Ajker Patrika

ইউরোপের বাজারে রপ্তানি নির্বিঘ্ন রাখতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে

রেজাউর রহিম
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৪
ইউরোপের বাজারে রপ্তানি নির্বিঘ্ন রাখতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। অনেক দর-কষাকষির পর শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যসুবিধা (জিএসপি) ২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল রাখতে রাজি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এরপর ইইউভুক্ত দেশগুলো ও যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি নির্বিঘ্ন রাখতে তাদের ‘জিএসপি প্লাস’ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি এখনো দৃশ্যমান নয়। ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যে সমন্বিত কোনো পরিকল্পনার কথাও জানা যাচ্ছে না।

স্বল্প ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য ২০১৫ সালে ‘স্পেশাল ইনসেনটিভ অ্যারেঞ্জমেন্ট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য-সুবিধা চালু করে ইইউ। এটিই জিএসপি প্লাস হিসেবে পরিচিত। এটির আওতায় ইউরোপের বাজারে ট্যারিফ লাইনের ৬৬ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। বর্তমানে মাত্র আটটি দেশ এই সুবিধা পায়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এই সুবিধা পাচ্ছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য ইইউ এবং যুক্তরাজ্য। এসব বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে ২৭টি মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক নীতিমালা মানতে হবে। এসব নীতিমালার মধ্যে ১৫টি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রমমানের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ছাড়া শ্রম আইন ও মানবাধিকার, সুশাসনের মতো কিছু জটিল বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িত। যার সঙ্গে আবার আছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও। 

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইইউভুক্ত দেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। ইইউতে বাংলাদেশ ‘এভরিথিং বাট নট আর্মস’ (ইবিএ) স্কিমের আওতায় ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। কিন্তু ইইউ ২০২৩ সালের মধ্যে নতুন জিএসপি প্লাস নীতি প্রণয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের জন্য ইবিএ সুবিধা অব্যাহত না থাকারও আশঙ্কা রয়েছে। 

জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে অনেকগুলো শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে একটি হলো অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক। অর্থাৎ দেশের শীর্ষ সাতটি পণ্যের মোট রপ্তানিমূল্য জিএসপির আওতায় রপ্তানিকৃত পণ্যের মোট মূল্যের ৭৫ শতাংশ হতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জিএসপির আওতায় রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য রপ্তানিকৃত পণ্যের মোট মূল্যের ৯৫ শতাংশ। জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে এই একটি সূচকেই ইতিবাচক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সুতা ও স্থানীয় উৎস থেকে প্রস্তুত বস্ত্র, বোতাম, জিপারের মতো এক্সেসরিজ এর সঙ্গে জড়িত। আমদানিকারক দেশের শর্ত অনুযায়ী, মোট পোশাক রপ্তানির ৮০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা দিয়ে তৈরি হতে হবে। জিএসপি প্লাসের ক্ষেত্রে ‘রুলস অব অরিজিনের’ ডাবল ট্রান্সফরমেশন শর্ত এটি। নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবশ্য এ শর্ত পূরণ করছে। তবে ওভেন পোশাকের ক্ষেত্রে এই হার এখনো ৫০ শতাংশ। 

অন্যান্য শর্তের মধ্যে অন্যতম, ইইউ থেকে এলডিসির যেসব দেশ জিএসপি সুবিধা পায়, তার মধ্যে ৭ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি হিস্যা হলে ওই দেশ জিএসপি প্লাসের জন্য যোগ্য হবে না। বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি বাজার ইউরোপ। ফলে সেখানে বাংলাদেশের হিস্যা বর্তমানে প্রায় ২৬ শতাংশ। তবে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউয়ের রাষ্ট্রদূতেরা এ বিষয়ে বাংলাদেশকে ছাড় দিতে রাজি হয়েছেন। 

দেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মোট রপ্তানিকৃত পোশাকের প্রায় ৬২ শতাংশ ও মোট রপ্তানির প্রায় ৫৬ শতাংশের গন্তব্য ইইউভুক্ত দেশ ও যুক্তরাজ্য। ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে চলমান শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা বন্ধ হলে তা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে দেখা দিতে পারে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ‘রুলস অব অরিজিন’-এর ডাবল ট্রান্সফরমেশনের মতো কঠিন শর্তের মুখোমুখি হতে হবে এবং তা মোকাবিলায় ইইউয়ের দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির দিকেও যেতে হবে। 

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ইউরোপের বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালায় ‘ইমপোর্ট-শেয়ার ক্রাইটেরিয়া’ বাদ দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরি উপকৃত হতে পারে। তিনি বলেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কাজ চলছে। রপ্তানি বাজার ধরে রাখার জন্য এবং জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি ২০২৯ সালের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী মন্ত্রী। 

শর্ত অনুযায়ী ওভেন পোশাকে ফ্যাব্রিক, এক্সেসরিজ আমদানিতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কিংবা আরও বেশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সক্ষমতার বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্য ক্ষেত্রে তুলা থেকে উৎপাদিত সুতার পরিবর্তে সিনথেটিক ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি। 

জিএসপি প্লাসের অন্যান্য শর্ত পূরণে উদ্যোগের বিষয়ে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সম্প্রতি সংগঠনের ‘অ্যাপারেলস ডিপ্লোমেসির’ অংশ হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের বৈঠক হয়েছে। তাঁরা এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে জিএসপি সুবিধার ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি রপ্তানি হিস্যা হলে জিএসপি প্লাসের জন্য যোগ্য হবে না-এ শর্ত শিথিল করতে সম্মত হয়েছেন। শিগগির ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত বিল পাস হবে বলে রাষ্ট্রদূতেরা জানিয়েছেন। 

সেই সঙ্গে শ্রম অধিকার এবং কারখানাগুলোর কর্ম পরিবেশ নিয়ে সরকার ও উদ্যোক্তাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, মানবাধিকার ও সুশাসনের মতো বিষয়গুলো সম্পূর্ণরূপে সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে আমাদের করার কিছু নেই। 

চার দশকের পোশাক খাত কেন এখনো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা, কাপড় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি? এ ক্ষেত্রে কেন বিদেশ নির্ভর, বিশেষ করে রপ্তানি বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ওপর নির্ভরশীল-এ প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সহসভাপতি বলেন, অনেক সময় বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে এসব আমদানি করতে হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল থেকে এলডিসি দেশে উত্তরণ অর্থহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

জিএসপি প্লাসের শর্ত পূরণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের ওপরেই জোর দিয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হকও। 

‘জিএসপি প্লাস’-এর শর্তাবলি পূরণ করতে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান (আমদানি)। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ছয়টি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

তবে বিষয়টিকে বেশ চ্যালেঞ্জিং বলেই মনে করছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। যেখানে দেশের প্রায় ৮৯ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং নিরাপত্তার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি। 

অবশ্য তৈরি পোশাক কারখানাসহ দেশের শিল্প কারখানায় শ্রম পরিবেশের উন্নতি ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা শুধু আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপে নয়, এটা নিজেদের দেশের মানুষের স্বার্থেই করা প্রয়োজন। আর এ জন্য সরকারের নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ঝুঁকি এড়াতে রপ্তানিপণ্যে বৈচিত্র্য আনাটা জরুরি। পোশাক শিল্পে নির্ভরশীলতা কমিয়ে পাট, চামড়া, মাছ এবং অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির দিকে নজর দিতে হবে। বাজার সম্প্রসারণ, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, চিলির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় হয়েছে। ইউরোপের আরক বড় বাজার রাশিয়ার দিকেও নজর দিতে হবে। শ্রম পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সক্রিয় করাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত