Ajker Patrika

একীভূত হবে দুর্বল ব্যাংক, রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় পাবে না খেলাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
একীভূত হবে দুর্বল ব্যাংক, রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় পাবে না খেলাপি

সাহসী সংস্কারের অংশ হিসেবে দুর্বল ব্যাংকের মার্জারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম দফায় দুর্বল ব্যাংককে সতর্ক, এরপর উন্নতি না হলে অন্য একটি ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জার) করা হবে। আর খেলাপিদের ধরতে কোনো বাছবিচার হবে না, দেখা হবে না কোনো রাজনৈতিক পদ পরিচয়। এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ব্যাংকার্স সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। 

বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডলার লেনদেনের নতুন পদ্ধতি ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন, কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়া, প্রোমোট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর মামলায় আটকে থাকা বিপুল অঙ্কের খেলাপির টাকা আদায়ে অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে। 

ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সভাপতিত্ব করেন। এতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেন। পরে সভা শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। 

দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপি ও নানা অনিয়মের কারণে বেশ কিছু ব্যাংক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। কোন কোন ব্যাংক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে, এর তালিকা প্রকাশ না করলেও সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব ব্যাংকের তালিকায় ৪র্থ প্রজন্মের ব্যাংকও রয়েছে। 

এসব ব্যাংক বাছ–বিচার ছাড়াই বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গ্রাহকের আমানতের টাকা নির্বিচারে ঋণ দেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট চরমে। অনেক ক্ষেত্রে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে তারল্য সহায়তা নিতে হচ্ছে। 

ঋণ খেলাপের কারণে প্রায় ডুবতে বসা ব্যাংকের উদাহরণ হলো সাবেক ফারমার্স ব্যাংক, বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় কয়েকটি ব্যাংক থেকে তারল্য জোগানোর মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয় কয়েক বছর আগে। ব্যাংকটি এখনো ঝুঁকির বৃত্ত ভাঙতে পারেনি। এ রকম আর কোন কোন ব্যাংক ঝুঁকিতে রয়েছে, সেটি নিয়ে কাজ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর সংস্কারের জন্য প্রোমোট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সেখানে সংস্কারের ক্ষেত্রে কীভাবে ব্যাংকগুলোর অবস্থা নির্ণয় করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া আছে। যেকোনো বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকের হিসাব ধরে পরবর্তী বছরের মার্চ ব্যাংকগুলোর চারটি ক্যাটাগরির ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘এ জন্য ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের ব্যক্তিগত ভাবে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। আর যেসব ব্যাংকের অবস্থা একেবারেই দুর্বল তাঁদের ঋণ বিতরণ, আমানত সংগ্রহ থেকে শুরু করে কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। কোনো ব্যাংকের অবস্থা ক্রাইটেরিয়া পূরণে ব্যর্থ হলে সেই ব্যাংক বিধিমালার আলোকে একীভূত (মার্জার) করা হবে, তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো যদি তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে তাহলে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা আসবে না।’ 

বৈঠকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে ব্যাংকার্স মিটিংয়ের বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সেখানে ব্যাংক মার্জারসহ পিসিএ, ক্রলিং পেগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ দুর্বল ব্যাংকগুলো যাতে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা যায়, সেটির বিষয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকে গভর্নর পলিটিক্যালি যেই হোক না কেন সুশাসন ফেরাতে কোনো ছাড় না দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কোন ব্যাংককে কীভাবে মার্জ করতে চান সে বিষয়ে বলেছেন। তাতে আগামীতে ব্যাংকিং সেক্টর ঘুরে দাঁড়াবে।’ 

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী ব্যাংকিং পরিচালনা হবে। ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সবকিছুই করতে গভর্নর কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া খেলাপিদের ধরতে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মার্জার ও ব্যাংক সুশাসন বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংকে শৃঙ্খলা ফেরানোর খবরকে সাধুবাদ জানাই। খেলাপিদের রাজনৈতিক ছাড় না দিলে খেলাপি কমবে। এখন প্রকৃত খেলাপি ২৫ শতাংশ। তা কমে আসবে। তখন তারল্য বাড়বে। তবে এটা দেরি হয়ে গেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক ধরে আগাতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিক ধরলে কার্যকর হবে ২০২৫ সালের মার্চে। তবে সেটাও ভালো। তবে করবে কি না তা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।’ 

দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার পাশাপাশি ঋণ খেলাপিদের ধরা, ডলার সংকট কাটাতে ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়েও ব্যাংকারদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। 

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি সংকোচন মূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছি। সেখানে টার্গেট বাস্তবায়ন পর্যন্ত এই ধরনের মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে। এ জন্য তাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যাতে তারা তারল্য ব্যবস্থা ঠিক করতে পারে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের সুশাসন ফিরাতে চাই। এ জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় মার্জার ইকুইজিশন করেছি।’ 
 
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের সুশাসন ফেরাতে একটি কমিটি গঠন করেছি। তারা একটি অ্যাকশন প্ল্যান ঠিক করে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করবে। পরে সেই অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। সেখানে খেলাপি ঋণ কমানো এবং সুশাসনের নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার সন্নিবেশ করতে নির্দেশনায় জোর দেওয়া হয়েছে। ডলার ব্যবস্থাপনায় ক্রলিং পেগ চালু করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার রেখে কারেন্সি সোয়াপ করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের ক্রলিং পেগ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে।’ 

মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের সুদের হার আরও বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে সে বিষয়ে তাদের আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলার সোয়াপে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার আছে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিয়ে প্রয়োজন হলে ডলার রেখে টাকা নিতে পারবে। সময় শেষে টাকা ফেরত দিয়ে ডলার ফেরত নিতে পারবে। যেসব ব্যাংকের কাছে শর্তের অতিরিক্ত ডলার থাকে। সে ক্ষেত্রে শর্তের কারণে তারা সেই ডলার বিক্রি করে দিতে হয়। আবার পরবর্তীতে তাদের প্রয়োজনে ব্যাংকগুলো ডলার পাচ্ছে না। এ জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক কারেন্সি সোয়াপের দিকে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের চর্চা আছে। এর আগে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়নি। তাই চর্চা ছিল না।’ 

মেজবাউল হক বলেন, ‘আদালতে আটকে থাকা অর্থ মামলা কমাতে এডিআরের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্যাংক নির্বাহীদের। এতে মামলার সংখ্যা কমে আসবে। তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে যেন কোনো গ্রাহক এই এডিআরের সুবিধা নিয়ে কালক্ষেপণ না করতে পারে।’ 

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আইএমএফ তাদের দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার করার পদক্ষেপ নিতে বলেছে। সে ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার মাধ্যমে গুণগত মান বাড়ানো অন্যতম। তবে ব্যাংক একীভূত করার মতো হুঁশিয়ারি ও ঋণ খেলাপি ধরার জন্য যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, এটির বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত