Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /ইরান ও রাশিয়ার ‘নিষিদ্ধ’ তেল-বাণিজ্যের নেপথ্যে নিউজিল্যান্ডের বিমা সংস্থা, মালিক ব্রিটিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৫৮
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল বাণিজ্য করতে ইরান ও রাশিয়াকে সহায়তা করছে পশ্চিমের কোম্পানিই। ছবি: এএফপি
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল বাণিজ্য করতে ইরান ও রাশিয়াকে সহায়তা করছে পশ্চিমের কোম্পানিই। ছবি: এএফপি

পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান ও রাশিয়ার তেল রপ্তানি থেমে নেই। এমনকি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার তেল-বাণিজ্যে আয় বৃদ্ধির খবরও এসেছে। আর এই কাজে সহায়তা করছে যেসব প্রতিষ্ঠান, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম নিউজিল্যান্ডভিত্তিক ছোট বিমা প্রতিষ্ঠান মেরিটাইম মিউচুয়াল। এটির মালিকানা আবার এক ব্রিটিশ পরিবারের। কোম্পানিটি এখন আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা ছায়া বহরের ট্যাংকারগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিমা পরিষেবা দিয়ে আসছে। এই জাহাজগুলো অবস্থান সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেয়, জাল নথিপত্র এবং নাম ব্যবহার করে গোপনে তেল-বাণিজ্য চালিয়ে যায়।

মেরিটাইম মিউচুয়ালের মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মেরিটাইম মিউচুয়াল ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, অকল্যান্ডে একটি কার্যালয় থেকে এটি পরিচালিত হয়। সংস্থাটি গত দুই দশকে ফেরি থেকে শুরু করে পণ্যবাহী জাহাজ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার জাহাজকে বিমা সুবিধা দিয়েছে। তবে রয়টার্সের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ ছায়া বহরের ট্যাংকারকে এই সুবিধা দিয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে ইরান ও রাশিয়ার তেল পরিবহনকারী জাহাজ।

দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়টার্স উল্লেখ করেছে, গত বড়দিনের সময়, ইয়ুগ (Yug) নামে একটি ট্যাংকার চীনের কিংদাও বন্দর থেকে ২ কোটি ব্যারেল ইরানি তেল খালাস করে যাত্রা শুরু করে। একই সময়ে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল বহনকারী একটি জাহাজ বরফের মধ্য দিয়ে ভারতে যাচ্ছিল। তিনটি ভিন্ন ট্যাংকারের মালিক ভিন্ন হলেও এগুলোর বিমাকারী ছিল নিউজিল্যান্ডের সংস্থাটি।

এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) হিসাব অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে মেরিটাইম মিউচুয়ালের কাভারেজপ্রাপ্ত জাহাজগুলো কমপক্ষে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলারের ইরানি তেল এবং ১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলারের রুশ জ্বালানি পণ্য পরিবহন করেছে। সে হিসাবে মোট বাণিজ্য হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি।

মেরিটাইম মিউচুয়ালের মূল পরিষেবা হলো সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ (পিঅ্যান্ডআই) বিমা। এই বিমা জাহাজের কোনো দুর্ঘটনা, পরিবেশগত ক্ষতি বা তৃতীয় পক্ষের কারণে ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার কাভার করে। সাবেক মার্কিন ট্রেজারি নিষেধাজ্ঞাবিদ ডেভিড ট্যানেনবাউমের মতে, এই বিমা ছাড়া ছায়া বহরের জাহাজগুলো ‘পানিতে নিথর’ হয়ে থাকত। কারণ, রাশিয়া বা ইরানের বন্দরেও বিমাবিহীন জাহাজ প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

এ সংস্থাটি পরিচালনা করে ৭৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক পল র‍্যাঙ্কিন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কোম্পানির ওয়েবসাইটে তাঁর দুই কন্যা (ক্লেয়ার ও সারাহ) এবং এক জামাতা (স্টিভেন জয়েস) সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই, ২০১৬ সাল থেকে মেরিটাইম মিউচুয়াল ইরানি ব্যবসা আকৃষ্ট করার চেষ্টা শুরু করে। তারা ‘নিউজিল্যান্ড পিঅ্যান্ডআই ক্লাব’ নামে একটি সমিতি খোলে। ইরানে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়া গ্রাহকদের নিয়ে এই সমিতি গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে তারা ইরানি শিপিং ফার্ম ‘শিরাজ মেরিন’কে ইরানে এই সমিতির স্বার্থ প্রচার এবং সদস্যদের পরিচিত করার কর্তৃত্ব দেয়।

ইরান ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর এই কোম্পানির রাজস্বে বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে তাদের বিমা বিক্রি গড়ে বছরে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়লেও, ২০১৯ সাল থেকে (ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর) তা গড়ে বছরে ৪১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে গত বছর ১০ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে রুশ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার প্রথম বছরে এই প্রবৃদ্ধি ৬০ শতাংশে পৌঁছায়।

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা এবং অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বিমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। রুশ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগের অংশ হিসেবে, ১৬ অক্টোবর নিউজিল্যান্ড পুলিশ মেরিটাইম মিউচুয়ালের অকল্যান্ড ও ক্রাইস্টচার্চের কার্যালয় এবং অকল্যান্ডের একটি বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে নথি ও রেকর্ড জব্দ করে। পুলিশের আর্থিক অপরাধ বিভাগ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যদিও এখনো কোনো ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

এই তদন্তে নিউজিল্যান্ড সরকার অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।

এর মধ্যে মেরিটাইম মিউচুয়াল তাদের বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণের ঝুঁকি কমানোর জন্য পুনর্বিমা পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে। যেহেতু পুনর্বিমা সংস্থাগুলোও নিষেধাজ্ঞার নিয়ম মানতে বাধ্য, তাই মেরিটাইম মিউচুয়াল যদি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে থাকে, তবে তাদের সহযোগী বৈশ্বিক সংস্থাগুলোও ঝুঁকিতে পড়বে।

ম্যারিটাইম মিউচুয়ালের পুনর্বিমা প্রদানকারী প্রধান সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমা বাজার লয়েডস অব লন্ডনের সদস্যরা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: জার্মানির মিউনিখ রি গ্রুপ (বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্বিমা সংস্থা) ; জার্মানির আরেক প্রতিষ্ঠান হ্যানোভার রি; ব্রিটেনের এমএস অ্যামলিন এবং অ্যাট্রিয়াম।

এ ছাড়া ব্রিটিশ-আমেরিকান বিমা কোম্পানি এওন (Aon) এবং আমেরিকার লকটনও সংস্থাটির ব্রোকার হিসেবে কাজ করেছে।

রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মেরিটাইম মিউচুয়াল আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারী কোনো কার্যকলাপে জড়িত থাকার বিষয়টি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, তাদের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনে ‘শূন্য সহনশীলতা নীতি’ রয়েছে।

তবে ২১ অক্টোবর সংস্থাটি ঘোষণা করে, তারা শিপিং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দ্বারা চিহ্নিত কোনো ‘ছায়া বহরের’ জাহাজ বা রুশ তেল বহনকারী জাহাজের জন্য কাভারেজ দেবে না।

মেরিটাইম মিউচুয়াল এর আগে জানিয়েছিল, তারা ২০১২ সাল থেকে ৯২টি জাহাজের কাভারেজ বাতিল করেছে। কারণ, সেগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যেন গুদামঘর

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যেন গুদামঘর

দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের অনিয়ম ও অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, তা আজ এক দশক ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অধীনে থাকা এই স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে গত ১০ বছরে একটি নতুন মামলাও আসেনি। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের বাজারধস-সংক্রান্ত ২৭টি পুরোনো মামলাই কেবল এই আদালতের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। বাস্তবে রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত ট্রাইব্যুনাল ভবনটি এখন আর বিচারকক্ষ নয়; বরং অব্যবহৃত আসবাবের গুদামঘরে পরিণত হয়েছে।

মূলত জরিমানা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেই এগোচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে এই কাঠামোয় প্রকৃত শাস্তি আর দায় নির্ধারণের কার্যকর পথ প্রায় বন্ধই রয়ে গেছে। তদন্তে অপরাধ শনাক্ত হলেও মামলা করা হয় না, আর যেসব মামলা করা হয়েছে সেগুলোর বড় অংশ বছরের পর বছর উচ্চ আদালতে ঝুলে রয়েছে। এর ফল দাঁড়িয়েছে স্পষ্ট—ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বিচার কার্যত অনুপস্থিত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন, আদালত ও কাঠামো থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে বিচারিকপ্রক্রিয়া অব্যাহত না থাকলে, দায়বদ্ধতা চিহ্নিত না হলে এবং শাস্তি না হলে বাজারে দায়হীনতা ও শাস্তিহীনতার সংস্কৃতি আরও উদ্বেগজনকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

পুঁজিবাজারে বড় কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের নেতৃত্বে বিএসইসির এই স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, বাজারে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা; কিন্তু বাস্তবে সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি।

তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ১৪টি মামলা উচ্চ আদালতে ঝুলে রয়েছে, ৩টি স্থগিত। এ ছাড়া ২০১৫ সালের পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা চারটি মামলাও আজ পর্যন্ত স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে পারেনি বিএসইসি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিএসসির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল একজন জেলা ও দায়রা জজসহ ছয়জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিয়ে চললেও বাস্তবে ট্রাইব্যুনালের এজলাসে কোনো বিচারিক কার্যক্রম নেই। আসামিদের জন্য নির্ধারিত কক্ষসহ পুরো বিচারিক আদালত এখন ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিলের গুদামঘরে পরিণত হয়েছে, ধুলাবালু ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমেছে। আবার বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই জানেন না এমন একটি ট্রাইব্যুনাল আদৌ আছে। বাজারসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মধ্যেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএসইসির যে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল আছে, সেটাই তো জানি না। এটা কী কাজ করে, সেটাও আমার জানা নেই।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘এটার সর্বশেষ অবস্থা কী, সেটাই আমরা জানি না। এখনো কার্যক্রম আছে কি না, সেটাও অনিশ্চিত।’

এদিকে বিএসইসি জরিমানা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অনিয়ম দমন করছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, চলতি বছরেই সাড়ে তিন শর বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেড় বছরে জরিমানার পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। তবে এসব জরিমানার বড় অংশ আদায় হচ্ছে না। আবার জরিমানা আরোপের পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগও থাকছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, ‘মামলা ট্রান্সফার করে আনলেও সেগুলো আবার উচ্চ আদালতে চলে যাচ্ছে। দৃশ্যমান আর্থিক ক্ষতি চিহ্নিত করে জরিমানা করাই কি যথেষ্ট নয়?’

তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুধু জরিমানা দিয়ে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। বরং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় থাকলে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পেত এবং অন্যরা অপরাধে নিরুৎসাহিত হতো।’

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা জরিমানা করে লাভ নেই। জরিমানা আদায়ই হচ্ছে না; বরং বাজারে অস্বস্তি বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৭
কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) এফএমসিজি ডিভিশনের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পায় দুই পর্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

‘টুগেদার উই রাইজ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আয়োজিত এই কনফারেন্সে এফএমসিজি ডিভিশনের ১০টি সেলস লাইনের প্রায় ১ হাজার ১০০ জন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে আগামী বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন এমজিআইয়ের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিবর্তন আসায় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানসম্পন্ন নতুন পণ্য উৎপাদন এবং সেগুলো ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য করে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর জন্য চাই সবার মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা যদি একসাথে, এক লক্ষ্যে এগিয়ে যাই; তাহলে কোনো বাধা আমাদের আটকে রাখতে পারবে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমজিআইয়ের ডিরেক্টর তাহমিনা মোস্তফা বলেন, ‘ফ্যাক্টরি, সাপ্লাই চেইন, ফাইন্যান্স, ব্র্যান্ড ও অপারেশনস—সবাই এফএমসিজি পরিবারের অংশ। সেলস কোনো আলাদা বিভাগ নয়, এটি সবার একটি সম্মিলিত কমিটমেন্ট।’ তিনি ২০২৬ সালেও বাজারে ‘ফ্রেশ’, ‘নাম্বার ওয়ান’ এবং ‘অ্যাক্টিফিট’ ব্র্যান্ডের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার জন্য শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার দিকনির্দেশনা দেন।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এমজিআইয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার (সিএও) মো. রহমতুল্লাহ খন্দকার, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (সিএইচআরও) আতিক উজ জামান খান, সিনিয়র জিএম ও হেড অব অ্যাকাউন্টস এস এম মুজিবুর রহমান, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ব্র্যান্ড) কাজী মো. মহিউদ্দিন, এসবিইউ হেড কাজী তৌহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কনফারেন্সে আগামী দিনের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন টিম বিল্ডিং অ্যাকটিভিটি অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সেলস চ্যাম্পিয়ন’, ‘সেলস হিরো’ এবং ‘লং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে ছিল দেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ষষ্ঠবারের মতো এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল ডিবিএল গ্রুপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপ। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

রপ্তানি বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়নে অবদানের জন্য সম্প্রতি ‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে বহুমুখী শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপ। এর মাধ্যমে ষষ্ঠবারের মতো সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করল গ্রুপটি।

এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন।

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. জব্বার বলেন, ‘এই পুরস্কার একবার জেতা একটি বিশেষ বিষয়। কিন্তু ছয়বার এই পুরস্কার অর্জন করা এবং বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে এই গৌরব ধরে রাখার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, ধারাবাহিকতা, সততা এবং উদ্ভাবনই হলো সত্যিকারের রপ্তানি শ্রেষ্ঠত্বের মূল স্তম্ভ। এই স্বীকৃতি ডিবিএল পরিবারের প্রতিটি সদস্য এবং আমাদের অংশীদারদের প্রাপ্য।’

বিশ্বব্যাপী পোশাক সংগ্রহের হাব হিসেবে অবস্থান সুসংহত করছে বাংলাদেশ। আর এর মধ্যে অগ্রণী অবস্থানে রয়েছে ডিবিএল গ্রুপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও কমেছে পেঁয়াজ আলু ও সবজির দাম

  • পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম নামল ৪২ টাকা কেজি
  • ডিম, মুরগি ও ডালের দাম আগের মতোই
  • চালের দাম কমলেও আশানুরূপ নয়, বলছেন ক্রেতা
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ০৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ ও আমদানির বাড়তে থাকায় আরও কমেছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে ১৮-২৫ টাকা। শুধু পেঁয়াজই নয়, চলতি সপ্তাহে আলু, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ শীতকালীন সবজির দামও আরেকটু কমেছে। এ ছাড়া চাল, ডাল, ডিম, মুরগি ও অন্যান্য মুদিপণ্য আগের দামেই স্থির রয়েছে।

তবে দাম কমে বাজারে স্বস্তি এলেও তথ্য বলছে অধিকাংশ সবজির দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখনো বেশি রয়েছে। এ ছাড়া আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম যতটা কমা প্রয়োজন, ততটা কমেনি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আলুর বাজার। সাধারণত অন্যান্য বছর এই সময় আলুর দাম ৫০ টাকার ওপরে থাকে। কিন্তু চলতি বছর ২৫ টাকা কেজিতে নেমেছে।

সবজিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও চালের দাম নিয়ে এখনো অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, দাম কমলেও এখনো অনেক বেশি রয়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি শ্যামবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৭ টাকা কেজি; এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০-৬৫ টাকা। এ ছাড়া আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০-৭২ টাকা।

শ্যামবাজারের মেসার্স আনোয়ার বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. রঞ্জু শেখ বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে দাম খুব দ্রুত নামছে। নতুন, পুরোনো ও আমদানির মিলে এখন তিন ধরনের পেঁয়াজই রয়েছে বাজারে। চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ায় পেঁয়াজের বেচাকেনা খুব কম।

পাইকারিতে কমে আসায় খুচরাতেও দাম কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরায় দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ৮৫-৯০ টাকা। আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯৫-১০০ টাকা।

বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় নতুন আলু বাজারে তেমন ছিল না। পুরোনো আলুই বিক্রি হয়েছে ৫০-৭০ টাকা কেজি।

রাজধানীর বাজারগুলোয় গতকাল বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা। ডিএএম বলছে, গত বছর এই সময় বেগুনের দাম ছিল ৩০-৬০ টাকা কেজি।

বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০-৭০ টাকা কেজি। গত বছর এই সময় শিমের দাম ছিল ৩০-৮০ টাকা।

বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫-৪০ টাকা। গত বছর কপি একই দামে বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল।

বাজারে শীতের সবজি মুলা প্রতি কেজি ২০ টাকা, সপ্তাহখানেক আগে মুলা বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকায়। গত বছর এই সময় মুলার দাম নেমেছিল ১৫ টাকা কেজিতে।

শীতের সবজির মধ্যে টমেটোর দাম কিছুটা বেড়েছে গত এক সপ্তাহে। বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ টাকা।

কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০-১০০ টাকা, দেড় থেকে দুই সপ্তাহ আগে যা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা নূর নবী বলেন, গত বছর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশে পরিস্থিতি ছিল একটু অস্থির। এতে সরবরাহব্যবস্থাও ভালো ছিল না। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও কিছুটা খারাপ ছিল। এতে সবজির চাহিদাও কম ছিল। ফলে দামও কম ছিল। এ বছর সে রকম পরিস্থিতি নেই।

সবজিতে দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকলেও ডিম, মুরগি, চালসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে।

বাজারে ডিমের দাম আরও কমে প্রতিটি ৮ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৯ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ছিল। গত বছর একই সময় প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছিল ১০ টাকা ৮৪ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৬৭ পয়সা।

ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও এই দামেই বিক্রি হয়েছিল।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও বাজার তথ্য বলছে, খুচরা বাজারে গুটি, স্বর্ণাসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। তবে এই দামও বেশি বলছে ক্রেতারা। যদিও গত বছর একই সময় মোটা চাল ছিল ৫২-৫৮ টাকা।

বিআর-২৮, বিআর-২৯, পাইজামসহ মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি, যা গত বছর ছিল ৬০-৬৫ টাকা। কাটারি, শম্পা কাটারি, জিরাশাইলসহ সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৯০ টাকা কেজি, যা গত বছর একই সময় ছিল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা।

মালিবাগ বাজারের ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, মাঝারি মানের এক কেজি সরু চাল কিনতে এখনো ৭০-৭৫ টাকা লাগছে। আমনের এই ভরা মৌসুমে এটা অনেক বেশি। চালের দাম আরও কমে আসা উচিত। প্রতিবেশী দেশগুলোতে চালের দাম অনেক কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত