Ajker Patrika

ভয় দেখাচ্ছে কুশিয়ারার ভাঙন

  • পাউবো বলছে, উজানের ঢল ও বৃষ্টির কারণে বাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
  • কোথাও কোথাও ৫০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে।
  • জেলায় জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ০৭: ৩৬
পাহাড়ি ঢলে ধসে গেছে সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাহাড়ি ঢলে ধসে গেছে সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা

উজানের ঢল নেমে আসছে সিলেট অঞ্চলে। এতে অঞ্চলের কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়ছে। নদীটির ডাইকে (নদী রক্ষা বাঁধ) ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামগুলোয়। এর ফলে প্রায় ১০০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে মৌলভীবাজারে মনু নদের পানি বাঁধ উপচে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। আর উজানের ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গতকাল সোমবার কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে। এতে উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর, খানপুর, আলীপুর, নতুন কসবা, কাতিয়া, পাইলগাঁও, আলাগদি, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার, কদরপাড়াসহ প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে রানীগঞ্জ বাজারে ঢুকেছে। এই বাজারের ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, বাজারে এখন হাঁটুসমান পানি। অনেকের দোকানে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরকত উল্লাহ বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি রয়েছে। তবে এখনো কোনো পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।’

সিলেটের জকিগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারতের বরাক নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর ডাইকের তিনটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউপির রারাই গ্রামের ডাইক ও ভোররাতের দিকে একই ইউনিয়নের বাখরশাল গ্রামের ডাইক এবং গতকাল সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউপির লোহারমহল গ্রামের ডাইক ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে আশপাশের ২৫ থেকে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দী গ্রামের ডাইকের অংশ ধসে পড়েছে নদীতে। জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতির চক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দী, আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক জায়গায় ডাইকের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের প্রায় ১০০ ফুট বাঁধ, বাখরশাল গ্রামে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট বাঁধ এবং খলাছড়া ইউপির লোহারমহল এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ বাজারেও পানি প্রবেশ করেছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট জানায়, সিলেটের তিনটি নদীর ৫ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে ১৮৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার এবং লোভা নদীর লোভাছড়ায় ১১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একই সময়ে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার শেরপুর পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার, ডাউকির জাফলং পয়েন্টে ২৯৬ সেন্টিমিটার, সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই দিন ধরেই কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন প্রায় ২ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে ৮ কিলোমিটারের এই বাঁধ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

এদিকে মৌলভীবাজারে গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মনু নদের পানি বাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাউবো সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টির কারণে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার রাজনগর ও সদর উপজেলা অংশে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার-শমশেরনগর সড়কের শিমুলতলা অংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর, আব্দুল্লাহপুর, রহিমপুর, বঙ্গেরচর, বীরচন্দ্রপুর, সাহেবনগর এবং মোগড়া ইউনিয়নের আওড়ারচর, সেনারবাদী, ধাতুরপহেলা, বাউতলা, উমেদপুর, আদমপুর, রাজেন্দ্রপুর, ছয়গড়িয়া, জয়নগর, খলাপাড়া এবং মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ইটনা, আইড়লসহ অন্তত ১৯টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দরের আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের প্রায় ১০০ মিটারজুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘গুলি কর’ বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনায় ২ ভাড়াটে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন ভূঁইয়ার গাড়িতে হামলার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগ।

বান্দরবান সদর উপজেলার সিকদারপাড়া এলাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)। তাঁরা নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিম জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার দুজন এবং পলাতক একজনসহ মোট তিনজন হামলার ঘটনায় জড়িত। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার জন্য তাঁদের ভাড়া করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ‘এক ব্যক্তি’ টাকার বিনিময়ে ওই তিনজনকে ভাড়া করে এই ঘটনায় ঘটান। কী কারণে এবং কত টাকায় ওই ব্যক্তিদের ভাড়া করা হয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, গত ৪ ডিসেম্বর সকালে প্রাইভেট কারে চড়ে অফিসে যাচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান খান ও বদরুল আরেফিন ভূঁইয়া। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় পৌঁছালে তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে হঠাৎ সামনে থেকে তাঁদের গতি রোধ করে। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িতে হামলা ও কাচ ভাঙচুর শুরু করে তারা। তাদের একজনের হাতে চাপাতি ছিল। গাড়ির কাছে এসে প্রথমে চাপাতি দিয়ে গাড়িতে কোপ দেয় একজন। এ সময় তারা ‘গুলি কর, গুলি কর’ বলে চিৎকার করতে থাকে। হামলা ও গুলি করার হুমকির মুখে ওই দুই কর্মকর্তা কোনোমতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পাশের একটি গলিতে আশ্রয় নেন।

হামলার পর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ডবলমুরিং থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পরই মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল ঘটনার সূত্র উদ্‌ঘাটন এবং হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে বান্দরবানের সিকদারপাড়া এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হামলার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরিকল্পনা করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

ডিসি মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজনের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কোনো পূর্বশত্রুতা ছিল না। হামলাকারীদের কত টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল, আমরা এখনো জানতে পারিনি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে যিনি ভাড়া করেছিলেন, তাঁর বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। হামলার সময় যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ওই (ভাড়া করা) ব্যক্তির। তদন্তের স্বার্থে তাঁর পরিচয় এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’

এদিকে হামলার পর কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেছিলেন, অবৈধভাবে পণ্য খালাসে বাধা দেওয়ার কারণেই চট্টগ্রামে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি চালান জব্দ করার কারণে একটি সংঘবদ্ধ মহল তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় মা-মেয়ে খুন: আগের চুরির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার হন আয়েশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আয়েশা আক্তার
আয়েশা আক্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ মাস আগের এক জিডিতে উল্লেখ থাকা গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে। আয়েশার পরিচয় লুকানোর চেষ্টার কারণে সূত্রহীন ছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর গত বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাঁকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর স্বামী রাব্বীও।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ এই জোড়া খুনের মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার গৃহকর্মী আয়েশাকে ৬ দিন ও তাঁর স্বামীকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার নিজেদের ফ্ল্যাটে গত সোমবার সকালে খুন হন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর একমাত্র সন্তান নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। এ ঘটনায় সেদিন রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম। খুনের মাত্র চার দিন আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই বাসায় কাজ নিয়েছিলেন আয়েশা।

পুলিশের সূত্র জানায়, ঘটনার পর ভবনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে আয়েশার ভবনে প্রবেশ এবং সকাল ৯টার পর স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে একজনের বের হওয়ার তথ্য মেলে। তবে তাঁর মুখ ছিল ঢাকা। আয়েশার মোবাইল নম্বর, ছবি, চেহারার বর্ণনা, ঠিকানা—কিছুই ছিল না পুলিশের কাছে। ফলে তদন্তের শুরুতেই অন্ধকারে হাতড়াতে হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, আয়েশার চুরির অভ্যাস নতুন নয়। এর আগে জুলাইয়ে কাছাকাছি আরেকটি বাসায় ৮ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল মোহাম্মদপুর থানায়। সেখানে অভিযুক্তের গলায় পোড়া দাগ থাকার তথ্য ছিল।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, আগের একটি জিডির নথি ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় এমন এক গৃহকর্মীর নাম আয়েশা, যাঁর গলায় পোড়া দাগ রয়েছে। সেখান থেকেই পাওয়া যায় একটি পুরোনো মোবাইল নম্বর, যার সূত্রে সামনে আসে রাব্বী নামের একজন যুবক। তাঁর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, রাব্বীর স্ত্রীই আয়েশা, যিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন এবং জেনেভা ক্যাম্পের ভাড়া বাসায় থাকেন। এই সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হয় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আয়েশা ও রাব্বীর সম্ভাব্য অবস্থান ধরে সাভারের হেমায়েতপুর, পটুয়াখালীর দুমকী হয়ে শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাসায় কাজ শুরুর দ্বিতীয় দিনে তিনি ২ হাজার টাকা চুরি করেন। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তাঁর তর্ক-বিতর্ক হয়; তাঁকে পুলিশের দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। চতুর্থ দিন কাজে যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে করে একটি সুইচ গিয়ার চাকু নেন। চুরির বিষয়টি নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি লায়লা আফরোজকে ছুরিকাঘাত করেন। নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে নিজের রক্তাক্ত পোশাক বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে পোশাক পাল্টে সাভারের দিকে যান। পথে সিঙ্গাইর সেতু থেকে ফেলে দেন রক্তমাখা কাপড় ও চুরি করা মোবাইল।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ঘটনার সময় নাফিসা ঘুমাচ্ছিল। ধস্তাধস্তির শব্দে জেগে উঠে নিরাপত্তাকর্মীকে জানাতে ইন্টারকম ধরতেই তাকে আক্রমণ করেন আয়েশা।

পুলিশের ধারণা, কেবল ২ হাজার টাকার বিষয় নয়, আগে থেকেই আয়েশার চুরির পরিকল্পনা ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জোড়া খুন করেছেন।

পুলিশ বলছে, আয়েশার স্বামী রাব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে। গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং বিশ্বাসযোগ্য দু-একজনের যোগাযোগ নম্বর সংরক্ষণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

এদিকে গতকাল আয়েশা ও রাব্বীকে এই হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. সহিদুল ওসমান মাসুম প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে আয়েশার ৬ দিন ও তাঁর স্বামীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আদালতের সহকারী পিপি হারুন-অর-রশিদ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গৃহকর্মী আয়েশা খুনের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তবে খুনের মূল রহস্য কী, তা খুঁজে বের করতে এবং এ ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। রাব্বীও এই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সব চেষ্টা—আকুতি বিফলে, মায়ের কোলে মৃত সাজিদ

  • দুই বছরের শিশু সাজিদ গর্তে পড়ে যায় বুধবার দুপুরে।
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাজিদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোরে শিশু সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেই গর্তের গভীরতা ছিল ৩০-৩৫ ফুট। এমনটা বলা হচ্ছিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয়। তখনো মেলে না সাজিদের সন্ধান। তবে থামেনি উদ্ধারকাজ। অবশেষে রাত ৯টার দিকে তার সন্ধান মেলে। ৩২ ঘণ্টা পর সাজিদের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গত বুধবার তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা ওই গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। এরপর বেলা ২টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অভিযানে একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট। উদ্ধারকাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাত ৯টায় শিশুটিকে আমরা উদ্ধার করেছি। পরে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকেরা জানাবেন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেও ফায়ার সার্ভিস আশা করেছিল, সাজিদ বেঁচে আছে। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার খবর আসে, সে আর বেঁচে নেই।

সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেটির ব্যাসার্ধ ছিল ৮ ইঞ্চি। সরু গর্তে অক্সিজেন পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় অক্সিজেন সরবরাহ। এতে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েন উদ্ধারকর্মীরা। তবে আশার আলো নিভে গেলেও কয়েক হাজার মানুষ অপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে এসে চোখের ভাষা লুকোতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। জানান, গর্তে ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছেন—৩০ ফুটের পর জমে আছে মাটি আর খড়ের স্তূপ। স্থানীয়রা শিশুটিকে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে অজান্তেই সেসব ঠেলে দিয়েছেন ভেতরে।

শিশু সাজিদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায়। বাবা রাকিবুল ইসলাম, মা রুনা খাতুন। সন্তানটিকে একবার দেখা, বুকে জড়িয়ে ধরার আশায় ছিলেন তাঁরা। সাজিদের মা রুনা খাতুন দুপুরে ঘরে বসে ছিলেন। বললেন, ‘কছির উদ্দিন তিন জায়গা খুঁড়েছিল...দুই বছর ধরে গর্ত বন্ধ না করে রেখেছিল। কেন রেখেছিল? আমি তার বিচার চাই...কছিরের শাস্তি চাই।’

শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে, সেটিসহ পাশে একই জায়গায় আরও দুই জায়গায় গভীর নলকূপের জন্য গর্ত করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিক কছির উদ্দিন। পানি না পেয়ে সব গর্তই খোলা ফেলে রেখেছিলেন দুই বছর ধরে। আর সেই অবহেলার বলি হলো দুই বছরের সাজিদ। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গর্তটি খোঁড়া হয়েছিল ৯০ ফুট পর্যন্ত।

এত গভীরতা পর্যন্ত খনন করতে হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে। রাত ৯টায় উদ্ধারকাজ শেষ হয়। শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান। সাজিদের সন্ধান মিলল ঠিকই। তবে মৃত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে ঘরে আগুন দিলেন যুবক

 টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের জন্য টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষোভে এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম মহসিন মাদবর (২৬)। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার কাঠাদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত মহসিন মাদক সেবনের জন্য বাবার কাছে টাকা দাবি করে আসছিলেন। ঘটনার দিন তিনি আবারও টাকা চান। বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন মহসিন। স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘরের বেশ কিছু আসবাব পুড়ে যায়।

মহসিন মাদবর ওই গ্রামের হোসেন মাদবরের ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে। মহসিনকে আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টঙ্গিবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাদকাসক্ত এক যুবক মাদকের টাকার জন্য নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তাঁকে পাওয়া যায়নি, তবে আটকের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত