Ajker Patrika

এমপির আশীর্বাদে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক তাঁরা

  • সাবেক এমপির আশীর্বাদে দুজনই হয়েছিলেন দুই উপজেলার চেয়ারম্যান
  • জাহাঙ্গীর ও ময়নার বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করা হয়েছে
  • সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর সব অপকর্মের সঙ্গী ছিলেন দুই উপজেলা চেয়ারম্যান
 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৭: ২১
লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না ও জাহাঙ্গীর আলম।
লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না ও জাহাঙ্গীর আলম।

একজন ছিলেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীর বাড়ির কাজের লোক। আরেকজন হুন্ডির কারবারি। কিন্তু সাবেক এমপির আশীর্বাদে দুজনেই হয়েছিলেন দুই উপজেলার চেয়ারম্যান। অবৈধ পথে বিপুল অর্থবিত্তেরও মালিক হয়েছেন তাঁরা। অবশেষে সাবেক এই দুই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তাঁরা হলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও তানোর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না। দুজনে দুই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর লাপাত্তা হওয়া সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর সব অপকর্মের সঙ্গী ছিলেন এ দুজন। এখন তাঁরাও ত্মগোপনে।

হুন্ডি কারবারি ছিলেন জাহাঙ্গীর

গোদাগাড়ীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি পৌরসভার সারেংপুর মহল্লায়। স্থানীয় সূত্র বলেছে, ১৯৯১ সালে জমজমাট ছিল গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ করিডর। এই করিডরে আসা গরুর রাখালি করতেন জাহাঙ্গীর। তারপর নিজেই ভারত থেকে গরু আনা শুরু করেন। গরু আনতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন হুন্ডি কারবারে। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকারের সময় তাঁর এক আত্মীয় পৌরসভার মেয়র হলে তিনি ঠিকাদারি শুরু করেন। তখন এলাকার লোকজন তাঁকে যুবদল নেতা হিসেবেও চিনতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভোল পাল্টে জাহাঙ্গীর আলম এলাকার এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। নিয়ন্ত্রণ নেন খাদ্যগুদামে ধান-চাল সরবরাহ সিন্ডিকেটের। খুশি হয়ে ফারুক চৌধুরী তানোরের একটি কলেজের প্রভাষক হিসেবেও জাহাঙ্গীরকে নিয়োগ দেন। এরপরই তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উপজেলা সভাপতির পদ পান। ফারুকের ইচ্ছায় হয়ে যান উপজেলা চেয়ারম্যানও।

স্থানীয় লোকজন জানান, টিআর-কাবিখা থেকে বিপুল টাকা হাতিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ৩ হাজার টাকা করে আদায় করতেন উপকারভোগীদের কাছ থেকে। এ ছাড়া কোনো নির্বাচন এলেই এলাকার মাদক কারবারিদের কাছ থেকে তুলতেন বিপুল অঙ্কের টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীর নিউমার্কেটে সাবেক এমপি ফারুকের থিম ওমর প্লাজায় ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। কিনেছেন চারটি দোকানও। নিউমার্কেট এলাকায় একটি মুদিদোকানও কিনেছেন তিনি। গোদাগাড়ীতে জালিয়াতি করে খাসপুকুর দখলের অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন মৌজায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার জমি কেনারও তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকেই তাঁর খোঁজ নেই।

ফারুকের কাজের লোক ছিলেন ময়না

তানোরের চৌরখোর গ্রামে বাড়ি ময়নার। এ গ্রামেই বাড়ি ওমর ফারুক চৌধুরীর। বাবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কিশোর বয়সে ফারুক চৌধুরীর কাজের লোক হিসেবে কাজ শুরু করেন ময়না। জমি-জায়গার দেখভাল থেকে শুরু করে ঠিকাদারি কাজের দায়িত্বও পালন করেন। ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দিলে ময়নাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ২০০৬ সালে তাঁকে কলমা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতির পদে বসান ফারুক।

ফারুক চৌধুরীর সমর্থন নিয়ে ময়না ২০১১ এবং ২০১৬ সালে পরপর দুবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হন। ২০১৫ সালে তিনি তানোর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হন। পরবর্তী সময়ে তানোরে ফারুক চৌধুরীর রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৯ সালে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন এবং জয়ী হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ময়না।

স্থানীয়রা জানান, কলমা ইউনিয়নের চৌরখোর, বংশিধরপুর এবং পাশের নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার কুণ্ডহরি মৌজায় প্রায় ১০০ বিঘার আমবাগান গড়ে তুলেছেন ময়না। এর মধ্যে ৩০ বিঘা জমি তিনি কিনেছেন, বাকি ৭০ বিঘা সরকারি জলাশয়ের জমি দখল করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী সরকারের আমলে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ময়নার মাধ্যমে।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ সময় ইউনিয়ন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকায় ময়না টিআর এবং কাবিখা প্রকল্পের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। রাজশাহী শহরে তাঁর একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। ৫ আগস্ট থেকে ময়না আত্মগোপনে।

দুজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

জাহাঙ্গীর ও ময়নার বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে গত বুধবার মামলা করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমের নামে ১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ১০১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। আর ময়নার নামে তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার ৬১১ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জাহাঙ্গীর ও ময়নার আয়বহির্ভূত এ সম্পদ খুঁজে পেয়েছে দুদক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার বিচার দাবিতে আবারও শাহবাগ মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির কবর জিয়ারত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কবর জিয়ারত শেষে তারেক রহমান শাহবাগ এলাকা থেকে চলে আসার পর বেলা ১২টায় হাদি হত্যার বিচার চেয়ে আবারও শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে তারেক রহমানের শাহবাগে আসা উপলক্ষে ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড় থেকে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম দিকে সাময়িক অবস্থান নেয়। এরপরে তাঁর কবর জিয়ারত শেষ হলে পুনরায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাহবাগ চত্বর।

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মুন্সি বোরহান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ১২টার সময়ে আবারও শাহবাগ মোড়ে এসেছি হাদির হত্যার বিচার চাইতে। তারেক রহমান হাদির কবর জিয়ারত করতে আসায় আমরা সাময়িক সময়ের জন্য শাহবাগের পশ্চিম দিকে একটি পাশে অবস্থান নিয়েছিলাম।’

আজ শনিবার বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে শায়িত শরিফ ওসমান বিন হাদির কবর জিয়ারত করেন তারেক রহমান। ওসমান হাদির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া ও মোনাজাত করেন তিনি। এরপর সেখানে শায়িত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরেও শ্রদ্ধা জানান ও জিয়ারত করেন।

গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর হাদি হত্যার বিচার দাবি শাহবাগে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। রাতভর অবস্থানের পর সকাল ১১টার আগে শাহবাগ মোড় ছেড়ে একদিকে সরে যান অবস্থান কর্মসূচি পালনকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের চেয়েও কাজ না পাওয়ার কষ্ট বেশি

­­­নওগাঁ প্রতিনিধি
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁয় গত কয়েক দিনে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। শীত উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েও অনেককে কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো এলাকা। তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ খুব একটা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাকডাকা ভোরে কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে এসে মুক্তির মোড়, ব্রিজের মোড় ও শিবপুর ব্রিজ (বাইপাস) এলাকায় জড়ো হয়েছেন দিনমজুরেরা। জীবিকার তাগিদে আসা এসব শ্রমজীবীর সঙ্গে থাকে মাটি কাটার ঝুড়ি ও কোদাল। কিন্তু একদিকে শীতের কষ্ট, অন্যদিকে কাজ না পাওয়ার হতাশা—দুইয়ের বোঝা নিয়েই অনেককে ফিরতে হচ্ছে বাড়ি।

মুক্তির মোড়ে বসে থাকা ৭০ বছর বয়সী আবুল কাশেম বলেন, ‘কয়েক দিন শীত কম ছিল। এখন হঠাৎ খুব শীত পড়েছে, সঙ্গে বাতাস। এই শীতে ঘর থেকে বের হওয়াই কষ্ট। তারপরও পেটের দায়ে কাজে আসতে হয়। সর্দি-কাশি লেগেই থাকছে। আয় কমে যাওয়ায় খুব বিপদে আছি।’

আরেক শ্রমজীবী তছলিম বলেন, ‘ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে সাইকেল চালিয়ে কাজে এলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। গরিব মানুষ, কাজ না করলে চলবে না। শীতে যত কষ্টই হোক, বের হতে হয়। কিন্তু গত দুই দিন কোনো কাজই পাইনি।’

ব্রিজের মোড়ে কাজের অপেক্ষায় থাকা ৬৫ বছর বয়সী হাজের আলী বলেন, ‘আমাদের কাজ রোদ-বৃষ্টি সবকিছুর ওপর নির্ভর করে। শীত পড়ার পর থেকেই কাজ কমে গেছে। পারিশ্রমিক কম হলেও যা পাই তা-ই করি। কেউ কাজ পায়, কেউ পায় না। কাজ না পেলে কোদাল-ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে বসে থাকতে হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় যমুনায় আটকা বর-কনেসহ ৪৭ যাত্রীর নৌকা, ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার

জামালপুর প্রতিনিধি 
বরযাত্রীবাহী নৌকাটি আজ দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরযাত্রীবাহী নৌকাটি আজ দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ঘন কুয়াশার কারণে যমুনা নদীতে বর-কনেসহ ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা প্রায় ১৫ ঘণ্টা আটকে থাকার পর উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে বগুড়া থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাদারগঞ্জে ফেরার পথে যমুনা নদীর মাঝখানে নৌকাটি দিক হারিয়ে আটকে পড়ে। শনিবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় নৌকাটি নিরাপদে ঘাটে পৌঁছায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারগঞ্জ উপজেলার তারতাপাড়া গ্রামের সানোয়ার হোসেনের ছেলে নিলয় হাসানের (২০) সঙ্গে বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকার এক তরুণীর বিয়ে হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনেসহ ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালীতলা ঘাট থেকে একটি বড় নৌকা মাদারগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়।

রাত ৯টার দিকে যমুনা নদীর মাঝখানে ঘন কুয়াশার কারণে নৌকার চালক দিক হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে নৌকাটি মাঝনদীতে নোঙর করে অবস্থান নেয়। পরে রাত ১১টার দিকে যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চান।

বর-কনেসহ উদ্ধার হওয়া ৪৭ জন যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
বর-কনেসহ উদ্ধার হওয়া ৪৭ জন যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

খবর পেয়ে মাদারগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলেও কুয়াশার তীব্রতার কারণে রাতে নদীতে নামা সম্ভব হয়নি। শনিবার সকালে কুয়াশা কিছুটা কমলে ফায়ার সার্ভিস স্থানীয় মাঝিদের সহযোগিতায় উদ্ধারকারী নৌকা পাঠায়। সকাল ৯টার দিকে আটকে পড়া নৌকার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে যাত্রীদের নিয়ে নৌকাটি দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়।

উদ্ধার হওয়া বর নিলয় হাসান বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে মাঝি কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। নারী ও শিশুসহ সবাই আতঙ্কে ছিল। সারা রাত তীব্র শীতের মধ্যে নদীর মাঝে কাটাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবাই সুস্থভাবে ফিরতে পেরেছি, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গতকাল রাত ৯টার দিকে সাংস্কৃতিক পর্ব চলাকালে হামলা চালায় বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাত ৯টার দিকে সাংস্কৃতিক পর্ব চলাকালে হামলা চালায় বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনীর সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বহিরাগতদের হামলায় পণ্ড হয়েছে। সেখানে দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী নগরবাউল জেমসের গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেমস মঞ্চে পৌঁছার আগেই বহিরাগতদের হামলা ও ইটবৃষ্টির মুখে শেষ পর্যন্ত কনসার্টটি বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থী ও আয়োজকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

স্কুলের পুনর্মিলনী উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকেই সাজসাজ রব ছিল ফরিদপুর শহরে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে নগরবাউল জেমস তাঁর দল নিয়ে ফরিদপুর পৌঁছান এবং স্থানীয় একটি গেস্ট হাউসে বিশ্রাম নেন।

রাত ৯টায় অনুষ্ঠানের র‍্যাফল ড্র চলাকালে জিলা স্কুলের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার মানুষ ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে।

রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ভেতরে ঢুকতে না পেরে একদল যুবক সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকেরা বাধা দেন। এর পরপরই মুজিব সড়ক ও স্কুলের চারপাশ থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

রাত ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হামলাকারীরা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং অনবরত ইট মারতে থাকে। এতে অনুষ্ঠানস্থলে থাকা শিক্ষার্থী ও দর্শকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আনিসুর রহমান সজল নামে একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন নিবন্ধিত সদস্য ভেতরে উৎসব করছিলাম। কিন্তু জেমস আসার খবরে বাইরে ২০-২৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়। হঠাৎ বৃষ্টির মতো বড় বড় ইট এসে আমাদের ওপর পড়তে থাকে। সাউন্ড সিস্টেমের মনিটর ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। অদ্ভুত বিষয় হলো, পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখনো পুলিশ নীরব ছিল।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে এমন সহিংসতা এড়ানো যেত। তাঁরা অভিযোগ করেন, বড় কোনো আয়োজনে যে ধরনের নিরাপত্তা বলয় থাকা প্রয়োজন ছিল, এখানে তার ছিটেফোঁটাও ছিল না।

এদিকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আয়োজক কমিটির অদূরদর্শিতাকেই দায়ী করেছেন জেমস। নগরবাউলের মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন গণমাধ্যমকে বলেন, " ‘আমরা কনসার্ট করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশৃঙ্খলা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে আয়োজকেরা আমাদের ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। এটি আয়োজকদের স্পষ্ট অব্যবস্থাপনা।’ জেমস নিজেও ব্যক্তিগতভাবে একে আয়োজকদের ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের ভেতরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বাইরে অন্তত দশগুণ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। জিলা স্কুলের ভেতরের প্রাঙ্গণে এত বিশাল জনসমুদ্র সামলানো অসম্ভব ছিল। বহিরাগতদের বাধা দিতে গেলেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘নিরাপত্তার খাতিরেই আমরা অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। আমাদের অনেক ছোট ছোট শিক্ষার্থী ও প্রবীণ সদস্যরা আহত হয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মতে, জেমসের মতো শিল্পীর অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে শহরের প্রাণকেন্দ্রে জিলা স্কুলের মতো ছোট জায়গা বেছে নেওয়াটাই ছিল আয়োজকদের প্রথম ভুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত