Ajker Patrika

নীলফামারীর ডিমলা

‘বোমা মেশিনে’ হুমকিতে বাঁধ সেতু বসতভিটা

  • তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার পর তাতে খননযন্ত্র বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু।
  • জড়িতরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস করেন না কেউ।
  • বালু তোলার ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার স্থানীয় সাংবাদিক।
মাসুদ পারভেজ রুবেল, ডিমলা (নীলফামারী)
শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বোমা মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। প্রকাশ্যে এ কর্মযজ্ঞ চললেও তা বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় প্রশাসনের। এতে হুমকিতে পড়েছে পাশের কৃষিজমি। সম্প্রতি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের পিয়াজিপাড়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বোমা মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। প্রকাশ্যে এ কর্মযজ্ঞ চললেও তা বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় প্রশাসনের। এতে হুমকিতে পড়েছে পাশের কৃষিজমি। সম্প্রতি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের পিয়াজিপাড়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি ও নদ-নদী থেকে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। এতে সেতু, বাঁধ, আবাদি জমি ও বসতভিটা বিলীন হওয়ার হুমকিতে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু তোলার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের পিয়াজি পাড়া এলাকায় এক মাস ধরে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন মামুন ও মাসুম নামের স্থানীয় দুই ব্যক্তি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মামুন ও মাসুম স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে সমস্যায় পড়তে হয়। নানাভাবে হয়রানি করা হয়।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, কোনো উন্মুক্ত স্থান, ফসলি জমি, সেতু, বাঁধ, সড়ক ও নদীর তলদেশ থেকে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি তোলা যাবে না। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করে দীর্ঘদিন ধরে মামুন ও মাসুম তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটার পর তাতে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তুলছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পিয়াজি পাড়া বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই ফসলি মাঠের মধ্যখানে বোমা মেশিন বসিয়ে ৩০-৪০ ফুট গভীর গর্ত করে পুকুর খননের নামে বালু তোলা হচ্ছে। তার চারপাশে রয়েছে আবাদি জমি ও বসতবাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, টানা এক মাস ধরে ওই মাঠে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ওই বালু বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। বালু তোলার স্থানে গভীর গর্ত হয়েছে। এতে আশপাশের কৃষিজমি ও বসতভিটা ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত শনিবার সেখানে বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হন ‘আজকের বাংলা’ পত্রিকার ডিমলা উপজেলা প্রতিনিধি ইমরান খান। ভুক্তভোগী ইমরান জানান, বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ছবি তোলায় তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন বালু ব্যবসায়ী মামুন ও মাসুম।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন ও মাসুম দাবি করেন, নিজের পুকুর থেকে বালু তুলে পাশের কয়েকটি পুকুর ভরাট করছেন তাঁরা।

এ জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তাঁরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই বালু তুলছেন তাঁরা। প্রশাসন অনুমতি না দিলে এক মাস ধরে কীভাবে বালু তুলছেন—পাল্টা প্রশ্ন করেন তাঁরা।

সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন ও মাসুম বলেন, তাঁদের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই ছবি তোলার কারণে ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে একইভাবে উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দোহলপাড়া এলাকায় তিস্তা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের নিচ থেকে বোমা মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন আব্দুস সামাদ নামের একজন। এতে বাঁধ ধসে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে অভিযুক্ত সামাদ বলেন, ‘শ্রমিকের খরচ বেশি, তাই বসতভিটা ভরাট করতে মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করছি।’

এ ছাড়া ডিমলা ও হাতীবান্ধা উপজেলার সীমান্তে তিস্তা ব্যারাজের নিচ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহের মূল নালায় (সিলটাপ) পাঁচটি বোমা মেশিন বসিয়ে ৩০-৪০ ফুট গভীর থেকে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। বিক্রির জন্য ট্রাক্টরে ভরে এসব বালু যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

নদীসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে বর্ষাকালে চরম হুমকির মুখে পড়বে তিস্তা ব্যারাজ, সেচ প্রকল্পসহ সেচনালার আশপাশের কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও বসতবাড়ি।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হাসান বলেন, শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচনালা খনন ও বালু উত্তোলন করলে তা হবে আত্মঘাতী। এতে সামান্য বন্যায় সেচ প্রকল্প নদীতে বিলীন হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ড্রেজার নষ্ট, তাই শ্যালো মেশিন দিয়ে খননকাজ চলছে। বালু তোলার যন্ত্র দিয়ে কীভাবে খননকাজ হয় জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর জেগে ওঠা চরের ফসলি জমি কেটে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন এসব স্থান থেকে শতাধিক ট্রাক বালু সরবরাহ হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এতে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ এবং চরের আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। বালুবাহী ট্রাক্টরের কারণে তীর রক্ষা বাঁধ কাম রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

একইভাবে নাউতারা নদীর শ্মশানঘাট এলাকায় নদীর তীরঘেঁষা ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে আরেকটি প্রভাবশালী চক্র। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, তিস্তা ব্যারাজের আশপাশ, আনন্দ বাজার, তিস্তা বাজার, চড়খড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালীগঞ্জ, দোহলপাড়া, পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, নাউতারা নদীসহ বিভিন্ন এলাকায় বালু উত্তোলনে ৩০-৪০ জন জড়িত।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের দায়ে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। কৃষিজমি এবং বাঁধ এলাকা থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়ামাত্রই তা জব্দ করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ছাত্রদল আপনার মতো আম্মারকে ৩০ মিনিটে বের করে দিতে সক্ষম’, ভিডিও ভাইরাল

রাবি প্রতিনিধি 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের স্বাগত মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের স্বাগত মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্রদল আপনার মতো ‘ফুটেজখোর’ সালাহউদ্দিন আম্মারকে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দিতে সক্ষম বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ।

শাকিলুর রহমান আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে রাকসুর নামধারী কিছু নেতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিভিন্ন ডিনের কার্যালয়, এমনকি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে স্বাগতমিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এদিকে রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের উদ্দেশে ছাত্রদল নেতার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই বক্তব্যের প্রতিবাদে সালাহউদ্দিন আম্মার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন।

সমাবেশে ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ২৫ ডিসেম্বরের পর ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবেন না, সবার সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এরপর যারা মব সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।

সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, বাংলার বাতাসে যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ ছিল, তা উপেক্ষা করে বাংলার গণমানুষের শক্তির ওপর ভর করে অনেক বছর পর তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। দেশের মানুষের মঙ্গল, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যেই তাঁর এই প্রত্যাবর্তন।

সুলতান আহমেদ আরও বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা মানেই অপসংস্কৃতি ও মব কালচারের অবসান। এটি অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের স্বপ্নকারীদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিজয় এবং দেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সূচনা। এ ছাড়া ২৫ ডিসেম্বরের পর যারা মব সৃষ্টি করবে, তাদের ধরে হাত-পা বেঁধে প্রশাসনের কাছে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মিঠু বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান ষড়যন্ত্রের আঘাতে পঙ্গুত্ববরণ করে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে তাঁকে দেশে ফিরতে দেয়নি। চাইলে তিনি নীরবে প্রবাসে জীবন কাটাতে পারতেন, কিন্তু একটি ছোট কেবিনে বসে নিরলসভাবে তিনি সারা দেশে জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ ঘটিয়েছেন। এই ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই ৫ আগস্টের বিপ্লব সম্ভব হয়েছে।

এর আগে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ছাত্রদলের নিজস্ব স্ট্যান্ডে এসে মিলিত হয়। এ সময় অন্যদের মাঝে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনায় অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে সংঘর্ষে যুবক নিহত

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
জিহাদুল ইসলাম । ছবি: আজকের পত্রিকা
জিহাদুল ইসলাম । ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার পূর্বধলায় অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জিহাদুল ইসলাম (৩২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে পূর্বধলা উপজেলায় চৌরাস্তা মোড়ে ইলাসপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজল কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত জিহাদুল ইসলাম পূর্বধলার সদর ইউনিয়নের ইলাসপুর গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকচালক। তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চৌরাস্তা অটোস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা নিয়ে দুই অটোচালকের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। জিহাদুল বিষয়টি সমাধান করতে গেলে অটোচালক নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। স্থানীয় লোকজন বিবাদ থামিয়ে উভয় পক্ষকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ পর অটোচালক নিজাম উদ্দিন দেশীয় অস্ত্রসহ তাঁর লোকজন নিয়ে এসে জিহাদুলের ওপর হামলা করেন। এ সময় জিহাদুলের পক্ষের লোকজনও তাঁদের প্রতিহত করেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে নিজাম উদ্দিন শাবল দিয়ে জিহাদুলকে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা জিহাদুলকে উদ্ধার করে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেল রানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জিহাদুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজল কুমার সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামা ও ভাড়াকে কেন্দ্র করে অটোচালক নিজাম উদ্দিন ও জিহাদুলের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের মধ্যে আগে থেকেই জমি-সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে। জিহাদুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহত ব্যক্তির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নিলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি  
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন প্রদ্যুৎ কুমার সরকার নামের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এক নেতা। আজ সোমবার দুপুরে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে বাবার শেষকৃত্যে অংশ নেন।

প্রদ্যুৎ কুমার সরকার রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে।

গতকাল রোববার রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রদ্যুৎ কুমারের বাবা পল্লিচিকিৎসক গোপাল চন্দ্র সরকার মারা যান। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজ প্যারোলে মুক্তি পান প্রদ্যুৎ কুমার। বেলা প্রায় ২টা ৩০ মিনিটে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বেলা ৩টার দিকে তিনি নিজ গ্রামে আসেন। পরে পুলিশি প্রহরায় বাড়ির পাশে বাবার দাহকর্মে অংশ নেন তিনি।

প্রদ্যুৎ কুমারের ছোট ভাই সুকেশ কুমার জানান, বাবার মৃত্যুর পর প্যারোলে মুক্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর লিখিত আবেদন করলে বেলা

১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্যারোলে মুক্তি পান তাঁর ভাই।

জানা গেছে, এ বছরের ২ সেপ্টেম্বর নগরীর ভাড়া বাসা থেকে প্রদ্যুৎ কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

দুর্গাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা থানা থেকে অংশ নিয়েছিলাম। বিস্তারিত তথ্য জেলা পুলিশের হাতে ছিল। তারাই সব বলতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় স্ত্রীর কারাদণ্ড

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৩
মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি: সংগৃহীত

স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগে বাদীকে এক দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে আদালতের বিচারক মামুন হাসান খান এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত নারী হলেন শারমিন আক্তার। বাবার বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামে। পার্শ্ববর্তী জেলা টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মানরা গ্রামের শহীদ হোসেনের সাবেক স্ত্রী।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ নভেম্বর শারমিন আক্তার ও শহীদ হোসেনের তালাক সম্পন্ন হয়। কাবিনের অর্থ ও এক সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ শারমিনকে ১৪ লাখ টাকা দেন শহীদ হোসেন। এর দুই দিন পর (১৯ নভেম্বর) তালাকের বিষয়টি গোপন করে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা করেন শারমিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামি শহীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

গতকাল রোববার দুপুরে আসামি শহীদ ও বাদী শারমিন আদালতে হাজির হন। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে মামলাটি মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়। এরপর মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি দেন। পাশাপাশি মিথ্যা মামলা করার দায়ে শারমিনকে এক দিনের কারাদণ্ড দেন বিচারক মামুন হাসান খান।

খালাসপ্রাপ্ত শহীদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দাম্পত্যকলহের কারণে সংসার করা সম্ভব হয়নি। পরে স্ত্রীর সম্মতিতে তাঁদের মধ্যে তালাক হয়ে যায় এবং আর্থিক দেনা-পাওনা পরিশোধ করা হয়। এরপরও তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়।

আদালতে দেওয়া বক্তব্যে বাদী শারমিন আক্তার দাবি করেন, তিনি কাবিনের টাকা পেয়েছেন। তবে আগে চাকরি বাবদ শহীদ তাঁর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি মামলা করেছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় আদালতের বিচারক ওই নারীকে এক দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে আসামি শারমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকে মাথায় গুলি

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ কিনেছিলেন গ্রেপ্তার নাইম

তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে: নূরুল কবীর

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত