Ajker Patrika

শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ: নিবন্ধন না পেয়ে ছাড়পত্র চাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মারধর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী    
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪৭
হামলায় আহত দুই শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত
হামলায় আহত দুই শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনেও নিবন্ধন না পাওয়ায় রাজশাহীর বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের ৪২ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই তাঁরা ছাড়পত্র চেয়েছিলেন অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে। এ জন্য প্রধান ফটক বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আজ শুক্রবার সকালের এ ঘটনায় কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন চিকিৎসা নিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। আহত এক শিক্ষার্থী কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নগরের চন্দ্রিমা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান মুন্না ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাইমন ইকবাল নিরব। এই দুই শিক্ষাবর্ষের ৪২ জন এমবিবিএস শিক্ষার্থী ভর্তির পর থেকে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) ও বিএমডিসির নিবন্ধন পাচ্ছেন না। প্রতারণা করে তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ২৩টি মামলাও করেছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন, তাঁর ভাই টিটু ও মিঠুসহ ভাড়াটে লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেছেন। ঘটনার সময়ের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কলেজের অনুসন্ধান ডেস্কের সামনে বসে আছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন। কয়েকজন শিক্ষার্থী একটি ছাড়পত্র লিখে নিয়ে গিয়ে তাঁর হাতে দিয়েছেন। এই ছাড়পত্রে সই করে দেওয়ার জন্য তাঁরা অনুরোধ করছেন।

এক শিক্ষার্থী বলছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য কিছু করতে পারবেন না স্যার। আপনার দ্বারা সম্ভব না। আপনি এই এনওসিতে স্বাক্ষর করে দেন। আমরা অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে যাই।’ এ সময় মনিরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘তোমার কথায় তো আমি করব না। তোমাদের যে বক্তব্য সেটা আমাকে লিখিত দাও।’ তখন শিক্ষার্থীরা ছাড়পত্রে সই দেওয়ার জন্যই অনুরোধ করেন। এ সময় মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি যেটা বলছি সেটা করতে হবে।’

প্রতারণার মামলা করা এক শিক্ষার্থীকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে মনিরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘তুমি না মামলা করেছ? তুমি আমার সামনে থেকে সরে যাও।’ এ সময় পাশে থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন স্বাধীনের ভাই টিটু। মামলা করা এক শিক্ষার্থীকে গালি দিয়ে বলেন, ‘তুই আমাকে জিনিস না? তুই আমাকেও মামলায় আসামি করেছিস কেন?’ এরপরই শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দেওয়া শুরু হয়। পরে ধাওয়া দিয়ে ধরে ধরে শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়।

আহত শিক্ষার্থী সোহেলুল হক বলেন, ‘আমরা গিয়ে বলেছিলাম স্যার আমাদের জীবনটা বাঁচান স্যার। তিন বছরেও আপনি কিছু করতে পারেননি। আমরা এনওসি এনেছি। আপনি সাইন করে দেন। এনওসিতে লেখা ছিল, “আমরা যেহেতু ওদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। অন্য কোথাও পড়াশোনা করলে আমাদের আপত্তি নেই।” এই এনওসিতে তিনি সাইন করলেন না। দুটি গেট বন্ধ করে এলোপাতাড়ি মারা হলো। মেয়েদেরও মেরেছে।’

মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে তাঁরা প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হন। এমবিবিএস প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তির জন্য কেউ দিয়েছেন ১৫ লাখ, কেউ ১৮ লাখ টাকা। এরপর নিবন্ধন না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ২৩টি মামলা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। এই মামলা করার পর ছাড়পত্র চাওয়ায় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় তাঁরা মামলা করছেন।

নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘কলেজে ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, বিস্তারিত জানি না। মারধরের অভিযোগে কলেজের এক শিক্ষার্থী থানায় এজাহার দিয়েছেন। সেটা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামতো ভিডিও দেখাচ্ছে। তারা যেগুলো করেছে সেই ভিডিও দেখাচ্ছে না। ফলে আমরাই অপরাধী হয়ে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা ভুক্তভোগী হয়েছি, এখনো হচ্ছি।’

মনিরুজ্জামান স্বাধীন আরও বলেন, ২০২০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাঁদের কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে। তবে মন্ত্রণালয়ের সেই আদেশের কার্যকারিতা উচ্চ আদালত স্থগিত করেন। ফলে তাঁরা দুটি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন না দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা প্রথমে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন। উচ্চ আদালত আদেশ দিয়েছেন, এই শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন দিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারপরও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নিবন্ধন দিচ্ছে না। ফলে কলেজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।

কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযোগ করেন, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক জাওয়াদুল হক একটি রাজনৈতিক দলের মানুষ। সেই দলের চিকিৎসকদের একটি অংশ স্বল্প টাকায় শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ কিনে নিতে চাচ্ছেন। এ কারণে উপাচার্য তাঁদের নিবন্ধন না দিয়ে হয়রানি করছেন, যাতে তিনি প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।

জানতে চাইলে রামেবির উপাচার্য অধ্যাপক জাওয়াদুল হক বলেন, ‘কারা এই প্রতিষ্ঠান কিনতে চায়, সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আসলে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার নিবন্ধন দিতে গেলে বেশ কিছু ক্রাইটেরিয়া দেখতে হয়। আমি বলেছি, এসব ঠিক থাকলে নিবন্ধন দিয়ে দেব। কিন্তু মনিরুজ্জামান স্বাধীন কোনো নিয়ম-নীতির মধ্যেই আসতে চান না। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটিতে জটিলতা চলছে। আমরা নিবন্ধন দিতে পারছি না।’

উপাচার্যের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মনিরুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘রামেবির বর্তমান উপাচার্য জাওয়াদুল হক একসময় আমাদের প্রতিষ্ঠানের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তখন প্রতিষ্ঠান ভালো ছিল, এখন খারাপ হয়ে গেছে?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ২

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মালবাহী দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাকের চালক ও হেলপার গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গবাদিপশুর খাবার (ভুসি) বহনকারী একটি ট্রাকের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই আরেকটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে এবং অপরটি মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যায়।

দুর্ঘটনার পর রেকার দিয়ে ট্রাক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আহত চালক ও হেলপারের পরিচয় এখনো জানা যায়নি বলে জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চুয়াডাঙ্গায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৫
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে, যা আজ মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক এবং সবজি বিক্রেতারা জীবিকার তাগিদে ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

পেশাজীবীদের ভাষ্যমতে, হাড়কাঁপানো ঠান্ডার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্মে ভাটা পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক স্বপন ইসলাম বলেন, ‘বাপু, হাত-পা তো জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। হ্যান্ডেল ধরলে মনে হয় যেন রড কামড়ে ধরছে। এই হিমেল বাতাসে শরীর কাঁপতিছে। ভাড়া-ভুতো কম, সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।’

বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডার চোটে দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট পাড়ার গৃহিণী অনামিকা খাতুন বলেন, ‘ভোরবেলা ঠান্ডা পানিতে হাত দেওয়া যায় না। রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি, কখন ঠান্ডা লেগে অসুখ-বিসুখ হয়।’

দিনমজুর সেতাব আলী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কামলা দিয়ে খাই। কিন্তু এই ঠান্ডায় মাঠে বা বাইরে বেশিক্ষণ কাজ করা যাচ্ছে না। শরীর থরথর করে কাঁপে, কোদাল বা ঝুড়ি ধরা কষ্টের।’

টানা কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের ফলে বোরো ধানের বীজতলা এবং শীতকালীন শাকসবজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষকদের আশঙ্কা, কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ধানের বীজতলার কুয়াশা সকালে দড়ি টেনে ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে। ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি পরিমিত সেচ দিতে হবে।’

তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ বৃদ্ধ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসছে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের প্রাদুর্ভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে। তিনি প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। চুয়াডাঙ্গার বর্তমান তাপমাত্রা এই সীমার মধ্যে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় আজ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৫
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে দুই যাত্রীবাহী লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চের হতাহত যাত্রীদের উদ্ধার করে ঢাকার সদরঘাটে নিয়ে আসা হলে সেখানে লাশের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়। সদরঘাট নৌ থানার ইনচার্জ সোহাগ রানা গণমাধ্যমকে জানান, দুই লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী ‘এমভি জাকির সম্রাট-৩’ লঞ্চটি রাত ২টার দিকে হাইমচর এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় নদীতে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের সঙ্গে জাকির সম্রাট-৩-এর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

বাবু লাল বৈদ্যের দেওয়া তথ্যমতে, সংঘর্ষের পরপরই ঘটনাস্থলে একজন যাত্রী নিহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটির যাত্রীদের তাৎক্ষণিকভাবে ‘এমভি কর্ণফুলী-৯’ নামক আরেকটি লঞ্চের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে ঢাকা যাওয়ার পথেই আরও একজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে সদরঘাটে পৌঁছানোর পর নিহতের মোট সংখ্যা সাত জনে পৌঁছায়।

নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকদের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষকেরা ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন যে কারণে

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ নওগাঁর নিয়ামতপুরে কয়েক দিন ধরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা ক্রমেই কমে যাওয়ার সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। কুয়াশার কারণে অনেক দিন দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষিকাজেও প্রভাব পড়ছে।

কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। সামনে উপজেলাজুড়ে বোরো ধান রোপণের মৌসুম শুরু হবে। তার আগে বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন তাঁরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ঠান্ডা ও কুয়াশার প্রভাবে বোরো বীজতলা হলদে ও লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে।

সরেজমিনে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বীজতলাই পলিথিনে ঢাকা। ভাবিচা গ্রামের কৃষক বিমল প্রামাণিক জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করবেন। সে জন্য আগেই বীজতলা তৈরি করেছেন। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল সরকার জানান, বীজ ফেলার আট দিন পর বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ২২ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলবেন। এতে বীজতলায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয় এবং রোপণের জন্য ভালো চারা পাওয়া যায়। পাশাপাশি পলিথিন ব্যবহার করায় কীটনাশক দিতে হয় না। ফলে বাড়তি খরচও কমে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দেয়। এতে বীজ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না, অনেক সময় হলদে ও লাল হয়ে পচে যায়। পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকে এবং চারাগাছ নষ্ট হয় না। এতে কৃষকেরা উপকৃত হন। বীজতলা রক্ষায় পলিথিন ব্যবহারের জন্য কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত