Ajker Patrika

থানা চত্বরে যুবদল নেতার মৃত্যু: প্রেমের ঘটনা মীমাংসায় বসে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩: ১৫
নিহত যুবদল নেতা আশরাফুল আলম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত যুবদল নেতা আশরাফুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের উলিপুর থানা চত্বরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনা রাজনৈতিক নয়। দুই কিশোর-কিশোরীর প্রেমের বিরোধের জেরে প্রেমিককে ‘অপহরণের’ ঘটনা মীমাংসা করতে গিয়ে থানা চত্বরে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপির দুই পক্ষ। এ সময় যুবদল নেতা আশরাফুল আলমের মৃত্যু হয়।

আজ শনিবার সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উলিপুর থানা চত্বরে যুবদল নেতার মৃত্যু হয়।

নিহত আশরাফুল আলম উপজেলার পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তবে সংঘর্ষে আঘাত পেয়ে নাকি অসুস্থতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে—এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দোষারোপ চলছে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

ঘটনার পর শুক্রবার রাতেই আশরাফুলের বাবা বাদী হয়ে উলিপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ কবির কাজলসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা আছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত কোনোও আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

অনুসন্ধান সূত্র জানায়

২৫ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফরা গ্রামে (হোসাইনপুর) এক কিশোরকে (১৬) অপহরণের করার অভিযোগ ওঠে তার প্রেমিকা (১৪) পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। হয় বিয়ে না হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। এ নিয়ে ওই কিশোরের বাবা উলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

কিশোরীর পক্ষের স্থানীয় অভিভাবক এবং গুনাইগাছ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাবলু মিয়াসহ চারজন এই অপহরণে জড়িত বলে দাবি করেন কিশোরের বাবা। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে গুনাইগাছ ইউনিয়নে কিশোরীর বাড়িসহ সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালালেও কিশোরকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

বৈঠকে বিএনপির দুই পক্ষ

থানার বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আটক প্রেমিককে উদ্ধার এবং মামলা করা নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একপক্ষ প্রেমিকার পরিবারকে এবং অন্যপক্ষ প্রেমিকের পরিবারকে সমর্থন করে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের দাবি ওঠে। তবে ছেলের পরিবার থেকে টাকা না দিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে বাধা দেয় বিএনপির অপরপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, প্রেমিক কিশোরকে আটকের পর থেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রমজান কিশোরীর পরিবারের পক্ষ নিয়ে ‘অপহৃত’ প্রেমিককে আটক রাখতে সহায়তা করেন। এ কাজে তিনি উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব আহমেদ এবং পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ও তাঁদের নেতা-কর্মীদের সমর্থন নেন।

অন্যদিকে যুবদল নেতা রিপন ও মহসিন এবং উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব ফাজকুরনি ‘অপহৃত’ কিশোরকে উদ্ধারে তার পরিবারের পক্ষে সমর্থন দেন। এ নিয়ে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। শুক্রবার উভয়পক্ষ মীমাংসার জন্য থানায় মিলিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আটক কিশোরকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে মেয়ে পক্ষের হয়ে টাকা দাবি করেন ছাত্রদল নেতা রমজান ও তাঁর সহযোগীরা। তিনি উপজেলা যুবদলের কয়েক নেতার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে কিশোরকে উদ্ধারে পুলিশকে বাধা দেন। মামলা করতেও বাধা দেন তাঁরা।

মামলা না করে বিষয়টি সমাধানের উদ্দেশে উভয়পক্ষ থানার গোল ঘরে মীমাংসার জন্য বসেন। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিখোঁজ কিশোরের বাবা ও দুলাভাইও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রমজান বেশ উত্তেজিত হয়ে ছেলের বাবা ও দুলাভাইয়ের ওপর চড়াও হন।

খবর পেয়ে কৃষক দলের নেতা আবু জাফর সোহেল রানা, সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজল, যুবদল নেতা নাজমুল, মঈনসহ বেশ কয়েকজন থানায় যান। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাক্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষকে নিবৃত করতে গিয়ে মাটিতে ঢলে পড়েন আশরাফুল। উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বৈঠকে উপস্থিত যুবদলের একাধিক নেতা বলেন, থানার গোল ঘরে বৈঠক চলছিল। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে আশরাফুলের গায়ে কেউ হাত দেয়নি। তার গায়ে টোকাও পড়েনি। থানা থেকে বের হয়ে আসার সময় আশরাফুল আকস্মিক মাটিতে লুটে পড়ে। আমাদের লোকজন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও অপহৃত কিশোর এবং অভিযুক্ত কিশোরীর পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবলু মিয়া বলেন, ‘মেয়ে এবং মেয়ের এক খালু ছেলেকে আটক করে রেখেছে। আমাকে ফোন দিলে বিষয়টি ছেলের পরিবারতে জানিয়েছিলাম। পরে পুলিশ এসে ছেলেকে ছেড়ে দিতে বললে মেয়ে পক্ষ ১০ লাখ টাকা দাবি করে। বিষয়টি দলীয় পর্যায়ে (বিএনপির দুই পক্ষে) যাওয়ায় আমি আর ওসবে জড়াইনি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছত্রদল নেতা রমজানের ফোন নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

হাতাহাতির ঘটনায় পুলিশ যা বলছে

কিশোর অপহরণ এবং এ নিয়ে বিএনপির বেশকিছু নেতা-কর্মীদের দুটি পক্ষে বিভক্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে পুলিশ। উভয় পক্ষের বৈঠক হওয়ার সত্যতা স্বীকার করলেও থানার ভিতরে নয় বরং থানা গেটের বাইরে বিএনপির দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার থানার দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক আব্দুর রশিদ দাবি করেন, ‘থানায় কোনোও বৈঠক বসেনি। প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ছেলেকে আটকের ঘটনায় থানার গেটে এসে বাক্বিতণ্ডায় জড়ায় বিএনপির দুই পক্ষ। পরে চলে যাওয়ার সময় থানার সামনে আবার হাতাহাতিতে জড়ান তারা। এভাবে আহত হয়ে মেডিকেলে নেওয়ার পর একজন মারা যায়।’

ঘটনার দিন উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান ছুটিতে ছিলেন। থানায় ফিরে তিনি বলেন, ‘প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে এক ছেলেকে আটক রাখার ঘটনায় বিএনপির দুই পক্ষ বিবাদে জাড়ায়। তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হলে পুলিশ তাদের থানার বাইরে যেতে বলে। তারা চলে যান। থানায় উভয় পক্ষ উপস্থিত হলেও সংঘর্ষ হয়েছে থানার বাইরে।’

ওসি বলেন, ‘মেয়ে পক্ষের হাতে আটক কিশোরের বাবা থানায় মামলা করতে আসলে অপরপক্ষ তাতে বাধা দিয়ে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। এ সময় বাক্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে বলে জানতে পেরেছি। তবে তা হয়েছে থানার বাইরে।’

ওসি আরও বলেন, ‘একজন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’ যে কিশোরকে আটক নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত সে কিশোরকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান ওসি।

বিএনপির ২ পক্ষের হাতাহাতি

গতকাল ঘটনার বিষয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছিলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তাসভীরুল ইসলাম এবং রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকদের মধ্যে থানার গোল ঘরে একটি অরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মীমাংসার বৈঠক চলছিল। বৈঠকের একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে আশরাফুল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করেন।

এ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁকে দ্রুত উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে গতকাল উলিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল বলেন, ‘বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের অনুসারীরা হামলা করে থানাচত্বরে একজনকে মেরে ফেলেছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। আব্দুল খালেক বহিষ্কৃতদের নিয়ে গ্রুপিং করছেন। এখানে সাবেক সভাপতি তাসভীর ভাইয়ের অনুসারীরা মূল রাজনীতি করে। এ ঘটনার জন্য খালেক ভাইয়ের গ্রুপের কয়েকজন বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী দায়ী।’

তবে গ্রুপিং কিংবা বহিষ্কৃতদের দলে ভিড়ানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় নেতা আব্দুল খালেক। ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায়। এসবের কিছুই জানি না। আর আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। বহিষ্কৃত কাউকে দলে নিয়েছি এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। উপজেলা বিএনপির কমিটি অবৈধ। সুতরাং, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার এখতিয়ার তাদের নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লঞ্চ দুর্ঘটনা: তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা থেকে ফিরছিলেন যাত্রীরা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে মধ্যরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু এবং অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঝালকাঠিতে একটি লঞ্চ জব্দ করা হয়েছে। সেই লঞ্চের চারজনকের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

এদিকে জানা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন বিএনপির স্থানীয় নেতা। ঢাকায় তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগা দিতে এসেছিলেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তাঁর ফিরছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে ঝালকাঠি–২ আসনের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ইসরাত সুলতানার নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা লঞ্চটিত করে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিজাম শিপিং লাইনস সূত্রে জানা গেছে, ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ঝালকাঠি জেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই সুস্থ রয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় দুর্ঘটনা: ঝালকাঠিতে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চ জব্দ, আটক ৪

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে মাঝরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনার পর ঝালকাঠিতে ‘অ্যাডভেঞ্চার–৯’ নামে একটি লঞ্চ জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করলে বরিশাল নৌ-পুলিশ ও ঝালকাঠি থানা-পুলিশের সদস্যরা লঞ্চটি জব্দ করেন।

বরিশাল নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হক জানান, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সংঘটিত ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে লঞ্চটি ঝালকাঠিতে পৌঁছালে সেটি জব্দ করা হয়। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা
অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, লঞ্চটি ঝালকাঠিতে নোঙর করার পর সারেং, সুকানি, সুপারভাইজার ও ইঞ্জিন চালক পালিয়ে যান। পরে চারজন কেবিন বয়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন যাত্রী।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশু শামীম (১০) মারা গেছে। উদ্ধারের তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আজ শুক্রবার সকালে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির মামা সাব্বির হোসেন ও সখীপুর থানা-পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত শামীম উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে ও স্থানীয় কীর্তনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিহত শিশুর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শামীম বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ির আশপাশের বনাঞ্চলে অনুসন্ধান চালান। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি বন থেকে শামীমকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টার দিকে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

নিহত শামীমের মামা সাব্বির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম শিয়ালের আক্রমণে এমন হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, এটি শেয়াল-কুকুরের আক্রমণের চিহ্ন নয়, শিশুটির মাথা ও শরীরের আঘাত করা হয়েছে।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিহত শামীমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুমকীতে অটো-টমটম সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দুমকীতে অটোরিকশা ও সিমেন্টবাহী টমটমের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লেবুখালী-বাউফল মহাসড়কের রাজাখালী (স্থানীয় নাম পিছাখালী ব্রিজ) এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগা থেকে আসা যাত্রীবাহী অটোরিকশা বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবাহী টমটমের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয় বছরের রবিউল নিহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম খানকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত সুমন সরদার (২৫) ও আব্দুল কাদেরকে (৫০) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত আব্দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুমনের একটি হাত সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের বাড়ি বাউফল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম উদ্দীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশা ও টমটমটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত