Ajker Patrika

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ

অবৈধ বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে নবনির্মিত সেতু

  • সেতু থেকে ৪০০ মিটার দূরে বালু তোলা হচ্ছে।
  • স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বালু তোলার এই মহোৎসব চলছে।
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ০৭
খননযন্ত্র বসিয়ে তিস্তা নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু। সম্প্রতি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
খননযন্ত্র বসিয়ে তিস্তা নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু। সম্প্রতি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছে একটি চক্র। স্থানীয় হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বালু তোলার এই মহোৎসব চলছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত হরিপুর তিস্তা সেতু থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে বালু তোলা হচ্ছে। এতে উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ২৫ আগস্ট সেতুটি খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলামের সহায়তায় আইন লঙ্ঘন করে সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। সেতুর মাত্র ৪০০-৫০০ মিটার দূরের নদী থেকে এসব বালু তোলা হচ্ছে। খননযন্ত্র দিয়ে তোলা সেই বালু লম্বা পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কঘেঁষা একটি জমিতে।

স্থানীয়রা জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা গ্রাম পুলিশ সদস্য মোজাহারের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর, সাইদুল, রেজাউল, ফারুক ও ফুল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদী থেকে বালু তুলে ব্যবসা করছেন। তাঁদের অবৈধ এই কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সহযোগিতা করে প্রভাবশালী একটি মহল।

স্থানীয় বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, বালু তোলার কারণে তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসন জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু তোলা যাবে না। তবে এই আইন অমান্য করে তিস্তা নদী থেকে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানা-পুলিশ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে অভিযুক্তদের তোপের মুখে পড়ে।

পরে অভিযান শেষ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হয় তারা। এরপর গত ৫ জুলাই কুড়িগ্রামের চিলমারীর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি খননযন্ত্র বন্ধ করতে গিয়ে একজনকে আটক করে। কিন্তু সংঘবদ্ধ বালু উত্তোলনকারী এবং তাদের সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সেলিম জামান সরকার বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং ২৫-৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার পর আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ড্রেজার বসিয়ে তিস্তা থেকে আবার বালু উত্তোলন শুরু করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর নিচে উত্তর-পূর্ব পাশে নদীতে ড্রাম ও বাঁশের কাঠামো পানিতে ভাসছে। তার ওপর বসানো হয়েছে খননযন্ত্র। নদী থেকে তোলা বালু তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বালু তোলার কাজ তদারক করছেন তিন-চারজন শ্রমিক। আশপাশে অবস্থান করতে দেখা যায় আরও ৪-৫ জনকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে কারা বালু তুলছে জানি না। কিছুদিন আগে বালু তোলা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে গোলমালও হয়েছে। এতে কয়েক দিন বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিছুদিন পর আবার বালু তোলা হচ্ছে। এই কাজ অব্যাহত থাকলে তিস্তা সেতু রক্ষা করা যাবে না।’

বালু তোলার কাজে সহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে পাবলিকলি কেউ বালু তুলছে না, কেউ বালুর ব্যবসা করছে না। সরকারিভাবে এলজিইডি হয়তো বালু তুলতে পারে।’ মাজহারুল আরও বলেন, ‘বালু তোলার সঙ্গে আমি জড়িত না। কেউ আমার কথা বলে বালু তুললে আমি কী করব?’

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘সেতুর আশপাশে থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু তুলে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কালীগঞ্জে দুই পা বিচ্ছিন্ন করে কৃষককে কুপিয়ে হত্যা, অধরা দুর্বৃত্তরা

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নে দুই পা বিচ্ছিন্ন করে মনির মোল্লা (৫২) নামের এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সন্ধ্যার পর পারাবর্তা এলাকার বন বিভাগের একটি খোলা জায়গা থেকে ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মনির মোল্লা একই এলাকার মৃত হাশেম মোল্লার ছেলে।

রোববার সকালে কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের সময় দেখা যায়, নিহত ব্যক্তির শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁর দুই পা শরীর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় কয়েকজন পারাবর্তার নির্জন স্থানে মরদেহটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পরে উলুখোলা পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা মনির মোল্লার মরদেহ হিসেবে শনাক্ত করেন।

এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ হত্যার কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে তদন্ত চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মাদ্রাসা সুপার নিহত

নরসিংদী প্রতিনিধি
নিহত মস্তফা জোয়ারদার। ছবি: সংগৃহীত
নিহত মস্তফা জোয়ারদার। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর মনোহরদীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এইচ এম মস্তফা জোয়ারদার (৫২) নামের এক মাদ্রাসা সুপার নিহত হয়েছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মস্তফা জোয়ারদার মনোহরদী পৌর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সল্লাবাইদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি জামায়াতে ইসলামীর ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল এবং কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পূর্বচর পাড়াতলা জালাল উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় শেষে মস্তফা বাসা থেকে বের হয়ে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পার হতে চেয়েছিলেন। ওই সময় দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল পেছন দিক থেকে তাঁকে ধাক্কা দিলে তিনি সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত ব্যক্তির লাশ রাতে ঢাকা মেডিকেলে ছিল। অভিযোগ পেলে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৬ থানার ওসি বদল ঘুরেফিরে পুরোনোরাই

  • ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সিএমপির ১৬ থানার ওসি বদল করা হয়
  • কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে
  • মামলা করতে যাওয়া ব্যক্তিকে আটকে রেখে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে একজনের বিরুদ্ধে
 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫৫
১৬ থানার ওসি বদল ঘুরেফিরে পুরোনোরাই

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ১৬ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে রদবদল আনা হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এই রদবদলের কথা বলা হলেও থানাগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরোনো ওসিদেরই। তাঁদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল শনিবার সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ স্বাক্ষরিত আদেশে নগরের ১৬ থানার ওসি পদে রদবদল আনা হয়। এতে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আব্দুল করিমকে পাঁচলাইশে এবং কোতোয়ালির নতুন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাকলিয়া থানার ওসি মো. আফতাব উদ্দিনকে। এ ছাড়া পাঁচলাইশের ওসি মোহাম্মদ সোলাইমানকে বাকলিয়া থানায়, সদরঘাট থানার ওসি মো. আব্দুর রহিমকে বন্দর থানায়, বায়েজিদ থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে চান্দগাঁও থানায়, চান্দগাঁও থানার ওসি মো. জাহেদুল কবিরকে বায়েজিদ বোস্তামী থানায়, খুলশী থানার ওসি শাহীনুর আলমকে কর্ণফুলী থানায়, ডবলমুরিং থানার ওসি মো. বাবুল আজাদকে চকবাজার থানায়, হালিশহর থানার ওসি মুহাম্মদ নুরুল আবছারকে পাহাড়তলী থানায়, কর্ণফুলী থানার ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম খুলশী থানায়, বন্দর থানার ওসি মোস্তফা আহম্মেদকে পতেঙ্গা থানায়, পতেঙ্গার ওসি কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান উদ্দীনকে হালিশহর থানায়, ইপিজেড থানার ওসি কামরুজ্জামানকে আকবরশাহ থানায় এবং চকবাজার থানার ওসি শফিকুল ইসলামকে পুলিশের বিশেষ শাখা সিটিএসবিতে বদলি করা হয়।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার আমিনুর রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লটারির মাধ্যমে থানাগুলোর ওসি পদে রদবদল আনা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সিএমপির ১৬টি থানার ওসি পদে পরিবর্তন আনা হয়। সিএমপি ওসি রদবদল প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ আদেশে দেখা যায়, রদবদল হওয়া ওসিদের অনেকে গত দেড় বছরে সিএমপির ১৬ থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের মধ্যে পরিদর্শক বাবুল আজাদ, আরিফুর রহমান, আফতাব উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন।

অভ্যুত্থানের আগে সিএমপি চারটি জোনের (উত্তর, দক্ষিণ, বন্দর ও পশ্চিম) ১৬টি থানার ওসি হিসেবে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে সরানো হয় অভ্যুত্থানের পর। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জারি করা আদেশে সিএমপির ১৩ থানার ওসি বদলি করা হয় এবং ১০ সেপ্টেম্বর আরেক আদেশে নগর পুলিশের ১৩ উপকমিশনার (ডিসি) এবং দুই ওসি পদে রদবদল করা হয়। ওই মাসেই আরও তিন থানার ওসি পদে রদবদল করা হয়।

ওসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আগস্টে অভ্যুত্থানের পর গত ১৬ মাসে সিএমপির ১৬টি থানার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত পরিদর্শক বাবুল আজাদ। অভ্যুত্থানের আগে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) ছিলেন তিনি। অভ্যুত্থানের পর তিনি নগরের পাহাড়তলী থানায় ওসি হিসেবে পদায়ন পান। কয়েক মাসের মাথায় তিনি সিএমপির ডবলমুরিং থানার ওসি হন এবং সর্বশেষ গতকাল বাবুল আজাদকে নগরের চকবাজার থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গত বছর ওসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিককে থানা হাজতে আটকে রেখে মারধর, বিএনপি নেতাকে থানায় এনে নির্যাতন, চাঁদা দাবি ও লুট, মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

গত অক্টোবরে একটি প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনায় মামলা না নিয়ে উল্টো মামলা করতে যাওয়া ব্যক্তিকে আটকে রেখে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর এই অভিযোগ তদন্ত করছে। এ ছাড়া এক সপ্তাহ আগে আক্কাস জুয়েল নামে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। নগরের কয়েকজন ছাড়া অন্য ওসিদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এভাবে বদলিপ্রক্রিয়া কোন উদ্দেশ্যে, তা জানি না। তবে যাঁরা দায়িত্ববান ও নাগরিকদের জানমালের রক্ষার্থে কাজ করছেন, তাঁরা থাকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, কিন্তু যাঁদের পেশাদারত্বে ঘাটতিসহ নানান অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের একই জায়গায় ঘুরেফিরে রাখার সিদ্ধান্তটি সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম: জব্দ করা সার বিক্রিতে ফের অনিয়ম, ক্ষোভ

  • ৯ হাজার ৯০ বস্তা সার জব্দ, ৮ ব্যবসায়ীকে জরিমানা
  • কৃষি অধিদপ্তরের তদারকিতে জব্দ করা সার বিক্রিতে ফের অনিয়ম
আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) 
আজ বেলা ১১টার দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বেলা ১১টার দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দ করা সার বিক্রয়ে (কৃষি অধিদপ্তরের তদারকিতে) ফের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের বিচারক নির্দেশ দিয়েছিলেন, স্থানীয় প্রশাসনের তদারকিতে জব্দ করা সার সরকারি দরে বিক্রি করতে হবে।

কিন্তু স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, যোগসাজশে এসব সার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, কবে এবং কীভাবে জব্দ করা সার বিক্রি হলো, এ সম্পর্কে তাঁদের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। সার বিক্রিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকায় ইউএনও এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তদারকি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

জানা গেছে, গত ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর উপজেলার বিভিন্ন দোকান ও প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে আনা সরকারি সার মজুত এবং বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। এতে ১৫টি দোকান থেকে ৯ হাজার ৯০ বস্তা সার জব্দ এবং ৮ জন ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে জব্দ করা সাড়ে ৬ হাজার বস্তা সার বেশি দামে বিক্রির পর স্থানীয় প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়লে ৩ ডিসেম্বর হঠাৎ ২ হাজার ৫০০ বস্তা সার সরকারি দামে বিক্রি করা হয়। সারগুলোর বেশির ভাগই ইউরিয়া।

কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের স্থানীয়টারী গ্রামের মিজানুর ইসলাম বলেন, ‘আমার নামে সার কেনার কথা লেখা হয়েছে, কিন্তু আমি তো ভ্যান চালাই, সার কিনিনি।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুচলিবাড়ীর ললিতারহাটে মেসার্স সুমন ট্রেডার্সের প্রতিনিধি ফিরোজ হাসান বলেন, ‘জব্দ করা সার কৃষকদের কাছে বাকিতে দেওয়া হয়েছে। কৃষকেরা ৭-৮ মাস পর টাকা দেবে, তাই কিছুটা বেশি দামে দিতে হয়েছে।’

পাটগ্রাম পৌরসভার অন্তর ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বাকিতে সার বিক্রি করলে কিছু দাম বেশি লাগে। টিএসপি নগদে ১ হাজার ৯৫০, বাকিতে ২ হাজার ৩৫০ টাকা; পটাশ নগদে ১ হাজার ১০০, বাকিতে ১ হাজার ৫৫০ টাকা; ডিএপি নগদে ১ হাজার ৪৫০, বাকিতে ১ হাজার ৬৫০ টাকা করে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, ‘জব্দ সার সরকারি দামে বিক্রি করার কথা ছিল। কিছু জায়গায় অভিযোগ এসেছে, বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যে অনিয়মের কারণে সার জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হলো; জব্দ করা সেই সার বিক্রিতে একই অনিয়ম হলো, এতে কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে কি না, এমন প্রশ্নে ইউএনও উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘সার-সংকট তৈরি করে দাম বেশি নেওয়ার ঘটনায় অসাধু কিছু ব্যবসায়ী জড়িত ছিলেন। তাঁদের শনাক্ত করে অর্থদণ্ড ও সার জব্দ করে সরকারি দরে বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। আমার পক্ষে তো সব বিক্রয়ের জায়গায় থাকা সম্ভব নয়। বেশি দামে সার বিক্রি প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অপর প্রশ্নে উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘যেসব দোকান থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক সার জব্দ ও জরিমানা করা হয়, কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষি অধিদপ্তরের তদারকিতে ওই সব দোকান থেকে জব্দ করা সার বিক্রি করা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত