Ajker Patrika

রংপুরের বেনারসিপল্লি: কারখানা বন্ধ, ক্রেতাদের ঠকিয়ে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় শাড়ি

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ১৬
রংপুরের বেনারসিপল্লি: কারখানা বন্ধ, ক্রেতাদের ঠকিয়ে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় শাড়ি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে হাবু এলাকায় বেনারসিপল্লি। এটি উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের একটি গ্রাম। তাঁতিপাড়া নামেও পরিচিত। এখানে একসময় প্রায় ৬০০ বেনারসি তাঁত ছিল। বর্তমানে মাত্র তিনটি তাঁত চালু আছে। এই বেনারসিপল্লি এখন মূলত শাড়ির মার্কেট। রংপুর শহরসহ সরাসরি লালমনিরহাট জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখানে প্রতিদিন অনেক ক্রেতা আসেন বেনারসি কিনতে। 

এই মার্কেটের দোকানিরা দাবি করেন, তাঁদের দোকানে সব স্থানীয় তাঁতের শাড়ি। বিক্রি হয় চড়া মূল্যে। কিন্তু তাঁত মালিকেরা বলছেন, এই দাবি সঠিক নয়। দোকানিরা ক্রেতাদের ঠকিয়ে ভারতীয় শাড়ি বিক্রি করছেন। 

তাঁতিপাড়ার কারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছেগতকাল সোমবার সরেজমিনে বেনারসি পল্লীতে গিয়েছিলেন এ প্রতিবেদক। গ্রামটিতে গেলে দেখা যায়, মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন নামের ১৫টিরও বেশি শাড়ির দোকান। সবগুলো নামের সঙ্গেই আছে ‘বেনারসি’ শব্দ। 

‘নিবিড় বেনারসি’ নামে একটি দোকানে গিয়ে কথা হয় কর্মচারি মমিনুর ইসলামের সঙ্গে। তাঁদের বেনারসি শাড়িগুলো কোথায় তৈরি হয় জানতে চাইলে এই কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের নিজেস্ব কারখানা আছে। পাশেই আমাদের কারখানা।’ 

তাঁতিপাড়ার কারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছেসেখান থেকে বেরিয়ে ‘তিস্তা বেনারসি’ নামের আরেক দোকানে গিয়ে কথা হয় দোকানের ম্যানেজার স্বপন মিয়ার সঙ্গে। তিনিও বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কারখানা আছে। আমরা সেখানে শাড়ি বানাই। শাড়ির বেশি চাহিদা থাকলে আমাদের পাশে আরও অনেক কারখানা আছে সেখানেও অর্ডার দেই।’ কারখানা কোথায় জানতে চাইলে পাশের একটি কারখানার ঠিকানা দেন তিনি। 

এ সময় দোকানটিতে রংপুর শহরের মেডিকেল মোড় থেকে শাড়ি কিনতে আসা নাদিয়া ইসলাম (২৩) নামে এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, এর আগেও বেনারসি কাতান নামের ১৫টি শাড়ি কিনে নিয়ে গেছেন। তবে আসল বেনারসি কাতান কি না তিনি নিশ্চিত নন। পছন্দ হওয়ায় আবারও এসেছেন। 

মৌমিতা বেনারসি ও তিস্তা বেনারসি থেকে একই কারখানার ঠিকানা দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে কথা হয় কারিগর আল আমিনের সঙ্গে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সামনের বেনারসির দোকানগুলোর কারখানাগুলো কোথায়? 

তাঁতিপাড়ার কারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছেজবাবে এই কারিগর বলেন, ‘এসব দোকানে তো এখানকার শাড়ি বিক্রি হয় না। এগুলো সব ভারত থেকে আসে। এরা শুধু এখানকার নাম বলে বিক্রি করে। আসলে এদের নিজেদের কোনো কারখানা নাই।’ 

আল আলমিনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এসে হাজির হন কারখানার মালিক আব্দুর রহমান। তিনি জানান, এখানকার তাঁত শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রথম তাঁত স্থাপন করেন। তাঁর দেখাদেখি প্রতিবেশীরাও ঝুঁকে পড়েন এ শিল্পে। আস্তে আস্তে এ শিল্পের প্রসার ঘটে। নাম ছড়িয়ে পড়ে। আব্দুর রহমান দাবি করেন, এখানকার তৈরি শাড়ি প্রায় ১০ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও কেনা হতো। 

আব্দুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে, ২০০৫ সালে এই এলাকার প্রায় ১০০ তাঁতি মিলে বেনারসি পল্লী গড়ে তোলেন। বলা চলে, হাবু গ্রামের সবাই তখন তাঁতি ছিলেন। এক সময় প্রায় ৬০০ তাঁত ছিল এখানে। এখন শুধু তাঁর কারখানায় তিনটি হস্তচালিত তাঁত চালু আছে। 

গঙ্গাচড়ার বেনারসি পল্লীতে বিক্রি হচ্ছে সব ভারতীয় শাড়ি। ঠকছেন ক্রেতারামৌমিতা বেনারসি ও তিস্তা বেনারসির দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। রাস্তার পাশের যেসব দোকান আপনারা দেখতেছেন, এদের কারও নিজের কেন শাড়ি তৈরির কারখানা নেই। এরা আমাদের কারখানার নাম ভাঙিয়ে চলে। কেউ শাড়ি দোকারে শাড়ি কিনতে আসলে আমাদের কারখানা দেখিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘এই যে আমাদের নিজস্ব কারখানা।’ ’ কয়েক দিন আগে এক ব্যবসায়ীকে সাবধান করে দিয়েছি যাতে ক্রেতাকে ধোকা না দেয়। আমরা যা শাড়ি তৈরি করি আমাদের সব শাড়ি ঢাকায় বিক্রি হয়। আমাদের তৈরি একটা শাড়িও এখানকার কোনো দোকানে পাবেন না।’ 

নিশাত বেনারসির ম্যানেজার আসিকুজ্জামান আসিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি দাবি করেন, স্থানীয় ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই নিজের কারখানায় বোনানো বেনারসি শাড়ি এখানে বিক্রি করেন। তাঁর কারখানায় শতাধিক কারিগর কাজ করে। 

নিশাত বেনারসি ও নিবিড় বেনারসিও একই কারখানার ঠিকানা দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। একটি জরাজীর্ণ অন্ধকার ঘর কোনো এক সময়ের তাঁত কারখানার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। তাঁতে মাকড়সার জাল। 

গঙ্গাচড়ার বেনারসি পল্লীতে বিক্রি হচ্ছে সব ভারতীয় শাড়ি। ঠকছেন ক্রেতারাতিন বছর ধরে কারখানাটি বন্ধ বলে স্বীকার করলেন মালিকের পরিবারের সদস্য এক নারী (৫০)। ওই নারী বলেন, নিশাত ও নিবিড় বেনারসি এক সময় তাঁদের কারখানা থেকে শাড়ি কিনতো। কিন্তু পরে তারা আর নেয়নি। এক সময় কারখানাটি বন্ধ করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেনারসি পল্লীর ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার মুখে। হাতেগোনা কয়েকজন কারিগর রয়েছেন। তাঁরা বলেন, ভারতীয় শাড়ির দাপটে হারিয়ে গেছে রংপুরের বেনারসি।

এমন প্রতারণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রংপুরের জাতীয় ভোক্তা-অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি আমাদের জনবল সংকটের কারণে এ বিষয়গুলো দেখভাল করতে একটু সমস্যা হচ্ছে। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত