মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিমা খাতের পলাতক ও কারাবন্দী কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ২৭ জন সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও সংসদ সদস্য (এমপি)। সশরীর উপস্থিত হতে না পারায় তাঁদের অনেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভার্চুয়ালভাবে (অনলাইনে) পর্ষদ সভায় অংশগ্রহণ করছেন। নিয়মিত নিচ্ছেন বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন খরচের অর্থ।
বিমা বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকায় কোম্পানি ও গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোম্পানির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অনিয়ম ও দলাদলি জেঁকে বসেছে। বর্তমান পরিচালক, নির্বাহীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন খাতে খরচের নামে অর্থ লোপাটের ছক কষছেন। এতে গ্রাহকদের বিমার অর্থের দাবি পূরণ না হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হচ্ছেন মুনাফা থেকে।
বিমা খাতের পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিরীক্ষকেরা এসব অসংগতি তুলে ধরছেন না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। যথাযথ নজরদারি না থাকায় কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা লাগামছাড়া হয়ে উঠছেন।
সরকারি দুটিসহ দেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ৬০টি বিমা কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর একটি বড় অংশ অনুমোদন পেয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে ৭০টি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। এসব কোম্পানির পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তাঁরা। পটপরিবর্তনের পর এর মধ্যে ৬০টি কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যানরা পদ ছেড়ে দিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা ব্যবসায়িক অংশীদারদের বসিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ঠিক রেখেছেন। তবে ১০ কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ ৩৬টি কোম্পানির ১১২ জন পরিচালক এখনো পদ ছাড়েননি। তাঁরা দেশ-বিদেশে পলাতক বা কারাগারে থাকলেও পদে বহাল রয়েছেন।
পলাতক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে পলাতক রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকন। একইভাবে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। আরও পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ও রূপালী লাইফের মাহফুজুর রহমান, আলফা ইসলামী লাইফের আলমগীর শামসুল আলামিন, এনআরবি ইসলামী লাইফের কিবরিয়া গোলাম মোহাম্মদ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম পান্না। সাবেক এমপি ও ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম কারাগারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানিগুলোতে চেয়ারম্যানরা সশরীর উপস্থিত না হলেও তাঁদের গাড়ির খরচ, জ্বালানি খরচ এমনকি চালকের বেতন দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে। নেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনের বিলও। একই অবস্থা পরিচালকদের ক্ষেত্রেও।
সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনের ডিআর টাওয়ারে সাঈদ খোকনের ইসলামী ইনস্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা কক্ষে একের পর এক আসছেন বিমার দাবি না মেটা গ্রাহক। তাঁদের কাউকে বলা হচ্ছে, কাগজপত্র দিয়ে যেতে, কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কাউকে বলা হচ্ছে, এখন কোম্পানির অবস্থা ভালো নেই, টাকা পেতে দেরি হবে। এসব কথা শুনে গ্রাহকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ইনস্যুরেন্সের সিইওর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বলা হয়, ‘স্যার কারও সঙ্গে কথা বলেন না।’ জনসংযোগ বিভাগের প্রধান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান ও পরিচালক স্যার নিয়মিত আসছেন না। তাই সব কাজ করা যাচ্ছে না।’
পরে ফোনে কথা হলে সিইও আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি জুমে (অনলাইনে) পর্ষদের সভা করেন। কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছেন ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ। আর কিছু বলতে পারব না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিতে এখন দুটি গ্রুপ হয়েছে। পৃথক গ্রুপ দুটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সিইও আব্দুল খালেক মিয়া। দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি সিইওকে চাকরিচ্যুত করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে হওয়ায় এই চাকরিচ্যুতির আবেদন নামঞ্জুর করেছে বিমার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান। তিনি পলাতক থাকায় সিইও গোলাম কিবরিয়া কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে মিলে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কোম্পানিটিতে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সচিব আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করেন না, প্রয়োজনে আসেন, আবার চলে যান।’ তবে ডিএমডি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি পর্ষদ সভা করেন জুমে। মিটিংয়ের নামে টাকা নিচ্ছেন। তিনি অফিসে না আসায় মিটিংয়ের নামে গ্রাহকদের অর্থ লোপাট চলছে।’
ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও কাজিম উদ্দিন পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দৈনন্দিন কাজ চলছে। এক বছর ধরে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে না।
পলাতক পরিচালকেরা পলাতক হিসেবে বিবেচিত পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের স্ত্রী ফারহানা সাঈদ, মা শাহানা হানিফ, মেয়ে রাইফা নানজিবা সাঈদ, আয়েশা নিভরাশ সাঈদ এবং ফাতিমা নওশিন মাইয়া সাঈদ অরোরা ও শ্যালিকা রিজওয়ানা হোসেন।
সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স এই দুই বিমা কোম্পানি আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মকবুল হোসেনের। তাঁর মৃত্যুর পর সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা হন সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তাঁর মা গোলাম ফাতেমা তাহেরা খানম। এ ছাড়া পূরবী জেনারেলের উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁরা সবাই পলাতক।
পলাতক রয়েছেন আলফা লাইফের পরিচালক ইন্তেখাবুল হামিদ অপুসহ আরও তিনজন। অপু সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভাই।
সাবেক দুই মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কোম্পানি যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্স। তাঁরা উভয়ে কারাগারে। কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন গাজী গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা বদরুল আলম খান। পলাতক পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা, মেয়ে মেহেনাজ তাবাসসুম, ছেলের বউ ফারহানা ফেরদৌসি ইমতিয়াজ।
পলাতক রয়েছেন বেস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিক ও পরিচালক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের এশিয়া ইনস্যুরেন্স পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের কোম্পানি এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স। তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল এর চেয়ারম্যান এবং মেয়ে নাফিসা কামাল পরিচালক ছিলেন। তাঁরা সবাই পলাতক।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রতিষ্ঠান জনতা ইনস্যুরেন্স। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান মন্ত্রীর মামা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর আত্মীয় ফারহানা জামান এবং তাঁর মেয়ে জেবা জামান পলাতক রয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি তাকাফুল ইসলামী লাইফের পরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন খানও পলাতক।
ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের সিইও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান দেশের বাইরে রয়েছেন। কিছুদিন ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। কোম্পানির স্বার্থে সর্বশেষ সভায় নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি নিটল ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ। সেলিমার পদে বসেছেন তাঁর ভাই এ কে এম মনিরুল হক। পলাতক রয়েছেন বেঙ্গল ইসলামী লাইফের পরিচালক সাবেক এমপি জেসমিন আখতার।
সব মিলিয়ে ১৯টি জীবনবিমা এবং ১৭টি সাধারণ বিমাসহ ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক পরিচালক পলাতক রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ ও নিয়ন্ত্রক যা বলেন
বিমা বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ রেগুলেটরি দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এর ফলে গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর বিমা খাত রুগ্ণ হচ্ছে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, ‘জুমে পর্ষদ সভা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এটা করা যাবে না। এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানির বিষয়ে অভিযোগ আসেনি, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমাদের কাজ বিমা কোম্পানির ওপর নজরদারি করা। কিন্তু লোকবলের অভাবে তা যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনিয়ম পেলেও কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা কিংবা নতুন বোর্ড গঠনের ক্ষমতা আইডিআরএর নেই।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিমা খাতের পলাতক ও কারাবন্দী কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ২৭ জন সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও সংসদ সদস্য (এমপি)। সশরীর উপস্থিত হতে না পারায় তাঁদের অনেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভার্চুয়ালভাবে (অনলাইনে) পর্ষদ সভায় অংশগ্রহণ করছেন। নিয়মিত নিচ্ছেন বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন খরচের অর্থ।
বিমা বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকায় কোম্পানি ও গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোম্পানির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অনিয়ম ও দলাদলি জেঁকে বসেছে। বর্তমান পরিচালক, নির্বাহীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন খাতে খরচের নামে অর্থ লোপাটের ছক কষছেন। এতে গ্রাহকদের বিমার অর্থের দাবি পূরণ না হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হচ্ছেন মুনাফা থেকে।
বিমা খাতের পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিরীক্ষকেরা এসব অসংগতি তুলে ধরছেন না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। যথাযথ নজরদারি না থাকায় কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা লাগামছাড়া হয়ে উঠছেন।
সরকারি দুটিসহ দেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ৬০টি বিমা কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর একটি বড় অংশ অনুমোদন পেয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে ৭০টি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। এসব কোম্পানির পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তাঁরা। পটপরিবর্তনের পর এর মধ্যে ৬০টি কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যানরা পদ ছেড়ে দিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা ব্যবসায়িক অংশীদারদের বসিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ঠিক রেখেছেন। তবে ১০ কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ ৩৬টি কোম্পানির ১১২ জন পরিচালক এখনো পদ ছাড়েননি। তাঁরা দেশ-বিদেশে পলাতক বা কারাগারে থাকলেও পদে বহাল রয়েছেন।
পলাতক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে পলাতক রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকন। একইভাবে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। আরও পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ও রূপালী লাইফের মাহফুজুর রহমান, আলফা ইসলামী লাইফের আলমগীর শামসুল আলামিন, এনআরবি ইসলামী লাইফের কিবরিয়া গোলাম মোহাম্মদ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম পান্না। সাবেক এমপি ও ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম কারাগারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানিগুলোতে চেয়ারম্যানরা সশরীর উপস্থিত না হলেও তাঁদের গাড়ির খরচ, জ্বালানি খরচ এমনকি চালকের বেতন দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে। নেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনের বিলও। একই অবস্থা পরিচালকদের ক্ষেত্রেও।
সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনের ডিআর টাওয়ারে সাঈদ খোকনের ইসলামী ইনস্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা কক্ষে একের পর এক আসছেন বিমার দাবি না মেটা গ্রাহক। তাঁদের কাউকে বলা হচ্ছে, কাগজপত্র দিয়ে যেতে, কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কাউকে বলা হচ্ছে, এখন কোম্পানির অবস্থা ভালো নেই, টাকা পেতে দেরি হবে। এসব কথা শুনে গ্রাহকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ইনস্যুরেন্সের সিইওর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বলা হয়, ‘স্যার কারও সঙ্গে কথা বলেন না।’ জনসংযোগ বিভাগের প্রধান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান ও পরিচালক স্যার নিয়মিত আসছেন না। তাই সব কাজ করা যাচ্ছে না।’
পরে ফোনে কথা হলে সিইও আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি জুমে (অনলাইনে) পর্ষদের সভা করেন। কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছেন ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ। আর কিছু বলতে পারব না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিতে এখন দুটি গ্রুপ হয়েছে। পৃথক গ্রুপ দুটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সিইও আব্দুল খালেক মিয়া। দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি সিইওকে চাকরিচ্যুত করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে হওয়ায় এই চাকরিচ্যুতির আবেদন নামঞ্জুর করেছে বিমার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান। তিনি পলাতক থাকায় সিইও গোলাম কিবরিয়া কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে মিলে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কোম্পানিটিতে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সচিব আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করেন না, প্রয়োজনে আসেন, আবার চলে যান।’ তবে ডিএমডি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি পর্ষদ সভা করেন জুমে। মিটিংয়ের নামে টাকা নিচ্ছেন। তিনি অফিসে না আসায় মিটিংয়ের নামে গ্রাহকদের অর্থ লোপাট চলছে।’
ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও কাজিম উদ্দিন পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দৈনন্দিন কাজ চলছে। এক বছর ধরে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে না।
পলাতক পরিচালকেরা পলাতক হিসেবে বিবেচিত পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের স্ত্রী ফারহানা সাঈদ, মা শাহানা হানিফ, মেয়ে রাইফা নানজিবা সাঈদ, আয়েশা নিভরাশ সাঈদ এবং ফাতিমা নওশিন মাইয়া সাঈদ অরোরা ও শ্যালিকা রিজওয়ানা হোসেন।
সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স এই দুই বিমা কোম্পানি আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মকবুল হোসেনের। তাঁর মৃত্যুর পর সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা হন সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তাঁর মা গোলাম ফাতেমা তাহেরা খানম। এ ছাড়া পূরবী জেনারেলের উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁরা সবাই পলাতক।
পলাতক রয়েছেন আলফা লাইফের পরিচালক ইন্তেখাবুল হামিদ অপুসহ আরও তিনজন। অপু সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভাই।
সাবেক দুই মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কোম্পানি যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্স। তাঁরা উভয়ে কারাগারে। কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন গাজী গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা বদরুল আলম খান। পলাতক পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা, মেয়ে মেহেনাজ তাবাসসুম, ছেলের বউ ফারহানা ফেরদৌসি ইমতিয়াজ।
পলাতক রয়েছেন বেস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিক ও পরিচালক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের এশিয়া ইনস্যুরেন্স পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের কোম্পানি এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স। তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল এর চেয়ারম্যান এবং মেয়ে নাফিসা কামাল পরিচালক ছিলেন। তাঁরা সবাই পলাতক।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রতিষ্ঠান জনতা ইনস্যুরেন্স। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান মন্ত্রীর মামা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর আত্মীয় ফারহানা জামান এবং তাঁর মেয়ে জেবা জামান পলাতক রয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি তাকাফুল ইসলামী লাইফের পরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন খানও পলাতক।
ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের সিইও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান দেশের বাইরে রয়েছেন। কিছুদিন ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। কোম্পানির স্বার্থে সর্বশেষ সভায় নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি নিটল ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ। সেলিমার পদে বসেছেন তাঁর ভাই এ কে এম মনিরুল হক। পলাতক রয়েছেন বেঙ্গল ইসলামী লাইফের পরিচালক সাবেক এমপি জেসমিন আখতার।
সব মিলিয়ে ১৯টি জীবনবিমা এবং ১৭টি সাধারণ বিমাসহ ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক পরিচালক পলাতক রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ ও নিয়ন্ত্রক যা বলেন
বিমা বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ রেগুলেটরি দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এর ফলে গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর বিমা খাত রুগ্ণ হচ্ছে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, ‘জুমে পর্ষদ সভা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এটা করা যাবে না। এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানির বিষয়ে অভিযোগ আসেনি, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমাদের কাজ বিমা কোম্পানির ওপর নজরদারি করা। কিন্তু লোকবলের অভাবে তা যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনিয়ম পেলেও কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা কিংবা নতুন বোর্ড গঠনের ক্ষমতা আইডিআরএর নেই।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিমা খাতের পলাতক ও কারাবন্দী কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ২৭ জন সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও সংসদ সদস্য (এমপি)। সশরীর উপস্থিত হতে না পারায় তাঁদের অনেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভার্চুয়ালভাবে (অনলাইনে) পর্ষদ সভায় অংশগ্রহণ করছেন। নিয়মিত নিচ্ছেন বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন খরচের অর্থ।
বিমা বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকায় কোম্পানি ও গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোম্পানির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অনিয়ম ও দলাদলি জেঁকে বসেছে। বর্তমান পরিচালক, নির্বাহীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন খাতে খরচের নামে অর্থ লোপাটের ছক কষছেন। এতে গ্রাহকদের বিমার অর্থের দাবি পূরণ না হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হচ্ছেন মুনাফা থেকে।
বিমা খাতের পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিরীক্ষকেরা এসব অসংগতি তুলে ধরছেন না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। যথাযথ নজরদারি না থাকায় কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা লাগামছাড়া হয়ে উঠছেন।
সরকারি দুটিসহ দেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ৬০টি বিমা কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর একটি বড় অংশ অনুমোদন পেয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে ৭০টি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। এসব কোম্পানির পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তাঁরা। পটপরিবর্তনের পর এর মধ্যে ৬০টি কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যানরা পদ ছেড়ে দিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা ব্যবসায়িক অংশীদারদের বসিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ঠিক রেখেছেন। তবে ১০ কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ ৩৬টি কোম্পানির ১১২ জন পরিচালক এখনো পদ ছাড়েননি। তাঁরা দেশ-বিদেশে পলাতক বা কারাগারে থাকলেও পদে বহাল রয়েছেন।
পলাতক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে পলাতক রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকন। একইভাবে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। আরও পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ও রূপালী লাইফের মাহফুজুর রহমান, আলফা ইসলামী লাইফের আলমগীর শামসুল আলামিন, এনআরবি ইসলামী লাইফের কিবরিয়া গোলাম মোহাম্মদ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম পান্না। সাবেক এমপি ও ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম কারাগারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানিগুলোতে চেয়ারম্যানরা সশরীর উপস্থিত না হলেও তাঁদের গাড়ির খরচ, জ্বালানি খরচ এমনকি চালকের বেতন দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে। নেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনের বিলও। একই অবস্থা পরিচালকদের ক্ষেত্রেও।
সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনের ডিআর টাওয়ারে সাঈদ খোকনের ইসলামী ইনস্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা কক্ষে একের পর এক আসছেন বিমার দাবি না মেটা গ্রাহক। তাঁদের কাউকে বলা হচ্ছে, কাগজপত্র দিয়ে যেতে, কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কাউকে বলা হচ্ছে, এখন কোম্পানির অবস্থা ভালো নেই, টাকা পেতে দেরি হবে। এসব কথা শুনে গ্রাহকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ইনস্যুরেন্সের সিইওর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বলা হয়, ‘স্যার কারও সঙ্গে কথা বলেন না।’ জনসংযোগ বিভাগের প্রধান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান ও পরিচালক স্যার নিয়মিত আসছেন না। তাই সব কাজ করা যাচ্ছে না।’
পরে ফোনে কথা হলে সিইও আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি জুমে (অনলাইনে) পর্ষদের সভা করেন। কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছেন ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ। আর কিছু বলতে পারব না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিতে এখন দুটি গ্রুপ হয়েছে। পৃথক গ্রুপ দুটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সিইও আব্দুল খালেক মিয়া। দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি সিইওকে চাকরিচ্যুত করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে হওয়ায় এই চাকরিচ্যুতির আবেদন নামঞ্জুর করেছে বিমার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান। তিনি পলাতক থাকায় সিইও গোলাম কিবরিয়া কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে মিলে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কোম্পানিটিতে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সচিব আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করেন না, প্রয়োজনে আসেন, আবার চলে যান।’ তবে ডিএমডি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি পর্ষদ সভা করেন জুমে। মিটিংয়ের নামে টাকা নিচ্ছেন। তিনি অফিসে না আসায় মিটিংয়ের নামে গ্রাহকদের অর্থ লোপাট চলছে।’
ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও কাজিম উদ্দিন পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দৈনন্দিন কাজ চলছে। এক বছর ধরে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে না।
পলাতক পরিচালকেরা পলাতক হিসেবে বিবেচিত পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের স্ত্রী ফারহানা সাঈদ, মা শাহানা হানিফ, মেয়ে রাইফা নানজিবা সাঈদ, আয়েশা নিভরাশ সাঈদ এবং ফাতিমা নওশিন মাইয়া সাঈদ অরোরা ও শ্যালিকা রিজওয়ানা হোসেন।
সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স এই দুই বিমা কোম্পানি আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মকবুল হোসেনের। তাঁর মৃত্যুর পর সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা হন সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তাঁর মা গোলাম ফাতেমা তাহেরা খানম। এ ছাড়া পূরবী জেনারেলের উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁরা সবাই পলাতক।
পলাতক রয়েছেন আলফা লাইফের পরিচালক ইন্তেখাবুল হামিদ অপুসহ আরও তিনজন। অপু সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভাই।
সাবেক দুই মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কোম্পানি যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্স। তাঁরা উভয়ে কারাগারে। কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন গাজী গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা বদরুল আলম খান। পলাতক পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা, মেয়ে মেহেনাজ তাবাসসুম, ছেলের বউ ফারহানা ফেরদৌসি ইমতিয়াজ।
পলাতক রয়েছেন বেস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিক ও পরিচালক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের এশিয়া ইনস্যুরেন্স পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের কোম্পানি এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স। তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল এর চেয়ারম্যান এবং মেয়ে নাফিসা কামাল পরিচালক ছিলেন। তাঁরা সবাই পলাতক।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রতিষ্ঠান জনতা ইনস্যুরেন্স। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান মন্ত্রীর মামা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর আত্মীয় ফারহানা জামান এবং তাঁর মেয়ে জেবা জামান পলাতক রয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি তাকাফুল ইসলামী লাইফের পরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন খানও পলাতক।
ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের সিইও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান দেশের বাইরে রয়েছেন। কিছুদিন ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। কোম্পানির স্বার্থে সর্বশেষ সভায় নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি নিটল ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ। সেলিমার পদে বসেছেন তাঁর ভাই এ কে এম মনিরুল হক। পলাতক রয়েছেন বেঙ্গল ইসলামী লাইফের পরিচালক সাবেক এমপি জেসমিন আখতার।
সব মিলিয়ে ১৯টি জীবনবিমা এবং ১৭টি সাধারণ বিমাসহ ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক পরিচালক পলাতক রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ ও নিয়ন্ত্রক যা বলেন
বিমা বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ রেগুলেটরি দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এর ফলে গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর বিমা খাত রুগ্ণ হচ্ছে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, ‘জুমে পর্ষদ সভা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এটা করা যাবে না। এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানির বিষয়ে অভিযোগ আসেনি, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমাদের কাজ বিমা কোম্পানির ওপর নজরদারি করা। কিন্তু লোকবলের অভাবে তা যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনিয়ম পেলেও কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা কিংবা নতুন বোর্ড গঠনের ক্ষমতা আইডিআরএর নেই।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিমা খাতের পলাতক ও কারাবন্দী কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ২৭ জন সাবেক মন্ত্রী, মেয়র ও সংসদ সদস্য (এমপি)। সশরীর উপস্থিত হতে না পারায় তাঁদের অনেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভার্চুয়ালভাবে (অনলাইনে) পর্ষদ সভায় অংশগ্রহণ করছেন। নিয়মিত নিচ্ছেন বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন খরচের অর্থ।
বিমা বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকায় কোম্পানি ও গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোম্পানির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অনিয়ম ও দলাদলি জেঁকে বসেছে। বর্তমান পরিচালক, নির্বাহীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন খাতে খরচের নামে অর্থ লোপাটের ছক কষছেন। এতে গ্রাহকদের বিমার অর্থের দাবি পূরণ না হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হচ্ছেন মুনাফা থেকে।
বিমা খাতের পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিরীক্ষকেরা এসব অসংগতি তুলে ধরছেন না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। যথাযথ নজরদারি না থাকায় কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা লাগামছাড়া হয়ে উঠছেন।
সরকারি দুটিসহ দেশে ৮২টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ৬০টি বিমা কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এর একটি বড় অংশ অনুমোদন পেয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে ৭০টি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। এসব কোম্পানির পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তাঁরা। পটপরিবর্তনের পর এর মধ্যে ৬০টি কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যানরা পদ ছেড়ে দিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা ব্যবসায়িক অংশীদারদের বসিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ঠিক রেখেছেন। তবে ১০ কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ ৩৬টি কোম্পানির ১১২ জন পরিচালক এখনো পদ ছাড়েননি। তাঁরা দেশ-বিদেশে পলাতক বা কারাগারে থাকলেও পদে বহাল রয়েছেন।
পলাতক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে পলাতক রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকন। একইভাবে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। আরও পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ও রূপালী লাইফের মাহফুজুর রহমান, আলফা ইসলামী লাইফের আলমগীর শামসুল আলামিন, এনআরবি ইসলামী লাইফের কিবরিয়া গোলাম মোহাম্মদ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এবং সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম পান্না। সাবেক এমপি ও ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম কারাগারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানিগুলোতে চেয়ারম্যানরা সশরীর উপস্থিত না হলেও তাঁদের গাড়ির খরচ, জ্বালানি খরচ এমনকি চালকের বেতন দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে। নেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনের বিলও। একই অবস্থা পরিচালকদের ক্ষেত্রেও।
সম্প্রতি রাজধানীর পুরানা পল্টনের ডিআর টাওয়ারে সাঈদ খোকনের ইসলামী ইনস্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা কক্ষে একের পর এক আসছেন বিমার দাবি না মেটা গ্রাহক। তাঁদের কাউকে বলা হচ্ছে, কাগজপত্র দিয়ে যেতে, কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কাউকে বলা হচ্ছে, এখন কোম্পানির অবস্থা ভালো নেই, টাকা পেতে দেরি হবে। এসব কথা শুনে গ্রাহকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ইনস্যুরেন্সের সিইওর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বলা হয়, ‘স্যার কারও সঙ্গে কথা বলেন না।’ জনসংযোগ বিভাগের প্রধান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান ও পরিচালক স্যার নিয়মিত আসছেন না। তাই সব কাজ করা যাচ্ছে না।’
পরে ফোনে কথা হলে সিইও আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি জুমে (অনলাইনে) পর্ষদের সভা করেন। কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছেন ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ। আর কিছু বলতে পারব না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিতে এখন দুটি গ্রুপ হয়েছে। পৃথক গ্রুপ দুটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সিইও আব্দুল খালেক মিয়া। দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি সিইওকে চাকরিচ্যুত করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে হওয়ায় এই চাকরিচ্যুতির আবেদন নামঞ্জুর করেছে বিমার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান। তিনি পলাতক থাকায় সিইও গোলাম কিবরিয়া কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে মিলে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কোম্পানিটিতে একাধিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সচিব আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করেন না, প্রয়োজনে আসেন, আবার চলে যান।’ তবে ডিএমডি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান পলাতক। তিনি পর্ষদ সভা করেন জুমে। মিটিংয়ের নামে টাকা নিচ্ছেন। তিনি অফিসে না আসায় মিটিংয়ের নামে গ্রাহকদের অর্থ লোপাট চলছে।’
ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও কাজিম উদ্দিন পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দৈনন্দিন কাজ চলছে। এক বছর ধরে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে না।
পলাতক পরিচালকেরা পলাতক হিসেবে বিবেচিত পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের স্ত্রী ফারহানা সাঈদ, মা শাহানা হানিফ, মেয়ে রাইফা নানজিবা সাঈদ, আয়েশা নিভরাশ সাঈদ এবং ফাতিমা নওশিন মাইয়া সাঈদ অরোরা ও শ্যালিকা রিজওয়ানা হোসেন।
সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স এই দুই বিমা কোম্পানি আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মকবুল হোসেনের। তাঁর মৃত্যুর পর সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্সের উপদেষ্টা হন সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তাঁর মা গোলাম ফাতেমা তাহেরা খানম। এ ছাড়া পূরবী জেনারেলের উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁরা সবাই পলাতক।
পলাতক রয়েছেন আলফা লাইফের পরিচালক ইন্তেখাবুল হামিদ অপুসহ আরও তিনজন। অপু সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভাই।
সাবেক দুই মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কোম্পানি যমুনা লাইফ ইনস্যুরেন্স। তাঁরা উভয়ে কারাগারে। কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন গাজী গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা বদরুল আলম খান। পলাতক পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা, মেয়ে মেহেনাজ তাবাসসুম, ছেলের বউ ফারহানা ফেরদৌসি ইমতিয়াজ।
পলাতক রয়েছেন বেস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিক ও পরিচালক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের এশিয়া ইনস্যুরেন্স পিএলসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের কোম্পানি এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স। তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল এর চেয়ারম্যান এবং মেয়ে নাফিসা কামাল পরিচালক ছিলেন। তাঁরা সবাই পলাতক।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রতিষ্ঠান জনতা ইনস্যুরেন্স। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান মন্ত্রীর মামা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর আত্মীয় ফারহানা জামান এবং তাঁর মেয়ে জেবা জামান পলাতক রয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি তাকাফুল ইসলামী লাইফের পরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন খানও পলাতক।
ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের সিইও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান দেশের বাইরে রয়েছেন। কিছুদিন ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। কোম্পানির স্বার্থে সর্বশেষ সভায় নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে।
পলাতক রয়েছেন সাবেক এমপি নিটল ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ। সেলিমার পদে বসেছেন তাঁর ভাই এ কে এম মনিরুল হক। পলাতক রয়েছেন বেঙ্গল ইসলামী লাইফের পরিচালক সাবেক এমপি জেসমিন আখতার।
সব মিলিয়ে ১৯টি জীবনবিমা এবং ১৭টি সাধারণ বিমাসহ ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক পরিচালক পলাতক রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞ ও নিয়ন্ত্রক যা বলেন
বিমা বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এস এম জিয়াউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ রেগুলেটরি দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এর ফলে গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর বিমা খাত রুগ্ণ হচ্ছে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, ‘জুমে পর্ষদ সভা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এটা করা যাবে না। এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানির বিষয়ে অভিযোগ আসেনি, তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমাদের কাজ বিমা কোম্পানির ওপর নজরদারি করা। কিন্তু লোকবলের অভাবে তা যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনিয়ম পেলেও কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা কিংবা নতুন বোর্ড গঠনের ক্ষমতা আইডিআরএর নেই।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।
৯ ঘণ্টা আগে
উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।
১৪ ঘণ্টা আগে
রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
১৫ ঘণ্টা আগে
পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।
ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।
জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’
বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।
বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।
সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।
দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।
দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।
আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।
ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।
সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’
ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।
মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।
ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।
জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’
বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।
বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।
সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।
দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।
দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।
আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।
ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।
সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’
ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।
মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝ
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।
১৪ ঘণ্টা আগে
রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
১৫ ঘণ্টা আগে
পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।
১৫ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝ
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।
৯ ঘণ্টা আগে
রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
১৫ ঘণ্টা আগে
পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।
জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।
নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।
পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।
তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।
সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?
বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।
জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।
নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।
পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।
তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।
সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?
বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝ
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।
৯ ঘণ্টা আগে
উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।
১৪ ঘণ্টা আগে
পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।
১৫ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।
এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।
এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিমা খাতের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। সেই সংকটের মাত্রা আরও গভীর হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বিমা খাতের প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শতাধিক পরিচালক পলাতক কিংবা জেলে। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অনিয়ম-নৈরাজ্যের জেরে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার ঝ
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।
৯ ঘণ্টা আগে
উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।
১৪ ঘণ্টা আগে
রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
১৫ ঘণ্টা আগে