Ajker Patrika

লোকচক্ষুর আড়ালে সিলেটের এক সমৃদ্ধ জাদুঘর

শাকিলা আক্তার
লোকচক্ষুর আড়ালে সিলেটের এক সমৃদ্ধ জাদুঘর

সদর(সিলেট): সিলেটের জকিগঞ্জে ১৮৩৬ সালে মানুষ বেচা–কেনা হতো। এ কোনো কল্পকাহিনি নয়। বিক্রির দলিল পর্যন্ত আছে। আর এই দলিলটি সংরক্ষিত আছে সিলেটের ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরে। সিলেটের দরগা গেটে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের পঞ্চম তলায় অবস্থিত এ জাদুঘরে রয়েছে এমন আরও অনেক মূল্যবান দলিল, স্মারক ও নিদর্শন। রয়েছে লাখো বছরের পুরোনো গাছের জীবাশ্ম (পাথর), সোনার জরি খচিত মসলিন শাড়ি, দুই মণ ওজনের হাতির দাঁত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহান সৈনিক সূর্য কুমার সেনকে (মাস্টার দা) ধরিয়ে দিতে ঘোষিত পুরস্কারের বিজ্ঞাপনসহ অনেক কিছু।

ছবি: শাকিলা আক্তারসিলেট নগরীর ভেতরেই এমন একটি সমৃদ্ধ জাদুঘর রয়েছে, যার তথ্য অনেকের কাছেই অজানা। জাদুঘরটিতে রয়েছে তেরো শতকের কালো পাথরের তৈরি তৈজসপত্র, শিলালিপি, তাম্রলিপি, ১৮৮৩ সালের হস্তচালিত ছাপার মেশিন, ফারসি কাবিন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত রকেট লঞ্চারের ক্যাপসুলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, জুলিয়াস সিজারের সময়ের মুদ্রাসহ বহু মূল্যবান নিদর্শন। অজস্র মূল্যবান নিদর্শন থাকলেও জাদুঘরটি অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে। এ নিয়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও নেই কোনো প্রচার কার্যক্রম।

ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নিদর্শন। ছবি: শাকিলা আক্তারকোনো একটি অঞ্চল বা জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ ও তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক অবিকল্প মাধ্যম জাদুঘর। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞানের বিস্তারের ক্ষেত্রেও জাদুঘরের ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরের যাত্রা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। নামটিও সবার জানা—আলেক্সান্দ্রিয়া। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সেই জাদুঘর নিয়ে গল্প–গাথাও কম নেই। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সময়টি আরও অনেক পরের। এখনো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে বহু জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেটের এই ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরও অনুরূপ।

ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নিদর্শন। ছবি: শাকিলা আক্তারভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদের পুরোনো স্মারক ও নিদর্শন সংগ্রহের প্রতি ঝোঁক ছিল। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত সিলেটের এই জাদুঘরে ঠাঁই পাওয়া নিদর্শনের ২০ শতাংশ সংগ্রহই তাঁর। বাকি ৮০ শতাংশ সংগ্রহ তাঁর নাতি ও বর্তমানে এই জাদুঘরের পরিচালক মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরীর। ১৯৮০ সালে ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ মারা যান। মৃত্যুর পর তাঁর কাছে থাকা সংগ্রহ নাতি মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরীকে ওসিয়ত করে যান। সেই সব সংগ্রহ এবং নিজের করা কিছু সংগ্রহ নিয়ে ২০০৪ যাত্রা করে জাদুঘরটি। বর্তমানে এটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘর এখনো কোনো সরকারি আনুকূল্য পায়নি। অবশ্য সে চেষ্টাও এখন পর্যন্ত হয়নি।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাদুঘর অবশ্য নতুন কিছু নয়। বরং ব্যক্তির উদ্যোগেই যাত্রা করেছিল পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম জাদুঘর—আলেক্সান্দ্রিয়া। সরকারি বা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাদুঘরের ধারণা এসেছে অনেক পরে। দেশে দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু জাদুঘর রয়েছে। নতুন করে হচ্ছেও অনেক। এই সব জাদুঘর আবার এক রকম নয়। কোনো কোনোটি বিশেষ বিশেষ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের লোকশিল্প জাদুঘরই এর বড় প্রমাণ। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা জাদুঘরের গুরুত্ব বিবেচনায় রাষ্ট্র বা সরকার কখনো কখনো এগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। লক্ষ্য থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞানের বিস্তার। সাধারণ মানুষের মধ্যে জাদুঘর নিয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ঘটা করে পালন করা বিশ্ব জাদুঘর দিবসও। আজ সেই বিশ্ব জাদুঘর দিবস, যার যাত্রা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১৮ মে। বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ডিজিটাল পরিসরেই এবারের আয়োজন সীমাবদ্ধ।

ছবি: শাকিলা আক্তারঅবশ্য প্রতি বছরই বাংলাদেশে যে বিশ্ব জাদুঘর দিবস পালন হয়, তা অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা বলা যায়। তা না হলে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জাদুঘরগুলোয় সংরক্ষিত নিদর্শনগুলো যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর প্রায়ই পত্রিকার পাতায় উঠে আসত না। থাকত না অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার অভিযোগ। এর গুরুত্ব পুরোপুরি অনুধাবন করলে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত জাদুঘরগুলো দেখভালের জন্যও আলাদা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের দেখা মিলত। কিন্তু এমন কোনো কিছুর দেখা আজও বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি। তেমনটি হলে ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরটির কথা অন্তত মানুষ জানত। কিন্তু সে ধরনের কোনো উদ্যোগ প্রশাসনের কোনো স্তর থেকেই নেই।

ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ জাদুঘরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নিদর্শন। ছবি: শাকিলা আক্তার২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫ সালে জাদুঘরটি সিলেটের দরগা গেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের পঞ্চম তলার বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। পারিবারিকভাবেই জাদুঘরটি পরিচালিত হচ্ছে বলে এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তেমন কোনো প্রচার নেই। অবশ্য আগ্রহীরা ঠিকই খুঁজে নেন জাদুঘরটিকে। কারণ এতে থাকা সংগ্রহের বৈচিত্র্য। সরেজমিনে দেখা যায়, এই জাদুঘরে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মাথার খুলি, বিভিন্ন শতাব্দীর বন্দুক, পিস্তল, এক হাজার বছর আগের রাজা চন্দ্র দেবের আমলের নাগরি ভাষায় লেখা তাম্রলিপি, ত্রিপুরার মহারাজা ও মহারানির বিভিন্ন দলিলসহ বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক দলিলপত্র। এখানে রয়েছে নবাব আলিবর্দী খাঁর আমলের হাতির দাঁতের হাত পাখা, বিভিন্ন দেশের প্রাচীন ব্যাংক নোট, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ব্যাংক নোট, শতাধিক বছরের পুরোনো দেয়াল ঘড়ি, হাত ঘড়ি, ১৮৬৬ সালে জকিগঞ্জ উপজেলার উত্তরকুলের জমিদার পত্নী বেগম মুসিম রাজা চৌধুরীর ব্যবহৃত মিনি ড্রেসিং টেবিল, ১ হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো কালো পাথরের তৈরি তৈজসপত্র, বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত ক্যামেরা, ২ হাজার বছর আগের জুলিয়াস সিজারের সময়ের মুদ্রা, ১৮৫৩ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের মুদ্রা ও ১৭১৯ সালে জৈন্তাপুর থেকে প্রাপ্ত বাংলা হরফে এবং সাংস্কৃতিক উচ্চারণে লেখা শিলালিপি ও প্রতিলিপি। রয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জের ঐতিহাসিক গয়বী দিঘি থেকে প্রাপ্ত শিলালিপি, যার একপাশে আরবি লিপি এবং অন্য পাশে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি খোদাই করা। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ব্যবহৃত পানদান, হাতির দাঁতের তৈরি খুঁটির খড়ম, হাতির দাঁতের তৈরি চীনা খেলা মাহজং–এর দান, নেপালের রাজা বিক্রম শাহদেব কর্তৃক মতিন উদ্দীন আহমদকে উপহার দেওয়া হাতির দাঁতের তৈরি দাবা খেলার গুটি থেকে শুরু করে গরুর গাড়ি পর্যন্ত এমন অজস্র নিদর্শন এখানে রয়েছে, যা এই প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিতে পারে অতীত সময়ের। ইতিহাসের গলি–ঘুপচিতে চলার সাহস ও উৎসাহ জোগানোর এক অনায়াস ক্ষমতা রয়েছে জাদুঘরটির। কিন্তু সেই ক্ষমতার খুব কমই প্রয়োগ হচ্ছে শুধু এ সম্পর্কিত তথ্যের যথাযথ প্রচারের অভাবে।

ছবি: শাকিলা আক্তারএ বিষয়ে জাদুঘরটির পরিচালক মোস্তাফা শাহ জামান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নানার ইচ্ছা পূরণ করতেই এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে স্থানীয় দর্শনার্থীরা খুব একটা না এলেও বিদেশি অনেক দর্শনার্থী আসেন। বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও আসেন। তবে এখন করোনা মহামারির কারণে জাদুঘরটি নিয়মিত খোলা রাখা হয় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

  • জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২২ লাখ ৭ হাজার
  • সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি
  • মাধ্যমিকের সব বই না আসায় এ বছরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা শিক্ষকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।

গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্যটকের বাড়তি চাপে ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে

  • তিন দিনের ছুটিতে হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষ বুকড
  • ২০২৫-কে বিদায় ও ২০২৬-কে স্বাগত জানাতে পর্যটকের চাপ আরও বাড়বে
  • বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কক্সবাজারে যানজট
কক্সবাজার প্রতিনিধি
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। বরাবরের মতোই অবকাশযাপনে ভ্রমণপিপাসুরা এবারও দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করবেন। তবে শনিবারেই চাপ কমবে না। পর্যটকের এই ঢল আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা ভিড় করবেন।

হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের মালিকেরা বলছেন, বুধবার বিকেল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোয় শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। মাঝারি মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

সাগরপারের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডেতে কক্ষ আছে ২৪৫টি। তাদের প্রায় সব কক্ষ শনিবার পর্যন্ত বুকিং আছে। হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক (রিজার্ভেশন) আবু তালেব শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিন দিনের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।

কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ, সেন্ট মার্টিন ও আশপাশের এলাকার ৬০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ আছে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময়ে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিপুল পর্যটক সমাগমে যেন কেউ থাকা-খাওয়ায় বাড়তি অর্থ আদায় না করে তার জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকের আনাগোনায় তিন কিলোমিটার সৈকত মুখর। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শান্ত সৈকতে কেউ গোসলে নেমেছেন, কেউ জেটস্কি করে দূর সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার চেয়ার-ছাতায় বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে সমুদ্র দর্শনে সময় কাটাচ্ছেন। গোসলে নামা বিপুল পর্যটকদের নানাভাবে সতর্ক করছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকের বাড়তি চাপে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী সড়ক, মেরিন ড্রাইভ ও শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

পর্যটকেরা শহরের এই তিন পয়েন্টের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সৈকতে ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন।

কুমিল্লার হোমনা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে বড়দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে তিন দিনের জন্য ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।’ তাঁর মতো পরিবার নিয়ে অনেকেই বেড়ানোর জন্য বের হয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বাড়বে—বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। কোথাও পর্যটক হয়রানির খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেটে জুয়া খেলা অবস্থায় আটক ৭

সিলেট প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটে জুয়া খেলা অবস্থায় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কানিশাইল ১ নম্বর রোডের মারুফ টি স্টল নামক দোকানে অভিযান পরিচালনা করে তির শিলং-জাতীয় জুয়া খেলা অবস্থায় তাঁদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কানিশাইলের সজীব মিয়ার কলোনির রমিজ আলীর ছেলে তাহের মিয়া (৩০), উসমান মিয়ার ছেলে শামীম (২০), ইমন মিয়ার কলোনির মো. আব্দুল করিম তালুকদারের ছেলে মো. স্বপন মিয়া (৫৫), রঙ্গ মিয়ার ছেলে জসিম (৪৫), জামাল উদ্দিনের ছেলে আল আমিন (২৭), আব্দুর রশিদের ছেলে মো. বাদল (৩৮) এবং আবুল কালামের ছেলে সুজাত মিয়া (৩৫)।

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনায় মা হত্যায় ছেলে গ্রেপ্তার

খুলনা প্রতিনিধি
মো. রিয়াদ খান।  ছবি: সংগৃহীত
মো. রিয়াদ খান। ছবি: সংগৃহীত

খুলনায় শিউলী বেগম হত্যা মামলায় ছেলে মো. রিয়াদ খানকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তাঁকে খুলনা র‌্যাব-৬ এবং ৭-এর যৌথ অভিযানে ফেনী জেলার সদর থানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার রিয়াদ শিউলী বেগমের একমাত্র ছেলে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২ লাখ ৫ হাজার ৮০ টাকা, দুটি আইফোন, একটি স্মার্টফোন ও একটি এয়ারপড জব্দ করা হয়।

র‌্যাবের পাঠানো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে, নিহত শিউলি বেগম সৌদি আরবপ্রবাসী ছিলেন। গত ২৭ অক্টোবর দুই মাসের ছুটিতে বাংলাদেশে আসেন। পরে নগরীর ট্যাংক রোডের বাসিন্দা রবিউল ইসলামের বাড়ির নিচতলায় ছেলে রিয়াদ খান এবং দ্বিতীয় স্বামী সাগরকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

দেশে আসার ১০-১২ দিন পরে উত্তরা ব্যাংক খুলনা শাখা থেকে পৌনে ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে আলমারিতে রেখে দেন।

৯ ডিসেম্বর রাতে শিউলী বেগমের বড় মেয়ে রুবিনা আক্তার এবং তাঁর স্বামী রাজিব রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতে চলে যান। ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে শিউলী বেগমকে ফোনে না পেয়ে রুবিনা আক্তারকে খোঁজ নিতে বলেন তাঁর স্বামী।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে তাঁর সন্ধান না পেয়ে ওই দিন রাতে স্থানীয়দের সহায়তায় তালা ভেঙে ঘর থেকে শিউলী বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরে তাঁর ঘর থেকে পৌনে ৭ লাখ টাকা উধাও হয়ে যায়। শিউলী বেগম হত্যার পর থেকে একমাত্র ছেলে রিয়াদ খানেরও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই রায়হান গাজী বাদী হয়ে শিউলী বেগমের ছেলে রিয়াদ খানকে আসামি করে মামলা করেন। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব খুলনা-৬ ও ৭-এর একটি দল তাঁকে ফেনী সদর থেকে গ্রেপ্তার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত