Ajker Patrika

কুকুর রাজা বাবুর গাড়িতে করে চলে দিলীপের ঝালমুড়ির ব্যবসা

মেহেদী হাসান ও আতিকুল ইসলাম, ফুলবাড়ী ও নবাবগঞ্জ
কুকুর রাজা বাবুর গাড়িতে করে চলে দিলীপের ঝালমুড়ির ব্যবসা

মানুষের সঙ্গে পশুপাখির ভালোবাসার অনেক নজির রয়েছে। তেমনি এক ব্যতিক্রমী পশু প্রেমিকের খোঁজ মেলেছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের আফতাবগঞ্জ ইসলামপুর গ্রামে। ওই এলাকার মৃত শচীন চন্দ্র রায়ের ছেলে দিলীপ চন্দ্র রায় (৫২)। তার ডাক নাম দিলীপ বাবু। তিনি পেশায় একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা।

দিলীপ বাবু রাস্তা থেকে একটি কুকুর ছানা কুড়িয়ে এনে ছোট থেকেই নিজের সন্তানের মতো লালন–পালন করছেন। নিজের নাম অনুসারে কুকুরের নামও রেখেছেন রাজা বাবু। সেই কুকুর এখন তার ব্যবসার সহযোগী। মনিবের সঙ্গে কুকুরের এমন ভালোবাসা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এলাকায়।

জানা গেছে, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে পাশের নাবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন আফতাবগঞ্জ ইসলামপুর গ্রামে বসবাস করেন দিলীপ বাবু। প্রায় দেড়-বছর আগে বাড়ির কাছে একটি কুকুর ছানাকে কয়েকটি কুকুর আক্রমণ করে কামড়ে দেয়। আহত ওই কুকুর ছানাকে বাড়িতে নিয়ে যান দিলীপ। স্ত্রীকে বলেন, ‘কুকুরটি আজ থেকে তোমার সন্তান। নিজের সন্তানের মতো করেই আদর-যত্নে রাখবা।’ এরপর চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন তারা। সেই থেকে তাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠে কুকুর রাজা বাবু।

কুকুর রাজা বাবুর গাড়িতে ঝালমুড়ি নিয়ে বাজারের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন দিলীপবাড়ির পাশে আফতাবগঞ্জ হাটে সপ্তাহে দুদিন ঝালমুড়ির দোকান দেয় কুকুর প্রেমিক দিলীপ। সেই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে এবং রাজা বাবুর জন্য মাছ-মাংস কেনেন তিনি। ভালো খাবার ছাড়া খায় না রাজা বাবু। সন্তানের মতোই তাকে লালনপালন করে ওই দম্পতি। রাজা বাবুর খাবার জোগাড় করতে মরিয়া দিলীপ ও তার স্ত্রী। তাঁরা না খেয়ে থাকতেও রাজি, তবুও রাজা বাবুকে অভুক্ত রাখবেন না। রাজা বাবুও তেমনি মনিব ভক্ত। 

দুই শতক জমির ওপরে একটি টিনের ছাপড়ার বাড়ি। চারদিকে টিন দিয়ে ঘেরা। বাড়ির ভেতরে একপাশে একটি শোয়ার ঘর, পাশেই ছোট করে টিনের একটি মন্দির, ঈশ্বরের ভক্তিতেও তাদের কমতি নেই। দিলীপের এক ছেলে দুই মেয়ে সন্তান। এর মধ্যে মেয়ে দুটির বিয়ে হয়ে গেছে। তারা স্বামীর বাড়িতে থাকেন। এক ছেলে ঢাকায় পোশাকশ্রমিকের কাজ করেন। বাড়িতে দিলীপ আর তার স্ত্রী ছাড়া কেউ থাকে না।

একাকিত্ব কাটাতে রাজা বাবুকে সন্তানের স্বীকৃতি দিয়েছেন তারা। সন্তান ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর ছোট্ট সংসারে আনন্দ ছড়াচ্ছে ওই রাজা বাবু। প্রতিদিন নিজ হাতে গোসল করানো থেকে শুরু করে খাবার খাওয়ানো সবই করেন দিলীপ ও তার স্ত্রী রেখা রানি। অসুখ হলে ডাক্তার ডেকে এনে চিকিৎসা করান। এমনকি রাতেও একসঙ্গে ঘুমায় তারা। নিজের সন্তানের মতোই লালনপালন করছেন কুকুরটিকে।

কুকুর রাজা বাবুর গাড়ির পেছনে দম্পতি দিলীপ–রেখাএকদিন দিলিপের মাথায় আসে রাজার জন্য একটি গাড়ি বানাবে। প্রতিদিন দোকানদারি করে মাটির খুঁটিতে খুচরা পয়সা জমাতো দিলীপ। সেই খুঁটি ভেঙে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে রাজা বাবুর জন্য একটি দুই চাকার গাড়ি বানায়।

এবার কুকুর রাজা বাবু কাজেও এসেছে মনিব দিলীপের। ঘোড়ার গাড়ির মতো তৈরি করা সেই ছোট্ট গাড়িতে করে দোকানের মালামাল, বাজার আনা নেওয়ার কাজ করে রাজা বাবু। শরীরে লাল কাপড় জড়িয়ে মনিবের সেবায় ক্লান্তিহীন ছুটে চলে রাজা। শুধু মালামাল পরিবহন নয়! মাঝে মাঝে দিলীপ হাটতে হাটতে ক্লান্ত হলে মনিবকে নিজ গাড়িতে চড়িয়ে দ্রুত গতিতে ছোটে সে। মনিবের ভালোবাসায় সেও যেন ব্যাকুল।

রাজা বাবুর মনিব দিলীপ বাবু বলেন, ‘রাজা আমার সন্তানের মতো। নিজের সন্তানের মতোই তাকে আমরা লালনপালন করছি। সে আমার সংসারে সুখ নিয়ে এসেছে। রাজার মাঝেই আমি আমার স্বপ্ন বুনি। তাকে ঘিরেই আমাদের পরিবারের সব আনন্দ। রাজা বাবু আমাদের ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। আমাদের না দেখলেই ও চিল্লাচিল্লি করে। এমনকি খাবারও খায় না।’

দিলীপের স্ত্রী রেখা রানী বলেন, ‘রাজা বাবুকে ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও ভালো লাগে না। প্রতিদিন আমি নিজ হাতে ওকে গোসল করাই, খাবার খাওয়াই। রাতে আমাদের বিছানার পাশেই ওকে বিছানা করে দিই। এরপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে রাজা ঘুমায়। মূত্রত্যাগের সময় রাজা চিল্লাচিল্লি করে। ওকে তখন বাইরে নিয়ে যাই। সে বাইরেই মলমূত্র ত্যাগ করে। সে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য। আমার সন্তানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’

রাজা বাবুকে গ্রামের সবাই চেনে একনামে। মনিবের সঙ্গে বাইরে বের হলেই রাজাকে দেখতে রাস্তায় ভিড় জমায় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ। দিন কিংবা রাত! অপরিচিত লোক দেখলেই চিৎকার করে রাজা বাবু। রাতে রাজা বাবুর চিৎকার শুনলেই চোরের হাত থেকে রক্ষায় সজাগ হয় প্রতিবেশীরা।

কুকুর রাজা বাবুকে আদর করছেন দিলীপদিলীপের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘রাজা অনেক ভালো। সে কাউকে কামড়ায় না। অপরিচিত লোক দেখলেই চিৎকার করে। আমাদের দেখলেও সে চিৎকার করে। পায়ের কাছে সে নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেয়। তবে কিছু করে না।’

আরেক প্রতিবেশী পুষ্প চন্দ্র বলেন, ‘কিছুদিন আগে রাতে চোর এসেছিল গ্রামে। রাজা বাবু বুঝতে পেরে চিৎকার শুরু করে। চোরেরা তার চিৎকার শুনে পালিয়ে যায়।’

কুকুরের সঙ্গে মানুষের এমন প্রেমে মুগ্ধ স্থানীয়রাও। রাজা বাবুর গাড়িতে শিশুরাও চড়ে আনন্দ খেলা করে। মানুষের সঙ্গে কুকুরের এমন ভালোবাসা কেউ দেখেনি।

স্থানীয় ললিনি কান্ত বলেন, ‘অনেকেই পশুপাখি পালন করে। তবে প্রথম দেখলাম কেউ কুকুরকে এত বেশি ভালোবাসে। দিলীপ কুকুরকে এভাবে ভালোবাসছে, ভগবান তার মঙ্গল করবেন।’

আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘দিলীপ দাদা কুকুরকে যে পরিমাণ ভালোবাসেন, তা অবিশ্বাস্য। এ রকম ভালোবাসা খুব কমই হয়। তাদের উভয়ের মায়া-মততা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

৯ নম্বর কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল ইসলাম আনু জানান, দিলীপ বাবুর রাজা বাবু নামে একটি কুকুর আছে। সেই কুকুরটি একটি গাড়িতে করে তাকে এবং তার মালামাল বহন করে। তিনি অত্যন্ত সৎ ও অতিদরিদ্র ব্যক্তি। তিনি একটি অসুস্থ কুকুরকে সুস্থ করে নিজ সন্তানের মতো প্রতিপালন করছে এবং রাজা বাবুকে দিয়ে ছোট একটি গাড়ি বানিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একটি কুকুরের প্রতি তার এমন ভালোবাসা প্রশংসনীয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ)। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ)। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তিকর মন্তব্য করায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ) নামের এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। তিনি শেখ হাসিনাকে চিতল মাছ ও হিরো আলমকে নোয়া গাড়ি উপহার দিয়ে ‘চিতল মুখলিছ’ নামে পরিচিতি পান। মুখলিছুর রহমান পরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ২টার দিকে চুনারুঘাট পৌর শহরের থানা রোডে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে থানার গেট এলাকায় দাঁড়িয়ে মাওলানা মুখলিছুর রহমান বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বিষয়টি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কানে গেলে তাঁরা তাঁকে আটক করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা তাঁকে ধরে মারধর করে। পরে স্থানীয় মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

যুবদল নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে।

উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মারুফ আহমেদ বলেন, থানার গেট এলাকায় বসে তিনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা তাঁকে কিছু মারধর করে। পরে উপস্থিত মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০২
হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানকে ভারতে পালাতে সাহায্যকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে তৃতীয় দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের পর অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার ফয়সাল নামে একজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেন।

দুই আদিবাসী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম এবং ফয়সালকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পৃথক দুটি আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। শুনানি শেষে আদালত কারাগারে প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতের অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে সিবিউন ও সঞ্জয়কে কারাগারে পাঠানো হয়। ২১ ডিসেম্বর দুজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট থেকে এই দুজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

সিবিউন ও সঞ্জয়ের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে পারাপারকারী চক্রের হোতা জনৈক ফিলিপ নামক ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত, গ্রেপ্তার, ফিলিপ ব্যতীত আর কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, ফিলিপের সঙ্গে কিলিং মিশনের কে বা কারা যোগাযোগ করেছে তা জানার জন্য, কিলিং মিশনের ইন্ধনদাতা এবং অর্থদাতাদের শনাক্ত করার জন্য সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

অন্যদিকে ফয়সালের রিমান্ড আবেদন থেকে জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর র‍্যাব-১১-এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন তরুয়া এলাকার মোল্লার বাড়ির সামনে তরুয়ার বিলে অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে আটক করে। অভিযানের সময় বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হাদি হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তাঁর রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, হাদি হত্যা মামলা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। মামলার এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আসামি ফয়সালের দেখানো মতে নরসিংদী সদরের তরোয়া বিল থেকে ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে। নরসিংদী সদর মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ফয়সালের তথ্যানুযায়ী উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি পল্টনে চাঞ্চল্যকর ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে। অস্ত্রের উৎস ও সরবরাহকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ, হত্যার মোটিভ উদ্ধার, ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য ফয়সালকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় রিকশায় করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা হয়। মোটরসাইকেল করে এসে রিকশার পাশ থেকে করা গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঘটনার পরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়ার হলে সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান হাদি।

১৪ ডিসেম্বর রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাফলংয়ে বালুচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় পাড় ধসে পড়ে এক বালুশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে জাফলং চা-বাগানসংলগ্ন নদীর পাড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বাচ্চু মিয়া (৫০) গোয়াইনঘাট উপজেলার নয়াবস্তি গ্রামের মৃত হাবিব মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একদল শ্রমিক নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলনের কাজ করছিল। এ সময় হঠাৎ বালুর একটি বড় অংশ ধসে পড়ে শ্রমিকদের ওপর। অন্য শ্রমিকেরা দ্রুত সরে যেতে পারলেও বাচ্চু মিয়া বালুর নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, বালু উত্তোলনের সময় মাটি ধসে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চকরিয়ায় যুবকের লাশ মিলল বিলে, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বিল থেকে সাইফুল ইসলাম (৩৩) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের দরগা রাস্তার মাথায় সড়কের পাশের বিল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

সাইফুল ইসলাম কাকারা ইউনিয়নের মাইজ কাকারার শাইরাবরপাড়া গ্রামের শাহ আলমের ছেলে।

সাইফুলের স্বজনদের অভিযোগ, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে প্রতিপক্ষ একটি মামলায় আসামি করে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাড়িতে যায় পুলিশ। সাইফুলকে বাড়িতে না পেয়ে পুলিশ ফিরে যায়। এরপর হেলমেট পরিহিত একদল যুবক সাইফুলকে খুঁজতে শুরু করে। মূলত প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে পরিকল্পিতভাবে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যা করেছে।

পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কাকারা দরগা রাস্তার মাথা এলাকায় প্রবাসী নুরুল ইসলাম সাড়ে ৭ শতক জমি কেনেন। ওই জমিতে সংস্কারকাজ চলছিল। গত শনিবার দুপুরে ফরিদুল ইসলাম, আমজাদ, সাদ্দামের নেতৃত্বে ২০-২১ জন নুরুল ইসলামের জমি দখল করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে বাধা দিলে নুরুল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন আক্তারসহ পাঁচজন আহত হন।

সাইফুলের স্বজনদের অভিযোগ, এ ঘটনায় নুরুল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় মামলা করেন। ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়ায় সাইফুলকেও ওই মামলায় আসামি করা হয়। সাইফুল ইসলামের বাড়ি বিরোধপূর্ণ জমির পাশে। সোমবার রাতে পুলিশ আসার খবর পেয়ে সাইফুল বাড়ি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে রাতেই বাড়ির পাশে বিলে তাঁর লাশ দেখতে পাওয়া যায়।

সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, বাড়িতে পুলিশ আসার খবর পেয়ে আমার স্বামী বাড়ির পেছন দিয়ে দৌড়ে চলে যান। এ ছাড়া হেলমেট পরিহিত একদল যুবক আমার স্বামীকে খোঁজাখুঁজি করে। পুলিশ বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে ফিরে যাওয়ায় সাইফুল বাড়িতে ফেরেনি। পরে সকালে বাড়ির কাছে বিলে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। নুরুল ইসলামের লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছে।

এ মামলার বাদী জেসমিন আক্তারের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত শনিবার জমি নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি হয়। এ ঘটনায় জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় সাইফুল ৪ নম্বর আসামি। সাইফুল বাড়িতে অবস্থান করার খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে যায়। তাঁকে না পেয়ে পুলিশ থানায় ফিরে আসে। পরে সাইফুলের পরিবার থেকে তাঁর লাশ পাওয়ার খবর জানালে লাশ উদ্ধার করা হয়।’

ওসি আরও বলেন, সাইফুলের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। শরীরে জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত