Ajker Patrika

রমজান সামনে রেখে সবজির বাজার চড়া

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ২১: ৫৩
রমজান সামনে রেখে সবজির বাজার চড়া

রোজার বাকি আর একদিন। এদিকে বেড়ে গেছে কাচা সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। কিছু সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।

পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত রোজা শুরুর আগে আগে বাজার চড়া হয়। এবার অবশ্য রমজানের বেশ আগ থেকেই বাজার অস্থিতিশীল হয়েছিল। সয়াবিন তেল তো দামের দিক থেকে মানুষকে একহাত দেখিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। কিন্তু এখন রমজানের আগে আগে এর কোনোটিই কাজে আসছে না বলে মনে হচ্ছে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে, যা গতকালই ছিল ৫০-৬০ টাকা। শসার কেজি ৭০-৮০ টাকা, গতকাল যা ছিল ৬০ টাকা। করলার দামও চড়া। বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। আকার ভেদে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা দরে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে কিছু সবজির দাম। এর মধ্যে কাঁচা মরিচ ৪০-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫ / ৩০ টাকা ও টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আগামীকাল কাঁচা সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন অনেক খুচরা ব্যবসায়ী। তাঁরা বলেন, এখন একটু কমে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সকালে দাম আরেকটু বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, কাল সকালে আরও বেশি মানুষ আসবে। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম, তাই বাড়তে পারে।

চাল, ডাল ও বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

রোজার একদিন আগে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রায়ের বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোজার কারণে বাজারে ক্রেতা বেশি। চাহিদাও গতকালের চেয়ে অনেক বেশি। আর চাহিদা বাড়ার কারণে দামও একটু বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সবাই একবারে বেশি করে পণ্য কেনায় বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। আর তখনই ব্যবসায়ীরা একটু দাম বাড়িয়ে দেন। সকালে দাম আরও বেশি ছিল। বেগুন এখন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সকালে ছিল ১০০ টাকা কেজি।

কথা হয় বাজার করতে আসা ক্রেতা সামির হোসেনের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আজ ছুটির দিন, তাই বাজারে এসেছি। কাল রাতে সাহরি খেতে হবে। কাল আবার অফিস, তাই আজই এসেছি বাজারে। কিন্তু সবকিছুর দাম তুলনামূলক বেশি। যেমন পারছে দাম নিচ্ছে। আমরা অসহায়। কারণ, আমাদের তো কিনতেই হবে।’

তবে মাছের বাজারে এখনো দাম এতটা বাড়েনি। রায়ের বাজার ও জিগাতলা মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছু মাছের দাম বাড়লেও বেশ কয়েকটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কোনোটার দাম কমেনি। রুই মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে, যা আগে ছিল ২৬০-২৮০ টাকা। কালিবাউশের কেজি ২৬০ টাকা, যা গতকালও ছিল ২৪০-২৫০ টাকা। এ ছাড়া গ্রাসকার্প আকার ভেদে ২৩০-২৮০ টাকা, বোয়াল ৬০০-৮০০ টাকা, পাঙাশ বড় ৩৫০ টাকা, ছোট আকারের পাঙাশ ১৫০-১৭০, তেলাপিয়া ১৫০-১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কই মাছ (চাষের) ২০০ টাকা কেজি, মাগুর ৬০০ টাকা, কাতল ৩২০-৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাতলের কেজি গতকালও ছিল ২৮০-৩০০ টাকা ছিল। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা কেজি, চিংড়ি আকার ভেদে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। ইলিশ মাছ বড় আকারের ১০০০ থেকে ১২০০, মাঝারি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষত রমজান সামনে রেখে রুই ও কাতল মাছের দাম গড়ে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

মাছ ব্যবসায়ী মাহতাব আলী কিছু মাছের দাম বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘রোজার আগে একটু দাম বাড়ে। সবাই ভালো জিনিস খেতে চায়। দামের চিন্তা করে না।’ কেন বাড়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আড়তে দাম বেড়ে যায় তাই আমাদেরও বাড়াতে হয়।’

রুই-কাতলের মতো বড় মাছের দাম বাড়লেও অধিকাংশ মাছের দাম এখনো স্থিতিশীল আছে।

তবে মসলার বাজার স্থিতিশীল। আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি, রসুন (চায়না) ১৩০, দেশি ৫০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম ছিল ৬০ টাকা কেজি। কমেছে পেঁয়াজের দাম; বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া অন্য মসলার দাম আগের মতোই আছে।

ভোজ্যতেলের বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ টাকায়। অর্থাৎ, প্রতি লিটারের দাম পড়ছে ১৫২ টাকা। কিন্তু এই একই তেল এক বা দুই লিটার কিনলে লিটারপ্রতি দাম পড়ছে ১৬০ টাকার বেশি।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা করে, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়।

এদিকে চালের দাম আছে আগের মতো। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর মসুরের ডাল সরুটা ১৩০ টাকা, মোটা ডাল ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি। বুটের ডাল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত