Ajker Patrika

ডলার সংকটের মধ্যে নীতির ভুলে রিজার্ভের ঝুঁকি বাড়ছে

ফারুক মেহেদী ও জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১: ৫৪
ডলার সংকটের মধ্যে নীতির ভুলে রিজার্ভের ঝুঁকি বাড়ছে

রপ্তানি আয়ে খরা চলছে। রেমিট্যান্সেও একই হাল। দেশে ডলার আসার প্রধান এই দুটি পথ সংকীর্ণ হওয়ায় টান পড়েছে রিজার্ভে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর উচিত ছিল প্রবাসী কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়ে রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করা। কিন্তু তা না করে উল্টো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহজে ডলার কেনার জন্য বসে থাকছে তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার সরবরাহ করে যাচ্ছে তাদের। এতে ঝুঁকি বাড়ছে রিজার্ভে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত তিন মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ গতকালও বিক্রি করেছে ৮০ মিলিয়ন ডলার। ফলে আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ ২১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। সবকিছু যেভাবে চলছে, তাতে ডলারের সংকট শিগগির কাটার কোনো লক্ষণ দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রিজার্ভ কমছে, তবু ডলার বিক্রি করার মানে হয় না।এসব বন্ধ করতে হবে। হুন্ডি বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে বৈধ পথে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। এসব অল্প সময়ে হবে না। অন্তত কয়েক মাস লাগবে। তার মানে রিজার্ভ খরচ কমাতে না পারলে সামনে ঘাটতি বাড়বে।’

দেশে ডলারের বড় জোগান আসে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বরে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

সংকটের এই রেমিট্যান্স প্রবাহ এভাবে কমার পেছনে কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকেরা। সবচেয়ে বড় কারণটি হলো ব্যাংকিং চ্যানেল ও  হুন্ডির মধ্যে ডলারের দামের বড় ব্যবধান। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা পান ১০৯ টাকা। আর হুন্ডিতে পাঠালে কোনো খরচ ছাড়া, বাকিতে পরিশোধ করেও খুব সহজে, কম সময়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে তাঁরা পান ৯-১০ টাকা বেশি।

এ ছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে কিছুটা অনিশ্চয়তাও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার অন্যতম  কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ডলারের আগাম দরের (বুকিং রেট) ঘোষণা দিয়েছে। এটিও রেমিট্যান্স কমার আরেকটি কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তাঁদের ধারণা, বুকিং রেটের এই ঘোষণায় প্রবাসীরা পরে লাভ পাওয়ার আশায় ডলার ছাড়ে আরও বেশি রক্ষণশীল হবেন। এটা হলে সামনে রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

২০২৩ সালের পুরো সময় ডলার-সংকট থাকবে—চলতি বছরের শুরুতেই এমন আভাস দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। ডলারের গতি-প্রকৃতি এবং রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন সেই বার্তাই দিচ্ছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমানে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ভালো অবস্থানে নেই। নির্বাচনের আগপর্যন্ত চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি আমদানি করতেই হবে।

এতে রিজার্ভের আরও ঘাটতি সৃষ্টি হবে। তবে নির্বাচনের আগে রিজার্ভ বাড়ানোর তেমন কোনো উপায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থাকছে না বলে গভর্নর স্বীকার করেছেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এ জন্য নির্বাচনের পর সরকারের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক সুদহার ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ডলারে আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উৎস খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে রিজার্ভে যে আরও পতন অপেক্ষা করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’

চলমান ডলার-সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে  ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তি এসেছে। কিন্তু শর্ত পূরণ না হওয়ায় আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তি এখনই ছাড় করবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। শর্তের দোহাই দিয়ে আইএমএফ যদি নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় না করে, তাহলে রিজার্ভ পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে।

সংকটের এই সময়ে ডলার সাশ্রয়ে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। একসময় প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করা হতো। পরে তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। গত জুনে প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল নিষ্পত্তি করা হয়। তবু রিজার্ভ কমছে। জুলাই থেকে আবার আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে। ওই মাসে বিল নিষ্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেও তা প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই রয়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে সামনে রিজার্ভে চাপ আরও তৈরি করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভাব, ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদল, ডলার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া, ডলারের প্রতিযোগিতামূলক ও আকর্ষণীয় দর না দেওয়া, প্রবাসীদের দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে না পারা, সংকটের শুরু থেকে বিশেষজ্ঞদের মতামত আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে গড়িমসি সংকট বাড়িয়ে তুলেছে দিন দিন।

 এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন গত ছয় বছরের ভুলের মাশুল দিচ্ছে। তারা ডলারের দর ধরে রেখেছিল। অনেক ভুল করেছে। এখন সংশোধন হতে শুরু করেছে। এখানে অনেক সংস্কার করতে হবে। সুদের হার বাড়াতে হবে। ঋণ সহজলভ্য হলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য ঋণ নিয়ে ডলার কিনে রাখবে। এতে ডলার-সংকট বাড়বে। তাই ঋণের সুদ বাড়াতে হবে। এতে টাকার প্রভাব কমবে। মূল্যস্ফীতি কমবে। তখন এমনিতেই ডলারের দরও সহনীয় হয়ে আসবে।’

সম্প্রতি আকুর লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাংলাদেশকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার নগদে পরিশোধ করতে হতে পারে সামনে, যা আগে দুই মাস অন্তর পরিশোধের সুযোগ ছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর দেশে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০২২-২৩ অর্থবছর ৯৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরে ছাড় কমেছে। আবার ঋণের সুদ ও কিস্তি শোধের চাপও বাড়ছে। এতেও ডলার মজুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক অবশ্য আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ডলার-সংকট রয়েছে। তা নিরসনে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের যে রিজার্ভ আছে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ওপরে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত