Ajker Patrika

জাহাজভাঙা শিল্পে সংকট: গ্রিন ইয়ার্ডেই সম্ভাবনার হাতছানি

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৫
জাহাজভাঙা শিল্পে সংকট: গ্রিন ইয়ার্ডেই সম্ভাবনার হাতছানি

একসময় বৈশ্বিক ভাঙা জাহাজের ৩০ শতাংশ কাজই হতো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলে। সেখানে দেখা মিলত তীরে ভেড়ানো মহাশক্তিশালী অসংখ্য জাহাজ, যেগুলোর বুকে উঠে শত শত শ্রমিক দিনরাত ইস্পাত টুকরা টুকরা করছেন। টনকে টন লোহার গর্জন, গ্যাস কাটারের ঝলকানি, রডভর্তি ট্রাকের দীর্ঘ সারি—সব মিলিয়ে সাগরের কিনার জুড়ে যেন জাহাজভাঙা শিল্পের অন্য রকম কোলাহল। আজ সেই ইয়ার্ডগুলো একে একে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে। কারণ, সমালোচনার বাইরে ছিল না এই খাত। পরিবেশদূষণ, শ্রম শোষণ এবং দুর্ঘটনার কারণে বারবার আলোচনায় এসেছে। এখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানামুখী সংকট এবং চাপের মুখে সেখানে পতনের চিত্র প্রকট। বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক ইয়ার্ড, কমে গেছে খাতটির ব্যবসার পরিধি এবং বেকার হয়েছে প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক। তবু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কিছু উদ্যোক্তা ব্যবসার নিয়ম মেনে টিকে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। ঝুঁকিমুক্ত, সবুজ বিনিয়োগে হাত বাড়িয়েছেন। মন্দার মাঝেও পরিবেশবান্ধব জাহাজভাঙা শিল্পে ‘গ্রিন ইয়ার্ড’ উদ্যোগ নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা, পরিবেশদূষণসহ নানা কারণে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা শিল্পের আগের রমরমা দিনগুলো আর নেই। কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকটের কারণে অনেক ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে নিবন্ধিত ইয়ার্ডের সংখ্যা মাত্র ৮১; এগুলোর মধ্যে ২০-২৫টি সক্রিয় থাকলেও গ্রিনে রূপান্তর হওয়া ইয়ার্ডের সংখ্যা ১৭। আশার দিক হচ্ছে, শতভাগ গ্রিন ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা হলে পরিবেশদূষণ ও মানুষের প্রাণ-অঙ্গহানির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

গত কয়েক বছরে শতাধিক ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় এই খাত ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসার পরিধিও কমে গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেআর গ্রুপের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু বলেন, একটি ইয়ার্ডে গড়ে কমপক্ষে ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। গত ১০-১২ বছরে বন্ধ হওয়া প্রায় ১৪০টি কারখানার কমপক্ষে অর্ধলাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।

এর প্রভাব পড়েছে জাহাজভাঙা শিল্পে। বিএসবিআরএর তথ্যমতে, ২০২১ সালে ২৮০টি জাহাজ আমদানি হয়েছিল, যেখানে স্ক্র্যাপ লোহার পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ টন। ২০২২ সালে তা কমে ১১ লাখ টন (১৫০টি জাহাজ), ২০২৩ সালে ১০ লাখ টন (১৭৩টি জাহাজ), ২০২৪ সালে ৯ লাখ টন (১১৪টি জাহাজ) এবং চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৫ লাখ টন (৬৩টি জাহাজ) স্ক্র্যাপ আমদানি হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা অতিমারির সময়ও দেশ একাই বিশ্বের ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ রিসাইকেল করেছিল। ২০২১ সালেও বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল।

জাহাজভাঙা খাতের প্রবীণ উদ্যোক্তা ও বিএসবিআরএর সাবেক সভাপতি আবু তাহের বলেন, ১৯৬০ সালে এক ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের উপকূলে আটকা পড়ে গ্রিক জাহাজ এমভি আলপাইন। ১৯৬৫ সালে স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে তা ভেঙে স্টিলের কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগানো হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত একটি পাকিস্তানি জাহাজও স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি হয়। এভাবেই চট্টগ্রামে জাহাজভাঙার কার্যক্রম শুরু হয়।

আশির দশকে ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠে। ইয়ার্ড এলাকার মানুষের আয়-উপার্জন বাড়ে, হাজার রকম কাজ ও পণ্যের ব্যবসা গড়ে ওঠে, ফলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। জাহাজভাঙা পণ্যের বেচাকেনায় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যুক্ত। লোহা প্রায় সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। ক্ষতিকর বর্জ্য ছাড়া জাহাজের কোনো অংশ ফেলনা নয়। নিলামে পাওয়া পণ্য ছোট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর হাতে পৌঁছায়। চট্টগ্রামের বাঁশবাড়িয়া থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট, সাগরিকা, পশ্চিম মাদারবাড়ী, কদমতলী ও মুরাদপুরে এসব পণ্য বিক্রি হয়। ঢাকার ধোলাইখাল ও সদরঘাটেও পৌঁছায়।

এক জাহাজে থাকে রি-রোলিং মিলের কাঁচামাল, বড় পাইপ, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, আসবাব, জেনারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, কম্পিউটার, টেলিভিশনসহ নানা পণ্য। রপ্তানিযোগ্য দামি অংশ প্রপেলার, তামা, পিতল, মরিচারোধী ইস্পাতও বিক্রি হয়।

তবে শিল্পটি সমালোচিতও। শ্রম শোষণ, পরিবেশদূষণ ও দুর্ঘটনার কারণে বারবার আলোচনায় এসেছে। সরকারের উদ্যোগে নানা আইন ও নিয়মের মাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা চলছে। পরিবেশবাদীদের দাবির মুখে দূষণ ও ঝুঁকিমুক্ত শিল্প গড়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং ২০০৯ সালে চীনে অনুষ্ঠিত হংকং কনভেনশন অনুযায়ী, ২৬ জুনের মধ্যে সব জাহাজভাঙা কারখানাকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিএসবিআরএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমজাদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ পর্যন্ত মাত্র ১৭টি ইয়ার্ড গ্রিন সনদ পেয়েছে, আরও ১৫-২০টি গ্রিন হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আগামী নভেম্বরে আইএমওর সভায় এ বিষয়ে আরও ছয় মাস সময় চাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপরও যারা মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হবে, তাদের ইয়ার্ড বন্ধ করে দিতে হবে।

সাত বছর আগে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড প্রথম গ্রিন ইয়ার্ডে নাম লেখায়। এরপর এসএন করপোরেশন, কবির স্টিল লিমিটেড, কেআর শিপ রিসাইক্লিং, ম্যাক করপোরেশন, জনতা শিপ ব্রেকিং, এইচএম শিপিং, ফেরদৌস স্টিল ও বিওবি শিপ রিসাইক্লিং গ্রিনে রূপান্তরিত হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, একটি গ্রিন ইয়ার্ড স্থাপনে ২০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ১৭টি গ্রিন ইয়ার্ডে কমপক্ষে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এর সবই উদ্যোক্তাদের নিজস্ব উদ্যোগে অর্থায়ন হয়েছে, কিন্তু সবার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

বর্তমান বাজারে প্রতি টন মেল্টিং স্ক্র্যাপ ৪৬ হাজার টাকা, প্লেট ৬১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের মাসে স্ক্র্যাপ ৬১ হাজার, প্লেট ৭৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। চাহিদা কমায় টনে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা দাম কমেছে। সমিতির সভাপতি আমজাদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম ৪৫০-৫৫০ ডলার, তবে নির্মাণ খাতের স্থবিরতার কারণে চাহিদা কম। ফলে লোকসান হচ্ছে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী শাহিন বলেন, ২৬ জুনের মধ্যে গ্রিন ইয়ার্ড হওয়া ইয়ার্ডগুলোই বিশ্ববাজার থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে পারছে। শুরুর দিকে অনীহা থাকায় ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে গেছে। আগামী দশকে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার জাহাজ স্ক্র্যাপিংয়ের জন্য আসবে। ব্যবসায়ীরা গ্রিন ইয়ার্ড তৈরিতে মনোযোগ না দিলে বিশাল বাজার হাতছাড়া হবে। তিনি সরকারকে এই খাতে প্রণোদনা দেওয়ারও আহ্বান জানান।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত