Ajker Patrika

পালাবদলে ব্যাংকে বিশৃঙ্খলা

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ৪৭
পালাবদলে ব্যাংকে বিশৃঙ্খলা

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংক খাতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। গভর্নরের আত্মগোপনে চলে যাওয়া, তিন ডেপুটি গভর্নরসহ অন্তত ৬ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদত্যাগের পর নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এমন অচলায়তনে অস্থিরতা বিরাজ করছে অধীনস্থ ব্যাংকগুলোতেও। কোথাও চলছে পাল্টাপাল্টি দখলের খেলা, আবার কোথাও ঘটছে বিক্ষোভ এবং শীর্ষ কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করার ঘটনা।

গতকাল রোববার রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে অস্ত্রধারীরা। এ হামলায় ব্যাংকটির ৬ কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। বাকি চারজন হলেন শফিউল্লাহ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আব্দুর রহমান ও বাকিবিল্লাহ। তাঁরা বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ইসলামী ব্যাংকে অস্ত্রধারীদের এমন হামলার জন্য এস আলম গ্রুপকে দায়ী করেছেন ব্যাংকটির পুরোনো কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপের মদদপুষ্ট বিতাড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই হামলা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের বের করে দেন পুরোনো কর্মকর্তারা। এরপর ৭ ও ৮ আগস্টও ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায় ব্যাংকটিতে।

এ সময় কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লুটেরাদের বের করে দেওয়ার দাবি জানান; পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মাওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাউসার আলী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ এস আলমের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বহিষ্কারের দাবিও জানান তাঁরা। এর জেরে গতকাল ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে অস্ত্রধারীদের গুলির ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসএভিপি) ড. শওকত আলী বলেন, ‘গতকাল জানতে পারি, এস আলমের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের যারা আছে, তারা একত্র হয়ে ইসলামী ব্যাংক দখলের পরিকল্পনা করছে। এ তথ্য পেয়ে তারা যাতে ব্যাংকে না ঢুকতে পারে, সে জন্য ব্যাংকের সামনে আমরা অবস্থান নিই। একপর্যায়ে এস আলমের লোকজন সিটি সেন্টারে অবস্থান নেয়। তারা মিছিলসহ প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চায়। তখন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিহত করতে গেলে এস আলমের লোকজন তাদের দিকে গুলি চালায়। এতে আমাদের ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

ইসলামী ব্যাংকে এমন হামলার ঘটনা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে গোলাগুলির ঘটনা সহ্য করা হবে না। কেউ আইনের বাইরে থাকবে না।’

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও বিক্ষোভকারী কর্মকর্তাদের চাপের মুখে ৩ ডেপুটি গভর্নরসহ অন্তত ৬ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন বলে খবর পাওয়া যায়। তবে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ওই ৬ কর্মকর্তাকে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২ জন ডেপুটি গভর্নর কাজে যোগদান না করার আভাস দিয়েছেন। আর ডেপুটি 
গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করিনি। সেদিন কিছু কর্মকর্তার উচ্ছৃঙ্খল এবং অপেশাদার আচরণে বিচলিত হয়ে পড়ি। একটা পর্যায়ে তাঁদের দেওয়া সাদা কাগজে স্বাক্ষর করি। কিন্তু এটা আমার ইচ্ছায় হয়নি। মূলত চাকরিতে আছি। হোম অফিস করছি।’

শুধু তা-ই নয়, কেপিআইভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাবলয় ফাঁকি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার অস্ত্রসহ ঢোকে ১৫-২০ জন বহিরাগত। এ সময় কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ নামের এক যুবকের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আগ্নেয়াস্ত্র (বন্দুক) জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) মো. শামিমুর রহমান বলেন, ‘কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ নামের এক যুবক অস্ত্রসহ অবৈধভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢোকার চেষ্টা করে। এটা কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে ভল্ট আছে। অস্ত্রের মুখে আমাদের ভল্ট খুলতে বাধ্য করতে পারে। তাই বৈধ অস্ত্র নিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে ঢোকার সুযোগ নেই। এখন থানা-পুলিশ থাকলে তাকে পুলিশের কাছে দেওয়া হতো। যেহেতু থানা সচল নেই, তাই তার অস্ত্র রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৬ জন কর্মকর্তার পদত্যাগ আনুষ্ঠানিক ছিল না। শুধু ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে পদত্যাগ করেছেন। অন্যরা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে অফিস থেকে চলে গেছেন। তাঁরা এখন অফিস করছেন না কেন, তা তাঁদের বিষয়।

এদিকে বেসরকারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককেও (এসআইবিএল) এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে গতকাল মানববন্ধন করেছেন ব্যাংকটির শেয়ারধারীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম ও তাঁর সহযোগীরা আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে তুলে পাচার করেছেন। ফলে আমানতকারীরা জমা করা অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী তুলতে পারছেন না।

একইভাবে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকেও। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলেসহ বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিনিধিত্বকারী সব পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেছেন ব্যাংকটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ এ সরোয়ারের সময় ‘অন্যায়ভাবে’ যাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁদের পুনর্বহালের দাবি তোলা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনে অবস্থিত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে দুই শতাধিক লোক ‘আইএফআইসি ব্যাংকের চাকরিচ্যুত সকল কর্মকর্তাবৃন্দ’ ব্যানারে বিক্ষোভ করেন।

বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে (ইউসিবি) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার আন্দোলন করেন ব্যাংকের শেয়ারধারীরা। ওই দিন সকালে গুলশানে ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকটির নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিমকে অবরুদ্ধ করে রাখেন সুবিধাবঞ্চিতরা। পরে দাবি আদায়ে আশ্বাস দিলে তাঁকে চার ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী ব্যাংক কর্মকর্তারা। পাশাপাশি সরকারি মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে বিক্ষোভ করেছে কর্মকর্তাদের একাংশ।

ব্যাংক খাতের এমন বিশৃঙ্খলা নিয়ে গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করছেন, পুরো ব্যাংক খাত একসঙ্গে সংস্কার করা যাবে না। কিছু কাজ করতে সময় লাগবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসনিক কাঠামো দ্রুত পুনর্গঠন করতে হবে; পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে অরাজকতা বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। 

গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর খুঁজতে সার্চ কমিটি 
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ৯ আগস্ট পদত্যাগ করায় নেতৃত্বশূন্যতা চলছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ডেপুটি গভর্নররাও অফিসে আসছেন না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর খুঁজছে সরকার।

এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গতকাল রোববার তিন সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই সার্চ কমিটিতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরী ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর নজরুল ইসলামকে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আহসান এইচ মনসুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমিও এ রকম শুনেছি। তবে সেটি গভর্নর নয়, ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি। আবার এই কমিটিরও টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন কিছুই জানি না। আগে অফিশিয়াল প্রস্তাব আসুক, তারপর সেই অনুযায়ী করণীয় ঠিক করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম ভরিতে ১৪৭০ টাকা বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪১১ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ২১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা।

বিষয়:

দামসোনা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেভরনের সহায়তায় সিলেটে ৬০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনে ফেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
শেভরন-এসএমআইএল প্রকল্পে ৬০ প্রতিবন্ধীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

শেভরন বাংলাদেশের সহায়তায় বাস্তবায়িত এসএমআইএল (SMILE) প্রকল্পের আওতায় ‘রিস্টোরিং মোবিলিটি: আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সাপোর্ট’ উদ্যোগের সমাপনী অনুষ্ঠান সম্প্রতি গ্র্যান্ড সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিলেট ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৬০ শারীরিক প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর মধ্যে কৃত্রিম অঙ্গ (প্রোস্থেটিক) ও অর্থোটিক ডিভাইস বিতরণ করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পুনর্বাসন ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকা এই উপকারভোগীরা কৃত্রিম অঙ্গ পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেলেন। জালালাবাদ ডিজেবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের (জেডিআরসিএইচ) সহযোগিতায় এই উদ্যোগ পরিচালিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় ও মনিটরিং উইংয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রধান এ কে এম আরিফ আক্তার, সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন এবং জেডিআরসিএইচ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান পিপি ইঞ্জিনিয়ার শোয়াইব আহমেদ মতিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘কৃত্রিম অঙ্গ সহায়তা শুধু চিকিৎসা নয়, এটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনে। শেভরন বাংলাদেশ, সুইসকন্টাক্ট ও জেডিআরসিএইচের যৌথ উদ্যোগ চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে এনে উপকারভোগীদের জীবনে নতুন আশার দ্বার খুলে দিয়েছে।’

শেভরন বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের বিশেষায়িত পুনর্বাসন সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সেবা পৌঁছে দিতে পারা আমাদের জন্য গর্বের। উপকারভোগীদের প্রতিটি অগ্রযাত্রাই একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ।’

সুইসকন্টাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন বলেন, ‘এই প্রকল্প কেবল চলাচল সক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়নি; এটি উপকারভোগীদের কর্মজীবনে ফেরা, শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা সমাজে অন্তর্ভুক্তি আরও সুদৃঢ় করেছে।’

করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পরিচালক মুহাম্মদ ইমরুল কবির বলেন, ‘শেভরন তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত জ্বালানি অংশীদার। আমাদের অঙ্গীকার কেবল জ্বালানি সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়। এসএমআইএল প্রকল্পের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা চলাচল সক্ষমতা ও মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। বাংলাদেশে আমাদের সামাজিক বিনিয়োগ কার্যক্রম জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ৯টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে উপকারভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম অঙ্গ পাওয়ার ফলে তাঁরা আবার স্বাভাবিক চলাচল, আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব পরিবার ও সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে।

গৃহস্থালি আয় স্থিতিশীল হওয়া ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিবার ও সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে—যা কমিউনিটির স্থিতিশীলতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় শেভরন বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্ট এসএমআইএল প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ও প্রভাবশালী উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা অর্থোটিক ও প্রোস্থেটিক সহায়তা প্রয়োজন, এমন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন নিশ্চিত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ১৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার কিনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করেছে। আজ সোমবার ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১.৫ মিলিয়ন) কেনা হয়েছে। ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ দশমিক ২৯ থেকে ১২২ দশমিক ৩০ টাকা আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ দশমিক ৩০ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, ১১ ডিসেম্বর ১৬টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ কোটি ডলার (১৪৯ মিলিয়ন) কেনা হয়েছিল। এ সময় প্রতি ডলারের বিনিময়হার ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ২৯ পয়সা। আর কাট-অফ রেট ছিল ১২২ টাকা ৯ পয়সা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত নিলামপদ্ধতিতে মোট ২৮০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার (২.৮০ বিলিয়ন) সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, আজ ১৩টি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার কেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনে ১৭২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাজার সহনীয় করতে পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়িয়েছে সরকার। আজ সোমবার থেকে দৈনিক ১৭ হাজার ২৫০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে; যা আগে ছিল ৬ হাজার টন করে।

আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। তিন দিনের ব্যবধানে ১২০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রতিদিন ৫০ জন আমদানিকারককে ৩০ টন করে মোট ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন মাস পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে এরপরও বাজারে দাম না কমলে আমদানির অনুমতির পরিমাণ বাড়ানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি আরও বাড়ানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন ২০০ জনকে ৩০ টন করে ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, যা আজ থেকে আরও বাড়িয়ে ১৭ হাজার ২৫০ টন করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর দুই দিনের জন্য প্রতিদিন ৫৭৫টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রতিটি আইপিতে আগের ন্যায় সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে। আবেদনের বিষয় আগের ন্যায় বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই কেবল এই দুই দিন আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর আজ আমরা ৫৭৫ জনকে আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদন নিয়ে এ দিন আমদানিকারকেরা ঋণপত্র খুলতে পেরেছেন। যদিও দুই দিনের কথা বলা হয়েছে, তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে সময় আরও বাড়বে। এর আগে গত শনিবার থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়ে আসছিলাম আমরা।’

দেশে সাধারণত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সে হিসাবে যেদিন ঋণপত্র খোলেন, সেদিনই আমদানি করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত