবায়নক্ষমতা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, সংবিধান, নির্বাচন, বিচার নিয়ে যেমন পথরেখার দাবি তোলা হয়, তেমনি অর্থনীতির জন্য কোথায় সেই কাঠামোগত দিকনির্দেশনা?

তাঁর বক্তব্য নতুন সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যেন তারা কেবল পরিবর্তনের নামে একই প্রক্রিয়াকে টিকিয়ে না রাখে, বরং সত্যিকারের নীতি সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আপনি চিন্তা করে দেখেন, এই সরকারের সময়কালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হিসাবে ২৭ লাখ মানুষ আরও বেশি দরিদ্র হয়ে গেছে। আর ওই দরিদ্র মানুষের ভেতরে ১৮ লাখ হলো নারী। আপনি আমাকে কী বৈষম্যবিরোধী শিখাচ্ছেন, নতুন সরকার! এই সরকারকে এই বাজেটে বলতে হবে গত সময়ের থেকে ভিন্ন কী তারা করল? ওই দুই টাকা বাড়িয়েছে এখানে, চার টাকা কমিয়েছে এখানে—এই আলোচনায় মন ভরবে না। আমি আগে তো বলেছি যে, তিনটি বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকার এসেছিল— ভিত্তিভূমিকে নির্দিষ্ট করা; স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে কিছু নিয়ে আসা এবং সংস্কারের পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা।

বর্তমান সরকারের সময়ে এতগুলো সংস্কারের কর্মসূচি হয়েছে, এত সংস্কারের পথরেখা চায়, নির্বাচনের পথরেখা চায়, বিচারের পথরেখা চায়। আমি জিজ্ঞেস করি, আমার অর্থনীতির পথরেখা কোথায়? সরকার বদল হলেও প্রক্রিয়া বদল হলো না। কিন্তু অর্থনীতির পরিকল্পনা কোথায়?’ আমি আগে তো বলেছি, তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই সরকার এসেছিল। তা হলো—ভিত্তিভূমিকে নির্দিষ্ট করা, স্থিতিশীলতাকে ফিরে নিয়ে আসা এবং সংস্কারের যে প্রতিবন্ধকতা আছে, তা সংস্কারের মাধ্যমে চিহ্নিত করা। কিন্তু এখানে যা ঘটেছে, তা প্রত্যাশার অংশ ছিল না।’

অংশীজনদের সঙ্গে যথাযথ আলাপ-আলোচনা না করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুঁজিবাজার সংস্কারের সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা কতটুকু সীমিতভাবে হয়েছে, আমি তার দুটি উদাহরণ আপনাদের বলি। এখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয় এখানে বসা আছেন এবং কমিটির প্রধান আছেন, উনারা কাজ করেছেন। আমার শ্বেতপত্রেও বলা আছে, এটাকে (এনবিআর) দুই ভাগ করা হোক। যারা কর আহরণ করে এবং যারা করনীতি করে দুজনকে একসঙ্গে থাকা উচিত না—এখানে স্বার্থের সংঘাত হবে। একটা ঠিক কাজ আলাপ-আলোচনা ব্যতিরেকে যে কমিটি রিকমান্ড করেছিল, তা পরিপালন না করে যদি আপনি বাস্তবায়ন করতে চান, আপনার যে দুঃখজনক পরিণতি হয়েছে, তা-ই হওয়ার কথা। ঠিক কাজও যদি সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে করেন, তাহলে এমন পরিণতি হবে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমি আরেকটি উদাহরণ দিই, এই যে স্টক মার্কেটের জীর্ণদশা। এটা আসলেই মৃতপ্রায়। ওটা আইসিইউর ভেতরে। ছিল ২৭ শতাংশ, কিন্তু এখনো জিডিপির ভ্যালু হিসেবে আছে ৯ শতাংশ। এটাকে চালু করার জন্য যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, তাহলে স্টক মার্কেটে যাঁরা অংশীদার রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যদি আলোচনা না করে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একা করতে যায়, তাহলে কোনো দিনই সম্ভব না। মানুষের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে ঠিক কাজও বেঠিক হয়ে যায় যদি আলাপ-আলোচনা উন্মুক্ত না থাকে। এটা আমার প্রথম বক্তব্য আপনার কাছে। আলাপ-আলোচনা করতে হবে এবং সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। কী পরিবর্তন করলাম একটা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে।

সিপিডির এ সম্মাননীয় ফেলো বলেন, ‘আমার দ্বিতীয় বক্তব্য আপনাদের কাছে, ড. আনিসুজ্জামান (প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী) আছেন এখানে, সেটা হলো অন্তর্বর্তী বাজেটের বিষয়ে বলেছেন। অন্তর্বর্তী বাজেট কী? যে বাজেট নিয়ে কাজ করছেন, সেটা পতিত সরকারের বাজেট। পতিত সরকারের বাজেট নিয়ে আপনি প্রথমে প্রাক্কলন করেছেন জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের দিকে এসে। কিন্তু কাঠামোগত কী উন্নয়ন করলেন? ওই প্রাক্কলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ধারণা ছাড় দেবেন না বলতেছেন। এখানে কাকে ছাড় দিচ্ছেন, কাকে ভর্তুকিতে রাখছেন? ইন্টারেস্ট রেট কোথায় দিচ্ছেন? কে বলতে পারবে আপনি কী স্বচ্ছতা দিয়েছেন আমাকে। ওই স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যে স্বচ্ছতার অভাব দেখেছি, সবাইকে আমাদের থামিয়ে দিয়েছেন। এখনো কাজটা আপনারা একই রকম করলেন। আপনারা কোনো স্বচ্ছতা দিলেন না।’

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘ওই পতিত সরকারের যে এডিপি ছিল, ওই এডিপি থেকে কেমন করে কমানো হলো। ওই মেগা প্রজেক্টগুলো যে অতিমূল্যায়িত ছিল, কোথায় টাকা কমিয়েছেন। আমি তো আবার মেগা প্রজেক্টের অল ইকুয়েশন দেখতে পারছি। আপনি ওখানে কীভাবে সামাজিক সংস্কারের অংশ হিসেবে কীভাবে নতুনভাবে স্থান দিলেন, কোনো নীতিমালা হলো না। এখন সেই আগের এডিপি এখন চলছে। আমি সেটার ভিত্তিতে কাজ করছি।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমি আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি, যে বাজেট করতে যাচ্ছেন এই সরকার তো নিঃসন্দেহে বৈধ সরকার, তবে নির্বাচিত সরকার তো না। তার তো নিঃসন্দেহে সীমাবদ্ধতা থাকবে। এই সরকার তো পুরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে না। যদি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে ফলো করি, তাহলে যারা পরবর্তী বাজেটে আসবে, তারা যে এটার ধারাবাহিকতা রাখবে, এটার নিশ্চয়তা কীভাবে রাখব। এত বড় আমার ইনভেস্টমেন্ট সামিট হয়ে গেছে। রাতের বেলা সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, তোমাদের নীতিকাঠামো কোথায়? আমি তো বলতে পারি নাই। এতগুলো সংস্কারের কর্মসূচি হয়েছে, এত সংস্কারের পথরেখা চান আপনারা। সবাই নির্বাচনের পথরেখা চায়, বিচারের পথরেখা চায়। আমি জিজ্ঞেস করি, আমার অর্থনীতির পথরেখা কোথায়? সরকার বদল হলেও প্রক্রিয়ার বদল হলো না।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত