Ajker Patrika

সিলেটের ৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজে মেলে না চিকিৎসাসেবা

শাকিলা ববি, সিলেট
সিলেটের ৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজে মেলে না চিকিৎসাসেবা

সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের মুদিদোকানি মুজিবুর রহমান। কিছুদিন আগে গভীর রাতে তাঁর ভাবির প্রসবব্যথা উঠলে বিপাকে পড়ে যায় পরিবার। কারণ, গ্রামে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে সেখানে প্রসবকালীন সেবার ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই গভীর রাতে সিলেট শহরের ওসমানী মেডিকেল কলেজে এনে ভর্তি করান ভাবিকে। 

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাঝেমধ্যে ডাক্তার আসেন। গ্রামের নারীরা গর্ভকালীন সেবা নিতে পারলেও ডেলিভারি হয় না। যাঁরা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন, তাঁরাও ঠিক সময়ে আসেন না। দুজন আপা আছেন তাঁরা কখনো ১১টায় আসেন, আবার কখনো ১২টায়। ঘণ্টাখানেক থেকেই আবার চলে যান। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা মানে শুধু ভবনটাই আছে। মানুষের সর্দি, জ্বর, কাশি, হাত ভাঙা, পা ভাঙা, ডেলিভারি যাই হোক না কেন শহরেই যেতে হয়।’ 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট সদর উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে টুকেরবাজার, কান্দিগাঁও, মোগলগাঁও, হাটখোলা, জালালাবাদ ইউনিয়নের অবস্থান শহর থেকে বেশ দূরে। দেশের অন্য বিভাগের মতো এখানকার সদর উপজেলায় কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। সদর উপজেলা জেলা শহরের কাছাকাছি থাকে, সেই ভাবনা থেকে সেখানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়নি। ফলে বছরের পর বছর স্বাস্থ্যসেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সদর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। 

এদিকে, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের মানুষ সরকারি-বেসরকারি—দুই ধরনের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পেলেও বঞ্চিত আছে জেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। প্রাকৃতিকভাবে হাওরবেষ্টিত জনপদ বেশি এই বিভাগে। তাই এই অঞ্চলগুলো অনেক দুর্গম। এ জন্য এখানকার মানুষজনের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াও অনেকটাই দুর্লভ। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথাও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও সেবা নেই। আবার কোথাও কিছুই নেই। 

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য (বিডিএইচএস) জরিপ ২০১৭-১৮-এর তথ্যমতে, সিলেটে প্রজনন হার বেশি, শিশুমৃত্যু বেশি। এ ছাড়া সিলেটে খর্বকায় শিশু বেশি, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ সবচেয়ে কম, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা ও শিশুসেবা নেওয়ার প্রবণতাও কম এবং শিশুদের টিকাদানের প্রবণতাও কম। 

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার প্রত্যন্ত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সীমান্তঘেঁষা বান্দ্রা গ্রামের শান্তি হাজং বলেন, মধ্যনগরের সঙ্গে যোগাযোগের সড়কটি ভাঙাচোরা হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। কাছে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় দুর্গম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সড়ক দিয়ে প্রসূতি মা, শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। যার ফলে সড়কের মধ্যেই অনেক রোগী মারা যায় এবং ডেলিভারিও হয়ে যায়। 
 
হবিগঞ্জ বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দারা ছয় মাস পানি ও ছয় মাস ডাঙায় থাকেন। এখানকার বাসিন্দাদের কেউ অসুস্থ হলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও ডাক্তার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া দুঃসহ ব্যাপার। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হবিগঞ্জ নেওয়া ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার আর কোনো ব্যবস্থা থাকে না। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে। সেখানেও পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যায় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেকবার কথা বললেও তাঁরা শুধু আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন।’ 

শীতকালে মুরাদপুর ইউনিয়নের মানুষকে উপজেলা সদরে আসতে তিনবার নৌকা বদল করে কয়েক কিলোমিটার সড়ক হেঁটে তারপর যানবাহনে উঠতে হয়। গ্রামের নাইম চৌধুরী বলেন, এলাকার পাশে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তাতে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও অনেক দূরে। যোগাযোগব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে অনেক প্রসূতিকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নেওয়া যায় না। 

এ রকম নানা সংকটে জর্জরিত সিলেট বিভাগের চার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের স্বাস্থ্য খাত অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। চরম জনবলসংকটে ধুঁকছে জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। 

সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এই বিভাগে জনসংখ্যা এক কোটি আট লাখের বেশি। এখানে ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি, চার জেলায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি করে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে ৩৪ টি, ২০ শয্যাবিশিষ্ট পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তিনটি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে ২৩৪ টি। 

সারা বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার ২৮৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭৯৫ জন। স্টাফ নার্সের ৮৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৩৯ জন, সহকারী নার্সের ৮৬টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ছয়জন। নার্সিং সুপারভাইজার, মিডওয়াইফারি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্টসহ প্রায় সব পদেই প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম জনবল আছে। 
বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত নানা তথ্য জানতে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চার জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেসব এলাকার শতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁদের এলাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র। 

জানা গেছে, বিভাগের বেশির ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যা করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলের অভাবে রোগীরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। 

সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানকার স্বাস্থ্য খাত অন্য এলাকার তুলনায় পিছিয়ে। জেলা বা উপজেলা সদরের বাসিন্দারা ভালোমানের সেবা নিতে পারলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এসব এলাকায় আমরা মূলত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই কেন্দ্রগুলোয় আমাদের জনবল বলতে কোনো জায়গায় একজন স্যাকমো আছে, সঙ্গে একজন এফডব্লিউভি, কোনো জায়গায় আয়া, ওয়ার্ডবয় আছে কোনো জায়গায় নেই। কোনো জায়গায় অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে কোনো জায়গায় নাই, নৈশপ্রহরী নেই। এমতাবস্থায়ও আমরা সেবাগুলো নিশ্চিত করছি স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। ইউনিয়ন পর্যায়ে মা-শিশুকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে আমরা ২৪ ঘণ্টা ডেলিভারি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ 

সিলেটের স্বাস্থ্য খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সিলেটের উপযোগী পরিকল্পনা করার ওপর গুরুত্ব দেন ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, জনবলসংকটের পাশাপাশি পিছিয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো সিলেটের ভৌগোলিক অবস্থান। জাতীয় পর্যায়ে অন্যান্য জেলাকে নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয় সিলেটকে নিয়ে একই ধরনের পরিকল্পনা নিলে চলবে না। সিলেটের জন্য সিলেটের উপযোগী একটি পরিকল্পনা করতে হবে। যেমন সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে, ধর্মপাশাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে। প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনটি বিএনএনআরসির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতায় মিডিয়া ফেলোশিপ-এর আওতায় প্রস্তুতকৃত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি সম্মিলিত নারী প্রয়াসের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘সম্মিলিত নারী প্রয়াস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব দলের জন্য সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সভানেত্রী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনিম।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশ, চাই সুষ্ঠু নির্বাচন, চাই যোগ্য নেতৃত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে সম্মিলিত নারী প্রয়াস।

সরকারের কাছে দাবি তুলে শামীমা তাসনিম বলেন, ‘সব দলের রাজনৈতিক সুযোগ রেখে সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেটাকে আমরা বলছি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে এবং সেটি ভয়ভীতি যেন না দেখানো হয়। মানে ভোট দিতে যে আমি যাব, যেন সুস্থ অবস্থায় ফেরত আসতে পারি।’

অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে ড. শামীমা তাসনিম বলেন, বাংলাদেশে অতীতে যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে আমলা নিয়োগ এবং পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অতীতে ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

কথায় ও কাজে সৎ এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, যিনি দুর্নীতি করবেন না এবং দুর্নীতির প্রশ্রয় দেবেন না, যিনি বাংলাদেশকে একমাত্র স্থায়ী ঠিকানা মনে করবেন এবং বিদেশে কোনো ‘সেকেন্ড হোম’ রাখবেন না, আধিপত্যবিরোধী হবেন—এমন নেতৃত্ব আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সম্মিলিত নারী প্রয়াস সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার নিয়ামা ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সেক্রেটারি ড. ফেরদৌস আরা খানম, সহকারী সম্পাদক মাহসিনা মমতাজ মারিয়া, লেকচারার ড. জেবুন্নেসা, ড. মেহের আফরোজ লুৎফা, জান্নাতুন নাইম প্রমি প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি: রাকসু জিএস আম্মার

রাবি প্রতিনিধি  
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩০
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) শিক্ষক নেটওয়ার্কের ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র প্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত তৎপরতা বন্ধ হোক’ শিরোনামে দেওয়া বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় এই আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই বিবৃতির মন্তব্যে আম্মার লেখেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি কমেন্ট করেছি, ডিলিট করি নাই। তাঁরা (শিক্ষক নেটওয়ার্ক) আমার কাজকে যদি অপতৎপরতা হিসেবে দেখের, তাহলে আমিও তাঁদের বিবৃতি সন্দেহের চোখে দেখি। তাঁরা আমাকে একটি আহ্বান জানিয়েছেন, আমিও তাঁদের আহ্বান জানিয়েছি। তাঁরা এটাকে স্বাধীনতা হিসেবে দেখলে, আমিও আমার স্বাধীনতা প্রকাশ করছি।’

শিক্ষক নেটওয়ার্কের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে নানা ধরনের মবপ্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ডিনদের পদত্যাগ করানো, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানি তৎপরতা চলমান আছে। রাকসুর জিএস প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি না চেয়ে বরং ছয়জন ডিনের পদত্যাগ দাবি করেন। কেবল তা-ই নয়, নিজেই যেন “প্রশাসন” হয়ে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় ডিনদের বিরুদ্ধে হুমকি দেন, এমনকি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে নিজে পদত্যাগপত্র লিখে এনে বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ডিনদের খুঁজতে থাকেন, সম্ভবত লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে। মোট ১২ জন ডিনের প্রত্যেকেই গত আওয়ামী শাসনামলে নির্বাচিত হলেও, বাকি ছয়জন হয়তো রাকসু জিএসের বিবেচনায় “রাজনৈতিক বিবেচনায় উত্তীর্ণ”, ফলে তাঁদের পদত্যাগের দাবি ওঠেনি, তাঁদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলাও হয়নি। এই উদ্ভূত অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে “প্রগতিশীল শিক্ষক” হিসেবে পরিচিত ছয়জন ডিন দায়িত্ব পালতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে রাকসুর জিএস ভব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে বারবার ঘোষণা করতে থাকেন, লীগপন্থী শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে ঢুকলে কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যা করছেন, তা রাকসুর এখতিয়ারবহির্ভূত এবং তাঁদের আচরণও আগ্রাসী ও সন্ত্রাসীদের মতো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এর জবাবদিহি প্রত্যাশা করি। কেননা, রাকসুর নেতৃবৃন্দের এ রকম আচরণ কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি; এটা সরাসরি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতার ওপরে হামলা। এর “স্পাইরাল ইফেক্ট” পড়েছে সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।’

সার্বিক বিষয়ে রাবির বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য সৌভিক রেজা বলেন, ‘শিক্ষক নেটওয়ার্ক ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে। যদি ভিন্ন মতাদর্শের হওয়ার কারণে চাকরি চলে যেত বা পদচ্যুত করানো হতো তাহলে তো শিক্ষক নেটওয়ার্কের অনেকেরই আওয়ামী আমলে চাকরি চলে যেত। ৭৩-এর অধ্যাদেশ আমাদেরকে একটা রক্ষাকবজ দিয়েছে, যে কারণে আমরা শিক্ষকেরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার পরও আমাদের চাকরি চলে যায়নি।’

সৌভিক রেজা আরও বলেন, ‘ভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষক কর্মকর্তাদের গাছে বেঁধে রাখা, চাকরিচ্যুত কিংবা জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো একজন শিক্ষার্থীর এখতিয়ারের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এ ক্ষমতা রাখেন না। তবে শিক্ষকেরা কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইনানুযায়ী তাঁদের শাস্তি দেওয়া যেতে পারে, তবে মব সৃষ্টি করে নয়। কেউ যদি সরাসরি হামলা বা দালালি করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি এভাবে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাতক্ষীরায় জেলা আ.লীগ নেতার মনোনয়নপত্র জমা, সমর্থক আটক

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
এস এম মুজিবর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগ নেতাসহ ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আজ সোমবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিজ নিজ মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁরা।

সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামায়াতের মো. ইজ্জতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির জিয়াউর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের শেখ মো. রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ইয়ারুল ইসলাম।

আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক এস এম মুজিবর রহমান ওরফে সরদার মুজিব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পরে তাঁর পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অভিযোগে মাগফুর রহমান নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহাম্মদ আব্দুল খালেক, বিএনপির মো. আব্দুর রউফ, জাতীয় পার্টির মো. আশরাফুজ্জামান ও মাতলুব হোসেন।

এ ছাড়া এলডিপির শফিকুল ইসলাম শাহেদ, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ জাসদের মো. ইদ্রিস আলী ও এবি পার্টির জিএম সালাউদ্দীন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের মুহা. রবিউল ইসলাম, বিএনপির কাজী আলাউদ্দীন ও জাতীয় পার্টির মো. আলিপ হোসেন।

এ ছাড়া মাইনরিটি জনতা পার্টির রুবেল হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের ওয়েজ কুরনী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম এ আসফউদ্দৌলা খান, আসলাম আল মেহেদী ও ডা. শহিদুল আলম (বিএনপির বিদ্রোহী) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম, বিএনপির মো. মনিরুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির হুসেইন মো. মায়াজ, গণঅধিকার পরিষদের এইচ এম গোলাম রেজা, ইসলামী আন্দোলনের মোস্তফা আল মামুন ও আব্দুল ওয়াহেদ (বিএনপির বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর

ভোলা প্রতিনিধি
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভোলায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সোমবার বিকেলে ভোলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের নতুন বাজার এলাকায় জেলা বিজেপি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ছাত্রদলের নেতা সিফাত হত্যার প্রতিবাদ মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আল আমিন অভিযোগ করেন, মিছিলটি নতুন বাজার এলাকায় বিজেপি অফিসের সামনে পৌঁছালে সেখান থেকে মিছিল লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বিজেপি অফিসে হামলা চালায়।

বিজেপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক পার্টির জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সামছুল আলম অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের দলীয় অফিস বন্ধ ছিল। বিজেপির জনসমর্থনে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে।

ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিজেপি অফিসে হামলা কিংবা কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই।’ তিনি আরও জানান, কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সেটা এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি।

ভোলার জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত